২৫ মার্চ ।। হামিম কামাল

এক।

কী বালক। কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছ? রাজারবাগ পুলিশ লাইন তো খুব বেশি দূরে নয় এখান থেকে।
বৃদ্ধ ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল কথাটি। কণ্ঠে বেশ একটা অহংকারের ভাব, একটা তাচ্ছিল্য। 
তরুণ শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো প্রশ্নের। পাচ্ছি। তবে এবারের শব্দে একাত্তর নয় বরং আরেক বিপ্লবের সংকেত পাচ্ছি। শব্দসংকেত। এই শব্দ নতুন। তাই এমন কান ফেলে শুনে আছি।তরুণের কণ্ঠে একটা কেমন উল্লসিত ভাব।
জবাবে বৃদ্ধ বলল, ‘যদি শুনতেই পেয়ে থাকো তো চলো বেরিয়ে পড়ি। বিপ্লবের কৌশল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু ফল তো এক। চলো বেরোই। নাকি রাতকে ভয় করে।বৃদ্ধের শেষ বাক্যে সেই পুরনো তাচ্ছিল্য।
একটু তো করেই, অস্বীকার করি না। তবে আমাকে নিয়ে ভেব না। আমার হুড়োতাড়া নেই। সময় এলেই দেখবে আমি বেরিয়ে পড়েছি। আপাতত এখানেই উপসনায় বসলাম।
কার উপাসনায়!বৃদ্ধ বিস্মিত।
কালদেবের।শুরু থেকেই যেমন শান্ত কণ্ঠে কথা বলে আসছিল তরুণ তা-ই বজায় থাকল, কোনো ব্যতিক্রম ঘটল না। 
কালদেব? কালদেবের উপাসনা তুমি কোথায় শিখলে। আর উপাসনা, প্রার্থনাÑ এসব শব্দ তোমাকে মানায়?’ এটুকু বৃদ্ধ খুব উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে গেল। এরপরই ঘটল স্বরবদল। কণ্ঠে চাপা    হাসি। অবশ্য, না মানানোরই বা কী আছে। তুমি তো আবার বেশি উদার। যে কোনো কিছুকে গ্রহণে সক্ষম। উদার হতে হতে নিজের অধিকারটুকু ভুলতে বসেছ। কী, হাসছ কেন! ভুল বলেছি! নিজের অধিকার তুমি ভোলোনি? অস্বীকার করতে পারবে? যদি না-ই ভোলো তো আমি বুড়ো হলাম কী করে।
অনেক প্রশ্ন তোমার। উত্তরও অনেক। কিন্তু মূল সুর একটাই।
তরুণ উঠে দাঁড়াল। বৃদ্ধকে ছাড়িয়ে গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘প্রথমত, কালদেবের উপাসনা আমি নিজেই নিজেকে শিখিয়েছি। আরাধনার কিভাবে করতে হয় তা নিজ পথে হেঁটে নিজের মতো করে, নিজেকেই শিখে নিতে হয়। আমি সবচেয়ে করুণভাবে যাপন করেছি যা, তার নাম কাল। এই হলো কাল যে আমাকে অনেক কিছুই ভুলিয়েছে। এবং এই সেই কাল যে আমাকে কিছুই ভুলতে দেয়নি। এই দুইয়ের লব্ধি মেনে আমি তার উপাসনা করতে শিখেছি। তবে আমার উপাসনা তার কাছ থেকে বর আদায়ের নয় বরং স্বয়ং তাকেই পাবার উপাসনা। আর তাকে আমি পাবো কোথায় তা জানো? আমার নিজের ভেতর!তরুণ বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে গেল। ভাবতে পারো? আমার নিজের ভেতর! এর মানে হলো, আমি নিজেই হবো কালদেব। নিজেকে কালদেবে রুপান্তরিত করার সাধনা করব আমি। কিভাবে তা করব সময়ই তোমাকে বলবে। তবে একটা বিষয় আমি না চাইতেও আমাকে মেনে নিতে হবে বুড়ো। কালকে ধারণ করার জন্যে আমাকে অমর হতে হবে।তরুণ অনেকটাই সরে এসেছিল। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল বৃদ্ধের দিকে। আর সেই অমরত্বের দিকেই আমি এগোচ্ছি। সেও তুমি দেখতে পাবে। শিগগিরই।
হুম, কথার মালা গাঁথা। কেবলই কথার মালা গাঁথা তোমার। কম বয়েসের এই এক বিলাস।বৃদ্ধের কণ্ঠে শ্লেষ।
বিলাস?’ তরুণ প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে তাকালো বৃদ্ধে দিকে। তুমি জানো বিলাসের কোনো স্থান আমার জীবনে নেই। আমি শ্রমিক। খনি শ্রমিক। খুঁড়তে খুঁড়তে আমি একটা রতœ পেয়েছি জানো? হয়ত আজই ওটা তোমাকে বলবার শেষ দিন। কী আশ্চর্য দেখো, কালদেব হবার একটা রহস্যময় প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমি চলেছি। অনেক কিছুই একসঙ্গে ঘটবে। একটার সঙ্গে আরেকটা বাঁধা। অথচ, অথচ এখানে আমার পর্যবেক্ষক হয়ে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই।
বৃদ্ধ ঠোঁট উল্টে বলল, ‘তোমার কথা ঘোরালো ঠেকছে। ভাবগুলো জুড়তে পারছি না। কী বোঝাতে চাইছো আসলে?’
তরুণ বৃদ্ধের শেষ কথাগুলো বুঝি শুনতেই পেল না। নিজ মনে বলে যেতে থাকল, ‘আমার ভেতর দুটি সত্ত্বা তৈরি করে, পরস্পরককে বিরুদ্ধ তর্কে লাগিয়ে দিয়ে ভেবেছে সে পার পেয়ে যাবে। উঁহু, তা হতে পারে না। তাকে আমি ঠিকই আটকে ফেলব। জাল পাতবো। দেবতা ধরার মন্ত্র জানা আছে আমার। তাকে ধরব। এরপর তাকে আত্মস্থ করব। তুমি দেখো, ভাষা, ধর্ম, জ্ঞাতির ব্যপ্তি এভাবেই ঘটে।
একটু আগেও বৃদ্ধ যেখানে ছিল সেখানে তাকিয়ে তরুণ দেখে, কেউ নেই। পরমুহূর্তে ঘাড়ের ওপর বৃদ্ধের অনিয়মিত নিঃশ্বাস টের পেয়ে তাকিয়ে দেখল, সেই পুরনো বাঁকা হাসি নিঃশব্দে ঝরছে। কালকে আটকাতে তুমি পারবে না বাছা। তবে কলিকে আটকাতে পারো। আদি শাস্ত্রে তার প্রমাণ আছে।
এবার এই প্রথমবারের মতো তরুণ উঠল ক্ষেপে। তার চাপা স্বরে প্রমাণ মিললো ক্ষোভের। আদি শাস্ত্রের প্রমাণ নাহয় তার পাতাতেই জমা থাক? আমি এখানে বাস্তবের অর্চনা করতে বসেছি বুড়ো। অতীতের শাস্ত্র ভবিষ্যতের ছুরিতে কাটা পড়ে। নতুন যুগে নতুন শাস্ত্র চাই। যুগধর্মই প্রাকৃতিক।এরপর হেসে স্বগোতোক্তি করল, ‘ওহে কাল, তোমার ওপর ফেলব আঠার জাল!
হাঁটতে হাঁটতে বদ্ধ ঘরের বন্ধ জানালার কাছে চলে গেল। পর্দার ফাঁকে স্বচ্ছ কাচের ওপারে নিঃশব্দ পৃথিবী। যতদূর দেখা যায় ল্যাম্পোস্টের হলুদ আলোর নিচে একটা পথকুকুরও হাঁটছে না। কোথাও কোনো মানুষ দেখা গেল না। কালকে আটকাবার মন্ত্র আমি জেনেছি। তোমাকে জানালাম।
বৃদ্ধের মুখটি শান্ত। তরুণের পেছনে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘বেশ, পাঠ করো, আমিও শুনি।
তরুণ থেমে থেমে উচ্চারণ করলÑ
বিশ শতকের পাঁচে
দেহটি মায়ের
দুটি ফালি হলো
বেশ। তারপর?’ বৃদ্ধের মুখটি তার নিচু, যেন কিছু আঁচ করতে চাইছে।
এগারোয় তার
প্রাশ্চিতি হলে বটে
অস্ত্রোপচারÑ
দাগ রেখে গেল।
তরুণের দুচোখ থেকে ক্ষোভ খসে পড়ল। তার স্থানে জায়গা করে নিলো আক্ষেপ। বৃদ্ধ বলল, উনিশশো পাঁচ, উনিশশো এগার! বাহ, এরপর?’
সাতচল্লিশে
দাগক্ষত ধরে
আবার দুফালি
কলির কিরিচে মা
অতঃপর একাত্তর
লালে লাল (আগুন)
দিলো জ্বাল
আবার সেই ক্ষোভ। তরুণ এবার স্থান বদল করে আবার ঘরের মাঝখানে চলে এলো। বৃদ্ধ তখন জানালার পাশে। মুখ নিচু করে ভাবছে। যেন একটা কিছু ধরে ফেলতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে আর পারছে না। হঠাৎ ঝট করে তরুণের মুখের দিকে তাকাল। 
তরুণ তখন কাঁপা গলা বলছেÑ
পাপের স্খলন
হলো না তবুও
প্রায়শ্চিত্যের
শেষটা সেদিন হবেÑ
শুনুক বাঙালি সবে,’
সর্বনাশ!বৃদ্ধের কণ্ঠের ভীতি। ও বাংলার ব্রাহ্মণেরা কোনোদিন তা হতে দেবে না। এ বাংলার আশরাফেরা কোনোদিন তা হতে দেবে না। দেখিস! দেবে না, দেবে না। এ যে নতুন পৃথিবীর ডাক! জাতিরাষ্ট্রের বিকাশ চাইছিস তুই, আমি তো বুঝি! এরপর না বিশ্বায়ন! ভুল সময়ে বিশ্বায়ন তো আগ্রাসন! আর তাই তো ঘটছে। মা তোকে দেখা দিয়েছে! শুধু তোকেই বা কী করে বলি।  কিন্তু ওদের সংখ্যা যে ভারি কম। ওরা শুধু মারই খাবে, একা মার খাবে। কেউ যে বাঁচাতে আসবে না। মধ্যখানে ধর্ম নামে রাজনীতির দেয়াল। একপাত্রে খেতে দেবে না তো! দিলে পাত্র বিক্রি হবে? বৈশ্যের যুগ! আর একটি দল আছে যারা বলবে, ঘরপোড়া আগুনে তুমি আলুপোড়া খাচ্ছো খুব, না? শোনো।বৃদ্ধ দুহাত নেড়ে তরুণের দিকে এগিয়ে গেল। ওসব কথাকে এড়ানো যায়। কিন্তু ওসব কথার ফলকে এড়ানো যায় না। ফাটল ধরে। তখন খুব কষ্ট হয়। স্বপ্নের মৃত্যু দেহের মৃত্যুর চেয়েও কষ্টকর। কারণ মৃতের চেয়েও জীবন্মৃত অসহায়।
 ‘তোমার সর্বনাশের হোক বুদ্ধিনাশ। স্বপ্নের কি কখনো মৃত্যু হয় বোকা? হয়, যদি সে স্বপ্ন হয় ছদ্ম স্বপ্ন। যদি তার সঙ্গে বড় মানুষগোষ্ঠীর কল্যাণযোগ না থাকে। বুঝতে পারছ? কেউ কেউ আছে না, সবাইকে একমতে এক ধর্মপথে আনবে বলে স্বপ্ন দেখে? স্বপ্ন ভাঙতে বসলে লাশ ফেলে দেয়? ওরা যা দেখে সেই স্বপ্ন হলো ছদ্মস্বপ্ন। কিন্তু আমি তো তা দেখছি না। আমার কথা হলো একটাই। বিকলাঙ্গ দেহ আঘাত ঠেকাতে পারে না। আঘাত ঠেকাতে চাই পূর্ণাঙ্গ দেহ। দেখ না দুই বাংলাতেই একের পর এক আঘাত শুধু আসছে? শত পথে। পারছে না। ঠেকাতে পারছে না। বাংলাদেশ পারছে না। পশ্চিমবঙ্গ পারছে না। তবে একদিন পারবে। যেদিন দুই বাংলা আবার মিলে গড়বে অখ- সুরবঙ্গ। জাতিরাষ্ট্রের কথাটা তুমি ঠিকই বুঝেছ। মন্ত্রের শেষটা শোনোÑ
শুনুক বাঙালি সবে
সুরবঙ্গের নাম
আসছে একার্ণবে
বসবে নতুন ধাম
মন্ত্রপাঠ শেষ। আমি অতীতের শব্দ শুনছি সারাক্ষণ। তবে সাড়া শুধু দিই ভবিষ্যতের জঠর থেকে ওই ডাকটি এলে তবেই। বুঝতে পেরেছ, বৃদ্ধ?’
পারছি। তুমি আর আমি যে অভিন্ন। কেন বুঝব না। আমাদের পার্থক্য এই যেÑ আমি ভর আর তুমি সাম্য। তুমি প্রেরণা আর আমি কাম্য।
সমস্যা এখানেই। তোমার কাম্যের মাপকাঠি সবসময় অতীত।
বলেছে! এই এখানেই অভিজ্ঞতা পার্থক্য গড়ে দেয়।বৃদ্ধের কণ্ঠে বিরোধ। অহম হারানোর আগমুহূর্তে মধ্যবিত্ত যেমন ছটফট করে, বিরোধময় কণ্ঠের আড়ালে তেমনই এক গোপন ছটফটে ভাব বৃদ্ধের কণ্ঠে প্রকাশ পেতে থাকল। আর তুমি, তুমিও তো অতীত মেপেই ডাক দিয়েছ।
তরুণ এবার জোরকণ্ঠে বলল, ‘আমি বলেছি অতীতের ডাক আমি তখনই শুনি যখনÑ, আচ্ছা বুড়ো, বলো তো, কাল কী ঘটবে?’ তরুণ দৃঢ় কণ্ঠে প্রশ্নটি করে বৃদ্ধের চোখের দিকে তাকাল। বৃদ্ধ তরুণের চোখের দিকে না তাকিয়ে, তাকাল বদ্ধ জানালা দিকে। বললÑ
অনেক রকম ডিসকোর্স আছে, আছে বহুদিকগামী আলোচনা। তবে সদুত্তরটি হলোÑ জানি না।
হাতে হাত রেখে মৃদু তালি দিলো তরুণ। এরপর জোড়হাত দুটো নিয়ে গেল বুকের কাছে। এই তো, এখানেই আছে উত্তর। কাম্য আসবে নতুন শিশুর কাঁধে চড়ে। এক কাজ করো না, তুমি শিশু বনে যাও। কালের সংখ্যারেখা ধরে হাঁটতে হবে। সামান্য স্থানাঙ্ক পরিবর্তনের ব্যাপার। স্থান এবং অংকÑ স্থানাঙ্ক!
বৃদ্ধ থমথমে মুখ করে চুপ করে আছে। ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়বার ছাপ তার রেখায়িত মুখচোখে প্রবল। তরুণ ঝুঁকে বৃদ্ধের কাছে এসে বলল, ‘পারবে না?’ তার চোখজোড়ায় আগুন।
শিশু হলে তো আমার নতুন জীবন পাই সামনে। ওটা কে না চায়?’ বৃদ্ধের কণ্ঠে নিয়তি মেনে নেওয়ার সুর। পারতে পারি। তবে বোধয়, এখানে, শেষমেষ, ওইÑ
বলো, বলো?’ তরুণের কণ্ঠে দরদ। বৃদ্ধের রগওঠা একটি হাত তুলে ধরে বলল, ‘নিয়তিকে তুমি মেনে নিচ্ছো না বুড়ো, তাইতো। তুমি স্রেফ তোমার তরুণ অস্তিত্বের কথা শুধু শুনছো, তার প্রেরণার বাতাসে শ্বাস নিতে শুরু করেছ, এইতো বিজয়। এটাকে পরাজয় ভেব না। বলো, বলো? কী বলতে চাইছিলেÑ
বৃদ্ধ একটিবার বুক ভরে শ্বাস নিলো। বলল, ‘বেশ, বলছিলাম, ওই যে কালকে আটকাতে চাইলে। তাহলে ওটা করো?’ বৃদ্ধ এবার তাকাতে পারল তরুণের চোখে। তরুণের চোখজোড়া তখন হাসছে। কাল তো আটকেই আছেন। মন্ত্র পড়লাম না! খেয়াল করো নি, ঘরের আলো বহুক্ষণ হলো বদলাচ্ছে না? জানালাটা খুললেই বুঝতে পারবে। তবে শিশু হবার আগে খুলো না। প্রাণশক্তি চাই। শিশু হয়ে ওঠো বুড়ো। কাঁধে কাম্যকে নাও। তোমার কাম্য! তোমার কামনা! পরে ভর। কী, টলছো? আমি সাম্য আসছি, আমি প্রেরণা আসছি। বেশি দেরি হবে না। এই তো আর কটা দিন। টলছো? টলো না- টলো না।
টলছি না, আমি পারব।
শিশুর কণ্ঠে গালফোলা আত্মাভিমান।

দুই।

ধম্ শব্দে দরজা খুলে গেল। দুরকম পোশাকের পুলিশ এসেছে। চাপাতি ও ত্রিশুল হাতে এসেছে দুরকম পোশাকের মানুষ। দরজা খুলে ওরা এদিক ওদিক তাকাল। ঘরের মধ্যখানে শুধু একজনকে দেখতে পেয়ে অবাক। পুলিশ দুজন মিলিত স্বরে প্রশ্ন করল, ‘বাকিরা কোথায়? অনেকের আওয়াজ শুনলাম যেন?’
তরুণ শান্ত কণ্ঠে বলল, ‘আমি একাই।
কোথায় লুকিয়েছ ওদের? বলো। সবকটাকে চাই। সব শুনেছি আমরা।
আড়ি পেতেছিলে?’
যা পেতেছি তাকে আড়ি বলে না। বলে ফাঁদ। বল ওরা কোথায়! নয়তো এদের লেলিয়ে দেবো।চাপাতি আর ত্রিশুল ধারী দুজনকে দেখিয়ে বলল পুলিশ দুটি। ওরা যা করবে তা কিন্তু আমাদের চেয়েওÑ হাহাহাÑ কী, অভিজ্ঞতা আছে তো? ভয়ঙ্কর হবে!
আরো যাদের শুনেছ, ওরা সবাই আমার ভেতরই আছে। এক শরীরেই আমাদের বাস। তোমাদের শরীরেও ওরা আছে। প্রশ্ন করে বের করে আনো।
প্রশ্ন করে বের আনবো- হ্যাহ!কণ্ঠ বিকৃত করে উচ্চারণ করল পুলিশ দুজন। তাদের কণ্ঠ সমসুর। বরাবরই একসঙ্গে, একতালে, এক লয়ে সব কথা উচ্চারণ করছে। চাপাতি আর ত্রিশুল হাতে অন্য দুজনও ফুঁসছে। দুজনের পোশাকে ধর্মীয় কোনো পরিচয়চিহ্ন নেই। ইউনিফর্মিত পুলিশ দুজন ওই দুজনার দিকে তাকাল। চোখে স্পষ্ট ইশারা। যাও!
আর তোমরা?’ ওরা বলল।
আমরা? আমরা তো শুধু মৃত্যু নিশ্চিত করব। তোমরা নির্ভয়ে যাও। তোমাদের কিচ্ছু হবে না। ওর কাছে অস্ত্র নেই। আত্মরক্ষার অস্ত্র ওরা কখনো রাখে না। কৌশল বার করেছে, হ্যাহ!
চাপাতিটা তরুণের খুলি কেটে বসে গেল। ত্রিশুল গেঁথে গেল বাঁ পাশের বুকে। দেহটা পড়ে গেলে পুলিশ দুজন দুটি করে চারটি মূল্যবান বুলেট খরচ করে গেল।
কারা যেন জানালায় ঢিল মারল। চুরচুর করে ভেঙে পড়ল কাচ। বাড়ির চারপাশে অনেক লোক যেন ভিড় করেছে। সরোষকণ্ঠে কথা বলছে নিজেদের ভেতর। পুলিশ দুজন জানালার দুপাশে দাঁড়িয়ে সাবধানে পর্দা সরালো। কেউ নেই।


*

SHARE THIS

Author: