এক গুচ্ছ অণুগল্প • জীবনের প্রতিচ্ছবি ।। নাঈম হাসান


রানী 

চশমার কাচ পরিষ্কার করতে করতে মৌমিতার সামনে এসে বসল আকাশ ।

"কি সমস্যা ? " চোখ মুখে বিরক্তি ঢেলে বলল মৌমিতা । 
"কই কি সমস্যা ? " আর চোখে তার দিকে চাইল আকাশ । 

"এই যে আজকাল এত ভাব নাও । " 
"কি ভাব নিলাম ? আশ্চর্য । " 
"ফেইসবুক ম্যাসেজ দিয়েছি কাল এখনো সিন করইনি । " 
"ওহ , ম্যাসেজে ঢোকা হয়না । " 
"এতই যদি ব্যস্ত তবে কবিতা লিখে টাইমলাইনে পোষ্ট দিলে কিভাবে ? " 
" এখন সমস্যা কি বলত ? ম্যাসেজ না রিপ্লেই দিলেও রাগ করবে ? " চোখ পাকিয়ে বলল আকাশ । 
"এখন সব সময়ই তুমি আমায় ইগ্নোর কর । " 
" কি বল এসব ? " 
"ফোন দিলে ধরনা , দেখাও করনা আগের মত । " 
"ব্যস্ত আমি তাই । আর সারাদিন এত কিসের কথা ? " 
" হুম । আর রিলেশনের আগে কি বলেছিলে ? আমার সব সময় তোমার , তোমার জন্যই বেঁচে আছি , তুমি ছাড়া একা , বাচবনা , আরো কি কি । এখন কি সব মিথ্যেই ......? " চোখে পানি চলে আসে মৌমিতার । 
"দেখ এখন ন্যাকামি করোনা প্লিজ । তুমি আসলে আমার ভাল চাওনা । তুমি চাওনা আমি মন দিয়ে চাকরি করি , নিজের ক্যারিয়ার গড়ি । এই জন্য এমন কর খালি , পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া । " 
"ঠিক আছেনা দিতে হবেনা সময় , থাকো তুমি ব্যস্ত ।" কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় মৌমিতা । 
হা হা হা , অট্ট হাসিতে ফেটে পরে আকাশ । পৈশাচিক আনন্দ পায় সে । তিন বছর পাগল মত পিছে ঘুরিয়েছ , হাত কেটে তোমার নাম লিখেছি , বলতে গেলে প্রায় পা ধরেছি প্রেম পেতে , কত কেঁদে কেটে একাকার হয়েছি , লাখ খানেক টাকা খরচ করেছি , এরপর প্রেমে পরেছ । এবার এই তিন বছর এত্ত যন্ত্রনা দেয়ার প্রতিশোধ নেব তিলে তিলে । হা হা হা .........
" কিরে তুই ঘুমের মধ্যে হাসতাছস কেলা ? " মামাতো ভাই নাঈমের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আকাশের । 
"ধুর বা* এইটা স্বপ্ন ছিল ! আমি ভাবলাম........নাহ মৌমিতা আমার প্রেমে পড়লেও এমন করুম না , মরলেও না । অনেক লাভ করি ওরে আমি । সারা জীবন রাজ রানী বানায়া রাখুম । " মনে মনে বলে আকাশ । এরপর বালিশের নীচ থেকে মোবাইল বেড় করে ফেইসবুক ঢোকে । নাহ আজও রিপ্লেই দেয়নি । এক সপ্তাহ হয়ে গেল অথচ মৌমিতা ম্যাসেজের কোন উত্তরি দিলনা ।

ধূমপান 

বালিকার সবচেয়ে বড় কষ্টের কারন ছিল, তার প্রিয়তম একজন ধূমপায়ী । 
আরিফ ধূমপান ছেড়েছে বছরখানেক হল , কিন্তু মানা করার সেই বালিকাই নেই ।

মূল্য 

সেলিম চৌধুরী চেয়েছিলেন তার মেয়েকে সুপাত্রে দান করবেন । সারাজীবন মা মরা মেয়েকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন , মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে দ্বিতীয় বিয়েও করেননি । অথচ মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করল , কোথাকার কোন ছেলেকে , দেখেই মনে হয় নিয়মিত গাজা-হিরোইন কিনতে চুরি বাটপারি করে । মেনে নিলেননা , মেয়ে আর জামাইকে ,ত্যাজ্য করলেন । ক'বছরের মাথায় পরপারে পারি জমালেন , সম্পত্তি পেল তাঁর ভাইয়ের ছেলে । 

খদ্দের বিদেয় হবার পর টাকা গোনে রিমা , নিজের ভালবাসার মূল্য না দিয়ে বাবার ভালবাসার কথা ভাবলে আজ পতীতালয়ের বাসিন্দা হতে হতনা তাকে !

ক্ষমা 

অনিক রাতভর মন খারাপ করত কেউ তার খেয়াল রাখেনা তাই ,

বালিকা তার প্রিয়তমর খাওয়া , ঘুম আর লেখা- পড়ার ব্যপারে জানতে চাইলেই শোনে অশ্রাব্য গালাগাল । 
অনিক এখন রাত ভর দু চোখে অশ্রু ঝড়ায় , বালিকার ক্ষমা পাবার আশায় !

পাসওয়ার্ড

নীল তিন বছর উর্মিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসার পরেও উর্মির দিক থেকে কোন সারা পেলনা । পাশা পাশি বাসায় থাকে ওরা । নীল দিনের কয়েক ঘন্টা বারান্দায় ব্যয় করে শুধু উর্মিকে দেখবে বলে । কি না করল মেয়েটাকে পেতে , কিন্তু পাথর হৃদয় গলেনা । 

উর্মি গান ভালবাসে তাই সে গিটার বাজানো শিখল । উর্মির জন্মদিনে কেক , চোকলেট , ফুল এনে উইশ করল । এবং ভালবাসার কথা বলল , উর্মির উত্তর না । 
ভ্যালেন্টাইন্সে নেইল পলিশ , গ্লস, পারফিউম দিয়ে আবার প্রেম নিবেদন , এবারো উত্তর একি । 
সবশেষে উর্মির জন্য হাত পা কাঁটা কাটি করল , এবং আত্নহত্যার হুমকি দিল , কিন্তু কোন লাভ হলনা । তবুও নীল চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে । 
তারপর একদিন , 
উর্মি মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছে , দু চোখ ভেজা ! 
"কি ব্যপার কাঁদছ কেন ? মন খারাপ ? " ওপাশের বারান্দা থেকে বলল নীল । 
"এমনি । " 
"আরে কি হয়েছে বলবেতো ? " 
" ফেইসবুকে যেতে পারছিনা , ফোনের এম বি শেষ । কিরন মালার ফটো শেয়ারো করতে পারছিনা । " 
নীল মুখে হাসি টেনে বলল , "আরে পাগলী এই জন্য কাঁদতে হয় ? আমি কি মরে গেছি ? আমার ওয়াইফাই আছে আর তুমি কি এম বি নিয়ে পরে আছো , বোকা । " 
"তোমার ওয়াইফাই মানে ? তুমি ওয়াইফাই চালাও কবে থেকে ? কই তোমার নামেতো কোন ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক দেখিনি ? " 
" সেতো প্রায় তিন বছর হল , কেন Neel shagorer Urmi এই নামে দেখনি ? তোমার আমার নামে । " 
"ও তাই বল । খেয়াল করিনি । " চোখ মুছে হেসে উঠে উর্মি । 
" এখন যত খুশি ফেইসবুক চালাও , ইউটিউব দেখ , মুভি ডাউনলোড দাও , ওসব এমবি টেমবি নিয়ে আর ভাবতে হবেনা । " 
"আগে পাস ওয়ার্ড তো দাও । " 
"ও হ্যা , এক সাথে বড় হাতের অক্ষরে লিখ - NEEL LOVE URMI " 
"তুমি না একটা পাগল । " হেসে নীলের দিকে চাইল সে । 
সে রাতেই নীলের প্রেমের প্রস্তাবে সারা দেয় উর্মি । নীল খুশিতে লাফাতে লাফাতে ভাবে , " তিন বছর আগে ওয়াই ফাই পাসওয়ার্ড টা দিলে আজ উর্মির বাচ্চার বাপ হয়ে যেতাম । " 

অপেক্ষা 

আমেরিকার ভিসা হাতে মাসুমের চোখ জ্বালা করে ওঠে , টুম্পা আজ অন্যের ঘরে । 
বেকারত্বই ছিল বিচ্ছেদের একটি অংশ মাত্র ।

টুম্পার ঘর ভর্তি সিগারেটের ধোয়া , চারটে ছেকার দাগ আগেই ছিল পিঠে । আজ বুকে আরো দুটো যুক্ত হল ! 
অপেক্ষায় না থাকা আজ তিলে তিলে মরার অন্যতম কারন !

দাবার চাল

মোজাম্মেল ভালবাসে প্রিয়ন্তিকাকে , প্রিয়ন্তিকা চায় শুধু আকাশকে । 

আকাশের কাছে প্রেমের অর্থ দৈহিক চাহিদা । 
ফলাফল , মোজাম্মেল পুড়ে দহনে , প্রিয়ন্তিকা সাজে দাবার চাল । 
ত্রিভুজ প্রেমে একমাত্র আকাশি লাভবান ব্যক্তি ! 
প্রিয়ন্তিকাকে বিদেয় করে আকাশ নেমে পরে নতুন পাখির খোঁজে , ফাঁদ তার সুদর্শন চাউনি । 
তার পরবর্তি টার্গেট রুম্পা ! 
যদিও সে জানেনা নিজেই এবার হতে যাচ্ছে দাবার চাল ! 
"দোস্ত লুইচ্চা টার আইফোন সেভেন আর মানিব্যাগে নগদ সাত হাজার টাকা নিয়া আইলাম । " 
" রুম্পা আমার বান্ধুবী তুই এত ভাল ক্যারে ? লাভ ইউ দোস্ত ! কেমনে বাশ দিলি মাগির পুত রে ? " 
" আমি জামানের ফ্ল্যাটে আইতে কইছিলাম । পরে জামান আর সুমন মিল্যা হালারে ল্যাংটা কইরা বাইন্দা পিডায় পরে ফোটো তুইল্যা রাখে । আর হালারে কইছি পুলিশি কাহিনি করলেই ফোটো সব নেটে ছাইড়া দিমু । পরে হালায় কসম টসম কাইট্যা কইছে কাওরে কইবনা । " 
"থ্যঙ্কস দোস্ত । অনেক উপকার করলি । তোর বিকাশের নাম্বারে বিশ হাজার টাকা পাঠিয়া দিছি । " 
"আরে টাকা পাঠাইলি কেন ? তোর জন্য এতটুকু করতে পারুম না ? " 
"তবুও দোস্ত এইটা অনেক রিস্কি কাম ছিল । মাইন্ড করিস না । রাখি তবে ভাল থাকিস । " ফোন রেখেই ক্রুর হাসি দিল মোজাম্মেল , অবশেষে আকাশকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিয়েছে । 
এখন যেতে হবে হাসপাতালে । প্রিয়ন্তিকার এবর্সন হবে একটু পরে , পাপ নিশ্চিহ্ন করবে আজ । অন্তসত্বা হয়েছে জেনেও আগের মতই তাকে ভালবাসে মোজাম্মেল ।

বেহায়া মন 

রোকন যতই ভাবুক বাবলির দিকে আর তাকাবেনা তবুও চোখ চলে যায় । বেহায়া মন , নাকি সে নিজেই ? কেউ না বললেও সে নিজেকে জগতের শ্রেষ্ঠ নিলজ্জ আখ্যাইত করেছে মনে মনে । বিশ্ববিদ্যালয় গত একবছর এক সাথে ক্লাস করছে সে আর বাবলি । এই এক বছরে না বলেছে সে মনের কথা , না পেরেছে দৃষ্টি সরাতে , যদিও বাবলির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই , এমনি তাকে তেমন কোন মূল্যায়নও দেয়না । কখনো বলেনা , চল ক্যান্টিনে আড্ডা দিই । কখনো বলেনা , চল এক সাথে বাসায় যাই । আর যদিও কিছু বলে সেটা তার দরকারে । যেমন ক্লাস রুটিন জানতে চাইবে , কিংবা কোন পড়া না বুঝলে জিজ্ঞেস করবে , এসাইনমেন্ট করে দিতে বলবে ব্যাস । 

ক্লাসের সবাই জানে রোকন বাবলিকে কতটা চায় । কিন্তু বাবলি সর্বদা এরিয়ে চলে তাকে । 
সে যদি বলে , চল কোন রেস্টুরেন্টে আড্ডা দেই ? বাবলি বলবে ব্যস্ত , বাসায় সমস্যা , শরীর খারাপ ইত্যাদি । অথচ ক্লাসের যত বদ , নিম্ন মানের , ফাকিবাজ , লুচ্চা মার্কা ছেলেগুলোই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড । তাদের কাজ হল সারাদিন টোটো করে রাস্তায় ঘোরা , আড্ডা দেয়া , মেয়েদের দেখলে সিস দেয়া , সিগারেট গাঁজা খাওয়া , আর ক্লাস শেষে অশ্লীল বিষয় নিয়ে আড্ডা দেয়া । 
এরা যদি বাবলিকে বলে কোথাও যেতে ,দুনিয়া উলটে গেলেও তাদের সাথে যাবেই । 
আজকাল বাবলির উপর অন্য কারনে রাগ হয় তার । ভার্সিটির এক বড় ভাইর সাথে সব সময় থাকে । 
শুধু থাকেনা , 
উঠে, বসে , 
সময় কাটায় , 
রিক্সায় আসা যাওয়া করে । 
প্রচন্ড কষ্টে বুকটা মোচর দিয়ে ওঠে রোকনের , যখন দেখে সেই বড় ভাইর কথা বলতে বলতে বাবলির চুলে হাত নারায় , তাদের মাঝেকি প্রেম ? 

সে রাতেই ফোন দেয় বাবলিকে ......

" হ্যা রোকন বল । " ফোন ধরে বলে বাবলি । 
" তোমায় বহুদিন ধরে একটা কথা বলব বলব করে আর বলা হয়না । " প্রচন্ড রকমের হৃদ স্পন্দন শুরু হয় রোকনের । 
"হু তা তো প্রায়ই বল , কিন্তু কথাটা কি ? প্রোপোজ করবে ? শোন আমার বি এফ আছে । ওসব করে এখন আর লাভ নাই । " 
চোখে পানি চলে আসে রোকনের , কোনরকমে বলে , " না না ওসব কিছু না । আমিতো মজা করি , কি আর বলব তোমায় ? বাই দ্যা ওয়ে তোমার কাছেকি একাউন্টিং এর নোট গুলো হবে ? " 
'নাহ , সেগুলো নিয়ে কি আর ভাবা লাগে , হাসানিতো সব করে দেয় । " 
"হাসান টা কে ? " 
"হাসান কে আবার ? আমার উনি । সে ফাইনাল ইয়ারে না এবার । কত সিনিয়র আমাদের চেয়ে । সব হেল্পি করে । " 
"ও তাই বল ,ঠিক আছে । " বলে ফোন কেটে দেয় রোকন , কাঁদতে কাঁদতে দাঁড়ানো থেকে বসে পরে সে । যা ভেবেছিল তাই , সেই বড় ভাইকেও ভালবাসে বাবলি । 

এর কয়েকদিন পর , এক দুপুরে লাইব্রেরিতে বসে জরুরী কিছু নোট করছিল রোকন , এরমধ্যে তাদের ক্লাসের অন্যতম রূপসি ডালিয়া এসে উপস্থিত , " কি ব্যপার রোকন আজকাল দেখাই পাওয়া যায়না তোমার ? মন খারাপ ? "

"হ্যা কিছুটা । " শুকনো মুখে বলে সে । 
"কেন গো ? বাবলি বিএফ পেয়েছে তাই ? " নাকি সুরে বলল ডালিয়া । 
"তুমি এত বেশি বোঝ কেন ? " 
"আমি বেশি না ঠিক টাই বুঝি , এবার তো আমায় নিয়ে ভাব প্লিজ । " 
"শোন ফানের একটা লিমিট আছে , কই তুমি আর কই আমি ? তোমার পিছে গোটা ভার্সিটির সবাই ঘোরে । আর আমি ? ক্ষেত , দেখতে ভালনা , বাবার কারি কারি টাকা নেই , প্লিজ আমার সাথে এমন করনা । " 
"তুমি কি বলতে চাও ? আমি তোমার সাথে ফ্লার্ট করছি ? " রাগে ডালিয়ার ফর্শা গাল দুটো লাল হয়ে যায় । 
"নাতো কি ? " 
" শোন বিশ্বাস কর আর নাই কর , আমি তোমাকেই ভালবাসি অনেক ভালবাসি । আমি টাকা , পয়সা , চেহারা কিছুই চাইনা , শুধুই তোমায় চাই । " 
"প্লিজ আমি আর মন ভাংতে চাইনা । তুমি চলে যাও , ভাল লাগছেনা তোমার এসব মিথ্যে ফাইজলামি । " রাগ হয় রোকনের । 
কাঁদতে কাদতে চলে যায় ডালিয়া । 
সেদিন রাতে রোকনের মনে হয় নাহ কাজটা ঠিক হয়নি , মেয়েটার সাথে বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে , ফোন দেয় ডালিয়ার নাম্বারে । 

২ । 
এরমধ্যে কেটেগেল একমাস , এদিকে বাবলি জানতে পারে হাসান বড় সর এক লম্পট , মেয়েদের ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে তার বন্ধু লিটনের ফ্ল্যাটে নিয়ে জৈবিক চাহিদা মেটানই তার আসল উদ্দেশ্য । হাসান তার কোন ক্ষতি করার আগেই সটকে পরে সে । 
তবে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত । সে ভাবে আজ যদি রোকন হত তবে জীবনটা হত অন্য রকম , রানী করে রাখত ওকে , বাবলি জানে কত ভালবাসে রোকন তাকে , হয়ত দেখতে তেমন স্মার্ট না সর্বদা সিম্পল থাকে , কথা কম বলে , তবে কোন খারাপ স্বভাবো নেই , কখনোই কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি তার ওপর সে ক্লাসের ফার্স্ট বয় । যখনি যা সাহায্য চেয়েছে করেছে , অথচ বিনিময় সর্বদা এড়িয়ে চলেছে ওকে । 
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই কয়েকদিন কেটে যায় , বাবলি বুঝতে পারে সে রোকনের প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে । 
কয়েকদিন পর ক্যম্পাসে রোকনকে দেখতেই এগিয়ে আসে সে , "রোকন কেমন আছো ? " 
"ভাল অনেক ভাল । তুমি ? " হেসে উত্তর দেয় রোকন । 
"ভালনা ,তুমিতো আমায় ভুলেই গেলে । " 
"কেন কি হয়েছে ? ভুলিনি একটু ব্যস্ত তো তাই । " 
" হয়েছে অনেক কিছুই , তুমি কি জান হাসানের সাথে যে আমার আর সম্পর্ক নেই ? " 
মাথা নাড়ায় রোকন , " জানি । " 
"আমি জানি তুমি আমায় অনেক চাইতে , জানিনা এখন চাও কিনা । আচ্ছা এখন কি যায়না আমায় গ্রহণ করা , আরেকবার যায়না ভালবাসা ? " 
বিস্ময়ে হতবাক রোকন , বলছে কি এই মেয়ে ? গত এক বছর সয়নে, স্বপনে যেই মেয়েকে সে চেয়েছে , সেই আজ মনের কথা বলছে ? 

দূর থেকে ডালিয়া রোকনকে দেখে বাবলির সাথে হেসে কথা বলতে , প্রচন্ড রাগ লাগে ওর , বুঝতে অসুবিধা হয়না কেন সেধে কথা বলছে বাবলি , গত এক বছর যে রোকনের দিকে ফিরে চায়নি আজ সে কেন ভাব করছে , হাসানের শূন্যতা কাঁটাতেই যে রোকনের কাছে এসেছে তাও বোঝে ডালিয়া , আর দাড়িয়ে না থেকে তাদের কাছে গিয়েই রোকনের হাত ধরে হেচকা টান দেয় , "কি ব্যপার আমায় ভুলে নিজের অতীতের ক্রাশের সাথে কি কর হু ? হা হা হা । " মিষ্টি করে মেকি হাসি দেয় বাবলির দিকে চেয়ে । 
"কেমন আছিস ডালিয়া ? " বাবলিও মেকি হাসি দেয় । 
"ভালই , আচ্ছা তোকেতো বলাই হয়নি , এক সপ্তাহ হল রোকনের সাথে আমার রিলেসন । " 
"তাই ? খুবি ভাল , ট্রিট দিচ্ছিস কবে ? " কোনরকমে মুখে হাসি টেনে বলে বাবলি । 
"খুব দ্রুত দিব দোস্ত । আচ্ছা থাক যাই । " বলেই রোকনকে প্রায় টেনেই নিয়ে যায় ডালিয়া । 

বাবলি চিন্তা করে , একজন মানুষের মন মানসিকতার কথা চিন্তা না করে তার অর্থ আর বাজ্যিক চাক চিক্য দেখে ভালবাসার ফল কি তিক্ততাই হয় ? না রোকন তার ভাগ্যেই ছিলনা ? 


নাঈম হাসান
জন্ম ১৯৯৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ঢাকায়। দৈনিক পত্রিকা, ছোট কাগজ, লিটল ম্যাগ, মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্রিকা ছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখা লিখি করছেন কবিতা, উপন্যাস, গল্প । এছাড়াও আবৃত্তির প্রতিও রয়েছে বিশেষ ঝোঁক। বর্তমানে স্নাতকোত্তর করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে । 
২০১৯ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে   তাঁর প্রথম উপন্যাস “এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ” প্রকাশিত হয়।


SHARE THIS

Author: