(১৯)
জগাই – না মানে স্যার…
বিচারক – স্যার ট্যার ছাড়ুন। আপনি তো অদ্ভুত মানুষ! সাধারণ লোকে যা করে আপনি তা তো করলেনই না উপরন্তু পরমসুখে বারান্দায়
বসে চপ মুড়ি খাচ্ছিলেন!
জগাই – চপ মুড়ি নয় স্যার
বাফুমু।
বিচারক – ওই একই ব্যাপার। আপনি একবারও ভাবলেন না দেশের দশের কতবড়
কলঙ্ক আপনি ঘটিয়ে তুললেন?
জগাই – না, মানে স্যার শুনুন…!
বিচারক – শুনব। শুনব বলেই তো পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার
করে হাজির করেছে। সরকারি উকিল মশাই, আপনি কি ক্রশ করবেন?
উকিল – বলুন, যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না।
জগাই – কি মুস্কিল!
আমি এমনিতেই সত্য ছাড়া বলিনা। আমার বাবার শিক্ষা।
উকিল – আঃ! আপনাকে যা বলতে বলা হচ্ছে তাই বলুন।
জগাই – বেশ সত্য ছাড়া মিথ্যা
বলব না। কিন্তু আপনিও বলবেন না বলুন!
উকিল – কি! এটা আমার জন্যে নয়, আপনার জন্যে।
জগাই – অহ! বা রে আজব নিয়ম!
উকিল – হ্যাঁ, তাহলে এবার বলুন জগাইবাবু আপনি ঠিক কিভাবে এতবড় ব্যাপারটা চেপে গেলেন?
বলুন তো!
জগাই – না মানে…
উকিল – মানে টানে নয়। স্পষ্টাস্পষ্টি বলুন আপনি ঠিক কি ভেবে
এই মারাত্মক ঘটনাটা হজম করে গেলেন? ভাবা যায়! স্বাধীন দেশের নাগরিক আপনি। দেশে গণতন্ত্র আছে, আদালত আছে, থানা আছে, পুলিশ আছে,
আপনি সেসবকে অগ্রাহ্য করলেন কিভাবে?
জগাই – আমি তো অগ্রাহ্য করিনি
স্যারদা।
(২০)
উকিল – স্যারদা মানে!
ওসব ভাঁওতা ছাড়ুন। অগ্রাহ্য করেননি? আপনার বাড়ীতে এই এতবড় চুরির ঘটনা ঘটে গেল, আপনার সর্বস্ব
চেঁছেপুঁছে নিয়ে গেল, আপনি সেটা থানায় জানিয়েছিলেন? এফআইআর করেছিলেন?
জগাই – না না সেসব করিনি।
উকিল – অ্যাই ধরেছি। আপনি তাহলে স্বীকার করছেন যে আপনি জেনে
বুঝে একটা স্বাধীন দেশের বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, আইন সবকিছুকে উপেক্ষা করেছেন। হুজুর আমার আর কিছুই জিজ্ঞাসার নেই। আসামীর জবাবেই তার বিরুদ্ধে আনা সব
অভিযোগ প্রমাণিত। এবার আপনি দেশের আইনানুগ যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করে আদালত তথা বিচারব্যবস্থার
ঐতিহ্যকে উজ্জ্বল করে তুলবেন এইটুকুই আমার প্রার্থনা।
বিচারক – হুম। আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাই আপনার
বাড়ীর দরজা জানলা ভেঙে চুরি হয়েছে, পাঁচ পাঁচজন চোর আপনার
বাড়ীতে ঢুকে আপনার পূর্বপুরুষের অর্জিত বিপুল সম্পত্তির বহুলাংশ নির্ভয়ে নির্বিবাদে
তুলে নিয়ে গেছে। আর আপনি নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়েছেন। জেগে উঠে যখন দেখেছেন চুরি হয়ে গেছে তখন কোনোরকম মনস্তাপে না ভুগে অন্য সব দিনের
মতোই যথা নিয়মে বাদাম মুড়ি খেয়ে…
জগাই – আজ্ঞে না স্যার!
বাফুমু।
বিচারক – ওই হলো। খেয়ে আপনার ডিমের দোকানে গিয়ে বসেছেন। ডিম বিক্রী করেছেন। পরের দিনও তাই। তারপরের দিনও তাই। এমনিভাবে চুরির এতবড় ঘটনা যা আমাদের
সনাতন গণতন্ত্রের স্বাধীন দেশের সমৃদ্ধ জীবনের ওপর এক বিরাট ধাক্কা। তা আপনি বেমালুম চেপে গেছেন। এর ফলে চোরেরা উৎসাহিত হয়ে উঠেছে। তাতে সমাজের সমূহ ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে?
জগাই – আজ্ঞে হ্যাঁ হুজুর,
বলার অনেক কিছুই আছে। যদি অভয় দেন তো বলি।
উকিল – এখানে সবকিছুই সভয়ে
বলো।
বিচারক – হিন্দী সিরিয়াল দেখে
দেখে মাথাটা গেছে। সভয়ে নয়, ওটা নির্ভয়ে হবে।
জগাই – হুজুর যে রাতে চুরি
হয় আমার ঘরে, আমি ঘুমাইনি। জেগেই ছিলাম। হুজুর, পাঁচজন নয়,
মোটে একজন ক্যাংলাপ্যাংলা লোক। নেহাতই হাড়হাভাতে মার্কা চেহারা। রাতের অন্ধকারে চুরি করতে
(২১)
ঢুকলো আমি বুঝতে পারলাম। তবু ঘুমের ভান করে আমি পড়ে রইলাম। গরীব ডিমওয়ালার ঘরে আর কি আছে?
বিচারক – হ্যাঁ, কি কি চুরি গেছিল?
জগাই – (ম্লান হাসে)
যা কিছু ছিল। সেই হাভাতে চোরটা হুজুর কিছু মুড়ি ছিল, সেগুলো জল দিয়ে মেখে
গবগব করে খেল। তারপর এক এক করে একটা অ্যালুমুনিয়ামের তোবড়ানো ফুটো ঘটি, বাবার আমলের একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া টেবিল ঘড়ি, ডিম বেচা তেতাল্লিশ টাকা সবই নিল।
বিচারক – তুমি তখনো কিছুই বললে
না?
জগাই – আজ্ঞে না হুজুর। তবে ও চলে যাওয়ার সময়ে আমার ভাঙা ঘরের
মাটির কুলুঙ্গিতে একটা মাটির দোয়াত আর একটা খাগের কলম ছিল, সে দুটোও যখন ঝোলায় পুরে নেয় তখন আমার বুকের মধ্যেটা কেমন যেন
মোচড় দিয়ে উঠলো।
বিচারক – কেন? কেন? কি মহামূল্যবান জিনিস সেগুলো?
জগাই – বাজারে ওর দাম এক পয়সাও
নয় হুজুর। কিন্তু আমার কাছে অনেক। চোরটা যে কেন ওটা নিল?
বিচারক – ব্যাপারটা খুলে বলুন
তো!
জগাই – হুজুর, আমার বাবা লিখতেন। যে সে লেখা নয়, খবরের কাগজে লিখতেন। এখনকার মত ঘটনাস্থলে না গিয়ে হোটেলের
এয়ারকন্ডিশনড রুমে বসে মদ খেতে খেতে খবরের গল্প লেখা নয় স্যার। বাবা সত্যিকে সত্যি আর মিথ্যে কে মিথ্যে
বলেই লিখতেন। সাদা কে বলতেন সাদা, কালোকে বলতেন কালো। এখনকার ওপরতলার মানুষদের মত চালাকচতুর ছিলেন না উনি। সত্যি কথা লিখতে গিয়ে একদিন খুন হয়ে
গেলেন মানুষটা। সেই খুনের কোনো কিনারা হলো না। সব কেমন ধামাচাপা পড়ে গেল। কাগজের মালিক কোনো ক্ষতিপূরণও দিলো না। আমি তখন বেশ ছোট।
বিচারক – তাই নাকি!
জগাই – হ্যাঁ স্যার,
আমার সেই বাবা তাঁর লেখার টেবিলে রাখা দোয়াত আর কলমটা দেখিয়ে বলতেন,
জগাই এই হলো সত্য আর বিশ্বাস। এই দুটোতে মন রাখিস। লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। লোভ করিস না। লোভে যন্ত্রণা বাড়ে। হুজুর, বাবা ঠিক বলেননি বলুন!
চোখের সামনে দেখলাম লোভের বীভৎস চেহারা। চোরেরা তাদের লোভের থাবায় কেমন করে যেন আস্তে আস্তে গ্রাস
করে নিল
(২২)
চারপাশের জগৎটা। আমি দেখেছি হুজুর রাস্তার মোড়ে হুল্লোড় করা মস্তানদের
যারা মাথা, কেমন করে তাদের গায়ে উঠছে অন্য পোষাক!
কেমন করে তারা ভদ্দরলোকদের ভয় দেখিয়ে চাপ দিয়ে আস্তে আস্তে ভদ্র পোষাক
খুলে পরে ফেলেছে নিজেরা। থানা-পুলিশ-অফিস-কাছারী সর্বত্র যে কেমন করে তারা গড়ে তুলেছে তাদের জমিদারী, আমি দেখেছি হুজুর! ডিমওয়ালা আমি চতুর্থ জগাই,
আমি সব দেখেছি। খাদ্য আন্দোলন, চালের জন্য মানুষের
গুলি খাওয়া। দেখেছি কেমন করে সোনার টুকরো উজ্জ্বল ছেলেরা আমার মায়ের মুখের ভাষাকে বাঁচানোর
জন্যে হাসতে হাসতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। দেখেছি সেইসব হীরের টুকরো ছেলেদের যারা পচে যাওয়া অবস্থার
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে বুকে পিঠে গুলি নিয়ে নোংরা খালের জলে ভেসেছে। আমি দেখেছি, বদলে যাওয়া দিনের হাত ধরে কত চোর মস্তান রাজা হয়েছে। সভাপতির আসনে বসে বক্তৃতা দিচ্ছে। আমি, হ্যাঁ হুজুর আমিই দেখেছি। দেখেছি আর ভেবেছি চুরি তো কবেই শুরু হয়েছে। চুরি হয়েই চলেছে। মানুষের বুদ্ধি চুরি হয়ে গেছে। মানুষের মগজের চিন্তা ভাবনা চুরি হয়ে
গেছে। বিবেক চুরি হয়ে গেছে। সাহস চুরি হয়ে গেছে। সম্মান চুরি হয়ে গেছে।
বিচারক – এই! কি সব বলছ?
জগাই – না হুজুর,
এই সমস্ত চুরির কোনো রিপোর্ট কেউ লেখায় নি। কোনো থানাতেই কোনো রেকর্ডেই তার উল্লেখ
নেই হুজুর! আর তাই ছুরি চালানো হাত কখনো আইন বানাচ্ছে,
ধর্ষণ করা শরীর কখনো দেশ আগলাচ্ছে। ওরা দেশটাকে কিনে নিয়েছে স্যার! চুরি করে নিয়েছে। আত আমার মতো, এই চতুর্থ জগাইয়ের
মত ঘরে ঘরে যত জগাই, সবাই জেগে জেগে দেখবে। বুকের মধ্যে তাদের ব্যাথা মোচড় দিয়ে
উঠবে। কিন্তু পাছে প্রাণ যায় সেই ভয়ে ঘুমের
ভাণ করে পড়ে থাকবে। আবার সকাল হবে। তারা খাবে, কাজে যাবে। দোল দুর্গোৎসব ঈদে নাচগান করবে। ১৫ই আগষ্ট ফ্ল্যাগ ওড়াবে। কেউ কোনো এফআইআর করবে না।
বিচারক – রাষ্ট্রবিরোধী কথা
বোলোনা।
জগাই – হুজুর! বাড়ী ফিরে ছেলের মুখের দিকে তাকাবেন হুজুর! আর তাকাবেন
আইনের কেতাবগুলোর দিকে। তারপর দয়া করে ভাববেন, আপনার ছেলের জন্যে
ঠিক আছে তো সব! তার ঘর থেকে চুরি যাবে না তো কিছু! আপনার মোটা মোটা কেতাব পারবে তো সবকিছু বাঁচিয়ে রাখতে! পারবে তো আপনার আদরের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ থেকে শুরু করে আপনার বিচারের রায় লেখা
ওই কলমটাকে বাঁচিয়ে রাখতে! যে কলমের দিকে তাকিয়ে বাবা বলতেন,
মিছিমিছিই বলতেন- জগাই! সত্য
আর বিশ্বাস এই দুইই হলো আসল। একে ছাড়িস না। পারবেন তো হুজুর! পারবেন তো!
(২৩)
(আলো জগাইয়ের ওপর উজ্জ্বল হয়। বিচারক ও উকিলের ওপর আলো কমতে কমতে নিভে যায়। এর মধ্যেই বিচারক রায় ঘোষণা করতে থাকেন। কিন্তু রায়ের শেষ অংশ শোনা যায় না। জগাইয়ের গানে চাপা পড়ে যায়।)
বিচারক – দেশের দন্ডবিধির সাতশো
সাতাত্তর নম্বর ধারার সাতের সাঁইত্রিশ উপধারা অনুযায়ী আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাইকে
দোষী সাব্যস্ত করা হল এবং তার… (কন্ঠস্বর ও বিচারক মিলিয়ে যায়)
জগাই – (গান করে) দিন যায় রাত যায় সময়ের নৌকায়
মানুষ কি খুঁজে চলে জীবনের আয়নায়
ছোট সুখ শান্তির স্বস্তির অম্লান
হাসি গানে জীবন্ত ছবি যাতে আঁকা যায়।
দিন যায় রাত যায় সময়ের নৌকায়…
(এক চোর ঢোকে। আলোর বৃত্তের মধ্যে দুজন)
চোর – জগাই!
জগাই – কে?
চোর – আমি চোর।
জগাই – চোর! তার মানে?
চোর – হ্যাঁ আসলে আমি তোমারই
মত একজন। (হাসে) আমি সব শুনেছি। ওই কোর্টঘরের বেঞ্চিতে বসে সব শুনেছি তোমার কথা।
জগাই – তাই!
চোর – হ্যাঁ, পেটের জ্বালায় সেদিন আমি তোমার ঘরে ঢুকেছিলাম ভাই।
জগাই – ও তুমিই সে!
চোর – হ্যাঁ। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি? আমি তো সেদিন একা ছিলাম। তুমি আমাকে ধরলে না কেন ভয়ে?
(২৪)
জগাই – না রে ভাই,
মায়ায়। তোমার ওই চুরি করতে এসে গবগব করে মুড়ি খাওয়া দেখে কেমন মায়া হল। তাই… কিন্তু তোমাকে দেখে খারাপ লোক মনে হচ্ছে না! তবে তুমি
এই লাইনে কেন গেলে ভাই?
চোর – (হাসে) এই লাইনে কি বেছে বেছে খারাপ লোকরাই আসে?
জগাই – তাহলে?
চোর – আসলে কি জানো,
তোমার আমার মত অবস্থার লোক যারা তারা আসে অবস্থার বিপাকে পড়ে। যখন অন্য সমস্ত রাস্তা আমাদের সামনে
বন্ধ হয়ে যায়, তখন।
জগাই – তবে যে শুনেছি যারা
চুরি করে তারা খারাপ লোক?
চোর – ঠিকই শুনেছ। ন্যায় হোক, অন্যায় হোক যেকোনো উপায়ে রোজগার করা সম্পত্তি বাঁচাতে সম্পত্তিওয়ালারা
এরকম পোস্টার লাগিয়েছে বটে। তবে কি জানো, ওরাই হচ্ছে আসল খারাপ
লোক। ওরাই বড় চোর। আমরা চুরি করি পেটের দায়ে বাঁচার জন্যে। আর ওরা চুরি করে লোভে সম্পত্তি বাড়ানোর
জন্যে।
জগাই – সেকি! সব বড়লোক কি চোর হতে পারে নাকি!
চোর – না না না, তা কেন হবে? সম্পত্তিওয়ালাদের মধ্যেও অনেক ভালো মানুষ
আছে। তবে কি না আবার ওই খারাপ চোররাও সব
সম্পত্তিওয়ালাই তো!
জগাই – তোমার কথা যেন কেমন
কেমন ঠেকছে! ঠিক বুঝতে পারছি না।
চোর – (হাসে) বেশী বুঝে কাজ নেই। (চোর ঝোলা থেকে দোয়াত
আর কলম বার করে জগাই কে দেয়) এই নাও।
জগাই – (চীৎকার করে ওঠে)
একি! এ দুটো…এ দুটো তুমি…
চোর – হ্যাঁ, বিক্রী করার চেষ্টাও করিনি। তোমার ঘর থেকে ও দুটো নিয়ে গিয়ে কেমন যেন অস্বস্তিতে ভুগেছি। বিশ্বাস কর, এই সাত সাতটা মাস চুরি করতে পারিনি। মিথ্যে কথা বলতে পারিনি। কাউকে ঠকাতে পারিনি। কেন কে জানে!
জগাই – এ যে সত্য আর বিশ্বাস। হ্যাঁ, (কলম আর দোয়াত দুটোকে আদর করে) জানো বড় কষ্টে
পড়েছিলাম। না না, তুমি আমার অন্য জিনিস বা টাকা নিয়েছ তার
জন্য নয়, এই দুটোর জন্যে। এ দুটো যে আমার কাছে বড় জীবন্ত। চোরভাই, তুমি এগুলো নেওয়ার
পরে আমি বিশ্বাস হারিয়ে
(২৫)
ফেলছিলাম যে! কেবলই মনে হচ্ছিল তাহলে
কি ছোট থেকে যেসব কথা শুনেছি, যা ধ্রুব বলে জেনেছি, আসলে তা সত্যি নয়? মিথ্যে! আমার
বাবা, যার জন্যে আমি গর্বে বুক সাত হাত ফুলিয়ে বাজারে বসে মাথা
উঁচু করে ডিম বিক্রী করি, সেই বাবার সমস্ত জানা মিথ্যে!
ভুল! বিশ্বাস কর আমি ছটপট করেছি। কেঁদেছি। বাবা! তোমার কথা মিছিমিছি
নয় বাবা! সত্য আর বিশ্বাস চুরি হতে পারে কি! পারে না। কিছুতেই পারে না।
চোর – আঃ! তোমার জিনিস তোমাকে ফেরত দিয়ে কি হাল্কা লাগছে! এবার
আমি চললাম।
জগাই – চললে? আবার চুরি করবে?
চোর – নাহ, ওসব আর আমার দ্বারা হবে না ভাই। দেখি অন্য কিছু করা যায় কি না। এই তোমার কাছে শ দু তিন টাকা হবে?
জগাই –কেন? কি করবে?
চোর – ধার নিতাম। ভয় নেই, শোধ করব। নাহলে তো ধার চাইতামই না। চুরি করতাম। ওই টাকাটা দিয়ে গামছা কিনে বিক্রী করব।
জগাই – (পকেটে হাতড়ে টাকা
দেয়) এই নাও।
চোর – তুমি খুব ভালো মানুষ। চলি ভাই।
(চোর মিলিয়ে যায়। জগাই গান ধরে)
জগাই - নীল কপোতাক্ষের দেখা নেই বহুদিন
সময় নিয়েছে কেড়ে
কত সুখ কত গান
সকালে যা ভাবা
গেল বিকেলে হলো না পাওয়া
সময় নিঠুর বড় সে
কেবল চলে যায়
দিন যায় রাত যায়
সময়ের নৌকায়।
ছোট হাসি আর ছোট
ছোট সুখ শান্তির
আশা নিয়ে পথ চলা
আলোছায়া জীবনের
উঠানের এক কোণে
অযত্নে বেড়ে ওঠা
গাছে ছোট ফুল জাগে
অনুকূল আবহাওয়ায়
দিন যায় রাত যায়
সময়ের নৌকায়।
(আলো গানের সঙ্গেই ধীরে নিভে আসে)
*শেষ*