রিকেল এর এক গুচ্ছ কবিতা

রোম্যান্টিক শিশু এক

তখন কর্ণফুলির পাড়ে উজ্জ্বল সন্ধ্যা
তুমিই প্রথম পাঠ করেছিলে আমার বেদনা ৷

আমার নাম— সুন্দর উচ্চারণ শুনেছিলাম তোমার কণ্ঠে
কি যে ভালো লেগেছে আমার
সেই থেকে ভাবি মানুষের নামে অনেক মধুর বেদনা আছে;
তুমি পডো মানুষের সহজ করুণ বেদনা ৷

আমাকে নিয়ে প্রথম যেদিন কবিতা লিখে আবৃত্তি করেছিলে
সুখে কী গভীর কান্না-ই না আমি কেঁদেছিলাম সেদিন

প্রথম যেদিন তোমার বন্ধু ফারুকের কণ্ঠ শুনলাম
বুঝতে বাকি রইলো না— তিনি আপনার কাছের কেউ

আপনার মত আদর আদর শব্দ দিয়ে সম্ভাষণ করেছিলেন ৷
সেই প্রথম জানলাম— কথা শিখতে হয়

এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় তোমার গান শুনে নদীর পাড়ে যখন কেঁদে উঠলাম—
বুকে জড়িয়ে ধরেছিলে;
কী গভীর বেদনা নিয়ে তোমার সামনে
নদীর সামনে দাঁড়িয়েছিলাম আমি

মনে পড়ে?
আপনার মনে পড়ে না?

আজ নীলকে বুকে নিলে টের পাই তোমাকে
তোমার কণ্ঠে নীলের সহজ গভীর ভালোবাসা:
আমার আরও বহুকাল বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়
ভালোবাসতে ইচ্ছে করে আরও অধিক ব্যথা নিয়ে

সেদিন তুমি না ডাকলে আমি কার কাছে গিয়ে শিখতাম—
কী করে আদরের গ্লাসে বিনয় ঢেলে দিতে  হয়
কীভাবে ভালোবাসতে হয় শিশুর মহৎ করুণ কান্না

কে আমাকে বলতো—  তুইও মানুষকে মুগ্ধ করিস
কে বলতো আমাকে— মানুষ তোতে মুগ্ধ থাকবে চিরকাল

প্রথম দেখাতেই তোমাকে বলে দিয়েছিলাম আমার
সকল বেদনা
আমার অ-সুখ
আমার সকল গৌরব

—কেন? কেন গেয়েছিলে বিষাদের গান !

ঈশ্বর বলেছিলেন— যদিও আমার কোন প্রভু নেই

‘রি, এ তোমার দাদা
তোমার রিটা দিদি
তোমার ব্যর্থ প্রেম
তোমার দিদিমণি
তোমার সেই ছোটবেলাকার ঠাকু
মৃত মায়ের মুখ তোমার...’


কী ছিল না তোমার মাঝে সেদিন!
আজও দেখতে পাই তাদের
চিরকাল দেখতে পাবার গৌরব করি

একটা দীর্ঘশ্বাস পাঠাও
একটা আবেগ
একটা আদর

আমি খাব আজ আমার  নরোম নরোম বেদনা

তুমি কি দুঃখ পাও?
আমি কি তোমাকে দুঃখ পাঠাই?

আমার প্রিয় রোম্যান্টিক বাবু
আমাকে তোমার নদী বানাবে?
মাহাদেব সাহার মত একটি শান্ত নদী
যার কাছে গিয়ে তোমার শৈশব, তোমার ইস্কুল দুপুরের গল্প করবে

—তুমি তো সমুদ্র, নদী হতে চাও কেন?

নদীর যা আছে
সমুদ্র কি পায় তার কিঞ্চিৎ?

—আমি সমুদ্রও ভীষণ ভালবাসি ৷

নদীর আগে তো সমুদ্রকে দেবে না তোমার ভালোবাসা
দেবে? বলো...
আমি জানি— নদীই তোমার প্রথম প্রিয় প্রধান নারী

বারবার তাই নদীর কাছেই ছুটে যাও, ডাকো প্রিয় মানুষদের ৷

আজ তোমাকে কেন লিখছি এত কথা
আমার কি আজ শিশু হতে ইচ্ছে করছে?
নিজের ভেতরে কি বসে আছে আনিস খোকা?
নাকি এক রোম্যান্টিক শিশু:
তোমার মতো
রাজের মতো আর
আয়লানের মতো সমুদ্রসমান অসহায় এক

আনিস, তোমাকে রেখে
নীল , তোর মুখ
জকি, তোর ব্যথা আর দ্বীপ্তর ভালোবাসা রেখে
কী করে মরে যাব আমি !

মিনি, আমার বাঁশখালী তোমাকে মনে করে
আমার বাঁশখালী তোমাকে ভালোবাসে;
ওরাই আমার মধুর সবুজ বাঁশখালী
তোমাকে জড়িয়ে ধরে ওরা কাঁদবে
তোমাকে জড়িয়ে ধরে ওরা হাসবে ৷

তুমি এসো—
পড়ো পাহাড়
পড়ো জলকদর
পড়ো পাখির পালক

আদর বিনয় আর বিশ্বাস নিয়ে যখন তুমি আমার কাছে আসো—
আমার দিদিকে মনে পড়ে
মাকে মনে পড়ে আমার

আমি কি মরে যাবো?
বেঁচে থাকবো তোমার মানুষের মতো?

বাবু, তুমি আমার কাছে এসো
আমি যাই তোমার কাছে নিয়ে ভালোবাসা
নিয়ে সহজতম মানুষের হৃদয়

রাত গভীর হলে কবিতা শোনাবে?
দুঃখ শুনবে আমার?

বাইরে বৃষ্টি পড়ছে... তোমরা ঘুমাও
আমি বরং খেতে যাই আমার মধুর বিষণ্ণ ভায়োলিন

মৃত্যুটা বিক্রি কোরে দেব

লিখতে বসেছি আকাশ আর মেঘেদের ব্যবধান নিয়ে একটি প্রেমের কবিতা
যদি গড়িয়ে পড়ে বরফ আমি কার কাছে যাব নিয়ে রবিবারের দুঃখ?
প্রেমে, একটা মৃত পাখিরও ডানা গজায়
কেউ কেউ ঘুরে আসেকবরমৃত্যুহীনভালবাসা করে ৷

প্রেম কি চিরকাল স্বর্গের দিকে যায়যাবে চিরকাল?
প্রেমিকা কি চিরকাল অন্যের দিকে যায়যাবে চিরকাল?

এই নরম গভীর ব্যথা নিয়ে আমি আর কার কাছে যাব?
কার কাছে গেলে আরও অধিক মধুর ব্যথা পাব?

তবু, এই ঠোঁট মরণের পাশে শুয়ে তোমার গল্প করে
তবু, এই ঠোঁট মরণের পাশে বসে তোমার গান ধরে ৷

তোমাকে ভালোবাসি
এই নিয়েও সারারাত গল্প করতে পারি,
তোমার নামে দোকানে কোনো দুঃখ পাওয় যায়? লাইব্রেরিতে বই?
ভাবছি নিজের মৃত্যুটাও বিক্রি কোরে দেব

তোমাকে

আজ আবার নতুন করে তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে ৷ কতকাল আমাদের আর ভালোবাসাবাসি হয় না ৷ কতকাল কাঁদছি না তোমাকে ভালোবেসে ৷ ভালবাসা বুঝি এক সময় সব মানুষের কমে আসে ৷ কেন আসে ?

আজ সন্ধেবেলা তোমার কথা মনে পড়লে—  যাব কর্ণফুলির কাছে ৷ তার কাছে সব সুখ-দুঃখের গল্প করা যায় ৷ রোজ তার পাড়ে বসে কত মানুষ তার শৈশবের গল্প করে ৷ আমার কেবল তাকে তোমার কথা বলতে ইচ্ছে করেবলি আজও তোমাকে ভালোবাসি ৷

একটা সময় ছিল তুমি আমাকে কী অবুঝ শিশুর মতো  ভালোবাসতে; আমার ভীষণ আশ্চর্য লাগতো কেউ আমাকে ভালোবাসে, কেউ আমার গল্প করে, কেউ রাত বিরেতে আমার চোখের কান্না করে ৷

এখনো বর্ষা শেষে শরত এলে কী গভীর করে তোমাকে মনে পড়ে ৷ সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তোমার দিকে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে ৷ মনে হয়পৃথিবীতে একটা বর্ষাকালই আমি বেঁচেছিলাম ৷ আহ্ !  আমার সোনালি আগস্ট ৷

পৃথিবীর খুব অল্প মানুষই শিশুর নরম ভালবাসা পায় ৷ পৃথিবীর খুব অল্প প্রেমিকই  প্রেমিকার সরল ভালবাসা পায় ৷ আমিও পেয়েছি ৷ সত্যি কি পেয়েছি তোমাকে ? তোমার চুল, তোমার হসি, তোমার সমস্ত হৃদয় ?

তোমার এই সহজ বতর্মান, মধুর ভবিষ্যত নিয়ে আমার কোনো গল্প নেই চিতা ৷ আমি আজও সমুদ্রের কাছে গিয়ে তোমার গল্প করি—  গল্প করি আমাদের সেই অলৌকিক অতীতপ্রেম নিয়ে ৷

জীবন এক চমৎকার পাখির ডানা ৷ এই ডানা নিয়ে তোমার দিকে উড়ে যেতে ইচ্ছে করে ৷

কবিতার বই খুলে যেভাবে পড়ছি প্রতিদিন; যেহেতু বইগুলো আমার ৷
সে মুগ্ধতা নিয়ে তোমাকে পড়তে পারতাম !
তবুও কি পড়ছি না তোমাকে গভীর বৃষ্টিবেলায়

রাসেলের গান ( বার্ট্রান্ড রাসেল )

চিরকাল নারী এক প্রলোভনের যন্ত্র’— বলে এক মহান সাধু
রূপবতী পবিত্র এক তরুণীর মুখের দিকে নিক্ষেপ করলেন নিজের অক্ষমতা ...

ধর্ম’— এ নিষ্ঠুরতার পক্ষে সতত মিছিল করে; করেন; করবেন আগামীকাল ৷ লিখবেন শ্লোগান : মিথ্যে এবং ভয়ের ।

শোনে দার্শনিক এক গেয়ে ওঠে রাসেলের গান
করেচিৎকার
বলেঅন্যায়; বলেএ শোভাযাত্রা মানুষের লজ্জা!

মহামান্য আইন সুকৌশলে বন্ধ করেন তাঁর সত্য ঠোঁট ।
মহামান্য রাষ্ট্র সুকৌশলে পৃথক করেন তাঁর মেধাবী শির ৷

কণ্ঠ তাঁর কথা বলে আইনস্টাইনের
এপিক্যুরাস গান গায় তাঁর কণ্ঠে
পৃথিবীতে সঙ্গমের কী গভীর আবশ্যকতা রয়েছে
লিখে যায় মানবের দেয়ালে

আমরা নির্বোধ তবু, যাই শাস্ত্রের কাছে, করি প্রণাম, খাই প্রেমিকার চেয়ে দীর্ঘ এক চুমু

দূরেভবিষ্যতেএকা বসে প্রিয় স্টিফেন হাসে; ভাবে
জগতে আরও অধিক মোমবাতি প্রয়োজন

কতকাল তোমার দিকে যাই না আমি

আমরা কি পরস্পর ভুলে যাচ্ছি আমাদের অভিভাষণ?
যদি জন্ম-ই না হতো
বলো মেয়ে তোমার সাথে কোথায় দেখা হতো?

এই দ্যাখোপৃথিবীতে কি রঙিন রোদ উঠেছে
টের পাচ্ছো আমার আকাঙ্ক্ষা ভালবাসা প্রার্থনা?

আমি চিরকাল লিখতে চেয়েছিলাম প্রেম
তুমি আগ্রহী করে তুললে
মধ্যরাতে কিভাবে আঁকতে হয় প্রেমিকের আত্মা ৷
আমি চিরকাল লিখতে চেয়েছিলাম তোমাকে
তুমি আগ্রহী করে তুললে
ভোররাতে কিভাবে পান করতে হয় নেশাগ্রস্ত আগুন ৷

কতকাল তোমার দিকে যাই না আমি
তুমি আসো না কতকাল আমার দিকে;
তবু, হেমন্তে মেঘ এলে তোমাকে পাই ফিরে
তবু, হেমন্তে বৃষ্টি এলে তোমাকে থাকি ঘিরে ৷

হেলেন

সোনালি আপেলটি ছুঁড়ে দেয়া হলো পাহাড়ের দিকে
যার গায়ে লেখা
              ‘শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর জন্য
প্রিয় আফ্রোদিতি, আপেলটি তোমার নয়

হেলেন, পৃথিবীটা তোমার শয্যা তুমি ভাবতেই পারো
যেহেতু তুমি সুন্দরী রমণী
তোমার স্তনের কাছে মাথা নত কোরে আমরা গাইতে পারি সংগীত
    ‘প্রাচীন ট্রয় ঘুমিয়ে আছে তোমার বুকে

স্বর্গে এরূপ আশ্চর্য বৃষ্টি পড়ে?
নরকে মধুর বেদনা পাওয়া যায়?
হে দেবী, আমরা বরং শুয়ে পড়ি প্রভুর বিছানায়

আমরা আমাদের আঙুল এবং ঠোঁটকে সঠিক সময়ে
ঠিক গ্লাসে বসাতে পারলেই
পৃথিবীটাকে চমৎকার এক ব্রোথেল আর অভিজাত পানশালা বানিয়ে নিতে পারি;
যেখানে নিয়মিত সঙ্গম এবং মাতাল হয়ে শুয়ে থাকা যায় অনন্তকাল

এসো হে রমণী
আমরা সুর তুলি যৌবনের

SHARE THIS

Author: