তমাল রায়


শান্তিনিকেতন থেকে
তুমি বলেছিলে যতদূর আছি, স্পর্শ করে থেকো আমার না-ঘুম রাতে তারারা যখন এক এক করে নিভে আসতো, অপেক্ষায় থাকতাম যদি সেই উত্তর আকাশে হঠাৎ জ্বলে ওঠে অরোরা বোরিয়ালিস মেরুকরণের দুনিয়ায়, তোমায় কেবল ভাগ করা যায়নি, যেমন যায় না বাবা, মাকেও হাসগুলো যখন হেঁটে যায় পুকুরের স্নান শেষ করে, দেখো তাদের মধ্যে মিলি জুলি কম কেমন অপ্রাসঙ্গিক সাযুজ্যহীনতা আবার পিঁপড়েদের দেখো তারা কি প্রবল সুশৃঙ্খল মানুষও তাই, কিছু সম্পর্কিত, কিছু আপাত তাল, হুঁশহীন তুমি যাকে শেষ বলে জেনেছ, তা হয়ত কারো কাছে শুরু আপাত অলংকারহীনতায় জীবনে অমল আলো এসে পড়ে কখনো, যেমন তুই কোথা থেকে হঠাৎ...বারান্দায় পড়ে থাকা পালকটা হাতে নিতেই মনে পড়ে গেল

জার্মানদার ধাবা, সূর্য ডুবছে, চারদিকটা রাঙা হয়ে উঠছে ক্রমশ, লাল আলোর গুঁড়ো মেখে তুই এলি সাইকেল চালিয়ে সুরুল গ্রামে যেদিন প্রথম ক্যাম্প করতে গেলাম, নির্মল সর্দারের বাবাকে ডিটক্সিফিকেসন করানো চলছে, সেদিন এরপর এই দেখা দ্বিতীয়বার দেখা মানে দেখাতো নয়, কথা, দেখেছিতো তার আগেও, কলাভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আমি অংশু, সোপান, আর তুই গৌর প্রাঙ্গণের দিকে চলে গেলি এক বন্ধুর সাথেই চোখ এড়ায়নি আমার ভালো লেগেছিল খুব সে কথা বললে মিথ্যে বলা হত তবে চোখ আটকেছিল তোর স্মার্টনেস, ক্যাজুয়াল ওয়ার, একটু পুরুষালী গলায় সেদিন তুই এগিয়ে এসে বলেছিলি-
এম.এস ডব্লিউ?
মাথা নেড়েছিলাম
- এলমহার্স্টে যাও?
আমিতো ভ্যাবাচ্যাকা
একটু পর আম্র কুঞ্জে বসে ভদকা খাচ্ছি আমরা তিন বন্ধুকি চাটান না চাটলো আমায়

আমার রাগ হচ্ছিল, তোর এত স্মার্টনেসের কি অর্থ সাল ৯৪, ৯৫, ৯৬ ৯৭-অল্প কিছু টান জানিস রয়ে যায় গুরুদেব, তুই আর শান্তিনিকেতন মনে পড়ে? দোলের আগের দিন শ্রী সদনের হোস্টেলের সামনে ঢোল, করতাল নিয়ে উদ্দাম নৃত্য তোরা ওপর থেকে জল ঢালছিস মাথার ওপর গোল চাঁদ আর আমরা গাইছি- আমার, চাঁদের আলো... উফফফ

কি দ্রুত সময় চলে যায়, তাই ভাবি এই ২০১৫ তে এসে দেখছি সব বদলে গেছে কোপাই আরো সরু আমি উচ্চতায় দীর্ঘ হলেও আদতে বামন অবশ্য গুরুদেবই তো লিখেছিলেন -আমাদের ছোট নদী চলে এঁকে বেঁকে তখনও নিশ্চিত খুব সরু ছিল তার চেহারা গতি ধীর ময়ূরাক্ষীর ক্যানাল পাড়ে বসে দেখছিলাম সেই প্রাণস্পন্দন আর নেই, বর্ষা আসলে আবার হয়ত ফুলে ফেঁপে উঠবে সব, অথবা উঠবে না তবে সম্ভাবনা খুব কম তোর মনে পড়ে সেদিনের কথা? কি প্রবল বর্ষা আর আর তুই আর আমি, আমি আর তুই বল্লভপুর ডিয়ারপার্কের ওয়াচটাওয়ারে আমরা চারজন অথবা দুজন এই অথবা গুলো বেশি ভীড় করলে জীবন কেমন ক্লিশেড ভিজে সপসপে তবু তুই ধরলি-দূরে কোথায় দূরে দূরে, আমি একটু পাশে সরে এলাম তুই ঠোঁট রাখলি আমার হাতে, আমি ঠোঁট রাখলাম তোর গোলাপি... আর কেমন যেন, লোরেটোর তৃণা, কি আনস্মার্ট সেদিন তাকাতে পারছিস না আমার দিকে আর সেই প্রথম আমার সাহস গেল বেড়ে গুরুদেব লিখেছিলেন -রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে সেদিন কেন জানিনা তুইও বললি, ওই একই কথা তবে আমার চোখের দিকে চেয়ে

আমি কেমন দ্রব হয়ে কেঁদে ফেললাম মা নেই কতদিন, আমার আকাশে চিল কাক ওড়ে, শিউলি ফোটেনা কত দিন একা বাবা আছেন কিন্তু না থাকার মত চার দিক কেমন স্টাফি, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তুইও চলে গেলি বোকারো,আর আমি? কোথাও যাবো, বল, জানিনা কিছুই, এদিকে টাকারও দরকার বাঁচার আবশ্যক শর্ত নিলাম রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিই তুই তখন উঠে আসছিস প্রবল হয়ে যেভাবে টেথিস সাগর মন্থনের পর, হিমালয়, সে তো আজীবন কিশোর তার উচ্চতা আজওতুই ও

পুরুষের এই এক সমস্যা এই উপমহাদেশে তাকে এস্ট্যাবলিশড হতেই হবে আমার এই বেড়ে ওঠা অথবা বামনত্বের সারাটা সময় ছিল প্রবল সঙ্কটময়, উঁহু কন্টকময়! বাবা চলে গেল, আমি রক্তাক্ত হতে হতেই পায়ের তলায় একটু মাটি পেয়ে তোর খোঁজ করতে গিয়ে দেখি তুই নেই বিশ্বাস কর পাগলের মত লাগছিল খুঁজছিলাম তোকে পাইনি বোকারোতে পৌঁছলাম, কোয়াপরেটিভ কলোনি, সেক্টর ফোর- তুই কই? মেসোমশাই বেরিয়ে এসেছিলেন আমার ডাকে খানিক আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থেকে অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন -ও তো নেই...তুই নটিংহ্যাম এ অনেকপরে জানলাম বোকারো হাওয়াইয়াড্ডাতো পাশেই চুপ করে বসেছিলাম চারদিকে আর জে ডির পতাকা, লালু প্রসাদের সুখ্যাতির মাঝে ভাবছিলাম আমি এক রিয়েল জোকার লাইক হিম হা হা হা তুই কোথায় জানিনা আমিও কি আছি? কিভাবে থাকে মানুষ এভাবে একটা গোটা জীবনবাগানের গাছগুলো নেই জাঠতুতো, খুড়তুতো দাদাদের পাল্লায় পুরনো বাড়িও নেই বকুল, শিউলি নেই বোগেনভোলিয়া যে বাগানে থাকে সেখানে দৃষ্টি এসে তাতেই আটকায় বোগেনভোলিয়াও নেই, কেমন এক বৈধব্য তুই তখন কোথাও নেই ভ্যানিশড অর এলস ব্যানিশড

অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ্র মধুর

না তরণী বওয়ার মত বাতাস ছিল না সে সময়ে নইলে আমি নিজেকে কোকুন করবো কেন? আদিবাসী জীবনের সাথে হাজার রিস্ক ফ্যাক্টর নিয়েও জড়াবো কেন আমি? আমি চাই সাঁওতাল তার তার ভাষায় বলবে রাষ্ট্রপুঞ্জে, আমি চাই গোলাপ ফুটবে শৌখিনতার গোলাপ কুঞ্জে আমি চাইছিলাম, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বড় একাকীত্ব বড় কুরতে থাকে জানিস? ২০১৩ আনলাকি থার্টিন কেউ আসেনি কোথাও আমার জীবনেআমি দ্রাবিড়কূল জাতক ব্রাত্য অস্পৃশ্য একা স্রেফ একা

আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি বাইরে কোকিল ডাকছে এও হয়ত এ ট্র্বাজেডির এক পূর্বনির্ধারিত চরিত্র ঠিক এক মাস আগে ফেসবুক সার্চ করে ফাইনালি তোকে পাওয়াআর আহ রাত পোহালে ভ্যালেন্টাইনস ডে আমি তোকে কাল বলব
- তৃণা, বি মাই ভ্যালেন্টাইন

কিন্তু এ,কি পোস্ট?  আজ এই রাত এগারোটায়, কেন লিখলেন স্টিফেন অগাস্টিন
-মাই ডার্লিং ইজ নো মোর
তুই ওনার? ভ্যালেন্টাইন? তাহলে আমার কে? আমি যে গত কদিন কত জায়গা ঘুরে ২০ টা রক্ত গোলাপ জমিয়ে রেখেছিলাম তোর জন্য শুধু তোকেই দেব? তোকেই?

আজ আমি বল্লভপুর ডিয়ার পার্কের ওয়াচ টাওয়ারে, একা, বৃষ্টি নেই তবু জানিস ভিজে যাচ্ছে সব চোখে যে কি পড়ল? খড়কুটো না কড়ি বরগাআমি গাইছি-দূরে কোথাও দূরে, দূরে, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছে না তুই শুনতে পাচ্ছিস? তৃণা, আমার তোর হাত ধরতে ইচ্ছে যায়, তুই যেখানেই থাকিস, যে গ্রহে নিশ্চিত তোর ইনবক্সে দেওয়া এই চিঠি তুই পাবি, তৃণা, একবার ভালোবাসি বলবি প্লিজ? জানি আমি তোর যোগ্য ছিলাম না কখনো, কিন্তু আমি তো নিজেকে নির্মাণ করেছি, কিন্তু তুই যে আম্রকুঞ্জে আমার হাতে হাত রেখে বলেছিলি, গৌরপ্রাঙ্গনের দিকের  ওই ডান দিকের তৃতীয় গাছটা নিশ্চিত মনে রেখেছে সে ইতিহাস? আর তুই?

SHARE THIS

Author: