বইমেলা ২০১৯ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বইমেলা ২০১৯ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
জলফড়িং বইমেলা সংখ্যা ২০১৯ ।। কবিতা পর্ব

জলফড়িং বইমেলা সংখ্যা ২০১৯ ।। কবিতা পর্ব

অলংকরণ: দেবাশীষ মজুমদার

আল ইমরান সিদ্দিকী 
মেলিফ্লোয়াস

‘সজীব’ বলে ডাকতে চেয়েছি নিজেকে, আমারই তো ডাক নাম! ভাওয়াল মসজিদে, অলিগলি ঘুরে স্থাপনার সৌন্দর্য দেখছে কবুতরগুলি। মৃদু শব্দে বাঁশঝাড় আগের মতোই ভরা। সেই শ্রবণমূল তো ভালো, যে প্রতিটি সৌম্য ধ্বনির একটি রূপ অন্তরে ফুটিয়ে তোলে।-

অনুভূতি অসামান্য, অর্বাচীন রূপ থেকে পাওয়া!-এই মনে ফোটে, বিরাজ করে এ কণ্ঠ থেকে বিকীর্ণ ধ্বনিগুচ্ছের ভিতর, অস্ফুট ধ্বনি আর নীরবতা-রূপে।


আশরাফ জুয়েল
পবিত্র পতঙ্গ

পবিত্র পতঙ্গ
কেন স্তব্ধ হল সব আলো?
অনুত্তরিত ঈশ্বর জানে এসব ভাজক ও বিভাজিতের গল্প?

উহ্য মুখোশে কোন এক বাজিকর
 
নাগরদোলায় আয়ু -
 
ফলক পেরুনো দৃশ্যে থমকে আছে যাবতীয় সংস্করণ
 

নিবন্ধনের খেয়ালে ঝরে পড়ে ফুলের নরম স্কুল
যার দেয়ালে উৎকীর্ণ গৃহ হারা উটপাখি।
 
তবুও
 
গ্রীবা তুললেই ভেঙে পড়বে সকল নীরবতা।
 


ইয়ার ইগনিয়াস 
পৌনঃপুনিক 

মেঘে ছেয়ে গেলে চুল্লির চাতাল
মা, স্বীয় চুলের রঙে রাঙিয়ে দেন রান্নার রুম
 
মৃণ্ময় ম্যাকাপে নতুন হয়ে ওঠে উনুন

বধূর বহ্নিজ্বালে, বারম্বার
খার অনুভূতিতে ছড়িয়ে পড়ে বিষণ্নতা

রি পি টে শ ন
          ন শ টে পি রি 

কেবল দৃশ্যের পৌনঃপুনিকতা
যেন অপ্রকট আসরে
 
টেক্কা দিচ্ছে পরস্পর
 

              

        

হী
              


ইব্রাহীম আমীন রিমু
এনিগমা: লস্ট ওয়ান

আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
আমি নিখোঁজ কোথাও ভুল চরাচর,
আগুন বুকে লিখে ফেলছি দ্রোহের স্লোগান।
ছিন্নভিন্ন হৃদয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,
দ্বিধা নিয়ে একলা ভাঙ্গছি স্মৃতির পাথর।

এই সমস্ত স্মৃতিকাতর সন্ধ্যা যাপন
ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ভেঙ্গে পড়ছি,
অবশ চোখে তাকিয়ে আছি আমার দিকে,
অদ্ভুত এক বিষণ্ণতায় নিজের চোখে চোখ পড়তেই,
দেখতে পাচ্ছি বিচূর্ণ এক মহান প্রেমিক
ক্রমশ কেমন তলিয়ে যাচ্ছে, তলিয়ে যাচ্ছে।

ক্রমশ কেমন মৃত্যুমুখী,
হারিয়ে যাচ্ছে আ
স্ত একটা প্রেমিক হৃদয়।।





উদয়ন রাজিব 
আ জার্নি বাই ড্রিম 

আমি আর তুমি উলঙ্গ পায়ে হাঁটবো বরিশালে— কোনো এক গ্রামে— সবুজ বিস্তীর্ণ মাঠে— ঘাসে।
যশোরের কুয়াশা দেখে ফেলবে তোমাকে, আমাদের চিনে ফেলবে চট্টগ্রামের সমুদ্র আর পাহাড়। আমরা হাঁটবো হাত ধরে—সৈকতে—ভোরে— ঘোরে। 

আমাদের নিশ্বাস ছুঁই ছুঁই করবে হৃদয়পুরের নরম হাওয়া। ত্রিশালের সবুজ গাছ ছায়া দেবে প্রাণে,
চোখের শহরে বৃষ্টি শুরু হওয়া মাত্রই, আমি বলবো শান্ত হও। এইতো পৌছে গেছি। তুমি ঠিক তখনই ঘুমিয়ে পড়বে— দুটি হাত দু'দিক থেকে এসে মিলিত হবে— শাহবাগ— প্রজন্ম চত্বরে।
গল্পে—উল্লাসে— গানে। আমি রাঙামাটির বিখ্যাত গানটি গাইতে গাইতে তোমাকে নিয়ে যাবো— স্বপ্নপুরে। তুমি জেগে উঠবে কুষ্টিয়ায়। সারা দেশ ঘুরে তুমি ফের ক্লান্ত হলে চলে যাবো কোনো নতুন শহর। অতঃপর,
তুলে দেবো জীবনের শেষ দু'পলক। ঠিকানাহীন দুটি পাখির ডানায়। পাখিদের ইচ্ছে হবে আমাদের প্রেম—আবার অন্য দেশে— যেতে দেবো— যাক— যেদিকে যায়।


কুশল ইসতিয়াক 
ম্যানিয়া

কনশাসনেসের চুড়ায় বসে আমি একটা স্বপ্ন আঁকছি
 
স্বপ্নটার কোনো নাম নেই, রঙ মেঘ গোলাপি
ধরা গেল, স্বপ্নটা অনেক সুইসাইডাল
যাকে আঁকতে হলে পাহাড়ে চড়তে হয়
 
লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা
নির্জন পাহাড়

একা— আমি মানুষ পাহাড়ে চড়েছি
 
তারপর দুলছি খুব
দুলে দুলে
 
সুর করে—যেমন হারিকেন আলোয়
 
পড়তাম পড়া
 

মা থাকতো অনেক দূরে...


কবির কল্লোল 
সন্দেহ হবে না কেনো বলুন

সন্দেহ হয়, যখন
আমৃত্যু অনশনকারীরা ঘনঘন টয়লেটে ঢোকে

কারণ
 
আমি একজন সৎ পুলিশ অফিসারকে চিনি
যিনি ন্যায্যমূল্যে মাদক বিক্রি করেন

জননেতারা মঞ্চে দাঁড়ান, আর নিজেদের
উদারতা বিষয়ক বিবৃতির পর প্রশ্ন রাখেন,
'কি, মিথ্যা বললাম?'

ফলে সন্দেহ হয়, কারণ
 
মানুষ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে বিস্তর ভাবে, যদিও
বন্যপ্রাণীরা মানুষ সংরক্ষণের বিষয়ে একচুলও ভাবে না
তবু কতিপয় বন্যপ্রাণী বিলুপ্তপ্রায়, কিন্তু মানুষ বাড়ছে
বেড়েই যাচ্ছে

ইশকুলে, পাড়ায়, ঘরে
আমরা শিশুদের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিই
অথচ শিশুরাই সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ

অন্যথায় মানুষ সে-ই
যার শিঙ নেই, বিষদাঁত নেই, ঠোকর দেয়ার মতো ঠোঁট নেই
এবং মানবতা নেই

যখন
দাম্পত্যের মাঝখানে কোলবালিশ ঢুকে গেছে
জেনেও পার্টিতে জায়াকে চুম্বন করছে পতি,
 
হাড়ের ক্যালসিয়াম চুষতে চুষতে কেউ লিখছে
 
'জীবহত্যা মহাপাপ',
মধ্যবাড্ডায় মা ও তার প্রেমিকের হাতে ছেলে সন্তান খুন
তখন সন্দেহ হবে না কেনো বলুন?

সন্দেহ হয়
প্রেমিকার হাসি দেখলেও সন্দেহ হয়- টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন নয় তো!

বিশ্বাস তো মূলত সেই আকাশ, যা
আঙুলের ফাঁকেফাঁকে এবং এমনকি
প্রায়ই পায়ের তলায়ও ঢুকে পড়ে
কিন্তু খুঁজে না পেয়ে আমরা মাথার উপরে তাকাই


কাউসার সাকী 
পর্বতারোহণ 

বুকে নদী নিয়ে আমরা পাহাড়ে যাই।
খাড়া বেয়ে ওঠতে সে জলাঙ্গী শুকিয়ে
পাথর। আমাদের তৃষ্ণা হয়, বাড়ে পায়ের
নিচে আরো বিশালতা রাখার ইচ্ছা।
এভাবে আমরা সমতলের লোকেরা এক সময়
চূড়োয় ওঠি আর মেঘের সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে
পাহাড়ের পাদদেশে চোখ রাখি; ভাবি,
ওইখানে অত নিচে মানুষ কী করে থাকে!


কালপুরুষ
বাবা 

মরতে যাচ্ছে এমন লোকের সঙ্গে মিথ্যে বলা যায় না

আমি বললাম।

আমি বললাম আপনি অনেক বছর আরো বেঁচে থাকবেন

তিনি উত্তর দেবেন এমন আশঙ্কা ছিল না
তবু
তিনি যখন মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলেন— ‘কত বছর?’
তখন আমি বুঝতে পারলাম না তিনি কাকে বিদ্রুপ করলেন
আমাকে
নাকি মৃত্যুকে?

আমি লাল রঙের কিছু আপেল এনেছিলাম
নার্সকে বললাম কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করা যাবে কিনা এখন

আর আমি কথা বলছিলাম খুব ধীরে
যেন হাসপাতালের গোপন নিয়ম এসব

বিছানার দেয়ালে বড় কোরে লেখা—
এখানে ধূমপান করবেন না

বারান্দায় দেখি একটি সাদা কফিন বেরিয়ে যাচ্ছে

সিগারেট খেয়ে আবার তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম
তিনি আমার হাত ধরে বললেন,
যে তোমাকে ভালোবাসে তাঁকে কখনো মিথ্যে বোলো না

বাবা, আমি মিথ্যে বলেছিলাম
আপনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না
আপনি মরে গেলে আর আসতে হবে না আমাকে
হাসপাতাল খুব বিষণ্ণ, আমার ক্লান্ত লাগে


চৌধুরী ফাহাদ 
বিরহপোড়া 

বলতে পারো বিরহপোড়া-
মানুষ কেন জন্মের মত সুন্দর হয়?
 
কেন উজ্জ্বল হয় শেষ নক্ষত্রের মত?

তোমাকে দেখেই নিপুণ জেনেছি ঈশ্বর!
 
তোমাকে দেখেই এঁকেছি অপার্থিব স্বর!
 

বলতে পারো বিরহপোড়া-
সুন্দরের সুন্দর দেখলে কেন বিষণ্ণ লাগে?
কেন ঘোর তন্দ্রার ভেতরেও একা লাগে?

তোমাকে দেখেই জেনেছি দীর্ঘশ্বাসের অন্য নাম মুগ্ধতা!
 
তোমাকে দেখেই মেনেছি মুগ্ধতার আরেক নাম মানুষ!

বলতে পারো বিরহপোড়া-
তোমাকে ভাবলেই কেন একা লাগে! বিষণ্ণতা জাগে?
তবে কি তুমিই আমার স্নায়ুর রঙ- অদ্বিতীয় বিষাদ!


জব্বার  আল নাঈম
যে যুবক বখাটে

সংসারের অকর্মা আমি প্রতিদিন বাবার কাছে হাত পাতি
মায়ের জমানো টাকায় পাড়া-মহল্লায় বন্ধু বানাই

মেয়েদের উত্যক্ত করি
মদের আসরে
 
জুয়ার আসরে
 
সোনাগাছি রানীর অদম্যনৃত্য দেখি

এরপর চাঁদার ফান্ড ভারি করি
ভদ্র মানুষদের লজ্জায় বিব্রত করে
 
কিংবা পাছায় লাত্থি মেরে
মেয়েছেলে অপহরণ করি মুক্তিপণ দাবিতে

রাগে-ক্ষোভে
বাবা প্রতিদিন আমাকে খুন করতে চায়
ভাইয়েরা গু-া ভাড়া করে
পুলিশ অস্ত্র তাক করে তাড়া দেয়
আর মা সহিসালামতে আমার মৃত্যু কামনা করে
আল্লাহর দরবারে মগ্নধ্যানে বসে

একদিন মাকে ডেকে বলি,
 
আদি পিতা-মাতা আদম-হাওয়া
 
মরে গেছেন আদিকালেই
পরম্পরায় রয়ে গেছো তোমরা
ইনসান প্রতারিত করতে অনন্তকাল
 
বেঁচে থাকবে শয়তান
আমিই সেই শয়তান




জয়ন্ত জিল্লু
মাবুদ 

মাবুদ, পকেটে আলো ছড়িয়া যাইতেছে—কেন জানি মনে হইতাছে মাতৃগর্ভের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আমি একটা হামজা খাঁ লেইন হইয়া দাঁড়ায়ে আছি। উপরে ডানার চিৎকার—আকাশ, আকাশ! মেঘ ধরতে বিমান টেনেটুনে শব্দ করে চলছে। পুশকুনির আড়ালে নারকেলগাছটির দুয়েকটা প্রসবযন্ত্রণা জানে মৈরুতপাখি। আমি পাখিটারে খুঁজতাছি। চিবুকে আগুনচুমুর মতো, কেবলামুখি কালো চুল সরিয়ে শব্দ করে উৎপন্ন হচ্ছে আদর। আমি আদরের দিকে তোমারে খুঁজতাছি—মাবুদ। কোথাও শান্তি নাই, এইটা মানতে পারি না বলে মুরিদ গং—এইদিকে—সন্ন্যাস জীবনে পরিব্রাজক হইতাছি। সুর পালটে দিলে শরীর মানুষ হয় না! মনে মনে নিজের শরীর পালটে দিতেছি। টেংরা-আলো মৈনাক তা তা থেকে নাচতে থাকা ওহী এইদিকে জ্বলতে থাকে বুক পকেটে। মাত্র সামান্য লেইন, রিক্সায় প্রেমিক প্রেমিকা শরীরের দুটো স্তনের মতো জাগিয়া উঠিতেছে। মাবুদ—মানুষের স্তন এমন সুন্দর বানাইলা কেন?


জহির রিপন
নীলফামারী

মনে মনে কত যে ভেবেছি-
একদিন মাউথ অর্গান বাজাতে বাজাতে
নীলসাগরের বুকে চড়ে, চলে যাব ময়নামতির চর।
যেতে যেতে দেখা যাবে সৈয়দপুর স্টেশনে
 
কয়েকটা পরিত্যক্ত বগি, অচল ইঞ্জিন;
 
আগাছা জন্মেছে কিছু কিংবা শ্যাওলা, চাকায়।
 
যদিও গ্রাইন্ডিং মেশিনের ঘূর্ণন তখনো থেমে নাই
কারখানা মানে মেরামত, মনের তেমন কারখানা নাই।

মনে মনে কত যে ভেবেছি-
একদিন মাউথ অর্গান বাজাতে বাজাতে
 
নীলসাগরের বুকে চড়ে, চলে যাব ময়নামতির চর।
 
শুনেছি সেখানে করতোয়ার বুকের প'রে বন ভাসে
 
বনের ভেতরে ঘর বেধে আমিও যেতাম ভেসে;
হয় নাই ভাসা--আমার কেবলি অন্ধ ছোটাছুটি।
 
একদিন মাউথ অর্গান বাজাতে বাজাতে
 
নীলসাগরের বুকে চড়ে, নীলফামারী আমার হলো না যাওয়া।


জাহিদ জগৎ
চক্রভার

গোছানো ঘরে একটা জীবন কতটা অগোছালো থাকে তা যদি জানতো হলুদ পাখিটা, গাছের আড়ালে ঝড়ার নেশায় ফুটে উঠা ফুল কারও মন জুগিয়ে চলে না। যার ঝড়ে যাবার আগে তোমার আড়ালে চোখ থেকে চুপচাপ বেড়ে ওঠে নুনের শিশু। তুমি তাকে বাড়তে দিও না। হৃদয় বেড়ে গেলে মানুষ ছোট হয়ে যায়, এমন পৃথিবীতে সব'চে ছোট গাছটার বীজের ভেতর জেগে থাকা অতন্দ্র প্রহরী, একটুখানি প্রেমের নেশায় অতোখানি ছায়া পুষে রাখে। আবার দেখা হলে বলতে পারতাম, ছায়া দেখে কারও কখনো মৃত বলে মনে হয় নি। জীবন দুষ্প্রাপ্য এক অপরাধ, কে না ভেবেছে! শুধু একটাবার, জোয়ার ভাটার মতো তোলপাড় একটা ওপাড় দেখে আসি, কে না দাঁড়িয়েছে খুব গোপনে এক সুমুদ্দুর পাড়ে!


জায়েদ বিন ফরিদ 
টাইপ টু এরর

ধরে নিলাম তুমি নেই। তোমার সাথে আমার কোন মুহূর্ত নেই। আমি একা পথ হেঁটে এসেছি বিমুগ্ধ অঞ্চল। আমার সাথে ছিল কাগজে মুড়ানো দুটো হাওয়ায় মিঠাই। স্কুল পালানোর পথে যাদের সাথে আমার আসর জমানোর কথা। সারিসারি লাল পিঁপড়ের দল যেখানে জনতা। বর্ষা এলো বলে মাটি তখনো শুকনো। বাতাসে উত্তরের গন্ধ। আমায় কেটেছে ঘুড়ির ছেড়া মন।

ধরে নিলাম তুমি নেই। তোমার সাথে আমার কোন সন্ধিক্ষণ নেই। জ্যামিতিক সূত্রে আমার পেরিয়ে যাচ্ছিল দিন। ক্যালকুলাসে ডুবে গিয়েছে সারা বিকেলের স্রোত। আমাকে কেউ ডাকতে আসেনি। মিছেমিছি রাত কিনে নিয়েছে ঘুম। স্বপ্নে নেই ক্রান্তির ছাপ। একটা সূর্যাস্তগামী পথ রোজকার হিসেব মিলিয়ে চলে যাচ্ছিল ঢের। কেবল ধরে নেয়া নেই অমীমাংসিত এঁকে ফেলেছে বৃত্তাকার পৃথিবীর অলীক মানচিত্র। যেখানে তুমি একটা টাইপ টু এরর।


জিললুর রহমান 
প্যাটেলার গান 

সেবার প্যাটেলাটুকু গুড়িগুড়ি হলে
অবসাদে বসে পড়ে হাঁটুর লাটিম
চারিদিকে মানুষের ত্রস্ত চলাফেরা
ভেতরের হাহাকারে এস্রাজের সুর
স্থির, কি নিষ্কম্প তার তারের ব্যঞ্জনা
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে

দুমড়ে মুচড়ে জগদ্দল প্যাটেলার হাঁটু
সমস্ত শরীর স্থাণু হঠাৎ অথর্ব
তীক্ষ্ণ টোপ মহাজাগতিক শিকারের --
কতো দ্রুতযান শত শব্দদোষ শুধু
আমাদের চারিপাশে ক্রমশ বিস্তারে
ক্রমশ সময় স্রোত টেনে যায় ভূত-
ভবিষ্যতে -- কোষে কোষে তীব্রতর হয়
তীব্র ঘ্রাণ তীব্র তার ব্যগ্র মাদকতা
টোপের হরিণ আজ জনারণ্যে ভিড়ে
মিশে যায় শিকারীর শীতল দৃষ্টিতে
অথবা এমন কোন রক্তস্রোত ধারা
প্রবাহিত শিহরণ ঘর্ম কলেবরে
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে

তোমাদের দাঁড়াবার সে-সময় নেই
তোমাদের সামনে শুধু ঝুলে থাকে
অসমাপ্য কর্তব্যের লোভাতুর ঝুলি
চোখে ঠুলি পড়ে থাকে অগ্রগামিতার
সোপান পেরিয়ে চলে মানব জীবন
কেবল আমিই তবে স্রোতের বিপক্ষে
বেমক্কা পড়েছি বসে পথে-- মাঝপথে
নিষ্পলক দৃষ্টিরেখা দূরে স্থিরমণি
হাঁটুভাঙা চলৎশক্তি নিতান্ত রহিত
কেবল ভেতরে গুঞ্জে মর্ম বিদারক
বিষণ্ণ এস্রাজ – সাজ সাজ রব ওঠে
কোথায় চলেছে ছুটে কর্তব্যের গাড়ি
কোন সে স্টেশনে তার থামার ঠিকানা
বিসমিল্লা খাঁর সানাই হঠাৎ ফুকারে
উথাল পাথাল করে সারা দেহমন
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে

বসন্ত উধাও ধু ধু — ফের শীতকাল
ফিরে আসে জীবনের সবুজ চত্বরে
তবে সে মীড়ের সাথে সারা পৃথিবীতে
স্রোতের বিপক্ষে থাকা অনড় হাঁটুতে
জীবনের নতুন ব্যঞ্জনা জমে ওঠে
অনন্তর ছোটা ছেড়ে দক্ষিণের দ্বারে
হৃৎ-ক্ষরণের গান আলোর উচ্ছ্বাসে
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে।।
 


তাসনুভা অরিন 
শূন্য সকাল  

রূপকথা ও পরী হারিয়ে গেলে কিছুটা দুঃখ পাই
 

রূপকথা ও পরী ছাড়া আমি ঠিক তোমার মতন
 
গান গাই আর গান ভুলে যাই

কেমন এক
  গায়েবী আওয়াজ  
দূর থেকে দূরে যায়
 
কাছ থেকে কাছে আসে

ঘনিষ্ঠ হতে হতে যখন ঘনিষ্ঠ হই
 
বিশ্বাস জন্মে বিশ্বাসে
ঠিক তখন, থেমে যাই।
 

আরও দূরে আর কিছু নাই
আরও কাছে আর কিছু কাছে নাই
 
কিছুটা দূরে বিঘা কতক আপেল বাগান
 
পরশি মহল থেকে নিযুত হিসাবে গুনে থাকা তারার মত উপসর্গহীন
 

পাশ দিয়ে হেঁটে যাও বিস্মৃত ধবল সকাল
 
তোমাকে মনে থাকবেনা ফলত অন্ধকারে


দেবাশীষ মজুমদার
অল্পবিরাম

যে নদীতে ডুব নাই, হাহাকার
তার ধারেই জীবন দাঁড়িয়ে থাকে সটান
অসম্ভব পায়ে লেগে থাকে
মাঝশূন্যে ঝুলন্তবোধ, দু’ভাগে চেরা
দেহভর্তি ক্রীড়া মনভর্তি পীড়া
এই শূন্য বিরামে 
দিতি-অদিতির রেণু বিড়বিড় করে
অসতর্কে গুমরে উঠবে ঝড়
নদী জল পাবে, নদী ডুব পাবে 
সময় সেলাম ঠুকে 
বলবে, চলুন


নকিব মুকশি 
এ সমস্তই প্রকাশমান—আল্লাভাষায়...

কণাসকলের ভ্রমণে জগৎ জেগে রয়, কেন্দ্রসুর সাগরে মিশে খনিপথের সন্ধানে নামে, কেউ কি দেখেছে—চিরকুমারীর আদারস কিভাবে পাঁক খায়, কিভাবে কু-লি পাঁকিয়ে সৌরগান ছড়ায় মস্তানদের মাঝেও?

মানুষ—মূলত এক অনুবাদক—এইসব ধরতে চায় আরশগত নাজিলভাষায়—যা বাতাসের রঙ নিয়ে বেঁচে থাকে মর্মতলে...অণুর কম্পনবোধ ধরতে এইসব পার্থিব ভাষা মূলত বড়ই অপারগ...

বড়শিগিলা মাছেদের মর্মচেরা বয়ান কে পেরেছে উদ্ধার করতে? আর কে পেরেছে বন্দি পাখির স্বগতোক্তি তুলে আনতে মানবভাষায়? কে পেরেছে—কীটের মথনবোধ কিংবা তাদের গানের মর্মবাণী তুলে ধরতে মানুষ-কথায়?

আসলে, পার্থিব ভাষা বড়ই অপারগ অণুটির কাছে শূন্যে-অশূন্যে...

মানুষ—মূলত এক অনুবাদক—এইসব ধরতে চায় আরশগত নাজিলভাষায়—যা বাতাসের রঙ নিয়ে বেঁচে থাকে মর্মতলে...অণুর কম্পনবোধ ধরতে এইসব পার্থিব ভাষা মূলত বড়ই অপারগ...





নাঈম ফিরোজ
গানপ্রতিম সোনালি অন্ধকারে

ফিমেল এক দোয়েল
 
এখানে বসেছিলো জবুথবু—
 

একটা নীল গ্রানাইটে —
 
আত্মহননের জন্য অপেক্ষমাণ
 
          আর ভীষণ আহত! 

— দহে সে
        রহে সে
                সহে সে

(শি)সে ডোবে যার— প্ররোচনা, প্রেম, পাপ
প্রেমিকপ্রবর রাজহাঁসদের মলিন ডাক

রা নেই তার
রি রি নেই তার
খুনে রিরংসাঘুম ছড়িয়ে পড়ছে— তার চোখে, ডানায়

একরাশ সোনালি হরিণ বসে আছে
 
আগেই যেখানে,
গানপ্রতিম অন্ধকারে

(শি)সে অস্তাচলের আলোয় হরিণ গোনে
 
শিসে ডোবে যার— প্ররোচনা, প্রেম, পাপ

অগ্রাহ্য এক ঘোরে ডাকছে বসে

ফিমেল এক দোয়েল—
 
সুগায়ক আর শাশ্বত পালকের, ছোট


নাহিদ ধ্রুব 
অ্যা মিসিং ডে 

ইচ্ছে করেই কেন ভুল বাসে উঠি
টিকিটের দাম নিয়া তর্কের মাঝে
আমার যাওয়ার কথা আজিমপুর
আমি বইসা আছি সায়দাবাদে!

লাস্ট স্টপে নামায়ে দিলো রোদ্দুর
বাসের জানালায় তরতাজা মেঘ —
হাঁটা দিলে মনে হয় বৃষ্টি হবে,
ভিজিবে নিচু মাথা, ভুল গতিবেগ!

তখন কী ফিরিবো নিজ গৃহে একা?
 
বউ নাই, সন্তান আছে, মা ছাড়া —
স্বজনেরা ফিরিতেছে দাফন শেষে
 
এই শহরে আছি এক কাকের বেশে

নবজাতকেরে কোলে নিতে যদি হয়
কান্না ভালো লাগে, ঢেউয়ে নাই ভয়
তার দিকে তাকায়ে মনে পড়ে চাঁদ —
দিনের স্মৃতি নাই, চেয়ে দেখি রাত!


নুরেন দূর্দানী 
চিহ্ন

নিমজ্জিত স্বপ্নের ভেতর
আমার কোনো তাড়া নেই কিংবা চাহিদা
এ জীবন যেন দূর—শান্ত সৈনিকের মতো
আরও বেশি ছায়াচ্ছন্ন মনে হয়!
অথচ যে কোনো দৃশ্যের ভেতর থেকেই
আমি তাকে দেখি, এক শিকারি—
ভাবি, আলোর দিন ফুরিয়ে আসছে
যেন দূর দালিমের ঘ্রাণে—
কারা যেন পৃথিবীর মুখের ওপর
 
ছড়িয়ে দিচ্ছে অহরহ মানুষের পায়ের ছাপ।


নৈরিৎ ইমু 
ইশকুল

খুলতেছে আমাদের ইশকুল। কড়ইয়ের ফুলঝরা রাস্তায়, রোদের পিটি শেষে শাদা শার্ট, বেলিফুল— মেয়েদের ঘাগড়ায় বাতাস তাড়ালো কোন যৌবন, বাঁকাস্রোত ব্যাকবেঞ্চ, ঘণ্টাধ্বনির দিকে মনোযোগ! খুলতেছে আমাদের ইশকুল। সুগন্ধি তেলে ভাসা কালোচুল, ইকোনোর কালিদাগে স্মৃতি তার— ঘুমঘুম, মাথা রেখে টেবিলে দূরদেশ, মনীষার কড়া স্বর— আতরের গন্ধটা মগজের খুপড়িতে একা ফুকে বিড়ি সে, অবাধ্য! খুলতেছে আমাদের ইশকুল।
 

শূন্যে উড়ছে ঘুড়ি তার কী যে খা খা বেদনার কথা সে বলেছে পাখিরে ডেকে চুপিচুপি নাটাইয়ের কাছ থেকে সরে সরে শিরশিরে একা টানে দোটানাতে বারবার রোদ্দুরে ঘষা খাওয়া হাওয়াটারে আলতো সমীহে রেখে, তখন তুলোর মতো ধাঁধা দিয়ে ছায়া খেলে একগুঁয়ে স্বভাবে সে মেঘ হয়ে থেমে থাকে আর সেই দুর্দিনে ঘোলা করে সবকিছু খুলতেছে ইশকুল আমাদের!
 

মোটাকাঁচে ঝাপসা দ্যুতিহীন চোখ মেলে তখনো গাছঘেরা টিফিনে বাদামখোসা, মালাইবরফ ঘামে, স্যাকারিনে জিব লাল, কাঁধে ভর করা দিন— বন্ধুর গালে টোল। জ্যামিতি বক্সের বাইরে ব্যাঙের ছাতা, বেঞ্চিতে মাথা রেখে মন খারাপের দেখা— রেশমির বেণি থেকে উড়েছে বেগুনী ফিতা, একদিকে গামারীর ঘন ঘ্রাণ, একদিকে ঝিল, ব্ল্যাকহোলে জ্বলজ্বল নাহার আপার তিল—
 

খুলতেছে আমাদের ইশকুল, বাইসাইকেল বেল কিশোরীর নতচোখ, নীল ছাতাটার নিচে বুকে বই চেপে রেখে, মাঠভরা ঘাসফুলে কোথাকার হুইসেল ঢেউ তোলে অক্ষরে, অক্ষত অন্তরে— নরম মায়ার দানা ফেটে যায় নিচুস্বরে, শাস্তির ডোরাকাটা দাগ-খাঁজ-ভাঁজ ভেঙে, কাগজের জেট উড়ে, বর্ষার কণা ছিটে, মণিমুক্তোর মতো লম্বা বারান্দাজুড়ে, ইশকুল খুলতেছে আমাদের। ছেঁড়া পাতাটায় এসে ইশকুল মনে পড়ে—


নোমান আহমেদ 
স্তন

এমন ভাবে নড়ে উঠলো, এতো নিখুঁত, য্যানো এক জোড়া অত্যন্ত পাখি, আলস্য ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
আয়েশি ভঙ্গিতে ডানা ঝাপটালো। আর, জমিনে খসে পড়লো আশ্চর্য দুটি রঙ্গিন পালক।
য্যানো, একটু বাদেই উড়াল দেবে অতীব আকাশ !

যদি ওমন ভুল করে সত্যি উড়ে যেতো ও-অবুঝ পাখি, তোমার বুকের চেয়ে, এতো আকাশ,
 
এতো আরাম-বাড়ি আর কোথায় পেতো— শিশুর ঠোঁটের চেয়ে ওতো নরম পরম সংবেদ !

জানো কি, স্তনে গিয়ে প্রতিটি পুরুষ ফিরে পায় শিশুকাল
অতএব, স্তনমুখি সমস্ত শিশুকাল বোঁটায় ঝুলছে;


পার্থ অগাস্টিন 
ওঠো দাদু...ওঠো

(উৎসর্গ:দাদুকে-যাঁর চিতার আগুনে আজও পোড়ে আমার আদুরে শৈশবগাথা)

সে এক আদুরে শৈশব আমার!

দেয়ালের ফাঁকে বসা
দু'টি শিশু শালিকের ডাক শুনে ছুটে যেতাম দু-ভাই;
পেড়ে আনতাম "জোড়া শালিক"!

এরপর দিনকে দিন হৃদয়ে ঠুকে নিতাম "খাঁচার জীবনী" ওদের...
মায়ের বকুনিতে কেনো জানি অস্পৃশ্য ছিলো বন্ধ খাঁচার দরজা!
খাবারের পসরা সাজানো রইতো ঐ খাঁচার গায়ে...
খাঁচা আর ছানা জুড়ে মায়ের আদর!
যেন "মায়ের চারটি ছানা..."
এত আদরে রেখেও
প্রতি শীতে বার বার ছানাগুলো চলে যেতো না ফেরার দেশে---কাঁদিয়ে মাকে।
আবারো দীর্ঘ অপেক্ষা...

দাদুর কাছেই রেখে যেতাম
যতো নিষিদ্ধ আবদার...

"পিনখেলার" মার্বেলের মতো সময় গড়িয়ে যায়...হায়!

দাদু...দাদু...দাদু ওঠো,
পাখি পাড়তে যাবো---
বানানো খাঁচাটা রেখো "ডোলের" গোপন খোপে;

দাদু...দাদু...দাদু ওঠো,
মাছ জমেছে পুকুরে
মাছ ধরতে যাবেনা?
কীভাবে নাচছে দ্যাখো
শাদা পুঁটির দল...

জলের স্রোতের মতো
সময় গড়িয়ে যায়...হায়!

কেনো আজ ঘুমিয়ে আছো ঐ আমকাঠের চিতায়?
ঠাম্মা কি বিছানা পাতেনি আজ...?

দাদু...দাদু...দাদু আসো,
ফিরে আসো তোমার ঘরে আর একটিবার--
বিলেতি পারফিউম মেখে দেবো ঐ শ্যামল গায়ে
"চৌধুরীবাড়ির" পুকুরঘাটে বসে গল্প শুনবো আরো...

দাদু চলো,তোমার আঙ্গুল ধরে ঘুরে আসি সেইসব ধানক্ষেত,ভাঙা "আইল"---নেবেনা আমায়?
দেখো দাদু,দেখো--তোমার আদরের ছোট নাতি-'রনি' 
সারা দুপুর জুড়েই কাঁদছে আজ...

আর কেউ জানুক-না জানুক
আমিতো জানি--
কোনো পোড়া গন্ধই ভালো লাগে না তোমার।

দাদু ওঠো...ওঠো দাদুভাই
পাখি পাড়তে যাবেনা...?

তুমি না এলে,
প্রতি উৎসবে উৎসবে
গোপন টাকাগুলো পকেটে গুঁজে দেবে কে!

চোখ দু'টো খোলো,দাদু...
দেখো--তোমার একতারাটা আজ আমারই হাতে;
আর কণ্ঠে বিলাপের সুর...


পলিয়ার ওয়াহিদ
হননের মওসুম 

মাত্র দুবার-ই অংশগ্রহণ করি আত্মহত্যায়
 
ইবলিসের সাথে একবার
 
সেবার পরাজিত হই দুজনই
 
ফলাফল- স্বর্গত্যাগ!
 

অন্যবার আদমের সঙ্গে
দুজনই লাভ করি জয়
 
উপহার- স্বর্গত্যাগ!
 

দুই ধরণের জীবন
স্বেচ্ছা মৃত্যুর এখতিয়ার রাখে
অসুখী ও পাপীরা
সৎ ও সুখীরা
অথচ এই দুধরণের বীণা
বাজিয়েছি আমি তুমুল!
ফলে অতীতের পাপ ও
সুখ নিয়ে আনন্দিত আমি!
 

আত্মহত্যায় কেবল হত্যায় থাকে
আত্মারা উড়ে বেড়ায়
তাদের ঘর মূলত হাওয়ায়।

ইবলিশের সাথে নরকে
ও আদমের সাথে পৃথিবীতে এসে
মনে হয়েছে- দুটোই জাহান্নাম!

বেহেস্ত শুধু খোদার ঘর
মূলত জীবনের ভেতরে
পুষে রাখা তিতাফলগুলোই
সন্ধান করে শান্তির
আর শান্তি গচ্ছিত শুধু
মালিকের কাছে
যিনি আত্মাকে সেঁকে সেঁকে
খাঁটি করেন হত্যার মওসুম!

আত্মহত্যায় অংশ নিয়ে
অনেক লাভ হয়েছে আমার
 
নিজে হত্যা হওয়ার পর
আমি প্রকৃত আত্মাকে
 
আবিষ্কার করতে পেরেছি!


পিয়াস মজিদ
বসন্তলিপি 

কুহুক্লান্ত কোকিলের
 
আত্মকথায়
 
নোঙর
আমাদের সব
পাতা-ঝরা প্রবণতার।
সে আসে
 
তবু ফাল্গুন ফিকে হয়ে যায়
 
ধুঁকে ধুঁকে চৈত্র;
আবহমান এই
 
কুৎসিত জলসায়
 
জ্বলে আর নেভে
 
নেভে আর জ্বলে
 
রূপনীল-রূপলাল হাউজ।
 
একদিন এভাবে
ঝরে যাব ঋতুহীন;
 
স্বপ্নে সমাধির জতুগৃহ
 
বসন্তসবুজ।


ফারাহ্ সাঈদ
মৃত্যুর অধিক নয় প্যারাবোলা

ঠুনকো ধুলোর দিন
 
কি আছে পথের ধুলোয় ?
অসুখের সুখ এতো সহজ তো নয়
 
ধুলো আসে , ধুলো যায়

এ যেনো রেখার মাঝে লুকিয়ে থাকা স্মৃতি

আমি তুমি ,
প্রতিসম একটি রেখায়
যোগফলে যদি হই পথ
 
ও হাত , কাঁধের কিনারে
 
আমিতো হেঁটেছি দীর্ঘকাল
বিন্দুর ও পাশে তুমিও
স্থানাংক জানা নেই
জানা নেই
সম্মুখে মহাকাল !

আমাদের আসা যাওয়া
কঙ্কালসার আমি ও আমরা

এ প্যারাবোলা ধীর
প্যারাবোলা বাকল ছুঁয়ে মীর
প্যারাবোলা বনের কাছে নীড়
প্যারাবোলা মনের মাঝে থির থির
 

ছায়াপথে ভাগ্যরেখার সমমিল
এ প্যারাবোলা মৃত্যুর চেয়ে বেশি কী আপন ?


ফারহান হাবীব
প্রয়োজনীয় কথাবার্তা - ১

অবশ্যই এটি একটি সুন্দর ছবি
 
বিশ্ব বিখ্যাত নায়িকার সাথে
বিশ্ব নেত্রীর ছবি সুন্দর হবে এটাই স্বাভাবিক।
 
স্বাভাবিক হয়ে উঠছে
 
বাবা তার চার বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করবে সেটি।
তারও আগে খবর পেলাম এক কমিউনিস্ট নেতাকে
 
তুলে নিয়ে যাবে রাষ্ট্রপক্ষ।
 
পরে না হয় প্রেস রিলিজ পাঠাবে।
এসবের মাঝে সমুদ্র বড় ভালো লাগে
রাতে রাতে স্বপ্ন দেখি
স্বপ্ন দেখি- আমাকে আর কবিতা লিখতে হচ্ছে না
সবাই সাগর বিলাস করছে
গান শুনছে অথবা গাইছে সাগরের পাড়ে
কেউ কেউ প্রেমিকার হাত ধরে হাঁটছে
সূর্য ডোবার আগে চুম্বন করছে
খুন বা ধর্ষণ বলে কিছু নেই পৃথিবীতে।
ব্যাংক লুটতো আরও পরের হিসাব
পৃথিবীতে ভালোবাসা বাসিই হলো মূল কথা।

আমার সমুদ্রের পাশাপাশি
 
প্রিয় বন্ধুদের মুখ কেবল মনে পড়ে,
বন্ধুরা তোমরা আছো তো
প্রিয় ধরণীকে বাঁচাতে...


ফিরোজ আহমেদ 
ভাঙন

ভালোবাসা যাচ্ছে না রূপসার ঘোলাজলে
 
এই ডুবন্ত নৌকার মাস্তুল
কিছু সূক্ষ্মসুতার জাল বিছানো থাকে নদীর শরীরে
 
কিছু না-লেখা সত্য ঘৃণাদের মাতাপিতা হয়।

পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বে এইভাবে বুঝি
থেমে যাবে কিছুক্ষণ--
নদীদের ঢেউয়ের সেলাই
মাছদের সাঁতারের নেশা,
 
চুমু খেতে গেলেই ঠোঁটে জমে উঠবে থুতু।

রূপসার পাড়ে একটি ভরাকলস ভেঙে গেলো শব্দবিহীন,
গোল্ডফিস ভুলে যেতে চাইছে তার গতকাল।


বিধান সাহা
ও মরণ

অবিকল্প তুমি, শিরোধার্য তোমাকে মেনেছি তাই
মেনেছি মরণ দশা
¾ ওগো বলেশ্বর, ওগো নদী
কোথাও আশ্রয় নেই, এ শহর খাঁ খাঁ করে তাই
¾

জানি না সমর্পণের পথ, তাই এতো প্রকৌশল,
এতো কলরব, এতো উজানি ভণিতা, প্রিয়তমো।
রাত হয়ে যাচ্ছে, বসে আছি, ওগো, ওগো, ওগো ঢেউ
¾
ছলনা জানি না বলে একবার সটান তাকিও
ও মরণ, ওগো ছবি, সরাসরি তুমি বলে ডেকো!


মঈন ফারুক
নেশা হলে এমন হয় 

অতিরিক্ত নেশা হলে আমার এমন হয়; খুব হাসি।
জ্বরজ্বর লাগে, মাথা ব্যথা করে, খুব ঘুম পায়—
 
এসবের ভেতর এলোমেলো পা চালিয়ে হাঁটি,
হাঁটতে হাঁটতে
পাখি দেখে শিস দিই, দেয়ালে হেলান দিই,
গাছে উঠে বসে থাকি, লতা ধরে দোল খাই—
মনে মন হয় জয়-জয়; অতিরিক্ত নেশা হলে
 
আমার এমন হয়।
তাকিয়ে থাকে মায়াভরা চক্ষুদ্বয়, অনেক হাসি,
 
যাকে তাকে ভালোবাসি, ভুলে যাই ভয়;
 
অতিরিক্ত নেশা হলে
 
আমার এমনই হয়।
 


মাজুল হাসান 
মালিনী মধুমক্ষিকাগণ

ফুলবাগানেও ৫২ হাজার ৫৩ গলি থাকে। এখন বললেই তো আর
ফিরে যাওয়া যায় না মালিনী!
এই যে ডিমের খোসার মতো সকাল, ভাতশালিখ, কুসুমের মতো দুপুর
আর গোলার্ধের কর্কটক্লান্তি ঘুমে সবে ধন নুয়ে পড়া
 
হেলেঞ্চাকুড়ি-দুয়ার—কী করে ফিরে যাই?
এই তো সেদিন ‘আমি হিন্দু আমি হিন্দু’ বলে প্রাণভয়ে খুব চেঁচালো
কালকেতুর কাটাহাত। রুদ্রতেজে হাসলো দাম্ভিক রাজপদ্ম
আর লাঞ্ছিত মৃদু কারনেশন

মালিনী, পোড়া মাংসের গন্ধ বেয়ে আমি নেমে এসেছি
 
লওহে মাহফুজ থেকে। এখন আমাকে গিলোটিনে দিন। গালি দিন
বসন্ত রেডিও’র কোকিল R.J বলে; অথবা রাষ্ট্রদ্রোহী...

আমি আমার শালপাতার হলফনামার একটা অক্ষরও বদলাব না


মারুফ আদনান
দিকভ্রান্ত 

আমার দক্ষিণ দিকটা কেবলই বাড়ে
সমস্ত ঘুম নিরেট হয়ে আসে
অন্ধের দেখায় ফুল, মাত্রার পাশে নতুন দাগ
চিনে নিবো একদিন ছায়ার নিচে ত্বক
 
জলে শ্বাস ছুঁড়ি—
 
এক টুকরো মানুষের দ্বিত্বপ্রেমাবেক শুয়ে আছে যে পাশে
দেহজ কান্না পোশাক ভেঙ্গে আসতে চায় বাতাসে—
অন্ধকারেও দূরের ডালিম লাল, সানকির জলে তার মৃদুস্বর
নতুন এক ফলের স্বাদ নিয়ে মরে যেতে চাই, কাছাকাছি কোথাও


মাহমুদ নোমান
ঘাড় পেলে ঝুলে যাবো

মদ পান করি নি
 
তবুও নেশা নেশা লাগে
মোষের চোখের মতো চোখ
হলদে সবুজ দস্তানায় গড়গড়া দেয়
পিঠে বালুকণা হাঁটে
চামড়া টানে,
ঝিনঝিন করে
চিনচিন ব্যথায় নড়ে বুকের চর্বি

সবদিকে বালুকণার চিকমিকি
অতলে হাতছানি তোমার


মাজহার সরকার
পল্টন মোড়ে মানচিত্র বেচে যে লোকটা


পল্টন মোড়ে বাস দাঁড়াতেই একটা লোক দুই হাতভর্তি মানচিত্র নিয়ে এলো
আমার এখন মানচিত্র চেনার সময় নেই
শোনে লোকটা মৃদু হাসলো, দুই সারি গাড়ির মাঝখান দিয়ে হেঁটে হেঁটে
জানালার গ্লাসে হাত নেড়ে মানচিত্র মানচিত্র পৃথিবীর মানচিত্র
বাংলাদেশের মানচিত্র ঢাকার মানচিত্র
মানচিত্র কি সত্যি পথ চেনায় মানুষকে, লোকটা হাতভর্তি নদী পাহাড়
স্রোত আগ্নেয়গিরি শত ক্ষুধার চিৎকার, কতিপয় রেখার দেশ
সোভিয়েত মেঘ আরব খেজুর মার্কিন জনতন্ত্র  আফ্রিকার হাড়
এত ভারি পাথর নিয়ে হাঁটে কি করে লোকটা একটা সিসিফাস!
অবিশ্বাসী কীট কাটে দেহের বেষ্টনি
ছাগল খেয়ে ফেলে বাগানের বেড়া
অফিস থেকে ধর্ষিত হয়ে ফিরে চাকরিজীবীরা
কারোই মানচিত্র কেনার সময় নেই, লোকটা কি নিষ্ঠুর মানচিত্র বেচে খায়!
সে আবার ফিরে এলো, এবার বললাম
পাঁচ মিনিটে একটুও এগোতে পারিনি
মানচিত্রে দেখে আমি চলতে পারবো?
সে বললো, আপনারা এগোতে না পারলেই আমি আরও কয়েকটা মানচিত্র বেশি বেচতে পারি।


মাছুম কামাল 
শামিয়ানার নিচে সাঁটা জীবন

যেকোনো সকালকে ছড়িয়ে ফেলবো একটি দীর্ঘ শামিয়ানা করে
শান্ত কিন্তু খরস্রোতা নয়, দীর্ঘ কিন্তু বৃহত্তম নয়,
 
এমন একটা নদীর পাড়ে বসে থাকবো—
ফিঙে এবং কাদাখোঁচা পাখির সাথে কথা ক'বো
জল ও রোদ্দুরে নিজেকে ভেজাবো এবং
নিজেকে শুধু এই অনুভবটির ভেতরে প্রবাহিত করতে চাই যে—
জীবনের সবটাই অহেতুক অথবা অহেতুক বলে কোনো কিছু নাই।





মোস্তফা হামেদী 
পরানকাঁথা

রাত্রি ও তারার মাঝে এক দণ্ড শস্যক্ষেত।
গাছের ফোকর গলিয়ে ঘরদোর।ছোট ছোট মাটির
 
ঢিবি। বুনো লতায় সর্বাঙ্গ ছাওয়া। ফিনফিনে আলোয়
 
আবছা ভেসে ওঠে মুখশ্রী।

যেন পুরানকথা থেকে উঠে এলো সুশ্রী রমণী।
 
ছড়িয়ে পড়লো উত্তর থেকে দক্ষিণে। গাবগাছের
শিহরণডাল বেয়ে অধিকার করলো প্রাণীকুল ও বস্তুপুঞ্জের অন্তর্ভূমি।

রা নেই কোথাও। কলাপাতার খোলে পানির চলন দেখি।
শরীরের শিরা বেয়ে প্রবাহিত হচ্ছে হিম।

গাছের খোড়লে সুর তুলছে বায়ু। শস্য ও ফুলগামী ঘ্রাণ।
তিরতির কাঁপতে থাকা তিসিক্ষেত। 

লোকেরা ডুবে গেল। গহন ঘুমদীঘির পাড়। হারিয়ে ফেলা পথে ক্রমশ সন্তরণ।

নিস্তব্ধতার পাথরে খোদাই করছে বিলাপ।
আচমকা জেগে ওঠা কেউ। কুঁড়িয়াল ডানা ঝাড়ে।
দুই-একটা মাছ ঘাই মেরে দেবে যায় কাদায়।

পরানকাঁথা জড়িয়ে যে শুনছে--শ্বাস;
 
গাছ, পাখি ও শস্যের গোপন আলাপ। মাছের নানা ভঙ্গি
মুদ্রিত হচ্ছে ধ্যানে।

অবলুপ্ত সেসব ধ্বনি সুঁইয়ের ফোঁড়ে দেহ মেলছে।


মোসাব্বির আহে আলী 
শনিবারের কবিতা

১.

এই উপত্যকার ঢালে উদার আঙুরবন--
দূরে মেডেটারেনিয়ান দুপুর
কাঠরঙ রোদে ভাসছে প্রাচীন হাওয়া
এই পাহাড়ি উপকণ্ঠে
 
ভেড়ার উলের কারখানায়
আমার রোজগার
যবের রুটির সাথে মাথায় থাকে স্কুলগামী পুত্র
সন্ধ্যায়, এই মাতাল উপত্যকায়
কেউ আমাকে পানশালায় যেতে দেখেনি

২.

কবির কফিনের সামনে এমন আরোপিত ভিড়!
এতসব নির্বোধ
মুখোশের শোক-- বেদি'র আশপাশে!
সৎকার মুহূর্তের
 
তোমাদের সকল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অশ্রু
তুলে নাও




মেঘ অদিতি 
নয়নতারা অথবা একজন বুনুয়েল

নিজেকে বন্দী ভেবে উড়িয়ে দিলাম রেশম সাদা রুমাল। কোথাও কেউ ঠিক দেখলো! কোথাও প্রকাশ পেলো, পারস্পরিক মত বিনিময়ের ছবি। একটা কফিশপের আলো নিভে উঠে এল প্লেগ পীড়িত এক গ্রাম।

হা জীবন!! কাল ছিল তবে শেষ অপেরা! অথচ সাদা রুমাল, উড়ে এলে লেন্স থেকে চোখ সরিয়ে ভাবা যেতই- তিনি আসছেন।

মাথা উঁচু কর প্রশ্নচিহ্ন! প্রক্ষেপণ গতির বিপরীতে তীব্র উড়ে যাও; আর জিজ্ঞেস কর সন্ধ্যার আলো মেখে একলা শহর যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখনও কি সম্পর্কের খুব কাছে জন্ম নেয় আরো কোনো সম্পর্কের মন্দমৃদু হাওয়া?


মুজিব ইরম
আবারও নিন্দামন্দ

তুমি লগ ছাড়িও না, ফাউড়ি লাইও না!

কান্দা-কাছাত থাকিও তুমি
তুমি গেলে কে আর রাখিবে মনে
অধমের নাম
নামের সুনাম

নাম নাম করে আমি
তোমারেই ডাকি
নাম নাম করে আমি
তোমারেই আঁকি

নিন্দামন্দে ডুবে আছি
তুমি আর শরমিন্দা করিও না, লগ ছাড়িও না।


রিমঝিম আহমেদ 
সহজ ভ্রূণের পাখি 

যেভাবে মৃত্যুর পর আবার জন্মাতে চায় সহজ ভ্রূণের পাখি...
আমি ডানা খুলে রাখি, ফের উড়ে যাই অন্ধের প্রদেশে। ভাবি, আলো ও অবলোকন শেষে, শ্যামল এ জীবনের শ্বাস
ধারাপতনের দিনে যেটুকু উচ্ছ্বাস জমা ছিল, আঁধারের প্রচ্ছদ খুলে সেও চমকালো! চরণচিহ্নের মতো ফেলে যাই ঈর্ষার ঈষৎ চুম্বন। 


প্রশ্নের শরীর ঘেঁষে আলো ফেলে দেখি- মানুষের আগে হাঁটে সুগন্ধের ছায়া! রাঙা হয় ঋতু-প্রলোভন। নাইওর ফুটেছে মনে বিচ্ছেদের দিকে। জমে শীত, উনুনের মায়া! পটভূমিকার দিকে উড়ে গেছে সুহৃদের মায়াবী বেলুন, ক্রমশ জানছি সে কার! নদীর পাশে ডুবে যায় রোদ, আগুনের ভ্রূণ! জিহ্বা লুকিয়ে রাখে আরকের ধার।


তবুও জলের নিচে চোখ খুলে রাখি। বিছানা পেতেছি আজ রক্তজল, ঘাসে। চেয়ে দেখ! এই জীবন খোলা পড়ে আছে তোমাদের চাবুকের পাশে।


রাসেল রায়হান
পা

তবলার শব্দে মনে হচ্ছে, যুদ্ধ কোথাও—কালো পর্দার ওপাশে। এপাশে তুমি শুয়ে আছ
আর তবলার শব্দে এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছি, অকস্মাৎ মনে হয়, কোথাও উদ্ভ্রান্ত সৈনিক হাঁটছে—যুদ্ধ তখন, কালো পর্দার ওপাশে; অন্য পাশে শুয়ে আছে পূর্বপরিচিত কেউ—এক পা হারানো
...জুতা বিক্রি একদম পড়ে গিয়েছিল। আর কে না জানে, যুদ্ধের সময় কেন জুতা বিক্রি কমে যায়


শঙ্খচূড় ইমাম
রু। ১৬

আজ দারুণ শুক্রবার। এবসেন্ট আসে—নিগূঢ়ে
আউট হয়ে যাই, মৃত নদীর মতো আউট হয়ে যাই
যার উপর দিয়ে উড়ে যায় বর্ণালী রু

কৃষকের মতো মহাকাল দেখে—
মাঝে মাঝে খাড়া হয়ে যাই
পরাহত শূন্য অব্দি খাড়া হয়ে যাই
 

আজ জানাযার পরের দিন, দারুণ শুক্রবার

প্রচুর বিকল মৃত্যুর দিকে চেয়ে থাকি
আর বোকাচোদা ব্রাভো হয়ে যাই—


শামশাম তাজিল
মূর্খতা

চাকরি পেয়ে মনে হয় এইবার বিয়েটা ভেঙে দেয়া উচিত।
অনিরাপদ নই জেনে আশ্বস্ত হয়ে উঠছ ;
স্নানঘর প্রিয় তোমার,
শরীর থেকে ঘামের গন্ধ আর সুগন্ধি সাবানে ময়লা ধুয়ে এসে দেখো ঊরুসন্ধিতে চুমুর দাগ
বুকে দাঁতের কামড়
আর কীট কীট পাঁজর ভাঙার আওয়াজ বুকের ভেতর

বয়সের সীমায় আটকে করছ অর্থের সংসার
শব্দ এমন এক অসুখ যার কোথাও উপস্থিতি নেই
শুধু ক্ষত বেড়ে যায়,
রাতের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়েও অনুসিদ্ধান্ত টেনে দিই।

আহ্লাদিত হও এই ভেবে, গণিতে দুর্বল হয়েও জীবনের অঙ্ক মিলিয়ে ফেলেছ?

অথচ আমি এমন এক সংখ্যা যাকে নিঃশেষে বিভাজন করা অসম্ভব

আমাকে শিখলে না


শাফিনূর শাফিন 
ভ্রুণ

রেণুর দল সাঁতার কাটে
লোহিত নদীতে
ফুল হয়ে ওঠার প্রতীক্ষায়
অবিরাম মৃত্যু!


শামীম আরেফীন
স্বপ্ন কিংবা মৃত্যুর মত ঘোর

বৃষ্টি নেমে গেলে ঘর পালানো বাতাস
 
ফুসফুসে পুরে নিয়ে বলি—এবার স্থির হও।
 
এই ধ্বংসস্তূপের উপর পড়ে থাকা নিথর
 
রাস্তায় হেঁটেছো অনেক।
 

ডানে ধূসর শূন্যতা—বায়ে দীর্ঘ নদী; ভাঙা ব্রিজ
কাঁধে নিয়ে জাদুকরের লাঠির মত আছে শুয়ে।
বুকের ভেতর নীল শালবন—কাঁপছে তিরতির।

যেন এই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পালক—
এই বনে—টুপটাপ পাতার এজ্রাসে আমার
 
ডুবে যাচ্ছে ঘর। তুমি কি মৃত মায়ের মত দীর্ঘ
শালপাতা? মাথার উপর মেলে ধরেছো প্রেম।

জ্বর জড়িত কপালে—তোমার আঙুল
 
পৃথিবীর প্রথম মৌমাছি আমি। যেন ফুলের
 
ড্রেসিংরুমে গন্ধের কাছাকাছি—রয়েছি বেহুঁশ।


শিমুল জাবালি 
হাহাহাহাকার 

এই বৃষ্টি ঝরনা মোলায়িত করে ছুঁয়ে আছি মদখোর নারী। কি যে কামে দেহে ঝরে অশ্রুধারা সূর্য। এই পাতাটি খসে গেছে আরেক দেহের ভেতর। ঝনঝন শব্দে দেহের ভেতর দেহ ঝাঁপটে পড়ে।
 

নিঃসঙ্গ বৃষ্টি ক্যাবল কাঁদে, উহ্ আহ্ বিস্ময় ধ্বনিতে; কতো যে ঘামের গন্ধ; ঠোঁটে চুমু খায়, বা খেতে থাকে। এই দুসঙ্গ রতি থেকে উৎপন্ন হবে শূন্যের কৌটা, হৃদয়ের বোতামঘর। জানতাম, বোতলের মধ্যে সেসব বোতামঘর আঁকতো একদল ঘোড়া সওয়ারদের নতজানু পিতা।
 

যেভাবে নারকেল ডগা পরে থাকে ঘাসে, চুমুক মারে দেহে, কোষ্টের আগায়। সেভাবে নিত্যান্ত নিথর দেহ দুটি লেপ্টে থাকে ঘরে; বৃষ্টির দোতারায়। হাত ধেয়ে আসছে কোনদিক। গুটি গুটি চোখ কিভাবে চাঁদ হয়ে তাকিয়ে থাকে হাতের আঙুলের দিকে। কাঁপতে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে সাঁতরে সাঁতরে হাত ঢুকে যাচ্ছে পাপড়ি গুঞ্জনে। মধু শুষে নেয় শূন্য করে রেখে আসে নিজের অস্তিত্ব।
 

ফুল বারান্দা কেহ কারো নয়, দৃশ্যতরু দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। রক্তের কোরকে জেগে ওঠে ওম। শীতল শাতল ওম। এই যে বেহিসাবি উষ্ণতা দুলে দুলে গড়ে তোলে রোজেন হাউস। ভেতরে উন্মাদ বাহিরে ত্রিদন্ড উচ্ছ্বাস। ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ি ক্রুশবিদ্ধ পিঠে।
 

এই ভাবে শুরু আমাদের রহস্য যাত্রা। আজও অবধারিত যে বেগবান, পুঞ্জীভূত দ্রাক্ষা, তক্ষকের জিহ্বা। রক্ত চালচাল হতে পারে, অথবা হতেই থাকে।



শ্বেতা শতাব্দী এষ 
ছায়াস্বর

মানুষ বড় হতে হতে একদিন খুব ছোট হয়ে যায়
 
নিজস্ব ক্রন্দনের কাছে—

একদিন কোথাও একটা ফুল ফুটে ওঠে
মলিন পথের বাঁকে একা একা বিলিয়ে দেয় ঘ্রাণ!
 

যে কখনও সমুদ্র দেখেনি সে জানে
মায়ের কাছে জমা থাকে সমস্ত আশ্রয়—

একদিন হঠাৎ অদেখা কারো কৈশোর থেকে
ভেসে আসে উদাসীন বনের ধূসর!
 

সময়কে পাশ কাটিয়ে কথা বলে মানুষের ছায়া
 
যা আছে মনের ভেতর, একদিন—


সারাজাত সৌম
ডুব

যে আমাকে প্রশ্ন করলো,
 
                সে কিছুই না
যদি এমন বাতাসের কাছে গিয়ে রোজ
আমি মারা যাই!
                কিংবা, আমার দিকে

তাকিয়ে তুমি ছোট্ট একটি ভাষার মতো 
তাকে আদর দাও
আর বলো কিছুই না!

এই দেখা,
 
অন্য কিছুর সাথে মেলে না
অথচ কি পাতার নিচে পিঁপড়ার সম্মেলন
যুদ্ধ আর মুক্তির চেয়েও
 
                তারা সুন্দর নৃ

বিস্ফোরণের আগের রাত, এটা আশ্চর্য
আমাকে সব দেখাওকিন্তু সে আমি না!

ভাবি, প্রতিটি ছকের সাথে
 
        ধাক্কা হবে আমার
কোথাও শব্দ হবে আবার হবে না! 
মৃদু রেণুর ভেতর
 
        পাখি ও ফুলের কি সম্পর্ক

কে জানে? শুধু কাঁচকান্নার মতো এই দৃশ্য
যেন যাবতীয় যন্ত্রতারা কোথাও স্থির না!

কিভাবে দেখি তোমাকে!
 
        মৃত্যু কি এমন অভয়
বাতাসকে ফাঁকি দিয়ে যাওয়া 
                একটি ফুল
আমাকে বিশ্বাস করে ফুটে,
 
দূরের হাওয়ায়


যে কাঠবিড়ালি বিগড়ে যায় রোজ হাঠৎ হঠাৎ
সেও তো হৃদয়বনের ছোট্ট এক পরিখা!

দমের উপর বসে যে আঁকছে
 
        চোখের মণি

আর তোমার প্রতিবিম্ব।
 
        ওখানে কে আমি?
ছোট্ট গাছের শরীর, পোকা খাওয়ার সুর


গৃধিনীর গুঞ্জনে ভারি এ ঘর, জাহাজ যেন
আমাকে নিয়ে যায়। কিন্তু কোথাও যাচ্ছি না!

কালো কৃষক, 
        তুমি শস্য বানাও। হালকা
এবং মিষ্টিকিছুটা বিষ, 
লালের গভীর
সে সূর্যাস্তের শার্ট আমার!
 
                গৃহিণীর আঙুল

তাকে জোড়া লাগাচ্ছে রাত্রি দিয়ে, আকাশ
কে নিবে এখন? কেউ তা জানে না!

তবু কথার কয়েন, 
        বাজি ধরতে পারি আমি
এটা পরিবর্তন যোগ্য। 
        টস করছে কেউ গাছে
ছায়া আর শরীরের ভেতর ছাতারের দল


কেউ কেউ ধূলিতে ডুব দিয়ে 
আর ভাসছে না!


সাদী কাউকাব 
শ্রীনিধি জংশন পর 

শ্রীনিধি জংশন পর, তোমাকে মনে করা যাক। শুকানো ঘামের গুঁড়ো আর শাদা ছোপ, শার্টে ধিকিধিকি উড়ে। বাতাস ক্লান্ত নয়, আর্দ্র নয় তাই মনে করা যাক তোমাকে। রক্ত পাম্প করা হৃদয় এখনই নয়—অর্গল খুলছি না। বরং চলে যাই কল্পনার কাশবনে ; তোমার পোষা বিড়ালের স্নেহাশীষ লোমে মুখ গুঁজে।
 

আড়ালে, আমি যাচ্ছি রাজধানী, কৃতজ্ঞমুখ ফিরিয়ে দিতে আমার পূর্বপুরুষেরে। এবং, স্থানিক চাহিদা পৌঁছে দিতে প্রয়োজনানুসারে। তাই, ট্রেজারি থেকে আইনত, আমাকেও হাতাতে হবে দানা। আমার সন্দিগ্ধ ফুসফুস হতে এ খবর প্রচার হওয়া মানা, তোমার কাছে। তাই তোমাকে বলছি না।

বরং, সংকল্প করি বিকেলের ফাঁকে, নিজের আড়ালে তোমাকে দেখাবো হাসি; হৃদয়ের স্ফুলিঙ্গ চেপে প্রিয় ভালোবাসাবাসি। কপালে ফিরে আসা ঘাম, তোমার চোখে আমার সন্দেহাতীত মুখশ্রী। অধিকম্প থেকে সরে আসা স্বর তুমি শুনবে না। মৌনতায়, বিহ্বল সময়ে এরকমই স্থায়ী তুমি। তোমাকে জানতে দেবো না কিছুতেই, হৃদয়ের চেয়ে পাকস্থলী এবং বীচি জরুরি।


সাঈদ শ
নিয়তি

তিনটা পিঁপড়া বেড়াইতে যাইতেছিলো
আমি বসে ছিলাম পুকুরঘাটে

তিনটা পিঁপড়া হাঁটা ধরলো পথে
আমি ঢিল ছুঁড়ে ঢেউ তুলি জলে

তিনটা পিঁপড়া তখন অর্ধেক পথে
আমি কি মনে যাইতে নিলাম মাঠের দিকে!

তিনটা পিঁপড়া আগাইতেছিলো খুব সাবধানে
আমি হাঁটতেছিলাম আনমনে, খোশ মেজাজে

তিনটা পিঁপড়া মারা পড়লো আমার পা'য়ের তলায়
আমি তখন গাইতেছিলাম গান, ফাগুন হাওয়ায়


সাগর শর্মা
মৈথুনগ্রস্থ শীত

শীতকাল একটি আবেগপ্রবণ ঋতু
 
পুরুষ মাত্রই মৈথুনগ্রস্থ হয় শীতে।
 
প্রেমিকারা হয়ে ওঠে ফলবতী!
 
শীতকালে তাই সমুদ্রে যাওয়া
 
ভালো অথবা অরণ্যে। সমুদ্রে
 
গেলে—ঢেউ-তরঙ্গে বিগত—
সন্ধ্যাবেলা ফিরে ফিরে আসে।
 
অরণ্যে গেলে—মন বোধিবৃক্ষের
 
ন্যায় সন্ত-ধ্যানী হয়ে ওঠে কেবল!

পাহাড়-সমুদ্র আদিমতা ছাড়া
আর কিছুই দেয়না রে, অণু!


স্বাগতিকা রোজ
মরফিন

বহুদিন বুঁজে থাকা চোখ খোল সভ্যতা

দেখ কারা চিমটি কাটে চাঁদের চামড়ায়
নির্মম চাবুকে পেটায়
অভিমানে কবি খোঁজে আঁশটের চাঁদ

কারা আজ হত্যা করে লাবণ্যের ভ্রূণ?
সূর্যের রুপাগলা ঝরনা ভেঙে ফেলে কারা
কাশবনে ছিঁড়ে ফেলে শরতের চুল।

দেখ কোন সংস্কৃতির অবৈধ আসরে
বেজে ওঠে গণিকার নাপাক নূপুর
কারা খোলে বে-আব্রু বোধের আরত?

বহুদিন বুজে থাকা চোখ খোল সভ্যতা

দেখ কারা ছিঁড়ে ফেলে পাখির পালক
খুলে ফেলে শাপলার হাসির হেজাব
নৈ:শব্দের বালাখানায় নিঃসঙ্গ যুবক
মরফিনের বোতল খুলে পান করে 
মরণের ঢোক।

কারা খোঁড়ে কবরের কাঁচা মাটি?
খোঁজে কারা মানুষের খুলি?
সখিনার স্বামী কেন রাত্তিরে ফেরে নাই ঘরে?
কেড়ে নেয় কারা নানাজির গল্পের গ্লাস
ঐতিহ্যের মূল কাটে এ কোন কুঠার?

বহুদিন বুজে থাকা চোখ খোল সভ্যতা।


সৈয়দ এনামুল তাজ 
অঙ্গগন্ধ

নাচঘরে খুলে রাখি বাম পাঁজরের হাড়
স্নানঘরে এদেহটা মনে হয় আয়না
কেউ এসে তাকিয়ে রয়
কেউ এসে ভেঙে যায়... থর থর

কেউ একজন বুকের ভেতর বসে
 
খিল খিল করে হেসে যায়

গোপনে গন্ধ পাই...
                কমলা

যারে বাসোভালো
মুখপানে তাকাও
তাকিয়ে থাকো--- তাকিয়েই থাকো...
দেখো, কিছু যদি মেলে। কখনো রাগ
কখনো কখনো ঘুমভাঙা মুখের গন্ধ
ফুল হয়ে ফুটে--- দোলনচাঁপা।


সুবর্ণ আদিত্য 
মানুষ চলে যাচ্ছে অন্য কোথাও

সেইদিন ফিরবো—
যখন তুমি ভালবাসতে কিংবা ঘৃণা করতে প্রস্তুত
 
বস্তুত মানুষ নিজের কাছে ফিরতে চায় না সম্ভাষণে

ফলত মানুষ নিজেকে ফুল ভেবে ডেকে এনেছিল সামগ্রিক পাখি স্বভাব
 
আর পাতা-কাণ্ড, ডালে বেঁধেছিল সমূহ সাহস
আগুনের বাজনায় তাতিয়ে নিয়েছিল প্রেমিকার কানের উত্তাপ
 

নাকাল দুইজন
 
হাত আর পাঁজরে গেঁথে রেখেছিল বারংবার মৃত্যুর অধিক তিরস্কার
 

নেহায়েত নদীর আয়ুর্বেদ বোঝেনি যে সকল আকাশ
নাটাই তার সুতোয় ঝুলিয়েছিল তাবৎ মাঞ্জা দেওয়া গতির চাবুক

ভাজের আড়ালে অবিকল সূর্য ঢলে পড়বে কামদেবীর বক্ষপর্বতে— এমনটা জেনে একটা মেয়ে 
প্রায় রাতেই অচেনা শহরে চলে আসলো আর কোত্থেকে যেন পালকের ছাউনি তাকে ঘুমে ফেরায় নিরন্তর 

আগুনও যে ভাংতে পারে তির্যক পিপাসা, সেজন্য তোমার অশ্রু ঝরছিল
 
কী আশ্চর্য! প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা তখনও নিজেদের বুকে আশ্রয় পায় নি

বহুদিন পর এক তীব্র বাতিল বাতাসে খুলে যাচ্ছে মানুষের মুখোশ, কাম ও ক্রোধে

মানুষ—তুমি হিংস্র
 
মানুষ—তুমি ঈর্ষা
 
মানুষ—তুমি 'মানুষ' নও কখনো

সমস্ত ফেরা অস্বীকারে নিয়ে মানুষ চলে যাচ্ছে অন্য কোথাও।


হাসনাত শোয়েব
দ্য রেইনি সিজন- ১৩

জুতা

জুতা খুলে আসুন প্লিজ। আপনার পা থেকে ঝরে পড়ছে লবন ও লালা। আপনি জুতার মাপে পা বানাবেন নাকি পায়ের মাপে জুতা? আমার অবাক দৃষ্টির মাঝে বৃষ্টি ঝরতে থাকে। ঝরো ঝরো আর ঝরো ঝরো । বৃষ্টির নাম দিলাম ‘দ্য রেইনি সিজন’। জুতা খুলে আসুন প্লিজ এখন ‘দ্য রেইনি সিজন’।
 

জামা
 

একটা মেরুন গাধা আঁকো। গাধা সবসময় মেরুন হয় কেনো? গাধারা মেরুন হয় কারণ, গাধারা হয় মেরুন। ও আচ্ছা! গাধারা জুতা খুলে আসুন প্লিজ।
 

গাধা
 

এইটাই কি গাধাবৃষ্টি? হ্যাঁ। আমরা কি তবে পবিত্র গাধা, যাদের মাথায় আছে উজ্জ্বল শিং? হতে পারে আমরা ‘দ্য রেইনি সিজন’। ঝরো ঝরো আর ঝরো ঝরো।
 


হাসান রোবায়েত 
নিঃসঙ্গ মূকাভিনয়

কত দূর মনোড্রামাটিক দিনে
বিষণ্নতার চেয়ে আরও সুরে
 
সোনালী গমের খেতে ভোর হয়—

পাথরের একঘেয়ে গাঙ-হাঁস
 
স্কারলেট রঙের মাঝে উড়ে যায়—
কোথাও তাদের ফাঁদ, মুছে গেছে

নীলিমায়—মৃত্যুর কত পরে—
সেসব কীটের ছায়া উড়ে এসে
পৃথক রোদের থেকে বিস্ময়ে

বেঁকে যায় শাল-ঠুমরির দিকে—
সে এক নিষাদ কতকাল ধরে
 
আকাশ-গঙ্গা-তীরে সারা রাত

মিড় থেকে মিড়ে ডুবে যায় একা
ডানার অনাঘ্রাত করুণায়—
নিখিল শঙ্খে শুনি কান পেতে

দূর, সমুদ্রের মূকাভিনয়—


হিজল জোবায়ের
সোনাটা

সব গান তোলা থাক
 
আজ বৃষ্টিসময়;—
 
ঘোরবর্ষণে কান পাতলেই
 
শোনা যায় বৃষ্টির সোনাটা
 

ঘুম আর জাগরণ— পর্দার ব্যবধান।
 
ভুল স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙলো যাদের
আয়নায় রাখো মুখ— পর্দার ব্যবধান।
 

চৈতন্যে ভাবুক, আয়নায় রাখো মুখ
 
আয়নার ভিতরে
 
মৃত্যুর মতো হিম
 
অগ্নির মতো লাল
 
মাছ কাটছে সাঁতার;
 
এক চোখ খোলা আর
 
এক চোখ বোজা মাছ— পর্দার ব্যবধান।
 

কর্তব্যবিমুখ, আয়নায় রাখো মুখ
 
মন্দির, পাশে তার সংক্ষুব্ধ নদী, জঙ্গল যেখানে
 
শয্যায় শায়িত সুচবিদ্ধ-কুমার
 
সুচবিদ্ধ দুচোখ
 
চোখ বন্ধ-খোলা— পর্দার ব্যবধান।
 

আয়নায় রাখো মুখ
 
বিম্বের আঘাতে দর্পণ ভেঙে যায়;
 

(আহমদ আহাদের পার্থক্য কেবল মিম,
 
মাঝখানে রয়
 
পর্দার ব্যবধান।)

সব গান তোলা থাক বৃষ্টির সোনাটা,
 
বাইরেই কেয়াবন বৃষ্টির বরাবর
 
মেঘপুঞ্জছায়ায় অর্কেস্ট্রা বাজায়...
 


হাসনাত নাগাসাকি
রক্তবীজ 

আমার ছোট্ট মেয়েটা কাতরাচ্ছে বিছানায়, জ্বরে।
আর আমি দিগ্বিদিক ছুটে যাচ্ছি পলাতক আসামীর মতো।
এ শহর আমার নয়,
ফুটপাত আমার নয়,
ঝলমলে নিয়নের সুউচ্চ খোপর আমার নয়।

প্রশস্ত যে সড়ক শুয়ে আছে বুক উঁচিয়ে,
যে আকাশ নুয়ে আছে সড়কের লেজের ডগায় -
 
কোথাও আমার কিছু অধিকার নেই ।

আমার ছোট্ট খুকিটা কাঁদবার ব্যর্থ চেষ্টা শেষে
 
ঘুমিয়ে পড়েছে।
 
আমি তাকে ভালবাসি, আর বলতে চাই-
 
ব্যর্থতার বীজে অঙ্কুরোদগম হলেই তা থেকে জন্ম নেবে
সফলতার আগুনবৃক্ষ। কিন্তু সে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি তাকে বলতে পারি না -
পুড়ে যাচ্ছি আমি - পুড়ে যাচ্ছে নদী ও ফলজ বন!
 
অচেনা অলীক ভয়ে গিজগিজ করছে হন্তদন্ত মানুষ,
কেউ থামছে না, শুনছে না কেউ কাউকে ;
যদি বলি -সিগ্রেটে একটু আগুন দাও,
 
যদি বলি -নগর ভবন কোন দিকে - একটু মুতে আসি ,
যদি বলি -তোমাদের পত্নীরা জানেন
 
নপুংসক শব্দের মানে , শোনেনা কেউই।

রাত বাড়ছে,
আমার হাতে সঞ্চয় নেই কিছুই ;
আর আমি আগন্তুক, বেওয়ারিশ কুকুরের মতো।
চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আমি চিৎকার করে ফাটিয়ে দিতে চাই রাতের সতীচ্ছদ।
 

পেশাদার খুনি হতে যেতে চাই মাতালের বাড়ি ;
ক্যানভাস জুড়ে হোক রক্তরঙা শুশ্রূষার শাড়ি।




হাসান মসফিক
দিনপঞ্জি- ৩ 

চালধোয়া পানির মতো, বেরিয়ে যাওয়া- মিতব্যয়ীর পাশে স্তব্ধ এক ছবক 

কয়েকটি নাম না জানা পাখি কোলাহল করে, রাতদিন আমার ভেতরে। অল্পলাল ভাষার রঙ লেগে যাওয়া পাখি- পারস্পরিক অল্পবিস্তর জানাশোনা কোনো সিদ্ধান্তে নিয়ে যেতে পারে? ইচ্ছেপূরণ হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ কেউ বেঁচে থাকে, সাকিন বদলায়, মাছের ঝোলের বিপরীতে  


এ কেবল পোষ-মানানোর কৌশল নয়। হাওয়াই অস্থি-মজ্জার পাশে নীরব মনস্থির। যেখানে, প্রতিদিন একটু একটু করে এঁটো হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর রোদ