বিট জেনারেশন একটি
ব্যাপক জনপ্রিয় নাম আজ সারা দুনিয়ায়। অনেক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে তাদের উদ্ভট কাজ
নিয়ে। বিট জেনারেশন একটি আমেরিকান সংঘ যার প্রারম্ভ হয় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ
পরবর্তী অস্থির সময়ে। এই গ্রুপ ১৯৫০ এর দিকে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় তাদের বিচিত্র
কর্মকাণ্ড এবং সাহিত্য প্রতিভার কারণে। বিট জেনারেশনের মূল আকর্ষণ ছিল সমাজের যে
প্রচলিত সমাজ প্রদত্ত মানদণ্ড প্রকাশ্যে অস্বীকার। নতুন একটি ধারা চালু করাই ছিল
তাদের লক্ষ্য। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত ছিল নেশা বস্তু নিয়ে তাদের বাড়াবাড়ি। প্রাচ্য
ধর্মের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ। তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল বস্তুবাদ। বিট জেনারেশনর
প্রভাব পরবর্তীতে উপমহাদেশের সাহিত্যে এসেছিল। হাংরি আন্দোলন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
জ্যাক কেরুয়াক “বিট জেনারেশন” নামটি প্রথম ব্যবহার
করেন গতানুগতিক বিরোধী তরুণদের গুপ্ত আন্দোলন কে বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত করতে নিউইয়র্ক
শহরে। এই নামটি উঠে আসে যখন কেরুয়াক ব্যস্ত ছিল লেখক জন কেলন হোমসের সাথে
কথোপকথনে। কেরুয়াক স্বীকার করেন যে এই শব্দটি রাস্তার গুণ্ডা হারবার্ট হাংকি
ব্যবহার করত। কিন্তু এই শব্দটার মানে এই নয় যে ক্লান্তি বা পতিত হওয়া। তার বদলে
কেরুয়াক শব্দটাকে অন্য মাত্রা প্রদান করে। সে এটাকে ব্যবহার করে বোঝাতে সঙ্গীতের
উচ্চমাত্রা স্বর্গীয় সুখ, কিংবা সঙ্গীতের সাথে থাকা।
বিট জেনারেশন সৃষ্টি
হয় কলম্বিয়া য়ন্যুভার্সিটিতে যখন কেরুয়াক, অ্যালান গিন্সবার্গ, লুসিয়ান কার, হলচেস এবং অন্যান্যরা
মিলিত হয়। জ্যাক কেরুয়াক কলম্বিয়া তে আসে ফুটবল স্কলারশিপ নিয়ে। যদিও বিটরা
বিবেচিত হয় প্রতিষ্ঠান বিরোধী রূপে। তাদের বেশিরভাগ চিন্তা ভাবনা রূপ নেয় প্রফেসর
লিওনেল থ্রিলিন এবং মার্ক ভ্যান ডরেন এর প্রতি উত্তরে। সহপাঠী কার এবং গিন্সবার্গ
আলোচনা করে একটি নতুন দৃষ্টি ভঙ্গির যা প্রতিহত করবে প্রফেসরদের রক্ষণশীল জ্ঞানকে।
বিট জেনারেশনের একজন
মূল্যবান কবি হলেন বব কাউফম্যান। তিনি মূলত একজন কৃষ্ণাঙ্গ কবি। তিনি আধ্যাত্মিকতা
চর্চা করতেন। যার ফলে বস্তুবাদ কে অস্বীকার করেন। তার কবিতা ছিল মূলত রাজনৈতিক
সংলাপ মুখর। ব্যাগল শপ নামক একটি জায়গায় তিনি কবিতা পাঠ করতেন। তিনি যখন কবিতা পাঠ
করতেন শ্রোতারা নিশ্চুপ হয়ে শুনত। ৬০ এর দশকে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে নিউ ইয়র্ক এর
একটি হাসপাতালে ভর্তি হন।
বারোজের দুর্বলতা ছিল
অপরাধ প্রবণতায়। জড়িয়ে পরে চোরাই জিনিস এবং মাদক বেচাকেনায়। সে খুব জলদি আক্রান্ত
হয় মাদকে। হারবার্ট হাংকের সাথে আন্ডার গ্রাউন্ড অপরাধীদের মাঝে মিশে যায়। হাংক
বাকি বিট সদস্যদের নিয়ে আসে সেখানে। যে কিনা পরবর্তীতে লিখতে শুরু করে। নিজেকে
বিবেচনা করত এইভাবে রাত জাগতিক জ্ঞান অন্যান্য মিডল ক্লাস মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।
গিন্সবার্গ গ্রেপ্তার
হয় ১৯৪৯ সালে। পুলিশ গিন্সবার্গ কে ধরতে চেষ্টা করে যখন সে গাড়ি চালাচ্ছিল হাংকের
সাথে। তার গাড়ি ভর্তি ছিল চোরাই মালে। যখন সে পালাতে চেষ্টা করছিল তার গাড়ি
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয় এবং সে পালাতে সচেষ্ট হয় পায়ে। কিন্তু পেছনে ফেলে যায় তার
নোট বুক। তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল অপরাধ স্বীকার করে নব্বই দিন বেলিভিউ হাসপাতালে
স্বেচ্ছা সেবা প্রদান করতে। যেখানে সে পরিচিত হয় কার্ল সোলেমন এর সাথে। সোলেমন ছিল
আরো বেশি খ্যাপাটে ও উন্মাদ স্বভাবের। সে নিজেকে সমর্পণ করেছিল পাগলামিতে। সে
টমেটো সালাদ ছুড়ে মারত কলেজ লেকচারদের উপর “দাদাইজম ডে” ( ১৯১৬ সালে ঐতিহ্য
বিরোধী শিল্প ও সাহিত্য আন্দোলন )। সোলেমন কে শক ট্রিটমেন্ট দেওয়া হত বেলিভিউ
হাসপাতালে। যা ছিল গিন্সবার্গের “ হাউল” এর মুল থিম। যা
সোলেমন কে উৎসর্গ করা হয়।
বারোজ কে বিট দলে
প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় কেরুয়াক, যে লুসিয়ান কারের প্রেমে পরে। লুসিয়ান কার
বন্ধুত্ব করে গিন্সবার্গ ও বারোজের সাথে। কার চিনত কেরুয়াকের প্রেমিকা কে যার নাম
ছিল এ ডি পার্কার।১৩ই আগস্ট ১৯৪৪ এ, কার হত্যা করে ক্যামেরার কে স্কাউটে বাকলদের
ব্যবহারকৃত চাকু দিয়ে রিভার সাইড পার্কে। পরবর্তীতে এটা প্রকাশ পায় যে আত্মরক্ষার
জন্য সে হত্যা করে। পরে হাডসন নদীতে ফেলে দেয় লাশ। সে কেরুয়াকের কাছে যায়। কেরুয়াক
তাকে অস্ত্র গোপন করতে সাহায্য করে। লুসিয়ান কার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে দিশেহারা
হয়ে হত্যা স্বীকার করে। কেরুয়াকের বিরুদ্ধে চার্জ আনা হয় হত্যা সাহায্যকারী
হিসাবে। কেরুয়াক এই ঘটনার বিবরণ দুইবার উল্লেখ্য করে তার প্রথম উপন্যাস “The Town And The
City” এবং “ And the Hippos
were Boiled in their Tanks” এ।
কবি গ্যারি স্যান্ডার
ছিল একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিট আন্দোলনে। গ্যারি ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিল বিট
জেনারেশনের গ্রুপ মেম্বার হিসাবে। সে ছিল কবি এবং সেই সব কবিদের মধ্য অন্যতম যারা বিখ্যাত “Six Gallery” তে কবিতা পাঠ করত।
নীল ক্যাসাডির বিট গ্রুপের সাথে পরিচয় ঘটে ১৯৪৭ সালে এবং সদস্য হিসাবে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গিন্সবার্গ, ক্যাসাডি দ্বারা
আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এবং পরবর্তীতে তাদের মধ্য রোম্যান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গিন্সবার্গ হয়ে যায় তার ব্যক্তিগত লেখ্য শিক্ষক। কেরুয়াকের সাথে ক্যাসেডির রোড
ট্রিপ টি হয়ে উঠে কেরুয়াকের বিখ্যাত উপন্যাস “ On The Road” এর মুল উপজীব্য।
Gregory Coeso পূজা করতেন Percy Bysshe Shelley কে একজন হিরো হিসাবে।
এবং তাকে কবরস্থ করা হয় শেলীর পায়ের কাছে Protesttant
Cementery তে যা রোমে অবস্থিত।
রোমান্টিকতার
ক্ষেত্রে গিন্সবার্গের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা ছিল উইলিয়াম ব্লেক। গিন্সবার্গ হয়তো
সারাজীবন ব্লেক কে পরতে চেয়েছেন। যখন প্রথমবার মাইকেল ম্যাকক্লুয়ার মিলিত হন
গিন্সবার্গের সাথে তারা কথা বলেছিল ব্লেক কে নিয়ে। ম্যাকক্লুয়ার তাকে বিপ্লবী বলতো
আর গিন্সবার্গ তাকে দৈব বানী প্রচারক হিসাবে দেখত।
“on the Road” কে বলা হয় বিট
জেনারেশনের সবচেয়ে বড় প্রামাণ্য উপন্যাস। ১৯৫১ সালের এপ্রিল মাসে মাত্র তিন
সপ্তাহে এক লাখ পঁচিশ হাজার শব্দের উপন্যাসটি শেষ করেন ২৯ বছর বয়সী কেরুয়াক, ১২০ ফুট লম্বা একটি
ট্রেসিং পেপারের রোল কে সাইজ করে কেটে তার উপর টাইপ করতে শুরু করেন কেরুয়াক। পরে
পাতাগুলি আবার জোড়া দিয়ে দেন। ভাবগ্রস্থের মত টাইপ করে গেছেন মার্জিন, অণুচ্ছেদ অধ্যায়
কিছুই রাখেন নি। তার বন্ধু ও যাত্রা সঙ্গী নীল কাসাডির একটি চিঠি থেকেই নাকি
কেরুয়াকের বিশ্ব বিখ্যাত উপন্যাসের সূত্রপাত। ১৯৫৭ সালে কেরুয়াকের “ On The Road” উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
Norman Podhoretz ছিল Kerouac এবং Ginsberg এর সহপাঠী কলম্বিয়া
য়ন্যুভার্সিটিতে। সে ছিল বিটদের সবচেয়ে বড় সমালোচক। Podhoretz এর ১৯৫৮ সালে লেখা “ Partisan Review
Article এ “ The know nothing
Bohemians” এ ছিল তীব্র সমালোচনা কেরুয়াকের “On The Road” ও “The Subterraneasns” এবং গিন্সবার্গের “Howl” এর। তার মুল সমালোচনা
এটা ছিল যে বিটরা আলিঙ্গন করে বুদ্ধিবৃত্তি বিরোধী একটি স্বতঃস্ফূর্ত উপাসনায়
লিপ্ত হয় যা সহজেই রূপান্তর হতে পারে নির্বুদ্ধিতা ও বিশৃঙ্খলতার দিকে। সে আরও জোর
দিয়ে বলেন, বিটদের সাথে অপরাধীদের সম্পর্ক ছিল।
গিন্সবার্গ ১৯৫৪ সালে “ The Village Voice “ সাথে একটি সাক্ষাৎকারে মত প্রকাশ করেন, যে বিটদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, তারা ধ্বংস করছে “ জীবন
ও সাহিত্যের মধ্য পার্থক্য”। বিটদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তি বিরোধী অভিযোগ একটি অসার গর্ভ শূন্য কাজ। আমরা
একই শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ ছিলাম একই স্কুলে গিয়েছিলাম এবং তুমি নিশ্চয় জানো ওখানে
ছিল বুদ্ধিজীবীরা এবং তারা ছিল বুদ্ধিজীবী। Podhoretz ছিল বিশ শতকের সাহিত্য থেকে দূরে। তার
লেখা ছিল ১৮ শতকের মানসিকতা সম্পন্ন।
বিটদের নিজেদের
সম্পর্কে কিছু মন্তব্য পাওয়া যায়।
“ তথা কথিত বিট প্রজন্ম হল বিভিন্ন জাতি
গোষ্ঠী থেকে আসা এক গুচ্ছ মানুষের দঙ্গল, যারা
এটা ধরে নিয়েছিল যে সমাজ তাদের থেকে সবকিছু চুষে নিচ্ছে।“ - আমিরী
বারাকা।
“ কেউ জানে না আমরা অণুঘটক ছিলাম নাকি
আবিষ্কারক, নাকি শুধুই নিজেদের
স্রোতে উপর বসে থাকা ফেনা। আমি মনে করি আমরা সেই তিনটা। “ - গিন্সবার্গ।
“ জন মিলন হোমস এবং আমি বসেছিলাম এবং
আলোচনা করছিলাম যে “ লস্ট জেনারেশনের মানে কি হবে এবং তার
উত্তরকালীন অস্তিত্ব, এবং আমি বলে
উঠলাম “ তুমি জানো জন, এটাই সত্যিকারের বিট প্রজন্ম এবং সে লাফ
দিল এবং বলল “ এটাই সঠিক।“ - কেরুয়াক।
“ শেষ হয়নি এখনো, ও ও শোনেন যারা ভাবছেন যে বিট প্রজন্ম
মানে অপরাধ, অপকর্ম, নৈতিকতা বিরোধী, শোনেন যারা আক্রমণ করেছেন এসব বিষয়ের
প্রেক্ষিতে। তারা জানে না ইতিহাস এবং আত্মার ব্যাকুলতা, আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে...... শোনেন, আসল ব্যাপার হল যারা বাজে সিনেমা তৈরি
করছেন বিটদের নিয়ে, যেখানে নিষ্পাপ
পত্নীদের ধর্ষণের দেখানো হচ্ছে “বিটনিক” দের দ্বারা...... ও ও ও শোনেন যারা থুতু
ফেলছেন বিটদের উপর, একদিন বাতাস
তাদের দিকে ফিরে আসবে।“ - জন কেরুয়াক।