ষাট পয়সার নিউজপ্রিন্ট কাগজে লেখা কবি’র প্রতিবাদে রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে যায়
কবি, কবি’র দাঁড়ানো হয়না সমাজে!
কবি ভুলে গ্যাছে কবে খেয়েছে ভাত পরিবারে,
কবে হেসেছে প্রাণখুলে?
বাবা মাথা হেঁট করে বাজারে যায়,
মা সেলাই করে কবিপুত্র জন্মের কষ্ট।
কবি ভুলে যায় বোন কবে দিয়েছিল শেষ পরিচয়।
প্রেমিকা বলে গেছে যাবার সময়-
উঠতে পারলে ষাটপয়সার কাগজ থেকে দেখা করে বিয়ে খেয়ে যেও পরবর্তী সয়ম্বর সভার।
কবি বসে থাকে রোদ জর্জর চোখে, মশাল জ্বলা বুকে।
চায়ের দোকানের খিস্তি খেউরে অথবা তীব্র আর্তনাদে।
শহর গড়ায় সভ্যতায়।
রাষ্ট্র দাঁড়ায় বিনির্মাণের উন্নয়নে,
কবি দাঁড়াতে পারেনা,
কবি হাঁটতে পারেনা বুকে ব্যাথা খুব।
কবি’র আঙ্গুলে দাঁড়ানো পতাকা উপহাস করে,
কবি বাড়ি ফেরেনা
ঘর হারানো লোকমুখে শোনা কালো কৌতুকে।
রাস্তায় মাঝে দ্যাখা হয় কিছু
ফেরীওয়ালা, কায়কাওসের ছেলে অথবা বিব্রত ময়ুরের সাথে।
দ্যাখা হয় বেনিয়া বেশ্যাদের উর্বর স্তনবাহী অনুর্বর যোণীনির্ভর মেদের সাথে।
দ্যাখা হয় ধর্ষক কবিতার পুরষ্কার নেয়া একুশের স্মরণসভা।
দ্যাখা হয় কুকুরের পা তুলে পেচ্ছাপ করা নষ্ট আয়োজিত কবিতা উৎসবের।
এত কিছু দ্যাখতে দ্যাখতে দ্যাখা হয়না,
কবি পিতার মলিন মুখ,
কবি মাতার বিষন্ন চোখ,
বোনের ভেজা আঁচল,
প্রেমিকার ন্যায্য অবহেলা।
কবি বাড়ি ফেরেনা,
কবি মিছিলে যায়, মিছিলে ঘুমায়।
বাবা জেগে থাকে।
কবি পিতারা মারা যান সন্তানের প্রথম কবিতায়।
কবি’মাতাদের আত্মহত্যার কারণ প্রথম লেখা – অ।
তবুও কি থামে কবি, থেমেছে কি কখনও?
জনতার আগুন কলমে নিয়ে অধিকারের দাবীতে লেখা ফেষ্টুন,
প্রেমিকার ওড়নায় আদায়কৃত নামাযের কারণে ব্রাত্য সে
সামাজিক সাপ্তাহিক বাজারের ছোট ফর্দে।
তবুও থেমেছে কি কখনও মহানায়ক!
কবি পিতারা কবি জন্মের অভিশাপে বন্ধ করেছেন যৌনক্রিয়া
কবি মাতারা রুদ্ধ করেছে পথ জরায়ুর।
তবুও কিছু কি এসে গ্যাছে কবিতার?
আর তাই
জনশ্রুতি আছে একজন কবি’র, একজন মহানায়কের লাশ ঈশ্বর অগ্রাহ্য করেছে সহস্রবছর আগে।
জনশ্রুতি আছে পচে গলে যাওয়া কবি মৃতদেহ হয় দূর্দান্ত জৈব সার।
( রাষ্ট্র এই কবিতাটির নাম নির্ধারনে অপারগতা জানানোতে কোনও নাম দেয়া হয়নি )
কবিতা আবার প্যারিস
ল্যুভর জাদুঘরের হামলায় বিস্মিত নই, নই হতভম্ব।
প্রিয় প্যারিস তোমার বুকে জমে আছে আলজেরিয়ার হতভাগ্য কিশোরীর ধর্ষিত আর্তনাদ।
দেয়ালে ঝুলে থাকা চোখ উপরে নেয়া বাবা।
সদর দরোজায় সাতান্নো টুকরোর মা।
ব্যবচ্ছেদকৃত ধর্মে ত্রিস্তরের আর্থ-সামাজিকতা।
অটিসম আর ক্যাপিটালিজম, দ্যা ভোগ অথবা রেগে ,
ঘুরছো ঠুনকো আভিজাত্যে ।
তোমার মধ্যবিত্তের যাপিত ক্রোধ যখন তোমার লিখিত পান্ডুলিপিতে মন্চস্থ তখন আমি কেবলই চুপ থাকতে পারি।
প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ফুহ্।
রাষ্ট্র যখন নিজেই ঘাতক তখন প্রতিবাদ কেবল চার অক্ষরের গান।
প্যারিস আমি তোমাকে চিনি আমার হন্তারক প্রিয়তমার ন্যায়।
তোমাকে বুঝি স্ট্রেইটকাট ছুরি ঢুকানোর আগ মূহুর্তের মোনালিসার হাসির অনুবাদে!!
তাই
বলছি এবার থামো!
দ্যাখা - অদ্যাখা কাব্যঃ ৩
রিকশা কিংবা বিছানার বামপাশটায় অথবা হৃদয়ের বাম-অলিন্দে
একটা অসহ্য শূন্যস্থান; আশ্চর্য শুন্যস্থাণ নিয়ে পরিব্রাজক আমি।
বেঁচে থাকি নিঃশ্বাস নেই এই যোণীবাহিত পৃথিবীতে।
অদ্ভুত নষ্টালজিক কিছু শব্দের হাহাকারে আমার ঘুম আসেনা।
তুমিহীন তুমিময়তার সেই শুন্যস্থাণ হিলিয়ামে পূর্ন কানায় কানায়
- হাইড্রোজেনের দুই জোকার উড়ে যাওয়া সাংকেতিক পানির
উপচে পড়া ঢেউ নিয়ে তাই রিকশাটাকে নদী ভেবে
রাস্তায় হাটি আমি, বিছানাটার সমুদ্র হোয়ে ওঠা দ্যাখতে দ্যাখতে
একটা নিস্তব্ধতার একাকীত্বে গোল হোয়ে বসে থাকি
পাশের বারান্দায়।
অপেক্ষা আর অপেক্ষায় কাটে আমার সোয়া দুই বছর!
ছুটি থেকে ছুটি নেয়া হয়না আমার,
দেয়া হয়না এক দেয়াশলাই বক্সে- ভালোবাসা মসলিন।
আমি চাই
তাই আমি চাই তোমার যে তুমি; তারসাথে আমার কখনওই যাতে দ্যাখা
না হয়।
তোমার; তোমার সাথে আমার দ্যাখা সে'তো ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যে এক নিগৃহিত বাংলার ইতিহাস!
তাই এই আমি চাই,
খুব কোরে চাই এই স্বাধীন বাংলায় আমার যে তুমি
সেই সন্ধ্যের ডুবে যাওয়া আকাশে লাল শাড়ি ছোট্ট লাল টিপে
ছাদে দাড়িয়ে
আমায় খোজায় ব্যস্ত যে অস্থির তুমি
সেই তোমার সাথে আমার দ্যাখা হউক,আবার।
আবার,
রিকশার বা'য়ে বসো তুমি, বিছানার বা'য়ে শুয়ে পড়ো।
আমি পাশে বসে আংগুল ছুই আংগুলে,
ছুয়ে দেই তোমার ঠোটের তিল আমার নিঃশ্বাসে,
সরিয়ে এলোমেঘ চুমু আকি কপালে তোমার,
কিছু শব্দে আবার কিছু কথা হউক,
হউক লেখা একটা কবিতা আবার দ্যাখার পর হউক
ফুচকাতে ভর করা এক সন্ধ্যে।
একটা পায়ে হাটা পথে গোলাপ ফুটুক;আবার।
একটা ছবি হউক ভোরের,
একটা ঘর হউক আমাদের; ছোট্ট এক ঘর।
তোমার আমার মাঝে ছোট্ট একটা বালিশ হউক,
ছোট্ট এক আংগুল আধোবোলে বাধুক আমাদের।
তারপর ঠিক ৪৭ বছর পর আমি মরে যাই তোমার ঠোটে...
৪৭ বছর পরবর্তী মৃত্যুর আগে
ভালোবাসা-বাসি সংসারের জন্য হলেও আমার
- তোমার আমার সাথে দ্যাখা হউক অথবা হোয়ে যাক...
বাড়ি আছে
ভেবেছিলাম ভুলে যাবো, ছাপোষা ঘামে ভেজা শার্ট ভুলতে দিলো না।
ভেবেছিলাম অগ্নিদগ্ধ হৃদয় সপাটে বন্ধ করেছে স্বপ্নের জানলা,
ভেবেছিলাম চোখ খুলে ঘুমানো এই ভ্রষ্ট সময়টা পেরিয়ে যাবো,
পেরিয়ে যাবো সম্পর্কের সুতো ছিড়তে ছিড়তে একলাফে।
একটা মানুষের ভেতর কতশত মানুষ আজকাল মরে পচে গলে যায়?
একটা বিপ্লবের মাঝে কত
হাজারটা
বিপ্লব, মাজা ভাঙ্গা বিপ্লবী সেজে বিক্রি হয়?
একটা নারী কতটা সহজে জরায়ু দিয়ে দেয় বন্ধক?
ভেবেছিলাম এসবকিছুর জবাব পাবার পর
ছাপোষা আমি সরকারী দফতরের লাল কালো সিল আর স্ট্যাম্পপ্যাডে
লিখবো না বিপ্লব চাই
– একটা
ঘুমের শিশুর ভাত
ঘুম
চাই, নিশ্চিন্ত।
লিখবো না বিপ্লব চাই
– মায়ের আঁচলে
মোছা হউক ঘাম সন্তানের।
লিখবো না বিপ্লব চাই – প্রেমিকার হাত ভরা চুড়ীর আঁজলা ভরা জলে বুক ভেজাক প্রেমিক।
কিন্তু না, পথের
মাঝেই
ক্রমশ ফুরিয়ে যাওয়া দুপুরটা ঘুরে দাঁড়ায়।
শব্দগুলো
আমার
উদ্ধ্যত কৈশোর
শব্দগুলো
আমার
নির্লোভ মাথা উঁচু তারুণ্য হয়ে
ওড়না খসে যাওয়া বুকে মন খারাপের কুয়াশা সরিয়ে
রোদ
প্রস্তাবে লিখে দেয়
আমি একদিন জন্ম যন্ত্রণায় নিজের দিকেই ছুঁটে যাবো
আমি একদিন অভিমান ভেঙ্গে মিছিলের শ্লোগাণে বলে উঠবো
"বাড়ি আছে, বাড়ি আছে -
সোয়েব
মাহমুদ , বাড়িতেই আছে।"
অনাগত মুখ
যদি মরে যাই,
যদি বেঁচে না থাকি,
যদি অনাগত আধোবোল শুনতে না পারি,
তবুও তোমার চোখের ভেতরকার চোখ হয়ে থাকবো।
তবুও তোমার বুকের ঘামে লিখে যাবো তোমায়।
তবুও তোমার আঙুল ছুঁয়ে আঙুলে থেকে যাবো মৃত্যুশোকে।