হিমেল হাসান বৈরাগী এর দশটি কবিতা

আমার মা একটি কবিতা লিখুক

আমি চাই, আমার মা একটি কবিতা লিখুক
কুসুমকুমারী দাস কিংবা সুফিয়া কামালের মত করে নয় ।
একদম নিজের মত করে ।
যেভাবে তিনি বুঝেন- একটি তরকারীতে কতটুকু নুনের প্রয়োজন ।
তেল এবং পেঁয়াজের মিশ্রণে কিভাবে একটি অমৃত পরিবেশন করতে হয় ।
তোষকের নিচে জমানো টাকায় বৃদ্ধ শ্বশুরের ঔষধের জোগাড় তিনিই করেন
তিনি জানেন সংসারে বৃদ্ধ কবিতাগুলো কত অসহায় !
বেহিসাবি ছোট ছেলের বৈরাগীত্বে বড্ড বেশী আপত্তি তার ।
দুর্মূল্যের বাজারে দুর্বোধ্য কবিতার ব্যঞ্জনা তিনি বুঝেন ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।
অষ্টাদশী বালিকার সংসারে অভিষেক,
তারপর দুইযুগের মধ্যবিত্ত সংসারে-
অসংখ্য কবিতার বেড়ে উঠা ও ঝরে পড়ার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।
ষ্টীলের আলমারি খুললেই ধেয়ে আসে ন্যাপথলীন বায়ু
খুব যতনে আগলে রাখা কচুয়া রঙের শাড়ি, বাবার পাঞ্জাবী,
পৈতৃকভাবে পাওয়া কয়েককাঠা জমির ধুলাবৃত দলীল ।
আমি ঠিক এমনি কিছু কবিতার কথা বলছি ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।
মাস শেষে বাড়িভাড়া, কারেন্টবিল, মাস্টারের বেতন,
সমস্তকিছুর টানটান হিসেব তিনি যেভাবে করেন
ঠিক সেভাবেই তিনি একটি কবিতার হিসেব কষবেন ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।

অরণী; গোলাপের বংশধর

ভাতের ঋণ কী কবিতায় শোধ হয় রে অরণী?
দরজা খুলে; আমাকে দেখার পর রুই মাছের মতো চোখ করে বলিস –
“ক্ষুধা পেয়েছে ?”
ব্যক্তিগত বিষাক্ত দাঁত বের করে পাঠযোগ্য চন্দ্রবিন্দু হাসিতে বুঝিয়ে দেই-
‘ক্ষুধা’ আছে বলেইমানুষে মানুষে এতোবন্ধন, এতো বিচ্ছেদ ।
জুতো চুরি হয়ে যাবার ভয়ে নিজে হাতে করে ভেতরে নিয়ে যাস ,
তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম ধুলোবালি মাখা পায়ের কাছে প্লাস্টিকের চটি জোড়া বাড়িয়ে দিস
ফ্লোরের ঠাণ্ডা যেনো আমাকে স্পর্শন করে ।
আমার খুব লজ্জা হয় , ভীষণ লজ্জা করে অরণী ।
ফুসফুস থেকে আত্মহত্যাকারী এক যুবকের ছবি কথা বলে ওঠে ,
তুই শুনতে পাস না, দেখতে পাস না - বদমাশটা আমাকে বেঁচে থাকার ভুল বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ করে ফেলে ।
গোসল করবার জন্য গামছা’টা হাতে দিয়ে
রান্না ঘরে গ্যাসের চুলোর উপর ভাতের হাড়ি চাপিয়ে দেয়া দেখে মনে হয়
আমি বুঝি তোর পরামত্মীয়; গ্রাম থেকে বেড়াতে আসা শ্বশুর বাড়ির লোক ?
বাথরুমের লাইটটা জ্বালানোর পর দিয়াশলাই নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস
কী করে জানিস, সিগারেট টানতে না পারলে আমার নিষ্কাশন অসম্পূর্ণ থেকে যায় ?
সুগন্ধি সাবানের গন্ধে নিজের বগল বারবার শুঁকতে থাকি ,
শ্যাম্পু করা চুল মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকে দেখি , সাদা ভাতের উপর ধুয়ো উড়ছে
ধুয়ো উড়ছে, সারা ঘরময় ধুয়ো উড়ছে আর মনে হচ্ছে
দু’শ কোটি বছর পেটে খিদে নিয়ে ভারতবর্ষ ঘুমিয়ে ছিলো এতোদিন ।
প্রিয় বেগুন ভাঁজির বাটিতে বর্ণমালার মতো শুয়ে থাকা শুকনো মরিচ ভাঁজা
ভাত নিজেই পাতে তুলে নেই । শীর্ষেন্দু দা’কে একটু একটু লজ্জা পাই
অল্প পরিমাণ তরকারী নেয়ার পর তুই নিজের হাতে কবিতার লাল অক্ষরের মতো চিংড়িগুলো প্লেটে তুলে দিস
নাকেমুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে, অনুবাদহীন জীবন্ত জুঁইফুলের ভঙ্গিমায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকিস
কখনো নুনের বাটি ,কখনো জলের গ্লাস বাড়িয়ে দেয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো তোর
আমি সব বুঝতে পারি , ভয়ে তাকাতে পারিনা , ভয়ংকর ভয় করে অরণী
যদি মা বলে ডেকে ফেলি ! যদি বোন বলে জড়িয়ে ধরি !
“ভালোবাসি” বলে প্রেমিকা মনে করে যদি চুমু খাই তোর স্বামীর সামনে ?
এঁটো থালা চাটতে চাটতে ডালের কথা মনেই থাকেনা । “ডাল খাবি না? ভালো হয়েছে, খেয়ে দেখ!”
“নারে আর পারছিনা ,এবার মাফ কর “ এই বলে আমি উঠে পরি ।
সন্দেহজনক প্রশ্নবোধক বাক্যে জিজ্ঞেস করিস , “পেট ভরেছে ?”
আমার কণ্ঠ জড়িয়ে যায় , আ-কার এ-কার জুড়ে তৃপ্তির ছুটোছুটি
মমতার অক্ষরগুলো বেহালা গ্রামের কিশোরী ঋতুর মতো “হ্যাঁ” সূচক মাথা নাড়ে ।
যাবার বেলায় বিশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে বলিস , “এই নে,গাড়ি ভাড়া”।
দ্বিধাগ্রস্ত নির্লজ্জ ডান হাত বাড়িয়ে দেই , গাড়ি ভাড়া নেই তুই কিভাবে টের পেলি অরণী ?
তুই কি গোলাপের বংশধর ? চাঁদের নিকট আত্মীয় ?
মৃত্যুর প্রাচীন ভাষা যদি সত্য হয় তবে জীবন তার চেয়ে অধিক সুন্দরও সত্য
মানুষ-ই যদি মহৎ শিল্প হয়ে থাকে তবে নারী শিল্পোত্তীর্ণ সৌন্দর্য
বিষণ্ণ চিঠি লিখবো না বলে, ঘৃণার এলিজি লিখবো না বলে, কফিনের কাহিনী লিখবো না বলে
আমি ফিরে যাই,, ফিরে যেতে যতে তোকে একটা প্রশ্ন করি -
"ভাতের ঋণ কী কবিতায় শোধ হয় রে অরণী?"
আর তুই
রবীন্দ্রোত্তর মানবিক বৃক্ষের মতোদাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার প্রস্থান দেখিস ।

যাবজ্জীবন

প্রতিদিন ভোর বেলা;
ঘুমন্ত মুখের পাশে শুয়ে থাকে সেলাই করে রাখা সর্বনাশ
এতো আঁধার , এতো কালো , এতো ছাই ভস্ম জমেছে পৃথিবীতে
পূর্বপুরুষের চাপ চাপ রক্তপাতের মুগ্ধতা নিয়ে বেড়ে উঠছে শিশু ,
শতশতাব্দীর মাধুর্য চাপা পড়ে আছে একুশ শতকের বিশেষণহীন হাহাকারের নিচে ।
সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উঠে যাচ্ছে সময়, শুষে খাচ্ছে আয়ু
আমি দেখে যাচ্ছি -
জন্ম থেকে যৌবন, যৌবন থেকে প্রৌঢ়, প্রৌঢ় থেকে মৃত্যু, মৃত্যু থেকে নতুন জন্ম- জন্মান্তরবাদ
এই কি তবে সত্য নয় যে,
আহত অভিমান নিয়ে আমি
আমার জন্য অপেক্ষা করে আছি এতকাল?
এতদীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিয়েছি নিজেকে একবার দেখবো বলে...
নিজস্ব পলাতক চোখে চোখ রাখবার জন্য
হারে রে রে হাওয়ার ভেতর মানুষের মতো দিবা-রাত্রি বেঁচে থাকার অভিনয় করে যাচ্ছি
এই বুঝি তবে যাবজ্জীবন দণ্ড আমার?

সাঁতার না জানা মাছ

সাঁতার না জানা মাছের মতো একেকটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রতিটি রাত ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে। মন আর মানিব্যাগের নিস্পন্দ শরীর থেকে লুটিয়ে পড়ছে 'নি:সঙ্গতা'। আহ্ 'নি:সঙ্গতা' চিৎকার কোরো না! বলো কোথায় তোমার ব্যথা? লেগেছে কোথায়? এমতাবস্থায়, দুটো জারুল গাছের মাঝখানে ঝুলতে থাকা কৈশোর আমাকে হাতছানি দেয়। ঝাপসা দেখতে পেলাম স্কুলের বারান্দা থেকে পুরনো বন্ধুরা হইহুল্লোর করতে করতে ক্লাসরুমে ঢুকে গেলো। কাকে যেনো ভালোলাগার কথা বলতে না পেরে নাম ডাকবার খাতার ভেতর মুখ লুকিয়ে ব্যঞ্জনবর্ণ কাঁদছে। আমি তার কান্নার আওয়াজ শুনে অদিতির দিকে মাথা ঘুরিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি কতদিন। বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে ভূগোল বই এর পাতা অস্থির হয়ে সরে সরে যাচ্ছে বান্ধবীর বুকের ওড়নার মতো। ঠিকানাবিহীন সেইসব কিশোরীদের মুখ, সেইসব ধূলোবালিময় কৈশোরের কথা মনে এলেই চোখ বুজে আসে, আর কোথায় যেনো একটু আগুন ধুয়োর নিচে চাপা পড়ে যায়। তখন-ই, ঠিক তখন-ই অজ্ঞাত কেউ একজন বোলে ওঠেন 'কবিতাটির বাকী অংশ পড়বেন রাত দশ'টার ইংরেজি সংবাদের পর'।

মুখে জিহ্বাহীন এই কবিতাটি

চাকরী পেলে- তোমার জন্য নীল কাতানের শাড়ী
শাড়ির আঁচলে ঘন গম্ভীর মেঘ
মেঘের নীচে স্বচ্ছ জলের প্রবহমান নদী
নদীর ধারে ঘনবসতি শিশুর মতো সবুজ গ্রাম
গ্রামের শেষে পাতায় ছাওয়া একটা ঘর
ঘরের ভেতর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি কাজল পড়ছো
খুপরিঘর হতে ব্যাপন প্রক্রিয়ায়
তোমার শরীর থেকে, শরীরের অলঙ্কার থেকে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে সুগন্ধ
আমাকে অভিনন্দন জানাবে বলে।
আর আশ্চর্যরকমভাবে,
শাড়ির আঁচল থেকে টিভি পর্দায় ঢুকে গেলো একটি শোক সংবাদ-
"বটতলী গ্রামে অজ্ঞাত যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু "।
এরপর আচমকা লোডশেডিং
অনিবার্যভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছে তোমার চোখ, হাউমাউ করে উঠছে তোমার হৃৎপিণ্ড
ঝলসানো নি:শ্বাস নিয়ে উন্মাদিনীর মতো উঠোনে এসে দাঁড়ালে
সূর্য তখনো তরুণ, নীল কাতানের শাড়িটি হয়ে উঠলো বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার¬ আকাশ।
আকাশ পাঠালো বৃষ্টি
তোমাকে উৎসর্গ করে বৃষ্টি গাইলো গান, গানের তালে তালে পাতা'রা দুলে উঠলো
তক্ষুনি, তুমি দেখতে পেলে মেহগনির ডাল থেকে ঝুলছে এই কবিতাটি
কবিতাটির ভেতর থেকে ক্রমাগত ঢেকে যাচ্ছে আমার কলঙ্করেখা,
স্বয়ংক্রিয় চিবুক আর আমার মর্মরমূর্তি আর আমি তোমাকে বলছি-
আমাকে নামাও নীল কাতান শাড়ি
কাজল পরা মেয়ে আমাকে নামাও
আমাকে নামাও দারোগা বাবু
থানা-পুলিশ আমাকে নামাও
আমাকে নামাও গণতন্ত্র
ধর্মতন্ত্র আমাকে নামাও
আমাকে পাঠাও লাশ কাটা ঘরে
আর, পোস্টমর্টেম করো মুখে জিহ্বাহীন এই কবিতাটির।

পূর্ণতাহীন সম্পূর্ণতা

প্রতিটা দিন গতকালের মতো যমজ
পূর্ণতাহীন সম্পূর্ণতায় ভরা শ্বাপদ সঙ্কুল প্রত্যেকটা রাত
মাঝে মাঝে পৃথিবীর ঢাকনা খুলে মাথা ঝুলিয়ে রাখি পাতালে
এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি দেই । আর কোত্থেকে যেনো
ডানা বিহীন একটা শ্যমল নদী উড়ে আসে ।
সাগরে ঝাপ দিয়ে ডুবে মরতে চায়। ডুবতে ডুবতে আমাকে জিজ্ঞেস করে-
কী চাও ? কীভাবে চাও নিজেকে ?
মুখ ভর্তি স্মৃতি নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারিনা । শুধু ভাবতে থাকি -
আমি আমার জীবন হাতের তালুতে রেখে, বাদামের খোসার মতো
ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারতাম যদি !

আজ এই লোডশেডিং এর দুপুরে

একটি দেশলাই কাঠি জ্বালাও তাতে আগুন পাবে' গানটা শুনতে শুনতে সিগারেট ধরালাম। সিগারেট টানছি আর টানছি। ধুয়োগুলোকে এস্ট্রেতে রেখে ছাইগুলো টানছি, টানছি আর টেনেই যাচ্ছি। আমার কী যেন হয়েছে আজ এই লোডশেডিং এর দুপুরে। গরম বালুর মতো হাওয়া এসে লাগছে নাকে মুখে। বোবা চোখ দুটো অন্ধ জিহ্বার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইছে মৃতসঞ্জীবনী গান। প্রশ্ন-উত্তরহীন মহাস্তবদ্ধতায় একটু পর পর নিজেকে জড়িয়ে ধরে মাথায় স্নেহের হাত বুলচ্ছি। কিছুক্ষণ শ্যাম্পুকরা ঘন চুলে আদুরে বিলি কেটে, নিজের গালে নিজে হালকা চিমটি এঁকে বলছি - "এত ভাবছিস কেন? আমি আছি না? আমি থাকতে তোর ভয় কীসের?"
এরপর আবেগাপ্লুত আমার চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। আমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি আজ এই লোডশেডিং এর দুপুরে।

বাবাকে ভালোবেসে বলছি

বাবা'কে ভালোবেসে একটি কবিতা লিখবো বলে
দীর্ঘ সতের বছর ধরে রাত জেগে থাকি।
আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিসপেনসারিতে
মাসিক বেতনে কাজ করেন।
যে কথাটি বলতে গিয়ে
আমি বহুবার মুখ চেপে ধরেছি লজ্জায়
যে কথাটি বন্ধু-পরিচিতজনের কাছে লুকিয়েছি বহুবার
সেকথাটি আমি আবার বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিসপেনসারিতে
মাসিক বেতনে কাজ করেন "।
সবার বাবার মতো আমার বাবা কোনদিন শ্রেষ্ঠ হতে
পারেননি,
শ্রেষ্ঠ বাবা'রা খেলনা ভেঙ্গে গেলে নতুন খেলনা কিনে
দ্যায়,
ছুটির দিনে পরিবারের সকলকে ঘুরতে নিয়ে যায়।
আমার বাবা ঈদ আর গুরুতর অসুস্থ না হলে ছুটি পেতেন না।
শ্রেষ্ঠ বাবাদের পকেটভর্তি টাকা থাকে
রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে সকলে সালাম দ্যায়।
আমার বাবা শ্রেষ্ঠ হতে পারেননি,
আমার বাবা বহুবার শ্রেষ্ঠা হয়েছেন।
পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠ বাবা ও তাদের সন্তানদের বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিসপেনসারিতে
মাসিক বেতনে কাজ করেন "।
শ্রেষ্ঠ বাবা'রা অনেক সৎ ও চরিত্রবান হন
আমার বাবা'র সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে,
মা'র কাছে বাবা'র চরিত্রহীন গোপন ছবিগুলো দেখেছি।
আমাদের পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের সময়,
তিন মাস অন্তর অন্তর মা'র ট্রিটমেন্টের সময়
বাবা ডিসপেনসারি থেকে ঔষধ চুরি করে
অন্যত্র বিক্রি করতেন।
আমার বাবা কোনদিন শ্রেষ্ঠ ছিলেননা
আমার বাবা বহুবার শ্রেষ্ঠা হয়েছেন।
পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠ বাবা ও তাদেরসন্তানদের বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিসপেনসারিতে
মাসিক বেতনে কাজ করেন "।
বাবা'কে কোনদিন কষ্ট পেতে দেখিনি
বাবা কষ্ট পেলে বাংলা খেয়ে মা'কে বেধরম পেটাতো
মা কষ্ট পেলে কাঁদতো।
বাবা বাড়ির বাইরে গেলেই জেলমুক্তির আনন্দ পেতাম।
মনে মনে আনন্দ উৎসব করতাম এই ভেবে যে,
কাজের চাপে বাবা আজ রাতে ঘরে ফিরবেন না।
অথচ জানতাম না, বাবা আমাদের পাশে না রেখে
কোনদিন পেট ভরে খেতে পারতেন না।
আমাদের বুকে না জড়িয়ে বাবা ঘুমাতে পারতেন না।
আমি জানিনা, এভাবে কতশত দিন তিনি খালি পেটে,
দোকানের সাটার নামিয়ে টেবিলের উপর শুয়ে রাত
কাটাতেন ।
দুরে কোথাও, বহুদূরে কোথাও হয়তো বাবা আছেন
আমাকে দেখতে পান, প্রচণ্ড রাত জাগলে
বিকট আওয়াজ করে ধমক দিয়ে বলেন-
খোকা অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাতে যা।
আমার ঘুম আসেনা বাবা।
তোমার ইচ্ছে মতো আমি কিছুই হতে পারিনি
না ডাক্তার, না ইঞ্জিনিয়ার, না মানুষের মতো মানুষ
তোমার অনিচ্ছায় আমি আজো কবিতা লিখি বাবা।
আমার বাবা কোনদিন আমার কাছে শ্রেষ্ঠ হতে পারেননি
আমার বাবা আজীবন আমার কাছে শ্রেষ্ঠা হয়ে থাকবেন।
বাবা'কে ভালোবেসে বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিসপেনসারিতে
মাসিক বেতনে কাজ করেন "।

আমার মৃত্যুর কারণ

গতকাল মধ্যরাতে আমার মৃত্যু হলো
টিকটিকি খবর পৌঁছে দিলো মহল্লার মসজিদে
বৃদ্ধ তেলাপোকা
অবৈজ্ঞানিক উচ্চারণে তেলাওয়াত করতে থাকে দোয়া ইউনুস।
আমার লাশের উপর দিয়ে কালো পিঁপড়ের মিছিল যায়
মিছিলে আঘাত হানে পুলিশের বুলেট, টিয়ারশেল
জমা হয় লাশের উপর লাশ ।
সমস্ত ঘরে ভেসে বেড়ায় পিঁপড়ের রক্ত ও কান্নার আওয়াজ।
কিছু কিছু কান্না আমি বেশ চিনতে পারি।
অথচ ওরাই আমার মৃত্যু কামনা করে আসছিলো এতদিন।
ভোর হতে না হতেই চলে এলো মডেল থানার পুলিশ।
কেউ কেউ ভাবতে থাকে এটি- আত্মহত্যা ।
তা



তেইশ হাজার বছর ধরে জাহান্নামে জ্বলছি।
কালো আগুনকে জিজ্ঞেস করেছি একলক্ষবার - আমার মৃত্যুর কারণ।
প্রতিবার সে বলেছে- আমার মৃত্যুহয়েছিলো
ডাক্তারি পড়ুয়া বিশ স্পর্শী এক তরুণীর হাসিতে।
শুনেছি সে আজ স্বর্গের বাসিন্দা।
এখনো নিয়মিত মানুষ মারে ।

সুদিন আজ শয্যাগত

সুদিন আজ শয্যাগত পৃথিবীর হাসপাতালে
শত্রুরা দেখতে এলো, বন্ধুরা ডাক পাঠালে
তারা সব ব্যস্ত কাজে
বাবা-মা জায়নামাজে,
বিড়বিড় তসবি চাপে ।
আমি তো পাইনি তোমায় আমার-ই মনের মাপে।
বারান্দায় ধূমপায়ী রোদ মেতেছে কূ-উল্লাসে
আমাকে মানাচ্ছে না, আমার-ই ছায়ার পাশে ।
লোকেরা সেলফী তোলে, শোকেরা স্বস্তি খোঁজে
আমি সেই আগের মতই পুরনো উইন্ডোজে
পাখি’দের যৌন খেলা, দেখে যাই নিয়ম মাফিক
আঁধারে জোনাক পোকাই শহরের শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ।

SHARE THIS

Author: