নাহিদ ধ্রুব'র গুচ্ছ কবিতা














মানুষ

সগোত্রীয়দের প্রতি সহমর্মিতা দেখাও মানুষ।

প্রস্তরযুগের পাথরের মতো আধখেঁচড়া শরীর নিয়ে
শুয়ে আছো নিম গাছের নিচে,
ঔষধাদির নির্মল স্পর্শে অমরকোষ পাচ্ছে বাঁচার অঙ্গীকার। 
তুমি নিজেকে বটবৃক্ষ ভাবছো ;
যার আতুরাশ্রমে পালক ধুয়ে বিশ্রাম নেবে
জোড়া শালিক। ভাগ্যদোষে শিকড়সমেত গাছ মরে
গেলে তুমি নিশ্চিত ফিরে পাবে সংবিৎ।

তুমি বরং স্বর্গের আকাঙ্খায় কিনে রাখো পুঞ্জিভূত
কবর। কবরের জানলায় নিরাপত্তা দিক দম খোঁজা
বন্দর। সমুদ্রবৎ হলে তুমি ভেসে যাও, নোনাজলে 
ভেসে যাক ডুবোজাহাজ।

কিন্তু তোমরা শান্তিদূতের অপেক্ষায় থাকবে। 
শহরে - শহুরে, পথিক পথে, শিরীষকুসুম শিশিরে
বাড়বে স্বাতন্ত্র্য জেনেসিস। স্বাতী শস্যের গমগমে 
বিস্ফারণ মাঠে মাঠে ছড়াবে বীজাণুর বিষ।

মানুষ তুমি প্রদীপ শিখার মতো হও।

প্রজ্জ্বলন করি।
সূর্যমুখী ফুলের মতো উজ্জ্বল চলো সূর্যোপাসনা করি।
সহমর্মিতা'র মতো নির্লোভ,
হরিণের মতো নির্জনতাপ্রিয় কিংবা বাঘের মতো সবল।





ঈশ্বরত্ব


ফাঁসিমঞ্চে দাড়ানো কয়েদীর চোখে জল্লাদ'ই ঈশ্বর।


রাষ্ট্রীয় গিনিপিগ


নিজেকে রাষ্ট্রীয় গিনিপিগ ভাবতে শিখুন
রাষ্ট্রীয় ইস্যুতে কীট-বীজাণু'র মতো আপনার
টুঁটি চেপে ধরে চামড়ায় সেঁটে দেয়া হবে
রক্তলিপ্ত দলীয় পোস্টার।
উচ্ছিষ্ট হৃদপিণ্ড নিয়ে আপনি জিহ্বা বের করে
নাড়বেন অদৃশ্য লেজ।
ফরেনসিক রিপোর্টে আপনাকে ধর্ষণ করা হবে
পোস্টমর্টেমে আপনি হয়ে যাবেন গুম
দিগ্বিজয়ী দুঃশাসনে আদালত খোশগল্পে মশগুল
শ্বাপদচক্ষু উপড়ে ফেলুন চোখ-রাঙানির ভয়ে
কবরের জীর্ণ সংস্কারে আপনি বাঁচুন
রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে আপনার বেঁচে থাকা দরকার।


দেশ বিষয়ক আলোচনা


চায়ের দোকানে দেশ বিষয়ক আলোচনায় জানলাম
মানুষ মাত্রই নিজস্ব স্বার্থ পাইকারি দরে আদায় করে নিচ্ছে
যারা সমালোচনায় পটু তারাও চা'য়ে চিনির অভাবে
লেগে যাচ্ছে বাকযুদ্ধে। তাদের কপালে সরু চিন্তার দাগ
দেশ টা বোধহয় এভাবেই রসাতলে যাচ্ছে ...
এক ভূমিহীন চাষা হাজার রুটির জন্য কৃপা ভিক্ষা নিচ্ছে
যার মুখে জোটে নি ভাত - সে বুকে লাঙল তুলে দিচ্ছে
শোনা যায় তারা ছোটলোক নিতান্তই বেঁচে থাকার তাগিদে
প্রতি সকাল বেলা লাইন হয়ে দাড়িয়ে বিক্ক্রি হয়ে যাচ্ছে
দেশের চারপাশে রোপণ করছে কারুকাজপূর্ণ পর্দা
চায়ের কাপে ঝড় তুলে বলছি কসম এরা আমাদের অংশ না।
আমরা প্রগতিশীল হয়েছি , বহুজাতিক মানুষের নির্মাণে
আমরা ধ্বংস করেছি জমিদার প্রথা। খাজনা দিতে হয় না
মানুষ শহর কেন্দ্রিক , চারপাশে বহুতল ভবন
সেখানে গণতান্ত্রিক আমলা পেয়াদা- আমরা উন্নয়নশীল।
আমরা দারিদ্ররেখাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফাস্টফুডে যাই
প্রেমিকার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে আফসোস করি
নিজেও খাই অতঃপর রাস্তায় ক্ষুধার্ত শিশু
দেখে নাক ছিটকাই এই দেশের কোন উন্নতি হবে না।
চায়ের দোকানে দেশ বিষয়ক আলোচনায় জানা যায়
দেশের প্রতি ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে ভিন্ন দেশ
মানুষের চামড়া গণ্ডারের মতো পুরু নিয়েছে উটপাখির বেশ
মানুষের শোকের আয়ু জল্লাদের লোমশ হাত ধরে কমে যাচ্ছে
যারা নিয়মিত বিরতিতে দেশের উন্নয়নে হরতাল, অবরোধ
- করছে তারাও অনশনের নামে চা খেতে খেতে বলছে
দেশ টা বোধহয় এভাবেই রসাতলে যাচ্ছে ...

রাষ্ট্র একটি ধ্বংসাত্মক ডিভাইস

রাষ্ট্রের আরোগ্য লাভের জন্য আমাদের দত্তক নেয়া হয়েছে
প্রতিনিয়ত আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি  মৃত মানুষের সংঘর্ষে
আহত হচ্ছে রাষ্ট্র, প্রকাশ্যে অতঃপর,
কর্মজ্ঞানী সন্ত্রাস সর্বক্ষণ মাতাল হয়ে সরকারী সিলমোহরে
বমি করে যায়
রাষ্ট্রের আরোগ্য লাভের জন্য আসুন প্রার্থনা করি
মসজিদে , মন্দিরে , গির্জায় আসুন লিফলেট দেই কিংবা
প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়িয়ে থাকি রাস্তায় নিজেকে বিক্রি করে
আসুন যোগাই রাষ্ট্রের জন্য রসদ, কাঙ্ক্ষিত ঔষধ 
রাষ্ট্র শুয়ে আছে আইসিইউতে, বেঁচে আছে লাইফসাপোর্টে
রাষ্ট্রের শরীরে জন্মেছে হেমলক, মেরুদণ্ড বাজেয়াপ্ত হয়েছে
মেশিনম্যান তৈরি করছে মানুষ গণ্ডারের চামড়া দিয়ে
যাদের পাকস্থলীতে গনতন্ত্র,সমাজতন্ত্র হজম হয়ে যন্ত্র হয়ে যায়
রাষ্ট্র এখন সরকারী সম্পত্তি, রাষ্ট্র নিয়ম করে সচিবালয়ে যায়
রাষ্ট্র প্রয়োজনে টক শো করে, জনসভায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়
রাষ্ট্র মদ খায় , পার্টি করে স্বার্থে টান লাগলে যুদ্ধে লিপ্ত হয়
দত্তক নেয়া মানুষ মরে গেলে
তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়
গোরস্থানে গেলে জানা যায় রাষ্ট্র একটি ধ্বংসাত্মক ডিভাইস

যা শববাহকের ভূমিকায় প্রতিনিয়ত খুন করে যাচ্ছে...

SHARE THIS

Author: