ব্যতিক্রমী কবিতার ওয়ালেট 'দ্বি' এবং 'ত্রৈ'

ব্যতিক্রমী কবিতার ওয়ালেট 'দ্বি' এবং 'ত্রৈ'

ছবি ঋণ: রুবাইয়া তুশমী
গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে গতবছর কবিতার ওয়ালেট 'দ্বি' প্রকাশ করেছিলেন নিজের প্রকাশনি সংস্থা চন্দ্রবিন্দু থেকে। ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ার পর এবারের মেলায়ও বের হয় নতুন কবিতার ওয়ালেট 'ত্রৈ'... বলছিলাম কবি চৌধুরী ফাহাদের কথা। তিনি সবুজের কবি। ঝিনুকের মত হয়তো ভেতরে পুষে রাখেন বিষের বালি অথচ কী আনন্দম স্বচ্ছ নির্ভেজাল অভিমান নিয়ে লিখে যাচ্ছেন সময়ের প্রতিচ্ছবি! দ্বি কিংবা ত্রৈ মুলতঃ ছোট কবিতার এক গয়নার বাক্স এর মত। যতই গভীরে যাওয়া যায় যেনো বিষণ্ণতার এক সুখকর বাতাস বয়ে যায়। অনেক কথাকে কবি খুব সহজেই অবলিলায় বলে দিয়েছেন মাত্র কয়েক লাইনে। সহজ কথাকে একটু ঘুরিয়ে বলা, প্রচন্ড জমে থাকা ক্ষোভ অথবা বেদনার কার্নিশে ঝুলে থাকা যাপনের এইসব হাহাকার কখনো কখনো গোপণে অথবা প্রকাশ্যে প্রাচার করে দিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে, পাঠকের বোধে।

মানুষ জীবন্ত ঘোড়ার পিঠে চড়তে ভালোবাসে! মৃত প্রায় ঘোড়ার জন্য খড়বিচালি কেউ সংগ্রহ করতে চায় না। কবি বোধহয় বুঝে গিয়েছিলেন সময়ের এই হিংস্র পারাপারে ভেঙ্গে যাচ্ছে আকাশ ছোঁয়ার সাঁকো। তাই সমস্ত রকমের দুঃখ, বেদনা, অভিমান আর সন্ধ্যাতারার গানে রাত খেকোর মত রূপকথা ঢেলে দিয়েছেন নিজের কাব্য জগতে।

ব্যতিক্রমী কবিতার ওয়ালেট 'দ্বি' এবং 'ত্রৈ' সম্পর্কে জানতে চাইলে কবি জলফড়িং কে বলেন: "মানুষ যেতে চায়। নানাদিকেই যেতে চায়। যেখানে শরীর যেতে পারে না, স্নায়ু যায়, কল্পনা যায়। এই যেতে চাওয়া, বারবার নিজের বাইরে চলে যাওয়ার যে তাড়না তার ভেতর থেকে যে বোধ উঠে আসে মূলত তার নির্যাসই হয়ত কবিতা। নিজের বাইরে গিয়ে, নিজের গভীরে গিয়ে যে জলটুকু অবশেষ হিসাবে থেকে যাচ্ছে, সেই জার্নি থেকে সঞ্চিত উপাদান এক করে তারও সারসংক্ষেপ হচ্ছে আমার এই কবিতার কিতাব 'দ্বি' বা 'ত্রৈ', যাকে বলছি কবিতার ওয়ালেট। নির্বোধ সময়কে প্রবোধ দিয়ে ব্যাধি ও বোধের যুগলসন্ধী এই যাত্রা..."

বই দুটি পাওয়া যাচ্ছে:

বাংলা একাডেমি বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
চন্দ্রবিন্দুর ৬০৭ নং স্টলে,
চট্টগ্রাম বইমেলার চন্দ্রবিন্দু ১২১-১২২,
পাবনা বইমেলা স্টল নং ১৩,
সিলেট বইমেলা, স্টল নং ২৩-২৪,
খুলনা বইমেলা, স্টল নং ৮৬-৮৭,
এবং রকমারি.কম এ এখানে ক্লিক করে
মেলায় পাওয়া যাচ্ছে নৈরিৎ ইমু'র কবিতার বই 'না মর্মরে না মর্সিয়ায়'

মেলায় পাওয়া যাচ্ছে নৈরিৎ ইমু'র কবিতার বই 'না মর্মরে না মর্সিয়ায়'






ছবি: নুরেন দূর্দানী
 নৈরিৎ ইমু'র কবিতা একটি ঘোরের দিকে নিয়ে যায়। পড়তে পড়তে ক্রমশঃ মনে হয় এই বুঝি পাশকেটে চলে যাচ্ছে হতাশার আদিম বাতাস- মনে হয় ভেসে যাচ্ছি চুর্ণ হয়ে যাওয়া কার্নিশ ঘেষে কোন হিম স্রোতের দিকে। এবারের বই মেলায় প্রকাশিত হয় নৈরিৎ ইমুর দ্বিতীয় কবিতা বই 'না মর্মরে, না মর্সিয়ায়' বইটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন। নতুন বই সম্পর্কে জানতে চাইলে কবি বলেন "
'না মর্মরে না মর্সিয়ায়' নিয়া আমারে যখন কিছু বলতে বলা হইলো তখন ভাবতেছিলাম আমার আর বলার কি আছে। বস্তুত আমি যা বলার তা কবিতায় বইলা শ্যাষ করি। এমন কি তারপরে অনিয়মের নিয়মেও লিখা বইয়ের ফ্ল্যাপে নিজের নামের পরে পরিচয়টুকু নিয়াও বিব্রতবোধ করি। এই বইটাতে খুব দ্রুতসময়ে লেখা কিছু কবিতা আছে। সব কবিতাই মনোমুগ্ধ মগজগাঁথা হয়া উৎকৃষ্ট বইতে রূপান্তরিত হইছে এমন প্রত্যাশার কিছু নাই। এই বাংলাসাহিত্যঅঞ্চলে আমি তৃণসম, করুণ জীবন যাপন করি। কিন্তু তৃণ প্রকৃতিসৌন্দর্যের নিরবিচ্ছিন্ন অংশ তাও অস্বীকার করি না। ফলত মহীরুহকে সম্মুখে রেখে আমি তার ছায়ানিরব মায়াকে আরও নিবিড় করতে নিজেকে কিছুটা অংশগ্রহণ করাতে পারছি কিনা সেইটা পাঠক দেখবেন। তবে আমার গণজাগরণী ব্যাপক পাঠক নাই। দরকারও নাই সেটা। যারা আছেন তারা নিঃসন্দেহে ক্ল্যাসিক পাঠক। এইখানে অবকাশ রাখা যাইতো যদিনা পরিচিত অপরিচিত আমার পাঠককূল আসলে নিতান্তই বই সংরক্ষণ বা সৌজন্য রক্ষার ক্রেতা হইতো। তারা আসলেই সিরিয়াস পাঠক। একটা বোধকে কানেক্ট করতে পারা ও টেক্সটকে কবিতা হিসেবে নিঁখুত রাখা দুইটা বিষয় এখানে গুরুতর। এই বইতে দৃশ্যকল্পের দিকে মনোযোগী হইছি বলা যায়। আর যেইটা ভাবছি সেইটা সাধারণ যাপনচিত্র, টানাপোড়েন, অস্তিত্বের বিচার৷ আমি আসলে কি চাইতেছি সেইটা পরিষ্কার হইতে হইতেও আপনার মধ্যে দ্বিধা তৈরি করতে পারে৷ আমার ধারণা মানুষ রহস্যাবৃত সময়কালকে বেশি আগ্রহ নিয়া ধরতে চায়। "তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলে...." কবিতাও এমন ব্যাপার আর কি। অ কবীর সুমনকে কেন উৎসর্গ করছি এইটা নিয়া অনেকে জিজ্ঞেস করছে, বাংলা গানের দিক থেকে কবীর আমার কাছে বেস্ট একজন। ইচ্ছা হইলো তাই করলাম। সে কি, কেন বা ব্যাক্তি কবীর সুমনরে আমি চিনতে চাই না। একজন গায়ক যার গান আমার ভেতরে সাড়া আনে তারে করছি। প্রশ্নের মধ্যে আরেকটা প্রশ্ন পাইছিলাম, দ্বিতীয় বই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আপনের বই কেমন মনে হইতেছে? আমি উত্তরটা দিচ্ছি। আমি কবিতাই করি, কবিতাই করবো। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় জানি না। যদি কিছু রাইখা যাইতে পারি তো কবিতাই তো রাইখা যাবো।"

বইটি পাওয়া যাবে বাংলা একাডেমি বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চন্দ্রবিন্দুর ৬০৭ নং স্টলে,

চট্টগ্রাম বইমেলার চন্দ্রবিন্দু (১২১-১২২),
পাবনা বইমেলা স্টল নং ১৩
সিলেট বইমেলা, স্টল নং ২৩-২৪
খুলনা বইমেলা, স্টল নং ৮৬-৮৭
এবং রকমারি.কম এ এখানে ক্লিক করে

অলৌকিক সত্তায় শক্তিমান কিংবদন্তী র‌্যাবো || অনুপম চৌধুরী

অলৌকিক সত্তায় শক্তিমান কিংবদন্তী র‌্যাবো || অনুপম চৌধুরী






‘পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের বাঁধনে বন্দী মানুষের জানাটা অত্যন্ত সীমিত এবং অজ্ঞ ও অন্ধের জানা। এই বৃত্ত থেকে একবার মুক্ত হতে পারলে তবেই মানুষ পঞ্চ-ইন্দ্রিয় বহির্ভূত অজানা, অচেনা, অসীম, অনন্ত আরো একটি জগৎকে জানতে পারবে এবং তখন সে নিজেই উপলব্ধি করবে যে- সে অসীম, অনন্ত ও প্রচণ্ড অলৌকিক সত্তায় শক্তিমান আর তখনই সে ছুঁতে পারবে, অনন্ত-অসীম, বিশাল ও ব্যাপক অন্য আরো একটি জগৎ ও সত্তাকে।’

- জ্যঁ নিকোলাস আর্তুর র‌্যাবো

ব্যাবোর কথাই বলছিলাম। পুরো নাম জ্যঁ নিকোলাস আর্তুর র‌্যাবো । ফরাসি কবি। মাত্র ৩৭ বছর বেঁচেছিলেন। জীবনকে তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে বেহিসাবি জীবন লালন করতেন। এই অল্প বয়স নিয়ে সাহিত্যের এক বিশাল জায়গা দখল করে নিয়েছেন এই মহানায়ক। অনেক বাঘা-বাঘা সাহ্যিত্যের উজ্জ্বল লেখক পাত্তা না দিলেও একটা সময় অল্প লিখেও সাহিত্যের উঁচু স্থানটি দখল করে নিয়েছেন র‌্যাবো। জীবনের নানা বাঁকে নানা চড়াই-উৎরাই লেগেই ছিল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেন নি কেউ। এমনকি তার পরিবারও ব্যর্থ। এই মহানায়ককে নিয়ে বাংলা ভাষায় তেমন একটা লেখা নেই এবং কম লেখকই ওনাকে নিয়ে লিখেছেন। কিংবদন্তি এই ব্যাক্তিকে নিয়ে লিখেছেন মঈন ফারুক। যে বইয়ের নাম দিয়েছে- ‘ক্ষণজন্মা কিংবদন্তী’। লেখক যথার্থ নাম দিয়েই ওনাকে স্মরণ করেছেন। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে আগস্ট-২০১৯ এ প্রকাশিত হয় এই অনুবাদ গ্রন্থ। যা ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছেন অনুবাদপ্রেমী পাঠকদের হৃদয়ে। এই কাজ নিঃসন্দেহে বিশাল কেননা ব্যাবোকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখ্যযোগ্য তেমন কোন কাজ নেই। কবি মঈন ফারুক সে কাজটি করেছেন। ভিতরের কোন এক তাড়না থেকে তিনি র‌্যাবোকে উন্মোচন করেছেন পাঠকদের সামনে। 
বইটিতে র‌্যাবোর জন্ম থেকে মৃত্যু অবদি লেখক জীবনই স্থান পেয়েছে, বলা যায় পূর্ণাঙ্গ র‌্যাবোকে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন লেখক। বইটিতে র‌্যাবোর কিছু কবিতা অনুবাদ থাকলে ষোলকলা পূর্ণ হতো। হয়তো লেখক র‌্যাবোকে নিয়ে আরও কাজ করবেন বলে কবিতা অনুবাদ এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেননি। বইয়ের শুরুতে প্রাককথাতে মঈন ফারুক বলে দিয়েছেন, আশি পৃষ্ঠার এই বইয়ের ভিতরে পাঠকদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। তিনি বলেছেন- ‘র‌্যাবোর চিন্তা কী ছিলো? কী করতে চাইতেন? কী খুঁজতেন? এমন বহুবিধ প্রশ্ন অজানা মনে প্রশ্ন আশ্রয় নেয়।’ 
এই আশ্রয়ের উত্তর পাওয়া যাবে এই বইয়ে। আরেকটু বলি, ১৮৫৪ সালে ২০ অক্টোবর তিনি ফ্রান্সের শার্লভিল-মেজিয়ের শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার অধিকাংশ কবিতাই লিখেছিলেন কিশোর বয়সে। 
র‌্যাবোর পরিবারটি ছিল মধ্যবিত্ত। বাবা সৈন্য, মা গৃহিনী। ইসাবেল নামে এক বোন ছিল র‌্যাবোর। বড় এক ভাইও ছিল। র‌্যাবোর বয়স তখন দু’বছর- তখনই তার মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। বাবা নয়, র‌্যাবোর ছেলেবেলা জুড়ে ছিল মায়ের কঠোর শাসন। মায়ের শাস্তিও ছিল অদ্ভুত রকমের, পড়া না পারলেই ১০০ লাইন লাতিন কবিতা মুখস্থ করতে হত। এরপরও আবৃত্তি ভুল হলে খাবার জুটত না। ৯ বছর বয়েসেই তাই ৭০০ লাইন লাতিন কবিতা ঠোটস্থ হয়ে গেছিল র‌্যাবোর। তাদের বাড়ির নিচেই ছিল বিরাট এক লাইব্রেরি। খুব অল্প বয়সেই সেখানে বসে তিনি ফেনিমোর কুপার, গুস্তাভ আইমোর, জুল ভের্ন থেকে শুরু করে হেগেল ও সোয়েডনবর্গের দর্শন, প্রুদম, ফ্রান্সের লোককাহিনী এবং ইতিহাস ও সাহিত্য, এমনকী প্রাচ্য তথা ভারতীয় ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ, দর্শন, ধর্ম প্রচারক এবং দেব-দেবী ও দেবালয় সম্বন্ধেও পড়াশুনো করেন। মাত্র সতেরো বছর বয়সেই অত্যন্ত আলোড়ন উদ্রেককারী কবিতার মাধ্যমে তিনি প্যারিসের কবিসমাজকে উদ্বেলিত করে তুলেছিলেন। তার মাতাল তরণী কবিতাটি পড়ে সেযুগের ফ্রান্সের অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় প্রতীকবাদী কবি পল ভর্লেন তার প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়েও উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি সব ধরনের সৃষ্টিশীল লেখালেখি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি আরব এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করেন। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৮৯১ সালের ১০ নভেম্বর মৃত্যুকে বরণ করেন। তার বিখ্যাত লেখার মধ্যে নরকে এক ঋতু, মাতাল তরণী এবং গদ্য কবিতা ইলুমিনাসিও অন্যতম।

র‌্যাবোর জীবন ছিলো অন্য দশটি জীবনের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। তার জীবনের সমস্ত কিছু এই বইতে পাবেন। বইয়ের দাম রাখা হয়েছে- ২০০। প্রচ্ছদ করেছেন- আল নোমান। বইয়ের প্রচার ও প্রসার কামনা করছি। বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারে এ রকম আরো লেখা যোগ হোক।

র‌্যাবোর একটি কবিতা দিয়ে লেখা শেষ করব- ‘মরুভূমি প্রান্তর ভালোবাসি আমি, শুকনো ফলাদির বাগান, ফ্যাকাশে ম্রিয়মান পরিত্যক্ত আলয়, শীতল পানীয় জলের স্পর্শের ধারা। নিজেকে টেনে নিয়ে যাবো পচা দুর্গন্ধের অলিগলি দিয়ে বন্ধ চোথের কাছে, সোপর্দ করবো তীক্ষ্ণ আলোক রশ্মির দিকে, আগুনের স্রষ্টা যিনি।’ 
...দুধের গাই—এজমালি বাগান... ও এক লিপিচাষির স্লেট ।। নকিব মুকশি

...দুধের গাই—এজমালি বাগান... ও এক লিপিচাষির স্লেট ।। নকিব মুকশি

লোকে বলে আমি অন্যমনস্ক। প্রাত্যহিক জীবনের চলমান কাজের প্রতি একাগ্র নই। এই ধরুন, ব্রাশে টুথপেস্ট লাগাতে গিয়ে ফেসিয়াল ক্রিম লাগিয়ে ব্রাশ করতে শুরু করি, তখনই বোধোদয় হয়; বাথরুমে যেতে গিয়ে কলপাড়ে চলে যাই, তখনই বোধোদয় হয়; যেটা আনার জন্য অন্দরমহলে ঢুকি, সেটা না নিয়ে কিংবা কিছুই না নিয়ে আবার বেরিয়ে আসি; একই রুমে বসে আছি কাছাকাছি, কেউ ডাকছে বারবার, তবু কর্ণপাত নেই—এমন সব ঘটনা ঘটে রোজ। ছোট বেলায় মা মনে করতেন, আমার কানে কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু না, কিছু দিনের মধ্যেই মা বুঝতে পারেন যে আমার কানে কোনো সমস্যা নেই, শুধু মা না, বাড়ির প্রায় সবাই বুঝতে পারে যে আমি কী যেন ভাবি, কী সব ভাবনায় মশগুল থাকি, কোথায় যেন হারিয়ে যাই! ফলে মার কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই শোনা লাগতো, ‘ডাকলে আমল করস না কা’, ‘আমলহারা হয়ে গেছ’। আজ আমার মনে হয়, সত্যিই আমি মাঝেমধ্যে আমলহারা হয়ে যাই। আমার এক জগৎ আছে, সেখানে নিজের খেয়াল-খুশিমতো ঘুরে বেড়াই। এক নিজেকে প্রতিপক্ষ দাঁড় করে আরেক নিজেই অসি-মসিযুদ্ধে নেমে পড়ি। আকাশের মেঘের লগে, কখনো এই নদী-জল-পাহাড়-মাটি-মানুষ ও ঈশ্বরের লগেও তর্ক করি; হাওয়ায় প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুঁড়ে মারি। মাঝমধ্যে কোন কোন প্রশ্নের উত্তর পাই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর পাই না। প্রাইমারি স্কুলের হাওয়াও এমনই ছিল। একাই চলতাম, একাই এক বিশাল জগৎ নিয়ে ঘুরতাম।

একার মাঝে সেই হারিয়ে যাওয়ার, ভ্রমণ করার ঘটনা এখনও ঘটে। ভেতরের আমিটি যখনই একটু মুক্তি পায়, তখনই সে আমাকে নিয়ে উড়াল দেয়। নিজেকে খুড়তে ভালো লাগে, যতটা না খেলতে ভালো লাগে। মনে করি, আমার সমস্ত আমিত্ব এই আমার অন্তরেই লুকিয়ে আছে। তাকে খুড়ে বের করা আমারই দায়িত্ব। ফলে আমার অন্দরমহল একা হলেই আমি প্রত্নতাত্ত্বিকের ভূমিকায় নামি। বিশ্বাস, সেখানে অনেক মণি-মরকত, প্রিজমরশ্মির পাতলা পর্দায় ঢেকে আছে। তারা বের হতে চায়। তারা মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আমারই তাকিয়ে আছে।

মনে হয়, পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী, যারা আত্মদাগে নিজের স্লেট ভরে শ্বাশত আকাশে ঝুলিয়ে রাখতে পারে, যা অন্য প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়োজন নিজের আত্মাকে ফাটানো। চূর্ণবিচূর্ণ করে তার ভেতরের নির্যাস বের করে আনা। ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন বলে প্রতিটি মানুষ আলাদা, তেমনি প্রতিটি মানুষের আত্মার রঙও আলাদা। সেখানে যদি ডুব দেওয়া যায় এক জীবনের নিশ্বাস নিয়ে, তবে নিজের আকাশ তুলে মানুষের দরবারে এনে পতাকার লাহান পতপত করে উড়ানো যায়। মানুষ সেখানে সমবেত হয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ ছায়া, মায়া ও প্রেম দেখতে পায়।

আমার অনেক দিনের চেনা রাস্তাও প্রায়শই অচেনা ঠেকে। অতি পরিচিত জায়গাটির নামও হঠাৎ ভুলে যাই। যে এলাকায় বহু বছর ধরে থাকি, সে এলাকায় যেন আমি এইমাত্র এলাম—এমন পরিস্থিতে ফেলে আমার চোখ ও স্মৃতিশক্তি। আনমনা হয়ে পথ চলাই হয়তো এর অন্যতম কারণ কিংবা সত্যি সত্যিই আমার স্মৃতিশক্তির অবস্থা খুবই বাজে, নিম্ন লেভেলে আছে। আমি পথ চলি, পথেরই কোনো একটি বিষয় নিয়ে পথেই হারিয়ে যাই। ফলত পথের পাশের বিষয়বস্তু আর চেনা হয়ে ওঠে না। যে পথে প্রতিনিয়ত কাজে যাই, রোবটের লাহান সে পথেই অচেতন হয়ে চলি—যেন আমি এক অন্ধ, পূর্ব অভিজ্ঞানই আমাকে নিয়ে যায় গন্তব্যে।

একদিন পথ চলতে চলতে মাথায় আসলো ‘গাইবাঁট—ঝরনার বরফ...’ এমন একটি লাইন। মনে হলো, বাহ্, এমন মেটাফর, সুর ও সিনটেক্সে কিছু কবিতা লেখাই যেতে পারে। ওই দিন এ একটা লাইন নিয়ে সারাটা দিন কাটলো। কতভাবে ভেবেছি লাইনটি নিয়ে, কতভাবে নিজেকে মুগ্ধ করেছি। গাইয়ের স্তনের বোঁটা ও জল চুঁইয়ে পড়া বরফের প্রান্তবিন্দু একাকার হয়েছে এ লাইনে, যা আমার ভেতর চিন্তা-দর্শনের ব্যাপন ঘটিয়েছে ব্যাপক। লাইনটির ব্যাখ্যা অনেক বড় করে, অনেক অ্যাঙ্গেল থেকে দিতে পারি। কিন্তু কবির পক্ষে এই ব্যাখ্যা করাটা শোভন মনে করি না।

এই ফর্মে নতুন উদ্দমে একটি পাণ্ডুলিপি দাঁড় করানোর চেষ্টায় কবিতাখেতে নেমে পড়লাম। বেশ কতগুলো কবিতা লেখা হলো। কবিতাগুলোর নাম দিলাম—‘হেজিমনিক পোয়েট্রি’। এমন নামের কারণ হলো কবিতাগুলোর ফর্ম ও সুর। গ্রামসির কালচারাল হেজিমনির ধারণা থেকেই কবিতায় হয়তো এই নামটি এসেছে। মনে হলো লাইনগুলোর অ্যাপ্রোচে আধিপত্যবাদীর আচরণ লক্ষ করা যায়। সুরটাও আনকোরা। ফর্মটাও কেমন অকবিতার-অকবিতার! হয়তো অনেকেই এগুলোকে কবিতা বলতে নারাজ হবে। তা-ই যদি হয়, তবে এ টেক্সটের নাম কী দেওয়া যায়? পৃথিবীতে যা কিছু প্রচলিত, তা একসময় ছিল না, আর্বিভূত হয়ে প্রচলিত হয়েছে সময়ের পরিক্রমায়। আবার এই প্রচলিত ব্যাপারটিও একসময় অপ্রচলিত হয়ে যায় নতুন প্রচলনের ভাঁজে পড়ে অর্থাৎ আমরা দেখতে পাই, অপ্রচলিতকে প্রচলিত করার মধ্য দিয়েই পৃথিবী গতিশীল রয়েছে। আমার একটি লাইন আছে এমন—‘একটি বসন্তকে ঢেকে দিতে পারে কেবল আরেকটি বসন্তই’। ফলে মনে হয়েছে, মানুষ ও অন্য প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে মানুষ প্রতিনিয়ত একটি অর্জনের ওপর দাঁড়িয়ে আরেকটি অর্জন নিয়ে আসে, অপ্রচলিতকে প্রচলিত করে; কিন্তু অন্য প্রাণীরা জিনপ্রাপ্ত গুণে ভর করে একই বৃত্তে ঘুরপাঁক খাচ্ছে, যেখানে নিজের সত্তা টিকিয়ে রাখা ছাড়া আর কোনো অর্জন নেই। মনে করি, পৃথিবীতে মানুষ যা কিছু আবিষ্কার করে নতুন বলে প্রচার করছে, তার মূলমন্ত্র ও নির্যাস এখানেই নিহিত। মানুষ শুধু তার একটি রূপ, শৈলী ও নির্যাস দিয়ে ভিজিবল করছে মাত্র। ফলে এই ভিজিবল অবজেক্ট বা চিন্তাগত বিষয়কে নতুন না বলে আমি বলি অপ্রচলিত। বলি এ কারণে যে এগুলো এখানেই ছিলো, মানুষ জোঁড়াতালি দিয়ে প্রচলিত করছে মাত্র।

বই আকারে প্রকাশের আগে ‘হেজিমনিক পোয়েট্রি’ নামটি পরিবর্তন করে অবশেষে রাখলাম—‘...দুধের গাই—এজমালি বাগান...’ এবং যে ফর্মে কবিতাগুলো লেখা হলো, তার নাম রাখলাম—‘হেজিমনিক ফর্ম’। অন্যত্র এই বইয়ের করণকৌশল ও ফর্ম নিয়ে লিখবো। বইটিতে একটি পঙক্তি আছে, ‘গাভির দুধ—মহান মানুষের নির্ঝর—সাপও খেয়ে যায় রাতেবিরাতে...’। আমার জগতে সাপও গুরুত্বপূর্ণ, উপযোজক। দুধ পেলে সাপেরও বিষ ঝরে না। আরেকটি লাইন এমন, ‘সমস্ত ফুল—জারজ সন্তান—পিতার সন্ধানে নামেনি কোনো দিন...’। সুন্দর নিজেই স্বয়ম্ভু, পিতা তারই কাছে নত, তারই মুখাপেক্ষী। পুরো বইজুড়ে এভাবেই আমি বস্তুজগৎ ও হাওয়ালোককে দেখেছি। পাঠককে বলেতে চেয়েছি, মেয়েটির চিবুকে, ঠোঁটে, নাকে কিংবা বুকের ঠিক ওপরে যে জ্বলজ্বলে তিল দেখতে পাচ্ছো, মূলত এটাই চাঁদ, তুমি বিশ্বাস কর এটাই চাঁদ, নক্ষত্র। এভাবেই হেজিমনি তৈরি হয়েছে এই কবিতাখেতের আলপথ ধরে।

অন্য পাড়ে, অন্য গ্রহে নিজের আত্মার সঙ্গে সংলাপে মশগুল থেকে কবিতায় এক ভিন রঙ দিতে চেয়েছি। সন্দেহ প্রকাশ করেছি, ‘বন্ধ্যা বাগানের পাশে কারা যেন রোজ রোজ ছড়ায় বাজারের ঘ্রাণ...’। ফণাতন্ত্রের আদলে যে ফ্যাসিজমের শির উচিয়েছে, তারই নেমপ্লেটে বসেয়েছি ‘পিল—মীন না জানা এক চিল...’ নামের অশ্রুত পঙক্তি। বিশ্বের যেখানে মানুষের চোখে ফোটে ‘বিবাহদেহ—গম-রঙের ভূমি’, আমি সেখানেই ডাকি, এসো ‘দুধের গাই—এজমালি বাগান...’, আমাকে তোমার সন্তান কর। আমি তোমার প্রতিরূপ দিয়ে পৃথিবী ভরে দেবো, তবেই মুছে যাবে রক্তবাদ ও সমস্ত মানচিত্র। আমরা দলে দলে হয়ে যাব দুধের গাই, হয়ে যাব এজমালি বাগান।

নকিব মুকশি
ফার্মগেট, ঢাকা

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, এক্সিলেন্ট আইডিয়াল স্কুল। বর্তমানে একটি দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত।

সম্পাদক, চাতর (সাহিত্য পত্রিকা)

পড়াশোনা:

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

প্রকাশিত বই:

প্রতিশিসে অর্ধজিরাফ, জেব্রাক্রসিং প্রকাশন, বইমেলা-২০১৯।

...দুধের গাই—এজমালি বাগান..., চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, বইমেলা-২০২০

ডুবোজাহাজের ডানা’ এক পরিণত কবির নিবেদন

ডুবোজাহাজের ডানা’ এক পরিণত কবির নিবেদন

(কবি জিললুর রহমান বলছেন মোশতাক আহমদের কবিতার বই ‘ ডুবোজাহাজের ডানা’ নিয়ে) 

কবি মোশতাক আহমদকে পড়ে আসছি, দেখে আসছি আশির দশকের শেষার্ধ থেকে; তিনি আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চর্চা আর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সতীর্থ। কবি মোশতাক আহমদ তাঁর প্রথম বই ‘সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট’ থেকে ক্রমাগত নিজের কবিতার ভাষাকে, কবিতার প্রকরণকে পালটে নিচ্ছেন। এটা জীবনেরই ধর্ম, কবিদের ধর্ম।

‘ ডুবোজাহাজের ডানা’র নামকরণে আছে ইঙ্গিতময়তা। এ যেন অন্তরালে থেকে কবির নিজস্ব পদ্ধতিতে জগতের সংবাদ অবগত থাকা। সামুদ্রিক অনুষঙ্গ প্রধান এই বইটি চারটা পর্বে বিভক্ত, চারটা পর্বেই আছে বিষয় ও আঙ্গিকের ভিন্নতা। প্রথম পর্ব ‘সাবমেরিনের সার্সি’তে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। ‘অনুপস্থিত জলের এলিজি’ একটি ইঙ্গিতময় কবিতা যেখানে কবির পরিণত হবার ছাপ পাওয়া যায়, ‘দুরত্বের গান’ কবিতায় আমাদের অনিত্য জীবনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন-

‘ জলরঙ ছবি আমি

ধুয়ে যাব প্রথম বর্ষায়।‘

তাঁর কবিতা ভিন্ন ভিন্ন পাঠককে ভিন্ন ভাবে ভাবায়।
দ্বিতীয় পর্বের কবিতাগুচ্ছ ‘দীর্ঘ ইমন’। কাহিনির আভাস পাওয়া যায় অন্য আমেজের এই কবিতাগুচ্ছে। ‘চন্দ্রনাথের প্রজাপতি ‘ একটি অসাধারণ স্মৃতিকাতর কবিতা। স্মৃতিময়তা আর বন্ধু বাৎসল্যের স্বাদ পাই ‘হস্তরেখার আলপথে’ কবিতায়, কিংবা ‘তারাপদ রায়ের কাণ্ড’ কবিতায়। কবিতাগুলোতে কবির স্বর পালটানো খুবই উপভোগ্য। কবি প্রতিনিয়ত স্বর, সুর পাল্টাচ্ছেন সেই চিহ্ন তাঁর কবিতায় আছে।

‘গদ্যগহন করোটি’ পর্বের কবিতাগুলো টানা গদ্যে লেখা। ভাব গাম্ভীর্যে আমাদেরকে অন্য এক বিপন্ন বিষ্ময়ের দিকে ঠেলে দেয়। আমরা বরফ যুগের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি; কিন্তু যতদিন পৃথিবীতে জীবন আছে, কবিরা জীবনের কথা বলবেন, অমরতার কথা বলবেন। এই বইতে বয়সোজনোচিত কারণেই মোশতাকও নানাভাবে এই বিষয়টা নিয়ে এসেছেন।

‘আর্ত চতুর্দশী’ পর্বে কয়েকটি সনেট আছে; এই সনেটগুলোই মোশতাক আহমদের এই বইয়ের প্রাণভোমরা! শেষ সনেট ‘সমুদ্রপীড়া’য় অসাধারণভাবে সময় ও জীবনকে ধরেছেন -

গড়িয়ে পড়ছে ধীরে দালির ঘড়িটা

পাণ্ডুর সময় গিলেছে সমুদ্রপীড়া ।

কবি মোশতাক আহমদ তাঁর কবিতায় বঙ্গীয় উত্তর আধুনিকতার কিছু নিদর্শন রেখেছেন; আন্তর্বয়ন নিয়ে খেলেছেন বিভিন্ন কবিতায়। তাঁর ‘ছেলেবেলার গানে’র আন্তর্বয়নে মনে পড়ে যায় ঠাকুর কবির বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুরের কথা, ‘ নকটার্ন’ কবিতায় এসেছে ‘জীবনদাশের ধুসর জগত’ কিংবা ‘ভ্যানগগের তারাভরা রাতে’র কথা। এক এক কবিতায় এক এক কৌশলে তিনি আন্তর্বয়ন ব্যবহার করেছেন।
 চিত্রকল্প ব্যবহারে তাঁর মুন্সিয়ানা আছে। ছন্দ নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু ছন্দের ধারাবাহিকতা পাওয়া যায় না। হয়তবা কথনের স্পন্দনে অধিক বিশ্বাসী । ছন্দের ব্যাপারে সমালোচকদেরকে অগ্রিম জবাব দিয়েও রেখেছেন ‘ডাইলেমা’ কবিতায়- যেখানে ছন্দ লেখা আর কবিতা লেখার কথা নিয়ে কাব্যিকভাবে বিতর্ক করেছেন-

‘রূপকথার পাতা থেকে লাফ দিয়ে পালানো বিড়ালের হাসি

অস্তনীল আকাশের রঙে হারায় কবিতার মত,

বেওয়ারিশ ভাসছে ছন্দের শাদা ইজেল।

বিড়ালেরা হারিয়ে যায় হাসিগুলো রেখে

আকাশ হারিয়ে গেল গাঢ় নীল ছোপে।

তাহলে কবিতা লিখো না, ছন্দই লিখো

মনে কর যদি
অমরতা আর ঋদ্ধি
ওখানেই জায়মান!

তাহলে ছন্দে লিখো না, কবিতাই লিখো
মনে কর যদি
রক্ত অশ্রু নদী
শিয়র অবধি!'

মোশতাকের এই কবিতা নিয়ে অন্য একজন আলোচকও বলেছেন, “ কবি জিগ্যেস করছেন, তুমি কি ছন্দ লিখতে চাও নাকি কবিতা লিখতে চাও! কেউ বলবে যার ছন্দ নাই, তার কবিতাও হয় না; অর্থ্যাত শিল্পের জন্য শিল্প। কেউ বলবে জীবনের জন্য শিল্প। মোশতাক হচ্ছে এই দুই ধারারই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।“

মোশতাক লিখে যাচ্ছেন কবিতা, গল্প, স্মৃতিকথা, অনুবাদ কবিতা। তিনি বাংলা সাহিত্যের জন্য একজন জরুরী লেখক। ‘ ডুবোজাহাজের ডানা’ এক পরিণত কবির নিবেদন।

( ডুবোজাহাজের ডানা, কবিতা, বাতিঘরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কবিতাভবন থেকে প্রকাশিত, ফেব্রুয়ারি ২০২০, প্রচ্ছদ নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, মূল্য ১৩৪ টাকা)