আলিফ মেহেরাব এর কবিতা

জীবনানন্দ তোমাকে

বাইশারি ফেলে, ফেরিঘাট গুলো
পাল ছেড়া নৌকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
এখন ট্রামগুলো আকাশ পানিতেও চলে,
কিন্তু আগের মতই ছিঁড়ে নিয়ে যায়, ওরা
মানুষের দেহ।
তবে, বদলেছে অনেক কিছুই, জীবনানন্দ।
এ শহরে, আজ কোন প্রকার চাকরি নেই,
তাই বিশুদ্ধতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনা।
আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই ভুগছে
স্যাটেলাইট নামক নির্লজ্জ জ্বরে,
ছয় ছক্কায় ধাঁধানো দেশপ্রেমে।
অর্থনীতি সূচক না বুঝে
কবিরা হয়েছে বেশ্যার দালাল।
প্রতিবাদের বুলিতে ওরা সব বেইমান ৫৭।
অভিমান করলে, দাদা?
আহা,
তুমি তো জানোই, কেউ কখনো কারো
অভিমানের মূল্য দেয়নি এ পৃথিবীতে।
মূল্য দিয়েছিলো শুধু দলিত মাংসপেশি।
তাজা জানের বদলে দিচ্ছে
ভিখের চাল, দু' পয়সার আধুলি।
তবুও টাকা পেয়ে আমরা
হেব্বি খুশি।
মোটা চালের দু'নালা ভাত পরুক না হয়
আত্মার স্মরণে,
কুড়িয়ে খাক রাস্তার পাগলী- বনলতা সেন।
মন খারাপ করলে, দাদা?
লাভ নেই, তোমার মন খারাপে লাইকের প্রমোশন,
বরাবর মত,
রবি ঠাকুর অপেক্ষা কম।
তোমাকে নিয়ে তাই ব্যবসার সাহস করেনি,
বুদ্ধিজীবী সুধীজন।
তাই বলি এবার আর বাংলায় ফিরোনা।
এখানে, নিজ মায়ের জরায়ু
জন্মের পরিচর বহন করে না।
তুমি বরং মরে যাও।
মৃতদের কোন জন্ম সনদ নেই।
ওদের শুধু মাটি চাপা দেয়া হয়,
না হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়
বক্ষবদ্ধনিহীন রূপসীদের, বাংলায়।

প্রিয়তমা তোমাকে

একটি চুম্বনে থিতু হয়ে গেছে সমস্ত পৃথিবী,
নিরক্ষরেখা ফুটে উঠেছে মসৃণ হাতের তালুতে।
উঠেছে পাঁচ তারকা ফ্রাঞ্চাইজ কলাগাছ
এ শহরের হাহাকার থেকে অনেক অনেক দূরে।
রেশনের বাজারে বিশাল যোগানে
ক্ষুধারা বেড়েছে সব প্রবৃদ্ধির তুলনায় সহস্র গুনে।
এমন সময় প্রিয়তমা,
তোকে ভালোবাসি কিভাবে বলি, তুই বল?
বোয়িং ৭৭৭ ফিরেছে,
ফিরেছে চুক্তিবদ্ধ শীতল অস্ত্রর লট।
হন্তদন্ত এক গুচ্ছ ফুলের নহরের আড়ালে,
শিশু অধিকার আইনের বলয় ভেঙে
পা গুটানো দীপ্তিরা ঝুলে পড়েছে ফাঁসির দড়িতে।
জঙ্গি রঙিন গলাবাজি করে মিডিয়া ভুলেছে,
গ্রেনেড ফুটছে অগণিত প্রতিদিন বাংলার
কৃষকের বুকে।
এমন সময় প্রিয়তমা,
তোকে ভালোবাসি কিভাবে বলি, তুই বল?
আমি আঙুল তুলে বলে দিতে চাই,
রবীন্দ্র সঙ্গীত কখনো খালি থালা দেখেনি।
দেখেছে শুধু সুদি টাকার সোনালী ধান।
আমি আঙুল তুলে বলে দিতে চাই,
প্রেমেজ্বরে পোড়া সব সিনেমা হলে তোলা
পপকর্ন ঠিক কোথা থেকে আসে,
প্রফিট গুলো কোথায় যায়।
আমি আঙুল তুলে বলে দিতে চাই,
বায়ান্ন, একাত্তর সংখ্যামালার শেষ সংখ্যা নয়,
আরো অনেক সংখ্যাই আসবে।
আমি আঙুল তুলে বলে দিতে চাই,
আঙুল তোলার অধিকার আমাদের
সব জনতার আছে।
এসব ভুলে প্রিয়তমা,
তোকে আমি ভালোবাসি কিভাবে বলি, তুই বল।

তুই আমার মৌলিক অধিকার

আমি কবিতা লিখিনা আর।
কারণ আমি লিখলেই তার সবটাই তুই হয়ে যাস,
আবার সেই তুইটাই
কিচ্ছুক্ষণ পরে হয়ে যায়- বাংলাদেশ।

তাই আজ আমি বাংলাদেশ লিখি,
দেশের মানুষদের লিখি,
বেকার সব যুবকের প্রতিদিনকার ৭১ লিখি।

আর প্রাচীন তোর চুল বেয়ে মাটিতে নেমে
যখন দেখি বিশাল এক সন্ধ্যা,
তখন টোকাইয়ের কুড়িয়ে পাওয়া
স্বপ্নের কাপে চুমুক দেই
আর ভালোবেসে বুকের বৃদ্ধাশ্রমে
লিখতে থাকি অনবরত-
মেয়ে, তুই আমার মৌলিক অধিকার।

দাবীকৃত সন্তান

বৈশ্বিক উষ্ণতার গুলো জাপটে ধরেছে
আমাদের নি:শব্দে ফেলা দূরদেশী প্রশ্বাস।
কামান দাগিয়ে চলা রাষ্ট্রীয় মহড়া
বলে দিচ্ছে অদৃশ্যবাদ ভালোবাসা নাকি অসম্ভব।
ভোগবাদী এ শরীর ছেড়ে যাওয়াই নাকি মৃত্যু।
অথচ প্রতিটা দিনে একজন পতিতা স্বপ্ন দেখে
শুধু একজনই প্রিয় মানুষের।
সিনেপ্লেক্স পর্দা রেখে প্রেমিক স্বপ্ন দেখে প্রিয়তার চুলে।
স্বপ্ন দেখে নতুন এক সন্তানের,
যে সন্তান হবে না কোন রাজনৈতিক ইশতেহার,
যে সন্তান হবে না ক্ষুদ্রঋণ গিলোটিনে কাটা পরা গর্দান।
যে সন্তান হবে না কারো স্বামী বা বাপের সম্পত্তি,
যে সন্তান হবে না শুধু ছয়দফা দাবী।
এ সন্তান নিজেই অসংখ্য দফার জীবিত বাংলাদেশ!
তবুও ডানপথ, বামপথে চলা কোন মহোদয়
বামডান ফিরে ভাবেনি কখনো,
সুন্দরবনে এখনো নি:শ্বাস নেয়া সম্ভব।
প্রোপাগান্ডার পশ্চাদেশে বিমোহিত অসম্ভব।
কারণ,
এ দেশে এখনো ভালোবাসা বিক্রি হয়না,
নিজের বুকেই জমে।
প্রিয়তা, হোক না আমাদের ভালোবাসা শুধু ছেড়ে দেয়া নি:শ্বাসের,
এখনো পরজীবী ছত্রাক হইনি, অন্তত,
আমরা যে ভালোবাসতে শিখেছি,
এখনো ভালোবেসে বাঁচি এ বাংলায় ।

লিপস্টিক

ঘুম মাখানো মাখন বুলিয়ে গেছে তোর মুখমণ্ডল ,
প্রাতরাশ সাজানো রেস্তোরাঁয়
শুধুই দু' জোড়া চোখের ভিড়।
নিশ্বাসে একবাটি জীবন।
১ চামচ সুপ মুখে দিয়ে
তোর লিপস্টিক লাল ঠোট গুলো কি বলবে-
"ভালোবাসারা "তিরিশ লক্ষ এক"টি লাশের
স্থুপে মারা গিয়েছে।
তাই সংসদ নামক ভালোবাসার ভবনটা কোন
পাত্তিহীন প্রেমিকের জন্য খুলে দেয়া যাবেনা।
লাইভ সোসালাইজড যাত্রাপালার
ফ্যান ফেভারিট পেজ
শেয়ারে দিয়ে জানাবে-
দেখ শালারা আমরা রাত ব্যতীত
কারো হাত, ভালোবেসে ধরিনা।"
২ চামচ সুপ মুখে দিয়ে
তোর লিপস্টিক লাল ঠোট গুলো কি বলবে-
"নিরাপত্তার জন্য রাস্তার
সব রেড লাইট জ্বালিয়ে রাখতে।
একাত্তরের সবার ছাদে পতাকা ওড়ানোর অধিকার মাড়িয়ে উঁচু অলিভ জিপ জানাবে-
দেখ শালারা, আমরা তোদের ক্লাসের মানুষ না,
তোদের কারো হাত, আমরা, ভালোবেসে ধরিনা।"
৩ চামচ সুপ মুখে দিয়ে
তোর লিপ্সটক লাল ঠোট গুলো কি বলবে,
"গ্রামীণ ঠোঙায় মোড়া
স্ট্রবেরী বাজারজাত এক অনবদ্য সাফল্যের গল্প।
পেপারে ছাপবে মডেল কৃষকের হাসিমাখা মুখ।
প্রেস কনফারেন্সে ঘোষিত হবে
দেখ শালারা, আমরা সুপ ব্যতীত কিছু খাই না।
ধান চাষির জীবিকার ভাত
আমরা কিনে খাই না।"

বিগত বছর থেকে তুই অনেক
বদলে গিয়েছিস জানি, তাই বলি
বাকি সুপটুকু খেয়ে নিয়ে অনেক ভালো থাকিস-
ভুল বসতো , সুপের সাথে, না তোর লিপস্টিক মুছে গেছে,
ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে বেরোবার আগে নিজেকে দেখে নিস,
লিপস্টিক এইবার না হয় গাঢ় করে দিয়ে নিস।

SHARE THIS

Author: