শাহনেওয়াজ বিপ্লব এর কবিতা


যে মন কবিতা লেখে

আমি হাট থেকে হাটে ছেঁড়া মাদুর আর ছাটাই পেতে
যত হাড়হাভাতে চাষির কাড়া-না-কাড়া চাল
দু এক মুঠো যা কিনতে পেরেছি তা আবার বিক্রি করে,
দু চার টাকা যা পেয়েছি তা দিয়ে কিনেছি
আমার ফুটো শিশিতে সামান্য তেল,দু টাকার লবণ
আর আমার হাত রক্তাক্ত হয়েছে;
আমার হাত রক্তাক্ত হয়েছে দূর দূর গ্রামে গিয়ে
যখন সদয় হয়ে কেউ কেউ তুলে নিতে বলেছে আমাকে
তাদের বাগানের কাঁটায় ভরা বেগুন আর পাতিলেবু ।
আর এসব করতে গিয়ে
ফাকে ফাকে তুলে নিয়েছি কখনো কখনো দু-এক মুঠো ঘাস
আকাশের এক চিলতে রঙ,
শীত-নদীর ওপর জমে থাকা ভোর আর সন্ধ্যার কুয়াশা ।

আজ যখন আমি ঘুমোতে যাই
আমার পিঠের নীচে জেগে ওঠে নতুন নতুন দ্বীপ,
আমি যখন কথা বলি এখন, কৃষ্ণচূড়া আর দেবদার
আমার হয়ে কথা বলে সাদা পৃষ্ঠার সাথে
আর সেই সাদা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে বয়ে যায় নদী,
আমি সেই নদীর গর্ভে ঘুমিয়ে পড়ি
আর আমি জেগেও উঠি এক সশব্দ আর্তনাদে-
যার নাম কবিতা ।

অনুরোধ

আজ দুপুরে যারা ভাত খাবেন,
তাদের আমার অনুরোধ-
একটা ছোট্ট অনুরোধ,
কেন এমন হয়না যে, আজ দুপুরে
আমরা ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে
সোজা চলে যাই গ্রামে।

কোনো এক দুরের ধানখেতে গিয়ে
ধানের মঞ্জরির কাছে জেনে নিই,
চাল তৈরি হবার আগে-
মেশিনের যন্ত্রণায় কতটা ছটফট করেছিল ধানেরা ।
অথবা কৃষকের কাঁচি
কতটা নির্মমভাবে
কেটে নিয়েছিল ধানের গলা।
কেমন হয়, যদি আজ দুপুরে
আমরা ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে
চলে যাই ধানের মঞ্জরির কাছে !

দুঃখ
.
প্রেমিকার প্রত্যাখ্যানে একবার খুব দুঃখ পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখি,
প্রাচীন বটবৃক্ষকে ভালোবাসতে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত;
দুঃখী লতাগুলো মৃত্তিকার দিকে ঝুঁকে পড়েছে ।
সেই থেকে দুঃখ পেলে এখন আমি মাটির দিকে তাকাই,
দুঃখগুলো মৃত্তিকার কাছে জমা রাখি।

ভয়

জলের মধ্যে থাকে জাল
জালের মধ্যে বন্দী থাকে মাছ।
মাছের মধ্যে থাকে তার ছোট্ট হৃদয় ,
যে হৃদয়ে ভিড় করে
খাদ্য হবার এক চিরন্তন ভয়।

আশ্চর্য  অসুখ
               
কাচাবাজারের মাঝে ঘুরছি এখানে ওখানে
কিনেছি আলু,পটল,মরিচ- যা যা দরকার
এসেছি এবার মাংসের দোকানে
যেখানে সাজানো আছে মাংস-ফুসফুস-কলজে  
বাকহীন অবুঝ প্রাণীর, রক্তাপ¬ুত
একটি তরমুজের ভেতরের দিক কেটে রেখেছে যেন কেউ 
মর্মš‘দ এই পরিণাম,অজানা প্রাণীটির ভাগ্যে ছিল আহা ! 
যার চঞ্চল পায়ের চাপে দুলে উঠত একদা মাঠের সমস্ত আগাছা।
দৃষ্টির ঘূর্ণির সাথে তুলে আনতো  যে  মাটির আধার থেকে ঘাসের গলাপ

জানি এসব কথা ভেবে ভেবে  মাংস কাটায় ব্যস্ত 
কোনো কসাইয়ের  হাত মুহূর্তের জন্যেও থমকে যাবেনা ।

অথচ এইসব অর্থহীন ভাবনায় আমারই কেবল বুক,
ভরে উঠে অবিরাম দীর্ঘশ্বাসে;
অনর্থক ভাবনার আশ্চর্য এক অসুখ নিয়ে
মাংসের দোকান থেকে আমিই কেবল মাংসবিহীন খালি হাতে ফিরে আসি।

SHARE THIS

Author: