চৌধুরী ফাহাদ এর ২৫ কবিতা | জলফড়িং | সাহিত্য ওয়েবজিন

ওমগন্ধঘ্রাণ

আমার আলাদা কোন সঞ্জীবনী নেই
আমি জন্মেছি যেখানে
যেখানে বেড়ে উঠেছি
তার পাশে কোন নদী ছিলোনা
কোন শহর ছিলোনা
হাইওয়ে ধরে একেকটা বাস
অনেকগুলো জীবনগল্প নিয়ে
ডুব দিতে যেতে দেখেছি সমূদ্রে
তাদের ফেরার সাক্ষীও ছিলাম প্রতিদিন
কেউ কেউ অবশ্য ফেরেনি কোনদিন
সেই সব ইতিহাস এখনও রহস্যাবৃত!
আমি যেখানে জন্মেছি
যেখানে আমার গাত্রগঠনের দৌড়ঝাঁপ
সেখানে অবাক বিস্ময় পল্লবে জেগে উঠে
 
সূর্য ওঠা দেখতে গেলে পাহাড় দেখেছি
সূর্যাস্ত দেখতে গেলে আকাশ
এখানে কোন ঐতিহ্য ছিলোনা
না কোন বড় কুঠি
ফসিলের মতো কোন রাজবাড়ি
আশপাশের ষোলটা অঞ্চল চষেও চোখে পড়েনি
নদীতীরে ধারন করে চলেছি জীবন
আহ জীবন!
বাড়তে বাড়তে যেখানে বয়ে চলেছি
ধুসর সে আপন অবাক জৌলুসে
 
সবুজ দেখিয়ে লক্ষ মৃত্যু রেখে যায়
 
যেখানে যাপন
 যেখানে ধারন যেখানে অর্জন
তাকেও চিরন্তন করে নিতে পারিনি
এক একটা দিন খাঁচাবন্দী রঙিন
এক একটা রাত কারুময়তায় মলিন
শেকড় না উপড়ে এখানেই শিকড় পুঁতে চলেছি
অথচ এটাও আমার সঞ্জীবনী নয়!
আমার আলাদা কোন টান নাই 
একটাই প্রাণ নিয়ে অথবা দেহে
ফিরে যেতে চেয়েছি
যেখানে জন্মেছি
যেখানে বেড়ে উঠেছি
সেখানে কোন নদী নেই
অথচ জল উর্বরা
যেখানে সূর্যোদয় দেখতে গেলে পাহাড়
যেখানে সূর্যাস্ত দেখতে গেলে সবুজ
 
সেই ওমগন্ধ গ্রামে!
আমার আলাদা কোন সঞ্জীবনী নাই
আমার নতুন করে কোন অপূর্ণতা নাই
 
প্রত্যাশার মত গভীর বুকে
ধরে রেখেছি শুধু একটাই তৃপ্তির শেষ
যেতে যেতে শান্তির নিঃশ্বাসে যেন চিরচেনা টানে
ডুব দিতে পারি সেই জন্মে
 
সেই ওমগন্ধ ঘ্রাণে!


বিজ্ঞপ্তি

হৃদয়ের জন্য এক নগর চাই
নগরের মালিকেরা চোখ রাখুন-
সময়ের পর্দায়
চোখে চোখে দিতে পারেন নগরের অনুলিপি
 
অপেক্ষায়...
তার আগে জেনে নিন 
এই হৃদয়ের কোন নাগরিকত্ব নাই
নিতে নিতে জীবন-বাস্তুভিটায় কবিতার ছাই
প্রযোজ্য শর্ত হৃদয়-
নগরের না হোক হৃদয়ের প্রবেশাধিকার চাই


অনাঘ্রাত

পরস্পরের নাম না জেনে তারাগুলো
শত-সহস্র বছর ধরে একে অন্যের মুখ দেখে যাচ্ছে!
কোন খেদ নেই ঘুর্ণনে,
 কোন ক্লান্তি নেই আত্মরমণে!
সব নাম নিয়ে একা চাঁদ, কী দারুণ অসহায়!
ফিরতে পথে ফিরে ভেঙে গড়ে আঁধারে,
 দারুণ অসহায়!
ভূগোল তার নাম ভূমিকায় প্রাণেও গোল!


আমার কোন শাখা নেই

আমার কোন শাখা নেই
আমিই তোমার অবিন্যস্ত বর্ণচাষ
এক একটা মাছি উড়ে গেলে জানি 
মধুবন ক্ষয়ে গেছে
ক্ষয়ে গেছে গহীন আলো
তলানীর মেঘ জলে জ্বলে অনল
ভেতরে শিকড়,
 উড়ে গেলে হৃদমাছি 
জানি ক্ষয়ে গেছে মধুবন,
 নড়বড়ে ভেতর
তোমার আগুনে পুড়ে আমার কিছু নাই
এখন আমার হৃদয়ের উজান বেঁচে খাই


যাপনকাল

মৃত্যুর জন্য একটিও কারণ খুঁজে পাইনি বলে 
এখনো বেঁচে আছি এই!
ঘৃণা করার মত একটা জীবনও পাইনি বলে
এখনও ভালবাসছি
প্রিয় বেঁচে থাকা-প্রিয় শ্বাস, ভালোবাসা!  


অদৃষ্ট

দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ঈশ্বর!
তুমি ভিক্ষুক ভেবে বললে-
'ক্ষমা করো'
যাও-
দ্যাখো অন্যকোথাও!
ঈশ্বর সেই! অচিরেই অপার শূন্য আকাশ,
মাটিতে বুক পেতে কাঁদে মাটির দীর্ঘশ্বাস!


একলব্য

ছারপোকা ভেবে একদিন 
নখের আঁচড়ে আঁচড়ে তুলে ফেলবো আঙ্গুলের তিল,
আমার।
 
এরপর স্নায়ুদাহে এক এক করে কাটবো
বিদগ্ধ আঙ্গুল,
তারপর যন্ত্রণাকাতর হাত।
 
এসমস্ত আত্মহননের পর বেণুদগ্ধ আত্মচিৎকারে একদিন আরও
ছারপোকা ভেবে
 
কেটে ফালি ফালি করবো নিজেকে,
 
জন্মবদ্ধ রূপকথার সঞ্চয়ে দেহ-বিচ্ছিন্ন সাকুল্য হৃদয়-
তারপর,
তোমার হাতে তুলে দিয়ে বলবো সেই একদিন-
'পোকায় খাওয়া অযত্নতুল্য প্রেম,
 এই হৃদয়ের মত রক্তাক্ত নয়'!


আত্মজৈবনিক

এই আমি খলবল বুকের কথা
কত কত রাত ধরে কত কত রূপ উগড়ে দিয়েছি পাতায়
সে জানি আমারই কথা ছিল,
 ব্যথা ছিল
আমারই প্রলাপ
কত কত পঙতি কত কত ভেদ
এঁকে এঁকে ছিঁড়েছি ছবি
সে জানি আমারই প্রাণ
সে আমি আমারই বিরান
জেল্লাতি ছিল না তার কুমারী বর্ষার
সতিচ্ছেদ করে গেছে কবে অনিরুদ্ধ সন্তান
সে জানি চোখের দাহ
সে জানি হৃদয় দ্রোহ
কত কত বার লিখে চুপসে গেছে চোখ
কত কত জল নিজের হাতেই মুছে নিয়েছে অসুখ
সে জানি আমারই প্রেম
সে জানি আমারই ভ্রম
হৃদয় মোহ ভেবেছে তবু
কোথাও তার ছিল কবি সংসার
অথবা জলান্তিক কবিতার
সেই যে উড়ে গেল পা ভাঙা প্রজাপতি
সেই যে কবি এসে জানিয়ে গেল কবিতার ক্ষতি
হৃদয় আছে,
 রোদন-মন্থন আর কিছু নেই, আর কিছুই নয়
চুপসে গেছে পাতা ভেজা খাতা
সে জানি আমারই প্রাণ
সে জানি আমারই শ্মশান
 
কামরূপ পাতার রসে সেই তো অরূপ-
মূক শ্রাবণে জমুক কথা
কেউ না জানুক ভাষা
কেউ না জানুক আশা
রাত পেরিয়ে এসেও ঘুমাক সে খলবল চাষা
সেই তো স্বরূপ জমুক ব্যথা
কবিতা কবি'রা লিখুক
কবি সঙ্গ'রা পড়ুক,
 লিখুক
নিঃসঙ্গরা নয়,
 নিঃস্বরা নয়...


মুখোশ

এক একটা প্রাণ, জীবন নিয়ে শুয়ে আছে পথে
দিনে রাতে-
অনুক্রমিক ঋতুতে!
আমি তাদের নাম জিজ্ঞেস করিনি কখনও, কোনদিন!
আমি ভাবছি আমার গায়ে সাদা জামা-
হৃদয়েও!


এক পলক

বেঁচে থাকো হে মুগ্ধতা প্রাণের! 
ঝটিকা হাওয়ায় হঠাৎ অবাধ্য চুলের উড়ানে,
পাঞ্চক্লিপ ভরা সাদাসিদ্ধ বেলীর ঘ্রাণে
অথবা গোলাপ রিক্ত রঙিন টানে!
বেঁচে থাকো হে বিস্ময়,
 চকিত চমকে উঠা কাজল চোখে!
বৃষ্টিধারায় ধুয়ে নেয়া নরম দুঃখের সুখে
অথবা ঠোঁট চুয়ে ফোঁটা রক্তিম আভা পাললিক অসুখে।
বেঁচে থাকো হে মুগ্ধতা জীবনের!
চোখের গভীরে দৃশ্যভরাট হৃদয়ের আলোড়নে
দ্বিতীয়-তৃতীয়বার ফিরে চাওয়ার আহবানে,
 বেঁচে থাকো হে!


ভ্রম

সেদিন একদিন অপেক্ষায় ঠাই দুপুরে কেটে গেছে বহুদিন!
আচমকা হাওয়ায় চেনাঘ্রাণে অবাক ফেরি দেখি-
আলোর ওপাশে কেউ নাই...
প্রতীক্ষাঘন বিকেলের বেঞ্চিতে নেমে আসে অপার আকাশ-পথিক চোখে জীবনের সাইরেন!
সেদিন একদিন ঘাঢ় রাত্রির ঝালর ছায়া বিছানায়
স্মৃতিক্লান্ত রমণে কেটে গেছে হলুদ ঘোরের বহুদিন!
আচমকা জোছনার গ্রাসে চেনাটানে ফিরে দেখি চোখের ওপাশে কেউ নাই.


বন্ধুর জন্য এলিজি

একটা বন্ধু পথে
পিছনে পড়ে আছে-
তার জন্য জল,
 তার জন্য মায়া, 
পুড়ে খুব!
একটা বন্ধু অনেক সামনে, 
এগিয়ে বহুদূর-
 
জ্বলছে ভেতর-দগদগে ঝড়!
এখানে ঈর্ষারা ঈশ্বর-
না চাইতে হলুদাভ সে ঘর!
একটা বন্ধু পাশে
আছে,ছিল-
রাখি নাই সে খবর।
 
একটা বন্ধু পাশে ক্ষয়ে বেখবর
ফিরে ফিরে আসে পাশে-থাকে,
আহ জীবন!
হৃদয়ে হৃদয় অবাক পরিচয়
ভাসলেই শোক তার,
 ডুবলেও মূক আঁধার,
দৃশ্যমান সহচর,
 সুহৃদ ছায়াও পায়না আদর!
হায় হৃদয়! বহতা টানের এমনই পোড়া গান, 
ঈশ্বর পুড়ে বুকে,
 ঈশ্বরে উড়ে-ঈশ্বরেও অভিমান!


বৃক্ষের জন্য প্রার্থনা

এখনও স্ববিরোধী হাওয়ার মত কিশোর, আমি
নিজের ছায়া দ্যাখে খোলা জানালায় দোলে উঠি পর্দার মত
মৌনতাধীর এক অনাদি প্রান্তরে আকাশমুখী পথে
কোন এক যৌবনে বৃক্ষ হ'বো
পথিকের আলোজলঘন হৃদয় কাহন এঁকে পত্রপল্লবে
সাক্ষী হ'বো জন্মান্তর ইতিহাসে
মানুষেরা পা'য়ে পা'য়ে বড় চঞ্চল
মানুষেরা মানুষে চোখে-বুকে অচল
 
মানুষের বুকে মনুষ্য বেদনার হলাহল
কোন এক জন্মে বৃক্ষ হ'বো


যেমন আমরা

খুন হয়ে যায় আলো-রক্তসন্ধ্যা, কেউ মুখ খুলছে না
রাতের বুকে শহর, শহরের বুকে মানুষ
মানুষের বুকে রাত,
 রাতের বুকে শহর
কেউ ভাঙছে না কাউকে, কেউ গড়ছে না কাউকে
চোখ আঁকছে হৃদয়, হৃদয় আঁকছে আলো
আলো আঁকছে জল,
 জলে ভাসছে জীবন
কেউ কাউকে ছুঁড়ছে না, কেউ কাউকে ছুঁয়ে দিচ্ছে না
শহর ডুবছে শহরে, আরও গভীরে রাত
মানুষ উড়ছে হাওয়ায়,
 তার গভীরে ঘাত
কেউ কাউকে জানছে না, কেউ কাউকে লিখছে না


হৃদয় বিষয়ক

গল্প বলতে গেলেই ইতিহাস হয়ে উঠে প্রেম!
ভালোবাসা হৃদয়ের ঘাস,
যাবজ্জীবন জাবর কেটে যায় বিম্বিত মন!
সেই সব হৃদয়ের কথা মনে পড়ে
জীবন ভেবে যারা হৃদয় কেঁটে রেখে গেছে জীবন
বলা হয়নি কিছুই তার
অথচ-
শূন্য নয় এই হৃদয় আধার
তাদেরও ছিল বর্ণীত অধিকার
স্মৃতিতেই আঁকি
আমাদের গোপন গ্রামে কত চোরা পথ চলে গেছে নদীর পাড়
বারবার ভেসে বারবার আসি ফিরে
সেই পথ ধরে চুম্বন এঁকে চুম্বক নিয়ে গোপন গ্রাম
নদী!
 তাকেও হৃদয়ে আঁকি
জলের গভীরেও তার উড়ে কত পাখি!
গল্প বলতে গেলেই ইতিহাস হয়ে উঠে স্মৃতি
ভালোবাসা হৃদয়ের ঘাস
প্রেমে-অপ্রেমে যাবজ্জীবন হৃদয়ের জাবর কাটি!
এক দেহসাল কতবার এভাবেই নাকাল
কতবার প্রেম জেগে,
 প্রেম এঁকে
সব নিয়ে শুধু ভালোবাসা রেখে যায় জানে অন্তর্যামী...
গল্প বলতে গেলে গল্পই থাকে ক্যাবল
হৃদয়!
 গল্পের মতই নিপাট ভালোবাসায় বহুগামী...


দেয়ালের কানের প্রতি

আমার মন্দ উপখ্যানের তারাই সঙ্গী ছিল

যারা এখনও মূলত শুদ্ধ মানুষ!
বলা হয়নি কিছুই
তাদেরকেও
অন্যকানও জানে নাই এমন,
 এই স্বর নি:সৃত অর্গল
অথচ-
এরমাঝে বহু প্রেমিকা আমার অপ্রেমে নাম পেয়েছে মুখে মুখে
সেইসব প্রণয়ীরা নাম ভূমিকায় আঙুলের অধিক কড়
আমার মন্দ উপখ্যান লিখে দিচ্ছে সেই সব সঙ্গী
যারা এখনও মূলত আলোর মানুষ!
অন্ধকার লিখে নামের আগেপিছে
কেবল জানা হয়নি অসুখে রাঙিয়ে আলো শুদ্ধতায় কেমন সুখ!
কখনও কি পোড়ায় বোধ!
আমার হৃদয়ের উপখ্যানে জড়িয়ে সেইসব শুদ্ধ মানুষ
আমি নিজের নামের সাথে নিজেই লিখেছি মন্দলোক!


আমাদের আত্মজীবনী লিখুক অন্যকেউ

একপোড়া চাঁদ পেরিয়ে যাচ্ছে আকাশ,
অসহ্য দীর্ঘ মনে হয় এই চুমুহীন ভালোবাসার রাত।
বুকের হলাহলে জমছে আঁধারের দেনা, 
আমরা ভবিষ্যৎ আঁকতে আঁকতে অতীতে নামছি।
 
হৃদয়ের পারাপার এক নির্জন জলের সন্তরণ,
আমরা অতীত খুঁড়তে খুঁড়তে লিখছি জানালাহীন ঠিকানা!
ভঙ্গুর জলাঙ্কের ইতিহাস একবার জেনে গেলে জীবন
দ্বিগুণ তাপে ঘামে অনধিকার মরণ,
জোছনার মুখ জুড়ে ঝুলে থাকে অশ্লীল আঁধারের নিমন্ত্রণ।
 
এক দীর্ঘশ্বাসী আকাশ পেরিয়ে যাচ্ছে পোড়াচাঁদ
অসহ্য লাগে এই স্পর্শহীন দীর্ঘ ভালোবাসার রাত!
এইসব দূরত্ব ভেঙ্গে অশতিপর ভোরে
চল,
মরে যাবার আগে ঘুমিয়ে পড়ি!
আমাদের আত্মজীবনী লিখুক অন্যকেউ..


ঊর্ধ্বপতন

এই মেয়ে শোন
শুধুই প্রেমিক ভেবো না আমায়
আমি পাখির মত ফিরে ফিরে আসি আকাশের পথ ধরে দেখবো বলে
তোমাকে,
তোমার প্রেমে-অপ্রেমে
অহর্নিশ মোহে আরোহণ খুঁজে যাওয়া ফুলের মতন প্রস্ফুটিত নয় সে 
প্রেম
ধুকপুক ধুকপুক বুকে বিস্ফারিত আবেগের
যদি প্রেমে পড়ি আবার 
সুকোমল আকাশের মত বারবার পড়ি প্রেমে
তোমার প্রেমে-অপ্রেমে
সহস্র চুন্নির হৃদয় স্ফুরিত স্ফটিক চোখ তোমার
শিখিয়েছে ভালোবাসা
মুখ খুললেই ফাটে ঠোঁটে চারকোটি বছরের পুরনো ফসিল
সমুদ্র গর্ভে রক্ষিত নীলকান্তরঙ
জলের অতল ফুঁড়ে শুনেছি জলতরঙ্গের ডাক
 
মাতঙ্গ ইচ্ছেরা তবু শিকড়ে ফিরে যায়-নির্বাক
সব রাতে রূপকথা থাকে না
অনির্ণীত বলে হৃদয়ের পাশা ফিরে ফিরে আসি এই হাওয়ায়
নিস্তরঙ্গ ঠোঁট নিমন্ত্রণ দিয়ে রাখে প্রতিবার-ভাষাহীন
নিদাগ মেঘের মত ঘনীভূত আবেগের বিদগ্ধ প্রতিফলক 
তোমার ওই চোখ,
 
ভালোবাসায় বলে ভালোবেসে যাই
আমি কেবলই প্রেমিক নই
জানো তো,
ভালোবাসা মানে শুধু তোমার দিকে যাওয়া নয়
যদি প্রেমে পড়ি আবার
এই শোন মেয়ে,
 
আমি সেই প্রেমিক নয় যে মেঘ নিয়ে তোমার উঠানে রেখে যাবো ছায়ার মত রাত!
লুণ্ঠিত আকাশ জুড়ে যে সীসার প্রলেপ ধোঁয়াটে ধাঁধাঁয় রেখে যায় সংশয়
আমি সেই জল নই যে ঝাপসা বাষ্পে আড়াল করে নেব দিগন্তজুড়া সম্ভাবনা
উড়ু হাওয়া ঝটিকা সফরে এসে সরিয়ে নিয়ে যায় সব মেঘ যেমন
আকাশের মত আমিও জানি বুকে ধরে রাখার মন্ত্রযতন
যদি প্রেমে পড়ি আবার-পরবর্তীবার
শোন মেয়ে,
এইসব আঁধার-গভীরতর জলের ব্যাকরণ,
 
অজুহাত মাত্র
পৃথিবীর সকল হৃদয়ের উড়ান ভোরের দিকে..


অনির্ণীতা

অনির্ণীতা,
নাম ভূমিকায় তুমি ছিলে
আমি হাওয়া...

তোমাকেই বলেছি প্রিয়কথা,
হাওয়ার বুক ঝেড়ে তুলে আনি প্রেম
প্রিয়কথা,
তোমার চোখের জলে দেয়া নাম
কী অবাক! জলের রঙে তুমি বিধাতা!

কবিতাই ঈশ্বর আমার-যা তা
কবিতায় তুমি-আমি হাওয়া
অনির্ণীতা, তোমার নাম ভূমিকায়
আমি মেঘ-আমি জল-শূন্য মাদল

প্রিয়কথা, তোমাতেই বিলীন ঐশ্বর্য
তুমি বললেই আমি অন্ধ
তুমি বললেই আমি বধির
তুমি বললেই আমি বোবা
ত্রাতা তুমি-কবিতাও তুমি
তোমার চোখের জলে দেয়া নাম
কবিতার মত বিধাতা

প্রিয়কথা,
নাম ভূমিকায় তুমি আছো
ঘ্রাণে-আঘ্রাণে নিঃশ্বাসের চরণ
আকাশ দেখি-আকাশও তোমার মতন
নির্ণীত প্রিয় হেম তুমি
আমি হাওয়া...

ওবেলার মাঠে তোমাকে দেয়া আঘাতে
জ্বলে সূর্যকাল-জ্বলে যাপিত ঢাল-মহাকাল

নাম নিয়ে তুমি জলের আধার
আঁধারের মেঘে মেঘে শঙ্কিত সংসার
আকাশ ভেঙ্গে জ্বলে হৃদয়-আকাশও তুমি
সুহৃদ ঝরাতলে অবোধ বিধাতা
অঙ্কিত শ্রাবণে আমার নিমগ্ন আহার
ভাসান মেঘে ডুবে ডুবে থাকে নীল হৃদয় 
অনির্ণীত তুমি-আমি আছি নির্ণয়ে
ভালোবেসে হত্যায় বিধাতা ভালোবাসা

প্রিয়কথা,
ভালোবেসে জেনেছি ভালোবাসা
হত্যাকারীর মত সর্বনাশা...


নবনীতা

নবনীতা, সুবর্ণসুযোগ গুলো এক এক করে
তলিয়ে গেছে পদতলে-
প্রতিদিনের সন্ধ্যায় ডুবে যাওয়া সুর্যের মত!

বাড়ানো হাতের পাজার এতোটা ক্ষমতা ছিল না,
গোলক ঐশ্বর্যকে তেজ হারিয়ে করুণ মুখে
মিশে যেতে দেখেছি দিগন্তে
চুপচাপ জীবন দেখেছে সময়ের পরাজয়।

সাধ্যের বাইরে স্বপ্নরা জেগে ছিল ঘুমচোখের পাতায়
সামর্থ্যর দন্ডে সুবর্ণরেখা শেষ হাসি হেসে
বারবার ডুব দিয়েছে অনিচ্ছার উপহাসে!
অদ্ভুত হৃদয় এক; ক্ষীণ নিঃশ্বাসেও স্বপ্ন অনিঃশেষ!
বারবার মরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আবার মরার আকাঙ্খায়
জলের মত জ্বলে সলতেতে জল নিয়ে জ্বালার
জ্বালিয়ে রাখে শেষ না হওয়া শেষ আলোর সীমানা
বারংবার নিঃশেষ হবার নেশায় হাত রাখে আগুনে।

বিশ্বাস রেখো নবনীতা পদতলে পিষ্ট সুবর্ণগ্রামের মাটি খুঁড়ে
পরাজিত প্রাচীন আকাশে টেনে সোনালী স্বর্ণমন
ঠিক ঠিক ফিরে আসবো আবার তোমার সুবর্ণরেখায়।
বিশ্বাস রেখো নবনীতা ডুবে যাওয়া সুর্যকেও একদিন
তোমার আঙ্গুলের শিরা রাঙ্গাবো ইচ্ছের দসখতে।


স্বদেশ

কে তোর আল ধরে দিয়েছিল দৌড়
উপোষী দুপুর-লৌহপূর
নির্ঘুম ভোর-ক্লান্তিহীন উথাল সমুদ্রুর
 
মিশমিশে রাতের সুদুর-ছিনিয়ে আনতে সুর
 
মনে আছে?
কিছু নিয়েছে কী নিল না
নতুন করে লিখতে ঠিকানা,
 খালি হাতে অজানা
ঝাপিয়ে দিল প্রাণ,
 মাটির নাম 
মা'য়ের টান-মুক্তির গান
মনে আছে?
 মনে আছে??
কে তোর বুক ধরে দিয়েছিল দৌড়
কে তোর জলে পুড়ে জ্বালিয়ে হল ক্ষার
 
মা তাঁর নাড়ীর আদর করলো উজাড়
মনে আছে?
 মনে আছে?? মনে আছে???


চিঠি

তোমাকে লেখা সেই চিঠির পরে
আর কোন শব্দ আঁকিনি জানো?
আর কোন হৃদয় উগড়ে দেয়নি কলম
আর কোন ব্যাথায় নীল হয়নি পাতা
তোমাকে লেখা সেই চিঠির পরে
আর কোন কাগজ খুঁজে পায়নি ঠিকানা
প্রেরক ও প্রাপকের স্থানে তোমার আমার নাম খুঁজে
চশমার ঝাপসা কাঁচ মুছেনি আর কোন পোস্টমাস্টার
দূর থেকে লাইন দেখেছি শুধু পোস্ট অফিসে
তোমাকে লেখা সেই চিঠির পরে
অনন্ত মহাকাশ ডুবে ডুবে ভেসেছে কতবার
আলো-আঁধারির নির্ণীত ঘূর্ণনে
কতবার সান্ধ্যফেরা কোন পালকের উড়ান দেখে
উল্টে দেখেছি পুরনো খামের স্তূপ
বিস্মৃত নয় এখনও সজীব সে কালির ঘ্রাণ
হৃদয় ভাগ হয়ে যাওয়া পথের মিহি জলে
 
সেই ঠিকানা,
 সেই অপেক্ষা দাঁড়িয়ে আছে 
কোন শব্দ আঁকিনি আর,
 কোন হৃদয়ে
তোমাকে লেখা সেই চিঠির পরে...


বিভ্রান্তি

বিগত বিষন্নতার গল্পগুলো নিয়ে 
আমি
তোমার দিকে যেতে যেতে তোমার আড়াল হয়ে উঠি
আমাকে পুরুষ করে তুলে প্রেম
আমাকে পুরুষ করে তুলে মানবী
আমাকে পুরুষ করে তুলে গোলাপ
তোমার দিকে যেতে যেতে বিগত বিষণ্ণ গল্পগুলো
আড়াল হতে হতে ফুল হয়ে উঠে দেয়ালের এপাশ
আমাকে প্রেমিক করে তুলে ফুল
আমাকে প্রেমিক করে তুলে উড়ু চুল
আমাকে প্রেমিক করে তুলে
গল্পেরও আড়াল থাকে, থাকে অস্তাচল 
ওখানে নিমলীত জল-
 রঙের খলবল
বেদনার মুখ ভরে উঠে নবীন পত্রপলল
বিষণ্ণতার গল্প নিয়ে তোমার দিকে যেতে যেতে আমি হৃদয় হয়ে উঠি, 
গল্পের গভীরে গল্প আঁকে ফুল,
 ফুলের অগোচরে তুমি হৃদয়ের হয়ে উঠো..


তার জন্য হৃদয়ালেখ্য

আমি সেই সব মেঘের কথা জানি 
যারা আকাশকে ভালবাসতে গিয়ে আকাশের অপেক্ষায়,
 
মাটির ভালোবাসা পায়নি।
অথচ মাটিই তাকে বুকে ধরে ঘুরে চলেছে আজন্ম সূর্যপথে!
আমি সেই সব হাওয়ার কথা জানি
যারা ভালোবাসা নিয়ে বুকের সীমান্ত পেরিয়ে হৃদয় আলিঙ্গনে
অপেক্ষায় অপেক্ষায় নাম নিয়েছে দীর্ঘশ্বাস,
নির্মেদ আবেগে মিশে গেছে ছায়ায়
ছায়াও হয়নি জীবন!
আমি সেই সব জলের কথা জানি
বুক থেকে উঠে এসে পাণ্ডুর মাদল হাতের প্রতীক্ষায়-
পুড়ে যায় স্পর্শহীন-
পোড়ায় ধোঁয়ায়!
 
চোখ থেকে চোখে,
 রক্তে হৃদয়ের অসুখে
অথচ তারও প্রেম ছিল,
 প্রেমের জন্য সে ছিল!
সেই সব জীবনের কথা জানি
হৃদয়ের জন্য বন্য সে,
 হৃদয়ের জন্য পুষ্প অনন্য
কাঁটা থেকে কাঁটা তুলে তার দিকে হেঁটে যায় বিষ ভুলে
জল সেঁচে জলে ডুবে তার প্রতি সাঁতরায়
উপকূল জুড়ে মানুষের হাহাকার-সমুদ্র তীরে কেউ নাই
তবু উড়ে যায়,
 তবু ভেসে যায় তপ্ত বর্ষায়! 
আমি সেই সব হৃদয়ের কথা জানি...
বিনীত হতে হতে নত হয়ে গেলে ভালোবাসা
ভালোবাসার গভীরে জল,
 গলে গলে নামে অর্গল
থাকে না কিছুই,
 থাকে না কথাও
দ্বিবুকের দুরত্বরেখায় মধ্যবর্তী শূন্যতার কোলাহল
বিনীত হতে হতে নত হৃদয়, তবু কিছু রাখো-নিজেতে
নত হতে হতে বিনীত জীবন,
 কিছুতে তবু থাকো-নিজের 
বিনীত হতে হতে নত হয়ে গেলে ভালোবাসা,
 থাকে না ভালোবাসার
জীবন কিছু দাবী রাখে-হৃদয়ও, হে ভালোবাসা, জীবনে হৃদয়ের মতন থাকো!


সন্ধ্যাক্রান্তরাগ

ঘুমন্তপ্রাণের গল্পে কোন জন্মের নাম নাই। জলপতনের স্তব্ধ শব্দরা পাতার কার্নিশ ছুঁয়ে ঝুলে থাকতে থাকতে একসময় নিজেই নিজের ইতিহাস লিখে ফেলে। পটুয়া ক্যানভাসের ধার ঘেঁষে জাগ্রত জাগরণের ইতিবৃত্তে রাবণেরাও আসে ফিরে ফিরে, আত্মমগ্ন চিত্রের গভীর থেকে ছুঁড়ে দেয় রাত!

এখানে তবু হাওয়াপথে হাওয়া ধরে হাওয়া লাগিয়ে কেউ কেউ সযত্নে বপন করে লৌকিক সম্ভাবনার বীজ, বুকের চর্চায় মহীরুহ হয়ে উঠে নতুনকুঁড়ি। অতঃপর সমাবেত অনন্য সাধারণ সেই বৃক্ষের যৌবন খুঁড়ে তুলে আনে অক্সিজেন। মানুষ তার শ্বাসে বাঁচে, হৃদয়ে বাঁচে। কখনো কখনো স্থির চেয়ে অহেতুক কিছু হৃদয় -জীবন পুড়িয়ে দৃশ্যকল্পের মত এভাবেই ভবিতব্য লিখে রাখে, নিজেতেই।


হয়তো'বা পরের পৃথিবীর পথ বাঁক নিয়েছিল এখানে কোথাও-গভীরতম ভালোবাসায়!



SHARE THIS

Author: