আমাদের কথা

কার পিছনে দৌড়বেন? প্রশ্ন শুনেই অবাক হচ্ছেন, হতেই পারেন। খুলেই বলি তাহলে, আপনি কি কবিতার পিছনে দৌড়বেন নাকি কবির পিছনে দৌড়বেন। যদি কবির পিছনে দৌড়ান তবে আপনার জন্য শুভকামনা জানানো ছাড়া আমাদের আর কোনো কথা নেই। যদি কবিতার পিছনে দৌড়ান তবে আপনাকে বস্তুত দৌড়তে হবে না। শান্ত হয়ে বসতে হবে। আর অন্বেষণ করতে হবে আপনার প্রিয় অগ্রজরা কবিতা কিভাবে লিখেছেন, তাদের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হবে। আর চোখ, কান খোলা রেখে বুঝতে হবে সময়ের পরিক্রমায় বাংলা কবিতার ভাঙন, গড়ন, গঠন, আকার, আকৃতিগত পরিবর্তন গুলোকে। এর পাশাপাশি চেষ্টা করতে হবে নিজস্ব একটা স্বর তৈরির। এই স্বর তৈরির ব্যাপারটা সত্যি কঠিন। এটা তৈরি করতে পারলেই হয়তো মহাকালের বুকে নাম লেখা যায়।

মহাকাল এসে গেলে একটা তর্কও চলে আসে। দশক আর মহাকাল নিয়ে। মহাবিশ্বের বুকে আমরা প্রত্যেকেই শিশু। পৃথিবীর বয়স আর একজন ব্যক্তির বয়স হিসেব করলে এমন মনে হয় অন্তত আমার কাছে। আর কবিতা জিনিসটাই অন্বেষণের মতো ব্যাপার। সেখানে দশক আর মহাকাল খুব গৌণ দুটো শব্দ। এটার কোনো মানে থাকে না কবিতা সাধকের কাছে। তবুও দশক বলে শব্দটিকে অস্বীকার করা যায় না, আর মহাকালকেও অস্বীকার করাও সম্ভব নয় আমাদের কাছে।

দশক শব্দটি একজন কবির শুরুর সময় এবং তার সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। বলে দেয় অমোঘ সম্ভাবনার কথা। এতে কবি যদি আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন, আর নিজেকে সেভাবে জাহির করতে চান তবে তা সাধনার পথে বিশাল এক অন্তরায়। কবির উচিৎ দশকের এমন সম্ভাষণকে পাত্তা না দিয়ে আপন মনে তার কাজ চালিয়ে যাওয়া। পাঠক যদি তাকে দশকে আটকে রাখে সেটাও মাথা নিচু করে মেনে নিয়ে সামনের পথে আগানো, এবং পাঠকের দেয়া ট্যাগলাইন ভেঙে নতুন একটা ইমেজ দাঁড় করানো। আবার কবিতার সাধক যদি আবুল হোসেন আর আবুল হাসানের কবিতায় ফারাক খুঁজতে যান তখন তাকে টাইম ফ্রেম নিয়ে কাজ করতে হতেই পারে। সেক্ষেত্রে দশককে একেবারেই ব্রাত্য ঘোষণা করা যায় না। তবে দশক শব্দটাকে মূল কথা ভাবলে কবির জন্য, সৃষ্টির জন্য বিশাল জগদ্দল পাথরের মতো হবে কবি সত্ত্বার জন্য।

মহাকাল তাকে নিয়েও এতো মাথা ঘামানোর কীইবা আছে? যেখানে কবি নিজেই জানেন না এর শেষ বিন্দু কোথায়? সাধক তো ভাববে কবিতা নিয়ে, সময়, কাল, পাত্র, জনপ্রিয়তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এতো কই ওনার। ওনার কাজ হলো একটাই কবিতা সাথে গড়ে তোলা গভীর প্রণয়। এনদাহুনা থেকে শুরু করে আজকের নবীন সম্ভাবনাময় মুখ, কে কি লিখছে সবটাই খেয়াল রাখা, কবিতা কে নিজের মতো করে সাজানো আর নতুনভাবে রূপদান করা- এটাই তার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। আর বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে অগ্রজ আর অনুজের মধ্যে যেই বাহাস হচ্ছে তা সত্যি অনভিপ্রেত। এভাবে গায়ে পড়ে একে অপরের শ্রাদ্ধ আয়োজনের ব্যাপারটা সত্যি দুঃখজনক।

এই বড়ো মানুষরা হয়তো ভুলে যান তারও অনুজ আছেন যারা তাদের অনুসরণ করেন নিয়মিত। আর এই অনুজেরা কি শিখছেন ওনাদের কাছে থেকে সেই প্রশ্নটার মুখোমুখি করতে ইচ্ছে করছে এই সকল সাধকদের। কিছুদিন আগে মানে গত ২২ তারিখে চট্টগ্রাম নগরীতে কবিদের এক ঘরোয়া আড্ডায় উঠে আসছিল কবিদের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা। একে অপরের প্রতি দ্বেষ আর হিংসে করার শিশুসুলভ মন মানসিকতার কথা। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, সবাই তো রাজনীতির বিরুদ্ধেই কথা বলে তবে এই দলের নেতা কারা? কার ইশারায় চলছে একে অপরের শ্রাদ্ধ পাঠ। হয়তো বুঝেও বুঝি না, কিংবা চিনেও চিনি না, আবার কখনো কখনো একদমই বুঝি না। কবিদের তো এমন দলবাজি আর শ্রাদ্ধ আয়োজনের পথে না হেঁটে সৃষ্টির পথের সৌন্দর্য উপভোগ করাই কাজ ছিলো, অথচ বাস্তব কতটা ভিন্ন...

এমন হাজার বিপরীত চিত্রের মাঝেই আমরা স্বপ্ন দেখি কবিতাপ্রেমী মুখ কবি নয় কবিতার পিছনেই ছুটবেন, কবিতার নানা মায়াজাল, মোহ, চোরাবালি, কণ্টকাকীর্ণ পথ সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে সৃষ্টির নেশায় সাধনা মত্ত থাকবেন। তাঁর এই সাধনার পথে দশক আর মহাকাল দুটো শব্দ হয়েই ঝুলুক কবি আর কবিতা থেকে অনেক দূরে। সফলতা এলেই তারাও (মহাকাল আর দশক) এসে হাত মেলাবেন কবির কাছে। স্বপ্নটা কঠিন, তবে অসম্ভব কী খুব!

SHARE THIS

Author: