ঝুল বারান্দায় ফুটে আছো অলৌকিক নারী, সাত সমুদ্র
তের নদীর ওপাড়ে এখন, যেমন তখন জ্বরের চেয়েও
দহন বেলার রাত, অন্ধকারের শান্ত প্রতিবাদ তাচ্ছিল্য
করে
তুমি ক্ষ্যাপাটে মানুষটাকে সম্পূর্ণ ভাবতে।
ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে প্রশ্ন করেছিলে – কেন ভালবাস?
ভাষার মাসে ভাষা হারিয়ে ফেলবার মতন অবস্থায়, চোখের
জোয়ারে ভেসে যেতে যেতে লোকটা বলেছিল – বুকে আমার
ফুটেছে বকুল।
এবার তোমার পালা, ন যযৌ ন তস্থৌ – ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা
ছাড়া তোমার বলবার ছিল বহু, অথচ তুমি কিছু না ভেবেই
নাক ছুঁয়েছিলে চিবুকে। ফিরে গিয়ে বন্ধুদের জানিয়েছিলে,
ওরা বলেছিল, ভাগের ভালবাসা, কেঁদেছিলে খুব, অথচ
বিন্যাসে যাওনি। কিছুকাল
মাধ্যমিক তৃপ্তির স্বপ্নতাঁত বুনতে
বুনতে তুমি অপেক্ষায় ছিলে, তবু বসন্তকোকিল ঝাঁপিয়ে
পড়েনি তোমার উঠোনে।
তেমন বসন্ত, তেমন শিশিরের ঘুম, তেমন বনস্পতির
দীঘল
ছায়া খুঁজেছিলে তন্ন তন্ন করে, তোমাকে চমকে দিতেই
মাউথ অর্গানে বিসমিল্লাহ খাঁ শুনিয়েছিল সে, ছেঁড়া প্রজাপতির
তাঁত সরিয়ে তুমি হেটে গেছ বহুদূর আজ, দীর্ঘ পথশ্রম শেষে
এখন আর তোমার গড়ানো দুপুর বলে কিছু নেই।
মেয়েটা বড় হয়ে গেল, স্টাডি ট্যুরে এখন, ছেলেটা বাবার পাশে
বসে টিভি দেখছে, আর তুমি এই ফাগুনের দ্বারপ্রান্তে
এসে
যাবজ্জীবন অস্পষ্টতার ছবি আঁক নাগরিক ফ্রেম
থেকে মাটিতে।
ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে তোমার তুমুল তৃষ্ণা
ক্ষয়ে যাচ্ছে তোমার প্রাণের উত্তাপ
ক্ষয়ে যাচ্ছে তোমার স্বজন কৃষ্ণচূড়া
ক্ষয়ে যাচ্ছে তোমার বাসন্তী নগরী
অবন্তিকা,
এই ধীরে ধীরে ক্ষয়ে আসা রাতে তুমি এখনো বুনে
যাচ্ছো
বুকে দু-চারটে ছিমছাম বকুল গাছ, যাদের
ছায়ায় এখনো
কারও ধমনীর রক্তনদী শান্ত হয়ে আসে।
কোথাও অপেক্ষায় আরেকটা সারেং সভ্যতা।