মা, বাবা আর আমরা - ১
আমাদের ছিল মেঘ
বিদ্যুতের ঘর । কয়েক লক্ষ পোষা জোনাকি । জোনাকিদের গন্ধে চুল ভেজাতো মা ...
চাঁপাফুলের বারান্দায় আঁকা ছিল ঘুড়িদের গরাদ । বাবা পাহারা দিতেন অলৌকিক গ্রহ ।
নেমন্তন্ন ছড়ানো গৃহস্থী ...
আমি আর আমার বোন
সন্ধ্যে হলেই খুলে বসতুম এক্কাদোক্কার শীতলপাটি । ভারী হয়ে উঠতো চোখের আলপনা । মা
বলতেন , এতো ঘুম পেলে কি চলবে ? তার চাইতে একটু বাইরে
থেকে ঘুরে এসো ... নূপুরের কিনারায় ঘুঙুরের অতো বাসন-কোসন ... . যাও না চাঁদের
এলাচের সাথে কয়েকখণ্ড দারুচিনিও কুড়িয়ে নিয়ে এসো ...বাবা হেসে উঠতেন দিঘী কাঁপিয়ে
... বলতেন , কি দরকার ... অন্ধকার
হয়ে এসেছে যে ...
মা বলতেন ... অই যে
দ্যাখো ... নারকোল গাছের সিঁথি , একগোছা বিনোদিনী জ্বেলে রেখেছে সন্ধ্যেফড়িঙের
মেয়ে ...আমি আর বোন ছোট্ট ছোট্ট হাতে মেলে দিতুম আকাশের পা । খয়েরি রঙের স্নেহ ...
বেলকুঁড়ির নদীতে ছুটে যেতুম ... আমাদের লেখাপড়া থাকতো না .. বাজিঘোড়ার দৌড় থাকতো
না ... শুধু রাত বাড়লে আমরা চারজনে কুয়াশার স্লেটপেন্সিল হয়ে যেতুম ...পাঠশালার
ঝনঝন ... নামতার ধারাপাত ...
কেউ কোনদিন দ্যাখেনি
সেই ঘর । সেই বাড়িরঙের বিসর্গ কেউ কোনোদিন শোনেনি।
একথালা হাসির
অনুস্বার যদিও পুরনো পাখিদের পাড়ায় এখনো জোনাকির ছদ্মবেশে ফোটে ।
মা, বাবা আর আমরা - ২
মা আর কিছু নয় । শুধু দেবতার ভিড় ।
বাবা শব্দটিও তেমন কিছু নয় । অনন্ত প্রশ্রয় , মীড় ।
একদিন আমাদের অনেক দক্ষিণ মায়ের উত্তরে এসে
শুরু হয় ।
একদিন বাবার পলকে হাওয়া লাগে ।
সেই মহাকাশের বাতাসে আমাদের চোখের তারা ফোটে ।
মা এক উজ্জ্বল বন্ধু । নক্ষত্র গণনার সময় আমি
আর বোন
দুজনেই কেবল মায়ের পাটীগণিত গাঁথা করি ।
আশ্চর্য , অঙ্ক দেখে এতটুকু ভয়
করে না আমাদের । খুব
সহজ আর সরল বীজগণিতসহ আমরা দুয়োরানী থেকে
সুয়োরানীতে ফিরে আসি । বাবা যে বৃষ্টির পুবদিক
তা আমরা
প্রথম জানতে পারি এক ফালাফালা খরায় । জলহীন
পিচরাস্তার টিলা ।
বাবা সেই মেঘ ছেঁকে , আমাদের মুখে তুলে
ধরলেন ফুরফুরে জলের
তৃষ্ণাঘাট । আমরা দু ' বোন স্নান দিলুম
কাটাকুটি আর বাগাদুলির খেলায় ।
কোথাকার খুশি আর এক রুমালচোর ভেসে এলো আমাদের
কণ্ঠকথায় ।
এখন মায়ের দিকে মুখ কোরে আমি রোদ দিই ।
এখন বাবার দিকে ছায়া কোরে বোন সন্ধে দ্যায় ।
মা আর কিছু নয় । শুধু একটা মা । আমাদের ।
বাবাও তেমন কিছু নয় । শুধু একটা বাবা । আমাদের
।