শুধু ভালো থেকো
আমি যখন তোমার আকাশে উড়বার জন্য
মোমের প্রলেপ মাখানো- দুটি ডানার আবদার
করেছিলাম, তুমি প্রত্যাখান
করেছিলে।
অথচ ঐ আকাশে সশব্দে উড়িয়েছো ভালোবাসার মিগ-২৯,
তোমার কো-পাইলটের নাম জানা হয়নি আজো,
অথচ সেই ভাগ্যবান পুরুষের প্রতি আমার হৃদয়ে
প্রচন্ড ইর্ষা জাগে।
আমার এই অঞ্চলে এ বছর শীতের আগ্রাসন আগের
চাইতেও বেশি,
সেটা তোমার এই
অঞ্চল ছেড়ে দেশান্তরী হবার কারণে কিনা জানিনা,
তবে তোমার যোনীতে
রাতব্যাপী উষ্ণতা বিষয়ক যে কথোপকথন চলে,
তার শীৎকার শুনে, আমি ভীষণ রকম জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ি।
আমার বিছানায় আদুরে বেড়ালের মতো গুটিশুটি মেরে
থাকা কম্বল,
আমাকে প্রত্যাখান করেছে, তোমার মতো করেই।
পরম আদরে জড়াবার মতো যা যা উপকরণ এই পৃথিবীতে
বিদ্যমান,
তোমাকে পাওয়া
হয়নি বলে, সবকিছু আজ আমার
জন্য নিষিদ্ধ,
তবু এই একলা আকাশ, হৃদয়ের এই প্রচন্ড শীতপ্রবন অঞ্চল,
এই প্রত্যাখান আর নিষিদ্ধ আচরনে বেঁচে থাকা,
সবকিছু ছুঁয়ে বলি, তুমি ভালো থেকো, শুধু ভালো থেকো।
আমি সব জেনে যাই
কখনো তোমার মুখোমুখি না হয়েও আমি বলে দিতে পারি,
ভীষন আদ্র তোমার ঐ দুটি চোখে বাসা বেঁধেছে
গোলাপী অসুখ,
নাইটগাউনের অজুহাতে যখন তোমার শরীরজুড়ে সুতোর অস্পষ্ট
প্রলেপ,
ঐ ঘরে নিজের অবস্থান অস্বীকার করে,
তোমার স্তনে আমি
খুঁজে নিতে পারি-
পলাতক প্রেমিকের আঙ্গুলে আঁকা সুস্পষ্ট ছাপ।
তোমার দেয়ালঘড়ির প্রতিটি ঘূর্ননে তোমার
পরিবর্তিত ভঙ্গি,
একটা আস্ত পেন্সিলের আয়ুক্ষয়েই আমি এঁকে দিতে
পারি।
আমি জানি, তোমার বৃষ্টি ভালো লাগেনা,
তুমি ভয় পাও
আটপেয়ে মাকড়সা,
আয়নায় নিজেকে অজস্রবার শুভরাত্রি জানিয়ে-
চোখ বন্ধ করে জেগে থাকো পুরো রাত।
গতকাল দুপুরে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে তুমি আঙ্গুল
কেটেছো,
এই খবরও আমার কাছে অজানা কিছু নয়।
একটা ফটোগ্রাফেই আমি তোমাকে বলে দিতে পারি,
এক মিলিসেকেন্ড আগ পর্যন্ত যা ঘটেছে তোমার সাথে,
তার সবকিছু।
ঐ ফটোগ্রাফে তোমার দাঁড়িয়ে থাকা দেখেই আমি বলে
দিতে পারি-
তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছো,
আমি এলেই তুমি সব ভুলে যাবে, প্রাগৌতিহাসিক সব ব্যাথা ভুলে-
আমরা হেঁটে যাবো, একশ বছরের ইতিহাস ছুঁয়ে।
স্বৈরপ্রেমিক
তোমার ঠোঁটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবো,
তারপর স্বৈরতন্ত্রের অজুহাতে আমৃত্যু দখলে
নেবো।
নিষিদ্ধ ইশতেহার
পারমিতা, তোমাকে বলেছিলাম কোন সন্তান উৎপাদন নয়,
আমাদের সন্তান এই বিশ্বে আর কিছুতেই নিরাপদ নয়!
তুমি বলেছিলে, আমরা বৈশ্বিক নাগরিক নই,
আমরা লাল-সবুজের একটা শীতল পতাকায় ঘর বাঁধি,
আফগানিস্তান-ইরাক নয় আমার দেশ,
এই সবুজ দেশে মানুষের মন সবুজ, এখানে মানুষ-
ফুলের সাথে, পাখির সাথে কথা বলে।
তুমি মিথ্যে বলেছিলে পারমিতা,
এখানে মানুষের মন রক্তের মতো লাল।
একটা শিশুকে দানবিক উল্লাসে পিটিয়ে মারা হয়,
যাকাতের নামে পায়ের নিচে চেপে ধরে কেড়ে নেওয়া
হয়-
হতদরিদ্র কিছু মানুষের প্রান।
বাড়ি ফেরার নাম করে, বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়না,
লঞ্চে ডুবিয়ে, সড়কপথে পিষে ফেলে খুন করা হয়।
ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের রক্ত গিলে মানুষ।
নিজের ঘরে রক্তাক্ত লাশ হয়ে পড়ে থাকে মানুষ।
পারমিতা, আমাকে ক্ষমা করো, আমি আবারো বলছি,
অশান্ত এই পতাকায় কোন সন্তান উৎপাদন নয়!
মৃত্যুবিষয়ক
আমার আরেকবার মৃত্যু হবে,
সবুজ পালকের এক হাঁস মুখ গুঁজে দেবে হৃদপিন্ডে,
আমাকে একা ফেলে তুমি ছুটে যেতে চাইলেই,
গির্জার ঘন্টার মতো করে,
সশব্দে বেজে উঠবে
তোমার রুপালী নুপুর,
ওরা জেনে যাবে, তুমি পাশে ছিলে!
তোমাকে হারাবার ব্যাথাই
আমার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ময়নাতদন্তের খাতায়
লেখা হবে,
আমার মৃত্যুর পর হয়তো তোমাকেই কাঠগড়ায় দাঁড়
করাবে।
তারচেয়ে আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করো,
এই মুঠো থেকে হাত
সরিয়ে নিওনা,
তোমার যাবার দরকার নেই,
আর কয়েকটা মুহুর্ত পরেই আমি চলে যাবো,
শোন, ইথারের কোল বেয়ে নেমে আসে মৃত্যু পরোয়ানা।
'আবার কো্নো সমুদ্রজন্মে দেখা হবে'
কবিঃ রাকিবুল হায়দার
প্রকাশকালঃ ২০১৬ বইমেলা
পাওয়া যাবে ঘাসফুল এর স্টলে।
স্টল নং- ১৩৭