বিনাশী
জন্মের কালান্তর
দেবদারুর ফাঁকে জমে উঠে রাত,
পাতলা চাদরের উপরে চেপে বসে পুরুপর্দার অন্ধকার।
বৃদ্ধ বাতাসে নাগরদোলায় উত্তরীয় হিম
নক্ষত্রহীন আলোয় কাঁপন লাগায়,
কৈশোরঘন রক্তের গভীরে সজারু ত্বকে জাগে উজাড় শিহরণ!
ধোঁয়া শুধু ধোঁয়া নয়-
অজান্তে ঘন মেঘের মন প্রাচীরের মত কুয়াশার ধাঁধায়
সাদায় ভরে তুলে নিঃশূন্য আপন।
চিরল পাতার ডাল ন্যুয়ে পড়া জলে
প্রত্যূষে প্রস্ফুটন অপেক্ষায় কুসুম,
শিশির ছুঁয়ে শিশিরে লোটায় পাপড়ির যৌবন
করিডোর ভেঙে আধোসুগন্ধ
খেয়ালী মাতালে ভরে তুলে অন্ধকার কামরা...
ঘরের ভেতর ঘর আছে এক-
ছায়ার নিচে ছায়া,
ঘনঘোর রাতে এখানে জীবন শুধু জীবন নয়
পৃথিবীর মত মায়া,
চোখের নিচে ডেকে যায় ঝরাপাতা মুখ
নিমলিত শব্দে অন্তর্জায়া...
দেবদারুর ফাঁকে জমে উঠে রাত,
আলোর মত কিছু শব্দ জেগে উঠে মরে যায় কবিতায়!
চিঠি
সেই চিঠির পরে এখনও শব্দ খুঁজি,
ব্যাথার মত অগোছালো কথা-ঘুড়ির মত উড়ে যন্ত্রফড়িং-গহীন ভিতর,
কেন্দ্র থেকে উঠে আসা কম্পন মিলিয়ে যায় বোধশূন্য চোখে,
ঠাঁইহীন কিনারে মূকস্বরে ভাসে ষষ্ঠধাতু মন।
ভৈরবী ঢেউ মাটিতে উতালজলে তার নিশ্চিহ্ন হৃদয়, চাপা পড়ে গর্জন মাতাল!
জোয়ান বাতাসে কতকথা হাতদূরে উড়েকত শব্দ না ছুঁয়ে ঠোঁট সরে সরে যায় ব্যাথার অদূরে!
বাগানের ফুল-ভ্রমরের গানে কুড়িয়ে পাওয়া ভুলশাঁসহীন অবনত ডাটায় মুছে যায় ঘ্রাণ, ভুলের মাশুল।
কত কথা আকাশের, কত কথা মেঘের, তারাদের-চাঁদের।
সূর্যের সাথে-রাতের সাথে কত কথা পাতার-শাখারশব্দের গঙ্গায় ভেসে ভেসে যায় কত সুখ-ব্যাথা,
কত কথা মাটিতে-অসীমে, মানুষে-হৃদয়ে!
সেই চিঠির পর নিষ্ক্রিয় হৃদয়, নিশ্চুপ ঠোঁটচোখে জমা পাথরের মত নিশ্চল শব্দঅক্ষয় ভালোবেসে মন পেতে আছে বরফ শ্মশানে।
সেই চিঠির পরে কোন শব্দ খুঁজে পায়নি হৃদয়,
শেষ চিঠির পরে আর কোন ভাষা বুঝে না জীবন।
মিশে ছিলাম রক্তে, স্নায়ুতে-
সকল অস্পৃশ্য ভাবনায় তোমার!
নিজেকে আদৌ চিনেছে কি মানুষ?
তীর্থযাত্রায়
লেখকের নাম মনে নেই
বইটির নামও চাঁপা পড়ে গেছে অনেকদিনের জমানো স্তুপে!
গল্পের সেই মেয়েটি
কলমের পুতুল না হয়ে নেমে এসেছিল পথে!
ঘরহারা সেই মেয়েটি
স্বজন হারিয়ে হয়েছিল মানুষের আপন,
তার ছায়ায় খুঁজেছি ছাইচাপা স্বরূপ!
যার কন্ঠ ধ্বনিত হ'তো মানুষের নামে
যে পথে মানুষ চিনেছিলো মানুষের রূপ
আমি লেখককে ছাপিয়ে তার পাশে হাঁটতে চেয়েছিলাম...
সাঁকো
আধভাঙা সাঁকো পার হলে আরেকটা সাঁকো...
মেরামত দিন শেষে পিছনে ফেলে এলে স্তুপ
বাঁকল ছাড়ানো পথ-
নির্লজ্জ অন্ধকার চোখে চেয়ে রয় আকাশ
আর রাত-
গোগ্রাসে গিলে হৃদয়ের তারে লাগা রঙ...
জোড়াতালি প্রাণে পেরিয়ে এলে নগ্নপথ,
আরেকটা সাঁকো... আরেকটা বাঁকলহীন পথ,
তারপর আরেকটা সাঁকো-
ভাঙ্গা-আধভাঙা, তারপর.....
সুতোয় বাঁধা সুতোর জোড়াতালিতে চলে আসে নিষিদ্ধঘ্রাণ নদী,
সাঁকো পার হলে তারপর...ফুরিয়ে যায় সাঁকো-সুতো!
দাগ থেকে যায়
পৃথিবীর
সমস্ত দুপুর স্কুল পালিয়ে
ঠাই
নিয়েছে সন্ধ্যার সিনেমাহলে...
সময়ের
নিষিদ্ধ চিত্র নিয়ে ওখানে সরব
ম্যাটেনি
শো-
পর্দার
হাত ধরে অন্ধকারে, বদ্ধ দেয়ালের ভেতরে
হৃদয়
নাড়িয়ে জমে উঠে জীবনের কৌশল...
ফাস্টবেঞ্চের
সেই সুবোধ বালকটি
যে
দেখেনি পলায়ন পিছু ধুলোর রঙ-
তার
স্থির চোখ দিয়ে আসেনি স্বপ্ন নতুন,
দুপুর
পলাতক বুকের তোলপাড় ঘামে
এখনও
অনন্ত রঙিন, পৃথিবীর ধাবমান রহস্য...
মাটি ধরে
রাখে চিরকাল সেই নিষিদ্ধ দাগ...
কবি পরিচিতিঃ
চৌধুরী ফাহাদ
চৌধুরী ফাহাদ
জন্ম ৩০ সেপ্টেম্বর, কক্সবাজার জেলায়।
এই পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা তিনটি , চিলেঘুড়ি(’১৩), কবি কোন চরিত্রে নাই (’১৫)
২০১৬ এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবি তার কবিতার সংশয়’ এবারের জলফড়িং ভালোবাসা সংখ্যায় চৌধুরী ফাহাদ এর নতুন কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতা।