হাফিজ রশিদ খান
জন্ম : ২৩ জুন ১৯৬১, চট্টগ্রাম।
বিগত শতকের আশির দশক থেকে হাফিজ রশিদ খান বাংলা কবিতার অস্তিত্বে এক জায়মান সত্তা হিশেবে নিজের বিকাশ ঘটিয়েছেন। প্রায় তিন দশকের পথচলায় একটা নিজস্ব কবি ভাষার মিনার গড়ে তুলেছেন নীরবে নিভৃতে। নব্বই দশকের গোড়ার দিক থেকে কাব্যে ও গদ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জাতিসমূহের তৃণমূল সংস্কৃতি ও জীবনাচারকে তার অনন্য ভাষিক বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করছেন সমান তালে। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত তার 'আদিবাসী কাব্য' বাংলাদেশে তাকে পরিচিতি দেয় আদিবাসী জীবনের প্রথম কাব্যকাররূপে। ভালবাসা-বেদনা-কষ্ট-বিরহ এইসব হৃদয়দ্রাবী অনুভূতি যে কারাে একার সম্পত্তি নয়, সেটা উন্মোচিত হওয়ার এই তো সময় যখন সমস্ত অপেক্ষা কিংবা সংগ্রাম পাশাপাশি জাগিয়ে রাখে এক জাগ্রত চেতনা। বাইরে থেকে দৃষ্টিপাতের বিলাসী ভূমিকায় না থেকে ভেতরের একজন হয়ে ওঠার স্বাক্ষর হাফিজ রশিদ খানের কবিতা।
আজ কবির জন্মদিনে জলফড়িং এ পড়া যাক কয়েকটি কবিতা।
সংখ্যাগুরুর ক্রোধ
ব্যক্তি আর সংস্থা কতো গেল শান্তির সড়ক
তবু কতো ক্ষুদ্রজাতি নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে
বুকে নিয়ে কষ্টের নরক
নাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা মরে
পারমাণবিক আস্ফালনে পৃথিবীটা কাঁপে ডরে
বোমাভর্তি বিমানের কুণ্ডলিত আগুনের জিবে
তামিল গ্রামের ঘরে-ঘরে মানুষেরা গেছে নিবে
কুর্দিদের বাসভূমে
সংখ্যাগুরুর ক্রোধের ধূমে
তরুণ কবির শরীর নিথর হয়ে যায়
শাস্তি, থাকে উহা কাহাদের জোব্বার কোনায়...
বাইরে সৌন্দর্য নাইরে
মুগ্ধ হবো বলে তাকিয়ে রয়েছি
শ্রীমুখের নন্দনকাননে
চোখ ফেরাবো না আর
পুড়িব ভিজিব ওই ঝাউবনে
গগনে-গগনে তুমিই আমার সন্ধ্যাতারা
লাল ঠোঁটের আঙিনাজুড়ে সুর
তোলা আমপারা
এই সব দৃশ্যের বাইরে
আর কোনো সৌন্দর্য নাইরে...
তারাছার শাদাফুল
তারাছার পথে যারা যায় পাহাড় ডিঙোবে বলে
তাদের ভেতরে দুর্বার আলেকজান্ডারের
অশ্বারোহী বেগ
জ্ঞানদীপ্ত মাহিয়ানের তেজস্বী বৌদ্ধমন
নির্ভীক খালিদ বিন ওয়ালিদের উজ্জ্বল
নিকষিত হৃৎপিণ্ড
ঋষি অরবিন্দের গভীর মেজাজ প্রতিস্থাপিত
প্রত্যেকের চালু করোটিতে
আসলে ওরা তো অলখপিপাসু সূর্যের সন্তান
পায়ের প্রবল চাপ পাথরের বুকে
ঝরনার স্বচ্ছজলে জীবনের শুদ্ধ তাপ
ঘূর্ণি হাওয়া
উড়ে যাওয়া দিগ্বিবিক
ক্লান্তিহারা সামুরাই দল
পাহাড় পেরিয়ে
পাখিদের গান শুনতে-শুনতে এলো
জুমঘরে সন্ধ্যার বৈঠকে
ঝোপের সবুজ খোঁপা থেকে
শাদাফুল নিয়ে হাতে
দাঁড়ায় সমুখে আদিবাসী নারী
আঁধার তাড়াতে যেনো শক্তিশালী আলোর পেখম...
ও ঝিরিজল মৎস্য দিয়ো
হৃদয় সলতে পাপড়ি মেলো
এখন আলো আসবে অমল হাতের ছোঁয়ায়
লুসাই পাড়ার তস্বী উঠোন
মাদুর পাতো
আজকে শীতের
ঠাণ্ডা আমেজ হাওয়ায়...
সেই মেয়েটা মৎস্যপ্রিয়
সন্ধ্যা হলে পিনোনভরা
ও ঝিরিজল
মৎস্য দিয়ো...
আমি এবং বন্ধু আমার
আরো অনেক টাটকা সখা
শিশির অবগাহন শেষে
খুঁজতে যাবো
বাতুল পথের ঝোপে-ঝোপে
লক্ষ-লক্ষ
রাত্রিপোকা...
সকল যুবক-যুবতিগণ আয়ুষ্মতী দেশলাই জ্বেলো...