অরবিন্দ চক্রবর্তী এর কাব্যগ্রন্থ সারামুখে ব্যান্ডেজ থেকে কবিতা



আকাশের যত মুহূর্তবাদ

যে মুহূর্তবাদি তোমার দিকে তাকালো
সে কফিনের আগে গারদ
পৌরাণিক পাখি নামে এক বেদনা মাস্তান
হস্তরেখা ভুল লেখে এমন জনপ্রিয়
ভাস্কর্য নির্মাতার চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছে

এর মানে আকাশ কেবল রঙধনু নয়
যা ঘটছে, ঘটুক
যে পথের শেষ নেই
সে পথের শেষ মাথায়
ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন জীবিকার বাক্স
খুলে দিয়ে বলুক, স্বর্ণ-ধুলোর খনি খুঁজে পেতে
ঈশ্বর লিখিত কোনো নিবন্ধনলিপি লাগে না



পিজারোর মন

সর্বনাশের মাঙ্গলিক শেষ করবার পর উসকানিপ-িত
হয়ে ভাবছিলাম, চোখ গড়াচ্ছে কোথায়?
এও বুঝলাম, -বর্গীয়দের শহরে এত বড় উপকার
করিনি কারোÑ কোনোদিন
রক্তের পারিশ্রমিক না পেয়ে অক্সিশ্বাস করছি বিড়বিড়
ইস্, দূরপাল্লার শহর থেকে আপনি যদি কেউ
ধাক্কা করে উঠিয়ে দিতো পাতালে!
যেতাম আর কই? সোজা রসাতলে, অনুপস্থিতির
উপত্যকায় ঝুল আকাশে দাঁড়ায়া একজন মিল্যা
খাইতাম বিন্দুর দিকে ধুকপুক চেয়ে থাকা কৈলাস
যুবতীর ব্রয়লার ঘুম


সাবান নির্ভর কবিতা

মোড়ক ফসকে বেড়িয়ে এলেÑ এটুকু ঠিক আছে
সাবানের ধারণা থেকে বেরুলে তোমাকে মানাতে পারি না
ঘর জানালাভিত্তিক
বিবেচনা করা যাক, পাশাপাশি আলোচনা থাকাও ভালো
তুমি তো জানো
বেসিনে জারুল পাতার জোসনা নিয়ে কাউকে বাসনা রাখা যায়
তারপর যা হয়, হতে থাকে...

নিভে যাওয়া কথার বুদ্বুদ থেকে যা হবে, সেটুকু ফেনা
আরটুকু ঢেউ, পুরোটাজুড়ে তুমি এবং খানিক আহত বার্তা
বাকিটা পরিণত ফলবাচক আমি
বনমর্মরের দস্যুতা করে তোমার বুকে আঁচড়ে যাবো
স্মৃতিনির্ভর ব্যক্তিগত বুলডোজার


জলমগ্ন পাথরের পাশে

যে কয়টা ফুলস্টপ ভেসে বেড়ায়, গলাবাজি করে
গণিত শেখার আগে এসব কমরেডদের তিসিফুল বলাই ভালো
পাশের বাড়ির বিছানা, তুমিতো জানো
আমার বিড়ালটা সুযোগ পেলেই বাঘ হবার কসরত করে
তাই আমি নির্বাচিত কয়েকটা নিপাট জানোয়ারের জন্য
            হুলস্থুল কবিতা করে যাচ্ছি
যে কানে-মুখে জেনে রেখেছ, আমার কোনো দেবী নেই
                                     একমাত্র তুমি আছো
চাইলে সে আমার মনাঞ্চল হয়ে
           সপাসপ ঢুকে যেতে পারো নহবত ঘরে


শাশ্বত বুধবার

শাশ্বত বুধবার নামের এক কালপুরুষ
তোমার ব্যান্ডেজ করা ঋতুর পাশে দাঁড়িয়ে
         অধঃপতন বিষয়ক ধারণায়
                      অধ্যাপনা করে যাচ্ছেন
মৌমাছি মৌমাছি নির্ভরতায়
সেতু উড়ে যাচ্ছে...

টানেল থেকে দেখছি
যে কোনো শুক্রের তলপেটে বাসা করেছে মেঘ
জীবিতের পাশে মাস্ক পরে
দাঁড়িয়ে আছে পিস্তল
ট্রিগার চাপতেই গলগল
বেরিয়ে আসবে মানুষের ভেতরকার ধুলিসভ্যতা


বিবাহিত ব্যাচেলরের সম্পর্কবীক্ষণ

অসামাজিক তিমি ডাঙ্গায় নিহত হবার পর
যে প্রেমাত্মা জন্মান্তরিত হলো
আমার ডানকাঁধে তার পা
তোমার বামকাঁধে তার পা
দাঁড়িয়ে মায়াধনু ছড়িয়েছে লোহিতফেনায়

প্রশংসা লটকানো অবদমনের নিচ দিয়ে নাকউঁচু হেঁটে যেতে যেতে
আশ্বিনমেঘা তলপেটকে একযোগে যা বলা হবে,
তাই সম্পর্কসেতু দেখানো বুয়ানির্ভর ভর্তা-ভাত জটিলতা


লিপস্টিক

পদকর্তা হাসি চিবান, সভানেতা চুলকিয়ে চুলকিয়ে
                                মেঘ করেন
অন্দরমহলে রোদ উঠলে খাঁচার মুনিয়া
খুব একা ঠোঁটে রুমাল চেপে রসময় খুলে দেন

একাদশীর শেষ দিন পিরিয়ড চলছিল বিবির
রাজার কুমার সে কথা খিড়কির দরজা খুলে জানলে
পাড়াতো প্রতিবেশির হাত ধরে   
আয়না দেখাতে গেল দম্পতি
ফেরার পথে নদী ফুঁসলে উঠেছিল
পারাপারে সেতুযোগ ছিল না

রিকশায় ভেসে মেয়েটি এলো হোস্টেলে
বান্ধবীদের একজন নেত্রী সেজে বলেই ফেললো,
                        ‘এত লিপস্টিক যায় কই?’


নিম্নলিখিত গোল

বলো তো দেখি, কার বাপের নাম রাস্তা?’
উঁচুফ্ল্যাটের বাচ্চাটি ঝাঁপিয়ে নামল
আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে কিনা, ‘তুমি কেন হাইওয়ে?’

সিকোয়েন্স নিয়ে ভাবতে গিয়ে ধাক্কা খেল আনন্দ
আনন্দের চোখে আমরাঙা বিষণœতা

যারা মনখারাপের সস্তা চুক্তি নিয়ে পথে বসেছো
আমার রাঙাধমক তাদেরই জন্য

ঘাড় বাঁকালে দেখবে, তোমার নিম্নলিখিত গোলে
জমছে অর্বুদ বছরের হাওয়াই মিঠাই


গাছেদের পারিবারিক টয়লেট থেকে

হিংসাই চরম ধর্ম গাছেদের পারিবারিক টয়লেটে গেছ কি?
কোরতা গায়ে পাশের গাছটি জিপার খুলে কী যেন হেসে দেয়!
আরেকবার বলেছে সে, আমি অন্ধ তালগাছ সাক্ষীÑ বনবিথী সাক্ষী,
                                                    সাক্ষী সত্যুক তারা
নক্ষত্র যেদিন আমাকে চোখটিপে জেলাসি শেখালো
সে থেকেই আমি গাছখালু স্ক্রিপ্টে লিখে নিই সপ্তাহ শেষের বাজার
সুযোগে আমি মাড়োয়ারি-মাড়োয়ান-লাঠিয়ালও
মিত্রতাবশত চুরি করে খাই চোখের আলো
আর মার্শাল আর্ট শেখাতে শেখাতে হ্যাট তুলে হুইসেল করি, মার্শাল
পূর্বজবৃক্ষরা আমাকে ধরমু ধরমু করে আমি বলি, ‘এইতো ধর্ম



বাড়ির কাজ

আর কাউকে জট খোলা শেখাবো না
আয়নার সামনে গেলে যে রূপ-কথাকার চূড়োবাঁধা ভুলে যাবে
তার বয়সলতিকায় কোনও আকন্দপাতার নাম থাকবে না
তুমি তাঁবুর নিভৃত থেকে গুছিয়ে গুছিয়ে
কিছু গুজব অথবা মূর্খতা টোকাবে
সান্ত¡না রাখবে ওর অহম আছে, চন্দ্রবিন্দু নেই

যাদের বাসায় রাত যায়, গভীর রাত পৌঁছায় না
তারা প্রতি বিকেলে হ্যাসড্যাস কাশে
এলোকেশি এলোকেশি খেলে
যদি তথ্য পায় তোমার পছন্দের তালিকায় থ্রি কোয়ার্টার
বিশ্বাস করো, আজ সন্ধ্যায় সে এলোমেলো
                 শাড়ির শীতে প্রযুক্তিবিদ হয়ে যাবে
আর ক্লাসে যারে পরিবারের
আ্যাড্রেস গায়ে রিকশায় হুড তুলে আসো, জিপার টানো না
এসব পিঁপড়ের বাচ্চা হাতিদের হোমওয়ার্ক দিচ্ছি,
                          বাসায় ফিরে কলিংয়ে যথার্থ টিপবে
                                              দরজা ভেজাবে
                                               জানালা খুলবে
                                                  পর্দা ছড়াবে
ওয়ারড্রোবে আরশোলা চাষ কতদূর এগোলো তা কৃষিনির্ভর দেখবে
চেয়ার বদলের কাহিনি মাথায় রেখে- খবরদার ব্যাকরণ ভাঙবে না


আমার একজন একজনই আছে

সবুজ ভয় স্ক্রিপ্টে রেখে শহরের পাশ দিয়ে যাচ্ছি
আবেগের ঠিক বাম ঘেঁষে গ্রাম যায়...

একজন পরিযায়ী আলোর চোখে আঙুল তুলে
সে নদীই দেখাচ্ছিলাম...

ভয়, আজ আপনাকে খুব আদর ইচ্ছে করছে
আদর, আজ তোকে খুব আবেগী দেখাচ্ছে
নদী, আজ ক্যানভাসারের কথাবাক্সে ঢুকে যা

অথচ ভয়-আদর-নদী কাউকেই তুমি লাগছে না

তাহলে অসুখগ্রস্থ আনন্দ, রক্ত নয়
জলটিলা সাজিয়ে পত্তনের খুব উঁচুতে দাঁড়িয়ে
আপনাকেই বলছি,
                     আমার একজন তুমি আছে
                     আমার একজন ঘর আছে
                     আমার একজন সরোদ আছে  
                     আমার একজন তুমুল হেমন্ত আছে


নাচুকের মশলা

পাতাবাহার কোনো রহস্য নয়, একে আমরা সিসটেমে
ফেলে দিয়ে জ্যোতিষীর আয়নায় খুঁজি জ্যোৎস্নার মনোটোনাস
দূরবীক্ষণ এসে সারগাম করে
বেকুব ভালুক থার্মোমিটার বসিয়ে
        জ্বরশাস্ত্রের দেয় ভুল ব্যাখ্যা
হৃৎপি- আমাদের কখনো কাঁপে না,
শুধু পাথরখ- ধসে নিটোল গড়াতে
থাকে তোমার চোখের কার্নিশ বেয়ে...
দূরের স্টপেজে বিউগল বাজে
স্বপ্নের কাছাকাছি থেকে একজন স্বর্গবাজ
বিবিধ রঙের মশলা মেখে আমাদের নিয়ে
                      করে জাদুখেলা
  

SHARE THIS

Author: