নশ্বর
কোথাও যেও না তুমি
আমার হৃদয়ে থাকো।
চার্চদিনে ভোরবেলা যে-রকম ঘণ্টা পড়ে
সেই মত কাঁপা কাঁপা জল, জলের ও-পারে
নীল, নীলাভ জঙ্গল, আর বাঁশির সুরের মত
একটানা পথ; কতদূর যাওয়া যাবে এই পথে ?
প্রশ্ন করি আর দেখি, রেশম চাষির পাগড়ির মত
আকাশে উজ্জ্বল মেঘ, দুটি মেঘের মধ্যবর্তী সেতু—
একটি পাখির ঝাঁক…
এই ধর্মবোধ।
শ্মশান
ভালোবাসি— এই স্বতঃপ্রণোদনা যেরকম
তার চেয়ে কিছু কম গভীরতাময় ইঁদারার জলে
ঝুঁকে দেখা গেল চাঁদ, থমকে রয়েছে
যেন অদূরে বিজয় দেখে ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে
রোমাঞ্চবিহীন গৌড়-বাংলার শেষ ঘোড়সওয়ার,
আর কুয়াশায় কেঁপে কেঁপে ওঠে চন্দ্রমল্লিকা
যেন আমাদের বোনের হৃদয়—
চাঁদের আলোর মত কাছেই দূরের পাহাড় দেখে
বিহ্বল লাগে—‘দেবতার মল্লযুদ্ধ’, এই নামে
ছোট কোন হাওয়া এসে দোলা দেয় করবীর শাখা।
কোন এক সরল ঐকিক নিয়মের বশে
ফুলে ফুলে ভরে গেছে শালের জঙ্গল।
এইখানে রাত্রি এক মাকড়সা, আর তার আঁধারের
জালখানি ন্যস্ত রয়েছে সর্বত্র, সকল নশ্বর ফুল ঘিরে…
অনেক তারার নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছি
শাদা মেঘের মত ফাঁকা করতল।
জানি অদূরেই তুমি আছ।
তৃণ
মৃত্যুর পরেও আরো ক’টা দিন আমি
আমি বেঁচে থাকবো।
সন্ধ্যাতারা ভোরের শেফালী হ’য়ে
যে-রকম ছুঁয়ে থাকে মাটি।
দূর হতে আমাকেও ডাকে, ওই পারে…
প্রতিটি শেফালীর পাশে...
মরণ রে, তুঁহু মম…
তুমি ঘন নীল অথবা সোনালী
অলৌকিকতা
এখনো শুয়ে আছো
ধাবমান কার্তুজের খোলে
পাখির ঝাঁকের প্রতি—
একটি পাখির টানে…
নক্ষত্র
যাকে এতক্ষণ গুপ্ত-ঘাতক মনে হ’য়েছিল
কাহিনীর শেষে বোঝা যায় সে আসলে
ভালো মানুষের পো
অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে, সরলাবালা বালিকা বিদ্যালয়ের মত
ভিজে আকাশের নীচে খুব আস্তে
ফুটে উঠছে এক দুঃখী রাজপুত্র, একা, অবুঝ…
শেষ ট্রেন
শালবন আর সূর্যাস্তের কাছে তোমাদের হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি।
তোমার মনের কাছে এখন-কি অন্য কেউ বসে আছে?
এসব লেখার অর্থ কী তবে?
কাচফুল— রক্তমাখা তারকাটা— অতিদূর শ্রাবণের মত নীল
তোমার দুচোখে একটি বা দুটি তারা ফুটে ওঠে।
তাদের ভিতর জেগে উঠছে রাত্রির অসামান্য আয়োজন—
এর কিছুটা আমার নিজস্ব।
প্রতিদিন তোমাকে হাতের মুঠো থেকে বের করে দিই
অন্য অনেক তারার মত আমিও জেনেছি
এ-পথ আমার, একার—
একা একাই বাড়ি ফিরে যাব রাত বারোটা পাঁচের বনগাঁ লোকাল ধরে…
মণিশংকর বিশ্বাস
জন্ম: ১৯৭২, ৩-রা ডিসেম্বর (ঠাকুরনগর, উত্তর ২৪ পরগনা)। ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে গান্ধার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। পত্রিকা বলতে মূলত কফিহাউস-কেন্দ্রিক আড্ডা। ১৯৯৮ সালে গান্ধার থেকেই প্রথম সংকলন (ফোল্ডার), "নম্র বৈশাখী ও নীলিমার অন্যান্য আয়োজন"। স্বল্পকালের জন্য সম্পাদনা করেছেন "জড়ভরত", মূলত গান্ধারেরই উদ্যোগে।
প্রকাশিত বইঃ "চন্দনপিঁড়ি" (কবিতা, ২০১৪) "অশ্রুতরবার" (কবিতা, প্রকাশিতব্য)
বর্তমানে সিডনি, অস্ট্রেলিয়াতে বাস করেন।
কোথাও যেও না তুমি
আমার হৃদয়ে থাকো।
চার্চদিনে ভোরবেলা যে-রকম ঘণ্টা পড়ে
সেই মত কাঁপা কাঁপা জল, জলের ও-পারে
নীল, নীলাভ জঙ্গল, আর বাঁশির সুরের মত
একটানা পথ; কতদূর যাওয়া যাবে এই পথে ?
প্রশ্ন করি আর দেখি, রেশম চাষির পাগড়ির মত
আকাশে উজ্জ্বল মেঘ, দুটি মেঘের মধ্যবর্তী সেতু—
একটি পাখির ঝাঁক…
এই ধর্মবোধ।
শ্মশান
ভালোবাসি— এই স্বতঃপ্রণোদনা যেরকম
তার চেয়ে কিছু কম গভীরতাময় ইঁদারার জলে
ঝুঁকে দেখা গেল চাঁদ, থমকে রয়েছে
যেন অদূরে বিজয় দেখে ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে
রোমাঞ্চবিহীন গৌড়-বাংলার শেষ ঘোড়সওয়ার,
আর কুয়াশায় কেঁপে কেঁপে ওঠে চন্দ্রমল্লিকা
যেন আমাদের বোনের হৃদয়—
চাঁদের আলোর মত কাছেই দূরের পাহাড় দেখে
বিহ্বল লাগে—‘দেবতার মল্লযুদ্ধ’, এই নামে
ছোট কোন হাওয়া এসে দোলা দেয় করবীর শাখা।
কোন এক সরল ঐকিক নিয়মের বশে
ফুলে ফুলে ভরে গেছে শালের জঙ্গল।
এইখানে রাত্রি এক মাকড়সা, আর তার আঁধারের
জালখানি ন্যস্ত রয়েছে সর্বত্র, সকল নশ্বর ফুল ঘিরে…
অনেক তারার নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছি
শাদা মেঘের মত ফাঁকা করতল।
জানি অদূরেই তুমি আছ।
তৃণ
মৃত্যুর পরেও আরো ক’টা দিন আমি
আমি বেঁচে থাকবো।
সন্ধ্যাতারা ভোরের শেফালী হ’য়ে
যে-রকম ছুঁয়ে থাকে মাটি।
দূর হতে আমাকেও ডাকে, ওই পারে…
প্রতিটি শেফালীর পাশে...
মরণ রে, তুঁহু মম…
তুমি ঘন নীল অথবা সোনালী
অলৌকিকতা
এখনো শুয়ে আছো
ধাবমান কার্তুজের খোলে
পাখির ঝাঁকের প্রতি—
একটি পাখির টানে…
নক্ষত্র
যাকে এতক্ষণ গুপ্ত-ঘাতক মনে হ’য়েছিল
কাহিনীর শেষে বোঝা যায় সে আসলে
ভালো মানুষের পো
অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে, সরলাবালা বালিকা বিদ্যালয়ের মত
ভিজে আকাশের নীচে খুব আস্তে
ফুটে উঠছে এক দুঃখী রাজপুত্র, একা, অবুঝ…
শেষ ট্রেন
শালবন আর সূর্যাস্তের কাছে তোমাদের হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি।
তোমার মনের কাছে এখন-কি অন্য কেউ বসে আছে?
এসব লেখার অর্থ কী তবে?
কাচফুল— রক্তমাখা তারকাটা— অতিদূর শ্রাবণের মত নীল
তোমার দুচোখে একটি বা দুটি তারা ফুটে ওঠে।
তাদের ভিতর জেগে উঠছে রাত্রির অসামান্য আয়োজন—
এর কিছুটা আমার নিজস্ব।
প্রতিদিন তোমাকে হাতের মুঠো থেকে বের করে দিই
অন্য অনেক তারার মত আমিও জেনেছি
এ-পথ আমার, একার—
একা একাই বাড়ি ফিরে যাব রাত বারোটা পাঁচের বনগাঁ লোকাল ধরে…
মণিশংকর বিশ্বাস
জন্ম: ১৯৭২, ৩-রা ডিসেম্বর (ঠাকুরনগর, উত্তর ২৪ পরগনা)। ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে গান্ধার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। পত্রিকা বলতে মূলত কফিহাউস-কেন্দ্রিক আড্ডা। ১৯৯৮ সালে গান্ধার থেকেই প্রথম সংকলন (ফোল্ডার), "নম্র বৈশাখী ও নীলিমার অন্যান্য আয়োজন"। স্বল্পকালের জন্য সম্পাদনা করেছেন "জড়ভরত", মূলত গান্ধারেরই উদ্যোগে।
প্রকাশিত বইঃ "চন্দনপিঁড়ি" (কবিতা, ২০১৪) "অশ্রুতরবার" (কবিতা, প্রকাশিতব্য)
বর্তমানে সিডনি, অস্ট্রেলিয়াতে বাস করেন।