এক
কাব্য হচ্ছে ভাবনার দর্পণ। যার মধ্যে অতি নিখুঁতভাবে ধারণ করে ছন্দের বিন্যাস। হৃদয়ের মাঝে শক্তিশালী ভাবনার সংমিশ্রণে ছন্দের প্রাণ খুঁজে পায় এই কবিতায়। লেখকের মনে ব্যক্তিগত জীবন দর্শন ও জীবনের অনুভূতি কোনো বাস্তব কাহিনীকে অবলম্বন করে যে বর্ণের সৃষ্টি হয় সে বর্ণ ছন্দে রূপান্তরিত হয়ে কাব্যের সৃষ্টি হয়। কাব্য মানে ছন্দের গন্ধ।এতে লেখকের কল্পনায় সৃষ্টি হয় অসীম ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার কল্পনা রংতুলি মিশে কবিতার সৃষ্টি হয়। বলা কি যায় না-
হে বসন্ত,
ফুলে ফুলে তুমি আমায় দাও ছন্দ
যেখানে প্রকাশ করে জীবনের প্রতিচ্ছবি
যার মাঝে লুকিয়ে থাকে হাঁসি- কান্না,আনন্দ।
শব্দের মাধুর্যে বাস্তবে পরিণত করতে পারে প্রত্যেক প্রতিভাবান ভাবুক। যার মধ্যে শুধু বিরাজ করে ছন্দের পাহাড়।ছন্দ যদিও কবির ভাবনা,কবিতায় তা অলংকার। আবেগের সঙ্গে ভাবনার মিশ্রণে কাব্যের উৎপত্তি হয়। সেরা শব্দ সমূহের মধ্যে যদি ছন্দের মিল না থেকে কাব্যের সৃষ্টি হলেও অন্তরে তৃপ্তি মেলেনা। সুন্দরতম শব্দের পরিপাটি বিন্যাসের কবিতা। এই কবিতায় ছন্দের চুম্বন বিধাতার ঐশ্বরিক দান।
শশী আনমনে বসে আছে। ভাবছে কতো কিছু।এই ভাবনা নিয়েছে তার পিছু। চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঝিমচ্ছে। ভাবছে কিছু একটা লেখবে। কি লেখবে,শশী? কিছুই মাথায় আসছেনা। বাবা মারা যাওয়ার পর এমনি হয় মাঝে মাঝে তার। এমন সময় মোবাইল ফোনে রিংটোনের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে শশীর। অপর প্রান্ত থেকে মেহেরুন বলে উঠে,হ্যালো, যাদু। কেমন আছো? কি করছো? শশী আচমকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বাজে। আশে পাশে থাকিয়ে দেখে কেউ নেই। নীপ ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। আর শশী চার দেয়ালে বন্দি খাঁচায় টেবিলে মাথা রেখে অঝোর ধারায় চোখে বাদল ঝরছে। এক এক করে সাতটা দিন কেটে গেলো সেপ্টেম্বর মাসের। শশী বুঝতে পারলো,মেহেরুন ফোন করেছে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য। শশী নিজেকে শক্ত করে প্রস্তুত হচ্ছে তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছানোর জন্য। মুক্তার ভাবনা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য পড়ালেখা অবস্থায় এই গন্তব্য স্থানে পৌঁছলও ফুফু। এদিকে মেহেরুন অনেক বার হ্যালো,হ্যালো করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে কেটে দিলো।অভিমানী মেহেরুন কান্না করতে করতে ফিসফিস করে বলছে,আজ সাত সেপ্টেম্বর। তুমি কি ভুলে গেছো? ২০১৪ সালে নীল কাব্যের গন্তব্য কাব্য গ্রন্থে তুমি আমায় নিয়ে লেখেছিলে কবিতা। আরো বলেছিলে,আজ থেকে আমি নবীন মুক্তা। আমি যদিই মুক্তা হই কেনো বলোনি 'শুভ জন্মদিন'? তুমি কি আমায় সত্যি ভুলে গেছো? ভুলে গিয়ে মুক্তাকে নিয়ে কবিতা লেখায় মেতে উঠেছো। ফেসবুকে দেখলাম,'আত্মার ভিতর আত্মা' নামে একটি পাতায় মুক্তা ও ময়নাকে নিয়ে অনেক কবিতা। তোমাদের ময়না পাখিটা মারা গেলো নাকি?
তোমার এই কবিতা পড়ে মনে হলো তাই। (শুনেছি আগামী বই মেলায় আত্মার ভিতর আত্মা কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে। যা নিয়ে তুমি আশায় বুকে বেধে আনন্দে আত্মহারা) মুখে মুকে বলো তুমি কবিতা লেখোনা কিন্তু তুমি কবিতা নিয়েই ব্যস্ত। তুমি কি বুঝো না? লেখালেখি করলে তুমি অন্যমনস্ক হয়ে যাও। যখন তুমি দাদাজান কিংবা মুক্তা ফুফুকে নিয়ে ভাবো,তখন তুমি অধরার মাঝে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার কিছুই মনে রাখতে পারোনা।এভাবে কি দিন যাবে? আর কতো? কবির মন দোলে কবিতায়,তোমার মন দোলে কবিতা এবং মুক্তায়। এই কবিতায় ছন্দে রূপান্তরিত করে মুক্তাকে বিধাতায়। আমি যতবার বারণ করি না কেন? তুমি মাতোয়ারা হয়ে আছো,থাকবে মুক্তাকে নিয়ে।
দেখতে দেখতে দশ-বারোদিন কেটে গেলো।অভিমান ভেঙ্গে মেহেরুন আবার কল করলো। বললো,আজ আর আদর করে যাদু বলোনা। বললো,কেমন আছো? কল করতাম না। কল করেছি একটা খবর দেওয়ার জন্য। তোমার মনু ভাই নানা হয়েছে। এই জন্য কল করেছি। ভালো থেকো। শশীও বললো,ঠিক আছে। আমিও স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হবো। মেহেরুন টান টান কণ্ঠে বললো,তার আগে কি কবিতা লেখেছো নাকি? শশী বললো,তোমার বারণ করার পর কলম খাতায় লেখা হয়নি। কথাগুলো সাজিয়ে দিই,অধর তা লেখে দেয় ফেসবুকের পাতায়। অধর ভাইয়ারতো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই তোমার কবিতা নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে আছে।শশী হেঁসে দিয়ে বললো,এখন রাখলাম,স্কুলের সময় হয়ে গেছে। এই বলে শশী স্কুলে চলে গেছে।
স্কুলে গিয়ে প্রথম ঘণ্টা নেওয়ার পরে আনমনে গম্ভীর হয়ে মুক্তাকে নিয়ে ভাবছে। এমন অবস্থায় কাদের পলাশ স্যার এসে একটা বই দেন। বই দিয়ে বললো,এটা আপনার জন্য। সব শিক্ষকের জন্য একটা। আপনার জন্য একটা। পাশে বসা ম্যাডাম বলে,উনি একা একটা পাবে কেন? পলাশ স্যার বললো,উনি লেখালেখির জগতে আছেতো তাই উনাকে একটা দিলাম। শশী বইটা হাতে নিয়ে মৃদু হেঁসে বললো,আপনার বইয়ের সম্মানী কতো? পলাশ স্যার হেঁসে দিয়ে বললো,লাগবে না। শশী বললো,স্যার আপনার বই ছাপাতে খরচ হয়েছেনা?
পলাশ স্যার বললো,খরচ হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু সবার থেকে-তো আর টাকা নেওয়া যায় না। আপনি লেখা দিলে দিতে পারেন। আমাদের সামনে আরেকটি সংখ্যা প্রকাশিত হবে তার জন্য।এই বলে স্যার চলে গেলো। স্কুলের শেষ ঘণ্টা বেজে উঠার সাথে সাথে শশী উঠে দাঁড়ালো। ঘুটি-ঘুটি কদম রাখছে আর ভাবছে,আজ হেঁটে যাবে।কারণ বাসায় কিছু লেখা যায় না,ফুফু বকা দেবে।আসছে ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তাকে নিয়ে একটা অণু গল্প লিখলে কেমন হয়? অনেক ভেবে চিন্তে শশী অধরকে কল করে।অধর শশীর কল দেখে অবাক।এই সময়ে শশীর কল? কিছু হলোনাতো শশীর?এই সময়-তো কল দেয়ার কথা নয়। সেপ্টেম্বর মাস এলে সে আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না ২০১২ সালের পর থেকে।এখন চলছে সেই সেপ্টেম্বর মাস।এই মাসে শশী মুক্তাকে নিয়ে অস্থির থাকে তেমনি শশীকে নিয়ে অস্থির থাকি আমি।
হ্যালো,কিরে কোনো সমস্যা?
শশী:সমস্যা না একটা অণু গল্প লেখতে হবে।
অধর: নিশ্চয় মুক্তাকে নিয়ে।
শশী: মনে হয়।
অধর:আমি অন লাইনে আছি,শুরু কর।
শশী:কায়ে রোদ মেখে রেল লাইনের পথ ধরে তোমায় নিয়ে লিখছি।ইদানীং এর লেখাগুলো কলম খাতায় লেখা হয়না।বাসায় লেখতে গেলে মায়ের বারণ। ডাক্তার নাকি না করেছে। বেশি লেখালেখি করলে মাথা ব্যথা হয়। কিছু লিখলে যতটুকু মাথা ব্যথা হয়,না লিখলে তার চেয়ে বেশি মাথা ব্যথা হয়।মনের কোণে ভাবনাগুলো কি জমিয়ে রাখা ঠিক? হয়তো আমার লেখাগুলোতে একগুঁয়েমি ভাব। এই একগুঁয়েমি শত চেষ্টা করেও দূরে সরাতে
যেখানে ফুটে উঠে কবিতার প্রকৃত রূপ।
অধর:কিরে ছোট গল্প লেখতেছিস কবি এবং কবিতা নিয়ে।যার সারমর্মে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটেছে?
শশী:না কিছুই হয়নি।
অধর:গল্প লিখলি নাম দিবি না?
শশী:কি নাম দেওয়া যায়?
অধর:মন দোলে।
শশী:খুব চমৎকার নামতো।
অধর:গল্পটা শেষ কর।
শশী:নামটা কি লেখেছস?
অধর:হ্যাঁ,লেখেছি।
শশী:কি লেখেছিস?
অধর:মন দোলে।
শশী:আবার পরের লাইনগুলা শুরু কর।যাকে নিয়ে আমার ভাবনা।যার জন্য আমার কল্পনা। যাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন।যার জন্য মনের আশা পূর্ণ,আজ সে কোথায়? যাকে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আজ সমীরণের দরজায় এসে পৌঁছেছি।যে দ্বার খুলে পেয়েছি হাজারো কবিতার ছন্দ।যার জন্য আমার পোড়া সমীরণে মন দোলে।সে কোথায়?আছে কি কোনো গোপন স্থানে।আমি জানি,কে জানে?আমার হৃদয়ের হৃদ মহল থেকে একটু হতাশার প্রলেপ ভাগ করে নেওয়ার কেউ নেই।যে ছিলো আমার মনে প্রাণে,শিরা-উপশিরায়।মুক্তা তুমি যে সে।ভাবতে অবাক লাগে!আমার আদর মমতা,ভালোবাসা ছেড়ে হারিয়ে গেলে।অথচ ভাবলে না অধরাতে তুমি কি পেলে?গোবরেও পদ্মফুল পুষ্পায়িত হয়।কেউ বুঝি না কেনো?তোমাকে কষ্ট দিয়ে,আমাকে নিঃস্ব করে কি পেয়েছে ওরা?কূল হারিয়ে হবে একদিন তারাও দিশেহারা।আজ তুমি-হীনা মোর হতাশা-নিরাশা,দুঃখ-কষ্টে কাটছে দিন।রঙ্গিন স্বপ্নগুলো ডাস্টবিনের ময়লার মতো জমাট বেঁধেছে।আশাগুলো তুমি-হীনা মরীচিকা হয়ে গেলো।অতঃপর তারা সবাই ভালো।ভালো থাকবে কি আজীবন?ঝাপসা গাঢ় অন্ধকারে নীরবে কাঁদে মোর মন।তবুও বুঝলো না আমায়,যেমন বুঝেনি তোমায়।এখন তোমার ন্যায় আমার বুকে লাথি মারতে পারে।ছেড়ে কি দেবো মুক্তা,তোমার শত্রুকে?কেউ কেউ বলে,তোমার মৃত্যু নিয়তির এক নির্মম পরিহাস।তোমার কষ্ট উপলব্ধি করে কায় ঠাণ্ডা হয়ে বেড়ে যায় আমার রুদ্ধশ্বাস।
অধর মনে মনে ভাবলো,শশী এখন মুক্তাকে নিয়ে আত্মহারা হয়ে গেছে।গল্প বলতে গিয়ে আত্মা নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে প্রথম কবিতাটাই বলে পেললো।তাকে আর বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে দেওয়া ঠিক হবেনা।বুঝিয়ে যে কোনো উপায়ে তাকে বাসায় পাঠাতে হবে।শশী:কিরে অধর,ভাবছিস নাকি কিছু?
অধর:না,ভাবছি না কিছু।গল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছে।অণু গল্প-তো তাই আর বাড়ানো ঠিক হবে না।
শশী:বিরক্ত হয়ে গেলি নাকি?
অধর:তোর কোনো কাজে কি আমি বিরক্ত হই?মনে হয় কাঁদছিস?
শশী:কাঁদছি না।লোচনগুলো রেল লাইনের পাশের নদী থেকে একটু জল ধার নিয়েছে।
অধর:রেল লাইনের পাশে নদী আছে নাকি?
শশী:হ্যাঁ,খুব সুন্দর একটা নদী।নাম ঠিক জানা নেই।
অধর:চাঁদপুরে-তো মেঘনা নদী আছে জানি?
শশী:হ্যাঁ,আছে।তা বড় স্টেশনে।
অধর:যাসনা সেখানে?
শশী:তুই জানিস না আমি একা অচেনা কোথাও যেতে পারিনা।
অধর:মনে হয় এখনো কাঁদছিস?Please,বাসায় যা।বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে থাকবি।
শশী:আজ ইচ্ছে করছেনা বাসায় যেতে।বড্ড ইচ্ছে করছে,সমীরণে উড়ে উড়ে নদীর তরঙ্গের কলতান শুনতে।জানিস অধর,আজ প্রথম শ্রেণীর প্রথম ঘণ্টায় মুক্তার পছন্দের সেই গানটা শুনলাম।
অধর:কোন গানটা?শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচে সে ঘুর্ণিবায়,জল তরঙ্গে ঝিলমিল ঢেউ তুলে সে যায়............।
শশী:হ্যাঁ,এটাই।অভিনয় করে যখন দেখালাম,তাহিয়া,লাম,মীম,আরাফাত,হামান শেখ,স্বপ্ন খুবই মজা পেয়েছে। সারমিন,সুবর্ণা,সুমাইয়া তারা বললো-ম্যাডাম,আবার দেখান।স্বপ্ন বলে উঠলো-ম্যাডাম দেখান না।লাম,মীম মনি মুক্তার মতো খিলখিল করে হেঁসে বললো আবার একবার দেখান না। আমি যেনো শুনতে পেলাম,আপু,আপুরে,সুন্দর করে নাচটা আমাকে শেখাও। সামনে স্কুলের অনুষ্ঠানে যেনো আমি সবাইকে দেখাতে পারি।আচ্ছা,অধর বল না,এই ডাকটা কোথায় থেকে শুনলাম।কে,সে? মুক্তা নাকি?নিশ্চয় মুক্তা।অধর বুঝতে পারলো জ্ঞান হারাবেই এখন। কিরে বাসা আর কতো দূর?
শশী:এইতো আর এক মিনিট।
অধর:আল্লাহ হাফেজ,রাখলাম।
শশী:এড়িয়ে চলছিস।
অধর:তোর কাজেই যাচ্ছি।অপেক্ষার প্রহরের আজকে শেষ প্রুফ দেখার দিন।২৯ সেপ্টেম্বর এর আগে বইটা বের হচ্ছে।
শশী:২৯ সেপ্টেম্বরের কথা শুনে আর কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু জল ধার নিয়ে ঝরাতে ঝরাতে বাসায় পৌঁছে......শশীর আজকের লেখা নিয়ে অধর ভাবছে।কি বুঝাতে চেয়েছিলো তার লেখার ভাষায়?
নিশ্চয় লেখকদের নিয়ে কিছু একটা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলো। কবি এবং কবিতা নিয়ে ভাবনায় তা প্রকাশ করে।সত্যিতো,কবিতা লিখলেই কি কবি হওয়া যায়? কবিতা হচ্ছে ছন্দের বিন্যাসের রূপ। এই রূপ যদি না থাকে কবিতা তার রূপ হারায়। কবির চেষ্টা হয় বৃথা চেষ্টা। এমন ভাবনার মাঝে শশী জড়িয়ে যায় মুক্তার ভাবনায়। যদিও ভাবনার খেই হারিয়েছে তারপরেও কথাগুলো কি অসাধারণ হয়েছে?এসব ভাবতে ভাবতে অধর পৌঁছলও প্রেসে। সেখানে গিয়ে অপেক্ষার প্রহরের লেখাগুলো এডিট করে আবার শশীকে কল করলো-অধর:হ্যালো,শশী,কি করতেছিস? খাওয়া-দাওয়া কি শেষ হয়েছে?
শশী:খাওয়ার জন্য নিয়েছিলাম,ভালো লাগেনি তাই না খেয়ে রেখে দিয়েছি।
অধর:যখন ভালো লাগে একটু খেয়ে একটু খেয়ে নিস,Please.
শশী:ঠিক আছে রাখি।
অধর:না,না কথা আছে।
শশী:কি কথা?
অধর:ছোট গল্পটা যে লেখেছিস কোন ম্যাগাজিনে দিবি। পলাশ স্যারের ম্যাগাজিনের নামটা-তো বললিনা।
শশী:কাদের পলাশের সম্পাদনায় ম্যাগাজিনের নাম হলো -ত্রিনদী।
অধর:প্রচ্ছদ কেমনরে?
শশী:সুন্দর। একটি নদীর উপর নৌকা ভাসে পাশে গাছ ও মানুষ এমন মনে হয়।
অধর:খুব সুন্দর মনে হয়।ঠিক আছে তোর গল্প প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় থাক।
শশী:স্যার বলেছে,চেষ্টা করবে।
অধর:আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম। ভালো থাকিস,আল্লাহ হাফেজ।
অধর: এই এক আচার্য মেয়ে। যার মাঝে মাঝে লুকিয়ে অসাধারণ গুণাবলী। যা কেবল তার কথায় নয় কবিতা কিংবা গল্প বা উপন্যাসে ফুটে বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি। সত্যি অবাক লাগে। অবাক না হয়ে কি পারি? তার প্রতিটি লেখার প্রথম পাঠকতো আমি। তার লেখা কিংবা তাকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকার মাঝে কেটে যায় আমার প্রতিটি ক্ষণ। ভাবনার প্রতিচ্ছবিতে উকি দেয় তার প্রতিটি কবিতা। যার মাঝে লুকিয়ে আছে সুনিপুণ ছন্দ। বলতে বাধ্য হই,শশী,তুমি-তো ছন্দের রাণী। মনে পড়ে সেই ছন্দময়,বিনাশিত গল্পটি। সে দিন শশী বলেছিলো-
শশী: আজ একটা গল্প বলবো।
অধর:কি গল্প বলবি?
শশী:বলার পরে বুঝে নিস।
অধর:ঠিক আছে বল।
শশী:শুন।
আমার ইচ্ছে ছিলো,সংসারটাকে আপন হাতে সাজাবো,
সবাইকে আপন করে নিবো।
আমার ইচ্ছে ছিলো,পূর্ব পুরুষের মতো করে, এই দরবারকে পরিপূর্ণতা দেবো।
কেউ যদি কিছু না বুঝে তাকে আমি বুঝাবো।
আমার ইচ্ছে ছিলো,সুন্দর একটা ঘর হবে বাড়িতে,
সবাই আমায় বিদায় দেবে,রাজকুমার আসবে নিতে।
আমার ইচ্ছে ছিলো,মনি মুক্তাকে পরাবো এক সাথে বেলি ফুলের মালা,
কেনো,আজ মুক্তা-হীন কেনো আমার এতো জ্বালা?
আমার ইচ্ছে ছিলো,মায়ের হাতে পরাবো বালা,
তবে কি পারিনি? পারতেছিনা,পেয়ে কারো অবহেলা।
আমার ইচ্ছে ছিলো,লেখা পড়া করে হবো সুশিক্ষিত,
কেনো বার বার হতে হচ্ছে আজও আপনজনার কাছে নয়,অন্য কারো কাছে নতো?
আমার ইচ্ছে ছিলো,বাগানে ফুটে থাকা আটটি ফুল থাকবে সারা জীবন এক সাথে,
কেনো ছোট কলি ঝরে গিয়ে শুধু কাঁদতে হয় আমায় প্রতিটি রাতে?
আমার ইচ্ছেগুলি কি মরীচিকা হয়ে গেলো?
তবে যারা আমার ইচ্ছে পূরণে সহায়তা করেনি তারা কি পেলো?
কবি হয়ে কবিতার খাতায় ছন্দ দিয়ে সাজায় আপন মনে অজস্র কবিতা। ঠিক ঐভাবে সংসারকে বিনাশিত করার কতো সুন্দর ভাবনা। যা নিয়ে কারো সাথে হয় না তুলনা। এই এক অসাধারণ মেয়ে 'শশী'। যার চন্দ্রিমা আলোয় আলোকিত হবে একদিন সবাই। আজ আমি ধন্য,এমন এক সহযোদ্ধা পেয়ে। যাকে আমার কলমের ডগায় সদা মূল চরিত্রে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা থাকে। আমি তাকে নিয়ে ভাবনায় মাতোয়ারা হয়েছি,আমার দেখা একটি মেয়ে। এই লেখাটা যখন ফেসবুকের পাতায় সাজানো হয় তখন আমি যেনো তার একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে যাই। ভাবনায় ভাবতে ভাবতে আমায় ভাবুক করে সে। যে ভাবনায় আমার গর্বের ও অহংকারের প্রতীক নাম এই শশী।
শশী,কি করতেছিস এখন?আমি জানি,নিশ্চয় কলম খাতা নিয়ে টেবিলে বসে আছিস। আমার মন বলছে তা। কল দেবো নাকি? না,দেবো না। কারণ,একটু পরে আসরের নামাযের আযান হবে। নামায টা না আদায় করলে ফোন করলে বলবে,নামায আদায় করেছিস? ইদানীং মিথ্যে কথা আর বলা হয় না। কারণ,শশী মিথ্যা কথা পছন্দ করে না।সুতরাং নামায আদায় করে এসে কল দেবো। অধর বিছানা থেকে উঠে ভাবনাকে দূরে সরিয়ে টুপি হাতে নিয়ে ঘুটি ঘুটি পা রেখে চলে গেলো পুকুরে। মসজিদের সামনে পুকুর থেকে ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করলো। জামাতের সহিত চার রাকাত ফরজ নামায আদায় করার পর ইমাম সাহেব কিছু মাশাল্লার তরজমা করে বলেন-মুখ দিয়ে বাজে কথা বের হলে কি করবেন?
সুপ্রিয় ইসলাম প্রিয় তাওহীদি মুসল্লি,আপনারা আমার কিছু কথা মন দিয়ে শুনেন,হযরত সায়্যিদুনা হাতেম আসাম এর মুখ দিয়ে কেবল মাত্র অনাবশ্যক কথা বের হওয়ার কারণে তিনি ক্ষোভে,দুঃখে নিজের জিহ্বা পর্যন্ত ক্ষতো বিক্ষতো করে পেললেন।
অধর:হঠ্যাত্ করে এই মাশাল্লা কেনো,হুজুর?
ইমাম সাহেব:কারণ আছে।
অধর:কি কারণ?
ইমাম সাহেব: আমি যখন আযান দিয়ে আহ্বান করছি মুসলমানদের তখন শুনতে পেলাম,রহিম সাহেবের বাগানের গাছ করিম সাহেবের গরু খেয়ে পেলেছে তাই যা তা গালাগালি করলো। আল্লাহ তালা আমাদের দুই কাঁধে দুই ফেরেশতাকে ঘরে বেঁধে দিয়েছে। উনাদের কাজ হলো মানব জীবনে দৈনিক ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনাকে লিপিবদ্ধ করা। যা কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আমাদের সুকর্ম ও অপকর্মের দলিল হয়ে বিচারে সাক্ষী দিবেন। এই জন্য আমাদের প্রত্যেকের স্মরণ রাখা উচিত,ঐ ফেরেস্তাগণের কথা। এই কথা স্মরণ করতে পারলে আমরা সমস্ত অনাচার,ব্যভিচার ও অন্যকে গাল মন্দ করা থেকে বিরত থেকে এক আল্লাহ ও আল্লাহর পেরিত নবী ও রসূলের তরিকা মোতাবেক চলতে পারবো। এই পথ আমাদের কাল কেয়ামতের পর হাশরের মাঠে নেক বান্দাদের জন্য বেহেস্তের দরজা সুনিশ্চিত খোলা থাকবে। আল্লাহ তালা আমাদের এই নেক পথে চলার তৌফিক দান করুন,আমীন।
এর পর অধর বাড়িতে এসে চা পান করে ইমাম সাহেবের মাশাল্লার কথা মনে করে মনে পড়ে গেলো মা ফাতেমা(আঃ)কে নিয়ে শশীর লেখা কবিতাটি।অধর নীরবে মনে মনে আবৃতি করে শশীর লেখা প্রার্থনা কবিতাখানি-
ধয্য ধরার সহ্য করার ক্ষমতা বিধি দাও,
তোমার অন্তরের আপনার অন্তর মিশিয়ে আপন করে নাও।
ক্ষমা কর প্রভু,যত ছিল,আছে জানা অজানা ভুল,
আমি হতে চাই তোমার বেহেস্তের ফাতেমার হাতে ফুল।
সালাত আদায় করি গভীর রাতে তোমার করি প্রার্থনা,
মা ফাতেমার সুপারিশ পাই যেন গো এই যে মোর আরাধনা।
সর্বদা পড়ি যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায,
এই সালাতে হয় যেন গো শেষ বিদায়ের সাজ।
মৃত্যুর পূর্বে মুখে থাকে যেন পাঁচ কলেমা।
সুপারিশ করবে নিধান কালে আর কেউ নয় মা ফাতেমা।
রহমানের হাতে সৃষ্টি মোরা,
রহিম দিয়েছে এই ধরা।
কত শান্তির আলো বাতাস প্রাণ জুড়িয়ে যায়,
বলবে কি শেষ নিধানে মা ফাতেমায় কাছে আয়?
কবিতা আবৃতি শেষ নিজের অজান্তে মুখ থেকে কবিকে অভিবাদন জানাতে মারহাবা মারহাবা মারহাবা বলে অধর নিজেই হেঁসে উঠলো। এমন সময় শশীর কল। অধর কল রিসিভ করে বললো-
হ্যালো,শশী,কাইফা হালুকা।
শশী:ইয়া।
অধর:কি করিস?
শশী:কি করতেছি আমি বলতো?
অধর:আমার মনে কবিতা লেখায় মগ্ন।
শশী:ঠিক তা না।নাটক দেখছি,বুঝেনা সে বুঝেনা।
অধর:আমি এই অধম ছাড়া তোকে আর কেউ বুঝেনা।
শশী:তুইও আমায় বুঝিস না। যদি বুঝতি তাহলে মাঝে মাঝে তোর সাথে আমার এতো ঝগড়া হতো না।
অধর কথাটা শুনে ভাবতে লাগলো।সত্যি একটা পাগলী।কারণে অকারণে আমাকে শুধু শাসন করে।আমি কি করছি,না করছি তার দৈনিক হিসাব নেওয়া যেনো তার নিয়মিত রুটিন হয় দাঁড়িয়েছে।
শশী:কিরে অধর,কই তুই। কোথায় হারিয়ে গেলি।
অধর:হারিয়ে যায়নি,শুয়ে আছি,চোখ বন্ধ করে।
শশী:চোখ বন্ধ করে যে শুয়ে আছিস। পাঁচ ওয়াক্ত নামায কি আদায় হয়েছে?নাকি কোনো ওয়াক্ত বাদ গেছে।
অধর:না,সব আদায় করা হয়েছে।আদায় কি আর না করে পারি। আমরা যে মুসলমান।
শশী:আদায় করলেতো ভালো কথা। চোখ বন্ধ কি ভাবছিস?তোর কি পড়ালেখা নাই,সামনে না তোর পরীক্ষা?
অধর:ভাবছি,মনের ঘরে বসত করা সেই অপ্সরীর কথা।
শশী:বেশ তো।ভালোতো। কারো প্রেমে পড়েছিস নাকি?গান শুনবি?
অধর:মনে মনে এটাইতো চাইছি। কোন গানটি শুনাবি?
শশী:তোমার ঘরে বসত করে কোন জনা,মন জানো,তোমার বসত কোন জনা।
অধর:শশী,দারুণ হয়েছেতো সূরটা।
শশী:ইচ্ছে করছে সবটা শুনাতে কিন্তু শুনাবো না।
প্রেমিক প্রেমিকার আলাপন শুনবি?
অধর:শুনা।
শশী:শুন তাহলে।
ছেলে:এই শুনো তিন সত্যি করে বলছি।
মেয়ে:শুরুতে মিথ্যে কথা আমি দেখতে পাচ্ছি।
ছেলে :না,মোটেই না।চিঠিটা আমি লেখিনি।
মেয়ে:তুমি এমন করবে তা আমি বুঝিনি।
ছেলে:হ্যাঁ,সবি নীল খামে ছিলো নীল চিঠি।
মেয়ে:এখন কেনো কর তোমায় পরিপাটি?
ছেলে:তোমায় হারাতে চাই না বলে।
মেয়ে:অপমান করতে না তুমি আমার হলে।
ছেলে:ভুল বুঝোনা,নীলা।
মেয়ে:তবে কেনো খেললে আমার সাথে খেলা?
ছেলে:যার হওয়ার হয়েছে। অস্বীকার করবো না।
মেয়ে:আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না।
ছেলে:কি জন্য করেছে বিধি,ভুল করে পরিচয়?
মেয়ে:আমার মনে হয় তুমি মোর আপন নয়।
ছেলে:কাছে টেনে বুঝে নাওনা কতো ভালোবাসি।
মেয়ে:সত্যি,সত্যি,সত্যি,তোমার জন্য দিতে হবে আমার গলায় ফাঁসি।
ছেলে:এমন করো না,নীলা। তুমি আমার জান।
মেয়ে:তাই যদি হয় তবে নষ্ট করো না সম্মান।
অধর খিলখিল করে হেঁসে বললো,পাগলী,পাগলীরে ও পাগলী এখন ঘুমাবো।
২নং
প্রকৃতি যেনো আজ নবরূপে সেজেছে। মনের ভিতর এক অদ্ভুত শিহরণ জাগে।শীতের জীর্ণতা কেটে প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া। এই ছোঁয়ায় সমীরণে মন দোলে। পাখির কলতানে,ফুলে ফুলে সাজানো বাগান আর ভ্রমরের গুঞ্জনে মুখরিত চারপাশ। সব মিলে যেনো নব যৌবনে নবরূপে নব বধূর সাজে সেজে প্রকৃতি। প্রকৃতির এমন আড়ষ্টী যৌবনের রূপে মুগ্ধ হয় কবির মন। আকাশে বাতাসে যেনো ছুঁই ছুঁই করছে ফুলের সুগন্ধি মিষ্টি গন্ধ। এই গন্ধ এতোই মধুর যেনো মাদকের মাতলামিতে ভরা। এই গন্ধে হয়ে যাই আত্মহারা। মগ্ন হৃদয় যেনো আজ হারানোর প্রিয়ার প্রতীক্ষায় বিরহের রং ছেড়ে সুখের আগমনে নতুন সাজে সেজেছে। মনের নেশা ও চোখের ঘোর নিয়ে কাটছে যেনো রঙ্গিন এক স্বপ্নময়ী ক্ষণ। প্রিয় মুখটি আজ অজানা কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। শূন্য হৃদয় শুধুই শূন্য। বিরহ মাতম শুনছে মনে। হু হু করে কেঁদে উঠলো শিশুর মতো মন।কিছু কি বলতে চায় মন? বসন্তের এই ক্ষণে কেনো আমার মনে আজ বিরহের মাতম? মন কি কিছু খুঁজে?
কাক ডাকা ভোরে আলতো,আলতো ঘুম ভাঙ্গে
নূপুরের চরণ দেখে তোমার,
কুহেলিকার কণ্ঠ শুনে,
ময়নার গানে,গানে ডুবে যাই হারানোর দিনে,
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যাই আবার।
টিয়ে পাখির মত অধরে অধর রেখে যে কথা হয়েছিল,
সে কথা যায় কি ভুলা?
আজ বিবর্ণ বিষাদে বিরহের সায়রে
সন্তরণে আমি শুধু একলা।
যে বাঁশি বেজেছিল তোমার ছোঁয়াতে,
সে বাঁশির সুরে,সুরে ঘুম ভাঙ্গাতে।
সর্বহারা কাব্যতে শুনি সেই সুর,সেই তান,
অগ্নিবীণার সুরে জেগে উঠে অভিমান।
যে ব্যথা জাগে মনে আমার ক্রন্দন সুরে,
সে ব্যথার অনুরাগে কষ্ট লাগে মনে।
বিষাদে হিয়া আজ নীরবে কেঁদে উঠে,
বিষের বাঁশির সুর বিরহের সুরে ফুটে।
বুঝেছেন তিনি ঠিক অন্তর্যামী,
দ্রোহের অনলে হিয়া জ্বলে
তবুও ভাবি,তুমি হীরার চেয়ে দামী।
ঘিরে আছে চারপাশে তোমার স্মৃতি
বিবর্ণ বিষাদেও অমর হয়ে আছে প্রেম-প্রীতি।
সত্যি তো মুক্তা,আজ তুমি-হীনা একলা সাঁতার কাটি সায়রে।হয়তো পানির দেশে তলিয়ে গেলেও অধরে অধর রেখে ডাকা হয় না আর। তুমি নেই বলে শূন্যস্থানটা পূর্ণ করে তুলে না কেউ। তোমার মতো করে কেউ বুঝেনা। আমার হৃদয়ে বাজে বিরহের শঙ্খ ধ্বনি। এই সুরে আমি অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি। মনের ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়েছে আঁধারের প্রলেপ। মন উদাসী হয়ে অন্ধকারে নীরবে শুধু কাঁদি। তাইতো এই কান্না আমার সারা জনমে বয়ে যাওয়ার জন্য তোমার বিদায় বেলায় আমায় উপহার দিয়েছো।তোমার স্মৃতিগুলো স্মরণ করে বেদনায় ভরে উঠে মন।মুক্তা,তুমি বিহনে মোর জীবন তরঙ্গহীন। বসন্তের এই লগনে তবুও কানে বাজে সেই বেদনার সুরে গাঁথা বিষের বীণ। সুখকর সেই দিনগুলির কথা মনে করলে আরো বেদনায় দগ্ধ হই।তখন এই বসন্তের মাঝে যেনো নেমে আসে চৈত্রের সেই প্রচণ্ড খরা। যে খরায় প্রকৃতি রৌদ্রতাপে পেটে চৌচির হয়ে যায়। তৃষ্ণাত্ব্য চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকে আকাশ পানে একটু বৃষ্টির আশায়।ঠিক তেমনি আমিও তোমার প্রতীক্ষায় থেকে আমার অন্তর আত্মা চৌচির হয়ে আছে। আমি চেয়ে থাকি তোমার প্রত্যাবর্তনের। প্রতীক্ষার আকাশে যখন প্রহর আসে না তখন জানা হয়ে গেছে,আমার এই তৃষ্ণা আর কোনদিন মিটবে না। তুমি আর ফিরে আসবে না।চাতক পাখির ন্যায় কেটে যাবে আমার বাকীটা জীবন। শূন্য এই হৃদ মন্দিরে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হয় বিরহের বিলাপে। স্বস্থিহীন,শান্তি-হীন মনে তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে আজ হাঁফিয়ে উঠেছি তাই বড় ক্লান্ত। বেদনার যে বীজ রোপন করা হয়েছে,বৃক্ষ হয়ে ছায়া দেবে না,হবো না কখনো শান্ত। এই অশান্ত জীবনে কোনো আশার প্রদীপ জ্বলে না। এভাবে আর কতো কাল যাবে?
এসব ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে কলম খাতা নিয়ে বসে 'শশী'।কলমের ডগায় প্রকাশ করে মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা চাপা যন্ত্রণা।
যে বেদনার কবর দিয়েছি সে বেদনা উঁকি দিয়েছে,
কেন বারংবার খবর নিতেছে,আগে কি খবর নিয়েছে?
কষ্টের কারাগারে নষ্টের মৃত্তিকায় চাপা,
দুঃখের সাগরে ভাসি সদা আমি অভাগা।
কত অপেক্ষার প্রহর গুনেছি,প্রশ্নের সম্মুখীন হবো,
প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে শান্তি খুঁজে পাব।
আজও মূল নায়ক নিচ্ছে না খবর,
নিরুপায় হয়ে নিয়েছ বিদায়,দেখি শুধু তোমার কবর।
জানি,
ভালোবাসতো তোমায়,
ভালোবাসে তোমায়,
তবে কেন এমন হলো!
নেই অবনীতে,নেই মেদনীতে স্বপ্নের মাঝে এসে একটু বল,
তোমার অন্তরের আর্তনাদ আমার হিয়ায় এসে মিশেছিল।
বুঝতে পারিনি সমীরণ তবে তার কি হলো?
পাল তোলা নৌকা ছড়েছিল সায়রে পুবালি বাতাসে,
সেই নৌকার যাত্রী হয়ে কেউ ছিল যে তার আশে।
মৃত দেহটি পৃথিবী ত্যাগ করলো,
যে মনটা রেখে গেল তার কি হলো?
সেই মন কি তোমার হিয়ার সাথে মিশে?
নাকি নতুন মুক্তার মালা পরে তোমার মনটা হাঁসে?
মোবাইল স্কিনে কল ভাসে শশীর সে দিক দৃষ্টি নেই।চাপা কষ্ট প্রকাশ করে তাকিয়ে দেখে মেহেরুন এর কল।মোবাইল রিসিভ করতেই মেহেরুন বলে-
হ্যালো যাদু।কি করতেছো?
শশী:বসে আছি।
মেহেরুন:নিশ্চয় কলম খাতা সামনে। কি করতেছো সত্যি করে বলো?
শশী:অধর কি তোকে কিছু বলেছে?
মেহেরুন:না কিছু বলে নাই।উনার সাথে আমার কথা হয়নি। কেনো,তোমায় কিছু বলেছে?
শশী:হ্যাঁ,বলেছে।
মেহেরুন:যাদু,কি বলেছে?
শশী:বলেছে,কলম খাতা দিয়ে লেখালেখি না করতে। যা কিছু লেখি না কেনো সেপ্টেম্বর মাসে,আমি বলবো সে ফেসবুকে লেখে দেবে।
মেহেরুন:যাদু,তোমার একটা কবিতা পড়লাম।
শশী:কি কবিতা?
মেহেরুন:আমি আবৃতি করে শুনাচ্ছি। তুমি মন দিয়ে শুনো।
তপস্যা
সৈয়দা আফরোজা মুন
দিবা রাত্রিতে তপস্যায় মগ্ন হয়েছি,
সেই তপস্যার সাধনায় বর্ণের বিন্যাসে ছন্দ খুঁজে পেয়েছি।
সেই ছন্দ দিয়ে গেঁথেছি কবিতার মালা,
যখন চয়ন করি,লাগে অসীম জ্বালা।
কত বর্ণ দিয়ে সাজিয়েছি ঘর,
কবিতার মাঝে আপন হলেও,হয়ে গেলে আজ তুমি পর।
আমার তপস্যা শেষ হবে না,না আসো যদি অবনীতে,
একাকীত্ব নির্জন দেশে কিভাবে পারো একাকী ঘুমাতে?
যেখানে তোমার বসত,সেখানেই আমার মরণ,
মরতে যদি চাই,তোমায় করি স্মরণ।
গাঁথা কাব্যগুলো কায়ে দেয় বিষের কাঁটা,
সারা অঙ্গ পুঁজে ভরেছে পাই অনেক ব্যথা।
আমার কষ্ট শেষ হয় না,হয় না ক্ষত শুকনো,
তপস্যাতে থাকি আমি তাই কি পরিপূর্ণ?
শশী:মুক্তা,বলোনা,উত্তর দাওনা?
মেহেরুন:হ্যাঁ,যাদু,কি উত্তর চাও?
শশী:না,না,কিছুই না।
মেহেরুন মনে মনে ভাবতে লাগলো,একটু আগে সে আমাকে মুক্তা ভেবেছে।আমি চাই সারা জীবন সে আমায় মুক্তা ভাবুক।
কিন্তু কেনো বিধাতা তার এই ভাবনা থেকে সরিয়ে দেয়।আমিতো মুক্তার মতো করে তাকে আগলে রাখতে চাই।যেমন দাদা মরে যাওয়ার পর মুক্তা ফুফি শশী ফুফির সাথে কথা বলতো,সান্ত্বনা দিতো।আমিতো চেষ্টা করি মুক্তা ফুফির মতো সান্ত্বনা দিতে।কিন্তু যতই মুক্তা ফুফির আচরণ করি না কেনো আমি মেহেরুন,মেহেরুন থেকে যাই।আমি কি কখনো পারবোনা মুক্তা ফুফি হয়ে আমার যাদুকে সান্ত্বনা দিতে?সামনে জেএসসি পরীক্ষা।পড়ার প্রচণ্ড চাপ তারপরেও পড়া হয় না আগের মতো।
শশী:কিরে মেহেরুন,নীরব কেনো?
মেহেরুন মনে মনে ভাবতে লাগলো,মুক্তার ভাবনাটা ফুফিকে বলা যাবে না।
শশী:হ্যালো মেহেরুন।কথা বলছো না কেনো?
নিজের ভাবনাকে আড়াল করে মেহেরুন শশীকে প্রশ্ন করলো,
আচ্ছা যাদু,তুমি সবচেয়ে কোন ফুল বেশি পছন্দ করো?
মেহেরুন এর এমন প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পেলো শশী।
এতো মুক্তা নয়,মুক্তা-তো জানতো,আমার বেলি ফুল পছন্দ।
মেহেরুন:নিশ্চয় তোমার গোলাপ ফুল পছন্দ।আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তোমার মতো গোলাপ ফুল।তুমি আমায় বলেছিলে,আমি নাকি ফুলের মতো সুন্দর?আমি নাকি ফুলের রাণী?গোলাপ ফুলে যেমন মিষ্টি সুভাস,আমার কায়ে নাকি তাই?
শশী:মেহেরুন
মেহেরুন:হ্যাঁ,ভাবছি,আমি যেনো গোলাপের সারিতে তোমার সাথে লুকোচুরি খেলছি।
এমন সময় মনীষা এসে বললো,সামনে পরীক্ষা,গোলাপ ফুল নিয়ে ভাবনার অনেক সময় আছে।চল,কোচিংএ যাবো।
কথাটি শশীর কানে প্রবেশ করতেই বললো,মেহেরুন তুমি কোচিংএ যাও।আমার স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
মনীষা:শশী ফুফি নাকি?
শশী:মেহেরুন এখন রাখি। মনীষার সাথে কথা বলো।বাই।
মেহেরুন মনীষার প্রতি তাকিয়ে বললো,হ্যাঁ,শশী ফুফি ফোন করেছে।ফুফির অনেক মন খারাপ। আগামী কাল মুক্তা ফুফির মৃত্যু বার্ষিকী।
মনীষা:হ্যাঁ,বুঝতে পেরেছি। ফেসবুকে একটি কবিতা পড়েছি।
মেহেরুন: কোন কবিতা?
মনীষা:পাপড়ি।
মেহেরুন:শুনো তাহলে-
পাপড়ি
সৈয়দা আফরোজা মুন
বাগান জুড়ে আরতি কাছে ভ্রমর করে যায় গুঞ্জন,
তুমি-হীনা শূন্য বাগানে কাঁদি আমি,খুঁজি তোমায় যখন তখন।
আরাধনা আমার বিধাতার কাছে,রাখি যেনো তোমায় স্বর্গের তৃণে,
জানি না কে যাবে আগে ভুবন ছেড়ে?তোমায় যেনো চিনে।
ভালোই আছো হয়তো বেহেস্তের বাগানে,স্বপ্ন,ছোঁয়া কে নিয়ে,
বড় ইচ্ছে করে তোমার,কায়খানি দেখতে গিয়ে।
তোমার যাওয়ার পর সাজে না বাগান আর ফুলে ফুলে,
কুল হারা পথিক আমি,যাবো কার কুলে?
এক একটি করে চলে গেলো চার চারটি বছর,
তুমি-হীনা ভালো লাগেনা আমার আপন ঘর।
এইতো রজনী শেষে আসবে ২৯ সেপ্টেম্বর,
চারটি বছর হয়ে গেলো বরাবর।
পাপড়ি হয়ে সুবাস তোমার আসে না আর নাকের ডগায়,
কেনো এমন হলো,চলে গেলে কোথায়?
মনীষা:চল যেতে যেতে কথা বলি।
মেহেরুন: তাই করি।
এই বলে দু,জনে কোচিং এর উদ্দেশ্যে বের হলো।
মেহেরুন:কবিতাটা তোর কেমন লেগেছে?এর সারমর্ম কি বুঝলি?
মনীষা:আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। পড়ে খুব কষ্টে পেয়েছি। বিগত চারটি বছর অতিবাহিত হতে চলেছে অথচ উনার মন থেকে আজও ছোট বোন মুক্তাকে আলাদা করতে পারেনি।উনার অধিকাংশ কবিতায় দেখি মুক্তাকে নিয়ে আর্তনাদ।এই কবিতায় বুঝা যায় সামনে মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী।
মেহেরুন:শুধু সামনে নয় একদম দরজায় এসে কড়া নাড়ছে। এইতো ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তার চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকী। আমার মন বলছে,শশী ফুফি মুক্তা ফুফিকে নিয়ে এই সময় খুব অস্থির হয়ে আছে। নিশ্চিত কান্নাকাটি করছে। জানিস,মনীষা,আমি বারবার উনার কাছে মুক্তা হয়ে ফিরে আসি। অতি দুঃখের বিষয় হলো,তার স্থায়িত্ব হয় ক্ষণিকের।যখন শশী ফুফি স্বাভাবিক থাকে তখন আমি তার কাছে মুক্তা হয়ে থাকি।অস্বাভাবিক থাকলে তখন আমার কথা আর মনে থাকে না।উনি যেমন অসহায় হয়ে থাকে তেমনি আমাকে অসহায় করে রাখে। আমার মনের ভিতর শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা।যা আমি সইতে পারি না। আমার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে শশী ফুফির কি অবস্থা হয় ভাবতে গেলে কষ্টটা আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়।
মনীষা:তোর অন্তরের আত্মীয় হয়ে এতো কষ্ট সেদিক থেকে মুক্তা শুধু শশী ফুফির আত্মার আত্মীয় নয় রক্তের বাঁধন ও স্নেহের বাঁধনও বটে। তোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে,শশী ফুফির বুকে তার চেয়ে অজস্রগুণ বেশি কষ্ট বাস করে।
মেহেরুন:তা ঠিক।ফুফির কষ্টের তুলনায় আমার কষ্ট এক সমুদ্র জলের মাঝে এক ফোটা জল। আমার এই কষ্ট সহ্য হয় না অথচ ফুফি পাহাড় সম কষ্ট বুকে নিয়ে চলছে এগিয়ে।জানিস,মনীষা,শশী ফুফির একটি কবিতা বই প্রকাশ হয়েছে।
মনীষা:কখন,নাম কি?
মেহেরুন:অপেক্ষার প্রহর। যে বই নিয়ে শশী ফুফির অনেক আশা প্রত্যাশা ছিলো।২০১২ সালের ৩জানুয়ারী মুক্তা ফুফির জন্মদিন ফুফিকে সারপ্রাইজ দেবে। এই ভাবনায় বইটি লেখা হয়েছে শশী ফুফিকে নিয়ে মুক্তা ফুফির ডায়েরীতে লেখা অনুভূতি নিয়ে। নিয়তির কি নিষ্ঠুর বিধান। এই বিধানে আগামী জন্মদিন আসার আগেই ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তা চীর বিদায় নিয়ে গেলো। যার কারণে সে সারপ্রাইজ আর দেয়া হলো না। শশী ফুফির সেই লালিত আশা আকাঙ্ক্ষাকে অবশেষে ২০১৫ সালের একুশে বই মেলার অধর আংকেল এর সার্বিক তত্বাবধানে সৃষ্টি প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করলো মুক্তা ফুফির ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কাঙিখত অপেক্ষার প্রহর।
মনীষা:বইটা কি তোর কাছে আছে?
মেহেরুন:না,আমার কাছে নেই। শশী ফুফি বলেছে,উনার নিজ হাতে বইটি আমার হাতে তুলে দেবে। তাই শতো ইচ্ছার মাঝেও বইটি নেয়া হয়নি। আমি অনেকটাই জানি,এই কবিতা বইতে কি কবিতা আছে?
মনীষা:তোকে বা ফুফু দিবে আমি কই পাবো?
মেহেরুন:আগামী একুশে বই মেলায় ফুফির আরো কিছু নতুন বই প্রকাশ হবে।সেখানে এই বইটিও পাবি।
মনীষা:তুই বলছিস আগামী বই মেলা। তার মানে আরো প্রায় চার মাস। আর আমি চাই এখুনি বইটা পড়তে।অধর আংকেল কে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা কর। উনার কাছে থাকতে পারে।
মেহেরুন:খারাপ বলিসনে।দেখি অধর আংকেল কে একটা রিং দিয়ে।
মেহেরুন কল দিয়ে দেখে ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে রিং পরে কিন্তু রিসিভ হয় না। মন খারাপ করে মনীষাকে বলে-
আংকেল মনে হয় ব্যস্ত। ফোন রিসিভ করে না।
মনীষা:ধুত ছাই। এই পোড়া কোপালির কোপালটা খারাপ। যেই কিছু একটা চাই তখন তা হাতের কাছে থেকেও পাই না। শুন,কিভাবে নিবি জানি না। শুধু এইটুকু বলছি,যে করে হোক আমার অপেক্ষার প্রহর চাই,চাই। এই অপেক্ষার প্রহরে একটা কবিতা শুনা না।
মেহেরুন:কোনটা শুনাবো?
মনীষা:আমি কি জানি ওখানে কি কবিতা আছে? তুইতো জানিস। আচ্ছা,শশী ফুফিকে নিয়ে
মুক্তা ফুফির ডায়েরীতে প্রকাশ করা অনুভূতি নিয়ে কবিতাটি বল।
মেহেরুন:'আপু'কবিতাটি শুনবি?
মনীষা:আরে শুনা না তাড়াতাড়ি।
মেহেরুন:শুন তাহলে-
আপু
এই যে
আপু তুমি না খুব মিষ্টি
চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে মেলে দু,টো দৃষ্টি।
তোমার লোচন থেকে পড়ে কেনো
মাঝে মাঝে আষাঢ় শ্রাবণের বৃষ্টি?
জানিনা
তোমায় বিধাতা বানাইছে কোন মাটি দিয়া?
তোমারী সকল আচরণ ভাবে আমার হিয়া।
তুমি যে কতো ভালো
আমার জীবনে দিয়েছো একটু একটু করে আলো।
তোমায় পারবে যে চিনতে
পৃথিবী সম্বন্ধে পারবে সে বুঝতে।
যেমন তোমার চেহারা তেমন তোমার মন
দেখে যেনো মনে হয় সুবাস চন্দন।
আমি এমনি অবলা
বুঝিনা তোমার জ্বালা।
পারিনা তোমার মতো চলতে
চাই না যেনো নতুন কিছু জানতে।
আপু
তুমি ঠিক বলেছো
আমি দুষ্ট,সত্যি দুষ্ট।
আপু,আমি একটুও রাগ করিনি সত্যি
আমি নিজেকে নিজে বলি সত্যি তাই
তবুও তোমায় থেকে ভালোবাসা পাই।
মনীষা:অসাধারণ,অসাধারণ কবিতা। অসাধারণ বোনের প্রতি বোনের ভালোবাসার সুনিপুণ প্রকাশ। পোষা পাখির এই ভালোবাসা হারিয়ে শুধু শশী ফুফি নয়,পৃথিবীর যে কেউ পাগল হয়ে যাবে। এই মেহেরুন,আমি আবার বলছি,অপেক্ষার প্রহর বইটি আমি চাই,চাই। আবার ফোন দেয় অধর আংকেলকে। উনার কাছে না থাকলে জিজ্ঞাসা কর কোথায় পাওয়া যাবে।
মনীষার পিড়াপিড়িতে আবার অধর আংকেলকে কল দেয়। এবার নাম্বার ব্যস্ত দেখাচ্ছে। মেহেরুনের এই কথা মনীষাকে বলতে যাবে এমন সময় মোবাইল বেজে উঠে। চেয়ে দেখে অধর আংকেল।
মেহেরুন:আসসালামু আলাইকুম,আংকেল। কেমন আছেন?
অধর:ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো,তুমি কেমন আছো আংকেল?
মেহেরুন:জী আংকেল ভালো। আংকেল,ফুফির সাথে কথা হয়েছে। উনি কেমন আছেন?
অধর: না,আজকে এখনো হয়নি।গতকাল হয়েছে। কেনো, কোনো সমস্যা? তোমার সাথে কি কথা হয়েছে?
মেহেরুন: আমার কোচিংএ আসার একটু আগে কথা হয়েছে।
অধর:কি বলে?
মেহেরুন:উনিতো কবিতা আর মুক্তাকে নিয়ে ব্যস্ত। আমার সাথে উঁ আঃ করে কথা বলেছে।মনে হয় তখনি কবিতা লেখতে তবে মনটা খারাপ এটুকু বুঝতে পেরেছি।
অধর:মনতো খারাপ থাকারি কথা।এই মাসেই তো হারিয়েছে তার অন্তর আত্মাকে।হাজারো চেষ্টা করে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি ঐ ভাবনা থেকে। শশীর অপেক্ষার প্রহর কবিতা বইটি প্রকাশ হয়েছে।তুমি কি জানো?
মেহেরুন:জানি,আংকেল কিন্তু এখনো পাইনি।ফুফি নাকি আমাকে নিজ হাতে দেবে। আর আমি এই জন্যই আপনাকে ফোন করা। আমার বান্ধবী মনীষা এই বইয়ের জন্য পাগল হয়ে আছে।কোথায় পাওয়া যাবে,আংকেল?
অধর:প্রথম সংস্করণে অধিকাংশ বই বিক্রি হয়ে গেছে। আমার কাছে কয়েকটা আছে। কুরিয়ার এর একটি ঠিকানা দিও আমি পাঠিয়ে দেবো।
মেহেরুন:আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মোবাইলে এসএমএস করে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছে।
অধর:ভালো থেকো।
মেহেরুন:আপনিও ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ।
শশী স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে নীরব হয়ে শুয়ে আছে।লোচন দু,টি বৃষ্টি ঝরাচ্ছে।বৃষ্টি ঝরা লোচনে কিছুই দেখে না পৃথিবী।এমন সময় শশীর ফুফি জ্যোৎস্না বেগম ডাকতে লাগলো।শশী মা,ও শশী মা,কোথায় তুমি?এই অবেলায় শুয়ে আছো কেনো?খাওয়া দাওয়া কি করেছো?শশী তার কক্ষে প্রবেশ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।শশী নীরবতা দেখে আবার জিজ্ঞাসা করলো,খাওয়া দাওয়া কি করেছো?টেবিলে খাওয়ার আছে খেয়ে নাও।
শশী:আচ্ছা ঠিক আছে।
জ্যোৎস্না বেগমের ভয়ে একটু করে ভাত নিয়ে মুখে দিতে না দিতে ফ্যাল ফ্যাল করে কাঁদতে শুরু করলো।কান্নার আওয়াজ যেনো জ্যোৎস্না বেগমের কর্ণ ছুঁয়ে যাচ্ছে।বুঝতে পেরে জ্যোৎস্না বেগম ডাকলো-খাওয়া শেষে এদিকে এসো তবে খাওয়ার নষ্ট করবে না। আমার চোখে ঔষধ দেয়া হয়নি। চোখে ঔষধ দাও।শশী ঔষধের বাক্সটা নিয়ে চোখে ঔষধ দিতে গিয়ে তার লোচন থেকে এক ফোটা অশ্রু জ্যোৎস্না বেগমের কোপালে পরে। জ্যোৎস্না বেগম না বুঝে বললো,চোখের মধ্যখানে দাও।শশী নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,ঠিক আছে। জ্যোৎস্না বেগম বললো,চোখের অপারেশন করার পর থেকে আজ কতো দিন টিভির কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পারিনা।একটা গানের ক্যাসেট ছাড়ো গান শুনবো।
শশী ক্যাসেট প্লেয়ারটা চালু করলো। বেজে উঠলো-
ঐ দেখা যায় দয়াল চান আমার,বসে আছে হাতে বৈঠা নিয়া,
ওরে ইশারাতে ডাকে আমায়,হাত ইশারা দিয়া।
যাবো আমি প্রেম বাগানে গেয়ে সুখের গান,
গানের সুরে মাতোয়ারা হবেরে আমার প্রাণ।
আমি তোরে ভালোবাসি কতো আপন করে
দয়াল,কতো আপন করে।
এসো দয়াল আপন মনে আমার বাসরে,
তোরি সনে দেখা করবো আছি কেনো ঘুমাইয়া?
চরণ ধরবো আমি তোর কাছেতে গিয়া।
বাসর ঘরে সাজিয়েছি ফুলে ফুলে বাগান,
বুঝিস নারে দয়াল তুই,তুই যে আমার জান।
দ্বীনের আলোয় রাঙ্গিয়ে দিও মোর সুখের ঘরে,
শেষ বিচারে ঠেকলে দয়াল,জান্নাতে নিও আমারে।
জ্যোৎস্না বেগম:এমন গানতো আগে কখনো শুনি নাই।এই গান কোথায় থেকে এলো। অসাধারণ এক গান।শুনে প্রাণটা জুড়ে গেলো।
শশী:গানটা আমারি লেখা। এই গানে কণ্ঠ দিয়েছে আমাদেরি এক মুরিদান।
জ্যোৎস্না বেগম:জানতাম কবিতা,উপন্যাস লেখতে।বারণ তা না করার জন্য।এখন দেখছি গান লেখা ধরেছে। প্রশংসা করবো না বকা দেবো ভেবে পাচ্ছিনা। এতো নিষেধের সঃতেও যখন শুনো নাই তখন শুভ কামনা রইলো।
শশী:অসংখ্য ধন্যবাদ,ফুফু।
জ্যোৎস্না বেগম:এতো খুশি হয়ে যেওনা। যাও একটু বিশ্রাম নাও।
শশী:ঠিক আছে ফুফু। আপনিও একটু ঘুমান।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আঁধার নেমে এলো প্রকৃতিতে। ধীরে ধীরে নেমে আসে চারিদিকে নিস্তব্ধতা। এই নিস্তব্ধতায় শশীর বুকের ভিতর ভর করে মুক্তাকে নিয়ে হাহাকার। শশী দেখতে পাচ্ছে যেনো ছায়া সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুক্তা। বলছে যেনো,আমিতো সেই কবে মরেগেছি।কায় থেকে আমার প্রাণটা আলাদা হয়েছে কিন্তু তোমার রক্ত মাংস,শিরা-উপশিরার সাথে আমার সমস্ত অস্তিত্ব মিশে গেছে। তুমি মাঝে মাঝে তাই রূপ ধারণ করো আমার রূপে। মাটির সাথে যেমন আমার ঘর বসতি,তোমার সাথে তেমন আমার জ্বলে জ্যোতি। কুঁড়ে কুঁড়ে ভাবনাগুলো তোমায় ভেবে যায়। দিন থেকে রাতে,রাত থেকে দিনে।তোমার বর্ণটা তখন বিবর্ণ হয়ে যায়। কেউ তখন তোমাকে আর চিনে না।আমিতো সেই কবেই ইচ্ছে করে নিয়েছি বিদায়।ভোবা মূর্তি,প্রাণহীন মমি তাই পৃথিবীতে নাই।নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছো কেনো আমার প্রাণে?রঙ্গিন অবনী বেদনায় এতই ব্যথুক হবে কে জানে!আমিতো মরেই অমর হয়ে আছি।তোমার উপলব্ধি আর ভালোবাসা নিয়ে বাঁচি।সেই দিন তুমি বলেছিলে সারা জীবন আগলে ধরে রাখবে।
সব সময় আদর করে ইন্দু বলে ডাকবে।কথাগুলো শুনতে শুনতে শশীর ঘুম চলে আসে।