মলয় দত্ত এর কাব্যগ্রন্থ মায়ের হাঁসগু্লিরে জংলা খালে দেবতার মতন লাগে থেকে কবিতা

০১.
প্রায় রাতেই উঠোনের মাঝখানে হ্যাজাক জ্বেলে গানের আসর বসত
হাট করে ফেরা পুরুষ,বাচ্চা কোলে মহিলারা, বুড়ো, শিশু সবাই জড়ো হত

এক কোনে মায়ের কোলে ঢুকে তাকিয়ে থাকতাম হ্যাজাকের নরম আলোর দিকে!
নাদের চাচা ভাঙা গলায় গান ধরত
"আউয়ালে আল্লাহর নুর
দুহয়ামে তৌবার ফুল
ছিয়ামতে ময়নার গলার হার
চৌথায় সিতারা নবী
পঞ্চমে ময়ুর"
গান গাইতেন সবুর ব্যাপারী
"কে কথা কয় রে দেখা যায় না
নড়ে চড়ে হাতের কাছে খুজলে জনম ভর মেলেনা
খুজি তারে আসমান জমি
আমারে চিনিনে আমি
এ বিষম ভ্রমে ভ্রমি
আমি কোন জন, সে কোন জনা "
সুরের নেশা বোঝার ক্ষমতা বা বয়স কোনটাই ছিলনা

তবে বুঝতাম উঠোন ভর্তি সবাই অন্য দুনিয়ায় চলে গেছে

ঘোলাটে চাঁদ তেতুল গাছ কে সজ্জিত করত অপরুপ জোসনায়

মন্ত্রমুগ্ধ এর ন্যায় গান শুনে ব্যাক্তিগত স্বর্গে ছুটোছুটি করত!
আমরা ঘোলাটে চাদের তলে নেশার উঠোনে যে যার স্বপ্নের বনে ঘুমিয়ে যেতাম

শরীরের ভাজে ভাজে লুকিয়া রাখা ক্ষত ভুলে সামনে আগাতাম

রাত বাড়ত

জোনাকি জ্বলা রাত

মহিলারা আস্তে আস্তে তাদের ঢেকে রাখা মুখ আর ও ঢেকে ফেলে বাতাবি কাটায় ছেড়া শাড়ির আচলে

কান্নার সময় হয়েছে যে!
গানের প্রতি শব্দে সাজানো সর্বনাশে কেদে ফেলে গৃহবধু

চোখ দুটি হয়ে যায় বরষার বকুল

আস্তে আস্তে গানের আসর ভাঙে,
হ্যাজাকের আলো কমে আসায়

একজন দুজন করে উঠতে লাগে

শেষ মেষ থাকে গুটিকয়েক ঘরছাড়া মানুষ

তারা তখন বাতি নিভিয়ে তাদের ব্যাক্তিগত রুপকথার ঝুড়ি খুলে বসে

অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকে জোস্নাস্ন্যাত তেতুল গাছের তলের মায়াময় আলো ছায়ার খেলায়

আমরা বাতি নিভিয়ে শুইতে যাই

চোখ বন্ধ করে অন্য জগতে যাবার নেশায় ডুবি

মাথায় তখন ও নাদের চাচার ভাঙা গলার দুনিয়া ছেড়া টান

আমি আমার কিশোরি মাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি

আমার কিশোরী মা তখন ও ফোপায় ---
বাপ আমার শক্ত মানুষ, সে মাকে কয় নাদের টা বড়ই ঘরছাড়া গান গায় গো বউ

তুই একখান পিরিত এর গান গা!
মা আমার ভাল মানুষ

কান্না মুছতে মুছতে গাইতে থাকে "প্রেম ডুবারু বিনে কে জানে

জানে প্রেমের গতি
কুটীল অতিডুবে গহীনে -----""
দাদাজান ধমক দিয়ে বাবাকে বলে "মাঝরাতে মাগী মাইনষের গান গাওন কিসের??
চুপ করতে ক অরে "
ভালবাসার গান শুনতে চাওয়া বাবা বড্ড ভাল মানুষ

অসহায় চোখে মায়ের দিক তাকায়

মা আবার ফোপায়

আর গুনগুনিয়ে গায়
"কি সন্ধানে যাই সেখানে,
মনের মানুষ যেখানে
আধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবারাতি নাই সেখানে ""     


 ০২.                                   

আমি সকল অন্ধকার শরীরে ধারন করা নারী
আমি পয়ত্রিশে ঘরহীন যে।
আমার বেচে থাকা,
হ্যা শুধু মাত্র আমার বেচে থাকা নিষিদ্ধ করতেই বেচে আছে ঘুনেধরা সমাজ।
শহর ব্যাপী আমাকে নিষিদ্ধ করে অবশেষে আমার অন্ধকার কুঠুরীতে উপস্থিত আজ!
পয়ত্রিশে নারী ঘরছুট হলে তবে কি এই হয়?
ঘরছুটের তবে কখন সময়?
যখন মাতাল যৌবন ছিল,
আবেগে মাতাল ছিলাম প্রেমিকের সস্তা ছলনায়
তখন কি সময় ছিল ঘর ছেড়ে একলা ঘর বাধার সময়?
আমার দুনিয়া এভাবেই কি মরে যায়?
যখন হাতছানি দেয় প্রেম,
আর আমিও প্রেমিকের বুককে লাল কাকড়ার দ্বীপ ভেবে মাতাল কিশোরীর ন্যায় ছুটি।
ঘরছুটের নেশার বড়ি তবে কবে খাব??
যখন যৌবন নিংড়ে আমার আত্মহারা প্রেমিক আমায় কেটে শিক কাবাব বানিয়েছিল তার অন্ধকার ঘরে!
দুটি দেহ জেনেছিল আদিমতার স্বাদ।
ডুবে যাওয়া!
কেদে ফেলা!
নাকি অন্ধকার ঘরে নগ্ন হয়ে শুয়ে পর্দাহীন জানলা দিয়ে আকাশ এর দিক তাকিয়েই আমার ঘরছুট হতে হত??
নাকি স্নান সেরে প্রেমিক কে ফের চুম্বনে জানিয়ে দেয়া উচিত ছিল আমি ঘরহীন হতে চাই!
প্রবলভাবে চাই।
হয়ত স্নান শেষে ফেরত চুমুতে নাকে আসা নালার গন্ধ নাকে আসা মাত্র বলা উচিত ছিল আমি চির ঘরছুট হতে জন্মেছি।
আদিমতার স্বাদ জেনে আট টাকা ভাড়ায় ঠিক করা রিকশায় উঠেই গগন মুখী হয়েই হয়ত আমার ঘর ছাড়ার শপথ নিতে হত।
নাকি আমার ঠান্ডা ভাতে কাব্য ঝরে পড়ে স্বপ্নে বিভোর আমি খুব দেরি করছিলাম,
স্বপ্ন দেখার বাতিক কিশোরি আমিকে ঘরছুট হবার সুযোগ দান করে পালিয়েছিল প্রেমিক নামক রক্তবিহীন জীব।
সেদিন হয়ত আমি ঘরহীন হতে পারতাম।
ইশশ যদি চাইতাম!
আমাদের ছাদের এক কোনায় ঝিম মেরে বসে মায়ার নগরীর কুকুর দেখেও আমার ঘরহীন হবার আশা ব্যাক্ত করার সুযোগ ছিল।
আমি অভাগীনি করিনি কিছুই।
বাবা মার সাথে সেবার পুরীর সমুদ্রে গিয়েছিলাম।
সমুদ্র আমার পছন্দ না।
আমায় ভাসিয়ে দেয়।
আমার পছন্দ পাহাড়।
কত কি আটকে দেয়!
হয়ত বাবা অপছন্দ জেনেই আমায় সমুদ্রে নিয়েছিল।
যেন প্রেমিকের ঘামের গন্ধ মুছে সমুদ্রস্নান করে পবিত্র হই।
আমি কেন যে পবিত্র শরীরে একা ঘরহীন হতে চাইলাম না!
বছর ঘুরতেই একা হবার,ঘরহীন হবার নেশা মাথায় তুলে লক্ষী মেয়ের মত,
সরু অনামিকায় আংটি আর বিচ্ছিরি ইয়ার্কি অশান্তি নিয়ে শরীরে অন্য পুরুষের অবাধ প্রবেশ বৈধ করেছিলাম।
নিশ্চয়ই এই মহাক্ষনে ঘরছুট, একা হবার সংকল্প টা করে নিতে পারতাম।
কেন যে করিনি!
নিয়ম রক্ষামুলক অশ্রু তো ছিলই।
অবশেষে আমি ভুলতে বসলাম প্রেমিকের গন্ধ।
আমার শরীরে তখন অন্যের আনাগোনা।
শরীর তো জাগেরে মনা,,
তো নিয়ম শরীরের।
মন তো জাগেনা।
মনের তো নিয়ম নেই পাগলা।
অভ্যাস দায় বদ্ধতায় বা ভালবাসায় তার ছাদে এক পশলা সবুজ খুজতে থাকলাম।
এক আধ দিন কাদি।
মন খারাপ হয়।
চুমু খাই। মদ খাই।
চুমু খাই। মদ খাই।
আস্ত চাদ চিবিয়ে খাই!
চুপচাপ পাড়া!
প্রনয়ের এই ক্ষনে আমি ঘরছাড়ার স্বপ্ন দেখতে ব্যার্থ নারী ছিলাম।
অবশেষে প্রনয়ের এক রাতে বৈধ প্রবেশকারী জানালার কাচ নামিয়ে দুরের ঝাপসা ট্রাফিক আলোর ন্যায় ঝাপসা অপবাদ দিয়ে ত্যাগ করল আমায়।
হয়ত সময় মত ঘর ছাড়ার প্রতীজ্ঞা করতে পারিনি বলে সময়ের দেবতার কঠিন অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে কয়েক লক্ষ বছরের জন্য জনবহুল শহরে একাকীত্বের গাছ বুকে নিয়ে একঘরে হলাম এই আমি।
যেহেতু পয়ত্রিশে ঘরছাড়া নারী আমি।
সেহেতু খুজি অন্ধকারের ছন্দকে।
ছন্দকার এসে ধরা দেয়!
আর কেউ আসেনা প্রেমের দাবী নিয়ে।
কেউ আসেনা শরীর এর দাবী নিয়ে।
আমিতো আমার ভিতরে ধারন করতে চাই জ্বলজ্যান্ত প্রেমের অস্তিত্ব।
বয়স?
সে তো ধুর ছাই!
নিয়ম মাফিক সন্ধ্যা।
আমার এক বুক নিস্তব্ধতা।
রেলিং ছুয়ে খবরের কাগজ আসা ভোর।
এই সকলের ভীরে আমি আমার প্রেম হারাতে চাইনা।
আমি নারী।
আমি মানে পৃথিবী।
আমি টেনে নেই দুনিয়ার দীর্ঘ ভ্রমন থেকে মুসাফির কে আমার গভীরে।
জন্ম, মরন,
লাশকাটা ঘর এর গন্ধ সকল বাদ দিয়ে আমি প্রেমে পড়তে চাই।
আর না দায়িত্বের বেড়াজালে আবদ্ধময় জীবন।
কর্তব্য এর জটিল ফাদে নিজস্ব বলিদানে একমাত্র দর্শক হওয়া।
আমি পুনরায় প্রেমে পড়ব।
উড়ব!
চুমু খাব।
তার চিলেকোঠার টুপটুপ শব্দের গভীরে আমি জেনে নিব তার নোনতা শরীরের স্বাদ।
জমিয়ে রাখা সকল ব্যাথা দুজন মিলে উড়াব জাহাজের ছাদে দাড়িয়ে।
মানিয়ে নেয়ার এই শহরে,
বরষাস্নাত চুম্বন উপহার দিব তাকে।
আমি বাচব,
ঘরহীন হয়ে।
আমি বাচব,
ঘর আগলে!
আমি বাচব মধ্যরাতের ফাকা প্লাটফর্ম আমার কবির কবিতা আউরে।
যে কবি চোখে ডুব মেরে তুলে আনে কবিতা।
আমি বাচব,
ফেলে যাওয়া বৈধ শরীরে প্রবেশকারির বিষাক্ত ঘর লাথি মেরে ফেলে প্রেমিকের চওড়া বুকে।
যে ঘরে শরীর মন নিয়ে মেতে আমরা জন্ম দিব কাদা মাটির গন্ধের ন্যায় প্রানের অপরুপ জীবন।
আমরা হাটব মধ্য রাতের ফাকা হাইওয়েতে।
হারাবো চিরচেনা শহরের নিয়ন্ত্রিত রাস্তা ভেদ করে অচেনা গলিতে।
খুনসুটিতে রাত কাটাবো।
দরজায় ভোর আসবে।
কিন্তু আমরা নগ্ন রব।
একঘরে আমি তামাম সমাজকেই একঘরে করে বাচব।
কাম আর মমতা মেলানো চুমুতে প্রেমিক কে জানিয়ে দিব আমার ঘরহীন হবার অতীত।
কিভাবে কিশোরি আমি একা হবার নেশায় নিমজ্জিত হয়ে ভোর দেখেছি।
কিভাবে আমার অস্তিত্ব আমায় ভিজিয়ে নিত।
এখন আর কিশোরি নই।
এখন নারী।
যোনি দেশের রক্তিম চেরাই এর মত রহস্যময় এক নারী।
উন্মাদ হই তীব্র পিপাসায়।
কামনায়।
পয়ত্রিশে ঘরছুট নারীর নেই কি উপায়??
আমি জোস্নার ধবল দুধে ভেজা আমার দেহ মেলে দিতে চাই কবিতার পদতলে।
কবির ওষ্ঠের নিকটে।
আমি ঘরহিন হয়ে হোক,
ঘর থেকে হোক,
মোটকথা প্রান ভরে বাচতে চাই।
ঘোলাটে চাদের জোস্নায় তেতুল বনে চুমু খেতে চাই শেষ প্রেমিক কে!
লিখে দিতে চাই আমার পাপ গুলো।
দিন দুপুরের বরষায় আমার বডড অভক্তি আছে।
মধ্যরাতের বরষায় আমি নারী ছাদে যাব প্রেমিক নিয়ে।
লম্বা টানটান শুয়ে কাচা কাচা অন্ধকার খেয়ে তেষ্টা মিটাবো ঝুম বরষার পানি দিয়ে।
আমি ঘরহীন টেনে নিব তার ওষ্ঠের সকল স্বাদ।
কুড়মুড়িয়ে চাবিয়ে খাব ভুল সময়ে করা সকল একাকীত্বের প্রতীজ্ঞা।
মাথার উপর চাদ টেম্পোরারি এই জেনে ভুলে যাব সস্তা ব্রা নিয়ে দরদাম করা আমার দেহের বৈধ দাবীদার কে।
বয়স কে অমান্য করে পুনরায় বাচি।
প্রানভরে।
এসো ঘুনে ধরা সমাজ পেচ্ছাব থুথু মিশানো নর্দমার কাদা তোমার গায়ে মেখে নিতে এসো।
জেনে নিও,
নারী বাচে।
হোক পয়ত্রিশ,
হোক পঞ্চাশ।
আমি নারী
আমি ধরিত্রী!


০৩.
আমাকে মেরেছে আপনার অগনতান্ত্রিক বাহিনী।
দায়ী আছে আধুনিক সভ্যতার নষ্ট নগরী।
দায়ী আছে আমার ছোট্ট উঠোনে পিড়ি পেতে বসে থাকা মিডিয়ার দল।
তারা অপেক্ষায় আছে আমার মৃত্যুর।
একটি খবরের।
একটি রগরগে প্রেমের বানোয়াট গল্প লেখার প্রতিযোগিতায় নামার অপেক্ষা।
প্রেমিকার শোকে কবির আত্মহত্যা শিরোনামে সমাজের আয়না রাঙাতে হবে তাদের।
বিশ্বাস করুন,
আমি পৃথিবীর একমাত্র প্রেমিক হওয়া স্বত্তেও আমাকে মরতে হচ্ছে নিদারুন ভাবে প্রেমিকাহীন হয়ে।
আমাকে মরতে হচ্ছে আমাদের পুকুরের মাছের শোকে।
আমলকি বনের ছায়ার মায়ার টানে।
ধানের পাতায় জ্বলে থাকা শিশির এর জন্য বোধ হওয়া এক অদ্ভুত কষ্টে।
পূব আকাশের মেঘলা রঙে লূকানো ঘরছাড়া বাশির আওয়াজের অভাবে।
শৈশবের একমাত্র খেলার সাথী কবরের পাশে সদ্যগজানো ঘাসে নিরবতার মিছিল দেখে।
মাছরাঙা, ডাহুকের ডাকের জন্য।
আমাদের বাড়ির পুরনো মাটির দেয়ালের আলপনা মুছে যাওয়ার শোকে।
কোমল গন্ধ ঝুলে থাকা মায়ের শাড়ির আচলের জন্য।
দেখুন ঈশ্বর,
আমি কি নিদারুন ভাবে মারা যাচ্ছি।
পৃথিবী প্রেমিকহীন হচ্ছে।
মিডিয়া তাও বসে আছে, আমার মৃত্যু সরাসরি প্রকাশের জন্য।
আমাকে অনুরোধ করা হচ্ছে, মৃত্যুর আগে অন্তত একবার প্রেমিকার নাম উচ্চারন এর জন্য।
এইযে আমি সাতাইশ কোটি কবিতা লেখার অনুমতি নিয়ে এলাম আপনি হতে,
আমি যে কয়েকশ কোটি বার আমার প্রেমিকার নাম বললাম।
এইযে আমার আকাশে একশ ছাব্বিশ টা চন্দ্র থাকার পর ও সৃষ্টিরশুরু থেকে তাহাদের স্মৃতি ঘোলাটে রক্তে এবং মাংসের গঠনে বহন করছি আর এটেল কাদা ও তরল সবুজ মিলেমিশে গান গাইছে নষ্ট সভ্যতার বিরুদ্ধে,
এরপর ও আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়?
ঈশ্বর, আপনি দৈববানী করুন।
আমি চলে যাচ্ছি।
পৃথিবীর সকল পবিত্রতার কসম আমি চলে যাচ্ছি।
ঈশ্বর, আপনি ও লাইভ দেখুন আমার মরন।
 
                     
০৪.
তুমি আসবে বলে কাকডাকা ভোরে আমি শান বাধানো লাল পুকুরঘাটের
শ্যাওলা ঘষতে লেগে গেছি।
নিজেই তেতুল গাছের ডালপালা কেটে গাছকে হালকা করছি।
যেন জোস্না ঠিকঠাক ঘাটে বসে পা দোলান তোমার শরীরে ঠিকরে
পড়ে।
তুমি আসবে বলে আধখাওয়া সিগারেটের টুকরোগুলো ঝেড়ে ফেলে মেঝে
তকতকে করে রেখেছি।
জানালার শিকের মরিচা নিজের হাতে ঘষে তুলেছি।
ফুলদানী কিনে এনে সাজিয়েছি তোমার প্রিয় রজনীগন্ধা।
আমার প্রিয় ঘৃতজবা ফুলদানীতে তে মানায় না।
আমার বাউল দাড়ি কেটে আমি আধুনিক তোমার ক্লিন শেভড হয়েছি।
মেঘগুলি যেন ঘাসের হৃদয় ছুয়ে শিশিরের গন্ধ ছড়ায় সেই ব্যাবস্থা
করে এসেছি।
আয়নায় লেগে থাকা একাকীত্ব গোলাপজলে ধুয়ে ফেলেছি, কোথাও নেই
ছিটে ফোটা একাকীত্ব।
কদমডালে ডাহুক যেন চুপটি করে বসে থেকে তোমার মন খারাপ না
করায় সে কথা আমি পাখির রাজা কে বলে এসেছি আজ সকালে।
নীম গাছের নীরব ভেজা আর শুন্য গলি দেখে তোমার মন খারাপ
রুখতে আমি এই জানলার কপাটে লোহা মেরে দিয়েছি।
শোন তুমি আসবে বলে,
আমি মাঝরাতে স্নানঘরে সাবানের ফেনায় ভাসার স্বপ্ন দেখছি।
সাবান মাখামাখিতে কার হাতে সাবান তবে?
ছাদের কিনারে বৃদ্ধচাদের জোস্নায় ভিজবার স্বপ্ন দেখেছি।
শ্যাম্পুতে ভোরের গন্ধ শুকে শিউলতলায় যাব ভেবেছি।
খুব আমার সাথে হেটে যাবে আপন মনে নদীর ঘাটে।
শ্রাবনের বৃষ্টিথামা বিকেলে করমচা বাগানে হাটব ভেবেছি।
তুমি আসছ জেনে,
হৃদয়ে বহুকাল আগেই নেমে আসা সন্ধ্যাকে বিদায় জানিয়েছি খুব করে।
অদ্ভুত চঞ্চল উত্তেজনায় তুমি নেশায় ভুগছি।
একাকী ঈশ্বর এর কথা ভাবছি।
একঝাক কাগজফুল তোমায় দিব বলে ভাবছি।
তুমি আসবে বলে,
আধোয়া বাসন কোসন ধুয়ে রেখেছি নিজেই

ট্রাংক ঘেটে বের করেছি পুরনো পাঞ্জাবী।
আমি পাঞ্জাবী পড়েই দোতালার বারান্দায় হাটছি এমাথা ওমাথা।
এখান থেকে রাস্তার খানিকটা দেখা যায়।
তোমার নতুন লাল গাড়ি এসে থামলেই দৌড়ে যাব নিচে।
কি বলব ভেবে রেখেছি দু রাত ধরে " প্রিয়তমা আমার বড্ড একলা
লাগে তুমি থেকে যাও, কোমরে আচল জড়িয়ে ধমক সুরে আমায় ঠিক
করে দাও, বুনোঘাস ফুলে শয্যা সাজিয়ে আমরা ঘুমুতে যাই
ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে তোমার নাম লেখা কলমের গল্পে আমায়
ফিরিয়ে নাও
পৃথিবীর লোক আমায় উন্মাদ বলছে,
আমি সত্যই উন্মাদ প্রিয়া,মৌন গোধুলীর অস্তরাগে আমি বোবা
উন্মাদ
প্রিয় নারী তুমি উন্মাদ ভালবাস? "
বিকেল গড়িয়ে যায়।
একলা সন্ধ্যা।
নীরবতা গাঢ় হয় শুন্য গলির প্রতিটি ধুলিকনায়।
তোমার লাল গাড়ি আসেনা।
আমার ইস্ত্রী করা পুরনো পাঞ্জাবী ভাজ হয়ে যায়।
নিঝুম বাতাসে বিষন্নতা ভীড় করে আসে।
বৃষ্টি ভেজা বারান্দায় তোমার স্নিগ্ধ এলোচুলে ডুবে যাওয়া হয়না
আমার।
দু গাল বেয়ে ঝড়ে পড়া প্রাচীন গানের কথায় চুম্বন জোটেনা।
তোমার লাল গাড়ি আসেনা।
আমার আধার ভরা জানালায় চোখ রেখে শুন্যে তাকাই আমি।
উপরে একাকী ঈশ্বর।


০৫.
ঝর্না রানী দাস।
আজ বাইসে আষাঢ়

আপনি খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন।
ঈদ আপনার না হলেও আপনি সেমাই রাধেন।
আপনার তনয় এসেছে দুর থেকে গত রাতে।
বনের দূর অন্ধকার কেটে হাসি নিয়ে এসেছে সে।
আটার রুটি, সেমাই ছেলেকে দেন খেতে।
আপনার স্বামী গতকালের ঘাম মাখা জামা পড়ে বাজারে যায়।
একথোকা মৃত্যু আর উৎসবীয় ঈদ এর ভীড়ে আপনার স্বামী আগায়।
আপনি স্বামী, ছেলে বা নিজের বা সকলের পোষাক ধুয়ে, জানলার পর্দা টানতে আসেন।
আপনি রাজনীতি চেনেন না।
গনতন্ত্রের সংজ্ঞা ভুলে গেছেন।
আপনি বিদেশী, দেশী, কোন জঙ্গী সংগঠন ই চেনেন না।
আপনি মা।
বুলেট মা চেনেনা।
বাইরে চলতে থাকা অকস্মাৎ যুদ্ধের ভূল বুলেট জানলা গলে আপনার সুখভরতি মগজে ঢুকে যায়।
যেমন করে নরম মাটিতে ঢুকে যায় মাছরাঙা সাপ।
আপনি তখন কি ভাবছিলেন?
দিশেহারা কোন এক পাখি ডানা ঝাপ্টাচ্ছিল মগজেত সকল গলিপথ জুড়ে।
ক্ষ্যাপামি নেশায় আপনার সকল স্বপ্ন মাটির গভীর হতে আরো গভীরে যায়।
সেই গভীর হতে আকাশে উড়ে যায়।
আপনি কি আপনার মায়ের শাড়ির আচলের জানলা ঘেষে আসা আলো দেখছিলেন?
কেপে কেপে ওঠা শরীরে ঘনীভুত আধার।

ঝর্না রানী দাস
আপনি বুঝলেন প্রথমবারের মত "মানুষ মরনশীল "এটা কতটা সত্যি।
আপনার সাথে যোগসুত্রহীন এক যুদ্ধের বিভীষিকায় আপনি মরে গেলেন।
বুলেট মা চেনেনা।
যেমন করে, আপনি রাজনৈতিক অপদেবতা চেনেন না।
শুয়োরের পাল চেনেন না।
আপনি মরে গেছেন।
চেনা অচেনা কাটিয়ে এটাই সত্যি।
হঠাৎ করে আপনার বাড়ির ভাঙা দেয়ালে ছত্রাক প্রসারন বেড়ে গেল।

আপনার স্বামী বাজার হতে আসে।
আপনার পতিদেবতা।
রুই মাছ লেজ বের করে থাকে।
আপনার স্বামী তাকিয়ে আছে মেঝেতে পড়ে থাকা তার স্ত্রীর নিথর দেহটির দিকে।
এই ঘরের দেয়ালেই টানানো আপনাদের যৌথ ছবি।
মিডিয়া এসে গেছে,
আপনার স্বামী আবেগ আনার সামান্য চেষ্টায়ই ডুকরে কেদে উঠে ব্যাক্ত করছে আপনাকে।
আপনি কি দেখতে পান এক পুরুষের হৃদয়ের রক্তক্ষরনের শব্দ?
আপনি কি দেখতে পান এক পুরুষের জীবনে অন্ধকার নামার পূর্ব মুহুর্ত?
আপনার স্বামী মিডিয়া বিদায় দিল।।
আপনার লাশের পাশে ধুপকাঠী জ্বালা হয়েছে।
আপনার ছেলে তাকিয়ে আছে জানলার দিয়ে কালো পীচের রাস্তার দিকে।
ছেলের প্রেমিকা শান্তনার ঝুলি নিয়ে বসে আছে মুঠোফোনের ওপাশে।
আপনার ছেলের আজ প্রেমিকায় অভক্তি, এবং বমি।
প্রধানমন্ত্রী আপনার কথা শুনেছেন।
তীব্র শোক প্রকাশ ছাড়া আমাদের কারোই কিছু করার থাকেনা একবার মরে গেলে!

ঝর্না রানী দাস
এই মুহুর্তে দেশের সবগুলা চ্যানেলে আপনাকে দেখাচ্ছে।
আপনি তেজপাতা দিয়ে মাংস কষাবেন ভেবেছিলেন আজ।
আপনি এখন মরে গিয়ে আলোচিত,
আপনার আত্মীয়রা মিথ্যে কান্নায় ভিজে, মিডিয়ার নিজেদের দেখার আনন্দে আনন্দিত।

ঝর্না রানী দাস
আজ বাইষে আষাঢ়।
আপনার সিথির মেঠোপথ হতে,
আপনার সিথির দ্রাঘিমা হতে সিদুর মুছে ফেলা হয়।
আপনার স্বামী মেঝেতে বসা।
আয়নার সামনে রাখা সিদুরের কৌটায় তার অসহায় দৃষ্টি।
আপনার শাখা ভেঙে ফেলে কেউ কেউ দায়িত্ব নিয়ে।
আপনার আত্মীয়রা কানাঘুষা করে "আপনি ভাগ্যবতী, কারন আপনি স্বামীর আগে মরেছেন, আপনি শাখা সিদুর নিয়ে মরেছেন,আপনি নাকি স্বজ্ঞ পাবেন মা! "
মা এরা জানেনা, "মা এর অমরাবতী যেতে কপালে লেড অক্সাইড লাগেনা।"

ঝর্না রানী দাস
আপনাকে ঘন্টা তিনেক এর মাথায় চিতায় তোলা হয়।
চন্দন কাঠের দাম বড্ড।
আম কাঠে পুড়ুন মা।
গতরাতে সুখ বোঝাই থলে বয়ে আনা তনয় মুখাগ্নিতে ব্যাস্ত।
সুখের থলে দক্ষিনের বারান্দায় রাখা।
আপনি আমকাঠে অনল চাপা।
চিতায় আগুন জ্বলে।
একটু দুরেই সামরিক বাহিনীর আধুনিক গাড়ি।

ঝর্না রানী দাস
আপনি থাকবেন না এটাই যেন স্বাভাবিক।
আজ বাইশে আষাঢ়।
আজ ঈদ।
বোকাবাক্সে হাজারো অনুষ্ঠান।
আমরা মুখ হা করে নীলকমল নদীতে নৌকাবাইচ লাইভ দেখছি।
আপনি মরে গেছেন।
তাতে কিছু যায় আসেনা।
লেজ বেড় করা রুই মাছ ফেলে দেয়া হয়নি।
অপূর্ব হিংস্র সমাজ আপনার মৃত্যুতে দায়িত্বরক্ষার অনুতাপ উৎসব পালন করছে।
আদতে, কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা কুকুরের দল অনুতপ্ত নয়।

মা বুলেট আপনাকে চেনেনা!
আপনি কি রক্ত মাংসে পুনরায় মানুষ হতে চান?

(গত ঈদে শোলাকিয়ায় হামলায় নিহত মায়ের প্রতি )


০৬.
তোমার ব্যাক্তিগত নদীতে এখন ও কি সেই যুবক নাও নিয়ে আসে?
যার ভাঙা ফুটো নায়ের পানি সেচার দৃশ্য দেখে তোমার প্রেম পেত।
কেপে উঠত তোমার শান্ত নির্জন দেহ।
কখনো কি সেই যুবক তোমার জন্য এনেছিল একপশলা সবুজ ?
অথচ তুমি তো তোমাদের নি:সঙ্গ আমলকি গাছের গল্প করার জন্য তাকে চাইতে খুব!
কখনো কি সেই যুবক,পায়ের কোনায় লেগে থাকা কাদা আর লোমশ বুকে সামনে এসে দাড়িয়ে তোমার বুকে ঘরবাড়ি বাধার আশ জানাতো?
অথচ, তুমি তো সন্ধ্যা হলেই গানের আসর ছেড়ে একলা একা পুকুর পাড়ে গিয়ে নিমগাছ আর অন্ধকার প্রিয় জবা গাছকে তার অপরিষ্কার নীল চেক শার্টে তোমার আকা স্বপ্নগুলি একে দেখাতে।
নিরীহ বৃক্ষ।

গ্রাম্য মেলার সস্তা লাল ফিতে দিতে গিয়ে লুকিয়ে ফেলত সে কখনো?
বা সামান্য জিলেপী?
অথচ তুমি তো তোমাদের পারিবারিক আলোচনায় চলতে থাকা "গুল্মের আত্মহত্যা " গল্প শুনানোর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতে!

নদীর পানির গন্ধে থাকা ডুবন্ত সুখ মুঠোভরে এনে দিত তোমায়?
অথচ তুমি তো কতই না উড়বার পরিকল্পনায় রাঙিয়েছ তোমায়।
ঢুকেছিল মাংস ভেদ করে?
তুমি তো সেই প্রাচীনকাল থেকেই তার রক্তের প্রবাহ পথে পথে রয়েছ।

তোমার কান্নাসিক্ত মুখে, গলায় আঙুল ছোয়াতে চেয়েছে তোমার মাঝি?
কিন্তু তুমি তো, ঝড় এলেই পিড়ি পাত উঠানে।
দু:খী রক্তে প্রতিপালিত কর আর ও এক মহাকাল।

তোমার ব্যাক্তিগত নদীতে কি মাঝি এখন ও নাও বাইতে আসে?
নদীর বুকে এত্ত চর। মাঝি বাধবে কবে?
অসহ্য আকাশের নিচে চরে চিড় ধরালে তবে?

তোমাদের এই স্থল জল জীবনের ভীড়ে কখনো কি তুমি তোমাদের জলপাই বন ছুয়েছে?
ওই খানে আমি খুব আদরে শত কোটি গাঙশালিকের গর্ত রেখে এসেছি।
তোমার কষ্টগুলো লুকোবার জন্য।
একবাক্স রঙিন চুড়ি আমি অনেক আগেই ভেঙে ফেলেছি।

০৭.
একদিন এইশহর সকল মৃতদেহের উপর দাড়িয়ে এক গ্লাস মদ এগিয়ে দেবে এইশহরে মরতে আসা মায়ের নিস্পাপ পাতিহাসের দিকে!
মায়ের নিস্পাপ পাতিহাসের শহর ভ্রমন এইভাবে শেষ হয়।
এক গ্লাস মদে।
মায়ের নিস্পাপ পাতিহাসের মদে নেশা হয় প্রবল।
মৃত্যুর মত স্পষ্ট দ্যাখতে পায় সে -
একটা শহর রাত একটা একুশে সাতরে বেড়ায় বৈরাগির ঝিলে।
ঝিলের ধারে বড়শি হাতে বসে আছে একজন জ্ঞানপাপী।
একদিন এইশহর সকল বেশ্যার জরায়ুতে পা রেখে দাড়িয়ে মিথ্যে প্রেমের পুরনো প্রলাপের বোঝা জমা দেবে বুড়িগঙ্গার কাছে!
একটা অসহায় নারী বা নদীর এভাবেই শেষ হয়।
মিথ্যে প্রেমের সংলাপের বোঝায়!
বুড়িগঙ্গা তাকিয়ে আছে সদরঘাটের উত্তরে লোডশেডিং ছেলেমেয়ের উচ্ছাসের দিকে।
কি অদ্ভুত শেষ ইচ্ছা, তাইনা শহরবাসী?

                       

০৮.
বাবা, আজকাল সবখানে আপনাকে দেখি।
পথে, ঘাটে, লোকাল বাসে,প্রাইভেট কারের কাচের ওইপাশে, দোকানে,সবজির দাম নিয়ে ঝগড়ায় বাজারে, মিছিলে,শপিংমলের বাইরে।
যেন এক শক্তিশালী অবতার এর মত ঘুরছেন আপনি।

এই মাত্র বাবা পাশ দিয়ে চলে গ্যালো।
বিস্ময় এড়িয়ে হুট করে ধাক্কা খেলাম আবার বাবার সাথে।
অথচ ওই তো ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে হেটে যাচ্ছে তার একমাত্র ঘিয়ে পাঞ্জাবী পড়ে।
মলয় ক্যামন আছিস? বাবা জানতে চাইলে উত্তর দিতে গিয়ে দ্যাখি রিকশালার সাথে ঝগড়া করছে বাবা।
বাবা, আপনি কোথায় যাবেন?
আমরা কোথায় যাই?
আবার ও কিছুক্ষন পড়ে লোকালে আমার পাশে সিটে বসে থাকেন বাবা।
জানতে চায়,তোর চাকরীর কি হোল রে মলয়?
অথচ আমি স্পষ্ট দেখছি বাসের জানলা দিয়ে ফুটপাতে বসে বাবা বাদাম চিবোচ্ছেন আর এক ভিখিরর সাথে হাসছে!
আবার হয়ত দেখা হবে একটু পরেই, সামনা সামনি, বা কোনাকুনি, পাশাপাশি এই শহরে।
নিউমার্কেট বা শিববাড়ির মোড়ে, হয়ত বা প্লাটফর্ম এ।
সাউথ সেন্ট্রাল রোড, শান্তিধাম বা রুপসা সর্বত্র অহরহ দেখা হবে।
তবুও,
বাবা, আপনি কোথায় যান?
বাবা, আমরা কোথায় যাই?
এই দুই উত্তর দেবার সময় কি মিলবে বাবার এই বা ওই জীবনে?

বৃদ্ধ শরীর, বুক বোঝাই শাদা পশম, প্রসন্ন হাসি।
এইমাত্র বাসায় ফিরে দ্যাখি, বাবা সোফায় বসা।
বাবাকে কি চা দেয়া হয়েছে?
জানতে রান্না ঘরে গিয়ে দ্যাখি বাবাই নিজের চা বানাচ্ছে!
আমি সোফায় গিয়ে আবার ও বাবার পাশেই বসি।
টেলিভিশনে নাটক হচ্ছে , অথচ এখানেও বাবাই একছত্র নায়ক।

বাবা, আমি কি পালাতে চাচ্ছি?
সন্তানেরা পালায়?
আমি কি দুঃস্বপ্ন পাশবিক সংসারে বাস করি?
আমি কি আকাশে মুক্তি খুজব ?

বারান্দায় দাড়িয়ে আমি চোখ তুলে তাকাই নীল নির্জন এ।
পুরো আকাশ হয়ে বাবা,
সেই চেনা হাসি,
মলয় ক্যামন আছিস?
ঠিক তখনই আমার কাধে হাত রেখে বারান্দায় দাড়ায় বাবা,

অথচ আমি স্পষ্ট শুনছি, বারান্দার ওপাশের জন্মান্ধ রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়া মিছিল হতে বাবা ডাকছে "মলয়,মিছিলে আয় "।



০৯.
আমি একদম তোমার মত একজনের সাথে থাকি এখন।
আমি আর লাজবন্তী মেনে নিয়েছি, সম্পর্ক একটি সেকেলে গন্ধযুক্ত শব্দ।

আমি একদম তোমার মত একজন কে চুমু খাই আজকাল।
আমি আর লাজবন্তী শপথ নিয়েছি, সীমাবদ্ধতার এই শালিক জীবনে "বিশ্বাস "শব্দটি উচ্চারন করব না আমরা।

আমি একদম তোমার মত একজন এর সামনে বসে ভোরের চায়ে চুমুক লাগাই।
আমি আর লাজবন্তী জানি এখন, আমরা কেউই মানুষ না।
ছেড়ে দিয়েছি ধর্মীয় বেশ্যার ভবন দুজনেই।

আমি একদম তোমার মত একজন এর সাথে হাটতে বেরোই বিকালে।
আমি আর লাজবন্তী মেনে নিয়েছি, জীবনের লাল পথটায় কালো আসবেই।
এই একমাত্র জন্মহতে মুক্তি আসবে কালোর পরেই।

আমি একদম তোমার মত একজনের চুলেই সন্ধ্যা দেখি।
আমি আর লাজবন্তী জানি এখন, তোমাদের হিংসার গভীর হতে গোলাপ তুলে আনার ক্ষমতা সমগ্র জাহানে আমাদের দুজনেরই আছে মাত্র।

আমি একদম তোমার মত একজনের সাথেই শুয়ে পড়ি অল্পরাতেই।
আমি আর লাজবন্তী সঙ্গম শেষে, বোতল ভর্তি মদ আর ব্যাস্ত হাইওয়ে গিলে ফেলি অনায়াসে,
আমি শুধু এই একমাত্র সময়ে নিজেকে প্রবলভাবে কবি দাবী করি,
লাজবন্তীর কানে কানে বলি -
চারাগাছের মত নয় কি ভালবাসা আমাদের?
জনপদের বন্দর আর মূল্যবোধের একাডেমি ছেড়ে তোমার ভেজা জামা, কামিজ আর একটি সমুদ্র জড়িয়ে বাচা যায়না এই জীবনে?



১০.
"ওঁ নম দেব প্রাদিরুপায় অমুকস্য আকর্ষণ কুরু কুরু স্বাহা "
শনিবার ভোররাতে একহাজার বার এই বলে চিল্লাইয়া তোমার স্বামী তোমারে আটকাতে চায়।
এই করে তোমাকে আটকানো যায়না,
তোমার আমাকে একটি গল্প বলার থাকে।
তুমি চলে আসো স্বামী ছেড়ে,
তুমি যখন তোমার বান্ধবীর প্রেমিকের গল্প করো,
যেই গল্পে থাকে, সেই প্রেমিক তোমার বান্ধবীর যোনি চুষে লাল করে ফেলেছে, আর বান্ধবী শিৎকারের বদলে পিচাশ বলে গালি দিয়ে উঠে এসেছে বোবা বিছানা ছেড়ে।
আর এসে গল্প করেছে মজিয়ে তোমাদের আড্ডায়।
আমিও তখন তোমার স্বামীর মত হয়ে উঠি,
তোমার ভিতরে দ্যাখতে পাই শয়তান,একটা লালা ঝড়ানো কুত্তা।
যেন উঠোনে বসে আছে উদাসীন যৌনতার মস্করা নিয়ে।
তুমি নামক হিংস্র জন্তুকে বিদায় করতে আমি চিল্লাইয়া উঠি -

"ইয়া খালিস ইয়া মুখালিস ইয়া খল্লাস কাম আবেরা সহম কো মুক্কিল তুমকো খ্বাজা তুমকো মঈনুদ্দিন কে লিয়ে মোর কাংটা চোহরা নাহর সর্পা বিচ্ছু অমাং চোর চাড় বন্ধায় সত্য নাম আদেশ গুরকো সাঞ্চা ঈশ্বরো বাচা " বলে।
কিন্তু তুমি ঠায় বসে থাক, তাড়ানো যায়না।
তোমাকে লাগতে থাকে কালরাত্রির মত।
ঘোর কালো অন্ধকার শরীর।
ব্রম্মান্ডের মত গোলাকার দুটি চোখ।
নিশ্বাস প্রশ্বাস হতে ভয়ংকর অগ্নিশিখা নির্গত হচ্ছে।
এলোকেশী আর গলায় বজ্রের মালা।
এই নিয়ে বসে আছ গল্প বলতে বলতে থেমে যাওয়া ভঙ্গিতে উঠোনের কোনে।।
আমার তোমার সাথে শুইতে ইচ্ছা করে।
কিন্তু কালরাত্রির সাথে কিভাবে শোব?
আমার ও তোমার বান্ধবীর প্রেমিকের মত তোমার জরায়ুমুখে চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করে,
ঘুমুতে ইচ্ছে করছে,
তুমি পিচাশ বলে উঠলে, ওষ্ঠ কামড়ে ধরে চুপ করিয়ে রাখতে।
একটু আগে যাকে হিংস্র জন্তু ভেবে মন্ত্র আউরেছি কি করে তাকে টেনে হিচড়ে বিছানায় নিয়ে ক্লিটোরিসের আশেপাশে চেটেপুটে খাই।
এই চেটেপুটে নেওয়া পুরন হয়না

কালরাত্রির সাথে শোয়া যায়না।
তোমাকে পূজা করছে পৃথিবী শুভংকরী হিসেবে।
যাও, যৌনতা বহির্ভূত দেবী, কিছু মিথ্যে প্রতিশ্রুত চুদিয়ে আসো।
যাও বিশ্বাসঘাতীনি দেবী, আমার প্রবল হিংস্র যৌণ হৃৎপিন্ডের মাঝ বরাবর পাড়া দিয়ে গাধার পিঠে করে পৃথিবী ঘুরে আসো!

SHARE THIS

Author: