ফারহানা রহমান'র গুচ্ছ কবিতা












হ্যালুসিনেশন


আগুণটিপ পড়ে আছে দ্যাখো সান্ধ্যপ্রদীপ
আমার কপালের টিপ কেন খুলে নিয়ে গেলে?
সম্মোহিত হয়ে আছি
পড়ে আছে একলা আকাশ
এখন হ্যালুসিনেশনে-
লাল লিটমাস
নীল লিটমাস
ছেঁড়া ছেঁড়া অবয়ব গোধূলির বালিয়াড়ি ঝাউবনে;
সেখানেই গহীন জলপ্রপাতের মোহন হাতছানি,
বৃন্দাবনে অভিসারে গিয়ে জলকে নেবেছিলাম
সেই বাদলসন্ধ্যার দুরন্তপনা গিয়ে মেশে গেছে ফেনায়িত তরঙ্গে,
রৌদ্রের নৈঃশব্দ্য জলরং একে দেয় গুল্মবনের গায়ে;
তৃষ্ণা জেগে আছে চঞ্চুদের বেতফল চোখে, নগ্নচিকন সাদা মনে...
বৃষ্টিরা অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে 
তাদের পাঁজরে অযাচিত দীর্ঘশ্বাস

আমাকে অবাক করে কে যেন খুলে নিয়ে গেছে পুরাতন সেই লেডিরিন্থ বিষণ্ণ স্বপ্নের অন্তর্বাস  


পতঙ্গের গুঞ্জন


অন্ধ কি পায় আলোর দেখা? জেনে কি হবে? শঙ্খের নিনাদ যেখানে উচ্ছ্বসিত হয়, আমার নৈঃশব্দ্যের ব্যাঞ্জন গিয়ে মেশে সেখানেই পতঙ্গের গুঞ্জনের মতো ছুটে চলা দুর্বার  ঝর্ণার মতো  কামিনীফুলের তীব্র আঘ্রাণ আমাকে ঘর ছাড়া করেছে বুঝতে পেরেছি, বিষণ্ণহৃদয়ের মানুষ বড় বেশী বিপন্ন ও বিবর্ণ হয় আমি এখন চেরির মিষ্টি সুবাস ভালোবাসি  পাতা ঝরার মৌসুমে যদিও বৈরাগ্য আসে মনে ভ্রমণের নামে বাড়ি ছেড়েই দেখেছি পথঘাট সবই অচেনা এদিকে জ্যামেতিক হারে অবক্ষয় বাড়ছে ক্রমশ মহাকাশ ভ্রমণে আমার রুচি নেই আদিম পর্যটক হবোনা তবে প্যাসিফিক ও  আটলান্টিকের সঙ্গে যে গ্যালাপাগোস দীপপুঞ্জ আছে সেখানে যেতে পারি যদি তুমি সঙ্গী হও



মিষ্টি বিকেল মেয়ে


দুষ্টু সন্ধ্যে ছেলের ভ্রু পল্লবের ইশারায় দূরদুরান্তরে হারিয়ে গিয়েছিলো একটি মিষ্টি বিকেল মেয়ে হেমন্তের ঝরাপাতায় পেয়েছিল অদৃশ্য প্রেমের চিঠি প্রতিটি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিলো নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ আমি চললাম বলে হাওয়ায় ভেসেছিল নীল জামদানী শাড়িমেঘের দুরুন্তপনা ভেজাচ্ছে মন নীল নীলিমায় মিষ্টি বিকেল মেয়ের দীঘল নীল নয়নে এতো বৃষ্টি ছিল কে জানতো? সরিষা ক্ষেতের শেষপ্রান্তে হয়তো কোথাও রেলক্রসিংএ সূর্য মাতাল হয়ে ঢলেঢলে পড়ে পশ্চিমের গায় প্রেমের ক্রসকানেকশনে দিব্যি ওড়ে মন সময় দুলে দুলে ওঠে পেন্ডুলামের মতো সিঁদুরে গোধূলি মেখে সন্ধ্যার তরে এমনই সমর্পণ? কে কবে দেখেছে প্রেমের স্রোতে ভেসে এমনই গোপন নিঃশব্দ মরণ? কখনো কোথাও কেউ জানতে পারে নি, মিষ্টি বিকেল মেয়ে কেন এতো ভালবেসেছিল দুষ্টু সন্ধ্যে ছেলেটিকে?



জলাতঙ্ক


প্রেমের পাপিষ্ঠ কামড়ে
জলাতংকের আতংক থাকে,
নলি চেরা তৃষ্ণায় জ্বলে লিলি আগুণ
শ্মশানের চিতায় নিশ্চিন্ত ঘুমায় লেলিহান;
শেষ বৃষ্টি হয়েছিলো কবে?
বিষাদ সাহারার ক্যাকটাস হৃদয়ের গভীরে;
শেষ পাতাটি ঝরে গেছে
কোন বসন্তের বুকের নিবিড়ে?
পিচুটির মতো জমেজমে অন্ধ হয়েছে
অপেক্ষায় থাকা প্রসন্নতা,
নিরলিপ্ততা-
অল্প কিছুটা সাদা ছাই পেয়েছি
দুরন্ত ক্ষোভে মশাল জ্বেলে ;
কিছুটা দূরে একটি নিও লিথিক পাথর পড়ে থাকে
ইদানীং মিথ্যে নাটকগুলো ভালোই জমছে
এককাপ ধূমায়িত কফি খাওয়ার পর

ফিল্ম উৎসবের শেষ সিনামাটা না দেখাই থাক

SHARE THIS

Author: