দুখাই রাজ এর দশটি কবিতা

''জরাগ্রস্ত বাগানের শেষ রাস্তায় আমরা আমাদের বিস্তার ভাঙি''

চেরাইয়ের আগে

.
কখনো বালির বাধ, কখনো উড়ন্ত জয়ফল তুড়ির ভেতর নিয়ে হেটে গেছি পয়মন্ত সবুজ এখনো দিক আসে, এখনো ফণা বেশে নিকেলের ঝলকে চোখ পুড়ে নেই

অন্ধত্ব আমার জন্মান্ধ মুখোশের আড়ালে হাপর বাজায় কান পেতে থাকতে থাকতে এখন শুধু শুনি নৈঃশব্দের কোলাহল ময়ালবৃক্ষের নিচে সে সহস্র শতাব্দী পার করে দ্যায় এক ঘুমে জেগে উঠবে আমি ঘুমালে

.
বোধির কঙ্কাল
সেও উড়ে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি কুকুর হয়ে ছুটে আসে সমুদ্রের তীরে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলাম— 'তোমাকে গ্রহণ করতে এসেছি'

সে আবার কঙ্কাল হয়ে ফিরে গিয়েছিলো বলে গিয়েছিলোনগ্ন প্রেত সাধকের পায়ের কাছে, মাটিতে চর্কা এঁকে ধূল পড়া ছড়িয়ে দেয়ার পর, বাতাসে কেন ঢেউ ওঠেনি?

যাদু  

বন্ধকি চোখের কাছে আচানক ঠুকে দিলে কাঠের বোতাম
অনন্তবিথীর পরে নিয়মের ফোঁড় ভেঙে টলে যাবে কঠিন মৃণাল
আতসী ফোকাল নিয়ে হেঁটে গেলে রাত্রিপসর
তোমাকেই দ্যাখা যাবে যাদু

আলাপের পায়েলি সুরে নন্দন জুড়ে বিহ্বল তারাগুলো ডুবে যায়
হায়! তোমার কোচর ভরে আদিম গারদ
এই জরদের বিস্তার ভেঙে
তোমাকেই দ্যাখা যাবে যাদু

যাদু 

আগলজুড়ে মুমূর্ষু খাদ, যাদু
পুরে নিও আহত পাখির ডানায় কিছু বিলাপী নদ
নির্জনে যাও ক্ষতি নেই

দূরত্ব বাজুক
তবু পটু হয়ে উঠুক দূরতম চোখ

 প্রথম দিন

আহত হবার পর প্রথম মনে পড়েআমার ইপিল গাছটা কেমন আছে?
হয়তো আমার মৃত্যু সংবাদ তার কাছে পৌঁছে দিয়েছে করাত
তাকে বলেছিলামআমার কফিনের কাঠ দেবে তুমি যেন আটদিনে তৈরী হয় কফিন

প্রথম দিনেতোমাকে আহত করবে করাতকলের লোক

বোধি

১ম দিন- অবসর নিয়েছিলাম লাগামহীন ঘোড়ার পিঠ থেকে
২য় দিন- তিন কেজি ওজনের পাথর
              মাথার নিচে এবং উপরে রেখে বন্ধ করে দিয়েছিলাম কান
৩য় দিন- শুকনো পাতার নিচে বন্ধক রেখেছিলাম চোখ

আমি তিনদিন ঘুমিয়ে ছিলাম

কেউ জানুক

কেউতো জানে
কেউনা কেউতো জানে
কিছুই বলার নেই
বলবার কোন মানুষ নেই
বলবে কাকে?

চাইলেই হাসতে পারো
চাইলেই কাঁদতে পারো
তবু চাইলেই কিছু বলতে পারোনা
বলবে কাকে?

হাসতে গেলে মেঘ নেমে যায়
কাঁদতে গেলে নদী পুড়ে যায়
এমন যে রয়, তার কাছে
বলবে তাকে?
সেই কবে খুব ভোরে
বৃষ্টি এসে নেমে পড়ে
তোমার বারান্দায়
আর আমি ক্ষয় হয়ে যাই

জরা বিস্তার বিহঙ্গ

জরাগ্রস্ত বাগানের শেষ রাস্তায় আমরা আমাদের বিস্তার ভাঙি
 
সমস্ত তারের যন্ত্রের মধ্যে আমাদের সবচেয়ে পছন্দ- কারো সেতার, কারো গীটার, কারো বেহালা, কারো বেতালা সুর আমার পছন্দের কিছু এখানে রাখা নেই

নিখুঁত গভীর স্পর্শকাতর যা কিছু আছে বা ছিলো তার কোনটা আর আমার পছন্দের তালিকায় পড়েনা পছন্দের বাদ্য হিসেবে যখন সময়-তার দেখি, দেখি একটা করাল হাওয়া চারিদিকে বয় চুল উড়ে যায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে

বিতৃষ্ণা আর জরায় পড়ে থাকে বাগান উন্মুক্ত বাগান কিছু মুক্ত বিহঙ্গ উড়ে যায় উড়ে আসে

গোলাপ গন্ধ বিলাপ

তামাক টানতে টানতে সিঁড়ি দিয়ে নামি আমি
গোলাপগুলো আসে পেছনে পেছনে, উত্তেজিত

আপনি তখন  খুলে দিবেন দেরাজ, তাকিয়ে থাকবেন
গোলাপেরা আসছে হেঁটে, ভীষণ রকম উত্তেজিত
ওদের আচরনে কিছু একটা আছে, কান্নার শিকড়ে যেমন শব্দ
যেমন কেউ চিৎকার  করে বলে ওঠে বাঁচাও
কিংবা ভালোবাসার কচি শুভ্র আর্তনাদ

 
তার আড়াল থেকে আমি দেখি ধোঁয়া বেরোয়,
তাদের গন্ধহীন ক্লান্ত বৃন্তগুলি

দাহ

দাহের পাশে যে পুরোহিত দাঁড়িয়ে মন্ত্র পড়ছিলেন
তিনি জানেন- হাত দুটোর রঙ এতো আলাদা কেন?

মধ্যবয়সে রেবুতি একবার গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছিলো
লগ্নসার নিয়ে গিয়ে ঠিক হয়েছিলো সে হাত
তার হাতে আর কেউ রাখেনি হাত
তার সাথে খেলেনি কেউ

চৌকাঠের ভেতরে যখন ঢুকে পড়েছিলো এক ছুক ছুক বেড়াল
রেবুতি ভেবেছিলো- এই বুঝি মানুষ তারে ভালোবাসা কয়
বলেছিলো- 'আমি জানি কাঁটা খাওয়ায় সুখ তোমার
কাঁটা খেয়েও যদি হাতটা ধরো, চলে যাবো তোমার সাথে'

বেড়াল তাকে নিয়ে গ্যাছে শেষে, হাত ধরে হাতে
পুরোহিত মন্ত্র পড়েন পাশে, হাত রেখে হাতে

পিতলের খোট

স্নানের আগে তোমাকে যে পিতলের খাঁচায় বন্দী রাখা হবে, তার ধূলোমলিন আস্তিনটুকু এখন খুব হালকা হয়েছে প্রথম প্রথম আমারও খুব ভারী মনে হতোশূন্যের দিকে নিক্ষেপ করা তিনটি আঙুল ফিরে আসে তোমার দিকে চুমু খাবার আগে ঠোঁটে মুড়িয়ে নিও কাঁসার পাত নগ্ন ঠোঁটের আগে আমরা পান করে যাব একটি রাত, অনন্ত অন্ধকার নিরেট হ্রদ থেকে তোমার নিঃশ্বাসের সাথে তুলে আনা নুনেবালি বিছিয়ে দেবেজন্ম নেবে একটি শিশুসাপ তোমাকে সতর্ক করা হলে, ওরা চোখ খুলে নেবে আমার

'আলো আসবে'— উচ্চস্বরে উচ্চারণ করে হাসতে থাকবে নিরন্তর প্রহরীরা (হা হা হা)
বলা হবে শিশুসাপটিকে উদ্ধার করো তখনও থাকবে আমার ঘাড় বাঁকা করে হাত পা সহ বাঁধা, আমার মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হবে গাছের গুড়ি

তোমার স্নানের আগেতুমি থাকবে পিতলের খাঁচায় আর মস্তিষ্কের ভেতর তাড়া করবে অজাতশুভ্র মেঘ গ্রন্থির ভেতরকার সত্যগুলো হয়ে উঠবে সাপের শরীর অন্ধকার দিয়ে তৈরী হবে দাঁত তারা তোমাকে বলবেসাপটিকে স্তন্য পান করাও সে দংশন শিখে নেবার আগে আমার এগারো নম্বর কশেরুকার মজ্জাটুকু তুলে দেব বিষপণ হিসেবে


তোমার শরীর মুছে দেয়া হবে বিষে লোমকূপ দিয়ে প্রবেশ করবে বিষ তোমার মৃত্যু হবে তবু তুমি মস্তিষ্কশূন্য হতে পারবে না তোমার জন্য এই অমরতা হাতে নিয়ে বসে আছে এক পিশাচ মানুষ

SHARE THIS

Author: