আয়না
মেয়েটি এগারো বছর বয়সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুঝে গেল যে, সে সুন্দরী—
পরবর্তী এগারো বছরে সে তীব্র রুপসী হলো
তার পরবর্তী আট বছরে সে বুঝে গেল তার সুন্দরী
হওয়াটা ভুল ছিল—
সে আবার আয়নার সামনে দাঁড়ালো...
আয়না কখনো মিথ্যে বলে না
প্রেমিকার মৃত্যু
আপনি এখনো স্বপ্নের মধ্যে এলে আমি অন্যমনস্ক হয়ে যাই—
অমন করে পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে কে বলেছিলো?
পাদদেশ আর কতটা নাগাল পেয়েছিলো বলুন!
রঙ মাখানো সবুজ শরীর তো ছড়িয়ে গেল লাল
আপনি টিয়া হয়ে টিমটাম নেমে এলেন
মনের খোঁজ পেয়েছিলেন?
একটা হাসপাতাল, তেরোজন ডাক্তার- নার্স
এ্যাম্বুলেন্স নাকি আমি, কে বয়ে বয়ে নিয়েছিলো আপনাকে?
আজও বুক টানটান করে দাঁড়াতে পারি না, জানেন?
শরীর যেখানে যায়, ছুঁয়ে যায়—
মন থাকে আরো গভীরে
কেবিন থেকে শশ্মান
আপনার অবকাশ যাপন শেষ হয় না
এমন উচ্চতর মৃত্যুকাঙ্খা নিয়েও আকাশী শাড়ীতে নিজেকে জড়ায় কেউ!
কোমর থেকে সরে যাওয়া ভাজ
ভরাট নাভী খুলে রাখে আহ্বান—
আপনি এখনো স্বপ্নের মধ্যে এলে আমি
অন্যমনস্ক হয়ে যাই...
মানবিক সিঁড়িপথ ধরে আমরা ছটফট করি
আপনাকে পোড়াবো বলে পুকুরর্ভতি তল সাজিয়ে রাখি
লম্বা চুরুটে ঠোঁট নিয়ে—
শেষবার আমাদের দেখা হলো চেক প্রজাতন্ত্রে
এইসব আর্তনাদ সাদারঙ না পেয়ে কুঁকড়ে গেলো
আপনাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি—
আমার নামজুড়ে মৃত্যুর গন্ধমাখা ধবধবে স্তন
আপনি এখনো স্বপ্নের মধ্যে এলে আমি অন্যমনস্ক হয়ে যাই...
এক্যুরিয়াম
এইবার চলুন হেঁটে আসি আমাদের যুগল কবর থেকে
নুহামি, তিনশো বছর কি খুব বেশি সময়?
আপনি আড়ালে রাখলেন নোটবুক
সিলিকন সমুদ্র
পেয়ালায় থোকা থোকা মদ
হাসিটা দীর্ঘ হতে হতে ছোট করে কাশলেন—
গত তেরোযুগ—
পানাহার ফেলে আপনি এঞ্জেলোর নখ নিয়ে চুষলেন
ঘষলেন
কামড়ালেন
ছুঁড়ে মারলেন
আপনার বৈঠকখানায় তুলে রাখা বাইবেল
লাল কাপড়ে মোড়ানো আসমানি ভাষা
ছড়ানো দৃশ্যের ভেতর ঘাপটি কথা
সব, সব চেনাজানা পাপ
প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করলো আরব্য সুন্দরী
আপনি ডানহাতে লিথুনিয়াম বামহাতে ডানহিল ঠোঁট করে
দুই আলট্রা রুপশীর কাঁধ নিয়ে
স্নানে গেলেন—
আপনি যে এতকাল এ্যাকুরিয়ামে বন্দি
ভুলে গেছিলাম...
নিরানব্বই নম্বর প্রেমিকা
নিরানব্বই নম্বর প্রেমিকা হারিয়ে গেলে একশ তিন দিন শোক পালন করুন—
কিংবা সৎকারে অংশ নিয়ে আপনি চলে যেতে পারেন স্পেনে। হ্যাঁ, আপনার খানিকটা আফসোস থাকতেই পারে বরং এভাবেই ভাবুন- আপনি শতকের দিকেই এগিয়ে গেলেন! জানেন তো, ঋতু সংহারে নতুন কলিও ডানা মেলে।
আপনাকে চরিত্রহীন বলছিনা, বলছিনা আপনার চরিত্রে দোষ আছে। বিশ্বাস করুন!
আমরা জানি, রুপন্তি আপনার আবেগ-ভালবাসায় আছে। হ্যামিলটনের রাস্তায় ডানহিল টানতে-টানতে আপনি আবার সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, নাটাইয়ের সুতো ছাড়তে-ছাড়তে আপনি গোত্তা খেতে-খেতে নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন গন্তব্য।
বান্ধবী হারানোর শোকে আপনি পানশালায় চলে আসুন—বেঢপ মদ্যপবস্থায় আড়ালে খুঁজুন শততম লাবণ্য। যে মেয়ে চলে যায়, ছেড়ে যায়- তাকে চলে যেতে দিন। প্রেমিকা চলে গেলেই কেবল প্রেমিকের মুক্তি।
সমুদ্রে লবন চাষে নামতা জানতে হয়—দশের অংকে কয়টা ঘর ফাঁকা রাখলেন তার হিসেবও মানুষ রাখে
লাইফটা এনড্রয়েড হলেও বকুলের গন্ধ কিন্তু মলিন হয়না, সার্কাস মডেলের সন্ধাগুলি বোতলজাত থাকুক নেলপলিসে। ঝাঁ চিকচিক সী-বীচ হোক আপনার উদোম যাদুঘর।
আপনার তেরাশি নম্বর প্রেমিকা-প্রিয়ন্তী, দাঁতের বর্ণনায় ডায়েরীর পাতায়-পাতায় সেকি ঈঙ্গিত! পাতাগুলি পুড়িয়ে কালি না করে কয়লার গ্যারেজে চালান করে দিন। আড়াআড়ি তাকানো জেরিনের চোখের পাঁপড়ি মানিব্যাগ থেকে বের করে দান করুন কোনো মাকড়শার খামারে- রয়্যালটি পাবেন।
আপনাকে কেউ উন্মাদ বললে অট্টহাসি দিন- জানেন তো! আপনার প্রাপ্তির মতো তারও কিছু প্রত্যাশা থাকে।
মিস রহমানের কোকড়ানো চুল দেখে যতবার পরদেহী বাতাসে গা-ভাসিয়েছেন -তাকে বলে দিন—হোমারও এত ভালোবাসেনি তার প্রেমিকাকে।
নিরানব্বইতম প্রেমিকা চলে গেলে বরং উল্লাস করুন। ভাবুন—আপনি একধাপ এগিয়ে গেলেন।
অস্তিত্ব
যে কোনো দূর্দাশায় আমাকে স্মরণ কোরো—আমি ঈশ্বর নই যে সাড়া দেব না
যে স্বপ্ন বাবা দ্যাখেননি
আমি বড় হচ্ছিলাম বাবার অগোচরে
সন্ধার বৈঠকখানায় নিয়মিত চা নিয়ে যাই
কোন ক্লাসে পড়ছি, বাবার বন্ধুরা বাবাকে জিজ্ঞেস করলে
আমার নাম ধরে বাবা বলতেন...
—বর্ণ, তুই কোন ক্লাস রে?
আর হো হো করে হেসে উঠতেন বাবার বন্ধুরা
ঠিক ততটাই নিচুস্বরে উত্তর দিয়ে আমি বেরিয়ে আসতাম
দিনদিন বাবা আমার কাছে আকাশ হয়ে উঠতেন
বাবার মুখস্থ থাকতো বাড়ির দুটো ল্যান্ড ফোনের নাম্বার, কোন গাড়ির চাবি রাখা থাকে কোথায়
আর কতগুলি ফ্যাক্টরি
এমনকি—সুদর্শন বড়ভাইয়ের প্রেমে পড়েছে কতগুলি মেয়ে
বাগানে হাঁটতে এসে কোন ললনা গোপনে রেখে যাচ্ছে চিঠি—তাও
সেই সাতাশি সালের দিন—কত কত ঋণ
আমি পুষে রাখি খুব
নরম কোরে সন্ধ্যা আসার মত আমি পালটে যেতে থাকি
বাড়ির দেয়াল ঘেষা ঝংকার ক্লাবের নাট্যদৃশ্যে
মাস্টার মশাইয়ের চরিত্রে তুখোড় মেজভাই—নায়ক বনে গেলেন
সেই থেকে রাত ফাঁকি দিয়ে নাটক দেখা
সিলেবাস ছেড়ে জীবনানন্দ-সুনীল পড়া
স্কুলের লাল কাগজের সাথে আসে বাবার নোটিশ
আমি 'দেবতা নাকি পশু'—এমন প্রজ্ঞাপন
আমি তো হতে চেয়েছিলাম স্বপ্ন—
ঘুমঘুমপ্রজাপতি-নিত্যবকুল, মায়ের গলার মিহিমিহি সুর...
বাবা চাইতেন আমি ধম্ম-কম্ম করি; করেছিও
ছোটবেলার ভোরগুলোতে-'আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাউম'
আর পাখি নীড়ে ফেরার আগেই বাড়ী
ফেরা—দেবলীনাও থামাতে পারেনি আমায়
আমার মা—তাকে দেখতাম, রাজত্ব সামলাতে প্রতিদিন দেড়মন চালের ভাত রাঁধতেন
এছাড়া শৈশব স্মৃতির মা'কে আমার খুব বেশি মনে পড়েনা
আজ আমার মা, চিরদুঃখী মা—বেদনা আমার,
এতদিন পর বুকের ভেতর দহন দারুন
মা'কে মনে করিনা ভয়ে, নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা
মা আমার কষ্ট পান, আবারো কষ্ট পান—আমি সইতে পারিনা
পৃথিবীর স-ব মা-ই সন্তানের দূর্বল স্থান
মাকে নিয়ে লেখার আছে ঢের—
আমি নিজেই বাবার মত দূর্বোধ্য পাঠ
এখন কেউ বাবার কথা বললে- আমি আকাশ দেখিয়ে দিই
বিজ্ঞাপন
এমনভাবে হারাবো—
খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হবে কয়েকটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র
ঈশ্বর
আমার কোনো শাখা নেই
চুরুটে বারুদ থাকুক
তুমি শিলং-গোয়াহাটি আর দার্জিলিং ঘুরে আমার জন্য চুরুট আনলে
সেইবার যুদ্ধের ময়দান খাঁচায় পুরে
রাজস্থান উলুধ্বনি দিলে
নারীরা আবার বন্দী হয়ে গেল
আমার দাদার দাদা কেরালার শাসক হিসাবে সিংহাসনচ্যুত হলেন
এখন বুঝতে পারি—
তিনি শাসক না হয়ে অবতার হলে আসনচ্যুত হতেন না
চুরুটে শ্বাস নিয়ে ভাবি—রেডিসন স্কয়ারের রাস্তায় একটা বিরতি নিয়ে
ফুল হাতে দাঁড়িয়ে যেতে পারতাম
তাতে আর যাইহোক—
তোমার দাদার সাথে আমার কাকার বিরোধ হত না
পাখির জন্য পালক
নারীর জন্য পোষাক
বাগানের জন্য বন্ধুর আগমনে কয়েকদিন আগের
ঝলমলে সন্ধায় আমি খুন হলাম—
চুরুলিয়ার রাস্তায় রাস্তায় আমার নাম হবে খুব—
এমন করে বলে তুমিও ধ্যানরত
ঘুটঘুটে কালো নিয়ে বসে থাকি স্থির
আমাদের আর কোনো রাজপ্রাসাদতুল্য ভবন নেই ভেবেই
তোমার প্রেমিক আমাকে পাহাড় কিনে দিল
সেই থেকে তোমাকে চুরুট আর নারীকে পাহাড় নামে জানি
বায়োস্কোপের জবানবন্দি
তুমি মরে যাবার বছর দেড়েক পর খবর পেয়েছিলাম—
যদিও কথা ছিল এমন যে,
যেদিন জানবো তুমি আর আমার নেই, সেদিন সারা পৃথিবী জানবে- তুমি আমার ছিলে
গির্জা নিয়ে আলাপের শেষে আমাদের চা ফুরিয়ে এলো—
২৬ ডিসেম্বর একটি দগদগে তারিখ লালশাড়িতে
ঝুলে ঝুলে চোখ নাচিয়ে চলে গেল
সেই শুরুটা সিনেমার পর্দায় বড় হলঘরের নিচের সিড়িতে
আমরা পপকর্ণ খেতে খেতে ধর্ম নিয়ে বিভক্ত হয়ে গেলাম
তোমার ইস্যুটা মারাত্মক দাপট নিয়ে সংসদে উঠে গেল
আবারো বছর দেড়েক পর—তুমি নিজের মরে যাবার খবর দিলে
আমরা মূলত মৃত্যুর খবর জেনে বারবার মরে যাই
যেহেতু শহরে স্টেশন জুড়ে কথার চাষ ভাল
সুতরাং আমরা নিরব থাকলাম
আমরা ভুলে গেলাম আমাদের কাতর হৃদপিন্ডের কথা
আমরা ভুলে গেলাম হাসপাতালের রোগীদের কথা
আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতির কথা
এভাবে ভুলে থাকতে থাকতে হারিয়ে ফেলেছি
নবজাতকের মুখ
প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হলে শোক থাকতে নেই—
অথচ
কি মনে করে বহুবছর পরে ডাকহরকরার মত ছুটে আসে তীর তীর চোখ
সাদাকালো শহরের মানচিত্রে দুলে যায় জ্বলজ্বলে
টিপ
দেবযানী একটি দাউ দাউ নাম
ঠিক কতদিন পর আপনার সাথে দ্যাখা?
—নয় মাস
—একটা দেশ এই সময়ে স্বাধীন হতে পারে
মাত্র এক আঙ্গুলে, আঠারো মিনিটেই দাঁড়িয়ে যায় বাংলা
সেই যে অধিকার নিয়ে বলেছিলেন—
সমুদ্রের বাগান হবে- আপনার প্রেমিকের চোখ
দারুণ ফায়ারপ্লেস দাউ দাউ নিয়ে
ঝলসে দিবে চুমু চুমু আহার
ব্যাংকে দুই হাজার বছর গচ্ছিত রেখে
আপনার উরু নিয়ে দুমদাম ঘুমে-ঘুরে জাগলাম
তেষট্টি দিন গ্রামোফোন বাজিয়ে
মাছরাঙা নিখোঁজ মর্মে বিজ্ঞাপন ছাপলেন
আরো কতদিন পরে- ঠিক কতদিন?
পরবর্তী প্রশ্ন আসার আগেই সংবিধান সংশোধনে পার্লামেন্ট বসালাম
চুমুর উপর কোন ট্যাক্স বসানো হবেনা;
প্রেমিকার হাত ধরে হাটতে পারা আর
শিউলির ঘ্রাণ নিতে নিতে তৃতীয় সংখ্যার জীবন
মাত্র তেইশ টাকায় পাওয়া দাপ্তরিক খাদ্য
ষোল টাকায় এসি কামড়া
সারা পৃথিবী বিনামূল্যে ভ্রমণ
—মশাই, প্রেমিকার আবদার
এসব মন্ত্রীরাই কেবল রাখতে পারে
দেবযানীর কথা মনে পড়ে আপনার?
জলপাই জলপাই চোখ, মৌসুমি লিচুর মত মেয়েটা!
ভেতর-বাহির অঙ্গার—
ছেচল্লিশ বছর ধরে খুঁজছি, জারুলে-পারুলেও শোক
তবু সমুদ্র পুষছি
ফুলেদের আয়ু থাকে না
সমস্ত দুপুর খুলে তোমার কোলের বারান্দায় শুয়ে থাকি। মৃত্যুর গরিমায় টালমাটাল ঘ্রাণ ময়দানে ছায়া টেনে তারস্বরে চেঁচায় অবনত বৃক্ষ। ফলের শ্বাস ও ফুলের পতনে হুক খুলে দারস্থ হয় মধ্যরাতের বিস্তারিত গল্প।
লাল লাল কোয়া নিয়ে নরম ডালে ডালিম প্রার্থনা করে শীত। যেভাবে জেগে থাকে নাগলিঙ্গম, প্রতি ভোরে। আমাকে ভালোবেসে নাকফুল পরা মেয়েটা দিন দিন যোগ্য হয়ে ওঠে, ধ্যানে। মগজের মনন থাকে, ফুলেদের আফসোস থাকে; আয়ু থাকে না।
ফারদুন—তোমাকে গোলাপ নামে ডাকা হয়ে উঠবে না?
ফারদুন, হেমন্ত আমার
ফারদুন—
ডেনমার্ক এক শীতের দেশ। আমি বাংলাদেশ থেকেও অনুভব করি—তুমি মেয়ের আঙুল ছুঁয়ে হেঁটে যাচ্ছো বরফের পাহাড়।
হেমন্ত, প্রিয় ঋতু আমার। তুমি চলে যাবার পর, ভরা ডিসেম্বরেও এখানে শীত নেই—সবটাই নিয়ে গেছো?
অবশ্য অতিথি পাখি দেখলে আদর করি
তুমিও তো কোনো দেশে অতিথি হয়ে আছো!
জুলাই মাসে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হয়
রঙিন ছাতা নিয়ে তুমি ভিজে যাচ্ছো শাহবাগে—এখনো দুপুর ঘোলা করে হেঁটে যাও নূপুরের পথ
এতো নরম করে হাঁটো—তোমার তুষার শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে ঝকঝকে রোদ্দুরে
ডাচ ভাষায় ‘ভাল আছি’—শিখিয়েছিলে
এক কেজি ডেনিস বেগুন বাংলাদেশী মুদ্রায় কত—তার হিসেবও দিয়েছিলে
ট্রেনে চেপে দু’শো কিলো পথ
নির্বিঘ্নে কুড়ি মিনিটে চলে যেতে পারো
আমি সাধারণ বাঙালী—আফসোস করি
দূর থেকে বুঝি—আরো কতটা গতিময় হয়েছো তুমি
ওখানকার সাহেবি বাচ্চাদের স্কুলে বাংলায় ‘কেমন আছো, ভালোবাসি’ নানাবিধ উচ্চারণ শেখাও...
বাংলাভাষীর চেয়ে ভিনদেশীর মুখ থেকে ‘ভালোবাসি’ শুনতে অন্যরকম তৃপ্তি আছে
অথচ, এমন ভাঙা-ভাঙা করে কতবার বলেছি একই শব্দ—কানেও তোলোনি কখনো
যে বিধানের কারণে এক হলো না আমাদের পথ
আমি তো জানি...
পৃথিবীর ইতিহাস বদলে গেলে—তোমার ভেতর আমি সত্য
নীলক্ষেতের পথে একবার বলেছিলেঃ যানজট থাকলে, যানবাহন কিংবা যাত্রী
কারো জন্যই তোমার কষ্ট হয় না
দুঃখ হয় রাস্তাটার জন্য—কতটা ভার বয়ে রাখে সে
আজো—তোমার বুলেট ট্রেন কত ধীরভাবে অতিক্রম করে যায় আমার বুকের উপর দিয়ে
দিন বাড়ে, ফুলেদের আয়ুর মত সহজ হয়ে আসে মানুষের যাতায়াত
মানুষ মূলত ভায়োলিন
ফারদুন—
আমাদের রাত্রীরা ঘোলা হয়ে এলে মায়ের অসুখ করে
বাড়িজুড়ে আত্মীয়, শোক শোক কাতরতা
স্যালাইন, অ্যাম্বুলেন্সের লাল বাতি
হাসপাতালের গন্ধ—অবশ্য অসুখ হলেই হাসপাতালকে মায়ের মত মনে হয়
তোমাকে তেতো লাগে—
নরম ইনসুলিন কাঁপিয়ে নেয় চঞ্চল ধমনী
ভারি নিঃশ্বাস নিয়ে তুমি কাছে এলে
স্তনে হাত রাখতে রাখতেই শুকিয়ে যায় দক্ষিণ মেরু
মানুষ মূলত বেদনা ছড়াতে ভালোবাসে
তোমার প্রেমিককে পড়ে জেনেছি—চারশ আশি রিম কাগজে
তোমার নামে বিষন্নতা লেখা আছে, ভিন্নচোখে
সেই যে পাহাড়ে উঠেছিলে গত শীতে
শীত আড়ালে গেল বলে পাতাবাহারের আক্ষেপসূচক নীরবতায়
চিত্রকর মুখাবয়ব আঁকা বন্ধ রেখে অনশনে বসলো
বাতাসের বন ইজারা নিয়ে প্রজাপতি সমাবেশ ডাকলো কিছু গুপ্ত প্রেমিক
ভুল করে আমাকে মানুষ ভেবে তুমিও সূচনা সংগীত গাইলে
তোমার ঠোঁট কেঁপে ওঠার দিন—
ধ্যানবিদ্যা আত্মস্থ করতে করতে আমাকে মমি করে রাখলে, কী এমন কষ্ট থাকে মানুষের!
ভায়োলিনও জানে সে আসলে মানুষের প্রতিশব্দ
বদল
ফারদুন
তুমি এক দূরহ প্রলেপ আচ্ছাদিত ক্রিয়া
মুখোশের আকারে গতি নিয়ে ক্ষয়ে আসো
এবং আমাদের প্যারালাল পৃথিবী পেছনে ঘুরে গেলে
তোমাকে ও তোমার শ্বাস তুলে আনি ধীরে
কম্পাস ও যাবতীয় ফসলি সরঞ্জাম উঁকি নেয় জমিনে
রক্তের মতোন প্রগাঢ় চিহ্নের তুলি তোমার মুখ আঁকে
ঈশ্বরের সৃষ্টির সাথে ভুল হয়ে যায় তাকানো চোখের দৃশ্যায়ন
মানুষ হারায় না, জায়গা হারিয়ে যায়
আমাকে বদল করে আর কতদূর যেতে চাও তুমি?
সবজিমহল
রক্তাক্ত হয়ে যাই ফারদুন—যদিও তুমি একটা প্রমাণ সাইজের
টসটসে লাল টিপ আর পরীক্ষাগারে বর্ষাই গোলাপ নাম নিয়ে দুলছো
তোমার ভেতর চলতে চলতে বন-থমকে যাওয়া ঝাঁকঝাঁক অসমতল পাখিবন্দী জীবন
দেশ কাঁধে করে আসা বেদনা-প্রসব।
এইরূপ কুয়াশাসমগ্র শীত আর শুষ্ক হয়ে আসে প্রাত্যহিক ঋতু
আরো কিছু খরার আসন্ন সংবাদে আঙুলের ছাপ নিয়ে
প্রতিবার তোমাকে লুকিয়ে ফেলি; হারিয়ে ফেলার ভয় জন্ম নিতে নিতেই তোমাকে চাষ করি
ফারদুন—কতবার বৃষ্টি এলো তারপর নানাবিধ ফুল-ফল
ঔষধি চারা, পাহাড়িয়া ঢল আর রোদের করাতকল ঘাড়ে চেপে টইটই করে
হেঁটে গেল অনাগত বিধাতা, আরো অনেক অরণ্য
বেডরুমে চিৎকার করছে থকথক ঘ্রাণ
কম্পণ, বুক হাতড়ে আসে উলঙ্গ ছাউনি, ঐ যে যাপন! বসবাস করে যাবো জীবন
মেঘ, মৌমাছি আর অন্যান্য সন্ধ্যায় দূরাগত প্রেমিক আনো—
খাড়া নহর। ফলক আর বীজঃ মই দিয়ে যাই, থোকা থোকা কাঁটায় জন্ম নেয় রক্তালু আত্মজ
সেই নিরঙ্গম শ্বাস, প্রাসঙ্গিক গরিমা আর তুলতুলে সমুদ্রে রোপন করি সুচারু পতন
ফারদুন—আমি নিরেট চাষা বলেই তুমিও চমৎকার বীজসুপ্ত সবজিমহল
ফারদুন বিষয়ক চমৎকার পাখি
একটি চমৎকার নিয়ে পাখিটি ডানা খুলে উড়াল দিল
আমরা যেতে যেতে দেখলাম তার পালক পড়ে আছে
যে পালকগুলি চড়া দামে কিনে এনেছিল তার প্রিয়তম প্রেমিক
পাশেই পড়ে আছে যোগ-বিয়োগ
আমরা বুঝে নিই
ফারদুন গণিতে কাঁচা
একটা টিউটর নিয়োগ দিলে পাখিদের ভাষা শিখে নিতে পারত
এইভেবে প্রতিদিন বাজারে হাট বাড়াই
পাখিটি আরো আরো দৃশ্যবন্দী খাঁচায়
নাম আটকে রাখে
ফারদুন পাখি আঁকে
যেহেতু সে গির্জায় শেষবার রেখে এসেছিল পিয়ানো
তিলক
নূপুর
কবুতর আর
দুটি হাত
আমরা তার আঙুল সদৃশ কিছু কুড়িয়ে আনি
পুনরায় পাখিটি চমৎকার নিয়ে উড়ে যায়
আমরা মানুষ মানুষ ভাব ও মুখোশ নিয়ে
প্রতিদিন তাকে ফোন করি
তার স্বরে ভেসে আসে তীব্র করুণ
নীলকণ্ঠ
বেলুন
কুয়াশা ভরা মোমের পুকুর এঁকে
আরো কিছু দলছুট মাছ ও শিকারি বক
প্রতিবার শীত ডাকে
ঋতুর ভীরে শীতেরও দুঃখ থাকে
নদীটা গণিতে খাটো
গাছটা ছায়া বাঁকা
একদিন
হঠাৎ...
ফারদুন চমৎকার উড়ে গেল
পৃথিবী একটি মানবিক রোগ
ফারদুন
এক একটা দিন পরস্পর দুঃখ হয়ে যাই
এই যেমনঃ আমাদের কিছুই ভাল লাগবে না
দুইজন তিনটি জমজ আয়নায় তাকাবো
খাবারের প্লেট থেকে গড়িয়ে যাবে
ছাপান্ন হাজার মাইল দুর্ভিক্ষ
শুনেছি, কারো কারো রাতগুলো কেবলই রাত
তর্কের টেবিলে কত শত আলোচনায় স্থির হয়
রাজা নির্বাচন ফর্মুলা
আমরা শুধু দিনের আলো নিয়ে হেঁটেই যাচ্ছি—অমন রাত কখনোই এলো না
তিনদিন কেউ অভুক্ত থাকলে
তার সামনে প্রেমিকার কথা উচ্চারণ করতে নেই
বরং বারান্দায় হাস্নাহেনার টবে পানি আছে কিনা এইটুকু খোঁজ রাখা ভাল
কামিনী আর গন্ধরাজে কতটা সুবাস—এ নিয়ে পরে কথা বলা যাবে
ফারদুন
আমাদের হাতগুলো বেশ অগোছালো
পাখিদের শোক সমাবেশে প্রধান অতিথি রাখা নিয়ে
তিন দিনে হাসপাতালে ভর্তি হলো সাতাশজন যুবক
এইসব মিটিং শেষ পর্যন্ত কোথায় শেষ হয়?
বনমন্ত্রী কি জানে, যশোর রোডের গাছগুলোও গাছ!
তাদেরও প্রাণ আছে...
পরপর দুইবার মোবাইল-মানিব্যাগ কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চুরি হয়ে গেলে
আমরা হেনরিকে সন্দেহ করি
তোমার মাথায় হাত রেখে ভাবি
পুরো পৃথিবীর দুর্ভিক্ষটাকে চুরি করে নিয়ে যাবে—এমন চোর কোথায়?
হাড়ক্ষয় রোগ
হাসপাতালের বেডে...
নরম ইনসুলিন চলছে—আমার রক্তের ভেতর নড়েচড়ে উঠছো ফারদুন
হাড়ক্ষয় রোগ নিয়ে জন্মেছিলাম। এক স্বচ্ছ আকাশ রোদ আমাদের বাড়ি ঘিরে রাখে।
ভেতরবাড়ির উল্লাস, কাঁপনের দরজা খুলে
মা
বাবাকে
ডাকেন
দাদার আর কোনো ছেলেপুলে ছিল না
নাতির সাথে গল্প করবেন ভেবে
আমার আয়ুর বিনিময়ে প্রতিদিন
নিজেকে ইটভাটায় পোড়ান
দাদার অবশিষ্ট হাড়
বুকের পাজরে নিয়ে এখন আমি বাবার সাথে গল্প করি।
ধ্যানবিদ্যা
ধ্যানবিদ্যা আত্মস্থ করতে করতে ধ্যানি হই। ফারদুনের ঠোঁটের কাছে নিজেকে অবনত করি প্রেম ও শোকে। যেহেতু আমাদের পৃথিবী ও বৃক্ষরা খুব উদার। মানুষ বলেই বারবার অসুখে পড়ি, রোগী হই। কোনো কোমল নারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ভেবে তৃতীয়বার ফারদুনকে ডাক্তার হবার পরামর্শ দিই। সমস্ত গরিমা নিয়ে হেঁটে যায় ফারদুন। আকাশের মত এক গমগমে পৃথিবী ফারদুনকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
ফারদুন—আমাকে স্পর্শ করো, খোলাচুলে বুকের কাছাকাছি ঝুঁকে আসো, ঘন নিঃশ্বাসে গাঢ় করে কপালে সেবন করাও মৃত্যু নিরঙ্গম।
এরপর নত হতে হতে, তোমার বুক সমান আধিপত্য নিয়ে ফুল আর পাখির কাছে শিখে নিই সমূহ উড়াল জীবন।
সুবর্ণ আদিত্য
মেয়েটি এগারো বছর বয়সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুঝে গেল যে, সে সুন্দরী—
পরবর্তী এগারো বছরে সে তীব্র রুপসী হলো
তার পরবর্তী আট বছরে সে বুঝে গেল তার সুন্দরী
হওয়াটা ভুল ছিল—
সে আবার আয়নার সামনে দাঁড়ালো...
আয়না কখনো মিথ্যে বলে না
প্রেমিকার মৃত্যু
আপনি এখনো স্বপ্নের মধ্যে এলে আমি অন্যমনস্ক হয়ে যাই—
অমন করে পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে কে বলেছিলো?
পাদদেশ আর কতটা নাগাল পেয়েছিলো বলুন!
রঙ মাখানো সবুজ শরীর তো ছড়িয়ে গেল লাল
আপনি টিয়া হয়ে টিমটাম নেমে এলেন
মনের খোঁজ পেয়েছিলেন?
একটা হাসপাতাল, তেরোজন ডাক্তার- নার্স
এ্যাম্বুলেন্স নাকি আমি, কে বয়ে বয়ে নিয়েছিলো আপনাকে?
আজও বুক টানটান করে দাঁড়াতে পারি না, জানেন?
শরীর যেখানে যায়, ছুঁয়ে যায়—
মন থাকে আরো গভীরে
কেবিন থেকে শশ্মান
আপনার অবকাশ যাপন শেষ হয় না
এমন উচ্চতর মৃত্যুকাঙ্খা নিয়েও আকাশী শাড়ীতে নিজেকে জড়ায় কেউ!
কোমর থেকে সরে যাওয়া ভাজ
ভরাট নাভী খুলে রাখে আহ্বান—
আপনি এখনো স্বপ্নের মধ্যে এলে আমি
অন্যমনস্ক হয়ে যাই...
মানবিক সিঁড়িপথ ধরে আমরা ছটফট করি
আপনাকে পোড়াবো বলে পুকুরর্ভতি তল সাজিয়ে রাখি
লম্বা চুরুটে ঠোঁট নিয়ে—
শেষবার আমাদের দেখা হলো চেক প্রজাতন্ত্রে
এইসব আর্তনাদ সাদারঙ না পেয়ে কুঁকড়ে গেলো
আপনাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি—
আমার নামজুড়ে মৃত্যুর গন্ধমাখা ধবধবে স্তন
আপনি এখনো স্বপ্নের মধ্যে এলে আমি অন্যমনস্ক হয়ে যাই...
এক্যুরিয়াম
এইবার চলুন হেঁটে আসি আমাদের যুগল কবর থেকে
নুহামি, তিনশো বছর কি খুব বেশি সময়?
আপনি আড়ালে রাখলেন নোটবুক
সিলিকন সমুদ্র
পেয়ালায় থোকা থোকা মদ
হাসিটা দীর্ঘ হতে হতে ছোট করে কাশলেন—
গত তেরোযুগ—
পানাহার ফেলে আপনি এঞ্জেলোর নখ নিয়ে চুষলেন
ঘষলেন
কামড়ালেন
ছুঁড়ে মারলেন
আপনার বৈঠকখানায় তুলে রাখা বাইবেল
লাল কাপড়ে মোড়ানো আসমানি ভাষা
ছড়ানো দৃশ্যের ভেতর ঘাপটি কথা
সব, সব চেনাজানা পাপ
প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করলো আরব্য সুন্দরী
আপনি ডানহাতে লিথুনিয়াম বামহাতে ডানহিল ঠোঁট করে
দুই আলট্রা রুপশীর কাঁধ নিয়ে
স্নানে গেলেন—
আপনি যে এতকাল এ্যাকুরিয়ামে বন্দি
ভুলে গেছিলাম...
নিরানব্বই নম্বর প্রেমিকা
নিরানব্বই নম্বর প্রেমিকা হারিয়ে গেলে একশ তিন দিন শোক পালন করুন—
কিংবা সৎকারে অংশ নিয়ে আপনি চলে যেতে পারেন স্পেনে। হ্যাঁ, আপনার খানিকটা আফসোস থাকতেই পারে বরং এভাবেই ভাবুন- আপনি শতকের দিকেই এগিয়ে গেলেন! জানেন তো, ঋতু সংহারে নতুন কলিও ডানা মেলে।
আপনাকে চরিত্রহীন বলছিনা, বলছিনা আপনার চরিত্রে দোষ আছে। বিশ্বাস করুন!
আমরা জানি, রুপন্তি আপনার আবেগ-ভালবাসায় আছে। হ্যামিলটনের রাস্তায় ডানহিল টানতে-টানতে আপনি আবার সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, নাটাইয়ের সুতো ছাড়তে-ছাড়তে আপনি গোত্তা খেতে-খেতে নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন গন্তব্য।
বান্ধবী হারানোর শোকে আপনি পানশালায় চলে আসুন—বেঢপ মদ্যপবস্থায় আড়ালে খুঁজুন শততম লাবণ্য। যে মেয়ে চলে যায়, ছেড়ে যায়- তাকে চলে যেতে দিন। প্রেমিকা চলে গেলেই কেবল প্রেমিকের মুক্তি।
সমুদ্রে লবন চাষে নামতা জানতে হয়—দশের অংকে কয়টা ঘর ফাঁকা রাখলেন তার হিসেবও মানুষ রাখে
লাইফটা এনড্রয়েড হলেও বকুলের গন্ধ কিন্তু মলিন হয়না, সার্কাস মডেলের সন্ধাগুলি বোতলজাত থাকুক নেলপলিসে। ঝাঁ চিকচিক সী-বীচ হোক আপনার উদোম যাদুঘর।
আপনার তেরাশি নম্বর প্রেমিকা-প্রিয়ন্তী, দাঁতের বর্ণনায় ডায়েরীর পাতায়-পাতায় সেকি ঈঙ্গিত! পাতাগুলি পুড়িয়ে কালি না করে কয়লার গ্যারেজে চালান করে দিন। আড়াআড়ি তাকানো জেরিনের চোখের পাঁপড়ি মানিব্যাগ থেকে বের করে দান করুন কোনো মাকড়শার খামারে- রয়্যালটি পাবেন।
আপনাকে কেউ উন্মাদ বললে অট্টহাসি দিন- জানেন তো! আপনার প্রাপ্তির মতো তারও কিছু প্রত্যাশা থাকে।
মিস রহমানের কোকড়ানো চুল দেখে যতবার পরদেহী বাতাসে গা-ভাসিয়েছেন -তাকে বলে দিন—হোমারও এত ভালোবাসেনি তার প্রেমিকাকে।
নিরানব্বইতম প্রেমিকা চলে গেলে বরং উল্লাস করুন। ভাবুন—আপনি একধাপ এগিয়ে গেলেন।
অস্তিত্ব
যে কোনো দূর্দাশায় আমাকে স্মরণ কোরো—আমি ঈশ্বর নই যে সাড়া দেব না
যে স্বপ্ন বাবা দ্যাখেননি
আমি বড় হচ্ছিলাম বাবার অগোচরে
সন্ধার বৈঠকখানায় নিয়মিত চা নিয়ে যাই
কোন ক্লাসে পড়ছি, বাবার বন্ধুরা বাবাকে জিজ্ঞেস করলে
আমার নাম ধরে বাবা বলতেন...
—বর্ণ, তুই কোন ক্লাস রে?
আর হো হো করে হেসে উঠতেন বাবার বন্ধুরা
ঠিক ততটাই নিচুস্বরে উত্তর দিয়ে আমি বেরিয়ে আসতাম
দিনদিন বাবা আমার কাছে আকাশ হয়ে উঠতেন
বাবার মুখস্থ থাকতো বাড়ির দুটো ল্যান্ড ফোনের নাম্বার, কোন গাড়ির চাবি রাখা থাকে কোথায়
আর কতগুলি ফ্যাক্টরি
এমনকি—সুদর্শন বড়ভাইয়ের প্রেমে পড়েছে কতগুলি মেয়ে
বাগানে হাঁটতে এসে কোন ললনা গোপনে রেখে যাচ্ছে চিঠি—তাও
সেই সাতাশি সালের দিন—কত কত ঋণ
আমি পুষে রাখি খুব
নরম কোরে সন্ধ্যা আসার মত আমি পালটে যেতে থাকি
বাড়ির দেয়াল ঘেষা ঝংকার ক্লাবের নাট্যদৃশ্যে
মাস্টার মশাইয়ের চরিত্রে তুখোড় মেজভাই—নায়ক বনে গেলেন
সেই থেকে রাত ফাঁকি দিয়ে নাটক দেখা
সিলেবাস ছেড়ে জীবনানন্দ-সুনীল পড়া
স্কুলের লাল কাগজের সাথে আসে বাবার নোটিশ
আমি 'দেবতা নাকি পশু'—এমন প্রজ্ঞাপন
আমি তো হতে চেয়েছিলাম স্বপ্ন—
ঘুমঘুমপ্রজাপতি-নিত্যবকুল, মায়ের গলার মিহিমিহি সুর...
বাবা চাইতেন আমি ধম্ম-কম্ম করি; করেছিও
ছোটবেলার ভোরগুলোতে-'আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাউম'
আর পাখি নীড়ে ফেরার আগেই বাড়ী
ফেরা—দেবলীনাও থামাতে পারেনি আমায়
আমার মা—তাকে দেখতাম, রাজত্ব সামলাতে প্রতিদিন দেড়মন চালের ভাত রাঁধতেন
এছাড়া শৈশব স্মৃতির মা'কে আমার খুব বেশি মনে পড়েনা
আজ আমার মা, চিরদুঃখী মা—বেদনা আমার,
এতদিন পর বুকের ভেতর দহন দারুন
মা'কে মনে করিনা ভয়ে, নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা
মা আমার কষ্ট পান, আবারো কষ্ট পান—আমি সইতে পারিনা
পৃথিবীর স-ব মা-ই সন্তানের দূর্বল স্থান
মাকে নিয়ে লেখার আছে ঢের—
আমি নিজেই বাবার মত দূর্বোধ্য পাঠ
এখন কেউ বাবার কথা বললে- আমি আকাশ দেখিয়ে দিই
বিজ্ঞাপন
এমনভাবে হারাবো—
খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হবে কয়েকটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র
ঈশ্বর
আমার কোনো শাখা নেই
চুরুটে বারুদ থাকুক
তুমি শিলং-গোয়াহাটি আর দার্জিলিং ঘুরে আমার জন্য চুরুট আনলে
সেইবার যুদ্ধের ময়দান খাঁচায় পুরে
রাজস্থান উলুধ্বনি দিলে
নারীরা আবার বন্দী হয়ে গেল
আমার দাদার দাদা কেরালার শাসক হিসাবে সিংহাসনচ্যুত হলেন
এখন বুঝতে পারি—
তিনি শাসক না হয়ে অবতার হলে আসনচ্যুত হতেন না
চুরুটে শ্বাস নিয়ে ভাবি—রেডিসন স্কয়ারের রাস্তায় একটা বিরতি নিয়ে
ফুল হাতে দাঁড়িয়ে যেতে পারতাম
তাতে আর যাইহোক—
তোমার দাদার সাথে আমার কাকার বিরোধ হত না
পাখির জন্য পালক
নারীর জন্য পোষাক
বাগানের জন্য বন্ধুর আগমনে কয়েকদিন আগের
ঝলমলে সন্ধায় আমি খুন হলাম—
চুরুলিয়ার রাস্তায় রাস্তায় আমার নাম হবে খুব—
এমন করে বলে তুমিও ধ্যানরত
ঘুটঘুটে কালো নিয়ে বসে থাকি স্থির
আমাদের আর কোনো রাজপ্রাসাদতুল্য ভবন নেই ভেবেই
তোমার প্রেমিক আমাকে পাহাড় কিনে দিল
সেই থেকে তোমাকে চুরুট আর নারীকে পাহাড় নামে জানি
বায়োস্কোপের জবানবন্দি
তুমি মরে যাবার বছর দেড়েক পর খবর পেয়েছিলাম—
যদিও কথা ছিল এমন যে,
যেদিন জানবো তুমি আর আমার নেই, সেদিন সারা পৃথিবী জানবে- তুমি আমার ছিলে
গির্জা নিয়ে আলাপের শেষে আমাদের চা ফুরিয়ে এলো—
২৬ ডিসেম্বর একটি দগদগে তারিখ লালশাড়িতে
ঝুলে ঝুলে চোখ নাচিয়ে চলে গেল
সেই শুরুটা সিনেমার পর্দায় বড় হলঘরের নিচের সিড়িতে
আমরা পপকর্ণ খেতে খেতে ধর্ম নিয়ে বিভক্ত হয়ে গেলাম
তোমার ইস্যুটা মারাত্মক দাপট নিয়ে সংসদে উঠে গেল
আবারো বছর দেড়েক পর—তুমি নিজের মরে যাবার খবর দিলে
আমরা মূলত মৃত্যুর খবর জেনে বারবার মরে যাই
যেহেতু শহরে স্টেশন জুড়ে কথার চাষ ভাল
সুতরাং আমরা নিরব থাকলাম
আমরা ভুলে গেলাম আমাদের কাতর হৃদপিন্ডের কথা
আমরা ভুলে গেলাম হাসপাতালের রোগীদের কথা
আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতির কথা
এভাবে ভুলে থাকতে থাকতে হারিয়ে ফেলেছি
নবজাতকের মুখ
প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হলে শোক থাকতে নেই—
অথচ
কি মনে করে বহুবছর পরে ডাকহরকরার মত ছুটে আসে তীর তীর চোখ
সাদাকালো শহরের মানচিত্রে দুলে যায় জ্বলজ্বলে
টিপ
দেবযানী একটি দাউ দাউ নাম
ঠিক কতদিন পর আপনার সাথে দ্যাখা?
—নয় মাস
—একটা দেশ এই সময়ে স্বাধীন হতে পারে
মাত্র এক আঙ্গুলে, আঠারো মিনিটেই দাঁড়িয়ে যায় বাংলা
সেই যে অধিকার নিয়ে বলেছিলেন—
সমুদ্রের বাগান হবে- আপনার প্রেমিকের চোখ
দারুণ ফায়ারপ্লেস দাউ দাউ নিয়ে
ঝলসে দিবে চুমু চুমু আহার
ব্যাংকে দুই হাজার বছর গচ্ছিত রেখে
আপনার উরু নিয়ে দুমদাম ঘুমে-ঘুরে জাগলাম
তেষট্টি দিন গ্রামোফোন বাজিয়ে
মাছরাঙা নিখোঁজ মর্মে বিজ্ঞাপন ছাপলেন
আরো কতদিন পরে- ঠিক কতদিন?
পরবর্তী প্রশ্ন আসার আগেই সংবিধান সংশোধনে পার্লামেন্ট বসালাম
চুমুর উপর কোন ট্যাক্স বসানো হবেনা;
প্রেমিকার হাত ধরে হাটতে পারা আর
শিউলির ঘ্রাণ নিতে নিতে তৃতীয় সংখ্যার জীবন
মাত্র তেইশ টাকায় পাওয়া দাপ্তরিক খাদ্য
ষোল টাকায় এসি কামড়া
সারা পৃথিবী বিনামূল্যে ভ্রমণ
—মশাই, প্রেমিকার আবদার
এসব মন্ত্রীরাই কেবল রাখতে পারে
দেবযানীর কথা মনে পড়ে আপনার?
জলপাই জলপাই চোখ, মৌসুমি লিচুর মত মেয়েটা!
ভেতর-বাহির অঙ্গার—
ছেচল্লিশ বছর ধরে খুঁজছি, জারুলে-পারুলেও শোক
তবু সমুদ্র পুষছি
ফুলেদের আয়ু থাকে না
সমস্ত দুপুর খুলে তোমার কোলের বারান্দায় শুয়ে থাকি। মৃত্যুর গরিমায় টালমাটাল ঘ্রাণ ময়দানে ছায়া টেনে তারস্বরে চেঁচায় অবনত বৃক্ষ। ফলের শ্বাস ও ফুলের পতনে হুক খুলে দারস্থ হয় মধ্যরাতের বিস্তারিত গল্প।
লাল লাল কোয়া নিয়ে নরম ডালে ডালিম প্রার্থনা করে শীত। যেভাবে জেগে থাকে নাগলিঙ্গম, প্রতি ভোরে। আমাকে ভালোবেসে নাকফুল পরা মেয়েটা দিন দিন যোগ্য হয়ে ওঠে, ধ্যানে। মগজের মনন থাকে, ফুলেদের আফসোস থাকে; আয়ু থাকে না।
ফারদুন—তোমাকে গোলাপ নামে ডাকা হয়ে উঠবে না?
ফারদুন, হেমন্ত আমার
ফারদুন—
ডেনমার্ক এক শীতের দেশ। আমি বাংলাদেশ থেকেও অনুভব করি—তুমি মেয়ের আঙুল ছুঁয়ে হেঁটে যাচ্ছো বরফের পাহাড়।
হেমন্ত, প্রিয় ঋতু আমার। তুমি চলে যাবার পর, ভরা ডিসেম্বরেও এখানে শীত নেই—সবটাই নিয়ে গেছো?
অবশ্য অতিথি পাখি দেখলে আদর করি
তুমিও তো কোনো দেশে অতিথি হয়ে আছো!
জুলাই মাসে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হয়
রঙিন ছাতা নিয়ে তুমি ভিজে যাচ্ছো শাহবাগে—এখনো দুপুর ঘোলা করে হেঁটে যাও নূপুরের পথ
এতো নরম করে হাঁটো—তোমার তুষার শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে ঝকঝকে রোদ্দুরে
ডাচ ভাষায় ‘ভাল আছি’—শিখিয়েছিলে
এক কেজি ডেনিস বেগুন বাংলাদেশী মুদ্রায় কত—তার হিসেবও দিয়েছিলে
ট্রেনে চেপে দু’শো কিলো পথ
নির্বিঘ্নে কুড়ি মিনিটে চলে যেতে পারো
আমি সাধারণ বাঙালী—আফসোস করি
দূর থেকে বুঝি—আরো কতটা গতিময় হয়েছো তুমি
ওখানকার সাহেবি বাচ্চাদের স্কুলে বাংলায় ‘কেমন আছো, ভালোবাসি’ নানাবিধ উচ্চারণ শেখাও...
বাংলাভাষীর চেয়ে ভিনদেশীর মুখ থেকে ‘ভালোবাসি’ শুনতে অন্যরকম তৃপ্তি আছে
অথচ, এমন ভাঙা-ভাঙা করে কতবার বলেছি একই শব্দ—কানেও তোলোনি কখনো
যে বিধানের কারণে এক হলো না আমাদের পথ
আমি তো জানি...
পৃথিবীর ইতিহাস বদলে গেলে—তোমার ভেতর আমি সত্য
নীলক্ষেতের পথে একবার বলেছিলেঃ যানজট থাকলে, যানবাহন কিংবা যাত্রী
কারো জন্যই তোমার কষ্ট হয় না
দুঃখ হয় রাস্তাটার জন্য—কতটা ভার বয়ে রাখে সে
আজো—তোমার বুলেট ট্রেন কত ধীরভাবে অতিক্রম করে যায় আমার বুকের উপর দিয়ে
দিন বাড়ে, ফুলেদের আয়ুর মত সহজ হয়ে আসে মানুষের যাতায়াত
মানুষ মূলত ভায়োলিন
ফারদুন—
আমাদের রাত্রীরা ঘোলা হয়ে এলে মায়ের অসুখ করে
বাড়িজুড়ে আত্মীয়, শোক শোক কাতরতা
স্যালাইন, অ্যাম্বুলেন্সের লাল বাতি
হাসপাতালের গন্ধ—অবশ্য অসুখ হলেই হাসপাতালকে মায়ের মত মনে হয়
তোমাকে তেতো লাগে—
নরম ইনসুলিন কাঁপিয়ে নেয় চঞ্চল ধমনী
ভারি নিঃশ্বাস নিয়ে তুমি কাছে এলে
স্তনে হাত রাখতে রাখতেই শুকিয়ে যায় দক্ষিণ মেরু
মানুষ মূলত বেদনা ছড়াতে ভালোবাসে
তোমার প্রেমিককে পড়ে জেনেছি—চারশ আশি রিম কাগজে
তোমার নামে বিষন্নতা লেখা আছে, ভিন্নচোখে
সেই যে পাহাড়ে উঠেছিলে গত শীতে
শীত আড়ালে গেল বলে পাতাবাহারের আক্ষেপসূচক নীরবতায়
চিত্রকর মুখাবয়ব আঁকা বন্ধ রেখে অনশনে বসলো
বাতাসের বন ইজারা নিয়ে প্রজাপতি সমাবেশ ডাকলো কিছু গুপ্ত প্রেমিক
ভুল করে আমাকে মানুষ ভেবে তুমিও সূচনা সংগীত গাইলে
তোমার ঠোঁট কেঁপে ওঠার দিন—
ধ্যানবিদ্যা আত্মস্থ করতে করতে আমাকে মমি করে রাখলে, কী এমন কষ্ট থাকে মানুষের!
ভায়োলিনও জানে সে আসলে মানুষের প্রতিশব্দ
বদল
ফারদুন
তুমি এক দূরহ প্রলেপ আচ্ছাদিত ক্রিয়া
মুখোশের আকারে গতি নিয়ে ক্ষয়ে আসো
এবং আমাদের প্যারালাল পৃথিবী পেছনে ঘুরে গেলে
তোমাকে ও তোমার শ্বাস তুলে আনি ধীরে
কম্পাস ও যাবতীয় ফসলি সরঞ্জাম উঁকি নেয় জমিনে
রক্তের মতোন প্রগাঢ় চিহ্নের তুলি তোমার মুখ আঁকে
ঈশ্বরের সৃষ্টির সাথে ভুল হয়ে যায় তাকানো চোখের দৃশ্যায়ন
মানুষ হারায় না, জায়গা হারিয়ে যায়
আমাকে বদল করে আর কতদূর যেতে চাও তুমি?
সবজিমহল
রক্তাক্ত হয়ে যাই ফারদুন—যদিও তুমি একটা প্রমাণ সাইজের
টসটসে লাল টিপ আর পরীক্ষাগারে বর্ষাই গোলাপ নাম নিয়ে দুলছো
তোমার ভেতর চলতে চলতে বন-থমকে যাওয়া ঝাঁকঝাঁক অসমতল পাখিবন্দী জীবন
দেশ কাঁধে করে আসা বেদনা-প্রসব।
এইরূপ কুয়াশাসমগ্র শীত আর শুষ্ক হয়ে আসে প্রাত্যহিক ঋতু
আরো কিছু খরার আসন্ন সংবাদে আঙুলের ছাপ নিয়ে
প্রতিবার তোমাকে লুকিয়ে ফেলি; হারিয়ে ফেলার ভয় জন্ম নিতে নিতেই তোমাকে চাষ করি
ফারদুন—কতবার বৃষ্টি এলো তারপর নানাবিধ ফুল-ফল
ঔষধি চারা, পাহাড়িয়া ঢল আর রোদের করাতকল ঘাড়ে চেপে টইটই করে
হেঁটে গেল অনাগত বিধাতা, আরো অনেক অরণ্য
বেডরুমে চিৎকার করছে থকথক ঘ্রাণ
কম্পণ, বুক হাতড়ে আসে উলঙ্গ ছাউনি, ঐ যে যাপন! বসবাস করে যাবো জীবন
মেঘ, মৌমাছি আর অন্যান্য সন্ধ্যায় দূরাগত প্রেমিক আনো—
খাড়া নহর। ফলক আর বীজঃ মই দিয়ে যাই, থোকা থোকা কাঁটায় জন্ম নেয় রক্তালু আত্মজ
সেই নিরঙ্গম শ্বাস, প্রাসঙ্গিক গরিমা আর তুলতুলে সমুদ্রে রোপন করি সুচারু পতন
ফারদুন—আমি নিরেট চাষা বলেই তুমিও চমৎকার বীজসুপ্ত সবজিমহল
ফারদুন বিষয়ক চমৎকার পাখি
একটি চমৎকার নিয়ে পাখিটি ডানা খুলে উড়াল দিল
আমরা যেতে যেতে দেখলাম তার পালক পড়ে আছে
যে পালকগুলি চড়া দামে কিনে এনেছিল তার প্রিয়তম প্রেমিক
পাশেই পড়ে আছে যোগ-বিয়োগ
আমরা বুঝে নিই
ফারদুন গণিতে কাঁচা
একটা টিউটর নিয়োগ দিলে পাখিদের ভাষা শিখে নিতে পারত
এইভেবে প্রতিদিন বাজারে হাট বাড়াই
পাখিটি আরো আরো দৃশ্যবন্দী খাঁচায়
নাম আটকে রাখে
ফারদুন পাখি আঁকে
যেহেতু সে গির্জায় শেষবার রেখে এসেছিল পিয়ানো
তিলক
নূপুর
কবুতর আর
দুটি হাত
আমরা তার আঙুল সদৃশ কিছু কুড়িয়ে আনি
পুনরায় পাখিটি চমৎকার নিয়ে উড়ে যায়
আমরা মানুষ মানুষ ভাব ও মুখোশ নিয়ে
প্রতিদিন তাকে ফোন করি
তার স্বরে ভেসে আসে তীব্র করুণ
নীলকণ্ঠ
বেলুন
কুয়াশা ভরা মোমের পুকুর এঁকে
আরো কিছু দলছুট মাছ ও শিকারি বক
প্রতিবার শীত ডাকে
ঋতুর ভীরে শীতেরও দুঃখ থাকে
নদীটা গণিতে খাটো
গাছটা ছায়া বাঁকা
একদিন
হঠাৎ...
ফারদুন চমৎকার উড়ে গেল
পৃথিবী একটি মানবিক রোগ
ফারদুন
এক একটা দিন পরস্পর দুঃখ হয়ে যাই
এই যেমনঃ আমাদের কিছুই ভাল লাগবে না
দুইজন তিনটি জমজ আয়নায় তাকাবো
খাবারের প্লেট থেকে গড়িয়ে যাবে
ছাপান্ন হাজার মাইল দুর্ভিক্ষ
শুনেছি, কারো কারো রাতগুলো কেবলই রাত
তর্কের টেবিলে কত শত আলোচনায় স্থির হয়
রাজা নির্বাচন ফর্মুলা
আমরা শুধু দিনের আলো নিয়ে হেঁটেই যাচ্ছি—অমন রাত কখনোই এলো না
তিনদিন কেউ অভুক্ত থাকলে
তার সামনে প্রেমিকার কথা উচ্চারণ করতে নেই
বরং বারান্দায় হাস্নাহেনার টবে পানি আছে কিনা এইটুকু খোঁজ রাখা ভাল
কামিনী আর গন্ধরাজে কতটা সুবাস—এ নিয়ে পরে কথা বলা যাবে
ফারদুন
আমাদের হাতগুলো বেশ অগোছালো
পাখিদের শোক সমাবেশে প্রধান অতিথি রাখা নিয়ে
তিন দিনে হাসপাতালে ভর্তি হলো সাতাশজন যুবক
এইসব মিটিং শেষ পর্যন্ত কোথায় শেষ হয়?
বনমন্ত্রী কি জানে, যশোর রোডের গাছগুলোও গাছ!
তাদেরও প্রাণ আছে...
পরপর দুইবার মোবাইল-মানিব্যাগ কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চুরি হয়ে গেলে
আমরা হেনরিকে সন্দেহ করি
তোমার মাথায় হাত রেখে ভাবি
পুরো পৃথিবীর দুর্ভিক্ষটাকে চুরি করে নিয়ে যাবে—এমন চোর কোথায়?
হাড়ক্ষয় রোগ
হাসপাতালের বেডে...
নরম ইনসুলিন চলছে—আমার রক্তের ভেতর নড়েচড়ে উঠছো ফারদুন
হাড়ক্ষয় রোগ নিয়ে জন্মেছিলাম। এক স্বচ্ছ আকাশ রোদ আমাদের বাড়ি ঘিরে রাখে।
ভেতরবাড়ির উল্লাস, কাঁপনের দরজা খুলে
মা
বাবাকে
ডাকেন
দাদার আর কোনো ছেলেপুলে ছিল না
নাতির সাথে গল্প করবেন ভেবে
আমার আয়ুর বিনিময়ে প্রতিদিন
নিজেকে ইটভাটায় পোড়ান
দাদার অবশিষ্ট হাড়
বুকের পাজরে নিয়ে এখন আমি বাবার সাথে গল্প করি।
ধ্যানবিদ্যা
ধ্যানবিদ্যা আত্মস্থ করতে করতে ধ্যানি হই। ফারদুনের ঠোঁটের কাছে নিজেকে অবনত করি প্রেম ও শোকে। যেহেতু আমাদের পৃথিবী ও বৃক্ষরা খুব উদার। মানুষ বলেই বারবার অসুখে পড়ি, রোগী হই। কোনো কোমল নারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ভেবে তৃতীয়বার ফারদুনকে ডাক্তার হবার পরামর্শ দিই। সমস্ত গরিমা নিয়ে হেঁটে যায় ফারদুন। আকাশের মত এক গমগমে পৃথিবী ফারদুনকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
ফারদুন—আমাকে স্পর্শ করো, খোলাচুলে বুকের কাছাকাছি ঝুঁকে আসো, ঘন নিঃশ্বাসে গাঢ় করে কপালে সেবন করাও মৃত্যু নিরঙ্গম।
এরপর নত হতে হতে, তোমার বুক সমান আধিপত্য নিয়ে ফুল আর পাখির কাছে শিখে নিই সমূহ উড়াল জীবন।
সুবর্ণ আদিত্য
বাংলাভাষার কবি। বসবাস ঢাকায়, মিরপুরে। ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ গাইবান্ধা শহরে জন্ম। শৈশব থেকেই যুক্ত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে। পড়ালেখা ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ছিলেন ঢাকার পেশাদার নাটকের দল ‘পালাকার’-এর নাট্যকর্মী। যুক্ত ছিলেন উদীচীসহ কবিতা আবৃত্তি সংগঠনের সাথেও। পত্রিকা দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করে বর্তমানে কর্মরত আছেন একুশে টেলিভিশনে ক্রাইম রিপোর্টার হিসাবে। ১৯৯৫ সাল থেকে সচেতনভাবেই কবিতার সাথে বসবাস। ১৯৯৭ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রিকা ও লিটলম্যাগে নিয়মিত লিখে আসছেন। সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘পান্ডুলিপি’। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই- ‘দুধ পুকুরের সিঁড়ি’, একই বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কবিতার বই- ‘ফারদুন সিরিজ’। বই দুটি থেকে ২০টি কবিতা পাঠকদের জন্য দেয়া হলো।