চারু মান্নান এর গুচ্ছ কবিতা



মাকড়সার জালে অখণ্ড ইতিহাস

চলমান গতিতে জীবন
মাঝে মাঝে হোঁচট খায়;
সময় আর বর্তমান বড়ই অসামঞ্জস্য,
দ্রুত পালিয়ে বাঁচে;
ধরতে গেলেই খেই হারিয়ে যায়।

এমনি চলমান গতিতে জীবন বাড়ে। ক্ষুধার তৃষ্ণা জীবন যাপনে চাওয়া পাওয়া, আঙ্গিক সখ্যতা সরল পথে চলে না। এলোমেলো হয়ে যায় সুবোধ পথিক বাউল যেন। বেঁচে থাকার জন্য জটিল মায়ার টান। ক্ষণ কালেই তুচ্ছ হয়ে যায়। বর্তমান সঁপে দিন রাত কোলাহলে কখন যে অতীত ঘণ্টা বাজে? বর্তমান পুরোনো হলেই অতীতকালের বর্জ্য। তাইতো নতুন দিন এলেই স্বপ্ন বাসা বাঁধে বুকে। অথচ সেই স্বপ্নই দিন গড়ালে আবার সেই একই অতীত বর্জ্য। পুড়ে যাওয়া স্বপ্ন অতীত বর্জ্য স্মৃতির টান ধরে না। স্মৃতির খোলস জুড়ে বিরহ বিদ্রূপ। এমনি অতীত বর্জ্যে; মাকড়সার জালে অখণ্ড ইতিহাস।

 রাতেই যত স্বস্তির আকর

জলে ধুয়ে ছাপ। পানি পরিচ্ছন্নের নিক্তি বটে। ধুয়া মুছা ছাড়া সত্যই অপরিচ্ছন্ন বটে। তেমনি কি রাত? বেলা ডুবার ধীর লয়ে বিষণ্ণতা যেমন নামে তেমনি দিনের উচ্ছলতা হ্রাস পায়। আঁধার রাত অথবা জোছনা রাত। পূর্ণিমা মিটে গেছে বেশ কয়েক দিন। তাই সন্ধ্যায় আঁধার নেমে আসে। কালো আঁধারে বিবর্জিত দুঃখ বেদনা সব নিঃশেষ হতে থাকে। ঘুমের মহা উৎসবউত্তেজনা কাম বাসনা নড়ে চরে বসে, রাত গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। জোছনা বসন খুলে তার অভ্র ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয় চারিদিক। নগর বন্দর বন বনান্তর গাছের ফাঁকে ফাঁকে তার মহিন লীলা রূপ মিলন হাওয়ায় বিলায়। এমন জোছনা রাতে রবিশ এর সীতার মৌন মাতাল সব যাতনা ভুলিয়ে, জলের মতো রাত শুদ্ধ হয়।
আর এই রাতেই ঘুমের অতল সমুদ্রে
সে কি প্রচ্ছন্ন যাতনা তলিয়ে যাওয়ার?
দিনভর ভোজের যাতনা পুড়ে পরিশ্রান্ত শরীর মন
কুসুম লতার তনু মনে ঈশ কের নেশা জাগে এমন রাতেই
রাতেই যত স্বস্তির আকর ।




 যুগে যুগে নষ্ট চাওয়া কুয়াশা হাওয়ায় উড়ে

হেমন্তের শেষ ভাগ। শীতের প্রারম্ভে, সেই সেই পুরোনো রাতের কুয়াশা মনে রেখেছি কি? তাকে,তার কথা। জোছনা রাতে সেই কুয়াশা। তাকে নিয়ে কত যে অবয়ব এঁকেছিল রাত পাহারায়। পলে পলে হাওয়ায় ভেসে এসেছিল, চন্দ্রাবতীর কবিতার প্রেম মগন ঘ্রাণ। মহুয়া বনে নেশার চাদর বিছানো ঘন কুয়াশা। নদীর গর্ভে জল সীৎকারে মাতামাতি আহ্লাদ উচ্ছ্বাস। ঝরনার কুল কুল ইশারায় জলের মৈথুন। সেই মৈথুন এর সাক্ষী রাজহংসী যুগল। জনমে জনমে তারই সহচরী। বন্য জোছনায় নির্লিপ্ত চাহনি ঠোঁট চুম্বন মোহ এ মাতে।
মোহ অপরাহ্ণে বিরহ আকর
সদা কুয়াশার আদলে যন্ত্রণা উড়ায় পৃথিবী জুড়ে
গড়িয়ে গড়িয়ে ঋতু বৈচিত্র্য বেশে; তারেই খুঁজে ফিরে
যুগে যুগে নষ্ট চাওয়া কুয়াশা হাওয়ায় উড়ে।



 বসন্ত খুঁজি


সবাই বসন্ত খুঁজি
খুব সহজেই কাছে পেতে চাই সেই বসন্ত
বসন্ত মরীচিকার মতো
ছুঁই ছুঁই করে আর ধরা যায় না
অপেক্ষায় কেটে যায় কাল পেরিয়ে মহাকালে
জীবন বধী সবাই বসন্তের প্রত্যাশী
একটু খানি বসন্ত পাওয়ার সেকি তুমুল যুদ্ধ?
দিন ফুরলে রাতের আশায়
রাত ফুরলে পরের দিনের আশা
এমনি করে রাতদিন গুলে মাস পেরিয়ে
বছর গুলে দশকের পর দশক;
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম
পিতা, পিতামহ প্রপিতামহ; তবু বসন্ত ফিরে না
রাতের আঁধার বদলায় কোজাগরি চাঁদ বদলায়
বাতাস বদলায় স্বপ্ন বদলে যায় বদলে যায় মানুষ
তবু সেই বসন্তের আশায় সবাই
পথের পর পথ হেঁটে কালের গায়ে ছাপ এঁকে
সর্বশেষ পুষ্পিত পদ চিহ্নে নিরন্ন বসন্তের আশা চুমে

যদি মুক্তি মিলে সহস্র কালের বসন্তের?

SHARE THIS

Author: