(এক)
বাড়ি থেকে বেরোবার সময় কাঁধের ব্যাগটা আবারো চেক করে নিল
অবিনাশ। নিয়েছে তো শিশিটা? ওটা না নিলেই
প্রেস্টিজের দফারফা হয়ে যাবে এক্কেবারে। যেমনটা গত বুধবার জুঁইয়ের ফ্ল্যাটে
হয়েছিল। তিনমাস ধরে পড়ে থাকার পর, বহু কাকুতি মিনতি,কান্নাকাটির পর হাওড়ার উঠতি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী জুঁই এর
ফ্ল্যাটে। অবিনাশ ভেবেছিল গল্পগুজবে সময় কাটাবে দুজনে, অথচ জুঁই-এর গল্পের কোন মুডই ছিল না। তার ইরাদা ছিল
টুয়েন্টি টুয়েন্টি খেলার বাপ রে বাপ! আজকালকার মেয়েরা বড়ই ডেসপারেট হয়। বছর
সাতাশের জুঁই নয় নয় করে বছর বারোর ছোট,
অবিনাশের
চেয়ে। তার উপর অবিনাশ হল গিয়ে অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়। ডাকসাইটে কবি,সাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যের মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলার, তকমাটা যদিও অবিনাশের ভারী অপছন্দের। ওর কোনদিন বিয়ে হবে না,কবি মহলে ওর অনুপস্থিতিতে এটা খুব বড় একটা খিল্লির বিষয়।
হাঁটুর বয়সী ছেলেপিলেগুলোও বিয়ে করে এক বার,
দুই
বারও বাবা হয়ে গেছে। অথচ অবিনাশ এখনও ব্যাচেলারই থেকে গেল। ফেসবুকে প্রোফাইল
পিকচার দিলে মেয়েগুলো হামলে পড়ে। খিদে খিদে ভাব নিয়ে কমেন্ট করে দেওয়াল জুড়ে। আর
আয়না বলে অবিনাশ দেখতে ভাল,লম্বা,দুধে আলতা গায়ের রং। মাথার চুলটা না হয় ট্রান্সপ্লান্ট করে
নেওয়া যাবে। কতই বা খরচ? কিন্তু কিছুতেই কোন
মেয়ে ছিপে ওঠে না। ফোনে রাতের পর রাত জেগে কথা বলবে, কবিতা শুনবে,নিজেদের জঘন্য কবিতা
শোনাবে-অথচ বিয়ের ব্যাপারে স্পিকটি নট। এদিকে বেলা বয়ে যাচ্ছে। মায়ের বয়স হয়েছে।
বাড়িতে বাচ্চার হাসি, কান্না,খেলার আওয়াজ না থাকলে-বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। অবিনাশের আগে
ইচ্ছা ছিল একঘর বাচ্চা হবে। ন্যূনতম পাঁচটা। এখন এই প্রায় চল্লিশে এসে হাঁফের রোগ
আর বুক ধড়ফড়ানির লালচোখে সংখ্যাটা দুই-এসে দাঁড়িয়েছে। জুঁই-ও দুই-এ রাজি। সবই ঠিক
ছিল। ওর বাবা-মা-ও অরাজি নন-নাহলে মেয়ের সুবিধার জন্য ফ্ল্যাট ফাঁকা রেখে কেউ চলে
যান না, গোলটা বাঁধাল জুঁই। মুডে চলে
এল হঠাৎ। বিয়ের আগেই ও টেস্ট ড্রাইভ করে দেখতে চায়। অবিনাশের শুনেই পেটটা গুড়গুড়
করছিল। ও এর আগে এক দুইজনকে চুমু খেয়েছে,
কিন্তু
গলার নীচে নামেনি কোনদিন। জুঁই যখন ওর গালে,ঘাড়ে,গলায় চুমু খাচ্ছিল,কাঠ হয়ে বসেছিল
অবিনাশ। ঘরে এসি চললেও কুলকুল করে ঘামছিল,বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে
উঠছিল। পালসটা একবার দেখলে ভালো হত কিন্তু এমন সময় পালস দেখলে জুঁই কি ভাববে,ভেবেই নিজেকে আটকে রেখেছিল অবিনাশ।
-কি হল? আমিই আদর করব শুধু?
জুঁই এর গলায় বিরক্তি ঝরে পড়েছিল। অবিনাশ অপ্রস্তুত হয়েছিল।
বোকার মত হেসে চশমাটা ঠিক করতে গিয়েছিল। নাহ। এবার ওর কিছু করা উচিৎ। কি করবে ভেবে
না পেয়ে জুঁই এর কান কামড়ে দিয়েছিল।
-আহ্!
বিব্রত অবিনাশ বলেছিল
-লাগল?
-উঁহু।
অবিনাশ সাহস পেয়েছিল। আবারো কামড়ে ছিল। কানে,ঘাড়ে, গলায়,আঁচড়ে দিয়েছিল। এই আঁচড়ানো কামড়ানোতে জুঁই অস্বস্তিতে পড়েনি
বা ওর লাগেওনি কারণ ও প্রতিবাদ করেনি। কেলোটা হল চুমু খেতে গিয়ে। কপালে চুমু খেল
অবিনাশ। জুঁই নিজেকে এলিয়ে দিল বিছানায়। অবিনাশ ওর উপরে চড়ে বসল। দুই চোখের পাতায়,গালে,নাকে আদর করতে করতে
এবার ঠোঁটে চুমু খেতে ইচ্ছে হল ওর। গভীর চুমু। ঐ হলিউডের সিনেমায় যেমন দেখে এসেছে
তেমন চুমু। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে, দাঁত দিয়ে দাঁত কামড়ে
তারপর জিভটা ঢুকিয়ে দিয়ে-আ পারফেক্ট ফ্রেঞ্চ কিস। বহুদিন ধরে এমন একটা যুতসই চুমু
খাওয়ার সাধ ওর। কোনদিন হয়ে ওঠেনি। আজই হতে হবে। এমনটা মনে হয়েছিল। আরামে চোখ বুজে আসবে।
সময়ের হিসাব থাকবে না আর। মনে হবে সপ্তম স্বর্গে আছি। কিন্তু এই একটা সাধই যে
পরমাদ ঘটাবে আর তিনমাসের কাঠখড় পোড়ানো,
শুধু কি
কাঠখড়-ফোনের বিল পোড়ানো,ইয়ে মানে দুটো শাড়ি
আর একটা পারফিউমের টাকাও যে নেহাত গচ্চা যাবে-এটা বুঝলে অমন সাধ আর করত না অবিনাশ।
বা করলেও প্রস্তুতি নিয়ে করত। আজ যেমন পূর্ণ প্রস্তুতিতে বেড়িয়েছে। জুঁই এর
পাশাপাশি এই মেয়েটাকেও হাতে রেখেছিল অবিনাশ। ওর তো কপাল পোড়া। তীরে এসেই তরী ডোবে
সবসময়। আগে হলে হাতে পেন্সিল নিয়ে বসে থাকত ক’মাস কিংবা বিরহের কবিতা লিখত। এখন ওসবের জন্য সময় নেই। ব্যাক আপ প্ল্যান তৈরি
রাখা থাকে সবসময়। এই বছরের মধ্যেই আইবুড়ো নাম ঘোচাতে হবে। তাই এক,দুই,তিন,চার নম্বর দিয়ে রাখে। যেমন জুঁই ছিল একনম্বরে। সে যখন পিছলে
গেল,তাহলে এবার শ্রীতমা,জুঁই এর মত সুন্দরী না,তবে মেধাবী। কলেজে পড়ায়। ব্যক্তিত্ব আছে। একটু আধটু লেখালিখিও করে। তবে বিয়ের
পর ওসব না করাই ভালো। এক বাড়িতে দু’জন লেখক হলে সমস্যা।
ইগো চলে আসবে, অভিমান সিনেমার মত। তবে
মেধাবী মেয়ে বিয়ে করতে প্রোডাকশনের ব্যাপারে নিঃসংশয় থাকা যায়। জিনটা ভালো হলে
পরের জেনারেশনের আইকিউ ভালো হবে। সায়েন্স পড়বে তারা। অবিনাশেরও বড্ড সায়েন্স পড়ার
ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অঙ্কে জীবনে তিনের কোঠা ছেড়ে নাম্বার চারের কোঠা ছুঁল না। কি
জটিল বিষয় রে বাবা! দেখলেই মাথা ঘোরে। ব্যাগের ভিতর শিশিটা ট্যাক্সিতে উঠে আর
একবার দেখে নিল অবিনাশ। ভোর ভোর বেড়িয়েছে। চিৎপুর থেকে মানে কলকাতা ষ্টেশন থেকে
ট্রেন। অনেক দূরের রাস্তা। যত তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারে, ততই ভালো। ততটা বেশি সময় শ্রীতমার সাথে কাটাতে পারবে। শ্রীতমা বেশী সাজগোজ করে
না। ওর জন্য কবিতার বই নিয়েছে একটা। যার যেমন রুচি তাকে তেমন উপহারই দিতে হয়। আর
আজ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছে অবিনাশ। মেয়েদের মেজাজমর্জি বোঝা দায়। তাই আজ
প্রস্তুতিতে কোন রকমের ফাঁক রাখেনি অবিনাশ। ট্রেনে উঠেই রিজার্ভড্ সিটে এলিয়ে দিল।
একটু ঘুমানো দরকার। রিল্যাকসড্ থাকতে হবে ডেটিং সাইটে। আজ যেন সব ঠিকঠাক হয় ঠাকুর।
মনে মনে বলল অবিনাশ। বলেই মনে হল শ্রীতমা আবার নাস্তিক। ঠাকুর ওর সাথে এঁটে উঠতে
পারবেন? দীর্ঘশ্বাস ফেলল অবিনাশ। ওর
যা কপাল-নিজেরই তাতে একটুও বিশ্বাস নেই।
(দুই)
ফেরার পথে মনটা বেজায় খুশি ছিল অবিনাশের। শ্রীতমার সাথে
সময়টা বেশ ভালোই কেটেছে। ভালো মানে বিপত্তিহীন। শ্রীতমা অর্থোডক্স মেয়ে। বিয়ের আগে
বেশী কাছে আসা ওর পছন্দ নয়। একদিক থেকে অবিনাশেরই ভালো। জুঁই এর মত টেস্টড্রাইভ
চেয়ে বসলেই রাজ্যের টেনশন মাথায় ভিড় করে বসত। কোনদিন করেনি ওসব,যদি না হয়,যদি পারে-ওই সব ভাবতে
ভাবতেই বুক ধড়ফড়ানি শুরু হয়ে যেত। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল
না। ইনহেলার অবশ্য ব্যাগেই ছিল। আরো দুই পাঁচ রকমের ওষুধও। ম্যানেজ হয়ে যেত। তবে নিজের
অসুস্থতা বিয়ের আগে বৌকে না জানানোই ভালো। শ্রীতমার বাবা মায়ের সাথেও কথা হল আজ।
আপ্যায়নটা ভালোই করেছেন। জামাই আদর যাকে বলে। ইলিশ,চিংড়ি,খাসির মাংস-বাড়ির জন্যও
কিছুটা প্যাক করে নিয়েছে অবিনাশ। ছাঁদা বাঁধার অভ্যাস রয়েছে মজ্জার ভিতরে, কুলীন ব্রাহ্মণ বলে কথা। তাছাড়া পুজো আচ্চাতেও মন আছে
অবিনাশের। নিয়ম করে গায়ত্রী জপ করে। এক সূর্যে দুইবার ভাত খায় না। তবে আজ নিজের
ব্যবহারে নিজেই অবাক হয়েছিল অবিনাশ। জুঁই মেয়েটা আর যাই করুক,ওকে সাহস দিয়েছে। আজকালকার মেয়ের বাবা-মা বেশ আধুনিক। মেয়ে
আর হবু জামাইকে দিব্যি ফাঁকা ঘরে সমস্ত রকম প্রাইভেসি দিয়ে নিজেরা সরে পড়েন।
এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। শ্রীতমার মা রান্নায় ব্যস্ত, আর বাবা মিষ্টি আনতে বাজারে গেলেন। দোতলায় ওরা একা। কবিতা
নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎই অবিনাশের বড্ড চুমু খেতে ইচ্ছে চুমু খেতে ইচ্ছে হল।
ফ্রেঞ্চ কিস। ঠিক যেমন জুঁইকে খেয়েছিল,সেভাবেই। বড় ভালো
লেগেছিল সেদিন। মাথাটা ঝিমঝিম করছিল। নেশা করে না অবিনাশ,বেনারসের ঠাণ্ডায় সাহিত্য সম্মেলনে গিয়েও ব্র্যান্ডি অবধি
খায়নি। সবাই মিলে চাপাচাপি করেও খাওয়াতে পারেনি। তবে নেশা করলে শুনেছে মাথা ঝিমঝিম
করে। চুমু খাওয়াটাও কি একটা নেশা? হলে বেশ ভালো একটা
নেশা। আর আজকে তো দ্বিধার কিছু নেই। সাথে প্রোটেকশন রয়েইছে। তার জন্য বাথরুমে যেতে
হবে একবার। বেসিনটা কিচেন লাগোয়া,কিন্তু ওখানে গেলে
শ্রীতমার মা দেখে ফেলবে। কিছুক্ষণ ইতস্তত করার পর প্রশ্নটা করেই ফেলেছিল অবিনাশ
-আচ্ছা, তোমাদের বাথরুমটা কোনদিকে?
-যাবেন? এই তো-সামনেই, চলুন-আমি দেখছি।
উফ! দেখালে তো মুস্কিল। অবিনাশ একা যেতে চায়। মেয়েরাও না!
গোয়েন্দা একদম। কেন বাবা? তোর যাওয়ার কি দরকার? বলে দিলেই তো হয়।
-আচ্ছা,চলো। তুমি এগোও।
শ্রীতমা এগোলেই অবিনাশ টুক করে শিশিটা পাঞ্জাবীর পকেটে ভরে
নিল। বাথরুমের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে শ্রীতমা।
-যান।
একবার ভাবল বলবে,
‘যাবে
নাকি একসাথে?’ – কিন্তু শ্রীতমার
গম্ভীর মুখ আর হাই পাওয়ারের চশমা দেখে কথাটা গিলে ফেলল অবিনাশ। একবার,দু’বার,তিনবার-নিঃসন্দেহ হতে গভীরভাবে শ্বাস নিল বার কয়েক। নাহ। সব
ঠিক আছে। এবার তো হতেই পারে-জমাটি একটা ফেঞ্চ কিস।
জমেওছিল চুমুটা। জমে ক্ষীর একদম। শ্রীতমাও আনাড়ি নয়। তালে
তাল মিলিয়েছিল ভালোই। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ চলার পর তারপর ঠোঁটে
দাঁতের কামড় আর বসায় অবিনাশ। তারপর জিভ ঢুকিয়ে...শ্রীতমার নীচের ঠোঁটটা ফুলে
গেছিল। চুমু শেষ হওয়ার পর লক্ষ্য করেছে অবিনাশ। শ্রীতমার মা চালাকচতুর মহিলা। উনিও
ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন। চোখের চাহনি দেখেই বুঝেছিল অবিনাশ। কিন্তু দেখেও দেখলেন
না, মানে গ্রিন সিগন্যাল। বিয়েটা
তাহলে শেষমেশ হচ্ছে। এ বছরেই হবে সেটা। খুব প্যাঁচ দিয়েছিল না গোপাল দা? অবিনাশের এ বছরেও বিয়ে হবে না, এমনটাই ফলাও করে লিখেছিল কাগজে। এবার চোখ টেরিয়ে যাবে।
প্রফেসর,লেখিকা বৌ কি শুধু ওনারই
থাকতে আছে? গুনগুন করে গান ধরল অবিনাশ, “হোঁঠো সে ছুঁ লো তুম/মেরা গীত অমর কর দো” ট্রেনে এসি চলছে পুরোদমে,কিন্তু ঠাণ্ডা লাগছে না তেমন। হাঁফের টানটাও ওঠেনি সারাদিন। সব চুমুর গুন, চুমু হল গিয়ে মহৌষধ। ইমিউনিটিও বাড়িয়ে দেয়। বিয়ের পরে রোজ
নিয়ম করে চুমু খেলেই সব রোগ পালিয়ে যাবে।
(তিন)
বাড়ি ফিরে ল্যাপটপে লিখতে বসেছিল অবিনাশ। আজ অনেক ক’টা কবিতা আসবে। সব চুমু নিয়ে। আরে! আজ তো শুক্রবার। সাধে কি
বলে, “জুম্মা চুম্মা দে দে!” মনে মনে একটু নেচে নিল অবিনাশ, অমিতাভ বচ্চনকে কি সাধে বস্ বলে সবাই? আগে থেকেই সার্থক চুম্মা মানে ইয়ে চুমুর দিনক্ষণ ঠিক বুঝে
গিয়েছিল লোকটা। গুরুদেব,গুরুদেব। ফোনটা বেজে
উঠল হঠাৎ। শ্রীতমা। মিস করছে তাহলে। ওরও চুমুর নেশা ধরে গেছে। বারেবারে ফোন করছে।
আধঘণ্টা আগেই তো কথা হল। ফোনে চুমুটুমু খেয়ে গুডনাইট বলা হয়ে গেছে। লিখতে বসবে
সেটাও বলে দিয়েছিল। লেখার সময় খুব জরুরি দরকার না হলে তো ফোন করবে না। নিজে লেখে
তো বোঝে ব্যাপারটা। তাহলে প্রেম বড্ড উথলে উঠেছে। আপনি থেকে তুমিতেও চলে এসেছে।
-বলো, ডার্লিং।
-জুঁই ব্যানার্জীকে
চেন?
কোন ভূমিকা ছাড়াই এই বাউন্সারে থমকে গেল অবিনাশ। হেলমেট
পরার সুযোগ পেল না
-জুঁই...জু...জু...
তোতলাতে তোতলাতে বলল অবিনাশ,কোনক্রমে।
-আর নাটক করতে হবে না।
গত বুধবার হাওড়ায় যার ফাঁকা ফ্ল্যাটে গিয়েছিলে। সেই জুঁই। উঠতি রবীন্দ্রসঙ্গীত
শিল্পী। এবার মনে পড়েছে?
শ্রীতমা এসব জানল কি করে? জুঁই বলেছে? কিন্তু জুঁই ওকে
চিনবে কি করে? শ্রীতমাও বা জুঁইকে চিনবে কি
করে? একথা তো জুঁই আর অবিনাশ
ব্যতীত কারোর জানার কথা না?
-কে জুঁই?
নিজেকে গুছিয়ে নিল অবিনাশ। একসাথে তিন চারটে মেয়ে নিয়ে
খেলতে হলে ডিফেন্স মজবুত হতে হয়।
-ন্যাকা নাকি? চিনতেই পারছ না?
-কোথা থেকে শুনেছ এসব
ফালতু কথা? শোন শ্রীতমা,আমি ব্রাহ্মণ সন্তান,
ত্রিসন্ধ্যা
করি। মা কালীর পুজো করি প্রতিদিন। মা কালীর নামে শপথ করে বলছি, এই নামে কাউকে চিনি না। হবে কোন ফ্যান। কত মেয়েই তো প্রেমে
পড়ে জানোই তো। কবিদের জীবনে এই তো বিড়ম্বনা। হাঁটুর বয়সের মেয়েরাও বলে আপনাকে বিয়ে
করব। এতে আমার কি দোষ সোনা? আই লাভ ইউ। আমি তো
তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
-তাই?
শ্রীতমার গলার আওয়াজটা একটু নরম হল না? মনে তো হল তাই। কাজ দিয়েছে তাহলে।
-একদম তাই। তাই তো বলি, বিয়ে করো। আমাকে বাঁচাও এদের অত্যাচার থেকে। এইসব মেয়েরা
তুমি এলে, আর কাছে ঘেঁষবে না। আর দেরি
করোনা সোনা, এসো।
-জুঁইকে চুমুটা কি মুখ
না ধুয়েই খেয়েছিলে?
-এমন প্রশ্ন জীবনে আশা
করে নি অবিনাশ। এ তো গুগলি।
-মানে?
-মানে, জুঁই আমার মাসতুতো বোন। আজ মা তোমার কথা মাসিকে বলতে, জুঁই আমাকে ফোন করে বলল সব, বলে দিদিভাই, জানিস না লোকটার মুখে
কি বিশ্রী গন্ধ! চুমু খেতেও পারে না। কি আনস্মার্ট। আমি তো ঘাড়ধাক্কা দিয়েছি
ঐদিনই। তোকে চুমু খায়নি? অবিনাশ চুপ করে
শুনছিল সব। জুঁইয়ের কথাগুলো কানে বাজছিল,
“ইস্!
আপনি মানুষ! এরকম গন্ধ হয় কারো মুখে? দাঁত মাজেন না, নাকি?” কিন্তু আজ তো মুখটা
কুলকুচি করেছিল বারবার। লিস্টারিন দিয়েই করেছিল। ওটাই তো সবচেয়ে ভালো।
-আমার মুখে গন্ধ! কি
যা তা বলছ? তুমি পেয়েছ?
শ্রীতমা ব্যাঙ্গের হাসি হাসল
-নাহ, পাইনি। তবে আমাদের বাড়িতে তুমি একটা জিনিস ভুলে ফেলে এসেছ, জানো?
ডুবে যেতে যেতে খাবি খাওয়া গলায় বলল অবিনাশ
-কি?
-লিস্টারিনের শিশিটা।
ওটা নিয়েই তড়িঘড়ি বাথরুমে গিয়েছিল কিনা। ডুবেই গেল অবিনাশ। বইয়ের তাকে কে রাখা
গোপালদার বইয়ের কভার থেকে ওনার মুখটা ওকে
ভ্যাংচাতে থাকল যেন। সব প্রজাপতি গুলো চোখের সামনে অন্যের বাগানে উড়ে চলে গেল। ওর
কপাল সত্যিই পোড়া! ফেঞ্চ কিস, বড্ড বিস্বাদ।।