শহর
এ শহর ঘুমিয়ে গ্যাছে আজ
ভাঙাচোরা রাস্তায় কোন পথিক নেই
নেই রিকশার টুংটাং, প্রেমিকের উদ্ভ্রান্ত পদরেখা
নেই যোদ্ধার ছুঁড়ে দেওয়া গ্রেনেডের পিন
ঘুমিয়ে গ্যাছে সব,
ঘুমিয়ে গ্যাছে বুঝি ইটের বিছানায় অজানা আনন্দে।
কিছু কোলাহলরত নিশীথ পাখির দল
তবু রাস্তা দখলে ব্যস্ত থাকে
কিছু কিছু আলোর মতো গোলক ধাঁধাঁয়
বেড়ে ওঠে সূর্যরশ্মি,
মৃতপ্রায় শহরের দেয়ালে দেয়ালে
এঁকে দেয় প্রেয়সীর সুঘ্রাণ।
এ শহরে প্রাণ নেই আজ
ঘুমিয়ে গ্যাছে তরুণের গণজাগরণ
কিশোরীর খোলা চুলে বেহিসেবি গান
ভাঙাচোরা রাস্তার বাঁকে বাঁকে
অভব্য ক্যামেরার দল চোখ রাখে
স্পর্শ করে এদিক ওদিক
তবু সাড়া নেই, নেই প্রতিবাদ
এই শহর আজ শুধু মৃতদের লাশকাটা ঘর।
প্রহেলিকা
একটি গভীর দীর্ঘশ্বাস জমে জমে বরফ হয়ে যায়
একটুকরো বরফ
তার উপর একফোঁটা জল
দীর্ঘশ্বাস গভীর হতে হতে পুকুর হয়
পুকুরের ঠিক ভরকেন্দ্রে জন্ম নেয় আরেক টুকরো বরফ।
বরফ গলে যায়
পুকুরের জল বেড়ে সাগর হয়
একটুকরো বরফ
তার উপর একফোঁটা জল
এক সমুদ্রে ভেসে বেড়ায় এক জীবনের দীর্ঘশ্বাস
তবু কোথাও ঠাঁই হয় না।
বাষ্প হয়ে ঘুরে বেড়ায় দীর্ঘশ্বাস
মেঘ হয়
এক সমুদ্র বরফ ধোঁয়া হয়ে
উড়ে চলে মাঝ আকাশে
জমাট-বাঁধা একটি গভীর দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ে বৃষ্টি হয়ে
পুকুরের ভরকেন্দ্রে একটুকরো বরফ,
তার উপর একফোঁটা জল
কিছু কষ্ট বয়ে বেড়ায়।
লু
ধীরে ধীরে হাওয়া হয়ে যাচ্ছি
লু হাওয়ার মতো
ঘুরছি, ফিরছি, ভাসছি।
তছনছ করছি শহর-গ্রাম-জনপদ
এলোচুলে হেঁটে যাওয়া তন্বী-তরুণীর
জিভের আগায় অস্বস্তির কারণ হচ্ছি।
ভিজে যাওয়া দুপুরগুলোয় স্মৃতিকাতরতায় ভাসছি
করপোরেট স্যুটের অন্তরালে নগ্ন সাঁতারে ব্যস্ত তরুণ
আর তার দগ্ধ যৌবন
কাঁদছে, হাওয়ায় ভাসছে ব্যস্ত জীবন।
গৃহিণীর রোদে দেয়া শাড়ির আঁচল উড়িয়ে নিই অকাতরে
হৈ হৈ করে সব
ঘুরছি, ফিরছি, ভাসছি।
সিনেমা পাড়ায় নায়িকার পদ্মফুলে চুমু খাচ্ছি, নাক ঘষছি
উড়িয়ে নিয়ে খড়ের গাদায় ফেলছি।
এদিকে মেঘের ডাকে জলকেলি করে পথিকের দল বটের তলায়
হাওয়া হয়ে উল্লাস করি,
ধুলো নিয়ে প্রাণ দিই
আর ভালোবাসা জীবন হয়ে
জেগে ওঠে ঝরে যাওয়া ঘামের খামে
একমুঠো বিশ্রাম তাই প্রাণ খুলে দম নেয়,
যশোহর রোডে বেঁচে যায় অশীতিপর বৃদ্ধ।
শেকড়
একটি শতবর্ষী বৃক্ষের গায়ে হেলান দিয়ে দেখি পায়ের
নিচে মাটিকে সাক্ষী রেখে চাল ধোঁয়া পানির মতো ঘোলাটে আকাশে ওঠে মস্ত একটি চাঁদ!
লুটেরা ডাহুক আসে, বৃক্ষকে গ্রাস করে কুলীন জোছনা, ধীরে ধীরে সরে যায় মেঘ। আমার
পায়ের নিচে পৃথিবীও সরে, অহেতুকই নড়ে ওঠে সুরভিত চাঁদ! মাতাল নদীর বুকে ফেনিল
ঢেউয়ের প্রেমে নিমগ্ন মহাকাল শোনো, আমিও ক্রমশ সরি এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবী থেকে;
মাটিকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকে শতবর্ষী বৃক্ষ, অথচ দ্যাখো আমার তো কোথাও কোন শেকড় নেই!
নীরব মুগ্ধতায় ঋদ্ধ
নীরব মুগ্ধতায় পুড়ে পুড়ে যাচ্ছি
পুড়ছে সমাজ, পুড়ছে নারী, পুড়ছে রাষ্ট্র
পুড়ে পুড়ে, ভাজা ভাজা হচ্ছে সঙ-বিধান
পুড়ছে বৃষ্টিও
ভেজা, পোড়া বৃষ্টি দেখছে ন্যায়পাল!
নীরব মুগ্ধতায় পুড়ে পুড়ে যাচ্ছি
ঘামে, জিভে, ঘৃণায় অবিরত ভেজে তলদেশ
গালে, গলায়, বুকে চিট-চিটে ভাব
যোনীতে রক্ত
স্তনে, উরুতে বৃষ্টি লাল।
নীরব মুগ্ধতায় পুড়ে পুড়ে যাচ্ছি
ওদিকে শরবতে-হুর-রম, সুলতান সুলায়মান
বিস্ফোরিত স্তনদেশে আজিব হিজাবে দিন গুজরান
কুয়াশায় মেঘ
ঝরে পড়ে, স্তন-বৃন্ত অবিরাম।
নীরব মুগ্ধতায় পুড়ে পুড়ে যাচ্ছি
ইসায়-মুসায় ভাতিজায় আয় হায়
নিতম্বে উত্তাল আন্দোলনে খিস্তি-গাল, তবিয়তে বহাল!
লকলকে জিভ
মৃত নাভি-বৃন্তে ঘোরে, আমলে-ইবলিস-কাল!
কবি শামীম আহমেদ জন্ম, মৃত্যু,
স্থান, কালের ব্যপ্তিতে জীবনকে বাঁধতে চান না। মনে করেন সময়ের সাথে জীবনের
উপলব্ধির পরিভ্রমণ ঘটে। চলতে থাকা পথে দিকভ্রান্ত কবি ঠাহর করতে পারেন না
বাস্তব-অবাস্তবের ভিন্নতা, তাই সুখ খুঁজে ফেরেন দুঃখের পংক্তিমালায়।
অন্যান্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ
নিমিষেই নিষিদ্ধ তুমি (২০১৬)
যে প্রহর কুয়াশার কাছে ঋণী
(২০১৫)
একফোঁটা বৃষ্টি হতে যদি (২০১৪)
কবি শামীম আহমেদের দুটি কবিতার বই ‘প্রিয় প্রেম অপ্রিয় বিচ্ছেদ’ (২০১৭) এবং ‘নিমিষেই নিষিদ্ধ তুমি’ পাওয়া যাবে চৈতন্যের
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান স্টল নম্বর ৬৩৪
(লেকের পাড়ের দিকে) এবং লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্টল ৭০ (বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন) এ। বাসায় বসে পেতে রকমারির ১৬২৯৭ অথবা ০১৫ ১৯৫২
১৯৭১ নাম্বারে ফোন করে অর্ডার দিতে
পারেন।