অন্ধকার, সিরিজ কবিতা ১-৫ ।। ইমেল নাঈম



অন্ধকার ১

পরতে পরতে মিথ্যে লুকিয়ে আত্ম অহংকার সরিয়ে দেয় পা মাটির অনেক উপরে ক্রমশ অক্সিজেন শূন্যতায় ছিটকে পরে মাটির অনেক উপরে বুদ্ধিমান চোখ যখন অন্ধ সাজে, তখন ছড়াতে থাকে কানকথা  আত্মসম্মানবোধের তীব্রতায় পুড়ে যায় দর্শন ভস্মটুকু আঁকড়ে ধরে রাখে একদল বানোয়াট মুখ পুড়ে ফেলা কবিতায় ভুল বানানে আটকে দেয় সেফটিপিন

ছোট্ট ছিদ্রগলে আলো ঢুকে, সেইসাথে ঢুকে পড়ে দুষিত বাতাস পত্রিকার পাতায় লিখা থাকে আত্মপক্ষ বিশ্লেষণ আবেগ দিয়ে ভাসিয়ে নেওয়ার পরও ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে নিগুঁঢ় বাস্তবতা এটাকে অস্বীকার করলেই উড়ে আসতে থাকে উটকো ঝামেলা

বিকল্পপথে আমাদের পৃথিবী খোলা সেই পথে আমরা শ্বাস নিই প্রতিদিন রাগ অভিমানও ঝাড়ি, পুনরায় ছুটে চলার অদম্য নেশায় আমাদের সকালগুলো স্বপ্নমাখা আঘাতের পরেও উঠে দাঁড়াই, সেফটিপিনটাকে ছুঁড়ে ফেলি রাস্তায়

আমরা সর্বহারাদের দলভুক্ত নই তবুও সাহসটুকু বুকে নিয়ে চলি বারবার শুধরে নিই সঠিক পথ অথচ...আমাদের জন্য সর্বভুকের মতো হা করে তাকিয়ে আছে নিঃসীম অন্ধকার



অন্ধকার ২

চলো শান্তির পায়রা উড়াই সাদা পায়রা ওড়ানোর পরেই আয়োজন করি মোমবাতি জ্বালিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালনের উৎসবের এরপর রবীন্দ্র সঙ্গীত গাই সকল অপচেতনা দূরীভূত করার প্রয়াস আসো এই মৃত্যু উল্লাসে কবিতা লিখি কবিতা লিখি প্রতিটি বোমার বিপরীতে জীবনের স্বাদ আস্বাদনের নিমিত্তে কবিতা লিখি আগেও বলেছিলাম, বস্তুবাদের জগতে কবিতার কোনো শক্তি নেই যদিও মধ্য পৃথিবীর প্রিয় সহযাত্রী একই অভিযোগে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছে কবিতার লিখার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড আমরা কবিতা পড়ছি এরপর

কতগুলো বোমার আঘাতে একটা মানচিত্র ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে হিসাব কষে ফেলে লাভ ক্ষতির মুনাফা প্রাকৃতিক সম্পদের লুটপাট করলেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে ভূখণ্ড এখানে শান্তির জন্য কবিতা নয়, বোমারু বিমান বরাদ্দ করেছে ঈশ্বর অতঃপর আঘাতের পর আঘাতে ঝাঁঝরা করে দাও সব সমান্তরাল জায়গা বোকাবাক্সে প্রচারিত করো নিজেদের ক্ষমতা ক্ষমতায়নের এই দুঃসময়ে নিজেকে প্রচার করার জন্যই এই প্রেসকিপশনেই বিশ্বাস তোমার 'দিকে সন্ত্রাসী মরে, বয়স ওদের কতই আর বারো...চৌদ্দ...ষোল...সন্ত্রাসের আস্তানা উড়ে যাওয়ার পর জানা যায়, ওটাকে ইশকুল নামেই চিনতো সবাই

ওখানের মানুষ সকাল দেখে না মসজিদে যায় না, অফিসে যায় না, হাটবাজারেও যায় না শুধু পালিয়ে বাঁচতে চায় অন্য কোনো সীমান্তে তাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে কয়েক প্লাটুন পুলিশ শিশুর মৃতদেহ মিলে যায় সমুদ্র সৈকতে আমরা শান্তির জন্য মসজিদে যাই, গির্জায় ধর্না দিই, মন্দিরে যাই আর তারা বোমা মারে, নিরপরাধ মানুষ মারে, অথচ সন্ত্রাসী নয় একদমই

চলো আমরা কবিতা লিখি, মোমবাতি জ্বালাই মৃতদেহের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করি এটাই অক্ষম লোকের একমাত্র ক্ষমতা আমরা নৈতিকতার কারণে শান্তির কামনায় দাঁড়িয়ে থাকি ভুল সময়ে, ভুল দরজায়

অন্ধকার ৩

অন্ধকার ঘর অন্য দশ জন ঠিক আমারই মতো কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, কেউ দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছে নানান জন নানান সমস্যায় এখানে কেউ এখানের দশ বছরের অতিথি, কেউ আজীবনের সদস্য নানান ঘটনায় আমরা আজ মুখোমুখি কেউ আমার মতো নয়, আর বাকিরা সবাই প্রায় একই রকম একই ঘটনার পথ যাত্রী

আমার বিপরীতে আজ সব হৈ হুল্লোড় করা আয়োজন ঈশ্বরের বিপক্ষে লিখতে চাওয়ার জন্য এই দুর্বিনীত খড়গ ছিদ্র করে দিয়ে যায় বুকের প্রান্ত আমি সত্য লিখতে বসেই লিখে ফেলেছি তেল কূপের কথা আমি সত্য কে ধারণ করতে গিয়ে বলে ফেলেছি বিলাসিতার নির্মম বাক্য আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবটাই শুধু ব্যক্তি স্বার্থের আঘাতে

আমি অন্ধকার ঘরে খাতা আর কলম চাই আমি লিখতে চাই অন্ধকারের কবিতা পাতা ভর্তি থাকুক সত্যে কেউ জানবে না এই খাতায় কি লিখা হয়েছিলো ঈশ্বরকে লিখে দিবো খোলা চিঠি আমি রাজা বাদশাহ কে লিখে দিবো তেল নিয়ে মিথ্যে অহংকারের ইতিবৃত্ত আমি লিখে যাবো মৃত্যু পথ যাত্রার সকল আয়োজন

বেশি দিন আর নেই, খাতার পাতা গুলো অধিকাংশই খালি রেখে যাবে কাল কোনো অচেনা জিপসি কবি লিখে ফেলবেন কিছু অংশ খাতায় লিখা থাকবে কৃষ্ণাঙ্গ হাতের ছোঁয়া, দক্ষিণ এশিয়ার উজ্জ্বল শ্যামল কোনো কবির আঙুল শ্বেতাঙ্গ কবিরাও সোচ্চার হবে এই শূন্যস্থান পূর্ণতার পথে আমার মৃত্যু খুলে দিবে অনেক জীবনের বন্ধ দরজা


অন্ধকার ৪

আকাশ বন্ধ করে দাও বোতাম টিপে বিকল্প পথযাত্রীদের রক্তাক্ত করো নানা অজুহাতে...কথায়...চোখে...মুখে...অঙ্গভঙ্গিতে ঘুম ভাঙলেই খুঁজে পাওয়া যায় রহস্যের ঘেরাটোপ, শীঘ্রই আলো আসবে অথচ দৃষ্টিসীমায় আলোকবর্তিকা নেই মাস্তুল জুড়ে অন্ধকার চাদরে ঢেকে দিয়েছে নিরাপদ যাত্রাপথের এটাই এক অভিন্ন উপায়

টিভি দেখি না বিজ্ঞাপন গিলতে হবে বলে এরই মাঝে টি.আর.পি'র অংকে সামনে চলে আসে নানা অপ্রীতিকর খবর ম্যানহোলে ডুবে যাওয়া শিশু, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত শরীর, বিল্ডিং ধ্বসে কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না ক্ষত বিক্ষত শরীরে কেউ হয়তো ফিরে, বাকিরা নয়...জনগণের বন্ধু বলে পরিচিত মুখগুলোর আচরণ শত্রুর মতো নেভি ব্লু চোখ রাস্তার মোড়ে মালবাহী ট্রাকের দিকে তাকিয়ে থাকে দিনের অনেকটা সময়

সেবক শব্দটাকে বড্ড অসহায় মনে হয় ঠিক আভিধানিক অর্থটা মেলাতে পারি না তারা নিজেদের নিয়ে প্রচারে এতো মগ্ন, ভুলে গেছেন প্রকৃত কাজ কক্ষপথ হীন একটা কণা খুঁজে ফিরে তার মূল কেন্দ্র

'দিকে দখল হয়ে যায় খেলার মাঠ কিশোর ছেলেটির ভিতরের পশুটিও প্রকাশ পায় সুযোগ বুঝে আটাশ দিনের বাচ্চা শিশুটিও পরীক্ষাকেন্দ্রে কে বোঝায়? এই শহরে আজ সব রাজার শাসন সবাই নিজেকে নিয়ে এতো মগ্ন যে দেখেনি তার চারপাশের প্রকৃতি নিজের দোষ ঢাকতে চলে যায় পিছনের পথে বন্ধ করে দেয় সব দরজা জানালা

মতের অমিল মানেই আঘাত করো সজোরে ছিন্নভিন্ন করে দাও সেই সকল মুখ আত্মপ্রচারের এটাই অতি উত্তম পথ পথিক হিসেবে আমি দেখি ঝরে যাওয়া কতগুলো পাখির পালক যারা গান লিখতে বসে হারিয়ে গেছে অজানা পথে


অন্ধকার ৫

এটাকে ঠিক কবিতা বলা যায় না প্রতিবাদও না অধিকার আদায়ের কোনো বক্তব্য লিপিবদ্ধ নেই খাতায় তবুও আপনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে একদম সন্মুখে চোখে চোখ রেখে শান্ত ভাষায়, দৃঢ় চিত্তে, নির্ভীক মননে কিছু কথা আপনার সামনে বিড়বিড় করতেই হয় আমাদের শোনার মতো সময় নেই আপনার, আর হবেই বা কি করে, আপনার এখন কতো কাজ পুরো একটা নিশান আপনার আঙুলে নাচে, উড়ে, ঘুরে, ফিরে

অজস্র কথা চাপিয়ে দিয়েছেন আমাদের উপরে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা কিন্তু ইঁদুর বিড়ালের খেলার মতোই খেলে যাচ্ছেন পুরোটা সময় আপনার কথাগুলো ক্রমশ মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হচ্ছে আর একের পর এক ঘটনা আপনাকে করে তুলছে প্রশ্নবিদ্ধ পত্রিকার পাতা খুললে এখন ভেসে আসে দুর্ঘটনার সংবাদ তালহীন ঘুড়িটিও আকাশের ঠিকানা পেলে নিজেকে রাজা মনে করে বসেন আর ক্রমশ সুতোর সান্নিধ্যটুকুও ভুলে যান

ভূমিকার বাইরে এসে কিছু কথা বলার থাকে বলতে গেলে সাতান্ন এসে জগদ্দল পাথরের মতো আটকে ঘরে ঘর থেকে বেরোই না, চুয়ান্ন শব্দটা খুব পরিচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় আপনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা যদিও আপনার আত্মীয়স্বজন অনেকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ঘুরে ফিরে আসে বারবার আপনি তাদের বিপক্ষে সবসময় মিস্টেরিয়াস নীরবতা পালন করেন আমি চিমটি কেটে পরীক্ষা করি চেতনার থার্মোমিটার


পেপার খুলেই চমকে উঠলাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অনেক চিহ্নিত রাজাকার, অমুক্তিযোদ্ধারাও এখনো পেয়ে যাচ্ছেন ভাতা এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নেই আমি শালা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সবসময় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মেতে থাকি আমার কপাল অনেক ভালো, অন্য দশজন ছেলের মতো চাকরি নামের সোনার হরিণের খোঁজে ব্যস্ত থাকতেও পারতাম আমিও তো ম্যানহোলে পড়ে নেই হয়ে যেতেও পারতাম, হয়ে যেতে পারতাম গুম, মধ্যরাতে লাশ পাওয়া যেতো কোনো ঝোপঝাড়ে কিংবা চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মরেও যেতে পারতাম

SHARE THIS

Author: