সোয়েব মাহমুদ এর কাব্যগ্রন্থ আড়াইতলা সিঁড়িঘরে ব্যাক্তিগত নিঃশ্বাস থেকে কবিতা



সিঁড়ি ভাঙছি

সিড়ি ভাংতে ভাংতে আমার মৃত্যুর ঠিক সোয়া মিনিট
পর জানলাম,
আমার কেবল আমিই আছি সাথে এবং পাশে।
জানলাম আদতে তোমার বুকেই ছিলো জন্ম; আমার।
ঠিক যেখান থেকে আমার স্পর্শাধিকার কেড়ে নেয়া
অন্তর্বাসিয় ক্যান্টনমেন্ট এর শুরু নামক স্পিডব্রেকার।
জানলাম মৃত্যু ঢেঊ আছড়ে পড়ার ঠিক আগে,
আমি জড়িয়ে ধরি আমার নিজস্ব ছায়া।
জানলাম আমি তোমার জোড়াসাঁকোতে ছিলাম সেজদারত
বিশ্বাসী প্রেমিক।
জানলাম একটা রোদ্দুরে ছোঁয়া নিয়ে আংগুলে,
ঠোঁটে তোমার কাছ থেকে ধারে পাওয়া চুমুতে ছিলাম
তুমি নগরের পরিব্রাজক, এক।
জানলাম নতুনবছরের ইচ্ছেগুলো তোমার।
একটা শব্দজটে নেই ভদ্রতার মার্জিন,
আধুনিকতার মাত্রা-অক্ষর-ছন্দজ্ঞান
কিংবা সৌজন্যতার বাক্যে সু-বিন্যস্ত বিন্যাসে
আমি অথবা আমার আমি।
মৃত্যুর ঠিক সোয়া মিনিট পর লিখছি
অভ্যাসের শীতে অনভ্যস্ত বসন্তের কথা।
কিংবা এইযে চুপ করে যাওয়া।
এইযে মৃত্যুযোগের আগেই মৃতবৎসা স্তব্ধতা লালনে বেচে
থাকা।
এইযে হঠাত হঠাত জন্মান্ধ নীলে খন্ডকালীন কবিতা লেখার
চেষ্টা, এইযে তর্জনী উঁচিয়ে মেঘের দ্যাশে কুয়াশা ঝড়ে
পূর্ণিমা এনে রুপোলী জোছনা গ্লাসে পুরে তোমায় পান করে
হেটে যাওয়া তেইশের মাঝরাতের উনিশ মাইল।
এই সবে একটা কবিতা দেয়া হয়না তোমায়,
মৃত্যুর ঠিক সোয়া মিনিট পরে'ও।
তাই, পাশ ফিরছিনা তুমি জেগে যেতে পারো ভেবে।
অথচ একা শব্দটা পাশ ভেংগে ঢুকে পড়ছে সভ্যতায়।
চোখের শেকড়ে,বুকে বাকির সব সাদায় মিশিয়ে
শুন্যতার সাদা, একাকীত্বের সাদা, মৃত্যুর সাদা-
আমি সিড়ি ভাংছি, পকেটে হাত..
আমি সিড়ি ভাংছি, বুকপকেটে স্বপ্ন..
আমি সিড়ি ভাংছি, সিড়ি।
কেবলই ভাংছি আমার একাকার হাহাকারের সিড়ি।
ভাংতে ভাংতে একসময় আমি তোমার জানলায় এক গাছ হয়ে যাই,
অপেক্ষায়।
সোয়া মিনিট মৃত্যুপরবর্তী ক্যানভাসে-
আমি জেনে যাই,
আমি বুঝে নেই,
আমি শুনে ভুলের ভুলে বলে দেই-
আমি হয়ত আর জন্মে তোমার অতিব্যবহৃত হাতব্যাগে
থাকা রুমাল ছিলাম, অতি আদরে।
তাই ছুঁয়ে তোমায়, কেবোল তোমার হইনি।।


দ্যাখা অদ্যাখা কাব্যঃ১

আমি চাই তোমার সাথে কোথাও কখনোই আমার দেখা না হউক।
আমি চাই, প্রানপনে চাই।
তাই এড়িয়ে যাই, তোমার হাটা পথ।
এড়িয়ে যাই পরীবাগ, মালিবাগ,বাসাবো এবং ছায়াবীথি।
এড়িয়ে যাই প্রানের শহরটাও।
এখন বুঝবেনা তুমি,
যে তুমি ভালোবাসা মাড়িয়ে হেটে গ্যাছো।
যে তুমি অস্বীকার করে পালিয়েছো ভালোবাসা থেকে।
যে তোমায় ইতিহাস মনে রাখবে হত্যাকারী,ভালোবাসার!
সেই তোমার সাথে আমার কোনো কথা নাই।
তুমি আজীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী ভালোবাসার।
বন্দীত্ব তোমার সোনার খাচায় আর কৌশলী ভিড়ে।
আমি চাই তোমার সাথে এ জন্মে আমার আর দ্যাখা না হউক।
আমি চাই আমার সাথে একবার তোমার দ্যাখা হউক।
আমি চাই একবার,
এককাপ ধোয়া ওঠা চায়ের কাপে,
চোখে চোখ রাখা আমার তোমার দ্যাখা হউক।
আমি চাই একবার,
তুমি আমার চোখে চোখ রেখে দ্যাখে নাও আমি তোমাকে,
আমার চোখে তোমাকে কিভাবে দ্যাখি?
একবার দ্যাখা উচিত তোমার।
মিথ্যা ঠাস-বুনটের শহরে আমি চাই, একবার
আমার সাথে তোমার দ্যাখা হয়ে যাক।
আমি শুনতে চাই আমার তুমি কি বলো আমায়?
আমি দ্যাখাতে চাই তোমায়, আমার অস্তিত্ব।
আমার জন্ম-মৃত্যুর পরিসংখ্যান,
আমার প্রতিমুহুর্তে হারিয়ে ফেলা নি:শ্বাস,
আমার বেগুনি পদ্ম, তোমার রংমেশানোসত্য।
আমার সান্ধ্যকালীন ফটোগ্রাফ কি বলে তোমায়?
আমি চাই, হ্যা হ্যা হ্যা আমি খুব করে চাই।
আমি চাই তোমার সাথে আমার দ্যাখা না হউক।
আমি চাই আমার সাথে একবার তোমার দ্যাখা হউক।
দ্যাখা-অদ্যাখা কাব্যের শেষ হউক,অন্তত।


আগামীকাল

ঘন কুয়াশায় ভিজে যায়,
মুছে যায় বাড়ি ফেরার পথ।
অথচ একটা বসন্তকাল মুখ হাঁ করে দিব্যি হাসছে,
আমি আগামীকাল এসে তোমায় নিয়ে যাবো!

গনতন্ত্র

এই মানচিত্রের মানপত্রে যখন রাজনৈতিক বেশ্যার আস্ফালন।
টুটি চেপে ধরা সেলফ সেন্সরশিপ।
তখন কবি হয়ে উঠেন সব্যসাচী!
সাহিত্যের পাতায় চর্বি সম্বলিত কবিতা।
তোর দু-চোখে কাচপোকাদের ভুল।
যাদুঘরে সাজানো বাক-স্বাধীনতা মনে করিয়ে দেয়
গনতন্ত্র, আজ বংগভবন যায়।
গণতন্ত্র, আজ বিটি আর সি 'র নজরদারীর ব্যান্ডউইথ!
গনতন্ত্র, নুর হোসেন-মিলনের খুনীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র।
গনতন্ত্র, এক বেশ্যাগমনের রিকশাবাহক।
গনতন্ত্র, হ্জ করে,মক্কা শরীফ যায়।
গনতন্ত্র, মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় ঈশ্বর হয়।
গনতন্ত্র, ঘন তারল্যে ধর্ম হেফাজত করে।
গনতন্ত্র, সামাজিক বেশ্যা পোষে।
গণতন্ত্র, সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে,
কুচকে যাওয়া যোনী হাতায়,
বৃদ্ধ স্তনে বেচে দ্যায় দ্যাশ।
গনতন্ত্র, উদারপন্থী হয়,
গনতন্ত্র, ইয়াবার রুপোলী মায়ায় ধর্ষণ করে।
গনতন্ত্র, নারী উন্নয়নের জনসভায় মৈথুন করে।
গনতন্ত্র, এক গানের জাতীয় পুরস্কার।
গনতন্ত্র, বাংলা একাডেমীর শব্দ সেন্সরের মহাউতসব।
গনতন্ত্র, লাল মদে রক্তের মচ্ছব!
গনতন্ত্র, ধুলো জমে জমে মানচিত্রে আজ আবে-জমজম
ঘুরছে আটরশি, দেওয়ানবাগ, চরমোনাই।
ভক্তের টাকায় শিল্পিত পুন্য-নগরী হচ্ছে সাংহাই!
আমি ঢাকায় বসে কড়ে গুনে বলছি
বাহ বাজপাখির শ্যেনদৃষ্টি আজ উন্নয়নমুখী!
তক্তপোশ আজ বীর্যবতী!
রক্তের খরপোষে মৃত আত্মাধীন জনপদে
কোনো আশা নেই।
ভালোবাসা নেই।
ইচ্ছেরা বুলেট বিদ্ধ।
প্রজন্ম আজ চ্যাতনা বিক্রেতা অথবা ক্রেতা।
ধুস শালা নিরোধমুক্ত শুয়োরের সাথে সহবাসে
ঘাতক কখন ত্রাতা হয় জানা নেই!
নিরঞ্জন, আজ একটা ঠোঁটের মিছিল চাই।
নিরঞ্জন, আজ একটা প্রতিবাদী কবিতা চাই।
নিরঞ্জন, আজ একটা শ্লোগান মুখর রাজপথ চাই।


প্যারিসের চিঠি

আমি আজ কি লিখবো?
কি ই বা লিখার আছে বলুনতো?
কে ই বা শুনবে কথা?
আমি তো জেরুজালেম এর বিরুদ্ধে বলবো?
আধুনিক এসাইলাম সিকার গোষ্ঠি আবার
তা নিতে পারেনা।
যারা মানবতার দূত,
শালা স্বৈরাচার এরশাদ ও তো দূতই!!
কেবল পার্থক্য-
তারা তো ২৩০ ডলার ভাতা পায়!
আমিতো বুর্জোয়াবাদের বিরুদ্ধে বলবো।
আমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলবো।
আমি সেই অস্ত্র, সেই মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে বলবো যাকে
তুমি মডারেট ধর্ম বলো।
যেখানে তুমি ভুল ব্যাখ্যায় লেলিয়ে দাও
ঘৃণা এবং ধ্বংসযজ্ঞ হয় আমার ঘর।
তুমি পেট্রো ডলারে রিগায় বসে লাল লিপষ্টিকে
অথবা লিও তে ১৫ বছরের আরব কিশোরী হাতাচ্ছো।
অথবা সুইস বর্ডারের ইউএন অংশের

হাট বাজারে!

কবি পরিচিতিঃ
সোয়েব মাহমুদ
২০১৫ বইমেলাতে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ রবীন্দ্রনাথ কখনওই এখানে চা খেতে আসেননি 
বর্ণচাষ প্রকাশনা থেকে।
২০১৬ অমর একুশে বইমেলায় বের হলো কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ আড়াইতলা সিঁড়িঘরে ব্যক্তিগত নিঃশ্বাস
প্রকাশনীঃ ঘাসফুল
প্রচ্ছদঃ মুস্তাফিজ কারিগর।
ষ্টলঃ ১৩৭ ।

SHARE THIS

Author: