মাহমুদ রাসেল এর কাব্যগ্রন্থ নিঃশ্বাসে নগর পুড়ে যায় থেকে কবিতা


জীবনের শিরোনাম হোক ভালোবাসা

ভুল ভেঙে ফিরে আসো নদী
বিভেদচক্র খুলে শুষ্ক বুকের বিছানায়
পরিপাটি করে রাখা নিত্য জোয়ার-ভাটা
আবার চালিত করো- সাতারের সরল নিয়ম।
অভিমান ছুড়ে ফেলো জল
নিরবে সিক্ত করো নিশাচর নাবিক হৃদয়।
দুরদেশে খোঁজো কারে, পাখি?
জীবনের সকল নিমন্ত্রণ উপেক্ষায় রেখে
পরিযায়ী সম্ভ্রম ক্ষয়ে গেছে রোদ্রত্তাপে
নিজের বুকটা খুলে দেখোনা বুঝি?
ঝড়ো পায়ে দুর হও আক্ষেপ
বাদামী বাতাসে উড়াও সাদা সন্তুষ্টি
দীর্ঘশ্বাস যদি ঢেকে রাখা যায়, তবে
ভালোবাসা হয়ে ওঠে মহিরুহ,
ভালোবাসা হয়ে ওঠে শতবর্ষী সকল কবিতার শিরোনাম।


স্রষ্টার এপিটাপ

যারা মরে গেছে যুদ্ধে, প্রান্তরহীন জলোদরে
সুগভীর অরণ্যে, শামুক কিংবা সাপের খোলসে
বিষাক্ত ভ্রমর কিছু হয়তো উড়ে গেছে চোখমণি ঘেঁষে
রক্তাত্ব চাবুক প্রত্যহ সহে শুষ্ক হৃদয়মরুতে...
যে অভ্যস্ত বুকে চেপে বসতো ছ'মাসী দুর্গাদেবী, সে
আজ কথা বলে, বাবার স্মৃতি ভাসে মানসপটে।
যারা বিদায় হয়েছে, মায়ের দুপা ছুঁয়ে
পালিয়েছে সহোদর, বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশী
ক্লান্ত রাইফেলে লিখে গেছে- ভালোবাসি, অভিমানী মেয়ে,
ফিরেই মিলিত হবো ঝাউবনে, কাঁঠালের ঘ্রাণে
জিকিরে কেতন শুনি, বেভোলা বনে হায় চাতক প্রতিক্ষা।
যারা নিশ্চিহ্ন, কখনো ফিরবেনা বলে
প্রতিজ্ঞা খেয়েছে তীব্র ক্ষুধার রাত্রিতে
উন্নত রক্তস্রোতে ভেসে গেছে যাদের
মা-বোন-ভায়ের কাঙাল কাঁচবুক
বাবার স্বপ্নালু চোখে তারা আজো আছে
কোথাও না কোথাও, দেবদারু ফুলে
অথবা ফিরেছে যারা, বহুরোগ-বহুশোক ভুলে
কতগুলো সমুদ্র একসাথে পদতলে, কত আকাশ?
সহস্র সমরবুক ভেঙে উজ্জ্বল তারকাদ্যানে
জ্বলন্ত ভগবান অথবা
প্রজন্মস্রষ্ঠা তারা এই মহান পৃথিবীর ।

বাবা

বাবাকে বলেছিলাম,
আমাকে একটা রেলগাড়ি কিনে দিবা?
আমার রাতের ঘুমে কোন সাইরেন বাজেনা
একটা ঘড়িও দিও, স্টিল কালারের।
বাবাকে স্বপ্নে দেখি,
সকালের আলোয় বাবা এসে বসেন,
আমার পিঠ চুলকিয়ে আদর করেন,
মাথায় কোমল হাত বুলিয়ে,
বাবা বলেন- তোকে আমি ডাক্তার বানাবো
আমি স্টেথোস্কোপ নিয়ে গম্ভীর হাটি,
আমার দৃষ্টি খোঁজে রোগাক্রান্ত সন্ধ্যার পাহাড়।
পঙখীরাজের বেদনা নিয়ে ভাঙা পাখনায়
বাবা আমার উড়ে আসেন গভীরতর স্বপ্নের ভেতর,
নীল জোছনার বুক ভেদ করে আরো কিছু
বিষন্নতা ভেঙে যদি নিয়ে আসা যায় সফেদ শ্যামলিমা।
বাবা আমি ডাক্তার হতে গিয়ে
মুলত হয়ে গেছি অন্ধকার
কম্পিত স্টেথোস্কোপে আমি কোন শব্দ বুঝিনা
বালুচরে সঞ্চিত সুখ তুমিহীন অতল গহবর
বাবা, তুমি কোথায়? দেখো আমাকে?
আমার রেলগাড়ি, স্টিল কালারের ঘড়ি?


দণ্ডপ্রাপ্তের পাণ্ডুলিপি

বাড়ি বানিয়ে রেখেছি মেঘের উপরে
আমার দোচালা ঘর, খড়ের মন্দির
পেছনে পরিত্যক্ত ডোবা, শাপলা-শালুক সঙ্গম
সহস্র কুনোব্যাঙ, শরীরে শরীর উৎসব।
এই কারাগার, বদ্ধ কফিনঘেরা
এখানে ফসিল পড়ে থাকে, এখানেও নাকি
পোকামাকড়ের উৎসব চলে বিরামহীন
প্রকোষ্ঠের প্রদীপ জ্বলে থাকে, ওইতো নিকটে
আমার চোখের ভেতর- দু-চারটি ফড়িং উড়ে যায়
আমিও ছটফট উড়ি, বেদম প্রহার চলে
ওইতো নিকটে আমার ঘর, শুভ্র মেঘের বিছানা।
আমাকে নিয়ে যাও আকাশ
নখের কামড়ে কিছু পথ
আমাকে নিয়ে যাও, ওইতো নিকটে
আমার ঘর, মেঘের সামান্য উপরে।


ভজন সংগীত

প্রতিটি চুমুর পর দৃশ্যত; আমরা সতেজ হয়ে উঠি
কেউ কেউ অবশ্য সংকুচিতও হয়; সলাজ লজ্জাবতী
প্রতিটি শ্বাস বিনিময়ে আমরা অসীম পুলক পাই,
ঝরঝরে রৌদ্র ভাসমান পিঠে পতঙের মত উড়ি।

একজন পথপ্রদর্শকের বস্তুত; এখন আর প্রয়োজন নেই
যতটুকু আলো পড়লে ফ্যাকাসে হয় পৃথিবীর বুক
ততোধিক ধারন করে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় বনমোরগও।

সুতরাং, অপেক্ষা ভাসিয়ে দিন অন্ধের চোখে,
অস্ত্রের তেজস্ক্রিয়তায় পৃথিবীর বিকলাঙ্গ অস্থি, মজ্জায়
চুম্বকিত মানবিক চুম্বন এখন বড্ড প্রয়োজন।
আসুন, প্রার্থনা করি জলের
জাগতিক নিঃশব্দ সকাল আর
একটি নিষ্কলঙ্ক চুমুর,
শুনেছিঅশুদ্ধ আত্মারা মরে যায় পবিত্র চুম্বনে।


অগোছালো আর্টিস্ট

যে পাখি উড়ে যায়, আকাশের চিবুক ছুঁয়েছেড়ে দাও
বিস্বাদ জাগিয়ে রেখে মাটির কান্না কি থেমেছে কখনো?
ধোয়ার ভেতর যে অবয়ব ফুটে ওঠে অনন্তকাল,
চেয়ে দেখোতার চোখে শ্বাস নেই; একফোঁটাও
জানোতো,
বেহিসাবী জীবনে যন্ত্রনা বলে কিছু থাকে না।

সে বার আষাঢ়ে যে কবিতা লেখা ছিলভুলে যাও
বকুল ফুলের ঘ্রাণ বিলেতি বধূর বুকে জমা রেখে
ফুল-পাখি-পরকীয়া এঁকে ফেলো নিবিড় আদরে
তারপর বৈশাখ তুলে রেখো পাঁজর বালিশে
জানোতো,
অজস্র মৃত্যুর ভেতর আমরাও নির্বাক জেগে থাকি।

বেহুলার বুক ছিঁড়ে যে সাপের সন্ত্রাস
নাভীর ভেতরে দিলো নীলাভ ক্যাফেইন,
তাকে কি বলবে?

বরং ঘাসের কবিতা লিখে শিশির শরীরে
জমিয়ে তোলো কিছু নিকোটিন নৃত্য
জানোতো,

আমাদের কষ্টগুলো জল রঙ এ আঁকা যায় না।

SHARE THIS

Author: