প্রাশ্চাত্যের মিথ্যে অহঙ্কারে ঘুমিয়ে থাকা এ মনের
মূর্তি
হাহাকারে জীবিত হয়ে উঠে আজ দূষিত চোখেরও পানি,
আমি যে ছায়ার শরীর দেখেও রোদকে চিনিনি হে খোদা
যতটা চিনতে পেরেছি তোমায়, বিপদের এই লগনে এসে।
মনে পড়ে লঘুতে ছিল জন্ম আমার, অবহেলায়ও ছিলাম মত্ত
অহরহ মিথ্যের বসত গড়েছি আমার স্বীয় আত্মার
অসাড়তায়,
আজ ভুলের ঝুড়ি হাতে আমি পাপাচারী, প্রশ্ন ঘুরে
আহূত হৃদয়ে,
জ্ঞানের সবকটি দরজায় তবু কড়া নেড়েছি বড্ড এ অসময়ে।
আমি ছদ্মবেশী মৃত্যুও শয়নে দেখেছিলাম দিন কয়েক
আগে,
শাসিয়ে ছিল সে আমায়, অন্তরালের মাঝে জীবনের
সন্ধিক্ষণে,
বুঝেছি মিথ্যের মাঝে এক নির্মম সত্য, কাফনের সাদা
কাপড়...
তাই ক্ষমা করে দিও আরেকটি সুযোগে, মানুষকে
ভালবাসবো বলে।
বাহান্নটি
ছুটির দিন
বাহান্নটি
ছুটির দিন চলে গেলো তোমার অপেক্ষায়,
তুমি
একদা ছুটির দিনের কথা বলেছিলে,
তারপর
থেকে শিমুলের ডালে কত পাখি এসে বসে গেলো,
আমি
এক এক করে ঝরে যাওয়া বাহান্নটি পাতা নিয়ে ফিরেছি কেবল।
বাহান্ন
বার বাদামের ঠোঙা তোমার হাতে উঠার কথা ছিল,
বাদামওয়ালারা
তাতে বিরক্তি প্রকাশ করে গেলো হয়তো
পার্কের
সেই বেঞ্চটিতেও মরীচিকা ধরলো স্পর্শের হাহাকারে।
বাহান্ন
বার গোলাপ কিনতে গিয়েও কেনা হলোনা আমার
আমি
তাকিয়ে রইলাম গোলাপ প্রেমীর হাত বদলে
অভিশপ্ত
বিকেল মিশে গেলো সন্ধ্যা নামক তৃতীয় পক্ষের মাঝে।
বাহান্নটি
ছুটির দিনের কথা বলেছিলে তুমি
অথচ
চাইলে তোমার জন্য প্রতিটি দিন-ই ছুটির দিন হয়ে যেতো।
যুদ্ধ
যুদ্ধ মানে জেনেছি একটা বীভৎস অন্ধকার, প্রকাশ্যে
হত্যার ঘোষণা
পঁচিশে মার্চের মধ্যরাত, গগন বিদারী আর্তনাদ।
নিরস্ত্র বাঙালির পাঁজরে মেশিনগান, রাইফেল
কিংবা বেয়োনেট
সে ছাত্র নাকি শ্রমিক ছিল, কৃষক নয়তো
শিক্ষক, বেকার কিংবা পেশাজীবী
বাদ যায়নি তাদের দেহে একটিও বুলেট।
যুদ্ধ মানে জেনেছি নদীর পানির রঙ লাল, দড়ি
বাঁধা লাশের স্রোত
বন্দী শিবিরে অমানুষিক নির্যাতন,
ক্ষতবিক্ষত দেহ
গোপনে মাটি চাপা দেয়া একেকটা বধ্যভূমি, সেথায়
লাশের ভারী স্তূপ।
শান্তি কমিটির নামে করমর্দনে ষাট হাজার
রাজাকার, দালাল, আলবদর আলশামস
ধর্মের অজুহাতে বৈধতা দেওয়া ইতিহাসের নৃশংস
গনহত্যা।
যুদ্ধ মানে জেনেছি ভোগের উপকরনে নিষ্পাপ
কিশোরীর সতীত্বনাশ
ব্যারাকে আটকে রেখে দিনের পর দিন উন্মত্ত
উল্লাসে গণধর্ষণ,
ছুরিতে স্তন উপড়ে ফেলা, বেয়োনেটে রক্তাক্ত
যৌনাঙ্গ।
স্নেহময়ী মাতা কিংবা তার মেয়ে,
অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ, ষোড়শী কি পৌঢ় নারী,
তালিকা বড় হয়েছে আত্নহত্যার, বীরঙ্গনার।
যুদ্ধ মানে জেনেছি ভিটে মাটি ছেড়ে যাওয়া কোটি
শরণার্থীর হাহাকার
গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে, দেশ
হতে দেশান্তরে
অনাহার, অনিদ্রা, অনিশ্চয়তা আর
দুশ্চিন্তায় কেটেছে দিনানিপাত।
হিন্দু কি মুসলমান, ধনী কিংবা গরীব, নারী
কি পুরুষ, শিশু অথবা বৃদ্ধ
কলেরা টাইফয়েডে ভারী হয়েছে উদ্বাস্তু
শিবির।
যুদ্ধ মানে জেনেছি একাত্তর, স্বাধীনতার
শপথ “জয় বাংলা”
নয়টি মাসে ত্রিশ লক্ষ আত্মত্যাগ, দুই লক্ষ
সম্ভ্রম
জীবন বাজি রেখে লক্ষাধিক মুক্তি বাহিনীর
হার না মানা সংগ্রাম
দেশ বলি কি রাষ্ট্র, ভূখণ্ড কি মানচিত্র, পতাকা
নতুবা আইডেন্টিটি,
ইতিহাস বলে যাবে তা
আমার কষ্টে পাওয়া স্বাধীনতা।