কাজী মেহেদী হাসান এর কাব্যগ্রন্থ আঙুরবালার রেকর্ড থেকে কবিতা

কবিতা ভাবনা বলতে আলাদা কিছু বোধহয় নেই। আমার কবিতাই সেই চিন্তা, সেই দর্শন, সেই প্রেম যা প্রতিদিন খুব সহজেই পাওয়া যায়। এটাকেই যখন কেউ গুছিয়ে বলেন, অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে, মানুষকে আঘাত করার ক্ষমতা রাখেন, চিন্তার জায়গাটুকু রাখতে পারেন এবং অবশ্যই পাঠককে শেষ লাইন পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন তখনই সেটা কবিতা। এর বাইরে কবিতার সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাকরণ নেই। অন্তত আমি ছন্দ বা মাত্রা ধরে লিখতে আগ্রহী না। তবে মজার ব্যাপার হলো, এরপরও কোনো কোনো কবিতা খুব সঠিকভাবে কিছু নিয়মকানুনে চলে আসে। এটাকেই হয়তো কবিতার অলৌকিকতা বলা হয়। এখানেই কবিতার শ্রেষ্ঠত্ব।  


সংবেদ

জ্বরাক্রান্ত জনসভায় যদি
আমারই কবিতারা কাঠগড়ায়, মুখোমুখি দাঁড়ায়
শরীর আর হৃদয় বেচে কী পাওয়া যাবে সেদিন?
তোমাকে?
পৃথিবীকে?

নাকি সেই পুরনো জামা যা আমি কবর থেকে চুরি করেছি
যাকে পাওয়া গিয়েছিল ভষ্মের ভেতর
অথচ মৃত্যুদিনে উড়ছিল পতাকার মতো?


শ্রেষ্ঠত্ব

উপমার ভুল প্রয়োগ ভেবে পরশ্রীকাতরকে লিখি পরস্ত্রীকাতর
আমার এই সর্বজনীন এবং স্বপ্রণোদিত ইচ্ছের উপর
হাঙ্গেরিয়ান মদ ঢেলে দেয় লাবন্য দাশ।
আমাকেই কে আবৃত্তি করে কোনদিন পাখি হয়ে গেল
কার সাথে কবে কোথায় দ্যাখা হয়েছিল কার, এসব বাহুল্য।

তবু জীবনবাবু
সুরঞ্জনা কোন যুবকের কাছে যেতে চেয়েছিল;
এই প্রশ্নে কেন আমার দিকেই অমন করে তাকাবেন?


নীরু ২
 
খুব সামান্য ব্যাপার নিয়ে হৈ চৈ হয়
এই যেমন শাড়ির সেফটিপিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না
কই মাছের ঝোল হাঁড়ির গলা ছোঁবে নাকি পেট অব্দিই সই
টিভি শো'তে হালিমা চরিত্রটা শেষ কবে নুন চুরি করেছে
এইসব তুচ্ছ জিনিসে আমাদের আনন্দ থাকে, বাড়িভর্তি হল্লা।

হঠাৎ মনে হলো বহুদিন শফিক ছেলেটার দ্যাখা নেই
ভুল বানানের হাতচিঠি পৌছে দিয়ে কেউ বলছে না আগে চকলেট
চকলেট দিতে আমাদের আপত্তি নেই, আনন্দ আছে।

এইসব লিখতে লিখতে পুর্নবার সম্পাদনার কাজে
ফের কাগজে তাকানোটা নিয়ম
ভালো কবিতার কদর না থাকলেও তৃপ্তি থাকে;
যারপরনাই বিস্মিত হয়ে দেখি এতক্ষণ এতবার
কেবল নীরুই লিখেছিনীরু, নীরু, নীরু...
এক শব্দে কবিতা কতটা বাজে হতে পারে ধারণা নেই
কেবল মনে হলো বহুদিন পর
বহুদিন পর তুচ্ছ জিনিসে আনন্দ হলো।

এখন কে কোথায়? কেমন আছে?
কার বাড়িতেআমারই চোখে অন্যকে গেঁথে ফ্যালে;
এসবে আগ্রহ নেই!
তবু পাতার মতো পতনেও জানালায় কান পাততে ইচ্ছে করে
কালুভুলুরা গেটের দিকে তাকালে আমারও প্রতীক্ষা বাড়ে
সামান্য নারীটা এতটা ছড়িয়ে থাকে?
ভাবতে থাকি, তাকিয়ে থাকি, কার বাড়িতে? কেন থাকে?


প্রলাপ 

১.
সায়েন্স ফিকশন মুভিতে সফল আণবিক হামলার পর এলিয়েনদের থেকে মুক্ত হলো পৃথিবী। লোকটি হাততালি দিয়ে খেতে বসে কচি কবুতরের মাংস। গৃহিণীর রন্ধনশৈলীর প্রশংসা সংসারেও শান্তি এনেছে।

২.
একটা নিঃসঙ্গ পায়রা গলা ফুলিয়ে একা একাই রাগারাগি করছিল জগতসংসারের উপর। শিকারী নিতান্তই দয়ালু, নিখুঁত নিশানা। নইলে কে মুক্তি দ্যায় এমন জীবন থেকে?

৩.
ওদিকে এক নির্বোধ যুবক কবিতার খাতায় বেলিফুল লাগিয়ে ভাবছেএই বুঝি পৃথিবীতে শান্তি ফিরে এলো।


নিশিন্দাপাতা

প্রতিবছর এইদিনে
এইদিনে প্রতিবছর
এক অনতিবৃহৎ পর্ণমোচী উদ্ভিদ
তোমাকেই ভালোবাসতাম বুঝি?
শাদা কাপড় ঘষে যে রঙ তুলে আনি
সেই রঙ, সেই ফুল- নীলচে বেগুনী। 

এখনও তার ঘ্রাণ আছে বুকে—
এখনও শরীরের শিশির ঝরেনি
আমার বুকের জ্বর শুষে নিয়ে
তুমি মরে গ্যাছো নিশিন্দাপাতা
?
এই ভর সন্ধ্যেবেলায় ফসফরাস জ্বলা অন্ধকারে
আমাকে ডেকে এনে

তুমি কেন মরে যাবে নিশিন্দাপাতা?

SHARE THIS

Author: