''পৃথিবী বড্ড সিরিয়াস জায়গা, এখানে থেকে লাভ নেই''
মানুষ
সমস্ত অপেক্ষার পালা
শেষ করে যেদিন মানুষ
হবো,সেদিন তোমাদের সাথে
এক দীর্ঘ নদীর দূরত্ব
সৃষ্টি হবে।
ঐপাড়ে সভ্যতার অশ্রুহীন
কান্নার আর্তনাদ,এপাড়ের সবার ভেতরে মানুষ
হওয়ার মৌন গল্প-যার
কোনো শ্রোতা নেই।
তন্দ্রালু
শেষ
ট্রেন
ইলারা,
গত বসন্তে যতটুকি
ঝরেছে তন্দ্রা পাতা তোমার ঐ
বুক চিরে,
আমি তার সবটুকুই
ফিরিয়ে দিতে আসবো, একই
পুরোন সেইসেই সন্ধ্যে নামলে।
পৃথিবীতে রাত বাড়লে তুমি
জিরিয়ে নিও,
তোমার ক্লান্তির পাশে
যেসব বাদুরেরা নামতা পড়ছে,
তারাও অপেক্ষারত,
শুনতে,
তোমার বুকে তন্দ্রা
পাতার সেই মৌন শোঁশোঁ
স্নিগ্ধতা।
ইলারা,
বিবর্তনকে পাশ কাটিয়ে
প্রজাপতিদের সবাই ভালোবাসে।
পদদলিত হওয়া ঘাসফুলের
কি কখনওই মন খারাপ
হয় না!
এসব ভেবে ক্লান্ত
হই,
তোমার বুকে লিখে
রাখি ক্ষোভ,
চিৎকারে যা বেরোয়না, সেসব।
ইলারা,
বিষণ্ণতা গিলে খায় প্রায়ই।
এক বন্ধু
দুঃখ থেকে পরিত্রাণের
পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।
যাওয়ার আগে আমাকে
বলল,
জীবনের শেষ ট্রেনে
চেপে চলে আসিস,
পৃথিবী বড্ড সিরিয়াস
জায়গা, এখানে থেকে লাভ
নেই।
জনশূন্য এক জংশনে প্রায়
সন্ধ্যা রাতেই দাঁড়াই,
শেষ ট্রেন আসে
না, তুমিও আসো না,
পাঁজরে পাঁজর থাকে
না।
ইলারা,
সন্ধ্যে নামলে
শেষ ট্রেনে ভিড়ে,
এই সিরিয়াস বৃত্ত
থেকে আমিও পালাবো।
তোমার তন্দ্রা পাতা
ফিরিয়ে দিয়ে,
আমি পালাবো একই
পুরনো সেই সন্ধ্যে নামলে।
বাপ
বাবারে আমি কি
বলে ডাকতাম, মনে নাই।
মনে করার চেষ্টা
করি,
ঐসব রাতে
যখন
মদ খেয়ে নিকটস্থ
শ্মশানঘাটে উবু হয়ে বসি
আর
দাউদাউ করে জ্বলতে
থাকা লাশের ঘ্রাণ শুঁকে
বাবার স্মৃতি হাতরাই,
মনে পড়েনা আমার।
আলসার হলেই কি
মানুষ মরে যায়!
বাবা মরে গেছেন। শহুরে
হাসপাতালে।
গাঁয়ে আনার এ্যাম্বুলেন্স
খরচ ছিলো না।
মা,
দুইশো কিলোমিটার কাঁধেচেপে
লাশ গ্রাম্য কোন শ্মশানে পোড়ানোর
কথা ভাবলে,
হয়তো শহুরে মাছিরা
টের পেয়ে যেত তখন।
আমার ক্ষুধার্ত মায়ের
কাছে অর্থকড়ি ছিলো না,
অথচ
লাশ সৎকার করতে
হবে।
মা কাঁদলেন কিনা
জানি না,
মলিন আর ছেঁড়া
কাপড়ের আঁচল পেতে দাঁড়ালেন
মানুষের সামনে,
শদেড়েক খুচরো টাকা
পেলেন।
হাসপাতালের পাশেই হিঁদু বাড়ি,
মায়ের একটানা সুর
করা আহাজারিতে
তাদের চিতায় বাবার
লাশ চড়ল।
পোড়ানো হলো বাবাকে
আর মা পেলেন শাদা
শাড়ী,
উপহার।
সেদিন,
আমি জীবন থেকে
হারালাম এমন এক লোককে,
যাঁরে কি নামে
ডাকাতাম আমি, মনে নাই।
এখন প্রায় রাতে,
আমি বিষণ্ণ হই,
শব্দ করে বলার চেষ্টা
করি বাবা! ও বাবা!
মনপুত হয় না।
আবার ডাকি,
আব্বা! ও আব্বা!
তাও বিষাদ।
তাই,
মুঠোফোন বাবার সাথে যারা
কথা কয়,
আমি কান খাড়া
করে থাকি।
শুনতে চেষ্টা করি,
বাবার সাথে কিভাবে কথা
বলে তারা! কিভাবে কথা
বলতে হয়!
কি বোলে ডাকে
তারা বাবারে!
বাবার কোন ছবিটবি
নাই কোথাও,
সাড়েচার বছর বয়সী কোন
স্মৃতিই মনে পড়ে না
আমার।
তাই,
আমাদের দেখা হওয়া
জরুরী ভিষণ,
বিশ্রী কোন ফুলের
মাঝে কিভাবে লুকিয়ে থাকে
জোনাকি, সে কথা বলা
দরকার।
মূলত, আলাপই ভুলিয়ে
দিতে পারে আমাদের মৌন
যন্ত্রণা।
অর্থাৎ
বাবা নরকবাসী হোক,
এটাই সলজ্জ স্বাদ।
নয়তো আমার সাথে
দেখা হবে না উনার।
আর কখনোই দেখা
হবে না!
এক অনন্ত সময়
অতিক্রান্ত হতে থাকবে।
অথচ
আর কখনোই দেখা
হবে না!