খালিদ হাসান ঋভু এর কাব্যগ্রন্থ মুগ্ধতা শেষে চলে যাওয়া সহজ থেকে কবিতা

কিছু কথা
কবি জীবনের শুরুটা এই বইয়ের আঙিনায় পরিচয় ঘটানোর জংশনে খালিদ হাসান ঋভুর যে পাটাতন পাঠকের চোখে পড়তে পারে সেখানে সন্ন্যাস জীবনের ধুলায় ওড়া এক ঘূর্ণাবর্তন ৷ সেইখানে কোনো টান নাই, তবু তারে নির্মোহ টান বলা যাইতে পারে ৷ সেভাবেই ঋভু হাটছেন, স্পর্শ করছেন জীবন-সামগ্রিকতার ভেতরে থেকেও ৷ একেবারেই দিগন্তের গায়ে লেগে থাকা পোশাকটা নিজস্ব আঙুল ভঙিমায় খুলে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন যে আলনায় সেখানে মিস্ত্রির বাটের ঠুকঠুক শব্দগুলা টের পাওয়া যায় আলনার নকশায় ৷ আর দিগন্তের গাঢ় আলাপের বহুরৈখিক গোপনীয়তা ভারী হয়ে থাকে গোপন গোপন শিশিরের 
স্বেচ্ছা-পাতা আচ্ছাদনে ৷
ব্যক্তিজীবন গোপন রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এই কবি ৷

— 
মনিরুল ইসলাম মিরাজ ৷

 মানুষ

যেহেতু ভালো লাগেনা পথ, পথের মানুষ;
আঙিনার অশ্বগন্ধা আর উত্তেজক তরল ৷

যেহেতু একা আছি বহুদিন, বহুদিন ছিলাম;
বেনেডিক্ট জীবন শেষ হলে চলে যাবো পথে ৷

যেহেতু দূরে আছে বিকল্প মিলন, বিশুদ্ধ ছোঁয়া;
মাটিতেই খুঁজেছি শীতল বার্তা, সোঁদা গন্ধ;
বর্ষার শেষে সহজে এঁকেছি বিষণ্ণ পুকুর, শূন্য ফসল ৷

যেহেতু আমাতে এসেছে বিবর্ণ আলো, তীব্র উত্তাপ;
হাওয়ার শহর ছুঁয়ে ছিলো মায়াবী প্ররোচক ৷

যেহেতু ভাবনায় শুধু ভেবেছি মুখ, ভেবেছি বহুদিন
উচ্ছিষ্ট জীবনের ইতি টেনে চলে এসেছি বিচ্ছেদী রাতে;
আজ সময়ের কাছে ঋণীস্মৃতির ফটক, পেটের ক্ষুধা ৷  

শরীরে বিঁধে আছে প্রাচীন গন্ধম, রক্তের আদর ৷
এখন দেখিনা কিছু চোখেনেবুলা হাওয়া;
মাথা থেকে খসে পড়ে আয়ু, তারপর মানুষ ৷


ওভাবে তোমার কাছে যেতে নেই

ওভাবে তোমার কাছে যেতে নেই
ওরা কিচ্ছু জানেনা
মৃদু পায়ে হাঁটা ওরা কখনওই শিখেনি
অন্ধকারময় অক্ষর আমি চিনি
আগুনের পথ আমি হেঁটেছি
যন্ত্রের আওয়াজ ছাড়া যারা কিছুই শুনেনি
তারা জানেনা, তারা সত্যি জানেনাকীভাবে তোমার কাছে যেতে হয় ৷


তুমি কোমলতম পাখির অবকাশ আঁকোওরা বুঝবে না ওসব
অলিগলি আলপনা, বিলবোর্ডে রাঙানো
শহরের আরো যত ভ্রমণের পথ আছে বাকিজেনেছি আমি
জেনেছি ওভাবে তোমার কাছে যেতে নেইমানুষের মতো কোরে
পাখি হয়ে, সুর হয়ে, জল হয়ে এলে তুমি খোঁজো
এভাবে তোমার কাছে কেউ এসেছিলো
কেউ ফিরে ফিরে আসে ৷


উজ্জ্বল দাগ

গাছ নয় মানুষের ছায়া ৷ মিহি আলো লুকালো কোথায়?
প্রত্যুষে চেয়ে থাকে রুগ্ন শরীর ৷ বাতাসের দিকে মুখ, হলুদ শাড়ি ৷
বেণী নয় বেদনার ভাঁজ ৷ সরিয়ে দেখেছে শুধু অরণ্য শিকারী
চিবুকের দিক থেকে গোপন নদী খুঁজে পাবে পথ, পাশবিক ঢল৷
উড়ে যাবে তৃষ্ণার পাখি কাঠের মঞ্চ থেকে দূরে ৷ পরিচিত সরণির মোড়ে রয়ে যাবে উজ্জ্বল দাগ৷


হিমঘরে কথা হবে

হিমঘরে কথা হবে একদিন
ডেকো তুমি
তোমার চুলের পাশে চোখেরা ঘুমাবে
লীন হয়ে যাবে আলো
বিছানার চাদর তুলে রেখো না কেউ
গড়াবে না জল
আমি কি কখনো করেছি মৃত্যুর উৎসব?
এই নির্জল চরাচর
বিশুদ্ধ আঙিনায় লিখেছো ছুটি
  সেই থেকে যত হাহাকার ৷


পারুমিতা তোমাকে

এখানে পথের শেষ
            খুব কাছেই পারুমিতার বাড়ি

পুরোনো জানলার রেলিং
            দুটি স্থির হাত ওখানে রাখা নেই
            দুটি স্থির চোখ ওখানে রাখা নেই

বছরের পর বছর শরীরের ফুল ছুঁয়েছে মাটি

পায়ে হেঁটে দেখে এসেছি
            রোদেলা উঠোনে আঁচলের ছায়া

            আমাদের কিছু কথা থাকা চাই
                  থাকা ভালো

আবরণের আড়ালে বিষণ্ণ বাবুই আর তুমি
          কেউ যেনো ব্যথা না পায়

সাবধানে রাখা যত মুখ ভেতরে কাঁদায়
           প্রিয় পারুমিতা

  আর কেউ যেনো অসুখে না ভুগে

SHARE THIS

Author: