চিঠি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
চিঠি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সতীর্থ আহসান'র চিঠি

সতীর্থ আহসান'র চিঠি










নীল,

রাত কত হলো? দু'টা নাকি তিনটে? রুমজুড়ে এতো অন্ধকার, পলকে একবার মনে হয়__ আমি আমার রুমেই আছি তো? সত্যি যে রুমে আছি সেটার প্রমাণ পাবার জন্য দুইপাশ হাতড়ে স্বামীকে খুঁজি আছে তার মানে আমার রুমেই আছি নিশ্চিন্তে সে ঘুমচ্ছে মজা দ্যাখো! শারীরিকভাবে আমরা পাশাপাশি, এত কাছে__ অথচ মনের দিক থেকে কতশত ক্রোশ দূরে; এত দূরে যে আমি হয়ত আর কোনোদিন এই লোকটার নিকটবর্তী হতে পারব না কীভাবে হব? যেখানে আমাদের মধ্যে রুচির কোনও মিল নেই, চিন্তার কোনও সাদৃশ্য নেই, জীবন-যাপন শৈলীতে কোনও মিল নেই, শুধু বিয়ে নামক একটা সামাজিক প্রথায় আবদ্ধ আছি বলেই পাশাপাশি থাকা__ সেখানে কীভাবে মানসিকভাবে কাছাকাছি থাকব? ভেবে আজো অবাক হই, বিয়ের এতগুলো বছর কেটে গেল, অথচ একটাবারের জন্যও স্বামী নামক এই লোকটাকে আজো ভালবাসতে পারলাম না অথচ দৈহিকভাবে আমাদের অনিবার্যভাবে কাছাকাছি থাকতে হয়

জানি, নীল, তুমিও আমার মত আজো তোমার বউয়ের মনের কাছাকাছি যেতে পারো নি আচ্ছা, তোমার বউও কি তোমার কাছাকাছি আসতে পারে নি? তুমি বলেছ, বিয়ের এতদিন কেটে গেল, তবুও বউকে তোমার ভালবাসা হয়ে ওঠে নি তুমি চেষ্টা করেছিলে, পারো নি সেটাও কি এই কারণে যে, তোমার রুচি, চিন্তা, মূল্যবোধ, লাইফ স্টাইল থেকে তোমার বউয়ের রুচি, চিন্তা, মূল্যবোধ, লাইফ স্টাইল এইসব সম্পূর্ণ ভিন্ন? তাহলে তুমিও কি আজ রাতে আমার মতন এমনি করে জেগে আছো? জেগে থাকো প্রতিদিন? অন্ধকারে হাত বাড়ালেই বউয়ের শরীর হাতে ঠেকে, অথচ সে যেন কত দূরের কোন মানুষ__ এই অনুভূতি তোমারও খেলে যায়? জানি, তোমারও আমার মত বোধ হয় সামাজিকভাবে আমাদের একজন করে লাইফ পার্টনার থাকলেও, এরা শুধু শারীরিক প্রয়োজন মেটায় ক্ষণিকের জন্য দুই জগতে তুমি আর আমি একই রকম একা, আমরা নিজ নিজ গৃহে মানসিকভাবে এত একা!

তাই, তুমি খুঁজে নিয়েছ আমাকে, আমি খুঁজে নিয়েছি তোমাকে আমরা এখন সুখী এইসবই সত্য কিন্তু... নীল... গতকাল... তোমার সেই প্রস্তাবটা নিয়ে অনেক ভেবেছি... না... না... এ সম্ভব না নীল... বুঝতে চেষ্টা করো তুমি... এমন অবুঝ হয়ো না...

গতকাল জানালার গায়ে হেলান দিয়ে অনেকক্ষণ বাইরে তাকিয়ে ছিলাম চোখের সামনে লাল রঙের একটা সরু রাস্তা, তারপরেই খোলা মাঠ; এইসব ছাড়িয়ে আরও সামনে, বহু দূরে গাছপালায় ঘেরা একটা মসজিদ, আর একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি সেই মসজিদের গম্বুজের দিকে এই একটু আগে কাজ থেকে ফিরলাম, কোনোমতে ড্রেস ছেড়ে অমনি বসে পড়ি আমার প্রিয় এই জানালার ধারে গৃহমুখী মানুষজনের আনাগোনা বাড়ছে তাদের পায়ের শব্দ আমাকে জেমস জয়েসের ইভিলিন গল্পের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল বারবার ইভিলিনকে তো চিনো? ইভিলিন ইভি মিস হিল তিনজন একি মানুষ মা মারা গেছে বেশ আগে তিন ভাইয়ের ভেতরে একজন মারা গেছে, বাকি দুই ভাই থাকে অনেক দূরে, বাড়িতে শুধু মদ্যপ বাবা আর ও সে কাজ করে এক দোকানে ঘর সংসার সেই দেখে, প্রতিদিন ঘর সাজাই, ঝাড়পোছ দেয়; বাড়ি তার আত্মার অংশ হয়ে যায় নির্ভরতার প্রতীক কতশত স্মৃতি জমে থাকে আছে সেই বাড়িটিকে ঘিরে! কিন্তু সংসারের জোয়াল টানতে টানতে, মদ্যপ আর ভয়ংকর বাবার হাত থেকে বাঁচার জন্য ইভিলিন প্রেমিক ফ্রাঙ্কের সাথে পালানোর প্রস্তুতি নেয় ফ্রাঙ্ককে ওর বাবা মেনে নেবে না ও জানে, বরং একদিন ফ্রাঙ্ককে অপমানও করে কারণ ফ্রাঙ্ক বিদেশি, আর্জেন্টাইন ও ফ্রাঙ্কের জন্য ঘর ছাড়তে চায়, এমন নয় সে ঘর ছাড়তে চায় কারণ যে ঘরকে সে বড় আপন আর নির্ভরশীলর প্রতীক মনে করে, সেই ঘরের প্রতি বাধ্যতামূলক দায়িত্বশীলতা, নিজের অসম্মান, ভবিষ্যতহীনতা আর বাবার ভয় তার জীবনকে ক্রমশ বিষিয়ে তুলছে তাই বিদেশি ফ্রাঙ্কের সাথে পালিয়ে আয়ারল্যান্ড ছেড়ে যারার জন্য মনস্থির করে সে স্বপ্ন দেখে সেই দেশে গেলে একটা আপন ঘর পাবে, নিজের মত করে সাজাবে সেই ঘর, সম্মান পাবে সেখানে, আর ভালবাসা পাবে ফ্রাঙ্কের কিন্তু যখন সে আর ফ্রাঙ্ক পোতাশ্রয়ে জাহাজের জন্য অপেক্ষা করে, জাহাজ ছেড়ে যাবার জন্য হুইসেল বাজায় আর তখনই ইভিলিনের মনে হতে থাকে, পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্র যেন তার বুকের সৈকতে আছড়ে পড়ছে ফ্রাংক তাকে সেই সমুদ্রের গভীরে নিয়ে যাচ্ছে ডুবিয়ে মারার জন্য তাই যখন ইভিলিনকে জাহাজে উঠার ইঙ্গিত দিয়ে সে দ্রুত ছুটে যায় তারপর জাহাজের রেলিঙ ধরে তারস্বরে ইভি ইভি বলে ডাকতে থাকে, তখন ইভিলিনের চোখে ভালবাসা বা পূর্বপরিচয়ের কোন চিহ্ন সে খুঁজে পায় না

নীল, ফ্রাঙ্ক বুঝতে না পারলেও আমি ইভিলিনকে বুঝতে পারি না, নীল, আমার পক্ষে তোমার সাথে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়

আমি এখন আর শুধু আমার নই আমার বাবা-মা আছে, সন্তান আছে, একটা সামাজিক অবস্থান আছে; আবার আমার বাবা-মা'র একটা দৃঢ় সামাজিক অবস্থান আছে, আমার ভাই বা আত্মীয়-জনদের সামাজিকতা আছে, আমার সন্তানদের নিজস্ব পরিমণ্ডলে সামাজিক পরিচিতি আছে আমি আমার বাবা-মা'র, আমার সন্তানদের, আমার আত্মীয়-স্বজনদের আমার ভেতরের যতটুকু আমার, ততোটুকু অস্তিত্ব তোমাকে প্রচণ্ডভাবে অনুভব করে তোমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কিন্তু অস্তিত্বের বাকি অংশটুকু আমাকে তোমার দাবি মেনে নিতে প্রবলভাবে বাঁধা দেয়

ইভিলিন পরিস্থিতি ভেতরে গিয়ে যে সংকট অনুভব করেছে, আমি তা এখনই দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি দেখতে পাচ্ছি, সংসার ছেড়ে তোমার সাথে পালিয়ে যাবার সাথে সাথে, আমার শত্রুরা আমার সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে তারা এতদিন লুকিয়ে চুকিয়ে আমার নামে কুৎসা রটাতো; তোমার সাথে পালিয়ে যাবার পর ওরা সদম্ভে প্রকাশ্যে বলতে থাকবেঃ

‘আগেই জানতাম, এই মহিলা এমন কাজ করবে এর মতো মহিলার জন্য এইসব তো ডাল-ভাত...'

আর, বিজয়ীর মত নানা কাল্পনিক রটনায় মেতে থাকবে আমার সন্তানেরা তাদের বন্ধুদের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না ঘরে বন্দি হয়ে থাকবে সারাদিন পরিচিত মানুষদের দৃষ্টির হাত থেকে পালিয়ে বেড়াবে রাস্তায় বেরোলে পরিচিতরা কখন না জানি তাদের দিকে আঙুল তাক করে বলে ওঠে, দ্যাখ, অই যে ছেলেটা/মেয়েটা যাচ্ছে না? ওর মা আরেকজনের সাথে পালিয়ে গেছে__ এইসব কুৎসা থেকে ওরা গা বাঁচিয়ে পালিয়ে বেড়াবে স্কুলের সহপাঠীরা ফিসফাস করবে কোনও পরিচিত টিচার শুনলে, চোখ বাঁকা করে তাকাবে আমার সন্তানদের দিকেআমার নিকট আত্মীয়-স্বজনদের মাথা কাটা যাবে তাদের আত্মীয় বা পরিচিতদের কাছে

আর, বাবা-মা! যাদের আমি এত ভালবাসি, এত শ্রদ্ধা করি, তাদের অবস্থা কল্পনাও করতে পারছি না আর যে ক'টা দিন বেঁচে থাকবে, আমার এই শোক নিয়ে কাটিয়ে দিতে হবে তাদের বেঁচে থাকার স্পৃহাটাই হয়ত নষ্ট হয়ে যাবে ওদের আমি যে এমন একটা কাজ করতে পারি না, এই বিশ্বাস ওদের ছিল আমার প্রতি; আমি তাদের সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করায় ওরা বিহ্বল আর বাকরুদ্ধ হয়ে যাবে আমার এই পালিয়ে যাবার ব্যাপার নিয়ে তারা এতটাই অবসেশনে থাকবে যে, চোখ থেকে ঘুম টুটে যাবে যাও একটু আসবে শেষ রাত্রির দিকে, হয়ত সেই ঘুম থাকবে আমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্নে ভরা সামাজিকতার চাপ কীভাবে সইবে জানি না, তবে তারা যে গৃহবন্দি আরো একা হয়ে যাবে, এটা বুঝতে পারি ভাইদের দিকে তাকিয়ে অন্যেরা ছি ছি করে উঠবে

আর, আমার একটা পারিবারিক পরিচিতি আছে সেখানে আমি গৃহী, সন্তান বৎসলা, পিতা-মাতার বাধ্য, ভাইদের প্রতি অনুরক্ত, অতিথিপরায়ণ, স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত সামাজিক পরিচিতিও আছে একটা সেখানে আমি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, পরোপকারী, বন্ধু আর অতিথিবৎসল এই সমস্ত কিছু তোমার সাথে পালিয়ে যাবার সাথে সাথে মুহূর্তে ধ্বসে যাবে; মাটির সাথে মিশে যাবে একেবারে

নীল, ইভিলিন কিন্তু সত্যিই ফ্রাঙ্ককে ভালবাসত ওর হাত দূর দেশে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল ও হয়ত সামাজিকতার ভয়ে ফিরে আসে নি, ফিরে এসেছিল পরিচিত ঘরের টানে নতুন ঘরের নানা সম্ভাবনা ওকে যতই হাতছানি দিয়ে ডাকুক, তার কাছে ওসবই ছিল নতুন পদক্ষেপ নতুনকে গ্রহণ করতে ও হয়ত ভয় পেয়েছিল কিন্তু আমার সঙ্কট যে ভিন্ন তা বুঝতেই পারছ

নীল, তোমাকে আমি ভালবাসি, এতে আমার নিজের কাছেও কোনও সন্দেহ নাই এইসব ছেড়ে তোমার সাথে পালাতে পারলে আমি নিজেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম কিন্তু আমার পক্ষে কেন যে তা সম্ভব না, তা নিশ্চয় এবার বুঝতে পারছ আমার অক্ষমতাকে তুমি ক্ষমা কর ভালবাসি

ইতি,

অপরাজিত
অপরাহ্ণ সুসমিতো

অপরাহ্ণ সুসমিতো


ওলো প্রণয়ের দীর্ঘ নখ,

১১.৩.২০১৪
খুব সকালে যখন আমাদের ঝকঝকে স্টিমার কেত্তনখোলা নদীর জল আলোড়ন করে বরিশাল শহরের পাশে সটান দাঁড়ায়,আমি তখন কেবিন খুলে বাইরে এসে রেলিং ভর করে দাঁড়াই । মনে মনে বলি : শুভ জন্মদিন । কিছুক্ষণ পর নুভাও এসে দাঁড়ায় । ভোরের আলোতে ওকে সত্যজিতের ছবির মতো সুন্দর লাগে । তবে ও গম্ভীর । বাইরে মিহি মসলিন বৃষ্টি । আমি নুভাকে জিজ্ঞেস করি নুভা তুই কি জানিস আজ আমার জন্মদিন ? ও মৃদু হাসে । তার মানে জানে । কেত্তনখোলা নদীতে একটা ছোট্ট জল সাপ এঁকে বেঁকে চলে যায় । ওকে দেখাই ।

তার আগে,স্টিমারটি যখন ঢাকা ছাড়ে আমাদের অফিসের গাড়িটি আমাদের দুজনকে সদরঘাট পৌঁছে দেয় । আমি যখন তিনতলার কেবিনের সামনে বাতাস ও উড়ুউড়ু চুল নিয়ে দাঁড়াই,মনে পড়ে এরকম আরকটি দিন ।

মিলুপা,রুমু খালা ও আমি ।

আকাশে বরিশাল বিভাগীয় চাঁদ । আঙ্গুল গলে পড়ছিল জ্যোৎস্না । মাখনের মাঝে গরম ছুরির মতো বুড়িগঙ্গা,মেঘনা ও পদ্মার জল কেটে কেটে আমাদের লঞ্চ । আমরা তিনজন নীল চাঁদোয়া । রাত বাড়ছিল অথচ পাল্লা দিয়ে পালিয়েছিল আমাদের চোখ থেকে সকলি ঘুম । আজকাল একসাথে কোথাও বেড়াতে গেলে কেউ নিজেদের মাঝে বেশিক্ষণ গল্প করে না,একটু পরেই যে যার মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় । আঙ্গুল টিপে টিপে ফেসবুক ।

কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নুভা আমি সাবধানে নামি ।
স্টিমারটি ভোঁ ছেড়ে দিল । রিক্সা নিয়ে দুজন সার্কিট হাউজ । খবর পেয়ে পাপিয়া,ওর বর দুজনেই ছুটে আসে । পাপিয়ার মেয়ে অদিতি আবৃত্তি করে সুনাম কুড়িয়েছে । সারাদিন কাজ করে রাতে যখন সার্কিট হাউজে ফিরি,নি:সঙ্গ ফেরারির মতো । মন খারাপ হয়ে যায় । আজ তো আমাদের দুজন একত্রে থাকবার কথা ছিল । অভিমান গলার কাছে একুশে ফেব্রুয়ারির মতো আটকে থাকে শোকে । রাত বাড়ে,বৃষ্টি বাড়ে । কেত্তনখোলার জল বাড়ে আর আমার ঘুম আসে না ।

১২.০৩.২০১৪

কাজ কাজ । মাঝখানে একদিন স্পিড বোটে করে হিজলা নামক থানায় । বিরাট প্রমত্তা নদী আর আমি কালো জুতো পরে একলা । যদি তুমি থাকতে রোদ চশমা পরে । বাতাসে তোমার মুগ্ধতা উড়ত,বোকা বোকা তোমাকে দেখতাম আমি ।

১৩.০৩.২০১৪
নুভা রাতে পাপিয়ার কাছে থাকত । সারাদিনও । আমি বরিশাল চষে বেড়াই । সেদিন সকালে গাড়ি নিয়ে গৌরনদী নেমেই ভরপেট দই খেয়ে নেই । মামা বাড়িতে ঢুকে দেখি দেয়ালে তোমার আঁকা পেন্টিং । অনেক ক্ষণ তাকিয়ে ঝিম হয়ে থাকি ।

১৮.০৩.২০১৪

আজ রাত আমি নুভা কটক স্থল থাকি । জলে কাদায় বিপন্ন গ্রাম । তবু ছোটবেলাকার স্মৃতি-মেদ বাড়ি । দল বেঁধে গ্রামের লোকজন আমাদের দেখতে আসে । কেউ কেউ আমার বেতন জানতে চায় । ১৯ তারিখ বিকেলে বিষণ্ণতায় আবার বরিশাল শহরে চলে আসি । ওহ মাঝখানে একদিন মাধব পাশা দূর্গাসাগর দেখতে যাই । অবাক ব্যাপার তুমিও একদিন এখানে এসেছো । আমিও । অথচ একত্রে নয় । তুমি কক্সবাজার গেছো,আমিও । অথচ দ্বৈতাদ্বৈতে নয় ।

২০.০৩.২০১৪ থেকে ২৪.০৩.২০১৪

পচা এক লক্কড় ঝক্কর গাড়িতে আমি নুভা পটুয়াখালী । বরিশাল পটুয়াখালী । বরিশাল পটুয়াখালী মাত্তর ৩৮ কি.মি । অথচ কতো ঝামেলা । একদিন মোটর সাইকেলে করে আমরা কুয়াকাটা । পটুয়াখালী থেকে ৭০ কি.মি । বৃষ্টি বৃষ্টি । এ বৃষ্টিতে কি কেউ সমুদ্র দেখে ?
সমুদ্রকে বলেছি আমি খুব সহসা তোমার কাছে চলে যেতে চাই । কতদিন একসাথে স্বপ্ন দেখি না । কতদিন হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারি না । লণ্ডভণ্ড করতে পারি না লাজ লজ্জা,বিনুনি ।

২৫.০৩.২০১৪
পটুয়াখালী থেকে বরিশাল ফিরে সে রাতেই ঢাকা । নুভার ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ।
ঢাকা এসেই আবার কাজ কাজ । কাজল,তালাত,সোহানা,কলিমুল্লাহ ভাই,নীরদ,মনজু,মুকুট,শাহীন,সোমা কারো সাথেই যোগাযোগ নেই । ইচ্ছা করে না । যোগাযোগ দ্বিপাক্ষিক না হলে কি হয় ? সোমা জওহারলাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে গেছে । যাবার আগে বলেো গেল না । আবুল হাসান ভাইয়ের কাছে শুনলাম । মধু সাইফুল কে মনে আছে ? ইকোনোমিকসের । মৌমাছি চাষ করতো বলে আমার মধু সাইফুল বলতাম । ও আজ রাতেই জেনেভা ও মিউনিখ যাচ্ছে এক মাসের জন্য । জসীম হল্যান্ড থেকে ফিরে এসেছে । আব্দুল হাইয়ের সাথে মাত্র একদিন দেখা । এবার বোঝো আমার অবস্থা !

এ চিঠি যখন তোমার হাতে পৌঁছাবে তুমি হার্টফেল করবে না তো ? কেউ আজকাল চিঠি লেখে ? বলতো শেষ কবে তুমি চিঠি লিখেছিলে ?

তোমার নাকি শরীর খারাপ ? আমাকে জানাওনি কেন ? কোস্টারিকা থেকে কবে আসবে ? একদম মন খারাপ করে থেকো না । মনে করো এ হচ্ছে সুন্দরের প্রসব বেদনা ।
কেমন করে ভুলি
আমাকে জড়িয়ে সেই নখ সেই স্মৃতিগুলি !

শোনো হানাহানি থামলেই আমাদের দেখা হবে । দ্রুতই দেখা হবে । হাতে তুলে নেব আমলকী । আর এ ওকে বলব হাওয়ায় হাওয়ায় :
দ্যাখো এই হলো আমাদের পৃথিবী ।


তোমারই অমৃত,
অপরাহ্ণ সুসমিতো
মেঘ অদিতি

মেঘ অদিতি



পৃথিবীর সমস্ত প্রেমপত্র লেখা কবেই শেষ হয়ে গেছে তবু কেন বসন্ত আসে আজো, জানিস তুই? ভেতর ভেতর বিশ্বাস যত স্থির হতে থাকে তত কেন তোকেই মনে পড়ে! সম্বোধনহীন চিঠি লিখতাম বলে খুব হাসতিস, আজও কি চিঠি পড়ে তোর ঠোঁট ছুঁয়ে আছে হাসি, কি জানি!

ছেড়ে যাওয়া মানে সমস্ত অস্বীকার করা নয়, তুই খুব জানিস তবু আমায় বলেছিলি আমি ডিচ করছি যদি আজ থেকে কথাদেরও কাটাকুটি হোক আজ থেকে আমরা কেউ কাউকে চিনতাম বলে ভাববো না অথচ ভাব, প্রথম চিঠিতে লিখেছিলি, ‘ভালবাসি জন্মের মতো, ভালবাসি মৃত্যুর মতো..’পড়ে মনে? আজও প্রতি বসন্তে সেই ওম মাখা শব্দগুলোর গায়ে হাত বুলাতে গিয়ে দেখি লাভ লেন ধরে, সরলরেখাগুলো কিভাবে ঝাপসা হতে থাকে আর মনের ভেতর কুয়াশা জমে শূন্য থেকে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে তোর ফেলে যাওয়া কথাগুলো ফিরে আসে আমারই কাছে তোর দেশে এখন হয়ত মোমমাজা রাত রাইটিং টেবিলে রাখা গেলাসে আধখাওয়া স্বর্ণ তরল জ্বলন্ত সিগারেট ছাইদানি ছেড়ে টেবিলে শায়িত এখনো আগের মতই স্মোক করিস, অনি? তোর টেবিলে স্বরবর্ণ দিয়ে ঘেরা একটা লাইট শেড তোর ডায়েরির পাতায় আলো ছড়াচ্ছে, আমিই তোকে দিয়েছিলাম, আরর আমি নিশ্চিত- আমার সব চিহ্ন যদি মুছেও ফেললেও বাংলা স্বরবর্ণ দিয়ে কারুকাজ করা এই লাইট শেডটাকে তুই ফেলতে পারবি না কিছুতেই

আমরা কিন্তু আবাল্য বন্ধু, বলতিস শুনে মৃদু হাসতাম কী জানিস, যদি ঠিকঠাক মানুষকে ভালবাসা যায় তবে দ্বিধা কই, তাকে জন্ম জন্মান্তরের বন্ধু বলেই মনে হবে, তবে তোর বলার ভঙ্গীটা কিন্তু অসাধারণ! অবলীলায় একের পর এক কথাদের ছবি আঁকতিস তুই আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম আমরা কোথায় খেলতাম, চিলেকোঠা রোদ্দুর ছুঁতে গিয়ে কিভাবে তোকে ছুঁয়ে ফেলেছিলাম, ফুল কুড়োতে গিয়ে কিভাবে পিছন দিকে হাঁটতে গিয়ে দুজন দুজনের গায়ে ধাক্কা খাই আর ধেয়ে আসে সমুদ্রঝড়, এমন আরও কত কী যে বলতিস, শুনতে শুনতে কখনো মনে হত সবই বুঝি সত্য বুঝি আমিই ভুলেছি আমার অতীত

তারপর
পরপর কিছু হাইফেন জুড়ে গেলে আনুভূমিক যে দীর্ঘশ্বাসেরা উঠে এসে অনন্ত শোকগান হয় তা তুই হয়ত এখন আর টের পাস না, কিন্তু তবু বলি অনি, ছেড়ে যাওয়া কখনই সহজ ছিল না তুই যেখান থেকে জীবনটাকে দেখতিস যৌথতায় ঠিক সেখান থেকেই আমি দেখতাম কিভাবে পোড় খাওয়া একজন মানুষ শুধু তোর হাত ধরেছে তোকেই সর্বস্ব ভেবে যে খুব সামান্যতে তোর বিচ্যুতি দেখে বলে ভাবতিস তা আসলে তার নিজের অবস্থান সংকট তুই হয়ত বুঝতে চাসনি তাই শহর ছেড়ে হারিয়ে গেলি আর সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে, ভোর হবার আগে আমি ভাবলাম এবার ফাল্গুনের প্রথম প্রহর কাটাব তোরই সাথে,

কিন্তু তুই অনি

ভালো থাকিস রে যেখানেই থাকিস, নিজের মত করে ভালো থাকিস

কখনো এই উড়োচিঠি তোর কাছে পৌঁছালে, কুচো শব্দ যত হাওয়ায় উড়িয়ে দেবার আগে একবার মনে করিস,


আমি এই আমিই তোর আজন্ম ভ্যালেন্টাইন...