জায়েদ বিন ফরিদ এর কাব্যগ্রন্থ তুমি আমার ক্লান্তিহীন অবসাদ থেকে কবিতা

অন্ধকার পিপাসা

অবাক জোৎস্মার আঁচল ভেঙে আমি অবাধে এগিয়ে যাই রাতের দিকে,
হাজারো কাঁটাতারের সহস্র ক্ষত জড়িয়ে যায় শরীরে;
এক মোহাবিষ্ট ঘ্রাণ আমার প্রতিটা নিউরনে পর্যাবৃত্তে ঘুরতে থাকে,
আমি কেবল গন্তব্যে চোখ রেখে তলাতে চাই আঁধারে।
পিপাসার্ত ঠোঁট এক অধির চুম্বনের অপেক্ষায় আজো পথ চেয়ে আছে,
মাটির বুকে বর্ষার প্রথম বৃষ্টি-কণার স্পর্শের মতো শিহরণ খোঁজে বুক;
আঁধারের যতো রঙ, যতো অনুভূতি খেলা করে রাতে
তার সবটাই চোখের পর্দায় ভেসে উঠে,
চাঁদের ব্যারিকেড পেরিয়ে, অন্ধকারের কাছে এসে
রাতের বুকে বসিয়ে দিই
পৃথিবীর দীর্ঘতম চুম্বন!

জলসা শেষে,
আমার শূন্য শরীর মাটিতে রেখে
আমার তৃপ্ত আত্মা উড়ে বেড়ায়
বিক্ষিপ্ত কালো আকাশে।।


কবিতা তোমায় হাজার প্রণাম

কবিতার খাতায় আগুন জ্বালিয়ে
সিগারেটের মতো ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে
লিখে দিলাম মনের ঘরে কবিতার ছাড়পত্র!
আরো হাজার পূর্ণিমা রাত শহুরে স্ট্রিট আলোয় কাটিয়ে দিয়ে
জীর্ণ শরীর ঘরে ফিরে এলে-
যদি কবিতা আবারো মনের ঘরে বসত পাতে,
তবে বুকের পাজরে কবিতার নামে আজীবন দাসত্বে লিখে দিব নিজের নাম;
কবিতা তোমায় হাজার প্রণাম।


প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী

সেদিন আমার কবিতা সব পত্রিকা ছেয়ে যাবে,
টিভি
চ্যানেলে চলবে আমার গান।
সেদিন সব তরুণের মুখে মুখে, মধ্য রাতের মাতাল ও
আওড়াবে আমার কবিতা,
তরুণীর উড়না চাপা কান্নায় আমার জন্যে থাকবে অনুভূতি,
প্রতিটা মিছিলে, স্লোগানে,
প্রতিটা প্রেমের চিঠিতে লেখা রবে আমার নাম।
সেদিন শুধু একটাই আফসোস রয়ে যাবে,
আমার
জনপ্রিয়তার এই দিনই হবে আমার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী।


মহাকাল

একটি স্বচ্ছ মৃদু আলোকে ঘিরে জমে উঠেছে আসর,
প্রতিটি চোখ নিদারুণ কৌতূহলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,
উৎসটুকু খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা;
কেউকেউ প্রতিচ্ছবি ভেবে সরে দাঁড়িয়েছে
কেউবা দূর থেকে উঁকিঝুঁকি মারছে;
ভিড় টেলে কেউ হঠাৎ সামনে এসে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে গিয়ে আলোর শিখায় ভস্ম ছাই হয়ে
মৃদু আলোর প্রজ্বলনে সামিল করে নিয়েছে নিজেকে।

এভাবে আবিষ্কারের নেশায় ঝরে গেল কিছু তাজা প্রাণ
রক্ত ঝরেনি কোন
আলোর শরীর রক্ত চোষে নিয়েছে;
ছড়িয়ে ছিল কিছু পোড়া ঘ্রাণ।
হঠাৎ দপ করে জ্বলে উঠে মৃদু আলোর শিখা,
উৎসুক চোখগুলো কাছে টেনে নেয় নিমিষেই,
মৃত আত্মাগুলো পোড়া জোছনায় ভেসে যাচ্ছে নীলিমায়,
তারপর আলোর শিখা অদৃশ্য হয়ে যায়,,,
মহাকালের প্রলয়-রূপী আলো খেয়ে গেল কিছু জীবন্ত প্রাণ, ধ্বংসের রূপরেখা এঁকে দিল ললাটে;
মাটির চত্বরে পড়ে ছিল শেষমেশ কিছু অজৈব রসায়ন।।।


তুমি আমার ক্লান্তিহীন অবসাদ

বুকের ভিতর অবসাদ গোপন রেখে ক্লান্তিহীন দীর্ঘ পথের শেষে,
বহুদূরে তুমি এক উজ্জ্বল রোদ;
দূরত্বের দৈর্ঘ্য মেপে মেপে একটুকরো বিষাদ মেঘে ক্লান্ত মন,
চোখের কার্নিশ বেয়ে অন্ধকার নেমে এলে-
তোমার ঠোঁটের কোণায় নক্ষত্রালো হাসি বুকের অবসাদে শীতলতা এঁকে দেয়,
দীর্ঘ অবসাদের পথ বদলে মুহূর্তে এক ক্লান্তিহীন প্রেমের পদ্য মন ভুলায়।
বহুদূরের তুমি রাতের আকাশের নক্ষত্রের মতো জ্বলতে থাকো বুকে,
সমগ্র সত্বা জুড়ে যেন তুমি শব্দের বিকট আর্তনাদ-

তুমি আমার ক্লান্তিহীন অবসাদ।

SHARE THIS

Author: