দেবাশীষ মজুমদার এর ২২টি কবিতা

''আতকা কে য্যান ফু দিয়া
যায় পেটের চুলার তুষে, হায়রে খিদা,
সাপের নাহান
ফোঁস কইরা ওডে, আনে দানে
ঠোর মারে যহন তহন''

আত্মবিলাপ

ইদানিং দেয়াল দেখলেই আমি একটা
উত্তেজিত ঘোড়া আঁকি, শ্মশানে মাথা কোটা
একশৃঙ্গ ষাঁড়, একটা বেলি ফুলের গন্ধ।

মুহুর্ত ঠেলে আমি দেয়ালের বুকে কান পাতি,
দ্রাক্ষায় ডুবে থাকা ডানাকাটা পরী প্রতীক্ষায় -
তার শূন্যস্হান পারেনি করতে পূরণ জ্যোৎস্নাসম্প্রদায়।

রহস্যের ছায়া উল্টে গেলেই তক্ষক ডেকে ওঠে,
অস্পষ্ট দেখতে পাই চন্দ্রগ্রস্ত রমণী,
দেহাতি পুরুষ পিছলে পড়ছে স্নায়ু ও রক্তের ভিতর।

আদতে আমি একটা দেয়াল আঁকি, আর
কনক্রিট ফুঁড়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে স্মৃতি।

বিষাদ নামের অ্যালসেশিয়ান

ফিনিক্স সাইকেলে চেপে নাকের ওপর দিয়ে পেরিয়ে গেল বিকেল যে সমস্ত বিষাদগুলো উপেক্ষায় ছিল, টপাটপ পরে গেলে সাইকেলের ক্যারিয়ার থেকে তারপর ধাওয়া, গলি-তস্য-গলি এরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে পেছন পেছন অট্টহাসিতে ফেটে পরছে হারামি সব দুঃখবোধ আমার পোষা মৌমাছিগুলো এইসব দেখে ঘাবড়ে গ্যাছে সবেমাত্র ফুলের খোঁজে বেরুবে ভাবছিল; কিন্তু এসমস্ত দীর্ঘশ্বাসগুলো ফেউ ছাড়ছে কই! হারামি স্বভাবের কারণে তাই বিষাদের নাম আজ থেকে অ্যালসেশিয়ান হোক 

ঘুড়িবাজ গপ্প

যে কোন একটা ফাঁকা রাস্তার ওপরে একলা এক
ঝুলে থাকা বারান্দা থেকে আরও অনেকটা নীচে
জ্যোৎস্না' এপিটাফ কিংবা তেমন কিছু, তেমন
বিশেষ কিছু পেরিয়ে যাওয়া ঘ্রাণ দু'চাকায় ভর
করে যুগের নারদ ভোরবেলাগুলো তখন ছুড়ে
ছুড়ে দিচ্ছে কপাটগুলোয়, যেন তাহাদের পেছনে
লেগে আছে বেপাড়ার শাদা কুকুরের ঘেউ পাতা
জুড়ে এই যে রাশ রাশ শব্দের দক্ষিণা, ওখানে
তোমাকে নিয়ে কিচ্ছুই লেখা নেই এইসব নেই
নিয়ে কিছু প্রশ্ন করবার আগেই একটা শালিক
তারে বসে গুণে গুণে পাঁচবার দোল খায়, আর
ফিক করে হেসে বলে, চলো হে, ঘুরে আসি

কি ভীষণ বজ্জাত পাখি, ভিতরে ভিতরে
কুঁকড়ে যাই, আর সেই মওকায় কোন ফাঁকে
আমার তিন পোয়া দুপুর সটকে চলে গেল, তবু
সূত্র অনুযায়ী আমি ফ্যামিলি ম্যান এই মন্ত্র সে
ভোলাতে পারে নাই, বাঁদিকে হৃদয় হলেই কি
কলে বামপন্থি হয়

কাম অন, প্লীজ স্টপ ইওর ভ্যাজর ভ্যাজর
জীবনভর, উফ, বরং এসো আমরা চায়ের
কাপে দু'চামচ হিন্দি সিরিয়াল মেশাই, এই
এখন বেশ একটা সন্ধ্যে নেমে গ্যাছে, এমন
সময় নরোম চপ্পলে পা ধীরে ধীরে চলে, বেশ
টুকরো টুকরো ছিঁড়ছে মানুষ ফুলের পাপড়ির
মতো, আরও কিছু কাল পরে অনিদ্র চোখ
জুড়ে যদি কেবলই বৃষ্টি আসে, তবে কার বুকে
গেঁথে দেব মালা কাল বিজ্ঞাপনী হেসে, এমন
কে আছে যার অস্থায়ী স্বভাব

এইসব ভাবতে ভাবতে হাওয়া হয়ে যাই, সেইসব
হাওয়া জমতে জমতে একদিন মেঘ, তারপর তুমুল
বৃষ্টির মাস, ভিজে জুবুথুবু সবুজ নারীকে ওম
দিতে বুকে টেনে নেবে পলাশ-গন্ধী যুবক আহ
এমন সময়ে এভাবে কেন বেজে ওঠে হুইসেল
উটকো নৈশ প্রহরীর! ওরা থোরাই দেখতে পায়
অলীক, আড়ালের মাখামাখি, দেদার দ্বিধার ভিড়ে
স্বাদের মধুরিমা, ভরাট নদীর চুলের বাঁকে ধীরে
ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ডিঙ্গি, সময় খুব অল্প

স্পটলাইটগুলো নিভে গেলেই তো বিসর্জন

দতে আমার একটা ঘুড়িবাজ গপ্প চাই, খানিক
কাটাকুটি খেলব, তারপর ভোকাট্টডট। এই এতো
এতো বিস্তর দৃশ্যগুলোর ভিড় ঠেলে কি করে যে
ফাঁস হয়ে যাচ্ছে আমাদের আড়াল, তুমি কি জানো

ধূসর আয়না

অনাদি
এতো মনোযোগে তুমি কি খোঁজো আয়নায়?
তোমার মুঠোয় এক চিলতে রোদ, বুকের চাতালে
তুমি হিম ধরে থাক, বিষণ্ণ বিকেলগুলো কাঁটিয়ে
দেবার এতোটুকু সঞ্চয়।

অনাদি
বিকেল গড়ালে তুমি তোরঙ্গ খোলো কেন?
তোমার সেই পুরনো চাঁদের সংগ্রহশালা, আবেগের
আস্ফালন, মুছে দিয়েছ চুমুর দৃশ্যগুলো, তবুও তারা
নাছোড় মাছির মতো ভন ভন করে।

অনাদি
মুঠোয় রোদের ওম আর কতকাল রেখে দেবে?
ফের কোনো বালিকার খোঁজ, ফের কোনো কিশোরী
কিংবা টুপটাপ বিদ্রোহী মেঘ! অথচ এই তুমিইতো বলেছিলে
যৌথ ভাবনারাও মানে আজকাল জন্মনিয়ন্ত্রণ।

অনাদি
অন্ধ চোখে তুমি রোজ রোজ কি খোঁজো আয়নায়?
কেন তুমি পুরনো চাঁদের তোরঙ্গ খোলো! ওরা তোমার
প্রতিটা চুমুর ঋণ নিয়ে চলে গ্যাছে। আর অজস্র টুকরো টুকরো
মায়াবী সিক্যুয়াল দিয়েছে ইনসমনিয়া

রাগঃ মল্লার

ঠাণ্ডা জিভ চেটে চেটে মিতালি নিংরে দ্যায় আগুনশরীর, উত্তাল মহিষের হাজারো কুর্নিশ বুকের ধূসর মাঠে ম্যাজিক দেখায়।  অথচ কি কাঁপাকাঁপা এক একটি মিউটমূহুর্ত কুণ্ডলী পাকায়, স্তবগান করে, হাইফেনগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, আমিও মুখ দেখি ভাঙ্গা আরশিতে, ভাঙনের প্রচলিত প্রথা মেনে  শরীর টুকরো টুকরো হয় হেয়ালী প্রেমে।

ভালবাসা জমে জমে দীঘল কাদা, শরীরে বাজছে মল্লার।

প্রিলিউড

সুখের জের টেনে উড়ে যায় লোভী মাছরাঙ্গা, ছোঁ মেরে মেরে তুলেছিল ঢেউয়ের কাঁপন, গভীরে নামেনি সে, শুধু খুঁড়ে গ্যাছে গভীর সময় গনগনে মধ্য দুপুরে যে সমস্ত গল্পেরা ঝুলছিল, বিকেল হতেই ফুরিয়ে যাওয়া ভালবাসার মতো ঝপ করে হারালো অন্ধকারে যেখানে ঢেউ নেই সে দুয়ারে খিল আঁটা অর্থহীন, জরাজীর্ণ রাত্রিগুলো মরে যায়, দুয়ারে মাথা কুটে ত্রস্ত জীবনের সুর, যা কিছু গর্ব ছিল সব গেল ভেঙ্গেচুরে ফুটো নৌকা ভাসালে বিষণ্ণ নীলে, জলের আবেগে ডুববে হৃদয় এবং এটাই স্বাভাবিক।

ক্ষমাগুলো জমা থাক কৃষ্ণচূড়ার গালে

ইন্টারলিউড

রোজকার মতো আজো জেগেছে মাথার ভিতরে কানামাছির দল, বকছে প্রলাপ, পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো কোন আবছায়া মূর্তি, নিষ্পলক তাতেই আচমকা জেগে ওঠে জাতিস্মর, টাইম মেশিনে ভর করে হানা দ্যায় পৌরাণিক দারোয়ান, হাঁক ছাড়ে,’ফিরে আয়, ফিরে আয় নীড়ের পাখিপরিণাম জেনে গেলে জেগে ওঠে অতলান্ত অন্ধকার, সাগরের বিস্তীর্ণ বালুচরে না ফেরার গল্পের ভিড়ে মাঝি ও নদীর সম্পর্কের মিথ চাপা পরে যায়, জানতে পারেনি কেউ ছইয়ের ভিতরে অজস্র কথার ফানুস দিচ্ছে অভিশাপ

জানে অন্ধকার, পাহাড়ি নদী জানে অংশ বিশেষ

পোষ্টলিউড

মিলিয়ে যাবার আগে নূপুরে জেগেছিল ঝড়ের ডঙ্কা, অপেক্ষায় অপেক্ষায় পুড়ে ছাই থেকে গাঢ় অন্ধকার হয়ে ঢেকে ফেলে দিগন্ত রেখা, ক্রোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে কাঁপুনিরা একা হলে ফের ঘুমঘোরে ফিরে আসে রূপকথা, নাচে নর্তকী মায়া, নিঃশব্দ মেঘেরা যোগ দ্যায় জমাট তামাশায় খুব কাছের কোন অতীতে ভর করে ছিটকে আসে শীত, ওম খোঁজে শিকারির বুকে, ক্রীতদাস ভুলে যায় মুক্তির চেনা মুখ হিংসার নরকে রাত্তির নামে, নিশানা ঠিক করেছে কুঠার, জন্তুর চোখ স্বাভাবিক

ঝাপসা ক্যানভাস এভাবে সমস্ত অতীত জড় করে, নটে গাছ মুড়েছে বহুকাল, তবু গল্প ফুঁড়োয় না

এক কাপ চা, পানি কম

আমরা দুজন  শেষবার যখন চা খেয়েছি, তার কাপে একটা লাল পিঁপড়ে ভাসছিল
দেখেছিল, তবুও মোটেই গ্রাহ্য করেনি, কিংবা
সে জানতো ওটাই মানিয়ে নেবার
প্রথম সোপান

অন্য সন্ধ্যাগুলোর মতই আজও বলেছি মামা এক কাপ চা, পানি কম।
চুমুকের বেহিসেবী আশকারায় নেশা হচ্ছে ঈষৎ, অথচ

কেবল একটা লাল পিঁপড়ের অভাবে সাঁতার শিখতে পারছি না
তাই, বহুকাল কাপের সামনে আলতো ঝুঁকে আছি

অতিক্রমের খুচরো কামনা মনে, কখনো, চায়ের অতল থেকে মাথা তুলে হেসে ফের ডুবে যায় এক নবপরিণীতা, দৃশ্যের ভিতর সম্পর্কের ঢেউ
 ভা
ঙ্গ
 ছে-

লাট্টু

মাধুরী ভাজ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
বারান্দায় ঝোলানো তারে কখনো টাঙিয়ে দেয়
নির্লজ্জ দুপুর,
তাতেই ফিদা হয় যাবতীয় মকবুল।
সে আড়চোখে দেখেও দেখেনা, প্রেমের
কবিতায় আঁচড়ায়না মোটেই চুল।
তবু, এ পাড়ার প্রতিটা লুণ্ঠিত জানালায়
হু হু ঢুকে যায় হাওয়া, জানা যায় সমস্ত প্রেম ভজন নয়,
কিছু কিছু প্রেম ঠুমরী হতে পারে,
পাপ হতে পারে, এভাবেই মাথাটা চিবিয়ে
খেয়ে ফেলেন বেগম আখতার-
জোছনা করেছে আড়ি, আসেনা আর আমার বাড়ি।
গলি দিয়ে চলে যায় লুটিয়ে রূপালী শাড়ি।

সারাটা দিন অলৌকিক

সন্ধ্যার অপেক্ষায় থেকে থেকে বাতিকগ্রস্ত প্রেমিকের
একটা জীবনব্যাপী লোভ, একটা ওমের আক্ষেপ
একটা গোলাপের বুক, একটা জ্বলন্ত দুপুর
একটা জোছনার আড়াল, এইসবচাওয়াগুলো জমতে জমতে
কখন যেন বাঘিনীর কেশর সরিয়ে চুমু খাওয়ার লোভ
তীব্র হয়, মগজ খুঁড়ে ফেলে ঘূর্ণিত লাট্টু।
রোজ
মাধুরীর দুর্বোধ্য স্থাপত্য আঁকে নিকোটিন দাগ,
দু'আঙুলের ফাঁকে ঝরতে থাকে সময়, এভাবে ধীরে ধীরে
সমস্ত পুড়ে ছাই হয়ে গেলে মকবুল জেনে যাবে -
মাধুরীর প্রিয় খেলা কানামাছি!

তবুও পুড়বার লোভ মিটবেনা।

প্রেম, এক ছোটি সি ভুল

কথা হইল, এই সমস্ত বস্তা বন্দি বিরহ পাঠশালার
হিস্ট্রি ডিঙ্গাইতে গিয়া তড়িঘড়ি হইয়া গ্যাছিল
এক ছোটিসি ভুল, ঝিনুকে কেটেছে পা, ইলোপ হয়েছে
আদি শিল্পেরা, কুড়ি বছর আগেও সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে
খানিক ভাববার অবকাশ ছিল, লেকিন উড়ে গেলে
প্রতিশ্রুত কথা, ইদানীং তোমার অনামিকায়, পুরুষ
এবং আংটির কোয়ান্টিটি নিয়া ভাবতে গেলেই
নাকে ঘুষি মারে উগ্র ডিওডোরেন্ট

আমি কি চাই, আমি কি চাইনা
মাছের মুড়োটা, ন্যাজটা না সংসার, ঠোঁটের প্রোটিন!
বৃষ্টিহীন ক্ষেতে আবাদের ঘুম, খরায় খরায়
মতিভ্রম, ষ্ট্রীপট্রিজ, ক’ফোটা জলের প্রত্যাশায়;
কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হয়, ওইসব ভিগি ভিগি
রাতোমে বিগত প্রজন্মের সৌরপিপাসা আমার উপর
ডাম্প করবে এমত সিদ্ধান্তে পৌঁছুলে আমার সুন্দরবনের
দিকে ছুটে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা

ব্যাপারডা হইল ইরাম ফাউল সব কথাবার্তা আইসা
ভর করে যখন তখন বুঝতে হইব হেড অফিসে বহুত
ব্যাড সেক্টর পইড়া গ্যাছে আর আমি ভাবি দুঃখ, ভাবি
আহা তুমি তুমি কতো ভাল তুমি, কী ফ্যান্টাস্টিক, তার
চাইতেও ভাল তোমার মুখোশ, বেবাক ভালবাসাটাসা
পোষা কফিনে স্তূপ করে রেখে কী দারুণ শোনপাপড়ি
খাও, এদিকে তুমহার ওই লবণাক্ত নাকফুল মে হামারা
হৃদয় খাবি খায় খাবি খায় আর খাবি খায়...

টিক-ট্যাক-টো

মন্দির থেকে যেসব কারণে পালাতে হয় সুগন্ধ তার মধ্যে অন্যতম, যখন জানা হয়ে যায় শস্যের পচন হয় আঙুলের চাপে, তখন শুরু হয় টিক-ট্যাক-টো, আজ তুমি জিতলে ঠিক, কাল আমার পালা এসমস্ত কারণেই বাউফলের গন্ধযুক্ত নারীরা একুরিয়ামের ধার ঘেঁষে বসে গোল্ডফিশের আয়ু কমিয়ে ফেলে, এসমস্ত ভাবনারা প্রশাখা বিস্তার করে কখনো আড্ডায়, রাইয়ের গেলাসে, টিস্যু পেপারের রূপে আধুনিক চিরকুটে ভুল করেও শরীরের খুব নীচু আঁচের সুগন্ধে সাঁতরিও না, ডুবে যাবে

হ্যাপি ম্যারিজ এনিভার্সারি

এ বৈশাখে জামদানী, লাল কাজ, ঘিয়ে রঙ
ব্লু জিন্স সাদা কিংবা নীল ফতুয়া, ব্র্যান্ড আড়ং

মধ্যদুপুর, হঠাৎ ফোন, করছোটা কি, খেয়েছো
খানিক আগে, খিচুড়িটা, উফ সেকি, দুর্দান্ত রেধেঁছো

ডাবল ভাড়া, ফেরার তাড়া, ট্র্যাফিক জ্যাম, ঈশ
এবার ছাড়ো, ডাকাত একটা, তুমুল বুনো, মহিষ

সূর্য ডোবে, সন্ধ্যা পেরোয়, একলা ঘর, কেমন লাগে
ক্লান্ত ডাক, অনেক কাজ, স্কুলের ফিস, কার ভাগে

বদ্ধ দুয়ার,ফাটছে কাঁপাস, স্নানের ঘর, নোনতা জল
মেসেজ এলো, মুঠোফোনে, আলতো চোখ, যাবি, চল

গায়ে হাত, নখের দাগ, কাঁদছে ছেলে, কাঁদছে মেয়ে
মাথা নিচু, বাড়ছে ফারাক, দিন গড়াচ্ছে, মানিয়ে নিয়ে

খিদা

প্রত্যেক রাইতে কেডায় এতো চিক্কুর পারে-
তামাম দুনিয়া কাঁপে থর থর!
মাছে ভাতে সানকিতে তেলাপোকা
খুঁইটা খুঁইটা খায় কাজলকঙ্কাল;
অভিমানী কষ বেবাক গড়াগড়ি যায়,
মেঘে চাপা পইড়া থাকে জ্যান্ত বাতাস,
বেজন্মা খোলসে বন্দি আলগা পরাগ
হামাগুড়ি দিয়া আসে, সুখ খ্যাদাইয়া 
দিয়া খাড়াইয়া খাড়াইয়া তামাশা দ্যাহে।
আতকা কে য্যান ফু দিয়া 
যায় পেটের চুলার তুষে, হায়রে খিদা, 
সাপের নাহান 
ফোঁস কইরা ওডে, আনে দানে 
ঠোর মারে যহন তহন। গাঙ্গের পানি 
বিচরাইয়া শেষ, মাছ নাই, খানা নাই।
লগি হাতে হারামজাদা শুক্কুইরা
থাইকা থাইকা চিক্কুর পাড়ে -
খিদা লাগে বাহে, খালি খিদা লাগে
ঘুট-ঘুইট্টা আন্ধার খান খান, বিলাপে বিলাপে
জোয়ার ফুরায় -
করিমনের এহন বাজারো ঘর, ভাতে আর
সুখ নাইরে বাহে, চুমুকই কয়া দিত আগে 
সানকির ব্যাবাক মুক্তা দানায় কতো সুখ! 
ভাগের ভালবাসা
ভালা লাগেনা আর, খালি খিদা লাগে বাহে।
শইলডা জুইর‍্যা খিদা

এবং নার্সিসাস

বিছানার উল্টো দিকের রিডিং টেবিলে বসে 
পা দুলিয়ে দুলিয়ে কথাগুলো ছুঁড়ে দিল; চোখ খুলে 
আধো আলোতে তাকে চিনতে তেমন সমস্যা হয়নি, 
অনেকটা আমারই মতন বিহ্বল দৃষ্টি। বললাম,
তো, এখানে কি মনে করে? সে হাসল, আর আমি 
তার কান্নার মত হাসি দেখে খানিক চমকে গেলাম।
এই চমকে যাওয়া সে তারিয়ে তারিয়ে দেখল
আর বেশ খানিকক্ষণ নীরব থাকবার পর অনেকটা
গোঙ্গানির মত স্বরে বলল, আমি দুঃখিত, এই বিশ্ব
ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কবির কাছে। তার উচ্চারণের মধ্যে
এমন কিছু একটা ছিল, যা আমাকে কিছু বলতে
বাঁধা দিচ্ছিল, কেবল শুনতে লাগলাম
শোন, তোমরা প্লিজ জল থেকে মুখ তোলো, নইলে
নির্ঘাত ডুবে যাবে একদিন। জেনে রাখ নদীদেরও দুঃখ 
আছে, কোন এক অজানা অভিশাপে তারা বয়ে চলে 
অনর্গল আর যাবতীয় পাপ আছড়ে ফেলে একূল অকূল। 
আমি সত্যি দুঃখিত, সমস্ত কবিদের মায়ের কাছে, যাদের 
সবার নাম আমার জানা নেই। আমি নার্সিসাস, সাকিন
বিওশিয়ার থেপসি শহর, মাতা জলপরী লিরিওপী, পিতা
নদী দেবতা সেফিসাস।
তারপর হঠাৎ ছুটে এসে হিসহিসিয়ে বলল- হে 
আমার লতানো পাতানো ভাই-বোন, সাবধান, সাবধান
চোখের অতোটা গভীরে যেওনা, জল চিরকাল খলখল 
মিথ্যে কথা বলে। এখানে অস্বীকার করব না, বেশ ভয় 
পেয়েছিলাম, মুহূর্তে বেড সাইড টেবল ল্যাম্প জ্বালাতে 
গিয়ে জলের গেলাসটাকে ফেলে দিয়েছি, আর আলো জ্বলে
উঠবার পর দেখি কেউ কোথাও নেই, তুমুল ফাঁকা 
ঘরের মেঝেতে গ্লাস ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোগুলোতে চোখ 
পড়তেই অনেক অনেক আমরা আমাকে কোরাসে বলতে 
শুরু করলাম -
কবিরা কবি, মানুষতো নয়। সাবধান সাবধান বেদনারা 
ধ্রুপদী, এটা মানুষ বোঝেনি, তাই মানুষ একদিন কবিদের 
জলে ফেলে দেবে।
তখন কোথায় লুকোবে তুমি?

হসপিটাল ডায়রি

হাসপাতালের বিছানায় বাবা, খানিক দূরে আমি আর দেয়ালে একটা টিকটিকি। বাবা বিড়বিড় করছেন, তাঁর শরীরে সেঁধিয়ে যাচ্ছে ঝুলিয়ে রাখা তরল। যেভাবে নদীকে খর সমুদ্র টানে, কবিতা আমাকে টানছে। বাবা বলছেন, দীপ নিভে গেছে। আমি বলছি, থেমে থাকো শরীরী কবিতা; টিকটিকি বলছে ঠিক ঠিক। বাবা বলছেন, মুক্তি চাই। আমি বলছি, আশার অশ্ব, সোনার মুখোশ; টিকটিকি বলছে ঠিক ঠিক। বাবা বলছেন, বমির দাগ। আমি বলছি, ভেসে আসছে ভাঙ্গন; টিকটিকি বলছে ঠিক ঠিক...

ড্রপসিন নেমে এলে দুম করে, দেখা যাবে মধ্য রাত থমকে আছে, কেবিন জুড়ে ঝরে পড়ছে অগুনতি লিরিকস -
ধুক পুক ধুক পুক ধুক পুক...

সুবর্ণরেখা পারাপার

কোন একদিন চৌরাস্তার মোড়ে
যদি দেখতে পাও তাকে, দাঁড়িয়ে রয়েছে
তোমার অপেক্ষায় ভেজা হৃৎপিণ্ড হাতে,
তুমি থমকাবেতো?

তার দাঁড়কাকের মত ভাবলেশহীন চোখে
কিংবা বেড়ালের হাসির মত অচেনা কিছুতে
চমকে যেওনা, এখনো সে বুক পকেটে যত্নে
রেখেছে তোমার চিবুক ঠিকরে আসা রোদ

সব কিছুই কি গত জন্মের মত মনে হয়!
তোমার ছায়া হতে পারিশুনে উত্তরে তুমি
বলেছিলে, ‘সুবর্ণরেখা পেরিয়ে এসোনা

ফিরে তুমি ঘুমঘোরে চুলে বিলি কেটে সমস্ত
অনুসন্ধান কর, কিংবা
ভুলে যাও পরশুদিনের স্নানের মত আর সে বারবার
ফিরে যায় লাজ কঙ্করের পথ ধরে; তেমনি
ফিরছে আজও

অবন্তিকা,
তুমি হৃৎপিণ্ডটা রাখলে পারতে

দৌড়

আমাকে তাড়া করছে একটা কালো কুকুর
আর আমি দৌড়াচ্ছি, প্রবর্তক মোড়, গোল পাহাড়
পেরিয়ে জিইসি'র মোড়ে এসে পড়েছি, এবার
কোন দিকে যাব, হাঁটু বেয়ে ঝরে পড়ছে মরচে

আজ বৃষ্টি এঁকেছে সেপিয়া টোন, এমনই বৃষ্টির সিনে একবার
দাঁড়িয়েছিলাম ঝুমুরের সামনে হাতে নিয়ে একশ কদম ফুল, আর
তারপর... সে কথাতো কুকুরকে বলা যাচ্ছে না, শুনবে না

তবে, আপনারা যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন
এই অপূর্ব সার্কাস, হেসে গড়িয়ে পড়ছেন এ ওর গায়ে, আবার
মোবাইল ক্যামেরায় জমিয়ে রাখছেন এইসব নাটক, একবার
পেছনে ফিরুন প্লিজ, কিংবা এই এখন একটা সেলফি হোক -

এইবার দেখতে পাচ্ছেন, হ্যাঁ আপনাদের পেছনেও, কি
বলছেন - কালো নয় লাল? রঙ এ কিবা আসে যায়! দৌড়ান
যেদিকে পারেন, আর ঝুমুরদের ভুলে যান

আগে, কুকুর সামলান

রূপাগ্রস্থতা

১.
সাঁকোর গল্প পুরনো হয়েছে বহুকাল, বিলুপ্ত স্মৃতি কামড়ে রয়েছি তবু রূপা পেরিয়ে গিয়েছে বহুবার, শেষবারে ফেরেনি, শুধু যাবার গল্পের রেশ রয়ে গেছে নেই সাঁকোটার কাছাকাছি এখন চৌরাস্তা, নাভি থেকে পথ এঁকে বেকে গ্যাছে, আরেকটু এগুলেই গোল পাহাড়, জিলিপি পাহাড়, খুলশি, কাজীর দেউরী, ওড়না লেইন, পাঞ্জাবী গলি অথচ চৌরাস্তা ধরে আমি যতবার এগুই আমার সমস্ত পথ নেই সাঁকোটার কাছে চলে আসে ওটা রূপা ছিল হয়তো কোনকালে, আমি স্রেফ অতিথি, কখনো নিমন্ত্রণে চোরা রোদের ওপিঠে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে গড়ানোর ভঙ্গিতে আমরা কথা বসাতাম রূপা জানেনা, রূপাতো নির্ঘাত জানেনা কোজাগরী রাতে মধ্যবর্তী সেতুতে দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষায়, একজন ফিকে মানুষ, এখনো

২.
রূপাদের বাড়ির ছবি আমার ক্যালেন্ডারে চাপা পড়ে আছে বর্গী-পাড়ায় জন্ম যেহেতু আমার কেবলই ছিনিয়ে নেবার লোভ, যতবার বাড়ি গেছি ততবার সোনাঝুড়ির সিঁড়ি ভেঙ্গে আমি টপকে গেছি তৃষ্ণার্ত বেপাত্তা কিছু স্মৃতি, বিনিময় প্রথা একবার দেখিমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রয়েছে, আমার দিকে নয়, একুরিয়ামের সদ্য অতিথি গোল্ডফিসটার দিকে, যদিও ওই বন্দি মাছটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, তবু বর্গী যেহেতু আমি তাই পুনরায় ছক পেতে বসি, মাছটা কিছু বুঝতে পেরেছিল কিনা জানিনা, শুধু দেখেছি রূপার পাশে দাঁড়ালেই সে লেজ নাড়িয়ে একুরিয়ামের গভীরে চলে যেতো  তখন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম রূপার চুলের দিকে, এমন আঁধার আমি জীবনে দেখিনি

৩.
ওর সাথে বেড়াতে গিয়ে একদিন পাঁচ টাকার কয়েন ফেলেছিলাম যন্ত্রে, ভবিষ্যৎ ছাপা হয়েছিল ছোট্ট কাগজের টুকরোয়অর্জুন তুমি, পাবেই দ্রৌপদীর ভালবাসা, কুরুক্ষেত্র থেমে গেলে পড়ে, ঝর্না গলায় হেসেছিল রূপা  ঝর্নার ওই জল কি কেবলই জল, মাথার ওপরে এই যে আকাশ, সে কি আকাশের চাইতেও বেশি নয়! আমরা কেউ তখনো ততখানি নিসর্গ-শিকারি ছিলাম না, নতুবা আমার সব সমর্পণ, সব প্রতিবাদ, আধখানা জ্বরে পুড়ে যেতো এখনো জানতে পারিনি আমাকে জরীপ করে কি পেয়েছিল রূপা প্রস্তুতিবিহীন বিপন্নতা?

৪.
গভীর আয়নার সামনে অনাদিকাল একটা মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, এখন আর আমার মধ্যে কোন কিন্তু নেই, অথচ মৃত্যুর অধিক তৃষ্ণা বুকে, মনে পরলে ব্যস্ত সময় এক লহমায় পিছিয়ে হপ্তা, মাস, বছর হিসেব নেই চুমুর চেয়েও ঘনিষ্ঠ কিছু কি ছিল তোমার বিদায় সন্ধ্যাবেলা? অতটা দহন কি করে সহ্য করে আছি! আমার পতন-প্রবণ মন, আমার বুকের পাটাতন, লুকিয়ে রেখেছে বিষাদের ইন্সটলেশনগুলো রাত জাগি, জুয়াড়ির মত ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়ে, যন্ত্রণার চড়াই শরীর বেয়ে ওঠে, আমি ইতিহাস হাতড়ে কুহুভর্তি গেলাস খুঁজি জানালা গলে হুমড়ি খায় বেগম আখতারজোছনা করেছে আড়ি...

 ৫.
আজ যখন নিঃসঙ্গতার কথা ভাবছিলাম, নাটকীয়ভাবে বিদ্যুৎ চমকায়নি আকাশে আমার কাছে রেখে যাওয়া রূপার সেই গোল্ডফিস আমাকে দেখতে পেয়ে তিনবার লেজ নাড়িয়েছিল তাকে আমি রোজ খাবার দেই, স্নান করাই তবু তার প্রতি বিদ্বেষ বেড়েছে, সে পুরনো বন্ধুকে ভুলে গ্যাছে খুব সহজেই, অথচ তার এবং আমার জয়েন্ট বুক ক্ষত বিক্ষত ছিল মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে, যে কথা রূপাকে বলিনি কখনো, গোল্ডফিস জানে তার মৌন ভাষা আমি শুনতে পাই, বলে, শরীরও ভালবাসা, ভালবাসা উত্তাপ, তাকে যৌনতা বলা নিতান্তই অপরাধ বরং এসো কিছুদিন খুব কাছাকাছি থাকি

৬.
করোটির শাঁসভূক গ্রন্থগুলো গড়াতে চাইছে জলে, হে ঈশ্বর যদি প্রেম দিলেনা প্রানে, তবে কেন খাঁচা দিলে বাঁধিবার যদি ফিরে এসো শহরে কোন সন্ধ্যায়, যদি দেখ আকাশের গায়ে ভ্রুকুটির মত চাঁদ, আর সাঁকোতে দাঁড়িয়ে একটা ভাঙ্গা শরীর হৃদয়ের কাছে ক্ষমা চাইছে, রূপা তুমি চমকে যেওনা

হাঁটছি, পাখির সঙ্গে কয়েক পা

#

দুপুর একটা তেত্রিশেরও কখনো মন খারাপ হয়
মন খারাপের রোদ ত্বকের গভীরে পৌঁছে নাচে
'পুং ছলম'
খোলের তালে তালে প্রাণ রস খুঁটে খুঁটে খায়, ইচ্ছেরা
লোমকূপে ততক্ষণে কুণ্ডলী পাকিয়ে দাহ
তার
       পর
সমস্ত সম্ভাবনাকে ফাঁকা করে সান্দ্র বিষাদ গড়িয়ে দেয়

হুম, ফাঁকা
ঠিক আমার কবিতার মতো

#

বারোটা পঁয়তাল্লিশকে আমি প্রায়ই ডেকে বলি
ওল্টানোর আগে সাবধান, বিরোধিতারা ছুঁয়ে ফেলতে পারে
ঁকিবুকির জটিলতা, এমন হলে বিস্মরণ ঘটে যাবার
সমূহ সম্ভাবনা

চাপ চাপ আঁধারে আলো বোধ নিয়ে উল্টে যায় যদি কারও
চিবুকের জোয়ার, চারিদিকে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে 'মেঘলা আকাশ'
একটা রোগের নাম, রোদ গলে যাবে তখন দামাল চোখে

সর্বনাশ

ঝাপসা ভাষায় অনুবাদ হলে তুমি পড়বে কি করে, বলো বলো

#

আজ দুপুর একটা তিরিশ নিয়ে এসেছে মেঘলা এপিসোড
চোখের জল ছাড়া এসমস্ত কষ্টের আর কি কি অভিব্যক্তি আছে
এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কোথাও রিসার্চ করছে কি কেউ

আচ্ছা মূল প্রসঙ্গে আসি
চাক ভাঙ্গা নদী মুঠো খোলে, শুরু হয় ছোঁয়াচে আলাপ
ঘরে থাকে হারানো স্বজন, ব্রিজ পেরোলে কুমারী বাঁক

মেঘ ভাসে,  কার্নিশে

এই যে ঝুল বারান্দা তার উপরে মেঘ, তারও

এক
লাফ
উপরে

গোটা একটা জীবন অভিমান খুঁড়ছে, সেই
অজুহাতে পোশাক খুলতে খুলতে যাদুকরের মত
বৃষ্টি নামাচ্ছে মেঘ

ইদানীং
জানালার হুকে ঝুলে থেকে আমি এই সমস্ত দেখতে পাই
অল্প অল্প করে ডানার ভাষা শিখছি, অযথা ঝাপসা রঙের প্রচুর প্রশ্ন
তোমার মনে, পাখিরা এসব এড়িয়ে যায়, পাখিদেরও জ্বর হয়
কবিতা পড়ে

এতোটা হেসো না উড়াল

এবং প্রহেলিকা
(পাবলো নেরুদা’র এনিগমা উইথ ফ্লাওয়ারের বাঙলায়ন)

শেখা হয়ে ওঠেনি আজো
কি করে সেভাবে জেগে উঠতে হয়, স্বেচ্ছায়,
শ্বেতশুভ্র অবয়বে পৃথিবীর চিরন্তন স্থিরতা
কিংবা স্থবিরতা চিঁড়ে, বদলে ফেলবার কাঙ্ক্ষায়,
তেমন মাহেন্দ্রক্ষণে, মাটির গাঢ় অন্ধকারকে তুড়ি মেরে,
কুৎসিত রাত্তিরের ঘৃণ্য কালোকে হারিয়ে জেগে ওঠে
বিস্মিত অঙ্কুর-
উড়িয়ে দেয় অনাবৃত সৌন্দর্যের বিজয় কেতন, অমল ধবল
পদ্ম যেমন।

তার কাছে কিছুই শিখিনি বলেই কি
বিজয়
তুমি এতোটা দেরীতে এলে!

ছায়া । মায়া । কায়া ।

এই যে আমি এখানে নিরেট জমাট ভিড়ের ভিতর বাসে, কখনো ফুটপাথে, মিছিলের মাঝামাঝি কোথাও, ফলের দোকান, টং এর চা হাতে, উইন্ডো শপিং এর মতো করে আছি, লুকিয়ে থাকিনি, আপনি এবং আপনারা আমাকে আদতে চিনতেই চাইছেন না।

কি বললেন মশাই? খুঁজছেন!
এভাবে কি খোঁজা হয়, উদভ্রান্তভাবে আমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমাকেই পেরিয়ে গেলেন

অথচ, আমি এই চৌরাস্তার মোড়ে দিব্বি দাঁড়িয়ে আছি, কেউই আমায় লক্ষ্য করছে না, খানিক আগে আমি রাস্তা পেরোতে চাইলাম, ট্র্যাফিক পুলিশ উলটো হাতের ইশারায় গাড়িগুলোকে চালু করে আমার পার হবার রাস্তাটাও আটকে দিল।

ধরে নিলাম আমায় নিয়ে ভাবছেন না, তবে কি ভাবছেন?
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপনি কখনো ফ্লাই ওভারের কথা ভেবেছেন? চীন দেশীয় ক্ষুদে ক্ষুদে লোকেরা এতো উঁচু উঁচু ফ্লাইওভার কি করে গড়ে! এসব নিয়ে ভাববেন না একদম, ওদের দারুণ সব যন্ত্রপাতি আছে ওরা ঠিকই গড়ে নেবে, অহেতুক এ সমস্ত ভেবে ক্লান্ত হতে হতে একসময় হতাশ হয়ে যাবেন, হতাশা থেকে নাকি বিপ্লব হয়, এটাও এখন ঈশপের গল্প, বরং আপনি খানিক আমায় নিয়ে ভাবুন, এই যে আমি এখানে অপেক্ষায়-

কোনদিন আপনার ভেতরে ঘুমন্ত আমিটা জেগে উঠে ভাববে এটা জীবন! এখানে ঘোট পাকাচ্ছে  জিভ নিঃসৃত রক্তের লাল সমুদ্র, তাকে পেড়িয়ে যাবার জন্য আস্পর্ধার ডানা ছুঁয়ে উড়ে চলে যায় কবিতা।

কুড়িয়ে পেলে ফেরত দিয়ে যাবেন প্লীজ, তাই বলছি বারবার-
আমাকে দেখুন, ব্যস্ত হলে একটু একটু করে দেখুন, দয়াকরে আমাকে একবার দেখে রাখুন।

এখানে এতক্ষণ কবিতা পড়তে এসে যা কিছু গিললেন, তা কি করে উগড়ে দেবেন? মাথার ভেতর প্রজাপতি ঢুকেছিল কখনো? কিংবা ঘাসফড়িঙ? ঢুকে না থাকলে জেনে রাখুন, ওই সমস্ত বদগুলোকে প্রশ্রয় দেবেন না, মাথার ভেতরে পটি করে দেবে, সেই পটি থেকে হবে

আহ, কি হবে? সেসমস্ত জেনে লাভ নেই বিশেষ, আপনিতো অনেক কিছুই জানেননা। আপনার কি মাইগ্রেন হয়? কন্সটিপেশান? বিশেষ কোন গোপন রোগ? এমন কিছুতেই যদি আপনার অভিজ্ঞতা না থেকে থাকে তবে আর পোকার পটি নিয়ে চিন্তা নেই।

রাইটার্স ব্লক বলে একটা কথা আছে, শুনেছেন?


এ পর্যন্ত যা লিখেছি, এটা কিন্তু একটা কবিতা, মানবেন কি মানবেন না সে আপনার ইচ্ছে, আমি জবরদস্তিতে মোটেই বিশ্বাস করিনা।

SHARE THIS

Author: