অশব্দ সন্নিবেশ
স্মৃতিগুলো ভেসে চলে জ্যামিতিক জীয়নে।
তন্ন তন্ন করে খুঁজে আনে বিভ্রান্তি,
সময়ের শামুক, সন্ধ্যামণি।
আরো থাকে; হাতে তুলে আনা হেঁয়ালি অন্ধকার।
শহুরে সংকেত জানায় -
সমুদ্রের বিপরীতে অন্ধ ডোবা
আর পঞ্চমীর কাটা চাঁদে
দিগন্তের দূরত্ব যেখানে হয়েছে বিলীন।
আহা! সেদিনও কি শঙ্কিত ছিল অবিরল জনতা?
জলচর পাখিরা যখন নেমে পড়ে বিলে নিরন্তর
মীমাংসায়।
আজ তবে থাক সেইসব শৌখিন শঙ্খ।
ধ্যানমগ্ন পাহাড়ের পঙক্তিরা নেমে পড়ুক
মধ্যরাতের চিবুকে -
মৌনতায়, নিঃশব্দে।
প্রিয়’র জন্য
আকাশের কান্নারা থেমে থাকে।
কি আছে যখন দেখি দেয়ালের সংরাগ,
বাবুইয়ের বিবশতার বর্ণ।
কিংবা সৌন্দর্যের কাছে যারা অন্ধ-বধির;
প্রবেশের অনধিকারে স্বল্পমূল্যের শূন্যের
সেখানে হাতড়ে বেড়ায়
নিরাবয়ব নির্জনতা।
প্রতিবেশী প্রতিবিম্বে তারকা মানুষেরা
প্রতিদিনই করে চলে প্রিয়’র জন্য লড়াই।
অথবা শুধু প্রশ্নহীন অতীতে প্রস্তুত হয়েছে
অচেনা প্রবল।
ও মন, ওই নিবিড় নির্বাণে আমাদের হাতে থাকুক
গুচ্ছ গুচ্ছ রাধাচূড়া, সোনালু হলুদ।
আমি
বৃহত্তর বলয়ে কি থাকে মানুষের অভিন্ন
অস্তিত্ব?
ব্যক্তিগত নিঃশ্বাসের নৈঃশব্দ্যে ক্রমাগত বলে
চলে-
"এই আমি"।
দুটো আয়নায় দাঁড়িয়ে পড়ে মুখোমুখি স্মৃতি,
যেখানে ভবিষ্যতগুলো ঘুরেই চলেছে
অনন্তকাল ধরে।
সৃষ্টির আদিম মুহূর্তে নিজস্ব প্রথম কান্না
শুষে নেয় সমুদ্র যেমন,
অথবা যে জগত ফুরিয়ে থেকে যায় স্মৃতিকাতরতার
স্রোত।
অন্তহীন পরাজয়ের সুরে
নিজের ভেতরেই ক্রমশ বেড়ে ওঠে পরজীবী ভয়।
এইসব পরস্পরবিরোধী সত্যের শেষে
মোহভঙ্গের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে খুঁজে চলে-
মহাপ্লাবনে হারিয়ে যাওয়া পর্বত,
মুখরিত মুখতারান।
যুদ্ধদিনের কথা
সহজ ঘটনা ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল স্বাভাবিক
নিয়মেই।
রোদের বেলায় দিগম্বর বসে থেকে
ঘুমের রেশে নিধন হয়েছে সোনালী পিঁপড়েরা।
গ্রন্থাগারের হলুদ কোণায় খয়েরী প্রজাপতি মৌন,
অথবা স্মৃতিময় ক্যালেনডোলার ক্যানভাস।
একদিন প্রাচীন একটা জলাভূমির মধ্যখানে
হারিয়ে গিয়েছিল আমাদেরও গ্রাম;
যখন কামান-বন্দুক নিয়ে মহড়া দিতে দিতে
বিলম্বিত হিসেবের হোলে,
দেশত্যাগের সুরেলা কান্না
হয়তো অতীতের দিকেই নিয়ে যেত আমাদের।
এখানে কেউ এসে মাটির অংশ হয়,
কেউ হয় ইতিহাসের।
এক নিভৃত কৃত্যানুষ্ঠানের ফাঁকে
সৃষ্টির জ্বলন্ত প্রতিবিম্বের বেশে ওরা আসে।
এমনই বিশিষ্টতা সেই নৈঃশব্দ্যের!
আর সেদিন ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়েও
সান্ত্বনাহীন শোক আর করুণার উত্তপ্ত কয়লা-
বিস্মৃত বিকেলের পোড়াকাঠামোয় খুঁজে চলে
অরণ্যে ক্লান্ত অভিযাত্রীর অভিমান।
থেকে যায় এক রহস্যময় প্রতিষেধক,
রক্তাক্ত কার্নিভাল,
দুঃস্বপ্নহীন স্বপ্ন,
অনিঃশেষ স্নান।
আর যা কিছু ঐহিক ,
শিশুর মতো ছুটে আসা সমুদ্রের ঢেউ।