নিশাত তাসনিম


১.
তুমি একটা চিঠি লিখছিলে।
আর বলেছিলে-"প্রিয়তমা,সেদিন ফুরিয়েছে যখন চিঠির মধ্যে থাকত
নিষ্পাপ আদর-সোহাগ আর খুনসুটি।এখন পত্র দেয় কেবল সরকার অথবা প্রতিষ্ঠান।সেসব পত্র বড্ড বেরসিক! আর প্রাতিষ্ঠানিক।"
আমি ক্ষুদেবার্তাটা পেয়ে বলেছিলাম-"তবে তুমিও বেরসিক কিছু লিখে দিও।চাকরীর নিয়োগপত্র পাঠিও বরং।স্বহস্তে লিখে।"
তুমি প্রতিউত্তরে বলেছিলে-"তবে তাই হবে।যা মহারানী চান।"
পত্রটা তুমি সেদিনি পোস্ট করছিলে তোমার মেসের পাশের ডাকঘর থেকে।আমাদের মাঝে দূরত্ব ছিল দু'শত ষাট কিলোমিটার মাত্র।তবুও চিঠিটা পেতে আমার চার সপ্তাহ লেগেছিল।জানো!
যদিও এর আগেই পৌঁছেছিল-তোমার পরপারে চলে যাবার খবর।
পত্র পাবার পর তাই সেটা তৎক্ষণাৎ খোলার সাধ্য আমার হয়নি।

২.
চিঠিটা আঁকড়ে ধরে আমি খুব কেঁদেছিলাম।খাম খুলে পেয়েছিলাম-দুটো কাগজ।একটাতে লেখা-প্রিয়তমা! ভালবাসি।বাকি পৃষ্টা পুরোটাই খালি ছিল।আমার ইচ্ছে হচ্ছিল,আরো অনেক কিছু পড়ার।ওপারের কেউ এপারে চিঠি লিখলে যতটা উৎকণ্ঠা থাকা উচিত,আমি ঠিক ততটাই উদ্বিগ্ন ছিলাম প্রিয়।
অন্য কাগজটা খুলে দেখলাম,সেটায় অনেক কালো কালি।তুমি আগোছালোভাবে চিঠিটা ভরিয়ে রেখেছিলে-একরাশ অভিমান দিয়ে।

৩.
সেটাতে তোমার অধরের সুঘ্রাণ ছিল।আমরা কত শত বছর আগে চুমু খেয়েছিলাম।সে গন্ধ আমার নাকে লেগে আছে আজো।তুমি পত্রে কেবল একতরফা অভিযোগ আর আক্রোশ রচনা করেছিলে।কোনদিন কল্পনায় আলতো চুমু না খাওয়ার অভিযোগ। কোনদিন শক্ত করে জড়িয়ে না ধরায় ব্যাপক অভিমান। আমি সেসব পড়ে পড়ে লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম।রোজ শতবার পড়া হত  কাগজ দুটি।আমার মনে হত,এই বুঝি তুমি ছুঁয়ে যাবে আমায়।
মাঝে মাঝে বোকামি করি।রাতে ঘুম না এলে-তোমার মুঠোফোনে বার্তা পাঠাই।জবাব আসে না।মাঝে মধ্যে বিরক্ত হয়ে কল দেই।ওপার থেকে ভেসে আসে আমার প্রিয় কবিতা-"আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার। আমিও বিড়বিড় করে আওড়াই -"তোমাকে হারানোর পর আর কিছুই আগের মত নেই আমার"।
তুমি শুনলে হয়তবা অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে-"হাঃহাঃহাঃহাঃ"করে।আমিতো সে হাসির ভীষণ ভক্ত।
তোমার কল রিসিভ হয়না গত ছ'মাস।আমার বলাতেই তোমার বন্ধুরা সিমটা চালু রেখেছে।তারা আমাকে পাগল ভাবে নাতো? প্রিয়!

৪.
আমি জানি-মুঠোফোনের ওপাশ থেকে তুমি আর খোলা গলায় গাইবে না,অঞ্জন দত্তের ক্যালসিয়াম গানটা।কিংবা আবৃত্তি করে শোনাবেনা-"কেউ কথা রাখেনি...."।আর শহরের রাস্তায় গোল্ডলিফ হাতে সোডিয়ামের আলোতে তোমাকে বেকারত্ব উপভোগ করতে দেখা যাবে না।আমি এও জানি,বন্ধু মহলে তোমার কদর এক চুল কমেনি আজো।তবুও তুমি আড্ডা দিতে যাচ্ছ না ছ'মাস হয়ে গেল।আমায় কেউ আর "প্রিয়তমা "বলবে না সেটাও জানি আমি।

৫.
আমার আলনা-আলমারি সবি নীল ওড়না, পাজামা,ব্রা,সেলোয়ার,শাড়ী,ব্লাউজ, পেটিকোটে ভর্তি।মা বলেন-আমাকে নাকি নীল রোগে পেয়েছে।আমি ভ্রুঁ কুঁচকে মাকে বলি-"নীল পরে থাকা মানে হল,গায়ে আকাশ জড়িয়ে থাকা।এ রংয়ে পুরুষের কাম তীব্র হয়।খোলা চুলে এ রং পরে কারো সামনে দাঁড়ালে-অনেক কিছুই দাঁড়ায়।"মা বলেন -আমি নাকি বেহায়া হয়ে গেছি। প্রিয়।আমার নাকি বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬.
পরশু আমার বিয়ে।তোমার পুরান মেসের ঠিকানায় কার্ড পাঠিয়েছিলাম।পেয়েছ বুঝি?
সেটা দেখার পর নিশ্চিত তুমি আর মৃত্যুর ভণিতা করে থাকতে পারবেনা। আমি "কবুল!" বলার আগেই তুমি চলে আসবে এখানে।আর বলবে-"এই! ভোর? প্রিয়তমা!  চল পালিয়ে যাই।"আমি একটুও বিস্মিত না হয়ে বলব-"রুদ্র! তোমার কীভাবে আজো মনে আছে যে-আমার পালিয়ে বিয়ে করার বড্ড শখ ছিল!"

২১ পৌষ ১৪২২

চান্দগাঁও,চট্টগ্রাম

SHARE THIS

Author: