সমীরণে মন দোলে - দ্বিতীয় পর্ব ।। সৈয়দা আফরোজা মুন


৩নং

শরত এর বৃষ্টি বিঘ্নিত ভোর আকাশে মেঘের লুকোচুরি এবং বজ্রপাতে শশীর ঘুম ভাঙ্গে। আজকের এই ঘুম ভাঙ্গা প্রতিদিনের মতো করে নয়।কারণ আজকের এই দিনে শশী হারিয়েছে তার নয়নের মণি মুক্তাকে। যার মধ্য দিয়ে শশীর জীবনে ভেসে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত বিনা মেঘে ঝড়। সে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মুক্তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নের পৃথিবী। আজ দীর্ঘ চার বছর পরেও সেই দিনের প্রতিটি বেদনার রং জেনো সেই একই রং ধারণ করে আছে। রাতে ঘুমানোর আগে মুক্তার ছায়া বেশে আগমন এবং কিছু কথা বলে যাওয়া জেনো এখনো কানে বাজে। কি অপরাধ ছিলো মুক্তার?অপরাধ ছিলো আমার?যে অপরাধে অপরাধী ভেবে না বলে অভিমানে চিরতরে সবার মাঝ থেকে আড়াল হয়ে গেলো?কি অপরাধ ছিলো আমার?যে অপরাধের শাস্তি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে প্রতিটি ক্ষণে। তবে কি ভালোবাসাই অপরাধ? না হয় কেনো আমি এমন করে মুক্তার সাথে জড়িয়ে গেছি? এসব ভাবতে ভাবতে বুকের ব্যথায় অস্থির হয়ে চটপট করছে একাকী শশী। এই অস্থির ক্ষণে আকাশে ভেসে উঠে ফজরের আযানের ধ্বনি-আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর। শশী অজস্র কষ্টের মাঝে অতি কষ্টে বিছানা ছেড়ে তাড়াতাড়ি নামায আদায় করতে ওযু করার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করে। ওযু করে প্রথমে মুক্তার জন্য নফল নামায় আদায় করে তসবি হাতে তসবি পড়ে।ফজর এর ফরজ নামায আদায় করে কিছুক্ষণ যিকির আসকার করে করে।এমন সময় জ্যোৎস্না বেগমের ডাক শশী বলে-জী ফুফু আসতেছি।
জ্যোৎস্না বেগম:আজ তোমার সকল আন্টিদের বাসা মাংস রুটি দেবো।একটু ময়দা গুলিয়ে দাও।
জ্যোৎস্না বেগম মাঝে মাঝে তাঁর প্রতিবেশী বান্ধবীদের রান্না করে খাওয়ায়। তা দেখে শশী ভাবছে,আজ মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী তাই সবাইকে কিছু খাওয়াচ্ছে।নিপা রুটি তৈরী করছে আর ফুফু মাংস গরম করে শশীকে বলে,এগুলো বেড়ে দাও।নিপা সবাইকে দিয়ে আসুক।এমন সময় শাহানারা বেগম ফোন করে জ্যোৎস্না ফুফুর মোবাইলে।ফোন রিসিভ করে বললো-ভাবি,কেমন আছেন?
শাহানারা বেগম:বেশি ভালো নেই।আজ মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী। মিলাদ হবে,হুজুরের ভাতের আয়োজন করতে মাংস ধুতে গিয়ে পুকুর ঘাটে পড়ে গেছি।শশী কি করছে?কেমন আছে?তাকে কল দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।
জ্যোৎস্না বেগম শশীর দিকে তাকিয়ে বললো-দেখিতো প্রায় সময় কথা বলে।আমিতো মনে করতাম আপনার সাথে কথা বলেন। এই নেন,শশীর সাথে কথা বলেন।
শশী মোবাইলটা হাতে নিয়ে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।ফুফু চেয়ে আছে দেখে তাড়াতাড়ি শশী মোবাইলটা কানে দিয়ে বলে-হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।
শাহানারা বেগম:ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো?
শশী নীরব হয়ে আছে।শশীর নীরবতা দেখে শাহানারা বেগম আবার বললো-বাড়িতে কবে আসবে?শশী জ্যোৎস্না বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো-সামনে পূজার বন্ধে বাড়িতে আসবো।
শাহানারা বেগম:ঈদের বন্ধে এসো নাই কেনো?
শশী মনে মনে ভাবলো,২৯ তারিখে মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী ৩০ তারিখে স্কুল খোলা। ওখানে গিয়ে আমি কি স্বাভাবিক থাকতে পারবো?শশীর চুপ থাকা দেখে শাহানার বেগম আবার বললো-স্কুল কবে খোলা। শশী ক্ষীণ কণ্ঠে বলে-আগামী কাল স্কুল খোলা।এই বলে শশী মোবাইলটা কেটে দিলো।মোবাইল রেখে শশী বাথরুমে ডুকে অনেকক্ষণ গুমরে গুমরে কাঁদলো।দু,চোখে আয়নার স্কীনে দেখেছে জেনো,মুক্তা বলছে-কেনো এতো কাঁদছো?আমিতো আছি তোমার পাশে।তোমার কায়ে।আয়নাতে চেয়ে দেখো,তোমার লোচনের মধ্যে আমার আঁখি।নিজেকে একটু সামলে নিয়ে ভাবনাকে আড়াল করার জন্য ড্রয়িং রুমে এসে টিভি অন করে শশী।প্রচণ্ড লেখার ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও অধরের বারণের কারণে লেখছে না কোনো কিছু।ভাবছে বসে,অধরকেও বলবো না আজ আর ফেইস বুক কবিতা লেখে দিতে।কারণ কবিতার ভাষা হারিয়ে গেছে।২০১১ সালে এই সময় রুপালী এসেছিলো আমার কাছে। সে দিন এই সময়ে মুক্তার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি। আজ ঠিক ঐ সময় এগারো সালের মতো আজ তার আগমন। আজ এসেছে কলেজে যাওয়ার জন্য।মনের মধ্যে মোড় ঘুরে গেলো,কলেজে যাবো না।আমার চোখের ভাষা রুপোলী বুঝতে পেরে বললো-শশী,তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও।ইন্টার্র্নিতে ভর্তি হওয়ার সময় যে কাগজ পত্র রয়ে গিয়েছিলো আজ তা দেবো।
শশী:আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।একটু শুয়ে থাকবো।আজ কলেজে যাবো না।
এই কথা শুনে জ্যোৎস্না বেগম বললো-তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে যাও।আসার সময় আমার জন্য ডায়াবেটিকস হাসপাতাল থেকে ঔষধ নিয়ে আসবে।আজ জাতীর হার্ট দিবস।হাসপাতালে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন আছে।
শশী রেডি হয়ে রুপালীকে নিয়ে কলেজে চলে গেলো।কলেজ থেকে ফেরার পথে ডায়াবেটিকস হাসপাতাল থেকে ঔষধ কিনে বাসায় ফেরার পথে রুপালীকে বলে-কৈ খাওয়ার আয়োজন তো দেখলাম না।
রুপালী:আরে ফুফু দুষ্টুমি করেছে আর কি?চলেন আজ একজনের কাছে যাবো।
শশী:কোথায়?কোন সে জন?
রুপালী:আপনি তাকে ভালো করে চিনেন?গেলে আপনাকে দেখে অনেক খুশি হবে।আপনারও ভালো লাগবে।
শশী:আহা বলোনা সে কে?
রুপালী:আমার উপর কি আপনার আস্থা নেই?
শশী:শতো ভাগ আছে।
রুপালী:তাহলে প্রশ্ন না করে চলুন।
শশী:আচ্ছা ঠিক আছে।
রুপালী:আজ আমরা যে বাসায় যাচ্ছি। ওখানে আমাদের মোহছেনা আপু আছে।
শশী:হোমিওপ্যাথিক এর মোহছেনা আপু?
রুপালী:জী।
কথায় কথায় বাসায় এসে উপস্থিত হয় দু,জনে। দু,জনকে এক সাথে দেখে মোহছেনা আপুতো মহাখুশি। আরে শশী,তুমি এখানে বিশ্বাস করতে পারছিনা।
রুপালী:বিশ্বাস না হলে ছুঁয়ে দেখেন।
অতি কষ্টে শশী সালাম বিনিময় করে।
মোহছেনা আপু সালামের উত্তর নিয়ে দু,জনকে কেমন আছে জানে চায়।
রুপালী:আমরা ভালো আছি।আপনি?
মোহছেনা:আমিও ভালো আছি। কিন্তু শশী ভালো নেই তা তার চেহারায় বলছে। শশী,তোমার এই অবস্থা কেনো? তোমার কি শরীর খারাপ?
রুপালী:শশীর শরীরের চেয়ে মন বেশি খারাপ। আজ ওর ছোট বোন মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী।
মোহছেনা:শশী,কথাটা কি সত্যি?
শশী:জী,আপু।
মোহছেনা:এইটা ঠিক নয়,শশী।জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে।এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। এই নিয়মকে চাইলে কেউ ভাঙ্গতে পারবেনা। আর তুমি বোনের ভাবনায় নিজেকে এভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছো যা একদম উচিত নয়। যে নেই তার কথা ভেবে এভাবে নিজেকে ধ্বংস করো না।
এমন সময় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে শশী বলে-আপু,শিশুর কান্নার শব্দ পাচ্ছি।কার বাচ্চা?
মোহছেনা:রুপালী,তুমি কি শশীকে বলো নাই?
রুপালী:না,বলি নাই,আপু। তাকে সারপ্রাইজ দিতে এই না বলা।
মোহছেনা:আপুর মেয়ে।
শশী:আপু.ঐ রুমে চলেন।আমি একটু দেখবো।
মোহছেনা:চলো যাই।
শশী:খুব সুন্দরতো,আপু।আমি একটু এখানে
বসি।
মোহছেনা:কি খুব মায়া হচ্ছে?
শশী:জী,আপু।
মোহছেনা:তাহলে তুমি এখানে থাকো। আমি রুপালীকে নিয়ে রান্নাটা শেষ করেনি।
শশী:ঠিক আছে,আপু।
রুপালী,মোহছেনা আপু রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে শশী মুক্তার ভাবনায় ব্যস্ত। আজ মুক্তার মৃত্যু বার্ষিকী।এই সময়ে পেলাম এক নব জাতিকা শিশুকে। এই জাতিকার মাঝে কি মুক্তার পুনর্জন্ম হয়েছে?এমন ভাবনায় গভীর মগ্ন হয়ে নব জাতিকার কপালে একেঁ দিলো আশীর্বাদের এক নিদর্শন।
শশীর ছোট বাচ্চার প্রতি এতো ভালোবাসা যা দেখে সূচনা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে,বাচ্চার আজ যে ভালোবাসা দেখলাম,বিয়ের পরে নিজের বাচ্চার জন্য এমন ভালোবাসা থাকবে কিনা বিধাতা জানে? তবে বিধাতার কাছে প্রার্থনা,নিজের বাচ্চার প্রতি জেনো এই ভালোবাসা আরো অজস্রগুণ হয়।
শশী:আপু,কিছু ভাবছেন কি?
সূচনা: না,তেমন কিছু না।
শশী:আপু,তেমন কিছু না ঠিক আছে কিন্তু কিছু একটা ভাবছেন,এটাওতো ঠিক।
সূচনা:তা ঠিক আছে।সত্যি বলতে কি,ভাবছি তোমাকে নিয়ে।
শশী:কি ভাবছেন?
সূচনা:ভাবছি,বাচ্চার প্রতি তোমার এতোই ভালোবাসা। যা ভাবতে খুব ভালো লাগছে। বিধাতার কাছে চাইলাম,এই ভালোবাসা তোমার বাচ্চার প্রতি অজস্রগুণ হয়ে অটুট হয়ে থাকুক।
শশী:আপু,জানিনা,বিধাতা কোপালে কি রেখেছে?
সূচনা:এমন মনের মানুষের বিধাতা সব সময় মঙ্গল করে।
নাস্তা নিয়ে মোহছেনার আসার সময় মঙ্গল শব্দটা কানে বাজে তাই মোহছেনা বলে-কার মঙ্গলরে?
সূচনা:শশীর মঙ্গলের কথা বলছি।
মোহছেনা:ওর প্রতিতো আমাদের সবার মঙ্গল কামনা। বিধাতা জেনো সব সময় তাকে সুখে রাখে।এসো যে অনেক ক্ষণ হয়েগেছে। এবার একটু নাস্তা করো।
শশী:একটু মিষ্টি চানাচুর মুখে দেবো আর কিছু নয়,আপু।
মোহছেনা:এবার কিন্তু লাঠি পেটা করা হবে। তাড়াতাড়ি সরবত খাও। তারপর ফল খাবে,না হয় কিন্তু খবর আছে।
শশী: Please,আপু।
মোহছেনা:আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।দেখতে চাই,একটু,একটু করে সবটুকু খেয়েছো।
সূচনা: বড়দের কথা মেনে চলতে হয়।
শশী:চেষ্টা করবো,আপু। একটু অতিরিক্ত খেলে বুমি হয়ে যাবে। তার চাইতে যতোটুকু সম্ভব খাচ্ছি। রুপালী কই?
মোহছেনা:ফ্রেস হয়ে আসতেছে।
এমন সময় হাতে ব্যগ নিয়ে একজন মাঝ বয়সী মহিলার আগমন ঘটে। সাথে একটা বারো,তেরো বছরের মেয়ে।
মোহছেনা:শশী,তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। এই হচ্ছে আমাদের বেয়াইন অর্থাৎ আপুর ননদ। বেয়াইন,এই হচ্ছে শশী,ও রুপালী। আমার আদরের ছোট বোন।দু,জনে এবার হোমিওপ্যাথিকে মেধা তালিকায় পাশ করেছে।
শশী:আপু,পরিচয়তো হয়ে গেলো। এবার সবাই মিলে এক সাথে নাস্তা করি।এই বেয়াইন,আসুন,আসুন।
সবাই একত্রে নাস্তা করছে এমন সময় মাইকে যোহরের আযান শুরু হলো।হাল্কা একটু নাস্তা করে শশীর নামায আদায়ের প্রস্তুতি দেখে সেই বারো বছরের অন্যজন বলে-আন্টি,আমিও তোমার সাথে নামায আদায় করবো।
শশী:খুব ভালো।এসো এক সাথে নামায আদায় করি।
এই বলে দু,জনে পাশের রুমে গিয়ে নামায আদায় করে। নামায শেষে অন্যজনকে শশী জিজ্ঞাসা করে-অন্যজন,তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
অন্যজন:৬ষ্ঠ শ্রেণীতে।
শশী:বাহ্।তোমার রোল নং কতো?
অন্যজন:তিন।
শশী:আগামীতে সপ্তম শ্রেণীতে এক নাম্বারে আসতে পারবেনা?
অন্যজন:চেষ্টা করবো।
শশী:এইতো খুব ভালো মেয়ে।তুমি কি সব সময় নামায আদায় করো?
অন্যজন:প্রায় করি।স্কুলে থাকলে অনেক সময় পারি না।
শশী:কেনো?
অন্যজন:কমন রুমে ঐ পরিবেশ নাই।
শশী:ও আচ্ছা। বাড়িতে এসে কাযা পড়ে নিও।
অন্যজন:আগামী দিন থেকে তাই করবো।
শশী:Thank you.
অন্যজন:Well come.
শশী:বাহবা।একটি কবিতা শুনবে?
অন্যজন:হ্যা,শুনবো।
শশী:কেমন কবিতা শুনবে?
অন্যজন:যেকোনো কবিতা।
শশী:শুনো,তাহলে-
নিঃসীম অন্ধকার
মম হৃদয় স্পন্দন বন্ধ হয়ে আসে,
নেইতো মোর কেউ পাশে।
চারিদিকে কষ্টের হাহাকার,
মন বলে আমি কার?
নিঃসীম অন্ধকার আজি,
কত রাত একা একা জাগি।
নিঃশব্দে একেলা নির্জনে,
অতীতের কষ্টগুলো পড়ে মনে।
হৃদয়ের কম্পন কাঁপে থরথর,
অন্তরটা হয়ে গেল তাই ঝরঝর।
আজও পাইনি মোর শান্তি নিকেতন,
কাঁদে মন তাই সারাক্ষণ।
মরুভূমির মতো হলো মম বালুচর,
হারিয়ে গেছে মোর আপন ঘর।
সবাই হয়ে গেলো কেন যে পর?
হৃদয়ের কোণে লুকানো অনিদ্র আত্মার কান্না,
অন্তরের মাঝে বয়ে গেছে দুঃখের বন্যা।
অন্যজন:খুব সুন্দর হয়েছে। কবিতার লেখক কে,তাতো বলেননি,আন্টি?
শশী:লেখক নয়,লেখিকা অহনা অহমিকা শশী।
অন্যজন মুখে আঙ্গুল দিয়ে একটু ভেবে বলে- শশী,শশী মানে আপনি।
শশী:হ্যাঁ,আমি।
অন্যজন:আপনি কবিতা লেখেন!কি মজা,কি মজা।আপনার মনে কি অনেক দুঃখ?
এই কথা শুনে শশীর চোখে জল এসে টলমল করছে।
অন্যজন:শুনেছি,যারা কবিতা লেখে তার খুবই ভদ্র।আপনিও তাই।ভদ্র মানুষদের চোখে জল আসতে নেই।তাদের চোখে জল এলে,তারা হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়লে,অপরকে পথ দেখাবে কি করে?আন্টি,তোমার দুঃখকে কবিতার খাতায় রেখো,জীবনের পাতায় নয়।
এমন সময় মোহছেনা এসে ডাকে-শশী,এই শশী,টেবিলে ভাত নিয়ে এসেছে। এসো সবাই মিলে ভাত খেয়ে নিই।
শশী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ স্বরে অন্যজনকে বলে-চলো,ভাত খেতে ডাকছে।
অন্যজন:কথা বলতে,বলতে খিধার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।মনে করিয়ে দিয়ে ক্ষুধাটা দ্বিগুণ করে দিলে,আন্টি।
শশী:চলো,সবাই বসে আছে। টেবিলে গিয়ে পেট ভরে খেয়ে নিও।
শশী আসতে দেরি দেখে এবার রুপালী ডাকতে উঠে দাঁড়ালো।শশীর চোখে চোখ পড়তে রুপালী বুঝতে পারলো শশী কান্না করেছে। শশী এসে নীরবে মোহছেনা ও রুপালীর মাঝখানের চেয়ারে বসেছে।
মোহছেনা:শশী,আবার মন খারাপ করেছো কেনো?আমি না তোমাকে বারণ করেছি।
শশী:কেউ নাতো।
মোহছেনা:তোমার চোখে মুখের বিষণ্ণতার চাপতো তাই বলছে।এই সব দূঃচিন্তা বাদ দিয়ে নিজেকে সাজাতে শিখো,ভালোবাসতে শিখো।এই বলে শশীর প্লেটে ভাত আর মাংস নিয়ে দেয়।
গরু মাংস শশীর প্রিয় খাবার অথচ এই খাবার তার সামনে থেকেও তেমন কোনো লোভ জাগছেনা। আজ জেনো তার সমস্ত কিছু লোভ পেয়েছে মুক্তার স্মৃতির কাছে। এই স্মৃতির কাছে আজ সব স্মৃতি আড়াল হয়ে গেছে।
মোহছেনা:কি বাচ্চা ছেলের মতো টিপে টিপে মুখে লোকমা দিচ্ছো।
সূচনা:শশী,আর একটু সবজি নেবে?
শশী: না,আপু। এইটুকুই যথেষ্ট।
অন্যজন:আমি বেশি করে খাওয়ার জন্য শশী আন্টি অল্প খাচ্ছে।
অন্যজনর কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো।
মোহছেনা:শশী,অন্যজনর কথা কি ঠিক?রুমের ভিতর দু,জনে বসে বসে কি এসব নিয়ে কথা হয়েছে?
শশী:অন্যজন দুষ্টুমি করছে।
সূচনা:খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেই। আগে খেয়ে নিই। তারপর সবাই মিলে গল্প করবো।
এদিকে অধরের অস্থিরতা কাটছে প্রতিটি ক্ষণ। সকাল থেকে অন্যে বার মোবাইলে ফোন দিয়ে শশীকে পাওয়া যাচ্ছে না।জানি না শশী কেমন আছে?কি করতেছে?আজ তার ভালো থাকার কথা নয়।তবে কি শশী কান্না করতেছে? কান্না করতে করতে নাকি ঘুমিয়ে গেছে?না হয় কেনো এতবার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না?
এতো চেষ্টা করলাম তবুও মুক্তার ভাবনা থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। পারলাম না তাকে ভালো রাখতে। ও ভালো না থাকলে আমি যে ভালো থাকতে পারিনা। তা সে জানে এবং এটাও জানে তার ফোন রিসিভ না হলে আমি অস্থির হয়ে যাই। সেও অপেক্ষায় থাকে আমি কখন ফোন করবো। অথচ আজ এমন অসহায় দিনে আমার ফোনের কোনো প্রতি উত্তর পাচ্ছিনা।চেয়েছিলাম,আজ সারাক্ষণ মোবাইলে কথা বলে তাকে হাঁসি খুশিতে মাতিয়ে রাখবো।নাকি.শশী জেনে শুনে ফোন ধরছে না,আজ এই ব্যথার দিনটিকে শুধু মুক্তার করে রাখতে চায় বলে আমার ফোন রিসিভ করছে না।এতো কিছুর মাঝেও পাগলীর পাগলামি বন্ধ করতে পারলাম না। এমন ভাবতে ভাবতে মেহেরুন এর কথা মনে পড়ে গেলো।তাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করি,শশীর সাথে কথা হয়েছে কিনা?এই বলে অধর মেহেরুন এর মোবাইলে কল দিলো।
অধর:হ্যালো,মেহেরুন।
মেহেরুন:আসসালামু আলাইকুম,আংকেল।
অধর:ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো,মেহেরুন?
মেহেরুন:ভালো নেই,আংকেল।
অধর:ভালো না থাকারি কথা।
মেহেরুন:ফুফির সাথে কি কথা হয়েছে?
অধর:না,সকাল থেকে অনেক বার রিং দিয়েছি কিন্তু কোনো খবর নাই এখনো পর্যন্ত তাই তোমাকে রিং দেওয়া। তোমার সাথে কি কথা হয়েছে?
মেহেরুন:না,আংকেল।আমি সকালে একবার রিং দিয়েছিলাম।এখনো কোনো সাড়া শব্দ নেই। সেই তখন থেকে অপেক্ষায় আছি,কখন ফুফি কল করবে?
অধর:মন খারাপ করো না।হয়তো ঘুমিয়ে আছে মোবাইল সাইলেন্স করে।
মেহেরুন:আংকেল,চিন্তা করতে চাই না তবু এসে যায়। আমি নিশ্চিত ফুফি ঘুমায়নি। ঘুমের ভান ধরে শুয়ে শুয়ে কান্নাকাটি করছে।
অধর:হয়তো তাই হবে।তোমার কাছে কি রুপালীর মোবাইল নাম্বার আছে?
মেহেরুন:না,আংকেল।
অধর:কি যে করি?কিভাবে খবর নেওয়া যায়?
মেহেরুন:উপায় আছে কিন্তু ঐ নাম্বারে ফোন করা যাবে না।
অধর:কিভাবে?
মেহেরুন:বড় মামা থেকে জ্যোৎস্না নানুর নাম্বার নিতে পারি কিন্তু ঐ নাম্বারে ফোন দিলে কি না কি মনে করে।তার চাইতে একটু অপেক্ষা করাই উত্তম হবে।
অধর:কি আর করা? ঐ দিকে তুমি অপেক্ষায় থাকো।তোমাকে ফোন করলে আমাকে ফোন দিতে বলিও।এইদিকে আমি অপেক্ষায় আছি।আমাকে ফোন দিলে আমিও তোমার কথা বলবো।
মেহেরুন:আচ্ছা,আংকেল।
অধর:ভালো থেকো।
মেহেরুন:আল্লাহ হাফেজ।
মেহেরুন এর সাথে কথা শেষ করে অধরের অস্থিরতা জেনো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।শশীর কি হয়েছে?কোনো বিষম সমস্যা হয়ে গেলো নাতো?আজ 'আত্মার ভিতর আত্মা'কাব্যগ্রন্থের শেষ বিদায় কবিতাটি লেখার কথা ফেইস বুকে।এসব প্রশ্নের উত্তর মনের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর আসছেনা।
দুপুর খাওয়ার শেষ করে শশী ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে তিনটা বেজে গেছে।রুপালী ডেকে বলে-
এই রুপালী,সাড়ে তিনটা বেজে গেছে।ফুফু বাসায় চিন্তা করবে।আর দেরি করা ঠিক হবে না।
রুপালী:দশ পনেরো মিনিট বিশ্রাম নেন।এরপর বের হবো।
মোহছেনা:ভাত খাওয়ার পর পর হাঁটতে নেই।এতে শরীর খারাপ করবে।একটু বিশ্রাম নাও।
সূচনা:আমার মেয়েটাকে আর একটু দেখে যাবে না।
শশী:এইতো লোভ জাগিয়ে দিলেন।চলেন,একটু আদর করে আসি।
সূচনা:চলো।
শশী বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে অনেক ক্ষণ নীরব হয়ে থাকে।এই নীরবতার মাঝে দু,চোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু ঝরে যাচ্ছে। সূচনা বুঝতে পারছে,শশী কান্না করছে।এই কান্না শুধু তার রক্তের বন্ধন হারানোর কান্না নয়,আত্মার সাথে আত্মার মিশে যাওয়ার কান্নাও বটে। এমন সময় রুপালীর ডাকে শশী পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। ওড়নার আঁচলে চোখ মুছে বাচ্চাটির কোপালে একটি চুমু দিয়ে সূচনাকে বলে-
আপু,আজ উঠি।
সূচনা:এভাবে ভেঙ্গে পরতে নেই।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করো।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মোহছেনা:চা পান করে তারপর যাও।
রুপালী:দুঃখিত,আপু।এখন আর চা পান করবো না।আজ উঠা যাক।
শশী:আপু,আজ আমরা আসি।ভালো থাকবেন।
অন্যজন:আবার কবে দেখা হবে,আন্টি?
শশী:ওরে পাগলী মেয়ে,খুব শীঘ্রই দেখা হবে।মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবে।আল্লাহ হাফেজ।
অন্যজন,মোহছেনা,সূচনা একযোগে বলে,আল্লাহ হাফেজ।আবার এসো।
রুপালী:আপু, ভালো থাকবেন।খোদা হাফেজ।
মোহছেনা:তোমরাও ভালো থেকো।
শশী আর রুপালী মোহছেনা আপুর বাসা থেকে বের হয়ে দেখে বাইরের আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা হয়েছে তাই দু,জনে কথা বলতে,বলতে বাসা এসে পৌঁছে বিকাল পাঁচটায়।রুপালী শশী ও ফুফুকে বলে নিজের বাড়ির পথে পা বাড়ালো। শশী পোশাক পরিবর্তন করে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অধরের অনেকগুলো কল।মেহেরুনও কল দিয়েছে। অধর কে কল দিতে গিয়ে আবার থমকে যায়। না,এখন নয় আরো একটু পরে দেবো। এই বলে শশীর মন ভাঙ্গা ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় একটু বিশ্রাম দিতে শুয়ে পড়ে।





৪র্থ
পড়ন্ত বিকেল।পশ্চিমাকাশে আলো আঁধারের লুকোচুরি।দিনের কর্ম ব্যস্ততা ছেড়ে কৃষক ঘরে ফিরে।রাখালিয়া বাঁশি বাজাতে বাজাতে দলছুট গরুর বহরের পিছু হাঁটছে। প্রকৃতির এমন লুকোচুরির মাঝে দিনের পরাজয় বরণ করে আঁধারের কাছে। এই আঁধার জেনো নীরবে ভর করে শশীর মনে।দুঃখে ভারাক্রান্ত মন আজ মুক্তাকে নিয়ে কিছুটা লেখবে এই ভাবনায় খাতা কলম নিয়ে টেবিলে বসে।সাদা কাগজে সাজায় মুক্তাকে নিয়ে আপন মনের ভাবনা। শিরোনামে লেখা-
*খোলা চিঠি*
কষ্টের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বেদনার পত্র সাজাই।ছন্দগুলো হারিয়ে গেছে,কোথায় গেলে পাই?
পরবার্তা শুরু হলো,গোছায়না পত্রের কথা।চিঠিখানি পড়ে আবার পেয়েও নাকো ব্যথা।তোমার জন্য সাজাই আমি ছন্দ দিয়ে পত্র।আজ হয়েছি আমি তোমার লেখা ছাত্র।পত্রখানা লেখতে গিয়ে ভাব যে আসে কতো?চিঠির উত্তর দিও তুমি হয়ে একটু নতো।লিখছি লেখা তোমার কাছে,কথা আছে যতো।পত্রখানি পড়ে তুমি জল পেলোগো ততো।কেনো তুমি এমন করলে,প্রশ্ন জাগে মনে?সবাই তোমায় ভুলে গেলো,মোর হাতটি ভাবে প্রতি ক্ষণে।তোমায় নিয়ে ব্যস্ত আমার দু,টি আঁখি।হাতে কলম নিয়ে তোমায় লেখার ভাষায় ডাকি।উত্তর পাওয়ার আশায়,থাকি কতো কবিতার ভাষায়।দিবা রাত্রি যাচ্ছে আমার উত্তর পাওয়ার আশায়।কতো করে বলেছিলাম,থেকো আমার পাশে।তোমায় নিয়ে সারাক্ষণই কান্না আমার আশে।পত্রখানি পৌঁছে দিবে তোমায় সমীরণে।জানিনা তোমার আরো কাছের মানুষগুলোর আছে কিনা মনে।কতো কথা বলেছিলে আপনও ভাবিয়া।কে কতোটুক তোমায় ভাবছে,তোমার জীবন নিয়া।বড় অদ্ভুত লাগলো আমার,তোমার আপন জনার আচরণে।এমন করে ভুলে গেলো,পড়ে না মনে যখন তখন। ভালোই আছে,করছে ভালো মন দিয়ে সংসার।তোমায় গলায় পরালো না,পরিয়েছে বউয়ের গলায় হার।সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেও হবে না সে মুক্তা।তোমার ব্যথা বুঝেনি যখন,কেউ বুঝবেনা তার ব্যথা।বিধির কাছে আরাধনা,তাদের বিচার হোক।দেখায় জেনো মাঝে মাঝে তোমার রূপের ঝলক।নীল আকাশে নক্ষত্রকে তোমায় ভেবে বলি আপন মনে কথা,মেঘের আড়াল হলে জেনো তুমি হারিয়ে যাও,তোমায় না দেখতে পেয়ে পাই মনে ব্যথা।
অনেক ক্ষণ ধরে জ্যোৎস্না বেগম শশীকে ডাকছে।কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিছানা ছেড়ে শশীর কক্ষে প্রবেশ করে।এসে দেখতে পেলো, টেবিলে খাতা কলম নিয়ে চেয়ারে বসে আছে।বললো,আছর নামাযের পর পড়ার টেবিলে বসতে নেই।উঠে বাহিরে গিয়ে একটু দোলনায় বসো। মনটা ভালো লাগবে। এমন ভাবে কক্ষের ভিতর বসে থাকো,মনে হয় নতুন বৌ।বাসার মধ্যে এভাবে থাকলে হার্টের সমস্যা হয়ে যায়।চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকলে বেশির ঐ সমস্ত মানুষের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।
শশী কথাগুলো নীরব হয়ে শুনছে আর কান্না মাখা কণ্ঠে বলছে,চলেন ফুফু,আপনার চোখে ঔষধ দিতে হবে।
জ্যোৎস্না বেগমের চোখে ঔষধ দিয়ে শশী বাহিরে গিয়ে দোলনায় বসে।দোলনায় বসে আকাশ পানে তাকিয়ে দেখে,কালো মেঘগুলো জমে আছে ছড়িয়ে,ছিটিয়ে।সেই মেঘে ঝাপসা হয়ে জেনো মুক্তা বসে আছে।দু,হাত বাড়িয়ে ডাকছে।আয় শশী আয়,আমার কাছে আয়।আমার পাশে থেকে আমার মতো চায়।কতো মানুষ আসে যায় কবরের পাশে,আমি থাকি শশী তোর আসে।ভাঙ্গা হাতে মালা আর গাঁথা হয় না,তাই কি তোর ছোঁয়া আমার কাছে আসেনা?আমিতো বেশ যাই তোর কাছে।আনাগোনা করিতো তোর পাশে পাশে।তুই ছাড়া কি আর ভালো লাগে বল?হাতটি ধরে বলছি,চাঁদপুর থেকে শিবপুর চল।
নাকি,তোর মনটা আমায় ছাড়া একা থাকতে চায়?
শশী বলে উঠলো-না,না,না।
গুনগুন করে দোলনায় হেলে দোলে গাইছে-
আমার মৃত্যু যদি আসে নাকের ডগায়,
তবু বলবো,আমার প্রাণটা তোমার কাছে যায়।
আমি তোমায় নিয়ে ভাবি সারাবেলা,
এই ভাবনাতে থাকে শুধু কবিতারি খেলা।
এমন মানুষ কোথায় পাবো দেখতে তোমার ন্যায়,
নিশি রাতে হাত বাড়িয়ে ডাকি তোরে আয়।
বাঁধন ছেড়ে চলে গেলি কেনো অবেলা,
তাইতো দিন যাচ্ছে আমার,যাচ্ছে অবহেলা।
সারাক্ষণই ভাবনার মাঝে তোরি ঘ্রাণ পায়,
আসবি তুই যে আমার পাশে,চোখ দু,টি যে চায়।
তুই বিহনে মনে কতো জ্বালা,
তোরে ছাড়া বসে আমার বিরহেরই মেলা।
এই মেলাতে বসে বসে কাটে আমার ক্ষণ,
বুঝলি নারে বন্ধু আমার,তুই যে আমার জীবন।
এমন সময় মাগরিবের আযান ভেসে এলো।আযান শুনে শশী নামায আদায় করতে দোলনা ছেড়ে রুমে চলে গেলো। এসে নামায আদায় করে তসবি পড়ে অনেক ক্ষণ নীরবে কাঁদলো।এই কান্নার আহাজারিতে তার একটাই বাসনা,মুক্তা জেনো বেহেস্তের বাগানে আরতি হয়ে দোলে আর বলতে লাগলো-
অবনীর বুকে আজ আমি একা,
কখনো পাবো না মুক্তা তোমার দেখা।
বড্ড বেশি মনে পড়ে আজ তোমাকে,
কেনো গেলে চলে,বলোনি আমাকে?
আজকাল এতো বেশি করো জ্বালাতন,
নিশি রাতে স্বপ্ন দেখে কাঁদে এই মন।
দূর আকাশের তারা হয়ে দূর গগনে থাকো,
ওখান থেকে কেমন করে আমায় তুমি দেখো?
কল্পনাতে তোমায় আমি এমন করে দেখি,
ইন্দু-মুক্তা বলে আমি তোমায় শুধু ডাকি।
চাঁদের কণা,ইন্দু তুমি দীপ্তি ছড়াও বেশি,
চোখের জলে,ঠোঁটের কোণে আমার চাপা হাঁসি।
প্রার্থনা করি বিধাতার কাছে,
প্রভু রাখে জেনো তোমাকেই পাশে।
নামাযের বিছানা ছেড়ে অনেক কষ্টে খাটের উপর উঠে বুকে বালিশ চেপে ধরে অনেক ক্ষণ কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে বিধাতাকে বলছে,ওগো প্রভু,ওগো দয়াময়,ওগো রহিম,ওগো রহমান,তুমি কেনো নিয়ে গেলে আমার জান?এই শূন্য খাঁচায় পরিপূর্ণ হয়ে নেই যে আমার প্রাণ।ওগো অন্তর্যামী,তুমি জগতস্বামি।যদি তাই হয় কাঠগড়ায় কেনো আনতে পারোনা আসামী?হীরার চেয়েও দামী মানুষের জীবন।সেই জীবনকে ধ্বংস করে এনে দিলে মরণ।আজ কারো স্মরণে না থাকলেও আমার হয় স্মরণ।এই কেমন বিচার? এই কেমন ধরণ?পাখি,তুমি করলে মৃত্যু বরণ।তোমার মরণের পর আমার ডানা আর মেলে না!মৃত্যুর মুখে তুমি আমায় কাছে টেনে নাও।কাছ থেকে হয়তো চাওয়া হয়নি তোমার তাই কি যাওয়া হয়নি আমার?শুনেছি মৃত্যুর পূর্বে করেছিলে যিকির।পড়েছিলে পাঁচ কলেমা।সেই কথাগুলো রেখেছি জমা।আমার মনের কোণে সদাই তোমায় নিয়ে জল্পনা।দিবা রাতি করি তাই তোমায় নিয়ে কল্পনা-
সেই ক্ষণে উঠান জুড়ে শুয়েছিলে তুমি,তখন ছিলো ২০১১ সাল,
এই ক্ষণে কাঁদি আমি,তুমি যে আকাল।
ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছিলে তুমি কবর শয্যায়,
মাটিতে লুটিয়ে কাঁদি আমি,আমার যে প্রাণ যায়।
সেই দিন এক মুঠো মাটি দিতে পারেনি,যে তোমায় বেশি করতো আদর,
দু,টি ফুল ছিলে তোমরা,ভালোবেসে দিতো তোমার গায়ে চাদর।
হয়তো বলেছিলো তোমায় বিষাক্ত কথা,
সেই কথা শুনে তুমি পেয়েছিলে ব্যথা।
আজ কি তোমার কায়ে বোধ হয় ব্যথার যন্ত্রণা?
কতো অভিমানে প্রকাশ করতে তোমার বাসনা।
শেষ বিদায়ে শিবপুর থেকে চাঁদপুর আসার সময় উঠিয়ে দিয়েছিলে ট্রেনে,
বলেছিলে তুমি আবার নিয়ে আসবে,হলো না তা,গিয়েছি আমি তোমার মৃত্যুর সংবাদ জেনে।
কাঁদছিতো,কাঁদছি, উঠানের বালিতে গড়াগড়ি করে,
এসেছে এক সাথে এ্যাম্বুলেন্সে করে,উঠতে পারোনি ঘরে।
চারদিকে হাহাকার,শুনি তোমার চিৎকার,আপুরে,ও আপু,
যাচ্ছে নিয়ে তোমায়, খুঁজছি আমি এদিক ওদিক তবু।
এ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে যখন আমার হাত তোমার কায়ের স্পর্শ পায়,
ছিলো নরম তুলতুলে কায়,তুলার ন্যায়।
শুনেছি মৃত মানুষ নাকি কোমল থাকে না,
তুমি এমন ছিলে তবুও তোমায় কেউ রাখেনা!
সবার আদরের ছোট্ট খুকি,
মুক্তা বলে তোমায় ডাকি।
সকালে জন্ম হয়ে সন্ধ্যায় করলে কবরে প্রবেশ,
এটাই কি ভাবনায় ছিলো?এভাবে চলে গিয়ে থাকবে বেশ?
ঘড়ির কাঁটায় তাকিয়ে দেখে রাত নয়টা। কখন যে নয়টা বেজে গেলো শশী বুঝতে পারলো না।জ্যোৎস্না বেগম শশীকে ডাকতে লাগলো।শশী জ্যোৎস্না বেগমের কক্ষে গিয়ে বললো-ফুফু,কেনো ডাকছেন?
জ্যোৎস্না বেগম:রাত নয়টার সময়ের চোখের ড্রপটা-তো দেওয়া হয় নাই।ইদানীং দেখি টিভি না দেখে সন্ধ্যা হলে শুয়ে থাকো।এভাবে শুয়ে থাকলে শশীর অসুস্থ হয়ে যাবে।সন্ধ্যায় নাস্তাও খাওনি।এমন করলে শরীরে এনার্জি থাকবে না।এনার্জি যদি না থাকে ভালো কিছু করা যায় না।শুনেছি,ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রী তোমার পড়ানোতে মুগ্ধ।এর মাঝে যদি তুমি এমন করো তাহলে তোমার মনোভাব না বুঝলে ছাত্র-ছাত্রীরা তোমাকে ভুল বুঝবে। ছাত্র-ছাত্রীরা তোমায় যেমন পছন্দ করে আমি চাই সব সময় জেনো একই ভাবে পছন্দ করে যায়।
শশী মাথা নিচু করে জ্যোৎস্না বেগমের কথাগুলো শুনছে।
জ্যোৎস্না বেগম:দাঁড়িয়ে আছো কেনো?চোখে ঔষধ দাও।
শশী চোখে ঔষধ দিয়ে নীরবে তার কক্ষে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো।এমতাবস্থায় জ্যোৎস্না বেগম বললো-আমি এখনো রাতের খাবার খাই নাই।রান্না ঘরে শশী গিয়ে দেখে,নিপা রুটি বানাচ্ছে।শশী খাওয়ার প্লেটে সাজিয়ে জ্যোৎস্না বেগমের কক্ষে প্রবেশ করে।খাওয়ার সামনে দিয়ে
চুপ করে বসে আছে শশী।জ্যোৎস্না বেগম খেতে খেতে বললো-তুমি বসে আছো কেনো?ভাত নিয়ে এসো।এখানেই বসে খাও।
শশী:আজ ভাত খাবো না।
জ্যোৎস্না বেগম শশীর পানে তাকিয়ে হাতে একটা রুটি ধরে দিয়ে বলে-তাহলে এটা খাও।
শশী অনেক কষ্টে রুটিটা খেয়ে নিজের কক্ষে নীরব হয়ে শুয়ে আছে।
অধর এশার নামায আদায় করে হুজুরের মাশাল্লা শুনার অপেক্ষায় বসে আছে।হুজুর নামায শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বললো-
:আজ নামায সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলবো।একটু মনোযোগ দিয়ে শুনেন।রাসূল করিম(সঃ) বলেছেন-মুসলমানের স্তম্ভ পাঁচটি। তার মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে নামায।ঈমানের পর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এই নামায।যাকে বলা বেহেস্তের চাবি। পবিত্র কোরানে তিরাশি নামায সম্বন্ধে আলোচনা এসেছে।নামায ফরজ হওয়ার প্রসঙ্গ আল্লাহ পাক বলেন-
হে নবী!আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন,তাদেরকে বলুন-নামায আদায় করতে-(সূরা:ইব্রাহীম,আয়াত:৩১)
এর মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন বলেন-তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ভাবে কথা বলবে এবং নামায আদায় করবে।
(সূরা:বাকারাহ,আয়াত:৮৩)।অন্যত্রে আল্লাহ ইরশাদ করেন-তুমি বলে দাও,আমার রব ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন।তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় তোমাদের মুখ মণ্ডল স্থির রেখো।ইমাম সাহেব এইটুকু বয়ান করে বললো- আজকের মতো আমাদের আলোচনা এখানে সমাপ্তি করলাম।আসুন মোনাজাত করে আমাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাই। হে আল্লাহ,হে পরবারদেগার,তুমি রহমত,তুমি বরকত,তুমি মাগফেরাত।আমাদের সবার প্রতি রহমত দান করো।আমাদের চলার পথে আয়ের বরকত দাও এবং আমাদের সমস্ত গুনাহ মাপ করে দ্বীন ইন ইসলামের পথে চলার তৌফিক দান করো,আমীন।
মসজিদ থেকে বের হয়ে অধর হাঁটছে।হঠাত্ করে কাঁদে হাত দিয়ে আতিক সাহেব বললো-আগেতো এক ওয়াক্ত নামায আদায় করে বাকীটার খবর নাই।এখন দেখি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন।ব্যাপার,সেপার কি?
অধর:আগের ইমাম সাহেবের কথা বার্তা তেমন ভালো লাগতো না।
অধর নামায শেষে ঘরে ভাবলো,সারাদিনতো শশীকে পাওয়া গেলো না।আবার চেষ্টা করে দেখি।এই বলে মোবাইল হাতে নিয়ে শশীকে কল দিলো। সারাদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে শশীর ফোন রিসিভ করার মধ্য দিয়ে। ভরাক্রান্ত মন আর ক্লান্ত দেহ নিয়ে হতাশায় ভরা কণ্ঠে শশী বলে-
:হ্যালো,অধর।
অধর:কিরে সারাদিন কোথায় ছিলে।এই পর্যন্ত কয়েকশ বার ফোন করেছি।কোন সাড়া শব্দ নেই।আমি এই নিয়ে অস্থির।
শশী:সকালে রুপালী এসে কলেজে নিয়ে গেছে।ওখান থেকে মোহছেনা আপুর বাসা গেলাম।বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এসে শুয়ে আছি।
অধর:একটু আগে তোর অপেক্ষার প্রহর আমার ভাগ্নি জামাই মোহনকে দিয়েছি। মোহন পাঁচশতো টাকা দিয়েছে।বল,মারহাবা।
শশী:মারহাবা।
অধর:আরো জোরে বল,মারহাবা।
শশী:মা..র...হা...বা।আর বেশি হাঁসাবিনা।বেশি হাঁসলে শরীর খারাপ লাগে।
অধর:আচ্ছা ঠিক আছে।মেহেরুন এর সাথে কথা হয়েছে আজ?
শশী:বাসা এসে দেখলাম কল দিয়েছে।কথা হয়নি এখনো।
অধর:তোকে না পেয়ে অভিমানে বসে আছে।
শশী:তোর সাথে কি কথা হয়েছে?
অধর:হুম।তোকে না পেয়ে তাকে কল দিয়েছিলাম।
শশী:কি বলে?
অধর:তোকে রিং দিয়েছিলো,রিসিভ করিস নাই।এই নিয়ে মন খারাপ।
শশী:এখন আর রিং দেবো না।সকালে কথা বলবো।তার সাথে এই সময়ে কথা বললে মন খারাপ হয়ে যাবে।
অধর:ভাত খেয়েছিস?
শশী:খিধে নেই।
অধর:খিধে নেই বলে না খেয়ে ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।একটু করে খেয়ে নেয়।
শশী:একটু আগে রুটি খেয়েছি।
অধর:আজ কবিতা লেখবি না?
শশী:সন্ধ্যায় ফেইস বুকে একটা খোলা চিঠি দিয়েছি,পাসনি?
অধর:সারাদিন ফেইসবুকে যাইনি।
শশী:এখন একটু দেখে আয়।
অধর:ঠিক আছে।তাই করছি।পাঁচ মিনটি পরে তোকে ফোন করি।
শশী:কেনো?
অধর:খোলা চিঠিটা একটু দেখে আসি।
শশী:আচ্ছা,ঠিক আছে।
পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেলো অথচ অধর ফোন করছে না দেখে শশী অধরকে ফোন দিলো-
:কিরে অধর,এখনো পাঁচ মিনিট শেষ হয় নাই?
অধর:পাঁচ মিনিট শেষ হয়েছে কিন্তু লেখাযে সাত মিনিট এর।
শশী:কেমন হয়েছে?
অধর:এক কথায় অসাধারণ।
শশী:একশোতে কতো?
অধর:একশো দশ।
শশী:একশোতে একশো দশ কেনো?
অধর:অনেক সুন্দর হয়েছে তাই একশোর ভিতর একশো।বাকী দশ সুন্দরের জন্য বোনাস।
কিরে বোনাস পেয়ে খুশিতে কাঁদছিস নাকি?
শশী:না,কাঁদছিনা।
অধর:তাহলে তোর কণ্ঠটা এমন কেনো শুনা যাচ্ছে?
কষ্টের পাহাড়ে বুকের ভিতর বয়ে চলে বেদনার ঝর্ণা ধারা। কি করে বুঝাবো অধরকে।না পারছি তাকে বুঝাতে,না পারছি নিজে সইতে।
শশীর নীরবতা দেখে অধর ভাবলো নিশ্চয় মুক্তার ভাবনায় জড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে তাকে এই ভাবনা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই ইচ্ছে করে বেদনার এই ক্ষণে শশী অধর বললো-
:একটা জোকস শুনবি?
শশী মুক্তা নিয়ে বেদনার এক ঘেয়েমি ভাবনা থেকে বের আসতে কিছু একটা খুঁজেছে।তাই সে অধরের এই প্রস্তাবকে সাদরে সম্মতি জানিয়ে বললো-
:ঠিক আছে শুনা।
অধর:তাহলে শুন-
দুই বন্ধুর মধ্যে কথোপকথন-
প্রথম বন্ধু:আচ্ছা তুই কুয়াশার মাঝে সব সময় সিগারেট পান করিস কেনো?
দ্বিতীয় বন্ধু:তুই কি জানিস না?
প্রথম বন্ধু:বারে,এই জন্যইতো আমি তোকে জিজ্ঞেস করলাম।
দ্বিতীয় বন্ধু:আমার সিগারেটের ধোঁয়া কুয়াশায় দেখা যায় না তাই।
প্রথম বন্ধু:কাকে ভয় পাস,না......?
দ্বিতীয় বন্ধু:তুই বলে দেয় না,খোকা।
প্রথম বন্ধু:দিসনে আর কাউকে ধোকা।
দ্বিতীয় বন্ধু:তুইওতো খেয়েছিস,ঐ দিন বোকা।
প্রথম বন্ধু:এখনতো ছেড়ে দিয়েছি,কাকা।
দ্বিতীয় বন্ধু:তোর কথা শুনে মনটা হয়ে গেলো বাঁকা।
শশী:আর শুনতে ভালো লাগছে না।সত্যি করে বল,আজ কি সিগারেট খেয়েছিস?
অধর:অনেক কষ্টের পর একটা খেয়েছি।
শশী:কতোবার তোকে বারণ করেছি,মুখে সিগারেট আর তুলিস না।খালামনি যদি পৃথিবীতে থাকতো তাহলে এই ক্ষণে তোকে ঝাড়ু পিটা করতো।তোর বন্ধু ভালো হয়ে গেছে কিন্তু তুই ভালো হতে পারলিনা।
অধর:আমি ভালো হয়ে যাবো,আজ রাতে তুই যদি ঘুমাস।
শশী:অনেকবার ঘুমানোর চেষ্টা করেছি। চোখ জুড়ে ঘুম ঘুম ভাব তবুও ঘুম আসে না।
অধর:চোখটা বন্ধ কর।আমি একটা কবিতা শুনাই,দেখবি,তোর চোখে ঘুম চলে আসবে।
চয়নে স্বপনে দেখি তোকে,থাকিস কল্পনায়,
মায়াবী প্রতিমা তুই,ডাকি কাছে আয়।
ঘুম পাড়ানি দেশে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবো,
আদর সোহাগ ভালোবাসা,তুই দিলে যে নেবো।
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা থাকবে সদা মনে,
আমার বুকের উষ্ণ ছোঁয়ায় আসবি ক্ষণে,ক্ষণে।
যখন তখন বলবি কতো কানে কানে কথা,
জুড়িয়ে যাবে দুঃখ কষ্ট,যতো আছে ব্যথা।
শশী বললো-
:আর শুনবো না।তোর কথামতো চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করবো।আজ রাখলাম।কাল ত্রিশ তারিখ,স্কুল খোলা।
অধর:ঘুমানোর কথা শুনে খুবই খুশি হলাম।আল্লাহ হাফেজ। শুভ রাত্রি।
শশী জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে বুকে বালিশ জড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।ভাবছে,মুক্তা জেনো দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে মিশে আছে আমার জানালায়।আকাশ ভরা রূপের ঢালী তারা হয়ে চায়,ঐ আকাশে তাকিয়ে থাকি দেখবো বলে তোমায়।বন্ধী হলেও মোর ভাবনায় দেখে হয়তো আমায়।আঁধার রাতের ফাঁকে ফাঁকে নীল একাশে মেলা,অন্ধকারে সারাটি ক্ষণ ভাবনার মাঝে খেলা।ঝীরি ঝীরি বাতাস বইছে,মুক্তা তারার মালা,ভাসিয়ে দেয় নীল আকাশে দুঃখ মেঘের বেলা।আজকে এই ক্ষণে বিষণ্ণ তাই লাগে দুঃখের মনে দোলা তাই জানালার পাশে কেঁদে কেঁদে কাটাই রাতের বেলা।প্রভাতেরই মিষ্টি আলো দেখবো কি আর আমি?রঙ্গিন ঝর্ণা হয়ে তুমি,হয়ে আছো দামী।সেই মিষ্টি আলোয় ঝর্ণা ধারায় সিদ্ধ করো মন,কল্পনাতে ঘুরে বেড়াও তুমি সারাক্ষণ।আকাশ পানে চেয়ে যখন তোমার ভাবনা খেলে,প্রজাপতির মতো তখন হাত দু,খানা মেলে।সারাক্ষণই উড়ে বেড়াও আমার মনে,মনে,সেই মনেতে ক্লান্ত হয়ে কাঁদি তখনে।জানালাতে গড়িয়ে পড়ে মোর লোচনের অশ্রু,মনে পড়ে তখন আমার,সেই দিনের সেই শত্রু।কেঁদে কেঁদে হাল্কা করি আমার সকল ব্যথা,আকাশ পানে চেয়ে বলি,আমার যতো কথা।চুপটি করে শুনো বুঝি সকল আলাপন,চাঁদ হয়ে হেঁসে হেঁসে ভোলায় আমার মন।ইন্দু তুমি এমন করে শুনো দুঃখের সুর,তবু কেনো থাকো তুমি,আমার থেকে দূর?আকাশ পানে লুকিয়ে থেকে দুঃখের খেলা খেলো,আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মিষ্টি করে হাঁসো।ধীরে ধীরে সেই হাঁসিটা মলিন হয়ে যায়,চারিদিকে শুনি শুধু বিদায়,বিদায়!মুক্তামুখী,মুক্তামুখী,কতোটুকু বলো সুখী?বিদায় বেলায় নিজেকে করে গেলে কেনো দুঃখী?যাবার বেলা বলোনা আজ দেখা হবে কবে?বদ্ধ প্রশ্ন জাগে,তুমি সারা জীবন আমার হয়ে রবে?তোমার ভাবনায় আকাশখানি আঁধারে হারায়,জানালার পাশে বসে থাকি তোমায় দেখার প্রত্যাশায়।
ভাবনার ভিতর শশীর চোখ দু,টো ঘুমের দেশে প্রবেশ করে।এমন সময় জ্যোৎস্না বেগম দেখতে এলো শশীর ঘরে।আধো আধো আলোতে দেখতে পেলো ক্লান্ত হয়ে শশী ঘুমাচ্ছে।মনে মনে স্বস্থি পেয়ে জ্যোৎস্না বেগম নিজের কক্ষে প্রবেশ করে এসি অন করে ঘুমিয়ে পরে।
আজ চারটি বছর গত হয়ে গেলো তবুও শশীর মন থেকে মুক্তাকে হারানোর ব্যথা মুছে দিতে পারলাম না। পারলাম না বুঝাতে যে না ফেরার দেশে চলে গেছে সে আর ফিরে আসবে না। বলতে পারলাম না,মিছে ভাবনায় কেনো নিজেকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখো জীবনটাকে বিভীষিকাময় করে রেখেছিস। এমন ডাক দিতে পারেনি এখনো,অন্ধকারের বদ্ধ দুয়ার খুলে বের হয়ে আয়।তোকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে আলোর পথে। বলতে পারিনি,সাড়া দেয় ঐ ডাকে,চলবো দু,জনে সারা জীবন এই পথে এক সাথে। একে অপরের আলোয় দু,জনে আলোকিত হবো।আমি নিশ্চিত,আজ সারা দিন শশী কান্না করেছে। এই কান্না সেই শ্রাবণের অঝোর ধারায় ঝরে যাওয়া কান্না।এই কান্নার কারণে তার কানে বাজেনি আমার,মেহেরুন এর মোবাইল ফোনের রিং।এখনো সে ক্লান্ত।শশীকে ভালো রাখার অজস্র চেষ্টার মাঝে আজ একটু সফলতার মুখ দেখলাম। যে মুখ চয়ন করে নীরব যন্ত্রণার শশী হয়তো পেয়েছে কিঞ্চিত সুখ। এই সুখ দিতে তাকে বলেছিলাম,আজ জামাই তোর অপেক্ষার প্রহর পেয়ে পাঁচশতো টাকা দিয়ে। আমি মারহাবা বলতে বলায় শতো কষ্টের মাঝে একটু হাঁসির ঝলক দিয়ে মারহাবা বলেছে।এটাই যে আজকের শোকাহত দিনে আমার অপ্রাপ্তির মিছিলে বিশাল এক পাওয়া। বিধাতার কাছে আমার একটাই প্রার্থনা,আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও সদা শশীর জীবনে হাঁসি ফিরিয়ে দাও। দীর্ঘ পাঁচ বছরের একই পথের পথিক হয়ে যদি তার মুখে হাঁসি ফুটাতে না পারি তাহলে শতো প্রাপ্তির মিছিলে আমার সমস্ত চাওয়া পাওয়ার মাঝেও অপূর্ণতা থেকে যাবে। কারণ শশীর দুঃখে আমিতো সেই দুঃখের সাগরে ভাসি।
অধর এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত তিনটা বেজে গেছে বলতে পারেনা।ভোরে উঠতে হবে তাই অনেক চেষ্টা করে ঘুমানোর।ভাবনার মাঝেই নীরবে এক সময় ঘুমিয়ে যায়।


SHARE THIS

Author: