মাহমুদ শাওন এর গুচ্ছ কবিতা

নারী

তোমার শারীরীক উপত্যকার মানচিত্র বহুদিন ধরে পড়ছিলাম,
মুখস্ত করছি অলি-গলি,
ভাগাড়,
ডোবা - নালা,
সরু পথ,
পাহাড়।
উপরোক্ত অর্গান গুলো আমি সাহিত্য, বইতে পড়ে পড়ে চিনি।
কখনো ধরিনি, দেখিনি।
হাঁটার চেষ্টাও করেছি কোনদিন কিন্তু মাঝপথে থেমে যাই,
হোঁচট খাই।

আমি যে তোমাকে চিনি এই তুমি তো সেই তুমি নও।
কড়া পারফিউম,
গাঢ় করা লিপষ্টিক,
ডিএনএ'র সিঁড়ির মত লাল ফিতের বেণী,
পিঠে আঁড়চের দাগ,
বুকে উপর নিচ সারির মিলিয়ে আটটি কামড় দেখে আমি দৌড়ে পালাই।

আমার কোন শরীর দরকার নেই!
আর কখনো সাহস করবো না বাইরে থেকে দৃশ্যায়মান পথগুলোতে হাঁটার।

নারীকে মানুষ ভাবতে শিখে গেছি আজ থেকে,
শুধু সঙ্গমের জন্য নারী নয়।

ঈশ্বরের কাছে প্রশ্ন

চা আর সিগারেটের উষ্ণ ধোঁয়া যখন অন্তরীক্ষ ছোঁয়,
আমি শীতল মনে তোমাকে ভেবে গাল ভেজাই ঈশ্বর!
প্রতিটি অবরুদ্ধ,
নিস্তব্ধ,
হাহাকার বিদগ্ধ রাত কুড়ে কুড়ে পোড়ায় আমায়!
আমার মগজের ঝোলে কারা যেন সেদ্ধভাতে চড়ুইভাতি খায়,
ওরা মানুষ!
ছিঃ ধিক্কার জানাই ওই সব নরপিশাচদের।
ওরা মানচিত্রকে বিছানা ভেবে ধর্ষন করে কারো ঘুঙুর রাঙানো বোন,
কারো মাতৃতুল্য ভাবী,
কারো নববধূ,
কারো দুগ্ধসহজাত মা।

ওরা,
ওরা মরচে পড়া টিনের চালে শকুনকে মানুষের হাঁড়-গোড় খেতে দেয়,
ওরা আঁতুরঘরে মায়ের বুকের দুধ খায়নি,
মুখে নেয়নি মধু।
ওদের জন্মলগ্নের সময় মসজিদে আযান হয়নি,
বাহুতে দেয়নি মুয়াজ্জিনের দোয়া পড়া কবজ।
ওরা জন্মেছে বেশ্যাপাড়ার দুর্গন্ধ ডোবায়,
জন্মেছে গরুর বাচুরের মত মাটিতে পড়ে,
জন্মেছে শেয়াল কুকুরের বীর্যে!

নিপীড়িত,
নিক্ষেপিত,
পরাজিত,
বিতাড়িত কিছু হায়েনার লালসার স্বীকার হওয়া মহীয়সী নারীর পবিত্র গর্ভে ওদের জন্ম।

আমি মাঝরাতে সমুদ্রের কান্না শুনি,
বাস্তুহারাদের আর্তনাদ আমার বিবেককে শুলে ঝুলায়,
মানচিত্রের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আমি সাদা কাপড়ে পবিত্র রজঃচক্রের রক্ত খুঁজি।
এক ফোঁটা স্বাভাবিক রক্ত আমি পাই না!
বৃথা রোদনের ডাকবাক্সে অশ্রুকলমে লেখা চিঠি পড়ি,
আর তব্ধা খেয়ে হাসি।
আমার কান্না যে আজ মৃত,
মৃত কান্নারা এখন হাসে।

সবাই ভালো মানুষ,
আমি বাদে।
কারণ আমার কষ্ট হয় নির্যাতিত মানচিত্রের বুকের সবুজ মানুষগুলোর জন্য।

কাকে দোষ দিবো আমি?
ঈশ্বরকে ছাড়া কাউকেই তো পাচ্ছিনা।

মানবীর হাতে মৃত্যু

হয়তো খুচরো পয়সার মত একসময় আমি হারিয়ে যাবো তোমার বুকপকেট থেকে,
কেউ সমুদ্র তীর থেকে ঝিনুকের মত কু্ড়িয়ে আনবে না,
হয়তোবা শো শো করে আসা মাতাল ঢেউ'র বিধ্বংসী স্রোতে টেনে নিয়ে যাবে মাঝ সমুদ্রে,
লক্ষ লক্ষ নুড়ির মিছিলে আমি এক ক্ষুদ্র চিরকুট।
জলে মিশে যাওয়া কিছু শব্দ,
সৈকতে আহত মাছের মত কাতরে কাতরে জীবন্ত রোদ খাবো,
হামি খাবো ঠোঁট তুলে।

কোন এক মানবীর ক্লিভেজে চুমু দিয়ে এসেছিলাম সমুদ্রস্নানে পবিত্র হবো,
সাহিত্যের মতাদর্শনে নিজের কবিয়াল মনকে ধনাঢ্য করবো,
কবিতার বালিশে শির রেখে মৃগনাভীর সুগন্ধির ন্যায় সেই মানবীর গন্ধ নিয়ে কোলে ঘুমিয়ে যাবো।

নারীর যে গঙ্গাফড়িংয়ের মত সবুজ মন,
ব্যথার বাণে ঘাই মারতে মারতে আমি লুটিয়ে গিয়েছিলাম সেইবার,
হৃদয়ে ধারন করেছিলাম পরেরজন্মেও আমরা একে অন্যের সম্পূরক হবো যেমনটি আয়নার সামনে দাঁড়ালে হয়;
আমি বারবারই ভূলে যাই মানবীর চুমু আমার জন্য হেমলক!
মানবীর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সৌভাগ্যবান মৃত্যুঞ্জয়ী কোন পুরুষ আছে বলে আমার জানা নেই,
মহাকালের গোরস্থানে আমাকে সমাহিত করা হোক!

নারী - ২

নারী প্রেমিকা হলে হয় কবিতা,
প্রস্থানে হয় সার্থক পূর্ণগল্প।

শেষদূত

বুকপকেটে তোমার স্বচ্ছ আলোর ওম জমেছে,
যে আগুনে আমি হিমশীতল বাতাসে উষ্ণতা পাই,
পাই স্বর্গসুখ,
আশার মশাল জ্বালাবে কবে?
হৃদয়ের ভাগাড়ের ডোবাজলে ভাসে কচুরিপানার ভ্রম,
নিঃশব্দ জগত সংসারে এবেলা ওবেলা করে আমার সন্ধ্যা ঘনায় তোমার বৈঠকখানায়,
মারনাস্ত্রে উরুর পকেটে বিলি কাটে শিশ্নের দরজায়,
তবুও অগত্যা দিন চলে যাচ্ছে হেলেদুলে,
সীমাহীন জটিলতায় বুকে বাঁশ গেড়ে বসে আছে মহাজন,
মাচার উপর কল্কি টানে,
গান টায়,
অবশিষ্ট ছাঁই ফেলে আমার নিতম্বের খাঁজে,
মহাজনের পৈশাচিক অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে তোমার মুখপানে চেয়ে।
ইচ্ছে করলেই বড়বাবু আমার কলিজা টান দিয়ে মৃৃত্যুসুধা পান করাতে পারে,
অথচ দ্যাখো অদেখা ভালোবাসার দোহাই বুকে নিয়ে বেঁচে আছি দিব্যি,
পাপের করাঘাতে অতিষ্ট ঝুলন্ত জীবন,
তুমি হাত বাড়ালেই বেঁচে ফিরবো ভুলেভরা দুয়ার থেকে,
জানালায় চোখ রাখলেই গর্ভবতী হবে পৃথিবীর সকল বন্ধ্যা নারী,
জরায়ুতে জ্যান্ত বীর্যের ঢল নামবে আষাঢ়ের মতন,
ফুল তো সারাবছরই ফুটে,
সকল ঋতুতে,
তোমার শ্বাসে কামউত্তেজনা বেড়ে যাবে সপ্ততলায়,
বেদ শাস্ত্রের ভুল ত্রুটি জনসম্মুখে খুলে যাবে তখন,
ত্রিপিটকের সকল গোঁড়ামি নিঃশেষ হবে,
গীতার অনৈতিক যত কর্মকান্ড ধুলিসাৎ হবে,
বন্ধ হবে সকল হানাহানি,
ধর্ষন,
রাসলীলা,
মহাজনের চাটুকারীতার অবসান হবে,
তোমার আশার অপেক্ষায় সকল বাস্তহারা,
বেদনার সমুদ্রে ডুবন্ত সকল মানুষের আহাজারি ভেঙে যাবে,
পৃথিবী আবার সৃষ্টি হোক নতুন "তুমিতে",
ঈশ্বরের স্ব-ইচ্ছায় জন্ম হোক তোমার।

