উপন্যাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
উপন্যাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সমীরণে মন দোলে - দ্বিতীয় পর্ব ।। সৈয়দা আফরোজা মুন

সমীরণে মন দোলে - দ্বিতীয় পর্ব ।। সৈয়দা আফরোজা মুন


৩নং

শরত এর বৃষ্টি বিঘ্নিত ভোর আকাশে মেঘের লুকোচুরি এবং বজ্রপাতে শশীর ঘুম ভাঙ্গে। আজকের এই ঘুম ভাঙ্গা প্রতিদিনের মতো করে নয়।কারণ আজকের এই দিনে শশী হারিয়েছে তার নয়নের মণি মুক্তাকে। যার মধ্য দিয়ে শশীর জীবনে ভেসে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত বিনা মেঘে ঝড়। সে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মুক্তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নের পৃথিবী। আজ দীর্ঘ চার বছর পরেও সেই দিনের প্রতিটি বেদনার রং জেনো সেই একই রং ধারণ করে আছে। রাতে ঘুমানোর আগে মুক্তার ছায়া বেশে আগমন এবং কিছু কথা বলে যাওয়া জেনো এখনো কানে বাজে। কি অপরাধ ছিলো মুক্তার?অপরাধ ছিলো আমার?যে অপরাধে অপরাধী ভেবে না বলে অভিমানে চিরতরে সবার মাঝ থেকে আড়াল হয়ে গেলো?কি অপরাধ ছিলো আমার?যে অপরাধের শাস্তি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে প্রতিটি ক্ষণে। তবে কি ভালোবাসাই অপরাধ? না হয় কেনো আমি এমন করে মুক্তার সাথে জড়িয়ে গেছি? এসব ভাবতে ভাবতে বুকের ব্যথায় অস্থির হয়ে চটপট করছে একাকী শশী। এই অস্থির ক্ষণে আকাশে ভেসে উঠে ফজরের আযানের ধ্বনি-আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর। শশী অজস্র কষ্টের মাঝে অতি কষ্টে বিছানা ছেড়ে তাড়াতাড়ি নামায আদায় করতে ওযু করার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করে। ওযু করে প্রথমে মুক্তার জন্য নফল নামায় আদায় করে তসবি হাতে তসবি পড়ে।ফজর এর ফরজ নামায আদায় করে কিছুক্ষণ যিকির আসকার করে করে।এমন সময় জ্যোৎস্না বেগমের ডাক শশী বলে-জী ফুফু আসতেছি।
জ্যোৎস্না বেগম:আজ তোমার সকল আন্টিদের বাসা মাংস রুটি দেবো।একটু ময়দা গুলিয়ে দাও।
জ্যোৎস্না বেগম মাঝে মাঝে তাঁর প্রতিবেশী বান্ধবীদের রান্না করে খাওয়ায়। তা দেখে শশী ভাবছে,আজ মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী তাই সবাইকে কিছু খাওয়াচ্ছে।নিপা রুটি তৈরী করছে আর ফুফু মাংস গরম করে শশীকে বলে,এগুলো বেড়ে দাও।নিপা সবাইকে দিয়ে আসুক।এমন সময় শাহানারা বেগম ফোন করে জ্যোৎস্না ফুফুর মোবাইলে।ফোন রিসিভ করে বললো-ভাবি,কেমন আছেন?
শাহানারা বেগম:বেশি ভালো নেই।আজ মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী। মিলাদ হবে,হুজুরের ভাতের আয়োজন করতে মাংস ধুতে গিয়ে পুকুর ঘাটে পড়ে গেছি।শশী কি করছে?কেমন আছে?তাকে কল দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।
জ্যোৎস্না বেগম শশীর দিকে তাকিয়ে বললো-দেখিতো প্রায় সময় কথা বলে।আমিতো মনে করতাম আপনার সাথে কথা বলেন। এই নেন,শশীর সাথে কথা বলেন।
শশী মোবাইলটা হাতে নিয়ে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।ফুফু চেয়ে আছে দেখে তাড়াতাড়ি শশী মোবাইলটা কানে দিয়ে বলে-হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।
শাহানারা বেগম:ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো?
শশী নীরব হয়ে আছে।শশীর নীরবতা দেখে শাহানারা বেগম আবার বললো-বাড়িতে কবে আসবে?শশী জ্যোৎস্না বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো-সামনে পূজার বন্ধে বাড়িতে আসবো।
শাহানারা বেগম:ঈদের বন্ধে এসো নাই কেনো?
শশী মনে মনে ভাবলো,২৯ তারিখে মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী ৩০ তারিখে স্কুল খোলা। ওখানে গিয়ে আমি কি স্বাভাবিক থাকতে পারবো?শশীর চুপ থাকা দেখে শাহানার বেগম আবার বললো-স্কুল কবে খোলা। শশী ক্ষীণ কণ্ঠে বলে-আগামী কাল স্কুল খোলা।এই বলে শশী মোবাইলটা কেটে দিলো।মোবাইল রেখে শশী বাথরুমে ডুকে অনেকক্ষণ গুমরে গুমরে কাঁদলো।দু,চোখে আয়নার স্কীনে দেখেছে জেনো,মুক্তা বলছে-কেনো এতো কাঁদছো?আমিতো আছি তোমার পাশে।তোমার কায়ে।আয়নাতে চেয়ে দেখো,তোমার লোচনের মধ্যে আমার আঁখি।নিজেকে একটু সামলে নিয়ে ভাবনাকে আড়াল করার জন্য ড্রয়িং রুমে এসে টিভি অন করে শশী।প্রচণ্ড লেখার ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও অধরের বারণের কারণে লেখছে না কোনো কিছু।ভাবছে বসে,অধরকেও বলবো না আজ আর ফেইস বুক কবিতা লেখে দিতে।কারণ কবিতার ভাষা হারিয়ে গেছে।২০১১ সালে এই সময় রুপালী এসেছিলো আমার কাছে। সে দিন এই সময়ে মুক্তার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি। আজ ঠিক ঐ সময় এগারো সালের মতো আজ তার আগমন। আজ এসেছে কলেজে যাওয়ার জন্য।মনের মধ্যে মোড় ঘুরে গেলো,কলেজে যাবো না।আমার চোখের ভাষা রুপোলী বুঝতে পেরে বললো-শশী,তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও।ইন্টার্র্নিতে ভর্তি হওয়ার সময় যে কাগজ পত্র রয়ে গিয়েছিলো আজ তা দেবো।
শশী:আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।একটু শুয়ে থাকবো।আজ কলেজে যাবো না।
এই কথা শুনে জ্যোৎস্না বেগম বললো-তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে যাও।আসার সময় আমার জন্য ডায়াবেটিকস হাসপাতাল থেকে ঔষধ নিয়ে আসবে।আজ জাতীর হার্ট দিবস।হাসপাতালে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন আছে।
শশী রেডি হয়ে রুপালীকে নিয়ে কলেজে চলে গেলো।কলেজ থেকে ফেরার পথে ডায়াবেটিকস হাসপাতাল থেকে ঔষধ কিনে বাসায় ফেরার পথে রুপালীকে বলে-কৈ খাওয়ার আয়োজন তো দেখলাম না।
রুপালী:আরে ফুফু দুষ্টুমি করেছে আর কি?চলেন আজ একজনের কাছে যাবো।
শশী:কোথায়?কোন সে জন?
রুপালী:আপনি তাকে ভালো করে চিনেন?গেলে আপনাকে দেখে অনেক খুশি হবে।আপনারও ভালো লাগবে।
শশী:আহা বলোনা সে কে?
রুপালী:আমার উপর কি আপনার আস্থা নেই?
শশী:শতো ভাগ আছে।
রুপালী:তাহলে প্রশ্ন না করে চলুন।
শশী:আচ্ছা ঠিক আছে।
রুপালী:আজ আমরা যে বাসায় যাচ্ছি। ওখানে আমাদের মোহছেনা আপু আছে।
শশী:হোমিওপ্যাথিক এর মোহছেনা আপু?
রুপালী:জী।
কথায় কথায় বাসায় এসে উপস্থিত হয় দু,জনে। দু,জনকে এক সাথে দেখে মোহছেনা আপুতো মহাখুশি। আরে শশী,তুমি এখানে বিশ্বাস করতে পারছিনা।
রুপালী:বিশ্বাস না হলে ছুঁয়ে দেখেন।
অতি কষ্টে শশী সালাম বিনিময় করে।
মোহছেনা আপু সালামের উত্তর নিয়ে দু,জনকে কেমন আছে জানে চায়।
রুপালী:আমরা ভালো আছি।আপনি?
মোহছেনা:আমিও ভালো আছি। কিন্তু শশী ভালো নেই তা তার চেহারায় বলছে। শশী,তোমার এই অবস্থা কেনো? তোমার কি শরীর খারাপ?
রুপালী:শশীর শরীরের চেয়ে মন বেশি খারাপ। আজ ওর ছোট বোন মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী।
মোহছেনা:শশী,কথাটা কি সত্যি?
শশী:জী,আপু।
মোহছেনা:এইটা ঠিক নয়,শশী।জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে।এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। এই নিয়মকে চাইলে কেউ ভাঙ্গতে পারবেনা। আর তুমি বোনের ভাবনায় নিজেকে এভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছো যা একদম উচিত নয়। যে নেই তার কথা ভেবে এভাবে নিজেকে ধ্বংস করো না।
এমন সময় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে শশী বলে-আপু,শিশুর কান্নার শব্দ পাচ্ছি।কার বাচ্চা?
মোহছেনা:রুপালী,তুমি কি শশীকে বলো নাই?
রুপালী:না,বলি নাই,আপু। তাকে সারপ্রাইজ দিতে এই না বলা।
মোহছেনা:আপুর মেয়ে।
শশী:আপু.ঐ রুমে চলেন।আমি একটু দেখবো।
মোহছেনা:চলো যাই।
শশী:খুব সুন্দরতো,আপু।আমি একটু এখানে
বসি।
মোহছেনা:কি খুব মায়া হচ্ছে?
শশী:জী,আপু।
মোহছেনা:তাহলে তুমি এখানে থাকো। আমি রুপালীকে নিয়ে রান্নাটা শেষ করেনি।
শশী:ঠিক আছে,আপু।
রুপালী,মোহছেনা আপু রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে শশী মুক্তার ভাবনায় ব্যস্ত। আজ মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী।এই সময়ে পেলাম এক নব জাতিকা শিশুকে। এই জাতিকার মাঝে কি মুক্তার পুনর্জন্ম হয়েছে?এমন ভাবনায় গভীর মগ্ন হয়ে নব জাতিকার কপালে একেঁ দিলো আশীর্বাদের এক নিদর্শন।
শশীর ছোট বাচ্চার প্রতি এতো ভালোবাসা যা দেখে সূচনা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে,বাচ্চার আজ যে ভালোবাসা দেখলাম,বিয়ের পরে নিজের বাচ্চার জন্য এমন ভালোবাসা থাকবে কিনা বিধাতা জানে? তবে বিধাতার কাছে প্রার্থনা,নিজের বাচ্চার প্রতি জেনো এই ভালোবাসা আরো অজস্রগুণ হয়।
শশী:আপু,কিছু ভাবছেন কি?
সূচনা: না,তেমন কিছু না।
শশী:আপু,তেমন কিছু না ঠিক আছে কিন্তু কিছু একটা ভাবছেন,এটাওতো ঠিক।
সূচনা:তা ঠিক আছে।সত্যি বলতে কি,ভাবছি তোমাকে নিয়ে।
শশী:কি ভাবছেন?
সূচনা:ভাবছি,বাচ্চার প্রতি তোমার এতোই ভালোবাসা। যা ভাবতে খুব ভালো লাগছে। বিধাতার কাছে চাইলাম,এই ভালোবাসা তোমার বাচ্চার প্রতি অজস্রগুণ হয়ে অটুট হয়ে থাকুক।
শশী:আপু,জানিনা,বিধাতা কোপালে কি রেখেছে?
সূচনা:এমন মনের মানুষের বিধাতা সব সময় মঙ্গল করে।
নাস্তা নিয়ে মোহছেনার আসার সময় মঙ্গল শব্দটা কানে বাজে তাই মোহছেনা বলে-কার মঙ্গলরে?
সূচনা:শশীর মঙ্গলের কথা বলছি।
মোহছেনা:ওর প্রতিতো আমাদের সবার মঙ্গল কামনা। বিধাতা জেনো সব সময় তাকে সুখে রাখে।এসো যে অনেক ক্ষণ হয়েগেছে। এবার একটু নাস্তা করো।
শশী:একটু মিষ্টি চানাচুর মুখে দেবো আর কিছু নয়,আপু।
মোহছেনা:এবার কিন্তু লাঠি পেটা করা হবে। তাড়াতাড়ি সরবত খাও। তারপর ফল খাবে,না হয় কিন্তু খবর আছে।
শশী: Please,আপু।
মোহছেনা:আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।দেখতে চাই,একটু,একটু করে সবটুকু খেয়েছো।
সূচনা: বড়দের কথা মেনে চলতে হয়।
শশী:চেষ্টা করবো,আপু। একটু অতিরিক্ত খেলে বুমি হয়ে যাবে। তার চাইতে যতোটুকু সম্ভব খাচ্ছি। রুপালী কই?
মোহছেনা:ফ্রেস হয়ে আসতেছে।
এমন সময় হাতে ব্যগ নিয়ে একজন মাঝ বয়সী মহিলার আগমন ঘটে। সাথে একটা বারো,তেরো বছরের মেয়ে।
মোহছেনা:শশী,তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। এই হচ্ছে আমাদের বেয়াইন অর্থাৎ আপুর ননদ। বেয়াইন,এই হচ্ছে শশী,ও রুপালী। আমার আদরের ছোট বোন।দু,জনে এবার হোমিওপ্যাথিকে মেধা তালিকায় পাশ করেছে।
শশী:আপু,পরিচয়তো হয়ে গেলো। এবার সবাই মিলে এক সাথে নাস্তা করি।এই বেয়াইন,আসুন,আসুন।
সবাই একত্রে নাস্তা করছে এমন সময় মাইকে যোহরের আযান শুরু হলো।হাল্কা একটু নাস্তা করে শশীর নামায আদায়ের প্রস্তুতি দেখে সেই বারো বছরের অন্যজন বলে-আন্টি,আমিও তোমার সাথে নামায আদায় করবো।
শশী:খুব ভালো।এসো এক সাথে নামায আদায় করি।
এই বলে দু,জনে পাশের রুমে গিয়ে নামায আদায় করে। নামায শেষে অন্যজনকে শশী জিজ্ঞাসা করে-অন্যজন,তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
অন্যজন:৬ষ্ঠ শ্রেণীতে।
শশী:বাহ্।তোমার রোল নং কতো?
অন্যজন:তিন।
শশী:আগামীতে সপ্তম শ্রেণীতে এক নাম্বারে আসতে পারবেনা?
অন্যজন:চেষ্টা করবো।
শশী:এইতো খুব ভালো মেয়ে।তুমি কি সব সময় নামায আদায় করো?
অন্যজন:প্রায় করি।স্কুলে থাকলে অনেক সময় পারি না।
শশী:কেনো?
অন্যজন:কমন রুমে ঐ পরিবেশ নাই।
শশী:ও আচ্ছা। বাড়িতে এসে কাযা পড়ে নিও।
অন্যজন:আগামী দিন থেকে তাই করবো।
শশী:Thank you.
অন্যজন:Well come.
শশী:বাহবা।একটি কবিতা শুনবে?
অন্যজন:হ্যা,শুনবো।
শশী:কেমন কবিতা শুনবে?
অন্যজন:যেকোনো কবিতা।
শশী:শুনো,তাহলে-
নিঃসীম অন্ধকার
মম হৃদয় স্পন্দন বন্ধ হয়ে আসে,
নেইতো মোর কেউ পাশে।
চারিদিকে কষ্টের হাহাকার,
মন বলে আমি কার?
নিঃসীম অন্ধকার আজি,
কত রাত একা একা জাগি।
নিঃশব্দে একেলা নির্জনে,
অতীতের কষ্টগুলো পড়ে মনে।
হৃদয়ের কম্পন কাঁপে থরথর,
অন্তরটা হয়ে গেল তাই ঝরঝর।
আজও পাইনি মোর শান্তি নিকেতন,
কাঁদে মন তাই সারাক্ষণ।
মরুভূমির মতো হলো মম বালুচর,
হারিয়ে গেছে মোর আপন ঘর।
সবাই হয়ে গেলো কেন যে পর?
হৃদয়ের কোণে লুকানো অনিদ্র আত্মার কান্না,
অন্তরের মাঝে বয়ে গেছে দুঃখের বন্যা।
অন্যজন:খুব সুন্দর হয়েছে। কবিতার লেখক কে,তাতো বলেননি,আন্টি?
শশী:লেখক নয়,লেখিকা অহনা অহমিকা শশী।
অন্যজন মুখে আঙ্গুল দিয়ে একটু ভেবে বলে- শশী,শশী মানে আপনি।
শশী:হ্যাঁ,আমি।
অন্যজন:আপনি কবিতা লেখেন!কি মজা,কি মজা।আপনার মনে কি অনেক দুঃখ?
এই কথা শুনে শশীর চোখে জল এসে টলমল করছে।
অন্যজন:শুনেছি,যারা কবিতা লেখে তার খুবই ভদ্র।আপনিও তাই।ভদ্র মানুষদের চোখে জল আসতে নেই।তাদের চোখে জল এলে,তারা হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়লে,অপরকে পথ দেখাবে কি করে?আন্টি,তোমার দুঃখকে কবিতার খাতায় রেখো,জীবনের পাতায় নয়।
এমন সময় মোহছেনা এসে ডাকে-শশী,এই শশী,টেবিলে ভাত নিয়ে এসেছে। এসো সবাই মিলে ভাত খেয়ে নিই।
শশী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ স্বরে অন্যজনকে বলে-চলো,ভাত খেতে ডাকছে।
অন্যজন:কথা বলতে,বলতে খিধার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।মনে করিয়ে দিয়ে ক্ষুধাটা দ্বিগুণ করে দিলে,আন্টি।
শশী:চলো,সবাই বসে আছে। টেবিলে গিয়ে পেট ভরে খেয়ে নিও।
শশী আসতে দেরি দেখে এবার রুপালী ডাকতে উঠে দাঁড়ালো।শশীর চোখে চোখ পড়তে রুপালী বুঝতে পারলো শশী কান্না করেছে। শশী এসে নীরবে মোহছেনা ও রুপালীর মাঝখানের চেয়ারে বসেছে।
মোহছেনা:শশী,আবার মন খারাপ করেছো কেনো?আমি না তোমাকে বারণ করেছি।
শশী:কেউ নাতো।
মোহছেনা:তোমার চোখে মুখের বিষণ্ণতার চাপতো তাই বলছে।এই সব দূঃচিন্তা বাদ দিয়ে নিজেকে সাজাতে শিখো,ভালোবাসতে শিখো।এই বলে শশীর প্লেটে ভাত আর মাংস নিয়ে দেয়।
গরু মাংস শশীর প্রিয় খাবার অথচ এই খাবার তার সামনে থেকেও তেমন কোনো লোভ জাগছেনা। আজ জেনো তার সমস্ত কিছু লোভ পেয়েছে মুক্তার স্মৃতির কাছে। এই স্মৃতির কাছে আজ সব স্মৃতি আড়াল হয়ে গেছে।
মোহছেনা:কি বাচ্চা ছেলের মতো টিপে টিপে মুখে লোকমা দিচ্ছো।
সূচনা:শশী,আর একটু সবজি নেবে?
শশী: না,আপু। এইটুকুই যথেষ্ট।
অন্যজন:আমি বেশি করে খাওয়ার জন্য শশী আন্টি অল্প খাচ্ছে।
অন্যজনর কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো।
মোহছেনা:শশী,অন্যজনর কথা কি ঠিক?রুমের ভিতর দু,জনে বসে বসে কি এসব নিয়ে কথা হয়েছে?
শশী:অন্যজন দুষ্টুমি করছে।
সূচনা:খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেই। আগে খেয়ে নিই। তারপর সবাই মিলে গল্প করবো।
এদিকে অধরের অস্থিরতা কাটছে প্রতিটি ক্ষণ। সকাল থেকে অন্যে বার মোবাইলে ফোন দিয়ে শশীকে পাওয়া যাচ্ছে না।জানি না শশী কেমন আছে?কি করতেছে?আজ তার ভালো থাকার কথা নয়।তবে কি শশী কান্না করতেছে? কান্না করতে করতে নাকি ঘুমিয়ে গেছে?না হয় কেনো এতবার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না?
এতো চেষ্টা করলাম তবুও মুক্তার ভাবনা থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। পারলাম না তাকে ভালো রাখতে। ও ভালো না থাকলে আমি যে ভালো থাকতে পারিনা। তা সে জানে এবং এটাও জানে তার ফোন রিসিভ না হলে আমি অস্থির হয়ে যাই। সেও অপেক্ষায় থাকে আমি কখন ফোন করবো। অথচ আজ এমন অসহায় দিনে আমার ফোনের কোনো প্রতি উত্তর পাচ্ছিনা।চেয়েছিলাম,আজ সারাক্ষণ মোবাইলে কথা বলে তাকে হাঁসি খুশিতে মাতিয়ে রাখবো।নাকি.শশী জেনে শুনে ফোন ধরছে না,আজ এই ব্যথার দিনটিকে শুধু মুক্তার করে রাখতে চায় বলে আমার ফোন রিসিভ করছে না।এতো কিছুর মাঝেও পাগলীর পাগলামি বন্ধ করতে পারলাম না। এমন ভাবতে ভাবতে মেহেরুন এর কথা মনে পড়ে গেলো।তাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করি,শশীর সাথে কথা হয়েছে কিনা?এই বলে অধর মেহেরুন এর মোবাইলে কল দিলো।
অধর:হ্যালো,মেহেরুন।
মেহেরুন:আসসালামু আলাইকুম,আংকেল।
অধর:ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো,মেহেরুন?
মেহেরুন:ভালো নেই,আংকেল।
অধর:ভালো না থাকারি কথা।
মেহেরুন:ফুফির সাথে কি কথা হয়েছে?
অধর:না,সকাল থেকে অনেক বার রিং দিয়েছি কিন্তু কোনো খবর নাই এখনো পর্যন্ত তাই তোমাকে রিং দেওয়া। তোমার সাথে কি কথা হয়েছে?
মেহেরুন:না,আংকেল।আমি সকালে একবার রিং দিয়েছিলাম।এখনো কোনো সাড়া শব্দ নেই। সেই তখন থেকে অপেক্ষায় আছি,কখন ফুফি কল করবে?
অধর:মন খারাপ করো না।হয়তো ঘুমিয়ে আছে মোবাইল সাইলেন্স করে।
মেহেরুন:আংকেল,চিন্তা করতে চাই না তবু এসে যায়। আমি নিশ্চিত ফুফি ঘুমায়নি। ঘুমের ভান ধরে শুয়ে শুয়ে কান্নাকাটি করছে।
অধর:হয়তো তাই হবে।তোমার কাছে কি রুপালীর মোবাইল নাম্বার আছে?
মেহেরুন:না,আংকেল।
অধর:কি যে করি?কিভাবে খবর নেওয়া যায়?
মেহেরুন:উপায় আছে কিন্তু ঐ নাম্বারে ফোন করা যাবে না।
অধর:কিভাবে?
মেহেরুন:বড় মামা থেকে জ্যোৎস্না নানুর নাম্বার নিতে পারি কিন্তু ঐ নাম্বারে ফোন দিলে কি না কি মনে করে।তার চাইতে একটু অপেক্ষা করাই উত্তম হবে।
অধর:কি আর করা? ঐ দিকে তুমি অপেক্ষায় থাকো।তোমাকে ফোন করলে আমাকে ফোন দিতে বলিও।এইদিকে আমি অপেক্ষায় আছি।আমাকে ফোন দিলে আমিও তোমার কথা বলবো।
মেহেরুন:আচ্ছা,আংকেল।
অধর:ভালো থেকো।
মেহেরুন:আল্লাহ হাফেজ।
মেহেরুন এর সাথে কথা শেষ করে অধরের অস্থিরতা জেনো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।শশীর কি হয়েছে?কোনো বিষম সমস্যা হয়ে গেলো নাতো?আজ 'আত্মার ভিতর আত্মা'কাব্যগ্রন্থের শেষ বিদায় কবিতাটি লেখার কথা ফেইস বুকে।এসব প্রশ্নের উত্তর মনের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর আসছেনা।
দুপুর খাওয়ার শেষ করে শশী ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে তিনটা বেজে গেছে।রুপালী ডেকে বলে-
এই রুপালী,সাড়ে তিনটা বেজে গেছে।ফুফু বাসায় চিন্তা করবে।আর দেরি করা ঠিক হবে না।
রুপালী:দশ পনেরো মিনিট বিশ্রাম নেন।এরপর বের হবো।
মোহছেনা:ভাত খাওয়ার পর পর হাঁটতে নেই।এতে শরীর খারাপ করবে।একটু বিশ্রাম নাও।
সূচনা:আমার মেয়েটাকে আর একটু দেখে যাবে না।
শশী:এইতো লোভ জাগিয়ে দিলেন।চলেন,একটু আদর করে আসি।
সূচনা:চলো।
শশী বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে অনেক ক্ষণ নীরব হয়ে থাকে।এই নীরবতার মাঝে দু,চোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু ঝরে যাচ্ছে। সূচনা বুঝতে পারছে,শশী কান্না করছে।এই কান্না শুধু তার রক্তের বন্ধন হারানোর কান্না নয়,আত্মার সাথে আত্মার মিশে যাওয়ার কান্নাও বটে। এমন সময় রুপালীর ডাকে শশী পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। ওড়নার আঁচলে চোখ মুছে বাচ্চাটির কোপালে একটি চুমু দিয়ে সূচনাকে বলে-
আপু,আজ উঠি।
সূচনা:এভাবে ভেঙ্গে পরতে নেই।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করো।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মোহছেনা:চা পান করে তারপর যাও।
রুপালী:দুঃখিত,আপু।এখন আর চা পান করবো না।আজ উঠা যাক।
শশী:আপু,আজ আমরা আসি।ভালো থাকবেন।
অন্যজন:আবার কবে দেখা হবে,আন্টি?
শশী:ওরে পাগলী মেয়ে,খুব শীঘ্রই দেখা হবে।মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবে।আল্লাহ হাফেজ।
অন্যজন,মোহছেনা,সূচনা একযোগে বলে,আল্লাহ হাফেজ।আবার এসো।
রুপালী:আপু, ভালো থাকবেন।খোদা হাফেজ।
মোহছেনা:তোমরাও ভালো থেকো।
শশী আর রুপালী মোহছেনা আপুর বাসা থেকে বের হয়ে দেখে বাইরের আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা হয়েছে তাই দু,জনে কথা বলতে,বলতে বাসা এসে পৌঁছে বিকাল পাঁচটায়।রুপালী শশী ও ফুফুকে বলে নিজের বাড়ির পথে পা বাড়ালো। শশী পোশাক পরিবর্তন করে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অধরের অনেকগুলো কল।মেহেরুনও কল দিয়েছে। অধর কে কল দিতে গিয়ে আবার থমকে যায়। না,এখন নয় আরো একটু পরে দেবো। এই বলে শশীর মন ভাঙ্গা ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় একটু বিশ্রাম দিতে শুয়ে পড়ে।





৪র্থ
পড়ন্ত বিকেল।পশ্চিমাকাশে আলো আঁধারের লুকোচুরি।দিনের কর্ম ব্যস্ততা ছেড়ে কৃষক ঘরে ফিরে।রাখালিয়া বাঁশি বাজাতে বাজাতে দলছুট গরুর বহরের পিছু হাঁটছে। প্রকৃতির এমন লুকোচুরির মাঝে দিনের পরাজয় বরণ করে আঁধারের কাছে। এই আঁধার জেনো নীরবে ভর করে শশীর মনে।দুঃখে ভারাক্রান্ত মন আজ মুক্তাকে নিয়ে কিছুটা লেখবে এই ভাবনায় খাতা কলম নিয়ে টেবিলে বসে।সাদা কাগজে সাজায় মুক্তাকে নিয়ে আপন মনের ভাবনা। শিরোনামে লেখা-
*খোলা চিঠি*
কষ্টের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বেদনার পত্র সাজাই।ছন্দগুলো হারিয়ে গেছে,কোথায় গেলে পাই?
পরবার্তা শুরু হলো,গোছায়না পত্রের কথা।চিঠিখানি পড়ে আবার পেয়েও নাকো ব্যথা।তোমার জন্য সাজাই আমি ছন্দ দিয়ে পত্র।আজ হয়েছি আমি তোমার লেখা ছাত্র।পত্রখানা লেখতে গিয়ে ভাব যে আসে কতো?চিঠির উত্তর দিও তুমি হয়ে একটু নতো।লিখছি লেখা তোমার কাছে,কথা আছে যতো।পত্রখানি পড়ে তুমি জল পেলোগো ততো।কেনো তুমি এমন করলে,প্রশ্ন জাগে মনে?সবাই তোমায় ভুলে গেলো,মোর হাতটি ভাবে প্রতি ক্ষণে।তোমায় নিয়ে ব্যস্ত আমার দু,টি আঁখি।হাতে কলম নিয়ে তোমায় লেখার ভাষায় ডাকি।উত্তর পাওয়ার আশায়,থাকি কতো কবিতার ভাষায়।দিবা রাত্রি যাচ্ছে আমার উত্তর পাওয়ার আশায়।কতো করে বলেছিলাম,থেকো আমার পাশে।তোমায় নিয়ে সারাক্ষণই কান্না আমার আশে।পত্রখানি পৌঁছে দিবে তোমায় সমীরণে।জানিনা তোমার আরো কাছের মানুষগুলোর আছে কিনা মনে।কতো কথা বলেছিলে আপনও ভাবিয়া।কে কতোটুক তোমায় ভাবছে,তোমার জীবন নিয়া।বড় অদ্ভুত লাগলো আমার,তোমার আপন জনার আচরণে।এমন করে ভুলে গেলো,পড়ে না মনে যখন তখন। ভালোই আছে,করছে ভালো মন দিয়ে সংসার।তোমায় গলায় পরালো না,পরিয়েছে বউয়ের গলায় হার।সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেও হবে না সে মুক্তা।তোমার ব্যথা বুঝেনি যখন,কেউ বুঝবেনা তার ব্যথা।বিধির কাছে আরাধনা,তাদের বিচার হোক।দেখায় জেনো মাঝে মাঝে তোমার রূপের ঝলক।নীল আকাশে নক্ষত্রকে তোমায় ভেবে বলি আপন মনে কথা,মেঘের আড়াল হলে জেনো তুমি হারিয়ে যাও,তোমায় না দেখতে পেয়ে পাই মনে ব্যথা।
অনেক ক্ষণ ধরে জ্যোৎস্না বেগম শশীকে ডাকছে।কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিছানা ছেড়ে শশীর কক্ষে প্রবেশ করে।এসে দেখতে পেলো, টেবিলে খাতা কলম নিয়ে চেয়ারে বসে আছে।বললো,আছর নামাযের পর পড়ার টেবিলে বসতে নেই।উঠে বাহিরে গিয়ে একটু দোলনায় বসো। মনটা ভালো লাগবে। এমন ভাবে কক্ষের ভিতর বসে থাকো,মনে হয় নতুন বৌ।বাসার মধ্যে এভাবে থাকলে হার্টের সমস্যা হয়ে যায়।চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকলে বেশির ঐ সমস্ত মানুষের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।
শশী কথাগুলো নীরব হয়ে শুনছে আর কান্না মাখা কণ্ঠে বলছে,চলেন ফুফু,আপনার চোখে ঔষধ দিতে হবে।
জ্যোৎস্না বেগমের চোখে ঔষধ দিয়ে শশী বাহিরে গিয়ে দোলনায় বসে।দোলনায় বসে আকাশ পানে তাকিয়ে দেখে,কালো মেঘগুলো জমে আছে ছড়িয়ে,ছিটিয়ে।সেই মেঘে ঝাপসা হয়ে জেনো মুক্তা বসে আছে।দু,হাত বাড়িয়ে ডাকছে।আয় শশী আয়,আমার কাছে আয়।আমার পাশে থেকে আমার মতো চায়।কতো মানুষ আসে যায় কবরের পাশে,আমি থাকি শশী তোর আসে।ভাঙ্গা হাতে মালা আর গাঁথা হয় না,তাই কি তোর ছোঁয়া আমার কাছে আসেনা?আমিতো বেশ যাই তোর কাছে।আনাগোনা করিতো তোর পাশে পাশে।তুই ছাড়া কি আর ভালো লাগে বল?হাতটি ধরে বলছি,চাঁদপুর থেকে শিবপুর চল।
নাকি,তোর মনটা আমায় ছাড়া একা থাকতে চায়?
শশী বলে উঠলো-না,না,না।
গুনগুন করে দোলনায় হেলে দোলে গাইছে-
আমার মৃত্যু যদি আসে নাকের ডগায়,
তবু বলবো,আমার প্রাণটা তোমার কাছে যায়।
আমি তোমায় নিয়ে ভাবি সারাবেলা,
এই ভাবনাতে থাকে শুধু কবিতারি খেলা।
এমন মানুষ কোথায় পাবো দেখতে তোমার ন্যায়,
নিশি রাতে হাত বাড়িয়ে ডাকি তোরে আয়।
বাঁধন ছেড়ে চলে গেলি কেনো অবেলা,
তাইতো দিন যাচ্ছে আমার,যাচ্ছে অবহেলা।
সারাক্ষণই ভাবনার মাঝে তোরি ঘ্রাণ পায়,
আসবি তুই যে আমার পাশে,চোখ দু,টি যে চায়।
তুই বিহনে মনে কতো জ্বালা,
তোরে ছাড়া বসে আমার বিরহেরই মেলা।
এই মেলাতে বসে বসে কাটে আমার ক্ষণ,
বুঝলি নারে বন্ধু আমার,তুই যে আমার জীবন।
এমন সময় মাগরিবের আযান ভেসে এলো।আযান শুনে শশী নামায আদায় করতে দোলনা ছেড়ে রুমে চলে গেলো। এসে নামায আদায় করে তসবি পড়ে অনেক ক্ষণ নীরবে কাঁদলো।এই কান্নার আহাজারিতে তার একটাই বাসনা,মুক্তা জেনো বেহেস্তের বাগানে আরতি হয়ে দোলে আর বলতে লাগলো-
অবনীর বুকে আজ আমি একা,
কখনো পাবো না মুক্তা তোমার দেখা।
বড্ড বেশি মনে পড়ে আজ তোমাকে,
কেনো গেলে চলে,বলোনি আমাকে?
আজকাল এতো বেশি করো জ্বালাতন,
নিশি রাতে স্বপ্ন দেখে কাঁদে এই মন।
দূর আকাশের তারা হয়ে দূর গগনে থাকো,
ওখান থেকে কেমন করে আমায় তুমি দেখো?
কল্পনাতে তোমায় আমি এমন করে দেখি,
ইন্দু-মুক্তা বলে আমি তোমায় শুধু ডাকি।
চাঁদের কণা,ইন্দু তুমি দীপ্তি ছড়াও বেশি,
চোখের জলে,ঠোঁটের কোণে আমার চাপা হাঁসি।
প্রার্থনা করি বিধাতার কাছে,
প্রভু রাখে জেনো তোমাকেই পাশে।
নামাযের বিছানা ছেড়ে অনেক কষ্টে খাটের উপর উঠে বুকে বালিশ চেপে ধরে অনেক ক্ষণ কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে বিধাতাকে বলছে,ওগো প্রভু,ওগো দয়াময়,ওগো রহিম,ওগো রহমান,তুমি কেনো নিয়ে গেলে আমার জান?এই শূন্য খাঁচায় পরিপূর্ণ হয়ে নেই যে আমার প্রাণ।ওগো অন্তর্যামী,তুমি জগতস্বামি।যদি তাই হয় কাঠগড়ায় কেনো আনতে পারোনা আসামী?হীরার চেয়েও দামী মানুষের জীবন।সেই জীবনকে ধ্বংস করে এনে দিলে মরণ।আজ কারো স্মরণে না থাকলেও আমার হয় স্মরণ।এই কেমন বিচার? এই কেমন ধরণ?পাখি,তুমি করলে মৃত্যু বরণ।তোমার মরণের পর আমার ডানা আর মেলে না!মৃত্যুর মুখে তুমি আমায় কাছে টেনে নাও।কাছ থেকে হয়তো চাওয়া হয়নি তোমার তাই কি যাওয়া হয়নি আমার?শুনেছি মৃত্যুর পূর্বে করেছিলে যিকির।পড়েছিলে পাঁচ কলেমা।সেই কথাগুলো রেখেছি জমা।আমার মনের কোণে সদাই তোমায় নিয়ে জল্পনা।দিবা রাতি করি তাই তোমায় নিয়ে কল্পনা-
সেই ক্ষণে উঠান জুড়ে শুয়েছিলে তুমি,তখন ছিলো ২০১১ সাল,
এই ক্ষণে কাঁদি আমি,তুমি যে আকাল।
ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছিলে তুমি কবর শয্যায়,
মাটিতে লুটিয়ে কাঁদি আমি,আমার যে প্রাণ যায়।
সেই দিন এক মুঠো মাটি দিতে পারেনি,যে তোমায় বেশি করতো আদর,
দু,টি ফুল ছিলে তোমরা,ভালোবেসে দিতো তোমার গায়ে চাদর।
হয়তো বলেছিলো তোমায় বিষাক্ত কথা,
সেই কথা শুনে তুমি পেয়েছিলে ব্যথা।
আজ কি তোমার কায়ে বোধ হয় ব্যথার যন্ত্রণা?
কতো অভিমানে প্রকাশ করতে তোমার বাসনা।
শেষ বিদায়ে শিবপুর থেকে চাঁদপুর আসার সময় উঠিয়ে দিয়েছিলে ট্রেনে,
বলেছিলে তুমি আবার নিয়ে আসবে,হলো না তা,গিয়েছি আমি তোমার মৃত্যুর সংবাদ জেনে।
কাঁদছিতো,কাঁদছি, উঠানের বালিতে গড়াগড়ি করে,
এসেছে এক সাথে এ্যাম্বুলেন্সে করে,উঠতে পারোনি ঘরে।
চারদিকে হাহাকার,শুনি তোমার চিৎকার,আপুরে,ও আপু,
যাচ্ছে নিয়ে তোমায়, খুঁজছি আমি এদিক ওদিক তবু।
এ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে যখন আমার হাত তোমার কায়ের স্পর্শ পায়,
ছিলো নরম তুলতুলে কায়,তুলার ন্যায়।
শুনেছি মৃত মানুষ নাকি কোমল থাকে না,
তুমি এমন ছিলে তবুও তোমায় কেউ রাখেনা!
সবার আদরের ছোট্ট খুকি,
মুক্তা বলে তোমায় ডাকি।
সকালে জন্ম হয়ে সন্ধ্যায় করলে কবরে প্রবেশ,
এটাই কি ভাবনায় ছিলো?এভাবে চলে গিয়ে থাকবে বেশ?
ঘড়ির কাঁটায় তাকিয়ে দেখে রাত নয়টা। কখন যে নয়টা বেজে গেলো শশী বুঝতে পারলো না।জ্যোৎস্না বেগম শশীকে ডাকতে লাগলো।শশী জ্যোৎস্না বেগমের কক্ষে গিয়ে বললো-ফুফু,কেনো ডাকছেন?
জ্যোৎস্না বেগম:রাত নয়টার সময়ের চোখের ড্রপটা-তো দেওয়া হয় নাই।ইদানীং দেখি টিভি না দেখে সন্ধ্যা হলে শুয়ে থাকো।এভাবে শুয়ে থাকলে শশীর অসুস্থ হয়ে যাবে।সন্ধ্যায় নাস্তাও খাওনি।এমন করলে শরীরে এনার্জি থাকবে না।এনার্জি যদি না থাকে ভালো কিছু করা যায় না।শুনেছি,ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রী তোমার পড়ানোতে মুগ্ধ।এর মাঝে যদি তুমি এমন করো তাহলে তোমার মনোভাব না বুঝলে ছাত্র-ছাত্রীরা তোমাকে ভুল বুঝবে। ছাত্র-ছাত্রীরা তোমায় যেমন পছন্দ করে আমি চাই সব সময় জেনো একই ভাবে পছন্দ করে যায়।
শশী মাথা নিচু করে জ্যোৎস্না বেগমের কথাগুলো শুনছে।
জ্যোৎস্না বেগম:দাঁড়িয়ে আছো কেনো?চোখে ঔষধ দাও।
শশী চোখে ঔষধ দিয়ে নীরবে তার কক্ষে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো।এমতাবস্থায় জ্যোৎস্না বেগম বললো-আমি এখনো রাতের খাবার খাই নাই।রান্না ঘরে শশী গিয়ে দেখে,নিপা রুটি বানাচ্ছে।শশী খাওয়ার প্লেটে সাজিয়ে জ্যোৎস্না বেগমের কক্ষে প্রবেশ করে।খাওয়ার সামনে দিয়ে
চুপ করে বসে আছে শশী।জ্যোৎস্না বেগম খেতে খেতে বললো-তুমি বসে আছো কেনো?ভাত নিয়ে এসো।এখানেই বসে খাও।
শশী:আজ ভাত খাবো না।
জ্যোৎস্না বেগম শশীর পানে তাকিয়ে হাতে একটা রুটি ধরে দিয়ে বলে-তাহলে এটা খাও।
শশী অনেক কষ্টে রুটিটা খেয়ে নিজের কক্ষে নীরব হয়ে শুয়ে আছে।
অধর এশার নামায আদায় করে হুজুরের মাশাল্লা শুনার অপেক্ষায় বসে আছে।হুজুর নামায শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বললো-
:আজ নামায সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলবো।একটু মনোযোগ দিয়ে শুনেন।রাসূল করিম(সঃ) বলেছেন-মুসলমানের স্তম্ভ পাঁচটি। তার মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে নামায।ঈমানের পর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এই নামায।যাকে বলা বেহেস্তের চাবি। পবিত্র কোরানে তিরাশি নামায সম্বন্ধে আলোচনা এসেছে।নামায ফরজ হওয়ার প্রসঙ্গ আল্লাহ পাক বলেন-
হে নবী!আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন,তাদেরকে বলুন-নামায আদায় করতে-(সূরা:ইব্রাহীম,আয়াত:৩১)
এর মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন বলেন-তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ভাবে কথা বলবে এবং নামায আদায় করবে।
(সূরা:বাকারাহ,আয়াত:৮৩)।অন্যত্রে আল্লাহ ইরশাদ করেন-তুমি বলে দাও,আমার রব ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন।তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় তোমাদের মুখ মণ্ডল স্থির রেখো।ইমাম সাহেব এইটুকু বয়ান করে বললো- আজকের মতো আমাদের আলোচনা এখানে সমাপ্তি করলাম।আসুন মোনাজাত করে আমাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাই। হে আল্লাহ,হে পরবারদেগার,তুমি রহমত,তুমি বরকত,তুমি মাগফেরাত।আমাদের সবার প্রতি রহমত দান করো।আমাদের চলার পথে আয়ের বরকত দাও এবং আমাদের সমস্ত গুনাহ মাপ করে দ্বীন ইন ইসলামের পথে চলার তৌফিক দান করো,আমীন।
মসজিদ থেকে বের হয়ে অধর হাঁটছে।হঠাত্ করে কাঁদে হাত দিয়ে আতিক সাহেব বললো-আগেতো এক ওয়াক্ত নামায আদায় করে বাকীটার খবর নাই।এখন দেখি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন।ব্যাপার,সেপার কি?
অধর:আগের ইমাম সাহেবের কথা বার্তা তেমন ভালো লাগতো না।
অধর নামায শেষে ঘরে ভাবলো,সারাদিনতো শশীকে পাওয়া গেলো না।আবার চেষ্টা করে দেখি।এই বলে মোবাইল হাতে নিয়ে শশীকে কল দিলো। সারাদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে শশীর ফোন রিসিভ করার মধ্য দিয়ে। ভরাক্রান্ত মন আর ক্লান্ত দেহ নিয়ে হতাশায় ভরা কণ্ঠে শশী বলে-
:হ্যালো,অধর।
অধর:কিরে সারাদিন কোথায় ছিলে।এই পর্যন্ত কয়েকশ বার ফোন করেছি।কোন সাড়া শব্দ নেই।আমি এই নিয়ে অস্থির।
শশী:সকালে রুপালী এসে কলেজে নিয়ে গেছে।ওখান থেকে মোহছেনা আপুর বাসা গেলাম।বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এসে শুয়ে আছি।
অধর:একটু আগে তোর অপেক্ষার প্রহর আমার ভাগ্নি জামাই মোহনকে দিয়েছি। মোহন পাঁচশতো টাকা দিয়েছে।বল,মারহাবা।
শশী:মারহাবা।
অধর:আরো জোরে বল,মারহাবা।
শশী:মা..র...হা...বা।আর বেশি হাঁসাবিনা।বেশি হাঁসলে শরীর খারাপ লাগে।
অধর:আচ্ছা ঠিক আছে।মেহেরুন এর সাথে কথা হয়েছে আজ?
শশী:বাসা এসে দেখলাম কল দিয়েছে।কথা হয়নি এখনো।
অধর:তোকে না পেয়ে অভিমানে বসে আছে।
শশী:তোর সাথে কি কথা হয়েছে?
অধর:হুম।তোকে না পেয়ে তাকে কল দিয়েছিলাম।
শশী:কি বলে?
অধর:তোকে রিং দিয়েছিলো,রিসিভ করিস নাই।এই নিয়ে মন খারাপ।
শশী:এখন আর রিং দেবো না।সকালে কথা বলবো।তার সাথে এই সময়ে কথা বললে মন খারাপ হয়ে যাবে।
অধর:ভাত খেয়েছিস?
শশী:খিধে নেই।
অধর:খিধে নেই বলে না খেয়ে ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।একটু করে খেয়ে নেয়।
শশী:একটু আগে রুটি খেয়েছি।
অধর:আজ কবিতা লেখবি না?
শশী:সন্ধ্যায় ফেইস বুকে একটা খোলা চিঠি দিয়েছি,পাসনি?
অধর:সারাদিন ফেইসবুকে যাইনি।
শশী:এখন একটু দেখে আয়।
অধর:ঠিক আছে।তাই করছি।পাঁচ মিনটি পরে তোকে ফোন করি।
শশী:কেনো?
অধর:খোলা চিঠিটা একটু দেখে আসি।
শশী:আচ্ছা,ঠিক আছে।
পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেলো অথচ অধর ফোন করছে না দেখে শশী অধরকে ফোন দিলো-
:কিরে অধর,এখনো পাঁচ মিনিট শেষ হয় নাই?
অধর:পাঁচ মিনিট শেষ হয়েছে কিন্তু লেখাযে সাত মিনিট এর।
শশী:কেমন হয়েছে?
অধর:এক কথায় অসাধারণ।
শশী:একশোতে কতো?
অধর:একশো দশ।
শশী:একশোতে একশো দশ কেনো?
অধর:অনেক সুন্দর হয়েছে তাই একশোর ভিতর একশো।বাকী দশ সুন্দরের জন্য বোনাস।
কিরে বোনাস পেয়ে খুশিতে কাঁদছিস নাকি?
শশী:না,কাঁদছিনা।
অধর:তাহলে তোর কণ্ঠটা এমন কেনো শুনা যাচ্ছে?
কষ্টের পাহাড়ে বুকের ভিতর বয়ে চলে বেদনার ঝর্ণা ধারা। কি করে বুঝাবো অধরকে।না পারছি তাকে বুঝাতে,না পারছি নিজে সইতে।
শশীর নীরবতা দেখে অধর ভাবলো নিশ্চয় মুক্তার ভাবনায় জড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে তাকে এই ভাবনা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই ইচ্ছে করে বেদনার এই ক্ষণে শশী অধর বললো-
:একটা জোকস শুনবি?
শশী মুক্তা নিয়ে বেদনার এক ঘেয়েমি ভাবনা থেকে বের আসতে কিছু একটা খুঁজেছে।তাই সে অধরের এই প্রস্তাবকে সাদরে সম্মতি জানিয়ে বললো-
:ঠিক আছে শুনা।
অধর:তাহলে শুন-
দুই বন্ধুর মধ্যে কথোপকথন-
প্রথম বন্ধু:আচ্ছা তুই কুয়াশার মাঝে সব সময় সিগারেট পান করিস কেনো?
দ্বিতীয় বন্ধু:তুই কি জানিস না?
প্রথম বন্ধু:বারে,এই জন্যইতো আমি তোকে জিজ্ঞেস করলাম।
দ্বিতীয় বন্ধু:আমার সিগারেটের ধোঁয়া কুয়াশায় দেখা যায় না তাই।
প্রথম বন্ধু:কাকে ভয় পাস,না......?
দ্বিতীয় বন্ধু:তুই বলে দেয় না,খোকা।
প্রথম বন্ধু:দিসনে আর কাউকে ধোকা।
দ্বিতীয় বন্ধু:তুইওতো খেয়েছিস,ঐ দিন বোকা।
প্রথম বন্ধু:এখনতো ছেড়ে দিয়েছি,কাকা।
দ্বিতীয় বন্ধু:তোর কথা শুনে মনটা হয়ে গেলো বাঁকা।
শশী:আর শুনতে ভালো লাগছে না।সত্যি করে বল,আজ কি সিগারেট খেয়েছিস?
অধর:অনেক কষ্টের পর একটা খেয়েছি।
শশী:কতোবার তোকে বারণ করেছি,মুখে সিগারেট আর তুলিস না।খালামনি যদি পৃথিবীতে থাকতো তাহলে এই ক্ষণে তোকে ঝাড়ু পিটা করতো।তোর বন্ধু ভালো হয়ে গেছে কিন্তু তুই ভালো হতে পারলিনা।
অধর:আমি ভালো হয়ে যাবো,আজ রাতে তুই যদি ঘুমাস।
শশী:অনেকবার ঘুমানোর চেষ্টা করেছি। চোখ জুড়ে ঘুম ঘুম ভাব তবুও ঘুম আসে না।
অধর:চোখটা বন্ধ কর।আমি একটা কবিতা শুনাই,দেখবি,তোর চোখে ঘুম চলে আসবে।
চয়নে স্বপনে দেখি তোকে,থাকিস কল্পনায়,
মায়াবী প্রতিমা তুই,ডাকি কাছে আয়।
ঘুম পাড়ানি দেশে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবো,
আদর সোহাগ ভালোবাসা,তুই দিলে যে নেবো।
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা থাকবে সদা মনে,
আমার বুকের উষ্ণ ছোঁয়ায় আসবি ক্ষণে,ক্ষণে।
যখন তখন বলবি কতো কানে কানে কথা,
জুড়িয়ে যাবে দুঃখ কষ্ট,যতো আছে ব্যথা।
শশী বললো-
:আর শুনবো না।তোর কথামতো চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করবো।আজ রাখলাম।কাল ত্রিশ তারিখ,স্কুল খোলা।
অধর:ঘুমানোর কথা শুনে খুবই খুশি হলাম।আল্লাহ হাফেজ। শুভ রাত্রি।
শশী জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে বুকে বালিশ জড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।ভাবছে,মুক্তা জেনো দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে মিশে আছে আমার জানালায়।আকাশ ভরা রূপের ঢালী তারা হয়ে চায়,ঐ আকাশে তাকিয়ে থাকি দেখবো বলে তোমায়।বন্ধী হলেও মোর ভাবনায় দেখে হয়তো আমায়।আঁধার রাতের ফাঁকে ফাঁকে নীল একাশে মেলা,অন্ধকারে সারাটি ক্ষণ ভাবনার মাঝে খেলা।ঝীরি ঝীরি বাতাস বইছে,মুক্তা তারার মালা,ভাসিয়ে দেয় নীল আকাশে দুঃখ মেঘের বেলা।আজকে এই ক্ষণে বিষণ্ণ তাই লাগে দুঃখের মনে দোলা তাই জানালার পাশে কেঁদে কেঁদে কাটাই রাতের বেলা।প্রভাতেরই মিষ্টি আলো দেখবো কি আর আমি?রঙ্গিন ঝর্ণা হয়ে তুমি,হয়ে আছো দামী।সেই মিষ্টি আলোয় ঝর্ণা ধারায় সিদ্ধ করো মন,কল্পনাতে ঘুরে বেড়াও তুমি সারাক্ষণ।আকাশ পানে চেয়ে যখন তোমার ভাবনা খেলে,প্রজাপতির মতো তখন হাত দু,খানা মেলে।সারাক্ষণই উড়ে বেড়াও আমার মনে,মনে,সেই মনেতে ক্লান্ত হয়ে কাঁদি তখনে।জানালাতে গড়িয়ে পড়ে মোর লোচনের অশ্রু,মনে পড়ে তখন আমার,সেই দিনের সেই শত্রু।কেঁদে কেঁদে হাল্কা করি আমার সকল ব্যথা,আকাশ পানে চেয়ে বলি,আমার যতো কথা।চুপটি করে শুনো বুঝি সকল আলাপন,চাঁদ হয়ে হেঁসে হেঁসে ভোলায় আমার মন।ইন্দু তুমি এমন করে শুনো দুঃখের সুর,তবু কেনো থাকো তুমি,আমার থেকে দূর?আকাশ পানে লুকিয়ে থেকে দুঃখের খেলা খেলো,আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মিষ্টি করে হাঁসো।ধীরে ধীরে সেই হাঁসিটা মলিন হয়ে যায়,চারিদিকে শুনি শুধু বিদায়,বিদায়!মুক্তামুখী,মুক্তামুখী,কতোটুকু বলো সুখী?বিদায় বেলায় নিজেকে করে গেলে কেনো দুঃখী?যাবার বেলা বলোনা আজ দেখা হবে কবে?বদ্ধ প্রশ্ন জাগে,তুমি সারা জীবন আমার হয়ে রবে?তোমার ভাবনায় আকাশখানি আঁধারে হারায়,জানালার পাশে বসে থাকি তোমায় দেখার প্রত্যাশায়।
ভাবনার ভিতর শশীর চোখ দু,টো ঘুমের দেশে প্রবেশ করে।এমন সময় জ্যোৎস্না বেগম দেখতে এলো শশীর ঘরে।আধো আধো আলোতে দেখতে পেলো ক্লান্ত হয়ে শশী ঘুমাচ্ছে।মনে মনে স্বস্থি পেয়ে জ্যোৎস্না বেগম নিজের কক্ষে প্রবেশ করে এসি অন করে ঘুমিয়ে পরে।
আজ চারটি বছর গত হয়ে গেলো তবুও শশীর মন থেকে মুক্তাকে হারানোর ব্যথা মুছে দিতে পারলাম না। পারলাম না বুঝাতে যে না ফেরার দেশে চলে গেছে সে আর ফিরে আসবে না। বলতে পারলাম না,মিছে ভাবনায় কেনো নিজেকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখো জীবনটাকে বিভীষিকাময় করে রেখেছিস। এমন ডাক দিতে পারেনি এখনো,অন্ধকারের বদ্ধ দুয়ার খুলে বের হয়ে আয়।তোকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে আলোর পথে। বলতে পারিনি,সাড়া দেয় ঐ ডাকে,চলবো দু,জনে সারা জীবন এই পথে এক সাথে। একে অপরের আলোয় দু,জনে আলোকিত হবো।আমি নিশ্চিত,আজ সারা দিন শশী কান্না করেছে। এই কান্না সেই শ্রাবণের অঝোর ধারায় ঝরে যাওয়া কান্না।এই কান্নার কারণে তার কানে বাজেনি আমার,মেহেরুন এর মোবাইল ফোনের রিং।এখনো সে ক্লান্ত।শশীকে ভালো রাখার অজস্র চেষ্টার মাঝে আজ একটু সফলতার মুখ দেখলাম। যে মুখ চয়ন করে নীরব যন্ত্রণার শশী হয়তো পেয়েছে কিঞ্চিত সুখ। এই সুখ দিতে তাকে বলেছিলাম,আজ জামাই তোর অপেক্ষার প্রহর পেয়ে পাঁচশতো টাকা দিয়ে। আমি মারহাবা বলতে বলায় শতো কষ্টের মাঝে একটু হাঁসির ঝলক দিয়ে মারহাবা বলেছে।এটাই যে আজকের শোকাহত দিনে আমার অপ্রাপ্তির মিছিলে বিশাল এক পাওয়া। বিধাতার কাছে আমার একটাই প্রার্থনা,আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও সদা শশীর জীবনে হাঁসি ফিরিয়ে দাও। দীর্ঘ পাঁচ বছরের একই পথের পথিক হয়ে যদি তার মুখে হাঁসি ফুটাতে না পারি তাহলে শতো প্রাপ্তির মিছিলে আমার সমস্ত চাওয়া পাওয়ার মাঝেও অপূর্ণতা থেকে যাবে। কারণ শশীর দুঃখে আমিতো সেই দুঃখের সাগরে ভাসি।
অধর এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত তিনটা বেজে গেছে বলতে পারেনা।ভোরে উঠতে হবে তাই অনেক চেষ্টা করে ঘুমানোর।ভাবনার মাঝেই নীরবে এক সময় ঘুমিয়ে যায়।

সমীরণে মন দোলে -১ ।। সৈয়দা আফরোজা মুন

সমীরণে মন দোলে -১ ।। সৈয়দা আফরোজা মুন



সমীরণে মন দোলে

এক
কাব্য হচ্ছে ভাবনার দর্পণ যার মধ্যে অতি নিখুঁতভাবে ধারণ করে ছন্দের বিন্যাস হৃদয়ের মাঝে শক্তিশালী ভাবনার সংমিশ্রণে ছন্দের প্রাণ খুঁজে পায় এই কবিতায় লেখকের মনে ব্যক্তিগত জীবন দর্শন জীবনের অনুভূতি কোনো বাস্তব কাহিনীকে অবলম্বন করে যে বর্ণের সৃষ্টি হয় সে বর্ণ ছন্দে রূপান্তরিত হয়ে কাব্যের সৃষ্টি হয় কাব্য মানে ছন্দের গন্ধএতে লেখকের কল্পনায় সৃষ্টি হয় অসীম ভালোবাসা সেই ভালোবাসার কল্পনা রংতুলি মিশে কবিতার সৃষ্টি হয় বলা কি যায় না-
হে বসন্ত,
ফুলে ফুলে তুমি আমায় দাও ছন্দ
যেখানে প্রকাশ করে জীবনের প্রতিচ্ছবি
যার মাঝে লুকিয়ে থাকে হাঁসি- কান্না,আনন্দ
শব্দের মাধুর্যে বাস্তবে পরিণত করতে পারে প্রত্যেক প্রতিভাবান ভাবুক যার মধ্যে শুধু বিরাজ করে ছন্দের পাহাড়ছন্দ যদিও কবির ভাবনা,কবিতায় তা অলংকার আবেগের সঙ্গে ভাবনার মিশ্রণে কাব্যের উৎপত্তি হয় সেরা শব্দ সমূহের মধ্যে যদি ছন্দের মিল না থেকে কাব্যের সৃষ্টি হলেও অন্তরে তৃপ্তি মেলেনা সুন্দরতম শব্দের পরিপাটি বিন্যাসের কবিতা এই কবিতায় ছন্দের চুম্বন বিধাতার ঐশ্বরিক দান
শশী আনমনে বসে আছে ভাবছে কতো কিছুএই ভাবনা নিয়েছে তার পিছু চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঝিমচ্ছে ভাবছে কিছু একটা লেখবে কি লেখবে,শশী? কিছুই মাথায় আসছেনা বাবা মারা যাওয়ার পর এমনি হয় মাঝে মাঝে তার এমন সময় মোবাইল ফোনে রিংটোনের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে শশীর অপর প্রান্ত থেকে মেহেরুন বলে উঠে,হ্যালো, যাদু কেমন আছো? কি করছো? শশী আচমকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বাজে আশে পাশে থাকিয়ে দেখে কেউ নেই নীপ ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে আর শশী চার দেয়ালে বন্দি খাঁচায় টেবিলে মাথা রেখে অঝোর ধারায় চোখে বাদল ঝরছে এক এক করে সাতটা দিন কেটে গেলো সেপ্টেম্বর মাসের শশী বুঝতে পারলো,মেহেরুন ফোন করেছে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য শশী নিজেকে শক্ত করে প্রস্তুত হচ্ছে তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছানোর জন্য মুক্তার ভাবনা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য পড়ালেখা অবস্থায় এই গন্তব্য স্থানে পৌঁছলও ফুফু এদিকে মেহেরুন অনেক বার হ্যালো,হ্যালো করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে কেটে দিলোঅভিমানী মেহেরুন কান্না করতে করতে ফিসফিস করে বলছে,আজ সাত সেপ্টেম্বর তুমি কি ভুলে গেছো? ২০১৪ সালে নীল কাব্যের গন্তব্য কাব্য গ্রন্থে তুমি আমায় নিয়ে লেখেছিলে কবিতা আরো বলেছিলে,আজ থেকে আমি নবীন মুক্তা আমি যদিই মুক্তা হই কেনো বলোনি 'শুভ জন্মদিন'? তুমি কি আমায় সত্যি ভুলে গেছো? ভুলে গিয়ে মুক্তাকে নিয়ে কবিতা লেখায় মেতে উঠেছো ফেসবুকে দেখলাম,'আত্মার ভিতর আত্মা' নামে একটি পাতায় মুক্তা ময়নাকে নিয়ে অনেক কবিতা তোমাদের ময়না পাখিটা মারা গেলো নাকি?
তোমার এই কবিতা পড়ে মনে হলো তাই (শুনেছি আগামী বই মেলায় আত্মার ভিতর আত্মা কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে যা নিয়ে তুমি আশায় বুকে বেধে আনন্দে আত্মহারা) মুখে মুকে বলো তুমি কবিতা লেখোনা কিন্তু তুমি কবিতা নিয়েই ব্যস্ত তুমি কি বুঝো না? লেখালেখি করলে তুমি অন্যমনস্ক হয়ে যাও যখন তুমি দাদাজান কিংবা মুক্তা ফুফুকে নিয়ে ভাবো,তখন তুমি অধরার মাঝে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার কিছুই মনে রাখতে পারোনাএভাবে কি দিন যাবে? আর কতো? কবির মন দোলে কবিতায়,তোমার মন দোলে কবিতা এবং মুক্তায় এই কবিতায় ছন্দে রূপান্তরিত করে মুক্তাকে বিধাতায় আমি যতবার বারণ করি না কেন? তুমি মাতোয়ারা হয়ে আছো,থাকবে মুক্তাকে নিয়ে
দেখতে দেখতে দশ-বারোদিন কেটে গেলোঅভিমান ভেঙ্গে মেহেরুন আবার কল করলো বললো,আজ আর আদর করে যাদু বলোনা বললো,কেমন আছো? কল করতাম না কল করেছি একটা খবর দেওয়ার জন্য তোমার মনু ভাই নানা হয়েছে এই জন্য কল করেছি ভালো থেকো শশীও বললো,ঠিক আছে আমিও স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হবো মেহেরুন টান টান কণ্ঠে বললো,তার আগে কি কবিতা লেখেছো নাকি? শশী বললো,তোমার বারণ করার পর কলম খাতায় লেখা হয়নি কথাগুলো সাজিয়ে দিই,অধর তা লেখে দেয় ফেসবুকের পাতায় অধর ভাইয়ারতো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই তোমার কবিতা নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে আছেশশী হেঁসে দিয়ে বললো,এখন রাখলাম,স্কুলের সময় হয়ে গেছে এই বলে শশী স্কুলে চলে গেছে
স্কুলে গিয়ে প্রথম ঘণ্টা নেওয়ার পরে আনমনে গম্ভীর হয়ে মুক্তাকে নিয়ে ভাবছে এমন অবস্থায় কাদের পলাশ স্যার এসে একটা বই দেন বই দিয়ে বললো,এটা আপনার জন্য সব শিক্ষকের জন্য একটা আপনার জন্য একটা পাশে বসা ম্যাডাম বলে,উনি একা একটা পাবে কেন? পলাশ স্যার বললো,উনি লেখালেখির জগতে আছেতো তাই উনাকে একটা দিলাম শশী বইটা হাতে নিয়ে মৃদু হেঁসে বললো,আপনার বইয়ের সম্মানী কতো? পলাশ স্যার হেঁসে দিয়ে বললো,লাগবে না শশী বললো,স্যার আপনার বই ছাপাতে খরচ হয়েছেনা?
পলাশ স্যার বললো,খরচ হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু সবার থেকে-তো আর টাকা নেওয়া যায় না আপনি লেখা দিলে দিতে পারেন আমাদের সামনে আরেকটি সংখ্যা প্রকাশিত হবে তার জন্যএই বলে স্যার চলে গেলো স্কুলের শেষ ঘণ্টা বেজে উঠার সাথে সাথে শশী উঠে দাঁড়ালো ঘুটি-ঘুটি কদম রাখছে আর ভাবছে,আজ হেঁটে যাবেকারণ বাসায় কিছু লেখা যায় না,ফুফু বকা দেবেআসছে ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তাকে নিয়ে একটা অণু গল্প লিখলে কেমন হয়? অনেক ভেবে চিন্তে শশী অধরকে কল করেঅধর শশীর কল দেখে অবাকএই সময়ে শশীর কল? কিছু হলোনাতো শশীর?এই সময়-তো কল দেয়ার কথা নয় সেপ্টেম্বর মাস এলে সে আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না ২০১২ সালের পর থেকেএখন চলছে সেই সেপ্টেম্বর মাসএই মাসে শশী মুক্তাকে নিয়ে অস্থির থাকে তেমনি শশীকে নিয়ে অস্থির থাকি আমি
হ্যালো,কিরে কোনো সমস্যা?
শশী:সমস্যা না একটা অণু গল্প লেখতে হবে
অধর: নিশ্চয় মুক্তাকে নিয়ে
শশী: মনে হয়
অধর:আমি অন লাইনে আছি,শুরু কর
শশী:কায়ে রোদ মেখে রেল লাইনের পথ ধরে তোমায় নিয়ে লিখছিইদানীং এর লেখাগুলো কলম খাতায় লেখা হয়নাবাসায় লেখতে গেলে মায়ের বারণ ডাক্তার নাকি না করেছে বেশি লেখালেখি করলে মাথা ব্যথা হয় কিছু লিখলে যতটুকু মাথা ব্যথা হয়,না লিখলে তার চেয়ে বেশি মাথা ব্যথা হয়মনের কোণে ভাবনাগুলো কি জমিয়ে রাখা ঠিক? হয়তো আমার লেখাগুলোতে একগুঁয়েমি ভাব এই একগুঁয়েমি শত চেষ্টা করেও দূরে সরাতে

যেখানে ফুটে উঠে কবিতার প্রকৃত রূপ
অধর:কিরে ছোট গল্প লেখতেছিস কবি এবং কবিতা নিয়েযার সারমর্মে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটেছে?
শশী:না কিছুই হয়নি
অধর:গল্প লিখলি নাম দিবি না?
শশী:কি নাম দেওয়া যায়?
অধর:মন দোলে
শশী:খুব চমৎকার নামতো
অধর:গল্পটা শেষ কর
শশী:নামটা কি লেখেছস?
অধর:হ্যাঁ,লেখেছি
শশী:কি লেখেছিস?
অধর:মন দোলে
শশী:আবার পরের লাইনগুলা শুরু করযাকে নিয়ে আমার ভাবনাযার জন্য আমার কল্পনা যাকে নিয়ে আমার স্বপ্নযার জন্য মনের আশা পূর্ণ,আজ সে কোথায়? যাকে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আজ সমীরণের দরজায় এসে পৌঁছেছিযে দ্বার খুলে পেয়েছি হাজারো কবিতার ছন্দযার জন্য আমার পোড়া সমীরণে মন দোলেসে কোথায়?আছে কি কোনো গোপন স্থানেআমি জানি,কে জানে?আমার হৃদয়ের হৃদ মহল থেকে একটু হতাশার প্রলেপ ভাগ করে নেওয়ার কেউ নেইযে ছিলো আমার মনে প্রাণে,শিরা-উপশিরায়মুক্তা তুমি যে সেভাবতে অবাক লাগে!আমার আদর মমতা,ভালোবাসা ছেড়ে হারিয়ে গেলেঅথচ ভাবলে না অধরাতে তুমি কি পেলে?গোবরেও পদ্মফুল পুষ্পায়িত হয়কেউ বুঝি না কেনো?তোমাকে কষ্ট দিয়ে,আমাকে নিঃস্ব করে কি পেয়েছে ওরা?কূল হারিয়ে হবে একদিন তারাও দিশেহারাআজ তুমি-হীনা মোর হতাশা-নিরাশা,দুঃখ-কষ্টে কাটছে দিনরঙ্গিন স্বপ্নগুলো ডাস্টবিনের ময়লার মতো জমাট বেঁধেছেআশাগুলো তুমি-হীনা মরীচিকা হয়ে গেলোঅতঃপর তারা সবাই ভালোভালো থাকবে কি আজীবন?ঝাপসা গাঢ় অন্ধকারে নীরবে কাঁদে মোর মনতবুও বুঝলো না আমায়,যেমন বুঝেনি তোমায়এখন তোমার ন্যায় আমার বুকে লাথি মারতে পারেছেড়ে কি দেবো মুক্তা,তোমার শত্রুকে?কেউ কেউ বলে,তোমার মৃত্যু নিয়তির এক নির্মম পরিহাসতোমার কষ্ট উপলব্ধি করে কায় ঠাণ্ডা হয়ে বেড়ে যায় আমার রুদ্ধশ্বাস
অধর মনে মনে ভাবলো,শশী এখন মুক্তাকে নিয়ে আত্মহারা হয়ে গেছেগল্প বলতে গিয়ে আত্মা নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে প্রথম কবিতাটাই বলে পেললোতাকে আর বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে দেওয়া ঠিক হবেনাবুঝিয়ে যে কোনো উপায়ে তাকে বাসায় পাঠাতে হবেশশী:কিরে অধর,ভাবছিস নাকি কিছু?
অধর:না,ভাবছি না কিছুগল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছেঅণু গল্প-তো তাই আর বাড়ানো ঠিক হবে না
শশী:বিরক্ত হয়ে গেলি নাকি?
অধর:তোর কোনো কাজে কি আমি বিরক্ত হই?মনে হয় কাঁদছিস?
শশী:কাঁদছি নালোচনগুলো রেল লাইনের পাশের নদী থেকে একটু জল ধার নিয়েছে
অধর:রেল লাইনের পাশে নদী আছে নাকি?
শশী:হ্যাঁ,খুব সুন্দর একটা নদীনাম ঠিক জানা নেই
অধর:চাঁদপুরে-তো মেঘনা নদী আছে জানি?
শশী:হ্যাঁ,আছেতা বড় স্টেশনে
অধর:যাসনা সেখানে?
শশী:তুই জানিস না আমি একা অচেনা কোথাও যেতে পারিনা
অধর:মনে হয় এখনো কাঁদছিস?Please,বাসায় যাবাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে থাকবি
শশী:আজ ইচ্ছে করছেনা বাসায় যেতেবড্ড ইচ্ছে করছে,সমীরণে উড়ে উড়ে নদীর তরঙ্গের কলতান শুনতেজানিস অধর,আজ প্রথম শ্রেণীর প্রথম ঘণ্টায় মুক্তার পছন্দের সেই গানটা শুনলাম
অধর:কোন গানটা?শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচে সে ঘুর্ণিবায়,জল তরঙ্গে ঝিলমিল ঢেউ তুলে সে যায়............
শশী:হ্যাঁ,এটাইঅভিনয় করে যখন দেখালাম,তাহিয়া,লাম,মীম,আরাফাত,হামান শেখ,স্বপ্ন খুবই মজা পেয়েছে সারমিন,সুবর্ণা,সুমাইয়া তারা বললো-ম্যাডাম,আবার দেখানস্বপ্ন বলে উঠলো-ম্যাডাম দেখান নালাম,মীম মনি মুক্তার মতো খিলখিল করে হেঁসে বললো আবার একবার দেখান না আমি যেনো শুনতে পেলাম,আপু,আপুরে,সুন্দর করে নাচটা আমাকে শেখাও সামনে স্কুলের অনুষ্ঠানে যেনো আমি সবাইকে দেখাতে পারিআচ্ছা,অধর বল না,এই ডাকটা কোথায় থেকে শুনলামকে,সে? মুক্তা নাকি?নিশ্চয় মুক্তাঅধর বুঝতে পারলো জ্ঞান হারাবেই এখন কিরে বাসা আর কতো দূর?
শশী:এইতো আর এক মিনিট
অধর:আল্লাহ হাফেজ,রাখলাম
শশী:এড়িয়ে চলছিস
অধর:তোর কাজেই যাচ্ছিঅপেক্ষার প্রহরের আজকে শেষ প্রুফ দেখার দিন২৯ সেপ্টেম্বর এর আগে বইটা বের হচ্ছে
শশী:২৯ সেপ্টেম্বরের কথা শুনে আর কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু জল ধার নিয়ে ঝরাতে ঝরাতে বাসায় পৌঁছে......শশীর আজকের লেখা নিয়ে অধর ভাবছেকি বুঝাতে চেয়েছিলো তার লেখার ভাষায়?
নিশ্চয় লেখকদের নিয়ে কিছু একটা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলো কবি এবং কবিতা নিয়ে ভাবনায় তা প্রকাশ করেসত্যিতো,কবিতা লিখলেই কি কবি হওয়া যায়? কবিতা হচ্ছে ছন্দের বিন্যাসের রূপ এই রূপ যদি না থাকে কবিতা তার রূপ হারায় কবির চেষ্টা হয় বৃথা চেষ্টা এমন ভাবনার মাঝে শশী জড়িয়ে যায় মুক্তার ভাবনায় যদিও ভাবনার খেই হারিয়েছে তারপরেও কথাগুলো কি অসাধারণ হয়েছে?এসব ভাবতে ভাবতে অধর পৌঁছলও প্রেসে সেখানে গিয়ে অপেক্ষার প্রহরের লেখাগুলো এডিট করে আবার শশীকে কল করলো-অধর:হ্যালো,শশী,কি করতেছিস? খাওয়া-দাওয়া কি শেষ হয়েছে?
শশী:খাওয়ার জন্য নিয়েছিলাম,ভালো লাগেনি তাই না খেয়ে রেখে দিয়েছি
অধর:যখন ভালো লাগে একটু খেয়ে একটু খেয়ে নিস,Please.
শশী:ঠিক আছে রাখি
অধর:না,না কথা আছে
শশী:কি কথা?
অধর:ছোট গল্পটা যে লেখেছিস কোন ম্যাগাজিনে দিবি পলাশ স্যারের ম্যাগাজিনের নামটা-তো বললিনা
শশী:কাদের পলাশের সম্পাদনায় ম্যাগাজিনের নাম হলো -ত্রিনদী
অধর:প্রচ্ছদ কেমনরে?
শশী:সুন্দর একটি নদীর উপর নৌকা ভাসে পাশে গাছ মানুষ এমন মনে হয়
অধর:খুব সুন্দর মনে হয়ঠিক আছে তোর গল্প প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় থাক
শশী:স্যার বলেছে,চেষ্টা করবে
অধর:আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম ভালো থাকিস,আল্লাহ হাফেজ

অধর: এই এক আচার্য মেয়ে যার মাঝে মাঝে লুকিয়ে অসাধারণ গুণাবলী যা কেবল তার কথায় নয় কবিতা কিংবা গল্প বা উপন্যাসে ফুটে বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি সত্যি অবাক লাগে অবাক না হয়ে কি পারি? তার প্রতিটি লেখার প্রথম পাঠকতো আমি তার লেখা কিংবা তাকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকার মাঝে কেটে যায় আমার প্রতিটি ক্ষণ ভাবনার প্রতিচ্ছবিতে উকি দেয় তার প্রতিটি কবিতা যার মাঝে লুকিয়ে আছে সুনিপুণ ছন্দ বলতে বাধ্য হই,শশী,তুমি-তো ছন্দের রাণী মনে পড়ে সেই ছন্দময়,বিনাশিত গল্পটি সে দিন শশী বলেছিলো-
শশী: আজ একটা গল্প বলবো
অধর:কি গল্প বলবি?
শশী:বলার পরে বুঝে নিস
অধর:ঠিক আছে বল
শশী:শুন
আমার ইচ্ছে ছিলো,সংসারটাকে আপন হাতে সাজাবো,
সবাইকে আপন করে নিবো
আমার ইচ্ছে ছিলো,পূর্ব পুরুষের মতো করে, এই দরবারকে পরিপূর্ণতা দেবো
কেউ যদি কিছু না বুঝে তাকে আমি বুঝাবো
আমার ইচ্ছে ছিলো,সুন্দর একটা ঘর হবে বাড়িতে,
সবাই আমায় বিদায় দেবে,রাজকুমার আসবে নিতে
আমার ইচ্ছে ছিলো,মনি মুক্তাকে পরাবো এক সাথে বেলি ফুলের মালা,
কেনো,আজ মুক্তা-হীন কেনো আমার এতো জ্বালা?
আমার ইচ্ছে ছিলো,মায়ের হাতে পরাবো বালা,
তবে কি পারিনি? পারতেছিনা,পেয়ে কারো অবহেলা
আমার ইচ্ছে ছিলো,লেখা পড়া করে হবো সুশিক্ষিত,
কেনো বার বার হতে হচ্ছে আজও আপনজনার কাছে নয়,অন্য কারো কাছে নতো?
আমার ইচ্ছে ছিলো,বাগানে ফুটে থাকা আটটি ফুল থাকবে সারা জীবন এক সাথে,
কেনো ছোট কলি ঝরে গিয়ে শুধু কাঁদতে হয় আমায় প্রতিটি রাতে?
আমার ইচ্ছেগুলি কি মরীচিকা হয়ে গেলো?
তবে যারা আমার ইচ্ছে পূরণে সহায়তা করেনি তারা কি পেলো?
কবি হয়ে কবিতার খাতায় ছন্দ দিয়ে সাজায় আপন মনে অজস্র কবিতা ঠিক ঐভাবে সংসারকে বিনাশিত করার কতো সুন্দর ভাবনা যা নিয়ে কারো সাথে হয় না তুলনা এই এক অসাধারণ মেয়ে 'শশী' যার চন্দ্রিমা আলোয় আলোকিত হবে একদিন সবাই আজ আমি ধন্য,এমন এক সহযোদ্ধা পেয়ে যাকে আমার কলমের ডগায় সদা মূল চরিত্রে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা থাকে আমি তাকে নিয়ে ভাবনায় মাতোয়ারা হয়েছি,আমার দেখা একটি মেয়ে এই লেখাটা যখন ফেসবুকের পাতায় সাজানো হয় তখন আমি যেনো তার একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে যাই ভাবনায় ভাবতে ভাবতে আমায় ভাবুক করে সে যে ভাবনায় আমার গর্বের অহংকারের প্রতীক নাম এই শশী
শশী,কি করতেছিস এখন?আমি জানি,নিশ্চয় কলম খাতা নিয়ে টেবিলে বসে আছিস আমার মন বলছে তা কল দেবো নাকি? না,দেবো না কারণ,একটু পরে আসরের নামাযের আযান হবে নামায টা না আদায় করলে ফোন করলে বলবে,নামায আদায় করেছিস? ইদানীং মিথ্যে কথা আর বলা হয় না কারণ,শশী মিথ্যা কথা পছন্দ করে নাসুতরাং নামায আদায় করে এসে কল দেবো অধর বিছানা থেকে উঠে ভাবনাকে দূরে সরিয়ে টুপি হাতে নিয়ে ঘুটি ঘুটি পা রেখে চলে গেলো পুকুরে মসজিদের সামনে পুকুর থেকে ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করলো জামাতের সহিত চার রাকাত ফরজ নামায আদায় করার পর ইমাম সাহেব কিছু মাশাল্লার তরজমা করে বলেন-মুখ দিয়ে বাজে কথা বের হলে কি করবেন?
সুপ্রিয় ইসলাম প্রিয় তাওহীদি মুসল্লি,আপনারা আমার কিছু কথা মন দিয়ে শুনেন,হযরত সায়্যিদুনা হাতেম আসাম এর মুখ দিয়ে কেবল মাত্র অনাবশ্যক কথা বের হওয়ার কারণে তিনি ক্ষোভে,দুঃখে নিজের জিহ্বা পর্যন্ত ক্ষতো বিক্ষতো করে পেললেন
অধর:হঠ্যাত্করে এই মাশাল্লা কেনো,হুজুর?
ইমাম সাহেব:কারণ আছে
অধর:কি কারণ?
ইমাম সাহেব: আমি যখন আযান দিয়ে আহ্বান করছি মুসলমানদের তখন শুনতে পেলাম,রহিম সাহেবের বাগানের গাছ করিম সাহেবের গরু খেয়ে পেলেছে তাই যা তা গালাগালি করলো আল্লাহ তালা আমাদের দুই কাঁধে দুই ফেরেশতাকে ঘরে বেঁধে দিয়েছে উনাদের কাজ হলো মানব জীবনে দৈনিক ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনাকে লিপিবদ্ধ করা যা কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আমাদের সুকর্ম অপকর্মের দলিল হয়ে বিচারে সাক্ষী দিবেন এই জন্য আমাদের প্রত্যেকের স্মরণ রাখা উচিত, ফেরেস্তাগণের কথা এই কথা স্মরণ করতে পারলে আমরা সমস্ত অনাচার,ব্যভিচার অন্যকে গাল মন্দ করা থেকে বিরত থেকে এক আল্লাহ আল্লাহর পেরিত নবী রসূলের তরিকা মোতাবেক চলতে পারবো এই পথ আমাদের কাল কেয়ামতের পর হাশরের মাঠে নেক বান্দাদের জন্য বেহেস্তের দরজা সুনিশ্চিত খোলা থাকবে আল্লাহ তালা আমাদের এই নেক পথে চলার তৌফিক দান করুন,আমীন
এর পর অধর বাড়িতে এসে চা পান করে ইমাম সাহেবের মাশাল্লার কথা মনে করে মনে পড়ে গেলো মা ফাতেমা(আঃ)কে নিয়ে শশীর লেখা কবিতাটিঅধর নীরবে মনে মনে আবৃতি করে শশীর লেখা প্রার্থনা কবিতাখানি-
ধয্য ধরার সহ্য করার ক্ষমতা বিধি দাও,
তোমার অন্তরের আপনার অন্তর মিশিয়ে আপন করে নাও
ক্ষমা কর প্রভু,যত ছিল,আছে জানা অজানা ভুল,
আমি হতে চাই তোমার বেহেস্তের ফাতেমার হাতে ফুল
সালাত আদায় করি গভীর রাতে তোমার করি প্রার্থনা,
মা ফাতেমার সুপারিশ পাই যেন গো এই যে মোর আরাধনা
সর্বদা পড়ি যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায,
এই সালাতে হয় যেন গো শেষ বিদায়ের সাজ
মৃত্যুর পূর্বে মুখে থাকে যেন পাঁচ কলেমা
সুপারিশ করবে নিধান কালে আর কেউ নয় মা ফাতেমা
রহমানের হাতে সৃষ্টি মোরা,
রহিম দিয়েছে এই ধরা
কত শান্তির আলো বাতাস প্রাণ জুড়িয়ে যায়,
বলবে কি শেষ নিধানে মা ফাতেমায় কাছে আয়?
কবিতা আবৃতি শেষ নিজের অজান্তে মুখ থেকে কবিকে অভিবাদন জানাতে মারহাবা মারহাবা মারহাবা বলে অধর নিজেই হেঁসে উঠলো এমন সময় শশীর কল অধর কল রিসিভ করে বললো-
হ্যালো,শশী,কাইফা হালুকা
শশী:ইয়া
অধর:কি করিস?
শশী:কি করতেছি আমি বলতো?
অধর:আমার মনে কবিতা লেখায় মগ্ন
শশী:ঠিক তা নানাটক দেখছি,বুঝেনা সে বুঝেনা
অধর:আমি এই অধম ছাড়া তোকে আর কেউ বুঝেনা
শশী:তুইও আমায় বুঝিস না যদি বুঝতি তাহলে মাঝে মাঝে তোর সাথে আমার এতো ঝগড়া হতো না
অধর কথাটা শুনে ভাবতে লাগলোসত্যি একটা পাগলীকারণে অকারণে আমাকে শুধু শাসন করেআমি কি করছি,না করছি তার দৈনিক হিসাব নেওয়া যেনো তার নিয়মিত রুটিন হয় দাঁড়িয়েছে
শশী:কিরে অধর,কই তুই কোথায় হারিয়ে গেলি
অধর:হারিয়ে যায়নি,শুয়ে আছি,চোখ বন্ধ করে
শশী:চোখ বন্ধ করে যে শুয়ে আছিস পাঁচ ওয়াক্ত নামায কি আদায় হয়েছে?নাকি কোনো ওয়াক্ত বাদ গেছে
অধর:না,সব আদায় করা হয়েছেআদায় কি আর না করে পারি আমরা যে মুসলমান


শশী:আদায় করলেতো ভালো কথা চোখ বন্ধ কি ভাবছিস?তোর কি পড়ালেখা নাই,সামনে না তোর পরীক্ষা?
অধর:ভাবছি,মনের ঘরে বসত করা সেই অপ্সরীর কথা
শশী:বেশ তোভালোতো কারো প্রেমে পড়েছিস নাকি?গান শুনবি?
অধর:মনে মনে এটাইতো চাইছি কোন গানটি শুনাবি?
শশী:তোমার ঘরে বসত করে কোন জনা,মন জানো,তোমার বসত কোন জনা
অধর:শশী,দারুণ হয়েছেতো সূরটা
শশী:ইচ্ছে করছে সবটা শুনাতে কিন্তু শুনাবো না
প্রেমিক প্রেমিকার আলাপন শুনবি?
অধর:শুনা
শশী:শুন তাহলে
ছেলে:এই শুনো তিন সত্যি করে বলছি
মেয়ে:শুরুতে মিথ্যে কথা আমি দেখতে পাচ্ছি
ছেলে :না,মোটেই নাচিঠিটা আমি লেখিনি
মেয়ে:তুমি এমন করবে তা আমি বুঝিনি
ছেলে:হ্যাঁ,সবি নীল খামে ছিলো নীল চিঠি
মেয়ে:এখন কেনো কর তোমায় পরিপাটি?
ছেলে:তোমায় হারাতে চাই না বলে
মেয়ে:অপমান করতে না তুমি আমার হলে
ছেলে:ভুল বুঝোনা,নীলা
মেয়ে:তবে কেনো খেললে আমার সাথে খেলা?
ছেলে:যার হওয়ার হয়েছে অস্বীকার করবো না
মেয়ে:আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না
ছেলে:কি জন্য করেছে বিধি,ভুল করে পরিচয়?
মেয়ে:আমার মনে হয় তুমি মোর আপন নয়
ছেলে:কাছে টেনে বুঝে নাওনা কতো ভালোবাসি
মেয়ে:সত্যি,সত্যি,সত্যি,তোমার জন্য দিতে হবে আমার গলায় ফাঁসি
ছেলে:এমন করো না,নীলা তুমি আমার জান
মেয়ে:তাই যদি হয় তবে নষ্ট করো না সম্মান
অধর খিলখিল করে হেঁসে বললো,পাগলী,পাগলীরে পাগলী এখন ঘুমাবো


২নং
প্রকৃতি যেনো আজ নবরূপে সেজেছে মনের ভিতর এক অদ্ভুত শিহরণ জাগেশীতের জীর্ণতা কেটে প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া এই ছোঁয়ায় সমীরণে মন দোলে পাখির কলতানে,ফুলে ফুলে সাজানো বাগান আর ভ্রমরের গুঞ্জনে মুখরিত চারপাশ সব মিলে যেনো নব যৌবনে নবরূপে নব বধূর সাজে সেজে প্রকৃতি প্রকৃতির এমন আড়ষ্টী যৌবনের রূপে মুগ্ধ হয় কবির মন আকাশে বাতাসে যেনো ছুঁই ছুঁই করছে ফুলের সুগন্ধি মিষ্টি গন্ধ এই গন্ধ এতোই মধুর যেনো মাদকের মাতলামিতে ভরা এই গন্ধে হয়ে যাই আত্মহারা মগ্ন হৃদয় যেনো আজ হারানোর প্রিয়ার প্রতীক্ষায় বিরহের রং ছেড়ে সুখের আগমনে নতুন সাজে সেজেছে মনের নেশা চোখের ঘোর নিয়ে কাটছে যেনো রঙ্গিন এক স্বপ্নময়ী ক্ষণ প্রিয় মুখটি আজ অজানা কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে শূন্য হৃদয় শুধুই শূন্য বিরহ মাতম শুনছে মনে হু হু করে কেঁদে উঠলো শিশুর মতো মনকিছু কি বলতে চায় মন? বসন্তের এই ক্ষণে কেনো আমার মনে আজ বিরহের মাতম? মন কি কিছু খুঁজে?
কাক ডাকা ভোরে আলতো,আলতো ঘুম ভাঙ্গে
নূপুরের চরণ দেখে তোমার,
কুহেলিকার কণ্ঠ শুনে,
ময়নার গানে,গানে ডুবে যাই হারানোর দিনে,
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যাই আবার
টিয়ে পাখির মত অধরে অধর রেখে যে কথা হয়েছিল,
সে কথা যায় কি ভুলা?
আজ বিবর্ণ বিষাদে বিরহের সায়রে
সন্তরণে আমি শুধু একলা
যে বাঁশি বেজেছিল তোমার ছোঁয়াতে,
সে বাঁশির সুরে,সুরে ঘুম ভাঙ্গাতে
সর্বহারা কাব্যতে শুনি সেই সুর,সেই তান,
অগ্নিবীণার সুরে জেগে উঠে অভিমান
যে ব্যথা জাগে মনে আমার ক্রন্দন সুরে,
সে ব্যথার অনুরাগে কষ্ট লাগে মনে
বিষাদে হিয়া আজ নীরবে কেঁদে উঠে,
বিষের বাঁশির সুর বিরহের সুরে ফুটে
বুঝেছেন তিনি ঠিক অন্তর্যামী,
দ্রোহের অনলে হিয়া জ্বলে
তবুও ভাবি,তুমি হীরার চেয়ে দামী
ঘিরে আছে চারপাশে তোমার স্মৃতি
বিবর্ণ বিষাদেও অমর হয়ে আছে প্রেম-প্রীতি
সত্যি তো মুক্তা,আজ তুমি-হীনা একলা সাঁতার কাটি সায়রেহয়তো পানির দেশে তলিয়ে গেলেও অধরে অধর রেখে ডাকা হয় না আর তুমি নেই বলে শূন্যস্থানটা পূর্ণ করে তুলে না কেউ তোমার মতো করে কেউ বুঝেনা আমার হৃদয়ে বাজে বিরহের শঙ্খ ধ্বনি এই সুরে আমি অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি মনের ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়েছে আঁধারের প্রলেপ মন উদাসী হয়ে অন্ধকারে নীরবে শুধু কাঁদি তাইতো এই কান্না আমার সারা জনমে বয়ে যাওয়ার জন্য তোমার বিদায় বেলায় আমায় উপহার দিয়েছোতোমার স্মৃতিগুলো স্মরণ করে বেদনায় ভরে উঠে মনমুক্তা,তুমি বিহনে মোর জীবন তরঙ্গহীন বসন্তের এই লগনে তবুও কানে বাজে সেই বেদনার সুরে গাঁথা বিষের বীণ সুখকর সেই দিনগুলির কথা মনে করলে আরো বেদনায় দগ্ধ হইতখন এই বসন্তের মাঝে যেনো নেমে আসে চৈত্রের সেই প্রচণ্ড খরা যে খরায় প্রকৃতি রৌদ্রতাপে পেটে চৌচির হয়ে যায় তৃষ্ণাত্ব্য চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকে আকাশ পানে একটু বৃষ্টির আশায়ঠিক তেমনি আমিও তোমার প্রতীক্ষায় থেকে আমার অন্তর আত্মা চৌচির হয়ে আছে আমি চেয়ে থাকি তোমার প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষার আকাশে যখন প্রহর আসে না তখন জানা হয়ে গেছে,আমার এই তৃষ্ণা আর কোনদিন মিটবে না তুমি আর ফিরে আসবে নাচাতক পাখির ন্যায় কেটে যাবে আমার বাকীটা জীবন শূন্য এই হৃদ মন্দিরে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হয় বিরহের বিলাপে স্বস্থিহীন,শান্তি-হীন মনে তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে আজ হাঁফিয়ে উঠেছি তাই বড় ক্লান্ত বেদনার যে বীজ রোপন করা হয়েছে,বৃক্ষ হয়ে ছায়া দেবে না,হবো না কখনো শান্ত এই অশান্ত জীবনে কোনো আশার প্রদীপ জ্বলে না এভাবে আর কতো কাল যাবে?
এসব ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে কলম খাতা নিয়ে বসে 'শশী'কলমের ডগায় প্রকাশ করে মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা চাপা যন্ত্রণা
যে বেদনার কবর দিয়েছি সে বেদনা উঁকি দিয়েছে,
কেন বারংবার খবর নিতেছে,আগে কি খবর নিয়েছে?
কষ্টের কারাগারে নষ্টের মৃত্তিকায় চাপা,
দুঃখের সাগরে ভাসি সদা আমি অভাগা
কত অপেক্ষার প্রহর গুনেছি,প্রশ্নের সম্মুখীন হবো,
প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে শান্তি খুঁজে পাব
আজও মূল নায়ক নিচ্ছে না খবর,
নিরুপায় হয়ে নিয়েছ বিদায়,দেখি শুধু তোমার কবর
জানি,
ভালোবাসতো তোমায়,
ভালোবাসে তোমায়,
তবে কেন এমন হলো!
নেই অবনীতে,নেই মেদনীতে স্বপ্নের মাঝে এসে একটু বল,
তোমার অন্তরের আর্তনাদ আমার হিয়ায় এসে মিশেছিল
বুঝতে পারিনি সমীরণ তবে তার কি হলো?
পাল তোলা নৌকা ছড়েছিল সায়রে পুবালি বাতাসে,
সেই নৌকার যাত্রী হয়ে কেউ ছিল যে তার আশে
মৃত দেহটি পৃথিবী ত্যাগ করলো,
যে মনটা রেখে গেল তার কি হলো?
সেই মন কি তোমার হিয়ার সাথে মিশে?
নাকি নতুন মুক্তার মালা পরে তোমার মনটা হাঁসে?
মোবাইল স্কিনে কল ভাসে শশীর সে দিক দৃষ্টি নেইচাপা কষ্ট প্রকাশ করে তাকিয়ে দেখে মেহেরুন এর কলমোবাইল রিসিভ করতেই মেহেরুন বলে-
হ্যালো যাদুকি করতেছো?
শশী:বসে আছি
মেহেরুন:নিশ্চয় কলম খাতা সামনে কি করতেছো সত্যি করে বলো?
শশী:অধর কি তোকে কিছু বলেছে?
মেহেরুন:না কিছু বলে নাইউনার সাথে আমার কথা হয়নি কেনো,তোমায় কিছু বলেছে?
শশী:হ্যাঁ,বলেছে
মেহেরুন:যাদু,কি বলেছে?
শশী:বলেছে,কলম খাতা দিয়ে লেখালেখি না করতে যা কিছু লেখি না কেনো সেপ্টেম্বর মাসে,আমি বলবো সে ফেসবুকে লেখে দেবে
মেহেরুন:যাদু,তোমার একটা কবিতা পড়লাম
শশী:কি কবিতা?
মেহেরুন:আমি আবৃতি করে শুনাচ্ছি তুমি মন দিয়ে শুনো
তপস্যা
সৈয়দা আফরোজা মুন
দিবা রাত্রিতে তপস্যায় মগ্ন হয়েছি,
সেই তপস্যার সাধনায় বর্ণের বিন্যাসে ছন্দ খুঁজে পেয়েছি
সেই ছন্দ দিয়ে গেঁথেছি কবিতার মালা,
যখন চয়ন করি,লাগে অসীম জ্বালা
কত বর্ণ দিয়ে সাজিয়েছি ঘর,
কবিতার মাঝে আপন হলেও,হয়ে গেলে আজ তুমি পর
আমার তপস্যা শেষ হবে না,না আসো যদি অবনীতে,
একাকীত্ব নির্জন দেশে কিভাবে পারো একাকী ঘুমাতে?
যেখানে তোমার বসত,সেখানেই আমার মরণ,
মরতে যদি চাই,তোমায় করি স্মরণ
গাঁথা কাব্যগুলো কায়ে দেয় বিষের কাঁটা,
সারা অঙ্গ পুঁজে ভরেছে পাই অনেক ব্যথা
আমার কষ্ট শেষ হয় না,হয় না ক্ষত শুকনো,
তপস্যাতে থাকি আমি তাই কি পরিপূর্ণ?
শশী:মুক্তা,বলোনা,উত্তর দাওনা?
মেহেরুন:হ্যাঁ,যাদু,কি উত্তর চাও?
শশী:না,না,কিছুই না
মেহেরুন মনে মনে ভাবতে লাগলো,একটু আগে সে আমাকে মুক্তা ভেবেছেআমি চাই সারা জীবন সে আমায় মুক্তা ভাবুক



কিন্তু কেনো বিধাতা তার এই ভাবনা থেকে সরিয়ে দেয়আমিতো মুক্তার মতো করে তাকে আগলে রাখতে চাইযেমন দাদা মরে যাওয়ার পর মুক্তা ফুফি শশী ফুফির সাথে কথা বলতো,সান্ত্বনা দিতোআমিতো চেষ্টা করি মুক্তা ফুফির মতো সান্ত্বনা দিতেকিন্তু যতই মুক্তা ফুফির আচরণ করি না কেনো আমি মেহেরুন,মেহেরুন থেকে যাইআমি কি কখনো পারবোনা মুক্তা ফুফি হয়ে আমার যাদুকে সান্ত্বনা দিতে?সামনে জেএসসি পরীক্ষাপড়ার প্রচণ্ড চাপ তারপরেও পড়া হয় না আগের মতো
শশী:কিরে মেহেরুন,নীরব কেনো?
মেহেরুন মনে মনে ভাবতে লাগলো,মুক্তার ভাবনাটা ফুফিকে বলা যাবে না
শশী:হ্যালো মেহেরুনকথা বলছো না কেনো?
নিজের ভাবনাকে আড়াল করে মেহেরুন শশীকে প্রশ্ন করলো,
আচ্ছা যাদু,তুমি সবচেয়ে কোন ফুল বেশি পছন্দ করো?
মেহেরুন এর এমন প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পেলো শশী
এতো মুক্তা নয়,মুক্তা-তো জানতো,আমার বেলি ফুল পছন্দ
মেহেরুন:নিশ্চয় তোমার গোলাপ ফুল পছন্দআমার সবচেয়ে ভালো লাগে তোমার মতো গোলাপ ফুলতুমি আমায় বলেছিলে,আমি নাকি ফুলের মতো সুন্দর?আমি নাকি ফুলের রাণী?গোলাপ ফুলে যেমন মিষ্টি সুভাস,আমার কায়ে নাকি তাই?
শশী:মেহেরুন
মেহেরুন:হ্যাঁ,ভাবছি,আমি যেনো গোলাপের সারিতে তোমার সাথে লুকোচুরি খেলছি
এমন সময় মনীষা এসে বললো,সামনে পরীক্ষা,গোলাপ ফুল নিয়ে ভাবনার অনেক সময় আছেচল,কোচিংএ যাবো
কথাটি শশীর কানে প্রবেশ করতেই বললো,মেহেরুন তুমি কোচিংএ যাওআমার স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে
মনীষা:শশী ফুফি নাকি?
শশী:মেহেরুন এখন রাখি মনীষার সাথে কথা বলোবাই
মেহেরুন মনীষার প্রতি তাকিয়ে বললো,হ্যাঁ,শশী ফুফি ফোন করেছেফুফির অনেক মন খারাপ আগামী কাল মুক্তা ফুফির মৃত্যু বার্ষিকী
মনীষা:হ্যাঁ,বুঝতে পেরেছি ফেসবুকে একটি কবিতা পড়েছি
মেহেরুন: কোন কবিতা?
মনীষা:পাপড়ি
মেহেরুন:শুনো তাহলে-
পাপড়ি
সৈয়দা আফরোজা মুন
বাগান জুড়ে আরতি কাছে ভ্রমর করে যায় গুঞ্জন,
তুমি-হীনা শূন্য বাগানে কাঁদি আমি,খুঁজি তোমায় যখন তখন
আরাধনা আমার বিধাতার কাছে,রাখি যেনো তোমায় স্বর্গের তৃণে,
জানি না কে যাবে আগে ভুবন ছেড়ে?তোমায় যেনো চিনে
ভালোই আছো হয়তো বেহেস্তের বাগানে,স্বপ্ন,ছোঁয়া কে নিয়ে,
বড় ইচ্ছে করে তোমার,কায়খানি দেখতে গিয়ে
তোমার যাওয়ার পর সাজে না বাগান আর ফুলে ফুলে,
কুল হারা পথিক আমি,যাবো কার কুলে?
এক একটি করে চলে গেলো চার চারটি বছর,
তুমি-হীনা ভালো লাগেনা আমার আপন ঘর
এইতো রজনী শেষে আসবে ২৯ সেপ্টেম্বর,
চারটি বছর হয়ে গেলো বরাবর
পাপড়ি হয়ে সুবাস তোমার আসে না আর নাকের ডগায়,
কেনো এমন হলো,চলে গেলে কোথায়?
মনীষা:চল যেতে যেতে কথা বলি
মেহেরুন: তাই করি
এই বলে দু,জনে কোচিং এর উদ্দেশ্যে বের হলো
মেহেরুন:কবিতাটা তোর কেমন লেগেছে?এর সারমর্ম কি বুঝলি?
মনীষা:আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে পড়ে খুব কষ্টে পেয়েছি বিগত চারটি বছর অতিবাহিত হতে চলেছে অথচ উনার মন থেকে আজও ছোট বোন মুক্তাকে আলাদা করতে পারেনিউনার অধিকাংশ কবিতায় দেখি মুক্তাকে নিয়ে আর্তনাদএই কবিতায় বুঝা যায় সামনে মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী
মেহেরুন:শুধু সামনে নয় একদম দরজায় এসে কড়া নাড়ছে এইতো ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তার চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকী আমার মন বলছে,শশী ফুফি মুক্তা ফুফিকে নিয়ে এই সময় খুব অস্থির হয়ে আছে নিশ্চিত কান্নাকাটি করছে জানিস,মনীষা,আমি বারবার উনার কাছে মুক্তা হয়ে ফিরে আসি অতি দুঃখের বিষয় হলো,তার স্থায়িত্ব হয় ক্ষণিকেরযখন শশী ফুফি স্বাভাবিক থাকে তখন আমি তার কাছে মুক্তা হয়ে থাকিঅস্বাভাবিক থাকলে তখন আমার কথা আর মনে থাকে নাউনি যেমন অসহায় হয়ে থাকে তেমনি আমাকে অসহায় করে রাখে আমার মনের ভিতর শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণাযা আমি সইতে পারি না আমার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে শশী ফুফির কি অবস্থা হয় ভাবতে গেলে কষ্টটা আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়
মনীষা:তোর অন্তরের আত্মীয় হয়ে এতো কষ্ট সেদিক থেকে মুক্তা শুধু শশী ফুফির আত্মার আত্মীয় নয় রক্তের বাঁধন স্নেহের বাঁধনও বটে তোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে,শশী ফুফির বুকে তার চেয়ে অজস্রগুণ বেশি কষ্ট বাস করে
মেহেরুন:তা ঠিকফুফির কষ্টের তুলনায় আমার কষ্ট এক সমুদ্র জলের মাঝে এক ফোটা জল আমার এই কষ্ট সহ্য হয় না অথচ ফুফি পাহাড় সম কষ্ট বুকে নিয়ে চলছে এগিয়েজানিস,মনীষা,শশী ফুফির একটি কবিতা বই প্রকাশ হয়েছে
মনীষা:কখন,নাম কি?
মেহেরুন:অপেক্ষার প্রহর যে বই নিয়ে শশী ফুফির অনেক আশা প্রত্যাশা ছিলো২০১২ সালের ৩জানুয়ারী মুক্তা ফুফির জন্মদিন ফুফিকে সারপ্রাইজ দেবে এই ভাবনায় বইটি লেখা হয়েছে শশী ফুফিকে নিয়ে মুক্তা ফুফির ডায়েরীতে লেখা অনুভূতি নিয়ে নিয়তির কি নিষ্ঠুর বিধান এই বিধানে আগামী জন্মদিন আসার আগেই ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তা চীর বিদায় নিয়ে গেলো যার কারণে সে সারপ্রাইজ আর দেয়া হলো না শশী ফুফির সেই লালিত আশা আকাঙ্ক্ষাকে অবশেষে ২০১৫ সালের একুশে বই মেলার অধর আংকেল এর সার্বিক তত্বাবধানে সৃষ্টি প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করলো মুক্তা ফুফির ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কাঙিখত অপেক্ষার প্রহর
মনীষা:বইটা কি তোর কাছে আছে?
মেহেরুন:না,আমার কাছে নেই শশী ফুফি বলেছে,উনার নিজ হাতে বইটি আমার হাতে তুলে দেবে তাই শতো ইচ্ছার মাঝেও বইটি নেয়া হয়নি আমি অনেকটাই জানি,এই কবিতা বইতে কি কবিতা আছে?
মনীষা:তোকে বা ফুফু দিবে আমি কই পাবো?
মেহেরুন:আগামী একুশে বই মেলায় ফুফির আরো কিছু নতুন বই প্রকাশ হবেসেখানে এই বইটিও পাবি
মনীষা:তুই বলছিস আগামী বই মেলা তার মানে আরো প্রায় চার মাস আর আমি চাই এখুনি বইটা পড়তেঅধর আংকেল কে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা কর উনার কাছে থাকতে পারে
মেহেরুন:খারাপ বলিসনেদেখি অধর আংকেল কে একটা রিং দিয়ে
মেহেরুন কল দিয়ে দেখে ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে রিং পরে কিন্তু রিসিভ হয় না মন খারাপ করে মনীষাকে বলে-
আংকেল মনে হয় ব্যস্ত ফোন রিসিভ করে না
মনীষা:ধুত ছাই এই পোড়া কোপালির কোপালটা খারাপ যেই কিছু একটা চাই তখন তা হাতের কাছে থেকেও পাই না শুন,কিভাবে নিবি জানি না শুধু এইটুকু বলছি,যে করে হোক আমার অপেক্ষার প্রহর চাই,চাই এই অপেক্ষার প্রহরে একটা কবিতা শুনা না
মেহেরুন:কোনটা শুনাবো?
মনীষা:আমি কি জানি ওখানে কি কবিতা আছে? তুইতো জানিস আচ্ছা,শশী ফুফিকে নিয়ে




মুক্তা ফুফির ডায়েরীতে প্রকাশ করা অনুভূতি নিয়ে কবিতাটি বল
মেহেরুন:'আপু'কবিতাটি শুনবি?
মনীষা:আরে শুনা না তাড়াতাড়ি
মেহেরুন:শুন তাহলে-
আপু
এই যে
আপু তুমি না খুব মিষ্টি
চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে মেলে দু,টো দৃষ্টি
তোমার লোচন থেকে পড়ে কেনো
মাঝে মাঝে আষাঢ় শ্রাবণের বৃষ্টি?
জানিনা
তোমায় বিধাতা বানাইছে কোন মাটি দিয়া?
তোমারী সকল আচরণ ভাবে আমার হিয়া
তুমি যে কতো ভালো
আমার জীবনে দিয়েছো একটু একটু করে আলো
তোমায় পারবে যে চিনতে
পৃথিবী সম্বন্ধে পারবে সে বুঝতে
যেমন তোমার চেহারা তেমন তোমার মন
দেখে যেনো মনে হয় সুবাস চন্দন
আমি এমনি অবলা
বুঝিনা তোমার জ্বালা
পারিনা তোমার মতো চলতে
চাই না যেনো নতুন কিছু জানতে
আপু
তুমি ঠিক বলেছো
আমি দুষ্ট,সত্যি দুষ্ট
আপু,আমি একটুও রাগ করিনি সত্যি
আমি নিজেকে নিজে বলি সত্যি তাই
তবুও তোমায় থেকে ভালোবাসা পাই
মনীষা:অসাধারণ,অসাধারণ কবিতা অসাধারণ বোনের প্রতি বোনের ভালোবাসার সুনিপুণ প্রকাশ পোষা পাখির এই ভালোবাসা হারিয়ে শুধু শশী ফুফি নয়,পৃথিবীর যে কেউ পাগল হয়ে যাবে এই মেহেরুন,আমি আবার বলছি,অপেক্ষার প্রহর বইটি আমি চাই,চাই আবার ফোন দেয় অধর আংকেলকে উনার কাছে না থাকলে জিজ্ঞাসা কর কোথায় পাওয়া যাবে
মনীষার পিড়াপিড়িতে আবার অধর আংকেলকে কল দেয় এবার নাম্বার ব্যস্ত দেখাচ্ছে মেহেরুনের এই কথা মনীষাকে বলতে যাবে এমন সময় মোবাইল বেজে উঠে চেয়ে দেখে অধর আংকেল
মেহেরুন:আসসালামু আলাইকুম,আংকেল কেমন আছেন?
অধর:ওয়ালাইকুম আসসালামভালো,তুমি কেমন আছো আংকেল?
মেহেরুন:জী আংকেল ভালো আংকেল,ফুফির সাথে কথা হয়েছে উনি কেমন আছেন?
অধর: না,আজকে এখনো হয়নিগতকাল হয়েছে কেনো, কোনো সমস্যা? তোমার সাথে কি কথা হয়েছে?
মেহেরুন: আমার কোচিংএ আসার একটু আগে কথা হয়েছে
অধর:কি বলে?
মেহেরুন:উনিতো কবিতা আর মুক্তাকে নিয়ে ব্যস্ত আমার সাথে উঁ আঃ করে কথা বলেছেমনে হয় তখনি কবিতা লেখতে তবে মনটা খারাপ এটুকু বুঝতে পেরেছি
অধর:মনতো খারাপ থাকারি কথাএই মাসেই তো হারিয়েছে তার অন্তর আত্মাকেহাজারো চেষ্টা করে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি ভাবনা থেকে শশীর অপেক্ষার প্রহর কবিতা বইটি প্রকাশ হয়েছেতুমি কি জানো?
মেহেরুন:জানি,আংকেল কিন্তু এখনো পাইনিফুফি নাকি আমাকে নিজ হাতে দেবে আর আমি এই জন্যই আপনাকে ফোন করা আমার বান্ধবী মনীষা এই বইয়ের জন্য পাগল হয়ে আছেকোথায় পাওয়া যাবে,আংকেল?
অধর:প্রথম সংস্করণে অধিকাংশ বই বিক্রি হয়ে গেছে আমার কাছে কয়েকটা আছে কুরিয়ার এর একটি ঠিকানা দিও আমি পাঠিয়ে দেবো
মেহেরুন:আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মোবাইলে এসএমএস করে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছে
অধর:ভালো থেকো
মেহেরুন:আপনিও ভালো থাকবেন খোদা হাফেজ
শশী স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে নীরব হয়ে শুয়ে আছেলোচন দু,টি বৃষ্টি ঝরাচ্ছেবৃষ্টি ঝরা লোচনে কিছুই দেখে না পৃথিবীএমন সময় শশীর ফুফি জ্যোৎস্না বেগম ডাকতে লাগলোশশী মা, শশী মা,কোথায় তুমি?এই অবেলায় শুয়ে আছো কেনো?খাওয়া দাওয়া কি করেছো?শশী তার কক্ষে প্রবেশ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলোশশী নীরবতা দেখে আবার জিজ্ঞাসা করলো,খাওয়া দাওয়া কি করেছো?টেবিলে খাওয়ার আছে খেয়ে নাও
শশী:আচ্ছা ঠিক আছে
জ্যোৎস্না বেগমের ভয়ে একটু করে ভাত নিয়ে মুখে দিতে না দিতে ফ্যাল ফ্যাল করে কাঁদতে শুরু করলোকান্নার আওয়াজ যেনো জ্যোৎস্না বেগমের কর্ণ ছুঁয়ে যাচ্ছেবুঝতে পেরে জ্যোৎস্না বেগম ডাকলো-খাওয়া শেষে এদিকে এসো তবে খাওয়ার নষ্ট করবে না আমার চোখে ঔষধ দেয়া হয়নি চোখে ঔষধ দাওশশী ঔষধের বাক্সটা নিয়ে চোখে ঔষধ দিতে গিয়ে তার লোচন থেকে এক ফোটা অশ্রু জ্যোৎস্না বেগমের কোপালে পরে জ্যোৎস্না বেগম না বুঝে বললো,চোখের মধ্যখানে দাওশশী নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,ঠিক আছে জ্যোৎস্না বেগম বললো,চোখের অপারেশন করার পর থেকে আজ কতো দিন টিভির কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পারিনাএকটা গানের ক্যাসেট ছাড়ো গান শুনবো
শশী ক্যাসেট প্লেয়ারটা চালু করলো বেজে উঠলো-
দেখা যায় দয়াল চান আমার,বসে আছে হাতে বৈঠা নিয়া,
ওরে ইশারাতে ডাকে আমায়,হাত ইশারা দিয়া
যাবো আমি প্রেম বাগানে গেয়ে সুখের গান,
গানের সুরে মাতোয়ারা হবেরে আমার প্রাণ
আমি তোরে ভালোবাসি কতো আপন করে
দয়াল,কতো আপন করে
এসো দয়াল আপন মনে আমার বাসরে,
তোরি সনে দেখা করবো আছি কেনো ঘুমাইয়া?
চরণ ধরবো আমি তোর কাছেতে গিয়া
বাসর ঘরে সাজিয়েছি ফুলে ফুলে বাগান,
বুঝিস নারে দয়াল তুই,তুই যে আমার জান
দ্বীনের আলোয় রাঙ্গিয়ে দিও মোর সুখের ঘরে,
শেষ বিচারে ঠেকলে দয়াল,জান্নাতে নিও আমারে
জ্যোৎস্না বেগম:এমন গানতো আগে কখনো শুনি নাইএই গান কোথায় থেকে এলো অসাধারণ এক গানশুনে প্রাণটা জুড়ে গেলো
শশী:গানটা আমারি লেখা এই গানে কণ্ঠ দিয়েছে আমাদেরি এক মুরিদান
জ্যোৎস্না বেগম:জানতাম কবিতা,উপন্যাস লেখতেবারণ তা না করার জন্যএখন দেখছি গান লেখা ধরেছে প্রশংসা করবো না বকা দেবো ভেবে পাচ্ছিনা এতো নিষেধের সঃতেও যখন শুনো নাই তখন শুভ কামনা রইলো
শশী:অসংখ্য ধন্যবাদ,ফুফু
জ্যোৎস্না বেগম:এতো খুশি হয়ে যেওনা যাও একটু বিশ্রাম নাও
শশী:ঠিক আছে ফুফু আপনিও একটু ঘুমান
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আঁধার নেমে এলো প্রকৃতিতে ধীরে ধীরে নেমে আসে চারিদিকে নিস্তব্ধতা এই নিস্তব্ধতায় শশীর বুকের ভিতর ভর করে মুক্তাকে নিয়ে হাহাকার শশী দেখতে পাচ্ছে যেনো ছায়া সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুক্তা বলছে যেনো,আমিতো সেই কবে মরেগেছিকায় থেকে আমার প্রাণটা আলাদা হয়েছে কিন্তু তোমার রক্ত মাংস,শিরা-উপশিরার সাথে আমার সমস্ত অস্তিত্ব মিশে গেছে তুমি মাঝে মাঝে তাই রূপ ধারণ করো আমার রূপে মাটির সাথে যেমন আমার ঘর বসতি,তোমার সাথে তেমন আমার জ্বলে জ্যোতি কুঁড়ে কুঁড়ে ভাবনাগুলো তোমায় ভেবে যায় দিন থেকে রাতে,রাত থেকে দিনেতোমার বর্ণটা তখন বিবর্ণ হয়ে যায় কেউ তখন তোমাকে আর চিনে নাআমিতো সেই কবেই ইচ্ছে করে নিয়েছি বিদায়ভোবা মূর্তি,প্রাণহীন মমি তাই পৃথিবীতে নাইনির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছো কেনো আমার প্রাণে?রঙ্গিন অবনী বেদনায় এতই ব্যথুক হবে কে জানে!আমিতো মরেই অমর হয়ে আছিতোমার উপলব্ধি আর ভালোবাসা নিয়ে বাঁচিসেই দিন তুমি বলেছিলে সারা জীবন আগলে ধরে রাখবে

সব সময় আদর করে ইন্দু বলে ডাকবেকথাগুলো শুনতে শুনতে শশীর ঘুম চলে আসে