যুগল তর্ক
।। ধর্ম ।।
ধর্মের ভায়োলিনে সব সুর সত্য ।
ধর্মের ঢাকঢোলে পৃথিবী বিভক্ত !
।। ঈশ্বর ।।
ঈশ্বরে মাথাব্যথা নেই যার- আস্তিক ।
ঈশ্বর বারবার টেনে আনে নাস্তিক ।
শেষ স্বাক্ষর
জানি, আমার নামেও একটা রুমাল আছে
সাদা এবং অদৃশ্য একটা রুমাল নড়ে উঠছে বাতাসে
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত ।
জানি, গ্রাহ্য করতে হবে
এই সম্মোহন - বাতাসের নগ্ন চুম্বন- এড়াতে পারবো
না
মহাকর্ষীয় টান এড়াতে পারবো না, জানি
বাতাস বইছে- আমি টের পাচ্ছি
রুমাল নড়ছে- আমি টের পাচ্ছি
টের পাচ্ছি আড়ালবীক্ষণ থেকে চেয়ে আছে মহানীল
চোখ
আমি কি ভয় পাচ্ছি ?
আর্দ্র-চোখের দিকে চেয়ে খুঁজে কি পাচ্ছি আশ্বাস?
রক্ত-চোখের ফ্রেমে ঢুকে পড়ছি ত্রাসে ?
সন্ত্রস্ত মেঘের মতো কতকাল পালিয়ে বেড়াবো ?
দক্ষিণ সমুদ্র থেকে নর্তকীর মতো নেচে উঠছে
বাতাস
আমি কি পালাবো ?
কিংবা রোমন্থন করবো নূরের পেয়ালা ভেবে ?
রুমাল কেঁপে উঠছে
আমি কি কবিতা লিখবো ?
রুমাল কেঁপে উঠছে
আমি কী কবিতা লিখবো?
অশ্রুর চিঠিতে কি লিখে দেবো বেদনার নদী
কিংবা উচ্ছ্বাস ? প্রাচুর্য বৃষ্টির মতো আমি যদি মুক্তো লিখি
যদি লিখি ডানার বিপ্লব
অথবা কিছুই লিখলাম না
নিরক্ষর খাতা হাতে ধুলোর শরীর যদি জমা দিই !
জানি, বাতাস সন্নিকট
জানি, শীতের পাতার মতো কেঁপে উঠছে রুমাল
ঘড়ির কাঁটার দিকে নির্নিমেষ চেয়ে আছি
কখন এ্যালার্ম হবে ? জানিনা ।
চারিদিকে আলোর সংগম; রুমাল, আমি ফুলের দিকে যাবো
এত অন্ধকার ! হারিয়ে যাচ্ছি ; রুমাল, আমি আলোর দিকে যাব
কবিতা লিখছি; ভায়োলিন, আমি কবিতা লিখছি
গান গাচ্ছি; নৈঃশব্দ, আমি গান গাচ্ছি ।
রুমাল, তুমি কি পড়ে যাচ্ছো ? এখন কি শীত ?
আমি কি প্রার্থনা করব ?
আমি কী প্রার্থনা করব ?
জানি, স্মৃতির মত মধুর কোন নিঃসঙ্গতা নেই
কে বেশি নিঃসঙ্গ ? আমি ? নাকি ক্রমবর্ধমান আমার ছায়া ?
আমার কোন স্মৃতি নেই ।
আমি কি আলোর দিকে যাচ্ছি ?
সূর্য ডুবে যাচ্ছে; ছায়া, তুমি কি চলে যাচ্ছো ?
জানি, 'শরীর' কেবলই একটা ভ্রম
'মস্তিষ্ক' মূলতই একটা
যন্ত্র
আমার কোন শরীর নেই
ছায়া, আছো তো ?
আমি কবিতা লিখছি ।
রুমাল কেঁপে উঠছে
আমি কবিতা লিখছি
তোমাকে অগ্রাহ্য করছি; রুমাল, তুমি পড়ে যাও
আমি কবিতা লিখছি
তোমাকে অগ্রাহ্য করছি; রুমাল, আমি অমরত্ব লিখছি ।
আমি কি নাস্তিক ?
জানি, আমার নামেও একটা রুমাল আছে
আমি বিশ্বাস করছি- রুমাল, তুমি আছো
জানি, 'শরীর' কেবলই একটা ভ্রম
তোমাকে অগ্রাহ্য করছি- রুমাল, তুমি নেই ।
শৌখিন আলমারি
আসবাব বলতে কেবল একটা আলমারি আছে আমার
ভাঙাচুরা তাক, ঠসে যাওয়া দরোজায় মোমের প্রলেপ
তার প্রত্যেকটা তাকে গুছিয়ে রাখি ব্যক্তিগত
সঞ্চয় ।
এই যে ছোট্ট তাক- ভেতরে সপ্তরঙা পোট্রেট আছে
একটা
এটা স্মৃতি , মূহ্যমান আমার হিজিবিজি শৈশব
গোল্লাছুটের মাঠে খসে পড়া মেঘের টাপুর ।
আর এই যে- অনির্ণেয় অথচ মোহগ্রস্ত সুঘ্রাণ
ভেসে আসছে মৃদু, যেনো দখিনের জানালা খোলা
এখানে প্রেম, আমার প্রেমিকাদের ঘরদোর
তনুলীলার নাভি পুষ্পচাঁদার চোখ সুস্মিতার ঠোঁট
কোণার ছোট্ট কৌটাতে জমিয়ে রাখা- চুমু
আমার অসংখ্য চুমুর খোসা, তাদের অসংখ্য চুমুর ঘ্রাণ ।
গোলাকার এই তাকটা- কালো এবং জল থৈথৈ
এখানে দুঃখ, এখানে পঞ্চনদীর মোহনায় ডুবন্ত চিন্তাদের ঠাঁই ।
রোদের মতো উজ্জ্বল - এই তাকটা খটখটে শুকনো
নিয়মিত ন্যাপথলিনে মেঘের মতো স্বস্তি থাকে
এখানে
আমার খুব প্রিয় বৃষ্টির মতো চঞ্চল হাসি থাকে ।
এই তাকটা খুলো না; এখানে অগ্নিগিরি, ঘুমন্ত আগুন
ভেতরে ক্রোধ ভেতরে হিংসা ভেতরে লালসার লালা ।
শূন্য যে তাকটা দেখছো, শূন্য নয়; ওখানে হাহাকার ।
আরেকটা তাক আছে বামে- তার মধ্যিখানে হৃদয়
হৃদয় একটা ফুল, ভেতরে কম্পমান পুষ্পরেণুর মতো ভালবাসা ।
ঠাসা একটা আলমারিই কেবল আছে আমার
এই যে- আমি- একটা শৌখিন আলমারি ।
বাসা বদলের গান
ফেলে রেখে যাচ্ছো চুল, শ্যাম্পুর খোলা
পুরোনো সুতোর জট, সোনামুখী সুঁই
ফেলে রেখে যাচ্ছো ভাঙা কাঁচ, স্মৃতির টুকরো
দেয়ালে শিশুর ছাঁপ - প্রথম শৈশব
এঁটো বেসিনে স্যাঁতা পড়া ব্রাশদানি
ফেলে রেখে যাচ্ছো আয়নার ঘুণ ধরা ফ্রেম
ফাঁকা দেয়ালে ফেলে রেখে যাচ্ছো ভোজালির ক্ষত
এটাসেটা; কোনো কৈফিয়ত কি ফেলে রেখে যাচ্ছো ?
তোমরা চলে যাচ্ছো ছিমছাম আগামীর দিকে ।
সতেজ কামরায় নতুন রঙের ঘ্রাণ
স্বপ্নের মেঘে বুলিয়ে নিচ্ছো চিকন চিরুনী
আর এখানে-
যে
আয়নার সামনে মুখোমুখি হতে রোজ
সেখানে ধুলোর মেঝেতে কিছু চুলবাঁধা ফিতে পড়ে আছে ।
সব
ভুল, পুরোনো দেনা ফেলে রেখে
যাচ্ছো তো?
স্মৃতির ভষ্মের দিকে পিছু ফিরে তাকাবেনা জানি
স্রোতের চেয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সময়
আমারও সাধ্য নেই পুরোনো পৃষ্ঠা খুলে পড়া
শুধু পালাবদলের এই একটি রাতের অবসরে
শূন্য শরীর নিয়ে ফিরে যায় তোমাদের প্রথম বাসরে
তোমাদের বাসর কি ফেলে রেখে যাচ্ছো?
ব্যালকনির বাতাসে ফেলে রাখছো নাতো কাপড়ের ঘ্রাণ
?
আগামী রাতের তানে শুরু হবে আরেক বাসর
আমি কত সঙ্গমের সাক্ষি - বেদনার লিপিকর
কত
উৎসবের ইতিহাস - বাসনের ঠুনঠুন আওয়াজ
অদৃশ্য পত্রিকার মতো লিখে রাখি স্মৃতির আখরে
অথচ
যাবার আগে যেঁচে কেউ কুশল জানোনা ।
নির্বিকার ফেলে রেখে যাচ্ছো পুরোনো কাগজ
ধূলো পড়া দরোজায় বিয়োগের দাগ,
একটা বই কি ফেলে রেখে যাচ্ছো, স্মৃতি-ভাস্মর একটা বই ?
মধ্যবিত্ত প্রলাপ
টাকা থাকলে ঋণগুলো শুধে দেয়া যেতো
টাকা থাকলে কথার পিঠেও কিছু বলা যেতো কথা।
টাকা নেই, তাই মাংশের দোকানেই ফিরে ফিরে আসি
নত মাথা নত মুখে ডেকে উঠি কসাইয়ের নাম।
কুকুরের ধর্ম থাকেনা। কুকুরের লজ্জা থাকতে নেই।
টাকা থাকলে বাজারের ব্যাগ হাতে
আমিও কিছু করতে পারতাম দর কষাকষি
তারপর আলু পটলের মতো বাছাই করতাম- মানুষ
টাকা থাকলে চরিত্রগুলো সব কিনে নিতাম কেজিদরে।
টাকা নেই, তাই আশেপাশে মানুষ আসে না
যারা আসে- আমার মতো তাদেরও বাঁকা লেজ
তারাও আমার মতো ছুঁয়ে থাকে কসাইয়ের পা।
টাকা থাকলে বাজার থেকে কিনে আনতাম- গরু
টাকা থাকলে গাঁদা ফুলের হলুদ মালা ঝুলিয়ে
আড়াই পোঁচে কেটে ফেলতাম মোসাহেবি কল্লা
তারপর চামড়া ছাড়িয়ে বানিয়ে রাখতাম সভ্যতার
জুতো।
কিছু সেলাম কিনে নিতাম, কিন্তু টাকা নেই
তাই স্যালুট গুলো প্রতিদিন বিক্রি করে দিচ্ছি।
টাকা নেই, তাই জিভে চুকচুক ব্যাকুলতা নিয়ে
চেয়ে থাকি কসাইয়ের চাপাতির দিকে,
পরিত্যক্ত হাড় থেকে যদি কিছু মাংশের গন্ধ নেয়া
যায়।
কুকুরের লজ্জা থাকতে নেই। কুকুরের ধর্ম থাকতে
নেই।
টাকা থাকলে ঠোঁটের সহমর্মিতা কিনে নিতাম সব
বেশ্যাপাড়ার বিউটিকে তুলে আনতাম সংসদপল্লীর
মাঠে
আর ব্লাউজে টাকার বদলে কিছু চরিত্র গুঁজে দিয়ে
বলতাম - যা, এবার মন্ত্রীকে চুষিয়ে আন।
কিন্তু টাকা নেই, তাই নেতার আঙুল চুষি
টাকা নেই, তাই লেজ বাঁকিয়ে প্রাকটিস করি ভক্তির স্যালুট।
কুকুরের আবার ধর্ম! কুকুরের আবার লজ্জা!
টাকা নেই - টাকা নেই - টাকা নেই; কিছু নেই।
টাকা থাকলে সবগুলো আঙুল কিনে নিতাম কেজিদরে
টাকা থাকলে চরিত্রগুলো কিনে নিতাম তরকারির মতো
টাকা থাকলে দুশ্চরিত্রের পেটে বাধিয়ে দিতাম
সচ্চরিত্রের জারজ।
টাকা থাকলে কসাইয়ের চাপাতিটা তুলে নিতাম হাতে
চরিত্রের বালিতে শানিয়ে নেয়া যেতো সত্যের ধার।
টাকা নেই, তাই রাত নামলেই চলে ছাইগাদার সন্ধান
আর স্বপ্নে সিলিং ফ্যানের মতো ঘোরে একটা টাকার
মেশিন।
টাকা! টাকা! টাকা! টাকার তোষক, টাকার বালিশ এবং
টাকার স্তুপ থেকে মাথা তুলে দেখি- আমার পায়ের
কাছে
ছ্যাঁচড়া কুত্তার মতো লেজ বাঁকিয়ে শুয়ে আছে
স্বয়ং ধর্মমন্ত্রী।
টাকার কাছে ধর্ম থাকেনা। টাকার কাছে লজ্জা
থাকেনা।
টাকা থাকলে আমিও কি মাংস কাটতাম?
সহমর্মিতার নামে ছুড়ে দিতাম মাংসহীন সাদা হাড়?
আমিও কি পায়ে জড়াতাম চরিত্রের জুতো?
ধর্ম ও লজ্জার মতো টাকার কাছে কি চরিত্রও
থাকেনা?
"আমিও ঈশ্বরের মতো একা"
কবিঃ কবির কল্লোল
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ।
প্রকাশকঃ মাহাদি আনাম
প্রকাশকালঃ ২০১৬ বইমেলা
প্রকাশকালঃ ২০১৬ বইমেলা
প্রকাশনীঃ ঘাসফুল
স্টলঃ ১৩৭