তিতিরকে লেখা শেষ চিঠি

তিতির এখন কি তোমার জানালার পাশের জারুল গাছে মাঝে মাঝে কোন কাক ডাকে?
আমার দূত হয়ে কি তোমার ঘুম ভাঙায়?
জীবন্ত শব্দের মিছিলে কি তোমার মৌবনে ঘ্রাণ আসে সর্প জড়ানো রজনীগন্ধার মিথ হয়ে।

তোমার চুলের বেণী কি এখনো করো?
যে বেণীতে আমার কবিতার নির্যাস ছিলো,
লাল টুকটুকে বেণীর দোলনায় দোল খেতো আমার ফিকে হওয়া রাবীন্দ্রীক হৃদয়।
চিরুনীর অস্ফুট শাবলে কি তুমি আজো খুঁজে পাও আমার শীৎকার,
যে শীৎকারে ভারী হয়ে যেতো চারদেয়ালের বারান্দা।

অর্কিড গাছটা কেমন আছে তিতির?
কতদিন ওর গোড়ায় পানি দেয়া হয়না,
হয়না তোমার আটকে যাওয়া আঁচল ছুটানো,
টবের গায়ে শৈবাল জমেছে তাই না?
আমার আমি মন খারাপ করে অর্কিডের সাথে কথা বলতাম,
তুমি লাল শাড়িতে পিছন দিক থেকে এসে জড়িয়ে ধরতে,
তখন দেবদারু গাছটা লজ্জা পেতো ভীষণ,
আড়চোখে তাকিয়ে থাকতো আড়াআড়ি রোদের রশ্মি।

তিতির গ্রামাফোনে কি গান শুনো এখনো,
যে গ্রামাফোনের গান আর তোমার ভেজা চুলের গন্ধে আমার ঘুম ভাঙতো দিনের শুরুতে,
তিতির ক্যালেন্ডারটা পেরেকে কি তোমার অন্তবাস ঝুলে এখনো?

ওহ এখন তো তোমার আলমারী আছে,
আছে নামীদামী আসবাবপত্র,
কাপড় ঝুলে থাকা রশিগুলো হয়তো এখন নেই,
নতুন টাইলসের ওয়াশরুমে তুমি স্নান করো ইদানিং,
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে শরীর থেকে ধুয়ে নাও আদর।

আমার বিদ্রোহী নখের আঁচড়গুলো কি তোমার ঘুমটা নষ্ট করে রাতে?
চিনচিন করে পোড়ায় না তাই না?
ব্লাউজের হুকে স্পর্শ পেলে আমাকে মনে পড়ে?
তিতির নীল শাড়িটার কথা মনে আছে তোমার,
যে শাড়িটা পরে প্রথম আমার সামনে দাঁড়ালে, আমি অভূক্তের মত চেয়ে চেয়ে তোমাকে দেখেছিলাম,
তুমি বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে ফ্লোরে নখ ছড়াচ্ছিলে লজ্জায়,
শিহরণ বয়ে যাচ্ছিলো গোলাপের গন্ধে,
সৌরভ ছড়াছিলো তোমার শরীরে।

তিতির হাতে ব্রেসলেটটা কি আছে এখনো?
নাকি সোনার অলংকারের ভিড়ে পরা হয়ে উঠে না।
নাকফুলটা কি অবেলায় ঝরে পড়ে?
আমি খুঁজে দিতাম তোমায়।

আধা নষ্ট হওয়া কপালের টিপ কি খাটের পাশের দেয়ালে লেগে আছে?
তুমি আমাকে প্রায়ই বলতে;
'তুমি আমাকে যে কেন টিপ পড়তে বলো,
শুধু শুধু খুলে ফেলো, চুমু দিতে গিয়ে নাকি অসুবিধা হয় তোমার"।

এমনি করে রাখতে রাখতে কতগুলোই না জমেছিলো। এখন আর হয়তো জমে না। ভালোই আছো।

সর্বসাধারণের কবিতা

আমার একটা জোড়াসাঁকোর বুক দরকার ছিলো,
নিদারুণ প্রয়োজন ছিলো,
যে বুকে নিদ্রাহীনতার বিশাল খন্ডাকৃতির ঘুমরাত কেটে যাবে নিমিষেই,
যে বৈধ বুকে আমার শব্দেরা লুটোপুটি খাবে সুরসুরি পেয়ে,
আলগোছে শির তুলে জানান দিবে কবিতা তুমি আজ প্রিয়তমার দেহে আশ্রয় নাও,
বাস্তুহারাদের মত আঁচড়ে পড়ো প্রিয়তমার উনবিংশী শরীরের চিলেকোঠায়,
সাহিত্যের দুর্যোগে ভেসে বেড়াও কদলীর ভেলায় চড়ে,
কার্ণিশে প্রতীক্ষা করো কাল থেকে মহাকাল অবধি,
যে জমিনে আমি আবার পুনঃজন্ম নেবো।

আমার একটা কবিতার রাফখাতার মত বুক দরকার ছিলো কবিতার দুঃসময়ে,
যে খাতায় অনায়াসে লিখে নিতাম পৌরাণিক কিংবদন্তীদের মত শত শত কবিতা,
যে কবিতা দেহের কথা বলবে,
দ্রোহের কথা বলবে,
আত্মার কথা বলবে,
প্রেমের বিশ্লেষণীয় তর্জমার কথা বলবে,
কাঁটাতারের কথা বলবে প্রতিবাদী ভাষায়,
যে কবিতা দেশের কথা,
দশের কথা,
দেশ প্রেমের কথা বলবে,
ভাষা আন্দোলন,
যুদ্ধ বিজয়ী পতাকার কথা বলবে,
যে কবিতা কিশোরীর নুপুরের কথা,
কৃষাণীর ধানের কথা,
নবান্নের কথা বলবে,
যে কবিতা ভেসে যাওয়া ভ্রুনের কথা বলবে।

ষাটের কোঠায় শূন্য জীবন

তারপর কেটে গেছে তিনশত সাতষট্টি রাত। একটা বুক খুঁজে নিয়েছো ঘুমাবে বলে। আমাকে তোমার বালিশ থেকে সরিয়ে দিলে। বড় এবেলা ওবেলা করে রাত যায় আমার। তুমি নিদারুণ অভ্যাস করে নিলে। আমার অভ্যাস তুমিই রয়ে গেলে। সিগারেটটা নতুন করে যোগ হলো। তুমি বিয়োগ হলে। ভাগফল খুঁজতে গিয়ে দেখি আমিই অবশিষ্ট নাই। সমীকরণের উত্তর শূন্য। ব্যাকরণে নিয়ম নীতি সবই আছে। তুমিও নিয়মে। আমিই শুধু অনিয়মে। পদার্থে তুমি স্থির। আমি ত্বরণ হারিয়ে গতিহীন স্থিমিত। রসায়নে রস আছে। আমি নিরস। তুমি সরস কারো সিমেনে। আমি জীববিজ্ঞান পড়েও তোমাকে বুঝতে পারিনি। তুমি বিজ্ঞ ছিলে। আমাকে মূর্খের মত ছেড়ে দিলে। শোধরাও নি। অথচ তুমি সজীব কারো আদরে। আমি অনাদরে আঁতকে উঠি মাঝ রাতে। ভূগোল কখনোই আমি পারিনি। মানচিত্র। কাঁটাতার। দ্রাঘিমারেখা। অক্ষরেখা। কখনোই বুঝতাম না। কিন্তু আমি তোমার শরীরের মানচিত্রে আটকে আছি। স্মৃতির বেড়াজালে বন্দী। যাবজ্জীবন। তুমি স্বাধীন কোন পুরুষে। আমি পরাধীন তোমার মনের দেশে। অর্থনীতিতে কাঁচা ছিলাম। তুমি নিজের হিসাবটা করে নিলে ষোলআনা। আমার কানাকড়িও নেই। আমাকে নিঃস্ব করে দিলে বাস্তুহারার মত। তুমি ঠিকই আশ্রয়ে। আমি নিরাশ্রয়। সহায় সম্বলহীন। তুমি নগ্ন শরীরে কম্বল মুড়ি দাও। কেউ সাথী হয়। অথচ দেখো আমি সাথীহারা। তারপরও কেটে গেছে তিনশত সাতষট্টি রাত। কাল আটষট্টি হবে। পরশু উনসত্তর। আমার অভ্যুণ্থান আর হয়না। আমি যে থমকে আছি।

শূন্যতায় যাবজ্জীবন দন্ডাকৃত আমি

আমার স্বত্বাধিকারী একটা আকাশ ছিলো!
তাতে তুমি ছিলে একটা শশী দ্বিপ্রহরী আহ্লাদে,
ঘোর বরষায় আমাকে ঢেকে রাখতে ইথারীয় আঁচলে,
আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তোমার সুবাসিত কেশে নাক ডলতাম;
মারিজুয়ানার চেয়েও প্রবল নেশা ছিলো!
নিকোটিনের চেয়ে অধিক বাদামী ছিলো, তোমার চুলের রঙে রংধনু খুঁজে পেতাম,
এক রঙেই তুমি আমার শত রঙ ছিলে;
গাঢ়,
হালকা,
বিশ্লেষিত মৌলিক রঙ।

আমার একটি বৃষ্টি ছিলো!
তুমি বারোমাসি কাদাসিক্ত মৃন্ময়ী যৌবনা উঠোন,
আমি শুয়ে শুয়ে গায়ে মাখতাম তোমার ভেজা ঘাম,
মিশে যেত,
একটা কবিতার জন্ম হতো তোমার বুকে,
ক্লান্তিতে আঁচড়ে পড়তাম,
তুমি থোতা ধরে মুখ তুলে গলার নিচে কামড় দিতে আবেগে!
অতিরিক্ত ভালবাসায় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো।

হঠাৎ কোথা থেকে জারজ একখন্ড মেঘ এলো আমাদের জোড়াসাঁকোর আকাশে,
দুটো পথ দু দিকে বাঁক নিলো,
ইউ টার্ন হয়ে গেলো ভালবাসার ধলেশ্বরীর পথ।
তুমি রেখে যাওয়া মোড়েই আমি এখন মদ গিলি,
নেশায় বুঁদ হয়ে থাকি,
দৃষ্টি কোনরকম একটু তুলে দিন আর রাতের ফারাক দেখি,
হাতঘড়িটাও অকেজো এখন,
সময়ের তাড়া নেই অযাচিত অনুক্ষনকে কেন্দ্র করে।

আমি ভূলে যাই আমি একা!
কবিতায় আমার আহার মিলে,
শব্দ আমার রোজকার নাস্তা,
কাব্য আমার কাছে নিছকই একটা বনরুটি!
তুমি চলে যাবার পর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি,
সিগারেটটাই ইদানিং যাবত একটু বেশি খাচ্ছি;
আমি একা!
আমি যাবজ্জীবন কারাদন্ডী কয়েদীর মত একা,
ধূ ধূ মরুভূমির মত একা,
পুরুষাঙ্গের মত একা,
ধোঁয়ার মত একা উড়ি,
বাস্পে মিলে যাই উড়তে উড়তে,
আর বেঁচে আছি মরতে মরতে।

একটি পবিত্র কবিতা চাই

আঘাতে আঘাতে জর্জরিত সম্ভাবনাময় একটি কবিতার অমরত্ব চাই।
যে কবিতার গায়ে থাকবে না কোন চাবুকের রক্তাক্ত ফিনকির লোহিত ধারা।
খুব করে চাই একটি কবিতা জন্ম নিবে শকুনে খুবলানো মরা লাশের পাশে,
বুদ্ধিজীবিদের বাসি মগজের পাশে।
আততায়ীর পশ্চাতাঘাতে ভূমিশায়ী মানুষের শত ক্রোধের কথা বলবে,
বলবে আত্মহত্যা করা সাবিরা আর ধর্ষিত তনুদের কথা।

রমনীখেঁকো বেজন্মা কাঙালদের ঘরে জন্ম হউক বজ্রকন্ঠের সোনালি দোয়াতের কলমী কবি।
নিদারুণ চাতকের অপেক্ষার মত চাই নামে মাত্র একটা কবিতা জন্ম হউক সাংবিধানিক টেবিলে,
মুক্তিযোদ্ধার জরাগ্রস্থ জীর্ণকুটিরেও হউক;
পার্লামেন্টের ডেস্কে থাকা শত শত ধুলোজমা ফাইলের উপর টিকটিকির বিষ্ঠার মত বিদঘুটে অন্তত একটি কবিতার জন্ম হউক।

খালে-বিলে আর ডোবায় জন্তু জানোয়ারের মত ভেসে থাকা চার পাঁচ মাসের নগ্ন ভ্রুণের দেহে একটি পবিত্র কবিতার জন্ম হউক,
মহাকালের শেষ সাক্ষী রাতের বুকে শীতার্ত বাস্তুহারাদের জন্য একটি কবিতার জন্ম হউক,
মুখোশধারীদের উত্তপ্ত বীর্যে সস্তা স্নো-পাউডার ধুয়ে যাওয়া খাটের উপর একটি কবিতার জন্ম হউক।
নিবিড় প্রকৃতির ক্লিভেজে থেকে শুরু করে প্রিয়তমার খামচানো বিছানায় একটি সজীব কবিতার জন্ম হউক,
আঁতুরঘরের মেঝে থেকে ময়নাতদন্তের মর্গ পর্যন্ত একটি মিথ্যা কবিতা কবিতার জন্ম হউক,
বেশ্যালয় থেকে বিদ্যালয়;
উপাসনালয় থেকে নব বধূর শয্যালয় পর্যন্ত একটি কবিতার জন্ম হউক।

যে কবিতায় থাকবে না ক্ষমতার মায়াজাল,
রাজনীতিক চাল।
থাকবে না অনাহারীর পুনঃজন্মের অভিশাপকৃত অভাব,
থাকবে না 'বাংলাদেশ' নামক জননীর মানচিত্রে হাজার আঁচড়ের দাগ,
কোল খালি হওয়া নির্বিচারকৃত খুন।
চাই না আর কোন 'মা' বুক চাপড়ে কাঁদুক!
তবেমাত্র শুধু একটি কবিতার বেজন্ম হউক!
ব্যাঙের ছাতা থেকে শত শত দূর্বাঘাস প্রতিদিনই বেদুঈনের মত জন্ম নিচ্ছে,
আমি তো শুধু একটি কবিতার'ই জন্ম চাই।
যে কবিতা আমার, তোমার, তাদের, আমাদের সবার।

SHARE THIS

Author: