শাহেদ সেলিম তমাল'র দুটি অণুগল্প








হার্ডবোর্ড


আমি যখন থেকে এ বাড়িতে থাকি, এর কড়িবর্গা দিয়ে ঘুণ পড়ে আমার শোয়ার যায়গায়। সারাদিন ছাইপাঁশ কাজ করে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেবার সময় মনে হয় আমি কাঁকর বিছানো রাস্তায় শুয়ে আছি- নিজেকে তখন নবী নবী মনে হয়। এভাবে কিছুদিন কেটে যাবার পর, আমি যেখানে থাকি, তারপাশের তালাবদ্ধ ঘরে হানা দিলাম। ভিতরে ঢুকে আঁধার চোখ সয়ে গেলে দেখি- অনেক আসবাবপত্রে ঠাঁসা- মালঘর। অনেক খুঁজে পেতে একটা হার্ডবোর্ডের টুকরো পেলাম। মনে হল এটা দিয়ে কাজ হবে।

আমার ঘুমানোর যায়গায় ফিরে এসে দেখি হার্ড বোর্ডটার উপর এক বৃদ্ধার ছবি আঁকা। এই গরমে হার্ডবোর্ডটা এনেছিলাম হাতপাখা হিসেবে ব্যবহার করতে, কিন্তু দেখার পর থেকে ছবিটা আমার চোখের সামনে ঝুলিয়ে রাখি। ছবিটার বৃদ্ধা কখনও কখনও যুবতি হয়ে যায়। ছবিটাও সাদাকালো থেকে রঙিন হয়ে যায়। তখন সেই ছবির গোলাপি ঠোঁটে একটা চুমু এঁকে দেই। একটা নোনতা নোনতা স্বাদ লাগে মুখে। 

দুদিন আগে ছবির বৃদ্ধাটা রঙিন যুবতি হয়ে যাবার পর আমার সাথে কথা বলেছিল।
- কিরে পুচকে বদমাশ?
আমার গলা দিয়ে শব্দ বের হল না। খুক খুক করে শব্দ হল দু'বার।
-আমার ভাঙা বাড়িতে থাকিস, আর আমাকে চুমু দিতে দিতে ঠোঁটদুটোই প্রায় খেয়ে ফেললি? 
- কাগজের তো, সত্যিকারের হলে কী এমন হতো। 

আমার কথা শুনে সেই পুরাতন, প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ির মালিক আর রা করলেন না। 

পুরাতন কাঠের দুতলা প্রাসাদের মত বাড়িটা ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল ভাঙ্গারিরা। তাদের একজন, একটা উনিশ বছরের ছেলে দুতলার চালের কড়িকাঠ সরাতে গিয়ে একটা বৃদ্ধার ছবি খুঁজে পেল। ছেলেটি দেখল ছবির বৃদ্ধার চোখ ভর্তি ক্রোধ আর তার ঠোঁট দুটো ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে।



পজড 


মেয়েটি যখন আইসক্রিমের মত গলে গলে পড়ছিল, তখন তরুণীটি হাসছিল। একমাথা বয়কাট চুল নাড়িয়ে তরুণীটি বলল,
-বাহ, টাকা তোমাকে আইসক্রিম বানিয়ে দিল? 
-ইয়েস ম্যাম, আপনি কোন ধরনের আইসক্রিম লাইক করেন?
- ব্ল্যাক ফরেস্ট টাইপ অথবা চকোবার।
- আমি কোন ফ্লেভারটা লাগাবো বলেন প্লিজ।
-আচ্ছা,.. হুম.....হু..... তুমি.....তুমি আজ স্ট্রবেরি ফ্লেভার মাখ.... মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত।

ঠিক সে সময় ওয়াশরুম থেকে সিক্সপ্যাক যুবক বেরিয়ে এলো। কোমরে হোটেলের লোগো লাগানো সাদা টাওয়েল। একটু চোরা হাসি দিয়ে, একটা বেনসন ধরাতে ধরাতে বলল,
-ফিনিশড দ্যা রাইট হ্যান্ড জব।
- সান অফ আ বিচ। তুই মাগীর ছেলের চাইতেও খারাপ। 
তরুণীটির চোখে আগুন।
-তোর জন্য এত আয়োজন, এমন কী আমি টায়ার্ড হয়ে যাই দেখে একটা মেয়ে নিয়ে এলাম। তুই... তুই এখনই বের হ রুম থেকে, তোকে নেংটা করে বের করে দেবো।
বয়কাট চুলের ভেতরে তরুণীটির রাগে লাল হয়ে যাওয়া গাল দুটো দেখা যাচ্ছে।
- তুই রাগ করিস না। দেখ আজ কী হয়, কোথায় নিয়ে যাই তোদের।

যুবকটা রুমের এসি বন্ধ করে দিল। বিছানার উপর ছড়িয়ে দিল অনেকগুলো গোলাপি বড়ি আর ফয়েল পেপার।

SHARE THIS

Author: