জায়েদ বিন ফরিদ এর কবিতা

ঈশ্বরীয় শূন্যতা

পাশাপাশি তোমার আমার পাশবালিশে ঈশ্বরীয় শূন্যতা বিরাজ করে,
শরীরে লেপটে থাকা দুটো ভিন্ন চামড়ার দূরত্ব যেন হাজার বছরের পথ,
হৃদয়ের কথাগুলো জমাট বেঁধে আছে সিরামিক পাথরের গহীনে,
চোখে চোখ রেখে কথা হয়না শত জনম।
চোখে মনের কথা ভেসে আসে বলে
তামাকালো রোদচশমায় ঢেকে চলি স্বতন্ত্র এপিটাফ,
বলা হয়নি আজো বিশ্বস্ত কথাগুলো,
লেখা হয়নি শ্রেষ্ঠ কবিতাটি,
শুধু শেষ চিঠিটি বুকপকেটে নিয়ে পাশাপাশি কাটিয়ে দিচ্ছি নন্দিত নারকীয় জীবন।

প্রতিদিনকার সংসারের সবকথা বলে ফেলে বলা হয়ে উঠেনা গোপন যে কথাটি বুকে চেপে আছে,
আগ বাড়িয়ে সম্বোধনে আমাদের যত বাঁধা;
অহং অধিশাস্তার তুমুল যুদ্ধ লেগে যায় তখন,
সস্তা বিজয়ের এক অতৃপ্ত তৃপ্তির স্বাদ নিতে নিতে আমরা ক্লান্ত হয়না কখনো।

চলো একদিন সব যুদ্ধের ময়দানে সাদা পতাকা তুলি,
একসাথেই গেয়ে উঠি জাতীয় সংগীত,
জমাট পাথর ভেঙে বলে ফেলি লুকায়িত কথাগুলো,
চাপা যন্ত্রণাগুলো অশ্রুসিক্ত করে
সমসরে আবৃতি করি বুকপকেটের শেষচিঠিটা,
লিখে ফেলি জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা,
ভালবাসার কবিতা, হৃদদূরত্ব ভাঙার কবিতা, বেঁচে থাকার কবিতা।

দেয়াল

এক দ্বিধাগ্রস্ত ফারাকে আটকে আছে পুরো শহর,
বুকের ভিতর শীত জমে আছে,
আগুনের কুণ্ডলিতে জড়ো হচ্ছে কুয়াশা।
বিভেদ ভুলে কথাগুলো শব্দ হয়না,
অবাঞ্ছিত বর্ণমালায় কালি ঝরছে কলমের,
প্রেম যেন এক দূরপাহাড়ের হতাশা।

প্রতিক্রিয়া

প্রতিদিন নিয়ম করে সিগারেট জ্বলে,
মাটির জমিনে আছড়ে পড়ে শীত,
বারন্দায় খোলা চুলের নির্মল বাতাস,
অন্য শহরে আজ ভীষণ ঝড়।

কে থাকে অপেক্ষায়

পৃথিবীর কোন প্রান্তে কে হায়
একা বসে একা ভাবে নিরালায়
চুপচাপ নীরবতায় কার ছবি ভাসে হায়
শূন্যদৃষ্টির পথে কে থাকে অপেক্ষায়!
আমার পৃথিবীজুড়ে কোন পাখি বসত গড়ে
রোজ এসে ফুল দেয় মনেরো মন্দিরে
আমার আকাশজুড়ে কার ঘুড়ি উড়ে হায়
দীর্ঘশ্বাসের চেনাগলি, কে থাকে অপেক্ষায়?

চুম্বন কোন চুম্বকীয় ধর্ম নয়  

চুম্বনহীন সাক্ষাত শেষে প্রেমিকা ফিরে যায়,
প্রেমিক ঠায় দাঁড়িয়ে;
বাদামতলির ফুলের সুবাসে তপ্ত দুপুরের ঘাম বাতাসে মিলিয়ে যেতে থাকে,
চুম্বনকে চুম্বকীয় ধর্ম ভেবে প্রেমিক অপেক্ষা করে-
অপেক্ষা করে প্রেমিকা পথ উল্টে ফিরে আসবে,
মিষ্টি হাসির ঝলকে হার মেনে যাবে চেনা রোদ্দুর, ভবঘুরে ধুলো, অসহ্য যানজট।
সূর্যের গতিরেখা সময় মেপে ডিগ্রী ধরে এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমে,
অথচ প্রেমিকার নামগন্ধ পর্যন্ত নেই,
প্রেমিক ঠায় দাড়িয়ে;
শরীরের ক্ষয়ে যাওয়া জলজ তরলের পূর্ণতা
একটি বিশদ চুম্বনের অপেক্ষায়,
যে অপেক্ষায় কেটে গেলো সুনীলের তেত্রিশ বছর,
মাথানোয়ানো বাঙালীর দু'শ বছর,
পাশবাড়ীর কমল দা'র সাড়ে সাতটি যৌবন।
নিজ ছায়া লম্বা হতে হতে যখন আঁধারে মিলিয়ে যায়
তখন প্রেমিক বুঝতে শিখে যায়-
"চুম্বন কোন চুম্বকীয় ধর্ম নয়"
চুম্বন এক আবেগীয় আবেশ মাত্র।
প্রেমিক ফিরে যায়-
ফিরে যায় আশাহত এক তৃষ্ণা নিয়ে,
তবু বুকপকেট ভিজে যায়-
ভিজে যায় অপেক্ষার গ্লানিতে, ভালবাসার সমাধিতে।

আরেকটিবার প্রেম জাগুক
         
রাত হলেই ঘরে ফিরতে হবে এমনতো কোন কথা নেই,
প্রতি রাতেই তো ঘরে ফিরো,
একটা রাত নাহয় পাশাপাশি কাটিয়ে দিলাম এই শহরের ফুটপাত ধরে,
একটি রাত জমা হোক আমাদের মনের ঘরে।
একটি রাতই তো, কথায় কথায় ফুরিয়ে যাবে সময়,
বোনা হয়ে যাবে কত স্বপ্ন,
একটি রাত স্মৃতি হয়ে থাকুক,
আমাদের সংস্রবে এ শহরে আরেকটিবার প্রেম জাগুক।

একটি রাত শেষে ঠিকই ভোর এসে যাবে,
অচেনা ফুটপাতে তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে,
আমাদের ঘরে ফেরার তাড়া থাকবেনা,
আমি তোমার নিষ্পাপ মুখের মায়ায় হারিয়ে যাব,
শুধু একটি রাতই তো,
তুমি আমি নাহয় মিলেমিশে কাটিয়ে দিব।

অচেনা বায়ু প্রবাহ

শূন্যের মতো এতোটা ভালবাসো আমায়?
কই, কখনোতো ছিড়ে দেখাওনি হৃদয়!
কখনোইতো মেলে ধরোনি তোমায়,
ঠোঁট স্তন যোনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে জরায়ুর খবরতো দাওনি কোনদিন!
এ কেমন ভালবাসা তবে;
তবে কি আমি শূন্যকে অসীম ভেবে ভুল করেছি?
যেখানে অনাগত বাতাসের বিশুদ্ধ বেড়ে উঠা আমারই এক লালিত অস্তিত্ব তোমার শরীরে,
তুমি যাকে জমাট রক্ত ভেবে ধুয়ে ফেলো,
সেখানে অন্য কিছু ছিল, প্রেম ছিলনা।
তুমি তবে প্রেমটাকে বুঝো আগে,
শিখে নাও অচেনা বায়ু প্রবাহে অপবিত্র জল নয়, বরং শুদ্ধ এক আত্মার জন্ম হয়।
তারপরে এসো! কতোটা বিশালতা আর অসীমতা শূন্যকে ঘিরে জমে থাকে তার হিসেব কষতে,
ততদিন আমি বরং গণিকার ঠোঁটে প্রেম খুঁজে নেই।

নিঃসঙ্গিক অর্ধাঙ্গ

তুমি আমি ছাড়া আমাদের আরো গল্প আছে,
যেমন শিকড় বাদে গাছের বহু গল্প আছে-
পাতার গল্প, পথের গল্প, পথিকের গল্প;
একান্ত নিজেদের গল্প,
যদিও আমরা একে অপরের, তবুও
কিছু গল্প একান্ত নিজের,
কিছু সময় একান্ত আপন।
আপন সময়গুলোতে আমরা আলাদা হয়ে
নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গ দেই,
নিজেদের ভাবনাচিত্তগুলোকে
নিজেদের মাঝে গুছিয়ে নেই।
অসম নিঃসঙ্গতা শেষে
আমরা বুঝে উঠি
আমি তুমি আমরা
আমাদেরই নিঃসঙ্গিক অর্ধাঙ্গ।


SHARE THIS

Author: