সমকালীন বিশ্বসাহিত্য । কবিতা সংখ্যাঃ প্রথম পর্ব । অতিথি সম্পাদক: কালপুরুষ

অলংকরণ: রাজিব দত্ত

রেইনালদো আরেনাস


কিউবান কবি, ঔপোন্যাসিক ও নাট্যকার রেইনালদো আরেনাস (Reinaldo Arenas) জন্ম নেন ১৬ জুলাই ১৯৪৩ সনে। যৌবনের শুরুতে ফিদেল কাস্ত্রোর জন্য আন্দোলনে শরিক হন এবং পরবর্তিকালে সমকামীতা ও কাস্ত্রো সরকারবিরোধী সাহিত্যের অভিযোগে গ্রেফতার হন। জেলে অমানুষিক অত্যাচার থেকে তিনি রক্ষা পান সমুদ্রপথে আমেরিকা পাড়ি জমিয়ে। কবিতার পাশাপাশি তার সর্বাধিক বিখ্যাত কাজ পাঁচটি উপন্যাসে সমন্নিত Pentagonia সিরিজ। আরেনাসের সাহিত্যে ঘুরে ফিরে এসেছে কিউবার মাটি ও জলের ঘ্রাণ, জীবনের স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন, বঞ্চনা। মারণব্যাধি এইডসের সঙ্গে যুদ্ধক্লান্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন ১৯৯০ সনের ৭ই ডিসেম্বর। সংক্ষিপ্ত ও প্রায় বিক্ষুব্ধ-অশান্ত জীবন সত্ত্বেও রেইনালদো আরেনাসের রেখে যাওয়া সাহিত্যকর্মের পরিমাণ ঈর্ষণীয়।
অলংকরণ: নবী হোসেন

হে সমুদ্র
প্রেমিক আমার
ভাষান্তর: এনামুল রেজা


আমি সেই কুৎসিত শিশু
সমস্ত মিলিয়ে যে তোমাকে শুধু বিরক্ত করবে
"তুমি কি একটু স্থান দেবে?"

আমি কদাকার সেই শিশু
সংশয়াতীত অনাকাঙ্ক্ষিত
সেই উজ্জ্বল গাড়ী যেখানে অন্য শিশুরা হাসি ও আনন্দে নৃত্যরত
তার থেকে অনেক অনেক দূরের কেঊ

আমি সেই কদাকার অপ্রিয় শিশু
নিশ্চিত অবাঞ্চিত
যার সামনে রাস্তার দৈত্যাকৃতি আলোরা ক্রোধে জ্বলে ওঠে
এমনকি কোন বৃদ্ধা রমণীর স্নেহের ছায়াও সরে যায়
অথবা ছোট্ট বালিকারা যাদের শূন্যে ছুঁড়ে মারলে খুশি হত
তার কদর্যতা ওদেরও অপমানিত করে

আমি চিরকালের সেই রাগী এবং নিঃসঙ্গ শিশু,
যার বয়ে বেড়ানো ক্রোধ তোমায় অপমান
আর হুঁশিয়ারী দেয়:
যদি উন্মাদনায় আমার মাথায় চাঁটা মারো
সে সুযোগে তোমার পকেট মেরে দিতে পারি।

আমি সেই শিশু যে চিরকাল
দাঁড়িয়ে আছি বিস্তৃত সমাসন্ন আতঙ্ক,
আসন্ন কুষ্ঠআসন্ন মহামারী,
সমস্ত পাপ ও সমাগত অপরাধের কারণ হিসেবে,
আমি সেই ঘৃণ্য শিশু
যে এক প্রাচীন কার্ডবোর্ডে নিজের বিছানা বানিয়ে করে অপেক্ষা করছি,

এ নিশ্চয়তায় যে শুধু তুমিই আমার আশ্রয় হতে পারো।



পেট্রিশিয়া লকউড

পেট্রিশিয়া লকউড একজন নারীবাদী কবি যিনি ভালোবাসেন খুব কঠিন এবং বাস্তব বাস্তবতা। যৌনতা ও ঠাট্টার ছলে বলে ফেলতে জটিল সব কথা। কিন্তু গভীরতা হারান না মোটেও।
তিনি পরিচিত হয়েছেন রেপ জোক” কবিতাটি দিয়ে। জাতীয়তায়  আমেরিকান
অলংকরণ: নবী হোসেন

একজন হিপনো ডোমির বলে যাওয়া কথারা
ভাষান্তর: জোনায়েদ আহমেদ রাহাত

আমি জন্মেছি
নারী হয়ে,
আমি কথা বলতে বলতে আপনাকে নিয়ে যাবো মৃত্যুর কাছে,
অথবা বন্ধ করুন আপনার কানঅথবা ঘুমিয়ে পড়ুন।
কী আছে আমার কাছেপৃথিবীর সকল সময় এবং একটি কণ্ঠ  যা আগে পিছে ঘুরতে থাকে আপনি তা শুনতে পারবেন এবং আপনার চেহারার একটি অংশ যেখানে আমার থাকার কথা।
কী আছে আমার কাছেআছে নিশ্চিত ক্ষমতা এবং আমি যা চাই তা হলো আপনার অর্থ
এবং আপনার মন এবং আপনার মাঝে আমাকে বিষাক্ত সাপ মনে করার চিন্তা
এবং ঘাসের মাঝে একটি সাপ।
সে সাপের প্রতিটি হাড়ই নিতম্বের হাড়তার প্রতিটি অংশই নিতম্ব।
আমার প্রথম শব্দ নীরবতাতারপর হিসসসসস
আমার বলা প্রথম শব্দ শুনুন
ভেড়া-পালক এবং হিসাবরক্ষকদের মোহিত করা কঠিন কাজ
এবং নাবিকেরা তোমরা যারা সমুদ্র দেখো,
এবং যেই কিশোরেরা কাট কাট কাট কাট করে ঘাস কাটে
সতর্ক হও
লেখকেরা যারা লেখে নতুন নতুন কাব্য এবং যারা বার বার লিখে
একই
যারা হীরে কেটে বেড়ায় তারা হাঁটু গেড়ে আমার সামনে বসবে
এবং অনুরোধ করবে তাদের মোহিত করার জন্য
এবং আমি তাদের সামনে উজ্জ্বল হয়ে উঠবো অনেক উজ্জ্বল,
তারা আমার কথা শুনবে এবং আমারই কথা শুনবেআমি তাদের বলবো,
নিজের বয়স গুনো উলটো করে এবং আমি তাদের বলবো শ্বাস নেয়ায় সতর্ক হও
এবং আমার নিশ্বাস নেও যা থেকে যাবে চিরতরে।
মেনে নাও তুমি একজন শিশুআমি যতদিন না তোমাকে প্রাপ্ত বয়স্ক বলি,
তারপর মেনে নাও তুমি একজন পুরুষ যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি তোমাকে
বলছি তুমি নর্দমা।
যখন তুমি একটি গুলির শব্দ শুনবে পড়ে থাকবে মৃতের মতো
যখন তুমি শুনবে “ শ্বাস চলছে” উঠে দাঁড়াবে,
কুকুরদের শ্রেষ্ঠ ভাষা হ্যা” এবং নিরাপত্তা দেয়া।
সাদা-কালো কুকুরেরও শ্রেষ্ঠ ভাষা হ্যা” এবং সে পিছে পিছে যায় সব জায়গায়
এবং তুমিও সেখানেই যাবে যেখানে আমি বলবো।
আমি কেন করিএটা সহজআমি এখনো স্কুল পার করছি
আমাকে অর্থ দাও আধুনিকতার জন্য এবং এরপর যা আসবে সব কিছুর জন্য
যখন তুমি বুঝে উঠবে তোমার দেহ আছে তুমি বুঝে উঠবে তা আর বেশিদিন তোমার নয়।
যখন তুমি বুঝে উঠবে এবং পড়বে কঠিনঅথবা না বুঝতে পারা কঠিন অথবা অবোধ্য কবিতা
তুমি আমার কাছে আসবে ।
যখন তুমি বইটি রেখে আমার কাছে আসবে তুমি শুনবে শব্দগুলো বই থেকে বেড়িয়ে পড়েছে
যখন তুমি আসবে

তুমি শুনবে



জয়ন্ত মহাপাত্র

জয়ন্ত মহাপাত্র (জন্ম: ২২শে অক্টোবর১৯২৮) ওড়িশার কটকে জয়ন্ত মহাপাত্রের জন্ম হয় এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। পদার্থবিদ্যায় মাস্টার ডিগ্রী লাভ করে তিনি ওড়িশার নানান সরকারী কলেজে অধ্যাপনার কাজ করেন। ৩৮ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করে আজ অবধি তিনি ১৮ টি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন যাদের মধ্যে "Close the Sky", Ten by Ten" ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর একমাত্র গদ্যের বই "The Green Gardener" ছিল ছোটগল্পের সংকলন। ইংরাজিতে লেখালেখি তাঁকে ভারতীয়-ইংরাজি কবিতার জগতে অনন্য করে তুলেছে। জয়ন্ত মহাপাত্র ভারতের একমাত্র সাহিত্যিক যিনি ইংরাজিতে লিখে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পান। "Relations" নামক তাঁর দীর্ঘ কবিতাটির জন্য তাঁকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। ইতিমধ্যেই তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়েছে।
অলংকরণ: নবী হোসেন
ভালো স্ত্রী
ভাষান্তর: সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়

আমার বিছানায় শুয়ে থাকে
সারাটা দীর্ঘ বিকেল জুড়ে;
এখনো স্বপ্ন দেখেঅক্লান্ত
তীব্র অন্ত্যেষ্টি চিতাদের গর্জনে।


অলংকরণ: নবী হোসেন
তার হাত
ভাষান্তর: সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়

আঁধার দিয়ে তৈরী বাচ্চা মেয়েটির হাত
আমি কিভাবে ধরি?

স্ট্রীটল্যাম্পগুলো ঝুলে আছে কাটা মাথার মত
রক্ত খুলে দেয় আমাদের মাঝের ভয়াবহ দরজাটা

দেশের ছড়ানো মুখ যন্ত্রণায় আবদ্ধ
যখন তার দেহ পেরেকের বিছানায় মোচড় খায়

এই বাচ্ছা মেয়েটির তার ধর্ষিতা শরীর আছে
আমার জন্য তার কাছে পৌঁছাতে

আমার দোষের ভার অসমর্থ
তাকে আলিঙ্গন করার বাধা পেরোতে

অলংকরণ: নবী হোসেন
প্রধান মন্দির সড়ক
ভাষান্তর: সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়

খোঁড়া মানুষ আর সঙ্গমরত খচ্চরের দিকে
হাসতে থাকেমাটির মত বাদামীশিশুরা
তাদের নিয়ে কেউ ভাবেনা

বিরামহীন ছন্দের দিকে নির্দেশ করে মন্দিরটি

চাঁছা মাথা-রঙের ধুলোময় রাস্তার ওপর
কিছু জিনিস সবসময় নড়ছে
অথচ কোনোকিছুই দৃষ্টির বাইরে যাচ্ছেনা

উত্তাপে নিদ্রালু হয়ে আসা ক্ষতেরা

আর ঐ যে ওখানে আকাশ,
পবিত্র কর্তৃপক্ষের দ্বারা অধিকৃত
শক্ত করে নীরবতার যষ্ঠি ধরে থাকে

অলংকরণ: নবী হোসেন
গ্রীষ্ম
ভাষান্তর: সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়

তবুও নয়।
আমগাছের তলায়
পরিত্যক্ত আগুনের শীতল ছাই।

কার ভবিষ্যত দরকার?

একটি দশ বছরের বালিকা
তার মায়ের চুল আঁচড়ে দেয়,
যেখানে প্রতিযোগিতার কাকেরা
শান্তিতে বাসা বেঁধেছে।

সেই ঘর কোনোদিনই
তার হবেনা

তার মনের এককোণে
একটা জীবিত সবুজ আম
মাটিতে ঝরে পড়ে আলতোভাবে। 

অলংকরণ: নবী হোসেন
একটি গ্রীষ্ম কবিতা
ভাষান্তর: সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়

সোঁ সোঁ করা বিষণ্ণ বাতাসের ওপর
পুরোহিতেরা উচ্চতম কণ্ঠে স্তব করে;
খুলে যায় ভারতবর্ষের মুখ।

কুমীরেরা ঢোকে গভীরতর জলে।

উত্তপ্ত গোবরগাদার সকাল
রোদের তলায় ধোঁয়া

হোশাং মার্চেন্ট

হোশাং মার্চেন্ট (জন্ম:১৯৪৭) হোশাং মার্চেন্ট ভারতীয়-ইংরাজি কাব্যজগতের এক উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মুম্বইয়ের এক পার্সি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। মুম্বইলস এঞ্জেলস ইত্যাদি জায়গায় নিজের শিক্ষালাভ শেষ করে তিনি হেইডেলবার্গজেরুজালেম এবং ইরানে থাকা এবং শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। আশির দশকের মাঝ থেকে তিনি হায়দ্রাবাদে বসবাস শুরু করেন যেখানে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ হায়দ্রাবাদে ইংরাজীর অধ্যাপকের কাজ করেন। এখনো অবধি তাঁর ২০টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে যাদের মধ্যে "Flower to Flame", "Stone to Fruit", "Homage to Jibanananda Das" ইত্যাদি তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য বই। নিজেকে "সমকামী" বলে প্রকাশ্যে দাবী করা এই কবি ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সমকামিতার বই,  "Yaarana: Gay Writings from India" প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
অলংকরণ: নবী হোসেন

সিন্দ
ভাষান্তর: সুমন্ত চ্যাটার্জী

"আমি পাপ করেছি"  : নেপিয়ার

এক সিন্ধি বালকের মধ্যেই প্রেম খুঁজে পেয়েছিলাম প্রথমবার
সে প্রেম অনুভব করলেও বালক হওয়াতে আমাকে পিছন থেকে নিয়েছিল
যেভাবে পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের খাড়াই সিঁড়িতে সেইন্ট জন'কে নিয়েছিল একরাতে

শীতল রাত ছিল
ট্রেনটা ছিন্নভিন্ন করে চলেছিল হিন্দুস্তানের হৃদয়
আর একটা স্টেশনে এসে থামলে
ফাঁস হয়ে গেছিল ভোর আর আমাদের প্রেম

যখন ইন্দুসেরা সমুদ্রকে দেখেছিল
তারা ভুলে গেছিল সে তুষারের শীতল কন্যা
সে উষ্ণ আর অগভীর হয়ে উঠেছিলবালিতে হারিয়ে
এই বালির দেশকে
তারা সিন্দ বলে ডেকেছিল

আর আরবেরা এসেছিল
আর সেখানে হিন্দুদের খুঁজে পেয়ে
তারা এই চোরাবালির দেশকে বলেছিলহিন্দুস্তান

বালকেরা শীঘ্রই তুর্কে পরিণত হয়েছিল
চোখেরা আয়না হয়ে উঠেছিল অন্য দেবতাদের প্রতিফলিত আলোর জন্য
উষ্ণ প্রেমকে চটকানো হয়েছিল গুরু আর শিষ্যের মাঝে সুরার মত

মানুষেরা তাদের নাম ভুলে যায়
তারা মনে রাখে সেইসব নাম
যা শীঘ্রই তারা ভুলে যাবে: তোমরা নাম জানতে চাও কেন?
তারা শুধু জেনেছিল আর মনে রেখেছিল ভালোবাসা

একজন রাখাল বাঁশি বাজিয়েছিল
একজন রাজা তাকে অনুসরণ করেছিল জঙ্গল অবধি
একজন মুঘল সন্তান কাবুল জয় করার পথে
পারসিক ভাষায় লিখে নিয়েছিল হিন্দু দেব-দেবীদের

আর সময় বন্য হলে আফিম সাহায্য করেছিল উত্তরাধিকারীদের যন্ত্রণাহীন মরতে
ভাইয়েরা শত্রু হয়ে উঠলে মৃত্যুই হয়ে যায় একমাত্র বন্ধু
কিন্তু মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া...আফিম ব্যতীত?
কিংবা জীবনের মুখোমুখি...কবিতা ব্যতীত?

নদীটা লাল হয়ে বয়ে গেছিল সেদিন
মহিলারা রেকাবে তাদের স্তন বয়ে এনেছিল ধর্ষণকারীদের জন্য
পুরুষেরা হাতে করে তাদের মাথা নিয়ে এসেছিল বিজয়ীদের জন্য

আর কবিতারা যারা এইসব ধ্বংসের উল্লেখ করে
এখন রেলস্টেশনে ধুলো জমিয়ে চলেছে
কিন্তু সজলের দুধরুমির মদিরা
মৃদুমন্দ বাতাসের নি:শ্বাস বয়েছিল "না"-এর ভেতর দিয়ে
বলেছিল: সে!

যতটুকু ভাবতে পারি যার হাতে মারা গেছিলাম
চিন্তারা থেমে গেছিল সেই রাত-ট্রেনের মত

আর আমার হৃদস্পন্দন হয়ে উঠেছিল একটি প্রকাশ্য ঘটনা। 



মরগান পার্কার
অলংকরণ: নবী হোসেন

হটেনটট ভেনাস
ভাষান্তরঃ আকাশ আহমেদ

বড় ইচ্ছে হয়-
আমার যোনীটা অম্লান থেকে অযথাই পাচ্ছে স্বীকৃতি
আমি কি তোমাদের ধন্যবাদ জানাবো?
ব্যবসায়ী চোখ ছড়িয়ে পড়েছে এবং আমাকে কেউ আর
ভালবাসে নাযেভাবে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম
এক প্রাণচঞ্চলে শীত: আঘাত কিংবা সহানুভূতির
মদ্যপ সমন্বয়।

সূর্য উঠতেই আমার অপহরণকারীদের কেউ কেউ পান করে
আফ্রিকান গোলাপ পানীয়তারা আমাকে ব্যবহার করেছে
রাজকীয় ধৈর্যশীল খাবারের মতন যেহেতু আমি আসলে কিছুই না
মানুষও নাযতটুকু মনে পড়ে আমাকে ভোগ করে এক পুরুষ বলেছিলো
আমি কখনোই নারী হতে পারবো নাএটিই আমার নিয়তি।

এখন আমি বুঝতে পারি আমাকে নিয়ে কেউ দুশ্চিন্তা করছে না
কেননা আমি যথেষ্ট উপার্জন করছিএখানে এসেছি তোমাকে দেখাতে
কে তুমিতোমার মোটা মাথা বুকে নিয়ে জানিয়ে দিই তুমিই নিষ্কলঙ্ক
মা আমেরিকাছেড়ে দাও তোমার সন্তানদের-

তোমার সবকিছুই সুন্দর।

ডেভিড ব্রুকস

(১২ জানুয়ারি১৯৫৩- বর্তমান)

অস্ট্রেলিয়ান কবিঔপন্যাসিকপ্রাবন্ধিক। কবিতাগ্রন্থসমূহ : The Cold Front (1983); Walking to Point Clear (2005); Urban Elegies (2007); The Balcony (2008); Open House (2015)
অলংকরণ: নবী হোসেন

মাঠ
অনুবাদঃ রনক জামান

তোমাকে চলে যেতে

দেখলামচোখের কিনার হতেবাইরে,

বেরিয়ে গেলে, আর আমিও

পেছনে পেছনেযতটা সম্ভব দ্রুত,

অথচ ততক্ষণে, তুমি হয়ে গেছ :

এক বিস্তৃত মাঠ,

একটি আপাত সন্ধ্যা,

এক অচেনা পাখির কান্না।
অলংকরণ: নবী হোসেন
ব্যালকনি-৫
অনুবাদঃ রনক জামান

রাত ১০ টা,
গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এক সন্ধ্যায়,
আবার আমরা দুজন
বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুমু খেতে থাকি।
রাস্তায় মানুষ ছিলদেখে শিস বাজালো,
আরো কিছু লোকজন জড়ো হয় পথের ধারে।
কেউ বিদ্রুপ করছিল হেসে,
কেউ উল্লাসে দিশেহারা হলো। কেউ কেউ সাধুবাদ জানাচ্ছিল।
কেউ ট্যাক্সিতে আসে,
একটা বাস তার
সবকটা জানালাই খুলে দিয়ে
মাঝরাস্তায়বেমালুম থমকে দাঁড়ায়।
কয়েক মুহূর্ত পর
বিদ্রুপসাধুবাদহৈ চৈ
চুপ করে যায়। নীরবে দাঁড়িয়ে সব আমাদের দেখতে থাকে।
চুমু শেষে আমরা বাইরে তাকাই
দেখিকেউ নেই
ফিরে গেছে সবশুধু গাছের পাতাগুলো
পড়ে আছে পথের উপর
আর কোয়েল ও পরিযায়ী পাখিরা
উড়ে চলে গেছে তারা অনেক আগেই;
সংবিৎ ফিরে দেখিশীতকাল চারিদিকেশীত এসে গেছে।

ম্যাট রাসমিউসেন

আমেরিকান তরুণ কবিবার্ডস এলএলসি পাবলিশিং হাউজের প্রতিষ্ঠাতা। এমারসন কলেজ ও গুস্তাভান এডলফাস কলেজ থেকে ডিগ্রি লাভ করেন এবং বর্তমানে সেখানেই শিক্ষকতা করছেন। 'Black Aperture' তার ভাইয়ের আত্মহত্যার বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা তাঁর প্রথম কবিতাগ্রন্থটি খ্যাতি এনে দেয় তাঁকে। বইটি ২০১৩ তে ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড ফাইনালিস্ট হিসেবে মনোনীত হয় ও ২০১৪ সালে মিনেসোটা এওয়ার্ড লাভ করে। এছাড়া ২০১২ সালে সেরা তরুণ কবি হিসেবে ম্যাট রাসমিউসেন লাভ করেন ওয়াল্ট হুইটম্যান এওয়ার্ড।
অলংকরণ: নবী হোসেন

চাঁদ
অনুবাদঃ রনক জামান

লিখিত-শব্দবিহীন এক প্রামাণ্য নথি।
ঐ দিগন্তের টেবিলের ধারে পিছলে গেলে

আমাদের রেখে যায়
সংজ্ঞায়নে ব্যর্থ কিছু মূর্খের মতো।

দৃশ্য মুছে গিয়ে দুটো মেঘখণ্ড
সংঘর্ষের শব্দ শোনায়,

আরপরস্পর টুকরো টুকরো করে
নিজেরাই ছড়িয়ে পড়ে

হয়ত সেসবদৃশ্যত অন্য গ্রামের অধীন,
বাহয়ত নিজেরই অধীনেঅদৃশ্যত

ফুল ফুটবার মতো যুদ্ধ দামামা বেজে
ওঠেঅনুভবেবোধে

আর মেঘগুলো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
গোধূলীর রক্তাক্ত রণক্ষেত্র পেরিয়েআকাশে

ঝুলে আছে জাতীয় পতাকার ন্যায় : নিরেট,
প্রেরণাদায়ক ঘননীল...
অলংকরণ: নবী হোসেন
এবং ঈশ্বর বললেন
অনুবাদঃ রনক জামান

আকাশকে জলে রূপান্তর করো।
সমস্ত প্রাণিকূল একত্র হয়ে ভাবলোতবে তো ডুবে যাবে সব।

ওরা কান্না জুড়ে দিলআর মহাসমুদ্র গড়ে উঠল তাতেসে জলে।
কিন্তু আকাশকে তো সমুদ্র করোনিবলেন ঈশ্বর।

...এক আকাশ জল তো করেছি
সেখানে পাখিদের ওড়ার ভঙ্গিতেমাছেরা সাঁতার কাটে।

নেহাতই দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়জানায় এক পশু।
আর ঈশ্বরযিনি আটকে গেছেন আকাশেতার বেরুবার পথ দরকার।

নিচে তাকালেই তাঁর নিজস্ব নীলাভ বিম্ব। তিনি বিব্রত হন।
পর্বতের দিকে তাকালেদৃশ্যত সেওভূমি সমান্তরাল।

এবং ঈশ্বর বললেনএবার কেঁদে কিছু শুকনো মাঠ তৈরি করো।
প্রাণিকূল একত্র হলো ফের কান্না জুড়ে দিলএতটাই যে আগে কাঁদেনি।

ঈশ্বর জানতেনসামান্য বেশিই চাওয়া হয়ে গেছে।
রাগে-ক্ষোভে তিনি নিজেকে ছুঁড়ে দেন সূর্যের পেটে।

পুড়ে ছাইউড়ে উড়ে আকাশ হতে ঝরেঢেকে দিল পর্বতমালা।

আর প্রাণিকূল একত্র হলোবরফ-পানি খেলাচ্ছলে নাম দিলো "বরফ"।



রবিন কোস্তা লুইস


রবিন কোস্তা লুইস জাতিগতভাবে একজন আমেরিকান কবি। তিনি পরিচিতি পান তার বিখ্যাত বই "Voyoga of the sable venus" এর জন্য। যা ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। এবং এই বইটির জন্য তিনি "ন্যাশনাল বুক এ্যাওয়ার্ড" লাভ করেন। লুইস জন্মগ্রহন করেন ক্যালফর্নিয়ার কোম্পটনে। তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থাকে 'Master's of fine arts' ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তিতে হাভার্ড ডিভাইনিটি স্কুল থেকে 'সংস্কৃত ও তুলনামুলক ধর্মিয় সাহিত্যএর ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বিখ্যাত কবিতাগুলোর মাঝে অন্যতম হলো- Art and Craft, Mother Church No, The Mothers, Summer ইত্যাদি।

অলংকরণ: নবী হোসেন
আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট
সৌরভ মাহমুদ

প্রথমত আমার চিন্তা করা উচিৎ সমস্ত সঠিক উত্তর সম্পর্কে,
অতঃপর এর মাঝে কিছু চিহ্নিত করতে হবে ভুল।
যদি একটি কুইজে দশটি সমস্যা থাকেআমি বাতিল করে দেবো
যে কোনো একটি। যখন এটা বিশ হয়ে যাবেকামড়ে ধরবো নিজের জিহ্বা।

অতএব দু’টো প্রশ্ন ফাঁকা ছেড়ে দেওয়া হবে—
দ্বিতীয়টি উত্তম ছিলোকিন্তু প্রথমটি ছিলো সর্বোত্তম।
তাদের উচিৎ তোমার পোঁদে লাথি মারাডাকো তোমার বড় বোনকে
ধীরেতারাপর তাকাও তোমার টেবিলেযেনো তোমার তাকানোই উচিৎ

একটি সাঁপ বেরিয়ে আসলো ভিন্ন গর্ত থেকে। জেনে
চিন্তা করবো দ্রুত ব্যাখ্যা করার কথা সমাজের কাছে
অধিক সততার সাথেএ-কা-এ-কা।
শিল্প ও ব্যাবসায়বিদ্যার সময়যখন সম্মতি দেবেন মিস লারসন

কাঁচিটা বের করেআমার কেটে ফেলা উচিৎ এক জোড়া ছিঁচকে চোর,
অতঃপর কেটে ফেলতে হবে আমার চুলও

আমাকে আরও দীর্ঘ হওয়া থেকে থামানোর জন্যে।

রুথ স্টোন


অলংকরণ: নবী হোসেন
শব্দমালা
অনুবাদঃ মীর নিশাত তাসনিম তানিয়া

ওয়ালেস স্টিভস্ বলেন-
"একজন কবি পৃথিবীকে ঠিক সেভাবেই দেখে-
যেভাবে একজন পুরুষ দেখে একজন নারীকে।"

আমি কখনোই বুঝে উঠতে পারি না-
একজন পুরুষ একজন নারীর গভীরে মূলত কী খোঁজে?

আদৌতে সেটা-একটা মোহর সেঁটে দেয়া জগৎ।

বুজকুড়ির অবতলপৃষ্ঠ, যা সবকিছুকে টেনে নেয় অসীমের দিকে।

কালো শীর্ষযুক্ত গাছগুলোকে দেখে মনে হয় বৃদ্ধের শ্মশ্রু-
সারি সারি ঝিমুতে থাকা কমলালেবু গাছ দুলছে, যেন-সজ্জিত ধূসর দাড়ি,
তাদের বয়স্ক দাড়িগুলো কেটে ছিন্ন করছে-যাযাবর স্ত্রী মথ।

সবকটা কমলালেবু গাছ- গেঁথে যায় এই প্রতিমায়।

"একজন কবি পৃথিবীকে ঠিক সেভাবেই দেখে-

যেভাবে একজন পুরুষ দেখে একজন নারীকে।"

SHARE THIS

Author: