পৃথিবীর
সমস্ত প্রেমপত্র লেখা কবেই শেষ হয়ে গেছে তবু কেন বসন্ত আসে আজো, জানিস তুই? ভেতর ভেতর এ বিশ্বাস যত স্থির হতে থাকে তত কেন তোকেই মনে পড়ে!
সম্বোধনহীন চিঠি লিখতাম বলে খুব হাসতিস, আজও কি এ চিঠি পড়ে তোর ঠোঁট ছুঁয়ে আছে হাসি,
কি জানি!
ছেড়ে যাওয়া মানে সমস্ত অস্বীকার করা নয়, এ তুই খুব জানিস তবু আমায় বলেছিলি আমি ডিচ করছি যদি আজ থেকে কথাদেরও কাটাকুটি হোক। আজ থেকে আমরা কেউ কাউকে চিনতাম বলে ভাববো না। অথচ ভাব, প্রথম চিঠিতে
লিখেছিলি, ‘ভালবাসি
জন্মের মতো,
ভালবাসি মৃত্যুর মতো..’পড়ে মনে? আজও প্রতি বসন্তে সেই ওম
মাখা শব্দগুলোর গায়ে হাত বুলাতে গিয়ে দেখি লাভ লেন ধরে, সরলরেখাগুলো
কিভাবে ঝাপসা হতে থাকে আর
মনের ভেতর কুয়াশা জমে শূন্য থেকে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে তোর ফেলে যাওয়া কথাগুলো ফিরে আসে আমারই কাছে। তোর দেশে এখন হয়ত মোমমাজা রাত। রাইটিং টেবিলে রাখা গেলাসে আধখাওয়া স্বর্ণ তরল। জ্বলন্ত সিগারেট ছাইদানি ছেড়ে টেবিলে শায়িত। এখনো আগের মতই স্মোক করিস, অনি? তোর টেবিলে স্বরবর্ণ দিয়ে ঘেরা একটা লাইট শেড তোর ডায়েরির পাতায় আলো ছড়াচ্ছে, আমিই তোকে দিয়েছিলাম, আরর আমি নিশ্চিত-
আমার সব
চিহ্ন যদি মুছেও ফেললেও বাংলা স্বরবর্ণ দিয়ে কারুকাজ করা এই লাইট শেডটাকে তুই ফেলতে পারবি না কিছুতেই।
আমরা কিন্তু আবাল্য বন্ধু, বলতিস।
শুনে মৃদু হাসতাম। কী
জানিস, যদি ঠিকঠাক মানুষকে ভালবাসা যায় তবে দ্বিধা কই, তাকে জন্ম জন্মান্তরের বন্ধু বলেই মনে হবে, তবে তোর বলার ভঙ্গীটা কিন্তু অসাধারণ! অবলীলায়
একের পর
এক কথাদের ছবি আঁকতিস তুই আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম আমরা কোথায় খেলতাম,
চিলেকোঠা রোদ্দুর ছুঁতে গিয়ে কিভাবে তোকে ছুঁয়ে ফেলেছিলাম,
ফুল কুড়োতে গিয়ে কিভাবে পিছন দিকে হাঁটতে গিয়ে দুজন দুজনের গায়ে ধাক্কা খাই আর
ধেয়ে আসে সমুদ্রঝড়, এমন আরও কত কী
যে বলতিস,
শুনতে শুনতে কখনো মনে হত
এ সবই বুঝি সত্য। বুঝি আমিই ভুলেছি আমার অতীত।
তারপর…
পরপর কিছু হাইফেন জুড়ে গেলে আনুভূমিক যে দীর্ঘশ্বাসেরা উঠে এসে অনন্ত শোকগান হয় তা তুই হয়ত এখন আর
টের পাস না, কিন্তু তবু বলি অনি,
ছেড়ে যাওয়া কখনই সহজ ছিল না। তুই যেখান থেকে জীবনটাকে দেখতিস যৌথতায় ঠিক সেখান থেকেই আমি দেখতাম কিভাবে পোড় খাওয়া একজন মানুষ শুধু তোর হাত ধরেছে তোকেই সর্বস্ব ভেবে। যে
খুব সামান্যতে তোর বিচ্যুতি দেখে বলে ভাবতিস তা
আসলে তার নিজের অবস্থান সংকট। তুই হয়ত বুঝতে চাসনি তাই শহর ছেড়ে হারিয়ে গেলি আর সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে,
ভোর হবার আগে আমি ভাবলাম এবার ফাল্গুনের প্রথম প্রহর কাটাব তোরই সাথে,
কিন্তু
তুই অনি…
ভালো থাকিস রে। যেখানেই থাকিস, নিজের মত
করে ভালো থাকিস।
কখনো এই উড়োচিঠি তোর কাছে পৌঁছালে,
কুচো শব্দ যত হাওয়ায় উড়িয়ে দেবার আগে একবার মনে করিস,
আমি এই আমিই তোর আজন্ম ভ্যালেন্টাইন...